অনুভবে তুমি পর্ব-১৮+১৯

0
664

#অনুভবে_তুমি
#সিজন_০২
#পর্ব_১৮
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

তুমি?তুমি এখানে?

অতশী কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা বাসার ভিতর চলে গেলো।কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলো না।
সেজন্য অতশী তার স্টুডেন্ট ইশান আর ইমান এর নাম ধরে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো।ইশান?ইমান?
কারো কোনো সাড়াশব্দ নাই।এবার অতশী মৌরিকে ডাকলো।মৌরি?

ইভান তখন অতশীর কাছে এগিয়ে এসে বললো তোমার প্রবলেম টা কি?এভাবে সবাইকে ডাকছো কেনো?

অতশী এবারও কোনো উত্তর দিলো না।সে এবার চিৎকার করে ডাকলো,আন্টি?
বাসায় কি আছেন?

ইভান তখন বললো না কেউ নাই বাসায়।কি জন্য এসেছো এখানে?

অতশী সেই কথা শুনে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।ইভান কিছুই বুঝতে পারলো না।সে তখন অতশীর পিছু পিছু চলে গেলো আর বললো,দাঁড়াও বলছি?কি জন্য এসেছিলে বাসায়?আর কি জন্যই বা যাচ্ছো?

অতশী প্রতিজ্ঞা করেছিলো ইভানের মুখ আর কখনোই দেখবে না বা তার সাথে কোনো কথাও বলবে না।
সেজন্য ইভানের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিলো না সে।এমনকি তার দিকে তাকালোও না।

ইভান অতশীর এমন ঘাড় তেঁড়ামি দেখে দৌঁড়ে গিয়ে শক্ত করে অতশীর হাত টেনে ধরলো।আর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।

অতশী এবারও নিরব ই থাকলো।তবে সে জোরে করে একটা ঝাটকা দিয়ে তার হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো।

ইভান তখন বললো এতো তেজ কাকে দেখাচ্ছো?না,ভালোবাসি নি বলে ক্ষেপে আছো আমার উপর?

অতশী তখন বললো,হাত ছাড়ুন আমার, ব্যাথা লাগছে।
এতো বেশি অহংকার মোটেও ভালো না।আর আমি আপনাকে কখনোই ভালোবাসি নি।আমি ভালোবেসেছিলাম আমার সেই চিরকুট ওয়ালা প্রেমিক কে।সুতরাং এতো বেশি পাট নেওয়ার কোনো মানেই হয় না।

ইভান তখন বললো,আচ্ছা বাদ দাও এসব আলতুফালতু কথা।এ বাসায় কি জন্য এসেছো?

–আপনাকে বলতে যাবো কেনো?হাত ছাড়ুন আমার।

–আমার প্রশ্নের উত্তর না দিলে জীবনেও ছাড়া পাবে না।
এদিকে অতশী চেষ্টা করেই যাচ্ছে।তবুও ইভানের হাতের মধ্যে থেকে তার হাত বের করতে পারলো না।

হঠাৎ সেখানে ইভানের বাসার কেয়ারটেকার লতিফ আংকেল আসলো।আর ইভান কে এভাবে অতশীর হাত ধরা দেখে বললো,স্যার কি হইছে?কোনো প্রবলেম?

–চোখ কোথায় থাকে আপনাদের?বাসায় বাহিরের মানুষ ঢুকলো কিভাবে?

লতিফ তখন বললো স্যার ইনি তো মিস অতশী।আমাদের ইশান আর ইমান স্যারের ম্যাডাম।

–হোয়াট?এই পিচ্চি মেয়ে পড়ায় ওদের?পড়াতে পারে?ওরা যে দুষ্টু!কি করে সামলায়?

