#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_২০
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
সদ্য জয়েন করা তরুন সি আই ডি অফিসার ইভান চৌধুরী মোটামুটি সুস্থ হয়েছেন।সেজন্য তার একটা ইন্টারভিউ নিয়েছে বাংলা টেলিভিশন। তিনি বাংলা টেলিভিশন কে জানান কিছুদিন তিনি ছদ্মবেশে থাকতে চেয়েছিলেন।আর তার প্রথম টার্গেট ছিলো ভার্সিটিতে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসগুলোকে খুঁজে বের করা।দুই এক দিন পর পর ভার্সিটিতে মারামারি হচ্ছে,এখানে ওখানে লাশ পাওয়া যাচ্ছে,ছাত্র নেতা আহসানের উপর বার বার হামলা করা হচ্ছে।কে করছে এসব?এসব কাজের সাথে কারা কারা জড়িত! সবাইকে খুঁজে বের করে জেলে পুরে দেওয়ার নিয়ত ছিলো তার।কিন্তু সেদিনের সন্ত্রাস হামলায় সন্ত্রাসী কে ধরতে গিয়ে আহত হওয়ার ফলে ক্যামেরাবন্দি হয়েছেন তিনি।মুহুর্তের মধ্যে পুরো নিউজ চ্যানেলে তাকে নিয়েই কথা হয়।যাতে করে তার আসল পরিচয় জেনে যায় সবাই।জানা গেছে তার সাথে আরো তিন জন সহকারী অফিসারও আছেন।যাদের একটাই লক্ষ্য সন্ত্রাস নির্মূল করা।
নিউজ টা দেখামাত্র অয়ন টিভির রিমোট মেঝেতে ফেলে দিলো।আর জোরে জোরে বলতে লাগলো,এই শালা আবার কবে সি আই ডি তে জয়েন করলো!শালার এমনিতেই যে তেজ!তার উপর আবার সি আই ডি অফিসার!
রিমোট পড়ার আওয়াজ শুনে অতশী দৌঁড়ে এলো।সে এসে দেখে মেঝেতে রিমোট পড়ে আছে।সেজন্য সেটা উঠিয়ে অয়নের হাতে দিলো।আর বললো,ভাইয়া কিভাবে রিমোট টা পড়ে গেলো!
অয়ন কোনো উত্তর দিলো না।অতশী সেজন্য চলে যেতে ধরলো। তখন অয়ন বললো কড়া করে এক কাপ চা করে আন তো।আমি ছাদে গেলাম।এই বলে অয়ন তার ফোন টা হাতে নিয়ে ছাদে চলে গেলো।
অতশী চা করার জন্য রান্নাঘরে যেতেই হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। অতশী সেজন্য দরজা খুলতে গেলো।
দরজা খুলতেই দেখে ইভান দাঁড়িয়ে আছে।অতশী ইভান কে দেখামাত্র চমকে উঠলো।যার অহংকারে মাটিতে পা পড়ে না সে এসেছে তাদের বাসায়!অন্যদিকে মনে মনে ভয় পেতেও লাগলো।কারন তার ভাইয়া বাসাতেই আছে।ইভান কে দেখলে কি যে করবে তা সে নিজেও জানে না।
অতশী কিছু বলার আগেই ইভান বললো,আমাদের বাসায় যাও না কেনো?আজ থেকে যাবে।এই বলেই ইভান চলে যেতে ধরলো।
অতশী খুব বেশি অবাক হলো!এ কোন হুকুমদারী ইভানের?মগের মুল্লুক পাইছে নাকি যে উনি যেটা বলবেন সেটাই হবে?অতশী বেশি কিছু বললো না।কারন এখন তর্ক করার সময় নয়।সে শুধু বললো,সরি আমি আর পড়াতে যাবো না।আপনারা অন্য ম্যাডাম ঠিক করেন।
ইভান সেই কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো আর বললো, বাসায় ডাকতে এসেছি দেখে কি ভাব বেড়ে গেলো নাকি?শুনলাম ইশান আর ইমান তোমাকে ছাড়া পড়তে চাইছে না।তাদের মতে তুমি ছাড়া নাকি কেউ আর তাদের পড়াতে পাড়বে না।এই জন্য ডাকতে এলাম।সময় মতো চলে যেও।
অতশী সেই কথা শুনে বললো সবখানেই সন্ত্রাসগীরি মানায় না।আপনি জোর করে আমাকে নিয়ে যেতে পারবেন না।আমি যাবো না বলেছি তো যাবো না।এই বলে অতশী দরজা লাগিয়ে দিলো।ইভান তা দেখে খুব বেশি অপমান ফিল করলো।অতশী তাকে তো বাসার ভিতর ডাকলোই না বরং মুখের উপর না বলে দরজা বন্ধ করে দিলো!
