অদ্ভুত প্রণয়নামা পর্ব-১৮+১৯

0
313

#অদ্ভুত_প্রণয়নামা
#পর্ব_১৮
#তাশরিন_মোহেরা

কাল ভালো ঘুম হয়নি। হাই তুলতে তুলতে রাস্তায় বেরোলাম। মুখর কি এক দোটানায় ফেলে দিলো আমায়! কাল রাতে জরিমানাটা কি তা বলে দিলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত? সারারাত ধরে ভেবেছি জরিমানা কি হতে পারে? সে আমায় পানি ছুঁড়ে মারবে না তো? কিংবা তাকে আঘাত করার জন্য যদি চাকরি অর্থাৎ টিউশনি থেকে বরখাস্ত করে দেয়? সেকি! আমার যে টিউশনিটা এখন খুব দরকার!

দরজাটা খুলতেই দেখলাম মুখর ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। তার ঠোঁটের ডান কোণে সামান্য ক্ষত দেখা যাচ্ছে। কাল আসলেই তাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছি। ঢোক গিলে তড়িৎ তার কাছে গিয়ে বললাম,

‘মুখর সাহেব, জরিমানাটা কি তাড়াতাড়ি বলুন। আমার আর তর সইছে না!’

মুখর না বোঝার ভান করে বললো,

‘কিসের জরিমানা?’

আমি দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললাম,

‘আরে কাল আপনাকে আঘাত করার জরিমানা!’

মুখর দু’হাত ভাজ করে বললো,

‘ওহ! সে জরিমানা!’

‘জ্বি হ্যাঁ, বলুন তাড়াতাড়ি বলুন!’

মুখর আমার দিকে ঝুঁকে বললো,

‘জানতে চান জরিমানাটা কি? জরিমানাটা হলো…’

এই বলে মুখর থেমে গেল। আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছি। সে হঠাৎ আমার কপালে টোকা মেরে বললো,

‘আগে মুগ্ধকে পড়ানো শেষ করুন। তারপর বলছি!’

এই বলে কুটি কুটি করে হাসতে হাসতেই সে চলে গেল। মেজাজ আমার সত্যিই বিগড়েছে। ছেলেটা ভাবে কি আমায়? সামান্য এক জরিমানার জন্য এতো অস্থির হয়ে পড়ছি বলেই তার এতো ভাব? নাহ! আর অস্থির হওয়া যাবে না। আপনি বললে বলুন আর না বললে আমার কিছুই এসে যাবে না, মুখর সাহেব। চুলোয় যাক আপনার জরিমানা!

কিন্তু এতোকিছুর পরও আমার অস্থিরতা বিন্দুমাত্র কমলো না। উল্টো তরতর করে বেড়েছে। মনে মনে দোয়া করছি সময়গুলো যাতে তাড়াতাড়ি যায়। অবশেষে মুগ্ধকে পড়ানো শেষ হলো। আমি এক লাফে উঠে গিয়ে মুগ্ধকে বললাম,

‘যাও মুগ্ধ, তোমার ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে এসো, এক্ষুণি!’

মুগ্ধ মুখরকে ডেকে আনলে আমি বললাম,

‘এবার তো বলুন জরিমানাটা কি? এমন করছেন কেন মুখর সাহেব?’

মুখর হালকা হেসে বললো,

‘আসুন, ডাইনিং এ এসে বসুন।’

আমিও তার কথামতো বসলাম। কিছুক্ষণ পরই মুখর একবাটি পায়েশ এনে আমার সম্মুখে রাখলো। আমি অবাক হয়ে তার দিকে ফিরলাম। সে আমায় আশ্বস্ত করে বললো,

‘এটাই আপনার জরিমানা!’

আমি বিভ্রান্ত হলাম। তাকে প্রশ্ন ছুড়লাম,

‘মানে?’

সে আমার পাশে চেয়ার টেনে বসে বললো,

‘আপনারাই তো বলেন আমার রান্না নাকি খুব খারাপ। তাই ভাবলাম পায়েশ রেঁধে আপনাকে খাওয়াই। এর চাইতে বড় জরিমানা আপনার জন্য কি হতে পারে, মিস.তিথিয়া?’

