অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি পর্ব-১২

0
3

#অনাকাঙ্ক্ষিত_অতিথি ।১২।
#সাইরা_শেখ

মাশহুদ চলে যাবে আজ। সভ্যতা তাকে বিদায় জানাতে গেট অবধি এসেছে। মাশহুদ সভ্যতার দিকে তাঁকিয়ে অমায়িক হেসে বলল,
‘যতদিন না,বিয়েতে অমত করার দ্বিতীয় কারণ সম্পর্কে জানাবে,ততদিন তোমার ডায়েরি আমার কাছেই থাকুক। উত্তর দিলে, ডায়েরি পাবে। না দিলে, পাবে না।’

সভ্যতা কিছু বলল না। গতকাল রাতে মাশহুদের সামনে বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি করেছে সে। যার দরুন এখন প্রচণ্ড অপ্রস্তুত বোধ করছে।মাশহুদের বলা প্রতিটি শব্দ কানে বাজছে। সে সভ্যতাকে ভালোবাসবে, সভ্যতার বাবা-মায়ের খেয়াল রাখার দায়িত্ব নেবে। নম্রতা কিংবা মাহিনের আব্বু-আম্মুকে নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। সে সভ্যতার সকল অনুভূতি সামলে নিতে পারবে। সভ্যতা নামের মেয়েটিকে পাওয়ার জন্য সবকিছু করবে। তবুও হাল ছাড়বে না। সভ্যতা নিজেও জানে মাশহুদ যা যা বলেছে তা সব সত্য।
সভ্যতাকে অন্যমনস্ক দেখে মাশহুদ মৃদুস্বরে প্রশ্ন করলো, ‘কার কল্পনায় ডুবে গেলে?’
‘হু?’
‘এবার যেতে হবে। নিজের খেয়াল রেখো। মাঝে মধ্যে কল করবো।’
‘আচ্ছা।’
‘কি ব্যাপার? আজ রাজি হলে যে? আমি তো ভেবেছি কল করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করবে।’
‘তাহলে নিষেধ করি?’
‘একদম না।’
‘যান, নয়তো ফ্লাইট মিস হবে। এইটুকু পথ বাসে-ট্রেনে গেলেই তো হয়। প্লেনে চড়ে যেতে হবে কেন?’
‘ফরেইনার ক্লাইন্টদের সঙ্গে মিটিং আছে।আমার গতকাল রাতেই ফেরার কথা ছিল, কিন্তু তোমাকে রেখে যেতে পারিনি। তাই ফ্লাইটে যেতে হচ্ছে। ৪০ মিনিটের মধ্যে, পৌঁছে যাবো। আচ্ছা, অনেক কথা হলো.. ‘

সভ্যতা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।মাশহুদের আচরণ, তার অস্থিরতা দেখে মনে হচ্ছে সে কিছু বলতে চায়। যেটা না বলে যেতে পারছে না। সভ্যতা ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
‘যাচ্ছেন না কেন? দেরি হচ্ছে তো।’

মাশহুদ হঠাৎ, কোনোকিছু না বলে সভ্যতাকে জড়িয়ে ধরলো, ভেজা কন্ঠে বলল,
‘আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি সভ্যতা। ট্রাস্ট মি, গতকাল তোমাকে বলা প্রতিটি শব্দ সত্য।আমি শুধুমাত্র তোমাকে বিয়ে করতে চাই,ভালোবাসতে চাই,আমার করতে চাই.. প্লিজ সভ্যতা, আর একটাবার ভাবো। আমি তোমাকে কখনও কষ্ট দেব না। একবার বিশ্বাস করে দেখো..’
সভ্যতা নিষ্প্রভস্বরে বলল, ‘আপনি কি কাঁদছেন?’