–বলতে পারলাম না স্যার।

অতশী চাইছিলো আর কোনো কথা বলবে না।কিন্তু না বলে থাকতেও পারলো না সে। অতশী তখন বললো,
ভার্সিটিতে পড়াশোনা করা স্টুডেন্ট কখনো পিচ্চি হয় না।আর কি বললেন?পড়াতে পারি কি না?সেটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।আংকেল যাচাই বাছাই করেই নিয়োগ দিয়েছেন আমাকে।

ইভান অতশীর এমন দম্ভ দেওয়া কথা শুনে ভীষণ অবাক হলো।সে অতশীর দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো।

অতশী তখন বললো,আমার পরিচয় নিশ্চয় এখন পেয়ে গেছেন।হাত টা দয়া করে ছাড়ুন এবার।

ইভান সেই কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে অতশীর হাত ছেড়ে দিলো।অতশী তখন লতিফ কে বললো,আংকেল বাসায় কেউ নাই কেনো?
–সবাই মুহিব স্যারের এক ফ্রেন্ডের বাসায় দাওয়াত খেতে গেছে।
–কোনদিন আসবে?
–আজকেই আসবে।
–ও আচ্ছা,আমি তাহলে আজ আসি।কালকে আসবো।এই বলে অতশী চলে গেলো।

অতশীর মনে এতই রাগ যে সে ইভানের ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞেস করলো না।ইভান এ বাড়িতে কেনো এসেছে, এ ব্যাপারে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।

ইভান নিজেও বেশ আশ্চর্য হলো।অতশী তাদের বাসাতেই টিউশনি করতে আসে, অথচ সে জানে না।আর জানবেই বা কি করে সে তো সারাদিন বাসাতেই থাকে না।সকালে নাস্তা খেয়ে বের হয় আর দুপুরে এসে লাঞ্চ করে আবার চলে যায়।

পরের দিন আবার টিউশনি করাতে আসলো অতশী।অতশীকে দেখামাত্র মৌরি দৌঁড়ে এলো।কারণ সে অতশীর আপটেড নিউজ জানার জন্য বেশ আগ্রহী।কারন সেই তো বিয়ে তে রাজি হওয়ার বুদ্ধি টা দিয়েছিলো।তার ফলাফল কি দাঁড়ালো সেটা শোনার জন্য মৌরি অতশীকে টেনে তার রুমে নিয়ে গেলো।
অতশীকে তখন বললো, আমি মাত্র আসলাম।আগে ওদের পড়ানো টা শেষ করি। তারপর সব বলছি।
মৌরি তখন বললো,আমার আর তর সইছে না।প্লিজ শর্টকাট এ বলো কিছু।তোমার সেই অচেনা নাম না জানা প্রেমিকের দেখা পেলে?
–না।পাই নি।
–তোমার বিয়ের কথা শুনেও আসে নি?
–না।
–কি বলছো এসব?তাহলে কি তোমার ঐ অপছন্দের মানুষের সাথেই বিয়ে হয়ে গেছে?
–ওর সাথেও হয় নি।
মৌরি সেই কথা শুনে বললো,বেঁচে গেছো বান্ধুবী। এখন শোনো আরেকটা উপদেশ দেই।তোমার সেই নাম না জানা প্রেমিকের আশা বাদ দাও।সে যখন তোমার বিয়ের কথা শুনেও আসে নি,তাহলে আর জীবনেও আসবে না।
অতশী মাথা নাড়িয়ে ইশান আর ইমান কে পড়াতে চলে গেলো।

অতশী ইশান আর ইমানের পড়াশোনা শেষ করেই তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে গেলো।কিন্তু দরজার কাছে যেতেই আবার ইভানের সাথে দেখা।অতশী ইভান কে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেলো।আর ইভান ও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বাসার ভিতর প্রবেশ করলো।হঠাৎ অতশী খেয়াল করলো গার্ডেনে মুহিব সাহেব বসে আছেন।অতশী সেজন্য দৌঁড়ে ওনার কাছে চলে গেলেন।
কারণ অতশী তার অয়ন ভাইয়ার কেসটা নিয়ে কথা বলতে চায়।
অতশী মুহিব সাহেব কে সালাম দিলো।আর বললো,আংকেল আপনি কি ফ্রি আছেন?
ভাইয়ার ব্যাপারে কিছু কথা ছিলো।
মুহিব সাহেব দরকারি কিছু ফাইল নিয়ে কাজ করছিলেন।সেজন্য বললেন,
–আজ যে সময় নেই মা।কাল কথা বলি?
–কিন্তু আপনাকে তো পাওয়াই যায় না আংকেল।একটা নির্দিষ্ট সময় বলুন।
–ভীষণ ব্যস্ত থাকি মা।ইদানীং অনেকগুলো কাজ হাতে এসেছে।সামলাতেই পারছি না । সকাল ছাড়া আমাকে পাবে না তুমি।এক কাজ করো, কাল সকাল ৮ টায় এসো একবার।
–ওকে আংকেল।এই বলে অতশী চলে গেলো।