আবার কলিং বেল বেজে উঠলো। অতশী মনে মনে বিড়বিড় করে বললো,এই ছেলে নিজে তো মরবে শেষে আমাকেও মারবে!কিন্তু দরজা খুলে দেখে তার ভাই!
অতশীকে দেখামাত্র বললো,তোকে না বললাম ছাদে চা পাঠিয়ে দিতে।এক কাপ চা বানাতে এতোক্ষন সময় লাগে।
অতশী তখন মিথ্যা কথা বললো যে চিনি নাই ঘরে।
–সেটা আগে বললেই তো হতো।এই বলে অয়ন চিনি আনার জন্য বাহিরে যেতে ধরলো।তখন অতশীর মনে হলো ইভান তো মাত্র চলে গেলো, যদি আবার দেখা হয়!সেজন্য সে অয়ন কে বললো,ভাইয়া যেতে হবে না বাহিরে।পরে খুঁজে পাইছি।আম্মু অন্য জায়গায় রেখেছিলো।
অয়ন সেই কথা শুনে রাগান্বিত ভাবে অতশীর দিকে তাকালো।তারপর তার রুমে চলে গেলো।
অতশী আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে চা বানাতে গেলো।
কয়েক ঘন্টা পর অতশীর আম্মু ডাকতে লাগলো অতশীকে।অতশী তার মায়ের ডাক শুনে দৌঁড়ে গেলো তার রুমে।অতশী রুমে যেতেই তার আম্মু ফোনটা হাতে দিয়ে বললো দেখতো কে ইনি?তোর সাথে কথা বলতে চাইছে।
অতশী ফোন কানে নিতেই অপর পাশ থেকে মুহিব সাহেব বললেন হ্যালো অতশী!
অতশী মুহিব আংকেলের গলা শুনেই চিনতে পারলো,সে তখন বললো আসসালামু আলাইকুম আংকেল, কেমন আছেন?
–জ্বী আলহামদুলিল্লাহ মা।তুমি ভালো আছো তো?তোমার শরীর ঠিক আছে?
–জ্বি আংকেল।
–তাহলে আসো না কেনো বাসায়?ইশান আর ইমান ভীষণ জিদ করছে,তুমি না আসলে পড়বে না।
–না মানে আংকেল ভাইয়া এসেছে তো সেজন্য আর যাচ্ছি না।তাছাড়া ভাইয়া এসব টিউশনি করা পছন্দ করে না।
–ফোনটা অয়ন কে দাও।আমি কথা বলছি।
–না মানে আংকেল ভাইয়া জানতোই না আমি আপনাদের বাসায় টিউশনি করি।প্লিজ আংকেল ভাইয়াকে জানায়েন না।
–যা বলছি সেটাই করো।অয়ন কে ফোন টা দাও।
অতশী পড়ে গেলো মহাবিপদে।সে চাইছিলো অয়ন কে জানাবেই না এই টিউশনির কথা।অতশী অয়ন কে ফোন টা দিয়ে বললো ভাইয়া মুহিব আংকেল কথা বলবে?
অয়ন মুহিবের নাম শুনে বেশ অবাক হলো।সে বললো,কোন মুহিব?
–এডভোকেট মুহিব সাহেব।
–ও,সেটা আগে বলবি না?এই বলে অয়ন অতশীর হাত থেকে ফোন টা নিয়ে নিলো।আর বললো,আসসালামু আলাইকুম স্যার।কোনো প্রবলেম?