মাশহুদ দ্রুত সভ্যতাকে ছেড়ে উল্টোদিকে পা বাড়িয়ে বলল, ‘না। ভেতরে যাও তুমি।’
সভ্যতা থমথমে গলায় বলল, ‘পৌঁছে জানিয়ে দিবেন। নাহলে আম্মু টেনশন করবে।’
মাশহুদ চোখ মুছে পেছনে ঘুরে বলল, ‘আর তুমি? তুমি টেনশন করবে না?’
‘আমি সবার জন্য টেনশন করিনা। টেনশন করা একটি কঠিন কাজ। মানুষ তাকে নিয়েই চিন্তা করে যাকে সে ভালোবাসে বা যার প্রতি কোনো অনুভূতি আছে। আমার আপনার প্রতি কোনো অনুভূতি নেই, তাই আপাততো টেনশন করবো না।আপনি সাবধানে যাবেন, আশা করছি দ্রুতই দেখা হবে আমাদের।’
সভ্যতার শেষের বাক্যটি শুনে মাশহুদ হাসার চেষ্টা করে। সভ্যতাও মুচকি হেসে বিদায় জানালো তাকে।

মাশহুদ দৃষ্টির আড়াল হতেই সভ্যতার চোখ ছাপিয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। সভ্যতা অশ্রুকণা আঙ্গুলে নিয়ে দেখলো। হঠাৎ চোখে পানি এলো কেন? মাশহুদের জন্য? কয়েকমুহূর্ত আঙ্গুলে লেপ্টে থাকা অশ্রুকণার দিকে তাঁকিয়ে থেকে সভ্যতা বাড়ির ভেতরে ছুটে গেল।
সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছেন বাবা।তার পাশেই চায়ের কাপ হাতে বসে আছেন মা।সভ্যতাকে দেখে বাবা প্রশ্ন করলেন,
‘কি কথা হলো দুজনের?তোর চোখমুখ এমন লাগছে কেন? কেঁদেছিস নাকি?’
সভ্যতা দ্রুততার সাথে, এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললো, ‘আমি ওনাকে বিয়ে করবো আব্বু।’

বাক্যটি শুনে কয়েকমুহূর্ত নিশ্চুপ থেকে বাবা, মা-কে বললেন,’আমার কানে বোধ হয় সমস্যা হচ্ছে রাবেয়া। কি শুনতে, কি শুনছি..আমার কি ডাক্তার দেখানো উচিত? কি মনে হয় তোমার?’

মা নিজেও অবিশ্বাসী কন্ঠে বললেন,’শুধু তোমার না। আমিও মনে হয় ভুল কিছু শুনলাম। তোমার মেয়ে মাশহুদকে বিয়ে করার কথা বলছে..’

সভ্যতা বাবা-মায়ের মাঝখানে ঢুকে আহ্লাদী গলায় বলল, ‘তোমরা মজা করছো কেন? আমি সত্যিই ওনাকে বিয়ে করতে চাই।’
বাবা প্রশ্ন করেন, ‘হঠাৎ রাজি হওয়ার কারণ কি? তোর তো ওকে পছন্দ না।’
‘উনি আমার জন্য কাঁদছিলেন।’
‘তোর জন্য তো আগেও তিনজন কেঁদেছে। তাদের কান্না আর মাশহুদের কান্নার মধ্যে পার্থক্য কি?’

সভ্যতা কথার সুর পাল্টে বলল, ‘কারণ ওরা পরিচিত, সমবয়সী, প্রেম করার জন্য কেঁদেছে,তাছাড়া তোমরা ওদের পছন্দ করতে না। কিন্তু মাশহুদকে তুমি আর আম্মু দুজনে মিলে পছন্দ করেছ। তোমরা পছন্দ করেছ তাই সে আলাদা, আমার জন্য উপযুক্ত আর আমি তোমাদের পছন্দের বিরুদ্ধে যেতে চাইনা। তোমাদের পছন্দে বিয়ে না করলে তোমরা কষ্ট পাবে। তোমাদের কি করে কষ্ট দেই?’