বাকা হাসলো মুখর। আমি একবার তার দিকে, একবার পরিবেশন করা পায়েশের দিকে দেখলাম। পায়েশটা দেখতে ভালো হয়েছে তবে খেতে ঠিক কতটা ভালো হবে তা আমার জানা নেই। কেননা মুখর সাহেবের খাবার ঠিক মাকাল ফলের মতো। উপরে সুন্দর হলেও খেতে ভীষণ খারাপ! আমি শুষ্ক ঢোক গিললাম। এই জরিমানার চাইতে অন্য সবকিছুই যেন ফিকে পড়ে গেছে। মুখর মুখে হাত দিয়ে বসে আছে। দুষ্টু হাসি হেসে সে বললো,

‘কি হলো, পায়েশটুকু খান।’

আমি এক চামচ নিয়ে মুখের উপর তুলে ধরলাম। খাবো কি খাবো না এই দোটানায় পড়ে শেষমেশ চোখ খিঁচে খেলাম পায়েশটা। আমার মুখটা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলো। অবাক হয়ে মুখরের দিকে চেয়ে আছি। পায়েশটা সত্যি খুব ভালো হয়েছে। আমি মুখরকে বললাম,

‘পায়েশটা মজা হয়েছে খুব।’

সে মুচকি হেসে বললো,

‘অনেকদিন ধরেই প্র‍্যাক্টিস করছিলাম। শেষমেশ তবে ভালো হলো।’

আমি আরও দু’চামচ মুখে দিয়ে বললাম,

‘প্র‍্যাক্টিস মেক্স আ ম্যান পারফেক্ট, মুখর সাহেব।’

সেও এর বিপরীতে হাসলো। আমি খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। খানিক বাদে মুখর বললো,

‘মিস.তিথিয়া!’

আমি চোখ তুলে তার দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে দেখলাম। আমি সবসময়ই সাথে রুমাল নিয়ে বের হই। আজও খাওয়ার সময় রুমালটা পাশে রেখেছিলাম। মুখর আমাকে বললো,

‘আপনার রুমালটা কি একটু নিতে পারি?’

আমি ভ্রু কুঁচকে সেকেন্ড খানেক ভেবেই মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোঝালাম। সে রুমালটা নিয়ে হুট করেই আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমি সাথে সাথেই পিছিয়ে গেলাম কিছুটা। তবে খুব বেশি পেছাতে পারলাম না। মাথাটা আমার চেয়ারে ঠেকলো। সে এগিয়ে এসে আমার ঠোঁটের এক কোণে রুমাল দিয়ে মুছলো। ক্ষীণ হেসে বললো,

‘পায়েশ লেগেছিলো মুখে!’

আমার ঠোঁট দুটো আপনাআপনি হা হয়ে গেল। এ আমি কি দেখছি? বুকটা ঢিপঢিপ করে আওয়াজ দিচ্ছে আমার। ভয়ের সাথে সাথে আমার শরীর জুড়ে একটা উত্তেজনা কাজ করলো। ভাবছি এই কোন মুখরকে সামনে দেখছি আমি? এই তো কিছুদিন আগেই আমি স্বেচ্ছায় মুখে চকলেট ক্রিম লাগিয়ে মুখরের সাহায্য চেয়েছিলাম, কিন্তু সে কোনো সাহায্যই করেনি। তবে এখন? এখন কি হলো মুখরের?

আমি স্বাভাবিক হয়ে মুখরকে বললাম,

‘আপনি আজেবাজে কিছু খাননি তো, মুখর সাহেব?’

মুখর আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,

‘কেন? আমি আবার আজেবাজে কি খেতে যাবো?’

‘আপনি ক’দিন ধরে অদ্ভুত আচরণ করছেন।’

মনে মনে বিড়বিড় করলাম আমি। কারণ এটুকু বলার সাহস নেই আমার! মুখরকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললাম,

‘না, কিছু না!’

সেও আর কথা বাড়ালো না। মুগ্ধকে তাড়া দিয়ে উঠে পড়লো। পায়েশটুকু প্রায় শেষ পর্যায়ে, এমন সময় আমার পাশে রাখা মুখরের ফোনে ভাইব্রেট হলো। ভাইব্রেট হওয়াতে আমি ফোনের স্ক্রিনে তাকাই। একটা অজানা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। তাতে লিখা,

‘নিজের বাবাকে নিজেই মা’র’লে, মুখর। এর জন্য তোমায় প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। জটিল এক প্রায়শ্চিত্ত!’