অতশী পরের দিন ঠিক সকাল আটটায় আসলো ইভানদের বাসায়।গেট খোলায় ছিলো সেজন্য সে সোজা ঢুকে পড়লো। বাসায় প্রবেশ করতেই দেখে ইভান ব্যায়াম করছে।হাতের উপর ভর দিয়ে ওঠানামা করছে।পাশে ইশান আর ইমান ও লাফালাফি করছে।অতশী বুঝতে পারছে না কিছু।এই ছেলেটা এতো সকালে এখানে কেনো?অতশী ইভান কে ভেবে সময় নষ্ট না করে বাসার ভিতর প্রবেশ করলো।

বাসার ভিতর যেতেই দেখে,আংকেল এখনো ব্যস্ত।ল্যাপটপ এ কাজ করছে।
অতশী সেজন্য চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো।
মুহিব সাহেব অতশীকে দেখে বললো,তুমি এসেছো?বসো এখানে।
অতশী মুহিব সাহেবের পাশে বসলো।মুহিব সাহেব অয়ন কে নিয়ে কথা বললো।তিনি জানালেন অয়নের কেস টা সলভ হয়েছে।কিছুদিনের মধ্যেই অয়ন ছাড়া পাবে।অতশী তো খুশিতে কথাই বলতে পারছে না।কারণ তার ভাই ই সব। অয়ন যদিও অতশীকে খুব শাসন করে,সারাদিন বকাঝকা করে, তবুও আজ বুঝতে পারছে তার ভাই এর গুরুত্ব।

হঠাৎ বাসার মধ্যে ইভান প্রবেশ করলো।একদম খালি গায়ে ছিলো সে।ব্যায়াম করার ফলে শরীর ঘেমে গেছে সেজন্য গায়ের টি শার্ট টা খুলে হাতে নিয়েছে।
এদিকে ইভান এতো সকালে অতশীকে দেখবে কোনোদিনও ভাবে নি।ইভান তাড়াতাড়ি করে টি শার্ট টা গায়ে দিলো আবার।এবং সোজা তার রুমে চলে গেলো।

এদিকে ইশান আর ইমান অতশীকে দেখামাত্র দৌঁড়ে এলো,মেম এতো সকালে কেনো?এখন তো আমরা পড়বো না।
–এখন আমি পড়াতে আসি নি।আমি একটু তোমাদের আব্বুর সাথে কথা বলতে এসেছি।
–ও আচ্ছা।ঠিক আছে মেম।

ইভানের আম্মু এগিয়ে এসে বললো,তোমার কাজ যদি শেষ হয়ে থাকে এবার টেবিলে গিয়ে বসো।নাস্তা দিয়েছি।ইভানের আব্বু সেই কথা শুনে বললো,এই তো যাচ্ছি।
মা তুমিও এসো।
অতশী তখন বললো, ধন্যবাদ আন্টি।কিন্তু আমি নাস্তা করেই এসেছি।আজ আমি আসি।এখন ভার্সিটিতে যাবো।

–না না এভাবে না খেয়ে যাওয়া যাবে না।অল্প করে খেতেই হবে।এই বলে ইভানের আম্মু অতশীকে টেনে টেবিলের কাছে নিয়ে গেলো।ইশান আর ইমান আগেই বসেছে টেবিলে।কিছুক্ষন পর মৌরিও এলো।সে অতশীকে এতো সকালে দেখে বললো, ব্যাপার কি?আজ এতো সকালে?
–আংকেলের সাথে একটু কথা ছিলো।
–ও,তোমার ভাইয়ার কি খবর?
–কিছুদিনের মধ্যেই ছাড়া পাবে।
–ওয়াও,গুড নিউজ।