বাবা গম্ভীরকন্ঠে বললেন, ‘আমরা কষ্ট পাবো না। ওকে বিয়ে করার প্রয়োজন নেই তোর। শুনলাম তুই নাকি তোর এক ক্লাসমেটকে পছন্দ করিস? সে কেমন?’
‘বোকা, ভেড়া।’
‘গুড চয়েজ। লেখাপড়া শেষ করে দুজনে নিজের পায়ে দাঁড়া। তারপর আমরা তোকে ওর সাথেই বিয়ে দিব। কি বলো রাবেয়া?’
মা উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ ঠিকই বলেছ।তুই যাকে চাইবি তার সাথেই তোর বিয়ে দিবো। সমস্যা নেই।’

সভ্যতা কোমরে হাত রেখে রাগতস্বরে বলল, ‘তাহলে কানাখোঁড়া যাকে পছন্দ করবো তার সাথেই দেবে তো?’
বাবা হেসে বললেন, ‘থাক মাশহুদ-ই ঠিক আছে। তোকে সামলানোর ক্ষমতা নেই সবার। ছেলেটা বেশ প্রাকটিস করছে।এত কষ্ট করেছে,ওর কষ্টের দাম না দিলে প্রতি নিঃশ্বাসে বদদোয়া দেবে আমাদের।কি দরকার বদদোয়া কুড়ানোর? তোকেই বরং দিয়ে দেব, বদদোয়া আর তুই দুটো ঝামেলাই নিয়ে যাবে।’
সভ্যতা তেতে উঠল, ‘আমি ঝামেলা? আমাকে ঝামেলা মনে হয় তোমাদের? আজ আসুক আপু, এর একটা বিহিত না করে ছাড়বো না।’

নম্রতা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে করতে বলল, ‘কি হলো সকাল সকাল?’
মাহিনকে উপেক্ষা করে নম্রতার কাছে চলে গেল সভ্যতা। নালিশ করে বলল, ‘তোর আব্বু আমাকে ঝামেলা মনে করে। বাড়ি থেকে তাড়াতে চায়।’
নম্রতা রাগিভাব নিয়ে তাঁকাল, বাবা খানিকটা ভীতিভাব বজায় রাখেন চেহারায়। নম্রতা মা-কে বলল,
‘এসেই কি শুনছি আম্মু? আব্বু এসব বলেছে? সকাল সকাল এরকম সত্য বলতে হয় না। তোমরা জানো না?’

সভ্যতা নম্রতার হাত ছেড়ে মাহিনকে বলল, ‘এখুনি বউ নিয়ে ফেরত যাও। আমাকে ঘসেটি বেগম বলতে না? এখন দেখো আসল ঘসেটি তোমার বাড়িতে চালান হয়ে গেছে।’
মাহিন বলল, ‘আরেহ্ না, তোর সঙ্গ পেয়ে একটু এমন হয়েছে। আমার বাড়িতে কিছুদিন থাকলে তোর থেকে পাওয়া সব বদগুণ চলে যাবে।’

সভ্যতা সবার দিকে তাঁকিয়ে বলল, ‘সত্যি করে বলো তো, আমি এ বাড়ির মেয়ে তো? বিয়ে হতে না হতেই সবাই মিলে কোন শত্রুতা মেটাচ্ছো?’
মাহিন বলল, ‘আসার সময় দেখলাম,একজন কাঁদতে কাঁদতে চলে যাচ্ছে। কাঁদিয়েছিস কেন?’
‘আমি কখন কাঁদালাম? উনি-ই তো জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।’

বাবা থমথমে গলায় বলে উঠলেন, ‘বিয়েটা দ্রুত দিতে হবে। নাহলে মুক্তা ভাবির মতো কেউ এসব দেখলে মান-সম্মান থাকবে না। রাস্তাঘাটে ছেলে-মেয়ে দুটো যা-সব করে বেড়াচ্ছে..’
নম্রতা সায় দিল, ‘ঠিক। পরীক্ষার পর দ্রুত একটা ডেট ফিক্স করো।’

সভ্যতা অসহায় কন্ঠে বলল,’আমি কিছু করিনি আব্বু। আমার মন কাঁচের মত স্বচ্ছ। যদি ভুল কোনো চিন্তা থাকত তাহলে কি সবার সামনে সবকিছু বলে দিতাম? আর রাস্তাঘাটে নয়, গেটের ভিতরে ছিলাম আমরা।’

মাহিন বলল, ‘তা কোন কাঁচ রে পিহু? নিশ্চই সাদা কাঁচ নয়। থাই গ্লাস নাকি? যে তোকে থাই স্যুপ খেতে দিলনা তার সঙ্গে তুই থাই গ্লাসের মন বিনিময় করছিস?’