(চলবে)

#অদ্ভুত_প্রণয়নামা
#পর্ব_১৯
#তাশরিন_মোহেরা

অচেনা নাম্বার থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত মেসেজটা দেখে মুখে থাকা পায়েশ আর গি’ল’তে পারলাম না আমি। পায়েশের দিকে তাকিয়ে ভাবছি। কিন্তু আশ্চর্য! আমি কিছুই ভাবতে পারছি না। ভাবনারা সব নীড় হারিয়েছে যেন! মস্তিষ্ক শুধু এক দৃশ্যই দেখিয়ে যাচ্ছে আমায়,

‘নিজের বাবাকে নিজেই মা’র’লে, মুখর।’

গলায় দলা পেকে কি যেন বিঁধছে। পানি পান করা দরকার। গ্লাসে পানি ঢালতে গিয়ে দেখি আমার হাত অবশ হয়ে ঠান্ডা হয়ে গেছে। তখনি দেখলাম মুখর সাহেব সামনে এসে গ্লাসে পানি ঢেলে দিতে দিতে বললো,

‘আপনি খা’ন কি বলুন তো, মিস.তিথিয়া? জগটাও ঠিক মতো তুলতে পারছেন না! আহারে!’

মুচকি হাসলো ছেলেটা। আমি হা করে তার মুখপানে চেয়ে আছি। তার কথাটুকু আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করলেও আমি কিছু বলতে পারলাম না। হাতের সাথে সাথে আমার ঠোঁটটাও অবশ হয়ে গেছে। না না, আমার পুরো শরীরটাই অবশ হয়ে গেছে!

হাসতে থাকা ছেলেটার দিকে অপলক চেয়ে আছি। মুখর ছেলেটাকে প্রথম দিন এমনটা দেখিনি আমি। প্রথম দিকে সে ছিল ভারী চুপচাপ এবং গম্ভীরমুখো! যে কিনা তার অনুভূতিদের ঠিক করে বুঝতে জানতো না, প্রকাশ করতে জানতো না। তবে এখন? সে আগের চাইতে সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমি জানি না এর কারণটা কি? তবে আমি ইদানীং তাকে দেখে বেশ অবাক হয়েছি ক্ষণে ক্ষণে! ছেলেটা তার গাম্ভীর্যের মুখোশ খুলে ধীরে ধীরে প্রাণবন্ত হতে শিখেছে। শিখেছে তার ভেতরকার অনুভূতিদের প্রকাশ করতে! কিন্তু এর মাঝে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে যাচ্ছে মেসেজটি।
এখনের এই হাস্যোজ্জ্বল ছেলেটা কি করে তার বাবাকে খু’ন করতে পারে? কস্মিনকালেও কি এসব সম্ভব? অন্য কারো পক্ষে সম্ভব হলেও তা মুখরের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। এটুকু অন্তত আমি বিশ্বাস করি না! হ্যাঁ, আমি এ মেসেজের একটা অক্ষরও বিশ্বাস করি না। তবে কেন আমি এতো ঘাবড়ে যাচ্ছি? কেন আমার মস্তিষ্ক বারবার আমায় শুধু মিথ্যে মেসেজটাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে? মুখরের অনেক গূঢ় সত্য এখনো আমি জানি না। আমার জানার কোনো অধিকারও নেই। এ কারণেই হয়তো মেসেজটা ভুল করে দেখে আমার ঘাবড়ানোটা বেড়ে গেছে।

‘ম্যাম, চলুন! আমি রেডি।’

মুগ্ধের কথায় আমার ধ্যানভঙ্গ হয়। আমি চমকে তাকাই। দেখি মুখর-মুগ্ধ দুজনেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে। আমি জোরপূর্বক হেসে বললাম,

‘চলো!’

মুখর এগিয়ে এসে বললো,

‘আপনি ঠিক আছেন, মিস.তিথিয়া? আপনাকে দেখে ভীষণ ভীত লাগছে। আর এভাবে ঘামছেন কেন? কিছু হয়েছে?’

আমি তার কথায় কিছুক্ষণ চুপ থাকি। আমাকে চুপ থাকতে দেখে সে আবারো বললো,

‘মিস.তিথিয়া?’

আমি তার দিকে ফিরে বলি,

‘জ্বি? কিছু বলেছেন?’

সে আমাকে বললো,

‘আপনার কি খারাপ লাগছে? ফ্যানের নিচেও এভাবে ঘামছেন যে?’