ইভানের আম্মু তখন মৌরিকে ধমক দিয়ে বললো,মেয়েটাকে একটু খেতে দে।পরে কথা বলিস।মৌরি সেই কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো।

হঠাৎ ইভানের চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেলো। সে তার আম্মুকে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো।
আম্মু?আম্মু?
তার আম্মু ডাইনিং রুম থেকেই উত্তর দিলো কি হয়েছে?
ইভান তখন রুম থেকে বের হয়ে এসে বললো,আমার ব্লাক কালারের টাউজার টা কই?খুঁজে দিয়ে যাও।
ইভানের আম্মু তখন ইভানের রুমে চলে গেলো।

এদিকে অতশী খাবার হাতে নিয়ে বসে আছে।এই খাবার কিছুতেই তার মুখের ভিতর ঢুকছে না।সে কখনো ভাবতেই পারে নি এটা ইভানের বাড়ি।ইভান এই বাড়িরই ছেলে।
অতশী তখন খাওয়া বাদ দিয়ে উঠলো।
–এই যাচ্ছো যে?কিছুই তো খেলে না?
–আরেকদিন খাবো।এই বলে অতশী চলে গেলো।

অতশী আগেই কিছুটা আন্দাজ করেছিলো।কারন ইশান আর ইমানের নামের সাথেও বেশ মিল আছে ইভানের।সেদিন আবার লতিফ আংকেল ও স্যার স্যার বলে সম্বোধন করছিলো।
অতশী আজ পুরাই শকড খেয়ে গেলো।সে ভাবতেই পারছে না এই ইভানের বাসাতেই সে রোজ রোজ আসে?এখন কি হবে তার?
না আমি এ টিউশনি আর করবো না।ওর মুখ আমি দেখবো না।

–কি হলো ম্যাডাম?আপনার কি শরীর খারাপ?এভাবে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?

অতশী কথাটা শুনে একদম চমকে উঠলো।এতোক্ষন ইভানের কথা ভাবতে ভাবতে সে কিছুক্ষনের জন্য অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলো।
কিন্তু সে যখন পিছন ফিরে তাকালো দেখে ইভান বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অতশী তখন ইভান কে যাওয়ার জন্য সাইড দিলো।

কিন্তু ইভান বাইক স্টার্ট না দিয়ে অতশীর পাশে এসে দাঁড়ালো আর বললো, ম্যাডাম,এতো অন্যমনস্ক কেনো?আমাকে নিয়ে ভাবছেন নাকি?

অতশী ইভানের কথা শুনে বললো, নিজেকে কি ভাবেন বলুন তো?আপনার কথা ভাবতে যাবো কেনো?আর আপনি খবরদার ম্যাডাম ম্যাডাম বলে ডাকবেন না।
–আজ থেকে আমি ম্যাডাম ম্যাডাম বলেই ডাকবো।এই বলে ইভান ভার্সিটির দিকে চলে গেলো।

অতশীর ভীষণ রাগ হচ্ছে ইভানের উপর।সে তো তার থেকে দূরে দূরেই থাকতে চাচ্ছে।তবুও বার বার কেনো দেখা হচ্ছে এই ছেলের সাথে?
অতশী নিজেও আর সময় নষ্ট করলো না।দ্রুত হেঁটে সেও ভার্সিটিতে চলে গেলো।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহসান এবারও জয় লাভ করেছে।সেই সুবাদে পুরো ভার্সিটির স্টুডেন্ট দের জন্য একটা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছে আহসান।অতশী জানতো না এই অনুষ্ঠানের কথা।নেহা ফোন করেছিলো অতশীর আম্মুকে,কিন্তু অতশীর আম্মু বলতে ভুলে গিয়েছে অতশীকে।সেজন্য অতশী আজ ক্লাস করার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।