সভ্যতা অতিষ্ঠ গলায় বলল, ‘তোমাদের সঙ্গে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাবো।’
মা ঠোঁট চেপে হাসলেন। দুষ্টুমি করে বললেন, ‘এজন্যই বুঝি অন্যকারোর সাথে থাকতে চাচ্ছিস?’

সভ্যতা ক্রোধ নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। নম্রতা মা-কে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘কি হয়েছে? ওকে এভাবে রাগাচ্ছিলে কেন?’
বাবা বললেন,’তোর বোন প্রেমে পড়েছে।সরাসরি স্বীকার করেছে মাশহুদকে বিয়ে করতে চায়।’
নম্রতা অবাক হয়ে বলল, ‘সত্যিই?’

বাবা গম্ভীরগলায় বললেন,’হুম,কিন্তু কথা হচ্ছে ছেলেটা ঠিক কিভাবে কেঁদেছে যে কয়েকমুহূর্তের মধ্যে আমার মেয়েটা গলে গেল।ভালো করে একটু শুনে দেখিস তো কুহু। এভাবে কান্নাকাটি করে, ব্লাকমেল করে দেখছি আমার চোখের মণি লুট করে নিল।আসলেই সুবিধার না এই ছেলে। নাহ্ ব্যাপারটা নিয়ে আরেকবার ভাবতে হবে। এই ছেলের সাথে বিয়ে দিলে আমার মেয়েটা আমাদের ভুলে যেতে পারে। এমন সেন্সিটিভ সমস্যার সমাধান না হলে বিয়ে ক্যান্সেল।’
মাহিন হেসে বলল, ‘আসলেই। চারদিনে এই অবস্থা। বিয়ের পর কি হবে?’
.
.
মাশহুদ ফোন করছে। সভ্যতা ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে। রিসিভ করে কি বলবে বুঝতে পারছে না। একটু আগে আম্মুকে কল করে জানিয়েছে সে পৌঁছে গেছে। মাশহুদ পুনরায় ফোন করতেই সভ্যতা রিসিভ করে কল। ওপাশ থেকে অস্থিরকন্ঠে প্রশ্ন করে মাশহুদ,
‘কোথায় ছিলে? সেই কখন থেকে ফোন করছি..’
‘বলুন।’
‘অফিসে যাচ্ছি। মিটিং শেষ হলে কল দিব। তোমার তো আজ ক্লাস নেই। ফোনটা কাছে রেখো..’
‘এত উইয়ার্ড কথা বলবেন না তো। মনে হচ্ছে নয়া নয়া প্রেম করছি, ‘তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না’ টাইপ প্রেমের ফিল পাচ্ছি। অসহ্য লাগছে।’
মাশহুদ হেসে ফেলল, ‘তুমি যেটাকে অসহ্য বলছ সেটা পাওয়ার জন্য কতমানুষ আফসোস করে, জানো?’

সভ্যতা বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘আমি তো করছি না।’
‘হুম। যে যেটা চায় সে সেটা পায় না, আর যেটা পায় সেটা চায়না। এই যেমন আমি চেয়েছিলাম, আমি বাইরে এলে কেউ একটু চিন্তা করুক, ফোন করে খোঁজখবর নিক, একটু ভালোবাসা দেখাক। অথচ পেলাম না কিন্তু তুমি এসব না চেয়েও পাচ্ছ..’
‘এসব পেতে এত মন চাইলে,আপনার বান্ধবি ললিতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তারা আপনার খোঁজখবর নিতে বেশ আগ্রহী।’
‘আচ্ছা..’
কল কেটে গেল। সভ্যতা ফোনের দিকে তাঁকিয়ে হতভম্ব হয়ে যায়। ‘আচ্ছা’ মানে কি? সভ্যতা মেজাজ খারাপ করে পুনরায় কল করে কিন্তু ফোন বন্ধ।