আমি তাকে আশ্বাস দিয়ে বললাম,

‘নাহ! কিছু হয়নি। চলো, মুগ্ধ!’

আমি মুখরের দিকে ফিরে দেখলাম না আর। কেননা তার দিকে তাকাতে গেলেই আমার বারবার সেই ভয়ংকর মেসেজটা চোখে ভেসে উঠছে। কয়েকবার ঢোক গিললাম আমি। আচ্ছা? মেসেজটা মুখর সাহেব দেখলে তার মুখভঙ্গি ঠিক কেমন হবে? সে যদি তার বাবাকে না মে”রে থাকে তবে বেশ অবাক আর ভীত হবে। আর যদি মে’রে’ই থাকে…
ছিঃ আমি এসব কি ভাবছি? মুখর এমনটা করতে পারে না, অবশ্যই না! এটুকু আমার মনের বিভ্রাট! মনকে ভীষণ ধিক্কার জানালাম আমি। এই মনটাই বারবার মুখরের প্রেমে পড়েছে আর এখন তাকেই সন্দেহ করছে!

চোখ আমার এবার মুগ্ধের কাছে গেল। এমন ফুটফুটে একটা ভাই রেখে সে কখনোই কাউকে মা’র’বে না। মুগ্ধের দিকে চেয়েই মুখর তার সব দুঃখ দুর্দশা ভুলেছে। এমন একটা ঘৃণ্য কাজ সে করতে পারে না!

.

আজ ক’দিন হলো আমি মুখরের চোখে চোখে তাকাতে পারিনি। তার সাথে চোখাচোখি হলেই আমি আঁতকে উঠি, সে আমার পাশে এলেই আমি আঁতকে উঠি। এমনকি সে আমায় কিছু বলতে এলেও আমি আঁতকে তাকে এড়িয়ে যাই। মুখর এতে বড্ড দুঃখ পায়। আমি তা আড়ালে খেয়াল করি। তবে আমি ঠিক বুঝছি না কেন আমার এই পরিবর্তন! আমি তো মনে মনে বিশ্বাস রাখছিই যে মুখর তার বাবাকে মা’র’তে পারে না। হাজার চেষ্টা করছি তার মুখোমুখি হয়ে ঠিক আগের মতোই কথা বলতে! কিন্তু সে সামনে এলেই এক অজানা ভয় কাজ করে মনে। মস্তিষ্ক বারবার সাড়া দেয়, ‘তাকে এড়িয়ে যা, তিথিয়া!’

আজও ঠিক এভাবেই এড়িয়ে বেরিয়ে পড়ছিলাম। তখন দেখি ওড়নাতে হালকা টান পড়ে। পেছন ফিরে দেখি মুখর আমার ওড়না আকড়ে ধরেছে হালকা। করুণ চোখে বলে উঠলো,

‘আমি কি কিছু করেছি, মিস.তিথিয়া?’

আমি বুঝেও না বোঝার ভান করে চোখ সরিয়ে বললাম,

‘ক-কেন?’

বুকটা উচ্চগতিতে লাফাচ্ছে আমার। আমি বিন্দুমাত্র ভাবিনি ছেলেটা আমায় এভাবে আটকে ফেলবে। সুরটা কোমল রেখেই সে বললো,

‘আমি কি আপনাকে কোনোভাবে রাগিয়েছি? কিংবা এমন অসঙ্গত কিছু বলেছি?’

আমি এবারও না বোঝার ভান করলাম। তার দিকে না ফিরে বললাম,

‘না!’

‘তবে কেন আপনি আমায় এড়িয়ে চলছেন? আমি আজ আপনার জন্য পায়েশ রেঁধেছিলাম আবারো। কিন্তু আপনি কথা বলছেন না দেখে দিতে পারলাম না।’

আমি অপ্রস্তুত হেসে বললাম,

‘ঠিক আছে, তবে পরে একসময় রেঁধে খাওয়াবেন। আজ আসি! মুগ্ধের দেরি হচ্ছে!’

আমি এখনো তাকে একপ্রকার এড়িয়ে আসতে চেয়েছিলাম। একটা অযুহাত দিয়ে পুনরায় চলে যেতে নিলে দরজা আটকে দাঁড়ায় মুখর। আমার দিকে ফিরে বলে,

‘তাহলে আমার চোখে তাকিয়ে বলুন আপনি কোনো কারণে আমার উপর রেগে নেই!’