অতশী ভার্সিটির ভিতর প্রবেশ করতেই তার ফ্রেন্ডরা এগিয়ে আসলো সেখানে।আর তারা অতশীকে নিয়ে প্যানেলের ভিতর চলে গেলো।অতশী ভীষণ অবাক হলো!
তখন নেহা বললো আজ কোনো ক্লাস হবে না।কারন আজ শুধু আনন্দের দিন।
অতশী চারিদিকে ভালো করে তাকালো।সুন্দর করে সাজানো হয়েছে প্যানেল টি।পুলিশও এসেছে।তারা কড়া পাহারা দিচ্ছে।কারন কিছুদিন আগে আহসানের উপর এট্যাক হয়েছিলো।আজ যেহেতু আহসান নিজে এই অনুষ্ঠানে এটেন্ড থাকবে সেজন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।হঠাৎ অতশীর চোখ গেলো ইভানের দিকে।ইভান তার ফ্রেন্ডদের সাথে গল্প করছে।অতশীর সামনের বেঞ্চেই ইভান বসেছে।অতশী বুঝতে পারছে না কিছু।সে যতই চেষ্টা করছে যে ইভান কে আর দেখবে না কিন্তু বার বার তার ইভানের সাথেই দেখা হচ্ছে।

আহসান মঞ্চে ওঠার সাথে সাথে সবাই জোরে জোরে হাততালি দিতে লাগলো।ভার্সিটির এক বড় আপু সুন্দর একটা ফুলের তোড়া দিয়ে আহসান কে বরণ করে নিলো।আহসান বেশিক্ষন দেরী করবে না।সে একটু বক্তৃতা দিয়েই চলে যাবে।
হঠাৎ গ্যালারির ভিতর থেকে মুখ চোখ বাঁধা একজন ছেলে আহসান কে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা গুলি করলো।
গুলির শব্দ শুনে কে কোনদিকে দৌঁড়াচ্ছে তার ঠিক নাই।
এবার পুলিশও পালটা আক্রমন করলো।মুহুর্তের মধ্যে ভার্সিটির পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে গেলো।স্টুডেন্ট রা জীবনের ভয়ে কে কাকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যেতে লাগলো।
আর আক্রমনকারী ছেলেটা ভীড়ের মধ্যে মিলিয়ে গেলো।কেউ তাকে ধরতে পারলো না।
অতশী এতোকিছুর মধ্যেও ইভান কে খুঁজতে লাগলো।কারণ ইভান তো তার সামনের বেঞ্চেই ছিলো।কই গেলো সে?
অতশীকে এরকম দাঁড়িয়ে থাকা দেখে লিশা বললো,তুই কি মরার জন্য এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস?চল? এই বলে লিশা টানতে টানতে অতশীকে নিয়ে গেলো।

হঠাৎ অতশী দেখলো ইভান আর তার বন্ধুরা একজন ছেলেকে শক্ত করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।তা দেখে পুলিশ এগিয়ে আসলো।ইভান তখন ছেলেটিকে ধাক্কা মেরে পুলিশের হাতে তুলে দিলো।পুলিশ ছেলেটিকে হ্যান্ডক্যাপ লাগিয়ে গাড়িতে ওঠালো।এদিকে ইভানের হাতে গুলি লেগেছে যার কারনে প্রচুর রক্ত ঝরছে।অতশী তা দেখে চিৎকার করে বললো,ইভান?
ইভান অতশীর দিকে তাকাতেই একটা এম্বুল্যান্স এসে ইভান কে নিয়ে গেলো।

চলবে,

#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_১৯(বোনাস পর্ব)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