সভ্যতা পায়চারি করছে ঘরে। নম্রতা ও মাহিন দরজার মুখে এসে দাঁড়ায়। নম্রতা প্রশ্ন করে,
‘কি হয়েছে?’
‘ফোন বন্ধ। মুখের ওপর ফোন কেটে দিয়েছে।’
মাহিন অবাক হয়ে বলল, ‘কি সাং’ঘা’তিক ঘটনা। তুই কি বলেছিস ওকে?’
সভ্যতা চোখমুখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,’আমি কি বলেছি মানে?’
‘তুই কিছু না বললে, ও ফোন কেটে দিল কেন?’

সভ্যতা এবার উত্তর দিল না। নম্রতা-রা চলে যাবে। তাই কথা না বাড়িয়ে দেখা করেই চলে গেল। সভ্যতা পড়তে বসে। সামনেই পরীক্ষা, রেজাল্ট খারাপ করা যাবে না। টানা দুইঘন্টা পড়ার পর, সভ্যতা ফোন হাতে নিল। ১২টা মিসড কল, ৫টা এসএমএস পাঠিয়েছে মাশহুদ। ফোন সাইলেন্ট করা ছিল তাই টের পায়নি সভ্যতা। নোটিফিকেশন দেখে সভ্যতার বুক ধড়ফড় করে উঠলো। হুট করেই কান্না চলে এলো। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলো সে। রিসিভ হলো সময় নিয়ে,

‘সরি, সরি! ফোন টেবিলের ওপর ছিল। তখন ফোনের চার্জ শেষ হওয়ায়, বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। চার্জ দিয়ে কত বার কল করলাম, রিসিভ করলে না যে?’

সভ্যতা কাঠখোট্টা গলায় প্রশ্ন করে,’আপনি কি এই দেশে থাকবেন?’

‘মানে?’

‘আপনি ফিরে যেতে চেয়েছিলেন।এবার তো আমেরিকায় সেটেল হতে চেয়েছিলেন। তাই না?’

‘চেয়েছিলাম। এখনও ইচ্ছা আছে,কিন্তু তুমি হঠাৎ এসব জিজ্ঞেস করছো কেন? কি হয়েছে?’

‘শুনেছি, আপনি জেদ ধরে বসে আছেন, বিয়ের পর বউ নিয়ে চলে যাবেন। আন্টির কথাও শোনেননি, বাড়িতে এটা নিয়ে ঝামেলা করেছেন। শেষে সবাই রাজি হয়েছে আপনার কথায়।আমার পরিবারও চায় বিয়ের পর আমি আপনার সাথে দেশের বাইরে গিয়ে বিলাসবহুল জীবন যাপন করি কিন্তু আমি কখনও দেশের বাইরে যাবো না। আব্বু আম্মুকে ছেড়ে কোথাও যাওয়া সম্ভব না। এটা-ই আমার দ্বিতীয় এবং মূল কারণ আপনাকে বিয়ে করতে না চাওয়ার।’

ওপাশ থেকে কোনো প্রত্যুত্তর পাওয়া গেল না। সভ্যতা ফোন চেক করে, কল গেটে গেল কিনা? কিন্তু নাহ্, কল কাটেনি।মাশহুদ-ই কথা বলছে না।চুপ করে আছে কেন? মাশহুদ ক্ষীণস্বরে কিছু একটা বলেছে কিন্তু শব্দগুলো সভ্যতার কর্ণকুহরে পৌঁছানোর আগেই কল কেটে গেল। সভ্যতার ফোনের চার্জ শেষ। সভ্যতা দ্রুত ফোন চার্জে দিয়ে তিক্ত স্বরে বলল, ‘উফ!ফোনটাও ম’রার আর সময় পেল না, অসহ্য!’

চলবে…