আমার হৃদপিণ্ড এবার বোধহয় বেরিয়েই পড়বে। কি করছেটা কি এই ছেলে? তার চোখে তাকিয়ে রেগে নেই বলার জন্য এতো কাছে এসে দাঁড়িয়েছে সে? এতোটা অসতর্ক হওয়ার কোনো মানে আছে? এই অবস্থায় যদি মুগ্ধ আমাদের দেখে ফেলে?
কিন্তু ছেলেটার শরীর থেকে কেমন একটা মোহনীয় ঘ্রাণ পাচ্ছি আমি। এখনি তার বুকে ঝাপিয়ে পড়তে মন চাইছে আমার।
‘তিথিয়া, তুই দিনদিন একটু বেশিই বে’হা’য়া হয়ে যাচ্ছিস?’ মনে মনে বিড়বিড় করলাম। তার চোখের দিকে তাকাতেই আবারো মোহাবিষ্ট হয়ে পড়লাম। আমি তাকাতেই ছেলেটা হাসলো। ইশ! তীরের মতো কি যেন বিঁধলো বুকে? মুখর সাহেব, এভাবে হাসবেন না, দয়া করে।’

হঠাৎ মুগ্ধের আওয়াজ শোনা গেল। এখনি এসে গেল যে! এই ভয়ে তড়িৎ সরে যেতে নিলাম। কিন্তু এতে আমার মাথাটা মুখরের ঠোঁটে বেশ জোরেই আঘাত করলো। সে বেশ শব্দ করে উঠলো। পেছন ফিরে দেখি মুখর তার নাকে হাত দিয়ে কুঁকড়ে আছে। আর তার নাক দিয়ে অঝোরে র’ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। সাথে সাথেই মুখে হাত দিয়ে ফেলি আমি! আবারও? আবারও আঘাত করে বসলাম ছেলেটাকে! ধ্যা’ৎ! আমি জিভ কেটে তার দিকে ফিরে কান মলে বললাম,

‘সরি, এবারের জন্য ক্ষমা করুন।’

দ্রুতপায়ে বেরিয়ে এলাম। না জানি এই আঘাতের জন্য কাল কি জরিমানা দেয় ছেলেটা! তবে বড্ড খারাপ লাগলো মুখরের জন্য আমার। নিজের মাথায় নিজেই চাপড় মারলাম। এতো বেখেয়ালি আমি না হলেও পারি! ছোটকাল থেকেই অযথা আহত হওয়া, অন্যকে আহত করা আমার নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে উঠেছে। এই অভ্যাস আমি চাইলেও ত্যাগ করতে পারছি না!

যাক! এতোকিছুর পরও আবার সহজ হতে পেরেছি মুখরের সাথে। কি এক মিথ্যা মেসেজ আমায় তার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে! আমি নিজেও এতে ভারী কষ্ট পেয়েছি! আর মুখরকেও বেশ অস্থির মনে হলো। আমার সাথে কথা বলতে না পেরে ছেলেটা কষ্ট পেয়েছে? পেয়েছেই তো! তার সারা মুখ জুড়েই তো এই কষ্ট দৃশ্যমান। কিন্তু কেন সে কষ্ট পেল? আমি তো তাকে ভালোবেসেছি বলে তার সাথে নিজের দূরত্বটা মানতে পারিনি। তবে…

‘ডোন্ট টেল মি….’

মুখরও আমার প্রেমে পড়ে গেল না তো? না না, এটা কি করে সম্ভব?

‘অসম্ভব হওয়ারও তো কিছু না।’

আমার মন আমায় বললো। সেকি? মুখর? সেই গম্ভীর, শক্ত চাহনির ছেলেটা আমার প্রেমে পড়েছে? বারবার পানি ছুঁড়ে মারা ছেলেটা আমায় ভালোবেসেছে?
আমার বুকটা এমন দ্রিমদ্রিম গতিতে বাজছে কেন? মাথাটাও কেমন ঘুরছে! মুখটাও তো গরম হয়ে উঠছে ক্রমে। সেকি!

হঠাৎ কানে একটা গু’লি’র শব্দ প্রবেশ করলো জোরে। আমি থমকালাম। গু’লি’র শব্দে পাশ থেকে কে যেন ‘আহ!’ বলে চিৎকার করে উঠলো। পাশে তাকাতেই নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না আর। জোরে চিৎকার করে ডেকে উঠি,

‘মুগ্ধ!!’

(চলবে)