আজকের ব্রেকিং নিউজ;সি আই ডি অফিসার ইভান চৌধুরী সন্ত্রাসীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। তিনি আহত হলেও সন্ত্রাসীকে কিছুতেই পালিয়ে যেতে দেন নি।নিজের জীবন বিপন্ন করে সন্ত্রাসী টির উপর এট্যাক করেন।আর তাকে ধরে ফেলেন।
আজ ছাত্রনেতা আহসান ভার্সিটিতে একটা সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন।তিনি মঞ্চে ওঠার কিছুক্ষন পরেই হঠাৎ একজন সন্ত্রাসী তাকে একের পর এক গুলি করতে থাকে।কিন্তু আহসানের কিছুই হয় নি।কারন তিনি আজ সেফটি জ্যাকেট পরে গিয়েছিলেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কি তিনি আগে থেকেই জানতেন আজ তার উপর হামলা হবে?
ওনাকে প্রশ্ন করা হলে উনি জানান এর আগেও তার উপর হামলা হয়েছে সেজন্য তিনি এবার নিজের নিরাপত্তার জন্য সেফটি জ্যাকেট পরে এসেছেন।

এদিকে সন্ত্রাসটি পালিয়ে গেলে অফিসার ইভান আর তার তিনজন সহচরী ধাওয়া করে তাকে।তখন সন্ত্রাসীটি নিজেকে বাঁচানোর জন্য গুলি চালায়।যার একটা গুলি ইভানের বাম হাতে লাগে।
ইভান আর তার তিনজন সহচরী কিভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছলেন তা এখনো ক্লিয়ার করে জানা যায় নি। যেহেতু অফিসার ইভান এখন অসুস্থ সেজন্য ওনার ইন্টারভিউ নেওয়াও সম্ভব হয় নি।তবে গোপনসূত্রে জানা গেছে ইভান আর তার তিনজন সহচরী বেশ কিছুদিন ধরেই ছদ্মবেশে ভার্সিটিতে যাতায়াত করছেন।এর পিছনে নিশ্চয় কোনো রহস্য আছে,যা এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসে নি।

এদিকে অতশী কিছুতেই স্থির হতে পারছিলো না।শুধু বার বার ইভানের ওই রক্তমাখা হাতের ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো।কেনো এমন হচ্ছে তার?নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো।সে শুধু বার বার ঘড়ির দিকে দেখছে।কখন চারটা বাজবে আর সে টিউশনিতে চলে যাবে।বাসায় তার কিছুতেই মন বসছে না।অতশী টিভি টা অন করলো।কিন্তু টিভি দেখতে একদম ইচ্ছে হচ্ছে না।সেজন্য সে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
অতশীর একবার মনে হলো ইভানের এমন একটা অবস্থায় ওদের বাসায় যাওয়া ঠিক হবে না।মনে তো হয় না আজ ওরা পড়তে বসবে।পরে আবার মনে হলো দূর ঘুরেই আসি একবার।এইভাবে সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে অতশী চলেই গেলো ইভানের বাড়িতে।

অতশী ইভানদের বাসায় প্রবেশ করতেই দেখে অনেক লোকজন।অতশী কে দেখে ইভান দের বাসার কাজের মেয়ে রিয়া বললো,ম্যাডাম আজ আপনি চলে যান।আজ ইমান আর ইশান পড়বে না।
অতশী যদিও জানে এর কারণ,তবুও সে জিজ্ঞেস করলো কেনো?আজ আবার কই গেছে ওরা?

–যায় নি কোথাও।সবাই বাসাতেই আছে।আসলে আজ ইভান স্যারের হাতে গুলি লেগেছে।সেজন্য সবাই খুব চিন্তিত আছে।
অতশী সেই কথা শুনে চলে যেতে ধরলো।হঠাৎ কি মনে করে যেনো আবার ফিরে এলো।অতশী তখন রিয়াকে বললো,এখন উনি কেমন আছেন?
–গুলি বের করে ব্যান্ডেজ করা হইছে।এখন সুস্থই আছে।
হঠাৎ মৌরি এলো অতশীর কাছে।সে এসেই বললো,এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে?রুমে যাও।ইশান আর ইমান সেই থেকে অপেক্ষা করছে।
অতশী তখন বললো,রিয়া তো বললো আজ পড়বে না ওরা।আমি সেজন্য চলে যেতে ধরেছিলাম।
–না না পড়বে।যাও তুমি।
অতশী সেই কথা শুনে ইশান আর ইমানের রুমে চলে গেলো।

ব্রেকিং নিউজ দেখে নেহা,লিশা,আর সুইটি একদম শকড হয়ে গেলো।এটা কি দেখছে তারা।সবাই তো ইভান আর তার ফ্রেন্ডদের ভার্সিটির বড় ভাই বলে মানতো।কিন্তু তারা আসলে সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য ছদ্মবেশে রোজ রোজ আসতেন ভার্সিটিতে। নেহা ভীষণ কষ্ট পেলো।কারন সে শুভ্র কে সন্ত্রাস বলে অনেক গালমন্দ করেছে।
লিশা নিউজ টা শুনেই অতশীর আম্মুকে ফোন দিলো।কিন্তু অতশীর আম্মু জানালো অতশী বাসাই নাই।সে টিউশনিতে গিয়েছে।

অতশী মনোযোগ দিয়ে ইশান আর ইমান কে পড়াচ্ছে।
হঠাৎ সে ইভানের গলার স্বর শুনতে পেলো।ইভান চিৎকার করে জোরে জোরে তার ভাইদের ডাকতে ডাকতে রুমে প্রবেশ করলো।
ইভান কে দেখামাত্র ইশান আর ইমান দৌঁড়ে চলে গেলো।
ভাইয়া ডাকছো আমাদের?
–হ্যাঁ।আমার ল্যাপটপ টা খুঁজে পাচ্ছি না।
ইশান তখন বললো,আমরাই নিয়ে এসেছি।দাঁড়াও আনছি।এই বলে ইশান টেবিলের উপর থেকে ল্যাপটপ টা এনে দিলো।
ইভান তা দেখে ভীষণ রেগে গেলো।সে বললো,বারণ করি নি আমার ল্যাপটপে হাত নিতে?কেনো ধরেছিস এটা?এই বলে ইভান তার ভাইদের উপর চড় মারতে গেলো।
ইশান আর ইমান ভয়ে একদম কুঁকড়ে গেছে।কারণ তারা খুবই ভয় পাই ইভান কে।আসলে ইভান সবার সাথেই এমন রুঢ় আচরণ করে।

অতশী এতোক্ষণ চুপ করেই ছিলো।কিন্তু ছোট বাচ্চাদের উপর হাত তোলা দেখে সে বললো,কি করছেন এটা?মারছেন কেনো ওদের?সামান্য ল্যাপটপ ই তো এনেছে?

ইভান তা শুনে বললো,যা বোঝো না সেটা নিয়ে কথা বলতে এসো না।কত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল আছে এখানে আছে জানো তুমি?সামান্য ল্যাপটপ এটা?

অতশী ইভানের হাতের এমন অবস্থা দেখে এতোক্ষন ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলো।মনে মনে কত আফসোস করছিলো।ভালো হাত টা কিভাবে পংগু করে এনেছে!কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ঠিকই হয়েছে।

অতশী নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারছিলো না,সে বিড়বিড় করে বললো,ভদ্র ঘরের ছেলেরা কেনো যে এমন অধঃপতন এ চলে যায় সত্যি আমি বুঝতে পারি না।কি দরকার সন্ত্রাসগীরি করার?এতো ভালো একটা ফ্যামিলির ছেলে কি করে এভাবে পিস্তল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়?যার বাবা একজন এডভোকেট সে কি করে,,,,,,,,,
অতশী পুরো কথা শেষ না করতেই ইভান বললো,তুমি কি বললে এগুলো?আমি কিন্তু সব শুনতে পেয়েছি।তোমাকে না বলেছি বেশি ওভার কনফিডেন্স দেখাবে না।আমার ব্যাপারে এতো নাক গলাও কেনো তুমি?
আর তুমি আজ কি জন্য এসেছো?তুমি তো দেখলেই আমার হাতে গুলি লেগেছে।এজন্য নিশ্চয় বাসার সবাই টেনশনে থাকবে?আজ পড়াতে আসার কি দরকার ছিলো?

অতশী ইভানের মুখে এমন কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো ইভানের দিকে।ইভান তার সাথে কেনো এমন খারাপ আচরণ করে সত্যি সে জানে না।অতশীর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।সেজন্য সে আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

এদিকে ইশান আর ইমান কিছুই বুঝলো না।হঠাৎ কি হলো ম্যামের?তারা ম্যাম ম্যাম বলে ডাকতে লাগলো।কিন্তু অতশী তাদের কথায় কান না দিয়ে সোজা চলে গেলো।

ইভান নিজেও জানে না কেনো এমনভাবে কথা বলে অতশীর সাথে?অতশীর সাথে কেনো সে ভালো করে কথা বলতে পারে না?শুধু অতশী না সবার সাথেই সে এমন খারাপ আচরণ করে।কাউকে কষ্ট দেওয়ার পর তার মনে হয় সে এটা কেনো করলো?

এদিকে ইশান আর ইমান সব ঘটনা খুলে বললো মৌরিকে।তার ইভান ভাইয়া কিভাবে অপমান করলো তাদের অতশী ম্যামকে সেগুলোও বলে দিলো।মৌরি নিজেও ভয়ে কথা বলে না ইভানের সাথে।সে আর কি বিচার করবে ইভানের?সেজন্য সব শুনে চুপচাপ থাকলো।

অতশী পুরো রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো।কারণ ইভানের এমন ব্যবহারে তার ভীষণ খারাপ লাগছিলো।সে ঠিক করলো আর টিউশনি করতে যাবে না ইভানদের বাসায়।

অতশী কিছুদিন ধরে ভার্সিটিতে যায় না।তার মন টা এতোটাই খারাপ যে কারো সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত করলো না।এদিকে মৌরিও বার বার অতশীর আম্মুর ফোনে কল দিতে লাগলো।অতশী তা দেখে মৌরির নাম্বার ব্লক করে দিলো।কারন ও বাড়ির সাথে কোনো সম্পর্ক নাই তার।সে আর টিউশনি করবে না।

প্রায় এক সপ্তাহ পর,
অতশী ভার্সিটিতে যাবে বলে রেডি হচ্ছে।হঠাৎ কে যেনো কলিং বেল বাজালো।অতশী রেডি হচ্ছে দেখে সে আর দরজা খুলতে গেলো না।অতশীর আম্মু নিজেই দরজা খুলে দিলো।অতশীর আম্মু দরজা খুলেই দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে।একদম চেনা যাচ্ছিলো না অয়ন কে।মুখ চোখ একদম শুকিয়ে গেছে।
অয়নের আম্মু অয়ন কে দেখামাত্র তাকে জড়িয়ে ধরলো।আর চিৎকার করে অতশী কে ডাকতে লাগলো।

কিন্তু অয়ন উলটো রাগ দেখালো সবার উপর।সে রাগান্বিত হয়ে বললো,আমি কখনো ভাবতেই পারি নি আমার ফ্যামিলির লোকজন এমন!তারা আমাকে ছাড়ানোর কোনো ব্যবস্থা তো করলোই না,আমাকে একটিবার দেখতেও গেলো না।এই পরিবারের জন্য আমি এতো কষ্ট করি!

অতশী তখন বললো,ভাইয়া আমরা অনেক চেষ্টা করেছি।কিন্ত তোর সাথে দেখা করতে দেয় নি আমাদের।

অয়ন রাগ হয়ে বললো,কে দেখা করতে দেয় নি?নাম বল তার?

অতশী তখন বললো, আমরা তো নাম জানি না কারো।আর কাউকে চিনিও না।তানিম ভাইয়া নিয়ে গিয়েছিলো আমাদের।

তানিমের নাম শোনামাত্র অয়ন চিৎকার করে বললো,ওই হারামির নাম নিবে না কেউ।ও তো একটা প্রতারক। শালা হারামি বেঈমানির শাস্তি দুনিয়াতেই পাইছে।

অতশীর অনেক কিছু জানার ছিলো কিন্তু সাহস করে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।

চলবে,