–অলাইকুম আসসালাম।না কোনো প্রবলেম নয়।আমি আসলে অতশীকে আমার দুই বাচ্চার টিউশনির জন্য চাচ্ছিলাম।
অয়ন সেই কথা শুনে অবাক হলেও হাসতে হাসতে বললো কি বলছেন এসব আংকেল?অতশী তো নিজেই কিছু বোঝে না।ও পড়াবে আপনার বাচ্চাদের?
–তুমি রাজি কিনা বলো?
অয়ন এখন কি করবে বুঝতে পারছিলো না।কারন মুহিব সাহেবের প্রতি সে এমনিতেই অনেক কৃতজ্ঞ।এই দুঃসময়ে উনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি কোনো স্বার্থ ছাড়াই তাকে জেল থেকে বের করার জন্য লড়াই করেছেন।কিন্তু অতশীকে অয়ন নিজে পাঠাবে অন্যজনের বাসায় টিউশনি করাতে এটা সে মানতে পারছিলো না।তখন অয়ন বললো,আসলে আংকেল আমি চাইছিলাম না অতশী কারো বাসায় গিয়ে টিউশনি করুক।ব্যাপার টা আমার ভালো লাগে না।সরি আংকেল মন খারাপ করেন না।যদিও আপনি অনেক বড় উপকার করেছেন আপনার অন্য কোনো হেল্প লাগলে অবশ্যই আমাকে সবার আগে পাবেন।এই বলে অয়ন ফোন রেখে দিলো।
অয়ন ফোন রেখে দিয়ে ভাবতে লাগলো,ব্যাপার কি? হঠাৎ মুহিব সাহেব অতশীকে টিউশনি করার জন্য ডাকছে কেনো?সে তখন অতশীকে ডাকতে লাগলো।
অতশী?অতশী?এদিকে আয় তো?
অতশী ভয়ে ভয়ে তার ভাই এর সামনে চলে গেলো।
অয়ন তখন অতশীকে জিজ্ঞেস করল,এডভোকেট মুহিব তোকে চিনলো কি করে?উনি হঠাৎ টিউশনি করার প্রস্তাব দিলেন কেনো?
–না মানে ভাইয়া?মানে হচ্ছে?
–কি মানে মানে করছিস?পরিষ্কার করে বল।
অতশী বলতে চাইছিলো না।কিন্তু না বলেও কোনো উপাই দেখছে না।এই কথা টা লুকালে ভাইয়া পরে আরো বেশি রাগ হবে।সেজন্য অতশী বললো,ভাইয়া আমি কিছুদিন ধরে ওনার দুই বাচ্চাকে টিউশনি করায়।কিন্তু তুই বাড়ি আসাতে আর যাই না।সেজন্য উনি আবার ডাকছেন ওনার বাচ্চাদের পড়াশোনা করানোর জন্য।
অয়ন আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।তুই টিউশনি করাতিছ?কেনো?তোকে টিউশনি করতে হবে কেনো?আম্মু বারণ করে নি?দাদী কিছু বলে নি?
অতশী তখন বললো,বলেছিলো,কিন্তু আমি তবুও গিয়েছিলাম।কারন ওনারা অগ্রিম কিছু টাকা দিয়েছিলেন।তুই বাসাতে ছিলি না।হাতে টাকাও ছিলো না আমার।
অয়ন সেই কথা শুনে বললো, কেনো আমার ফ্রেন্ডরা টাকা পয়সা দিয়ে যায় নি?তুই টাকার অভাবে টিউশনি করাতে গিয়েছিস?
–না দেয় নি।একদিনও কেউ আসে নি বাসায়।শুধুমাত্র তানিম ভাইয়া ছাড়া।
অয়ন তখন চিৎকার করে বললো, সব কয়টা শালা বেঈমান।আমাকে যুক্তি-বুদ্ধি করে ফাসাতে চাইছিলো।তানিম এমন ভাবে জাল বিছাইছে যে সবাই ওর ফাঁদে পা দিয়েছিলো।ভাগ্যিস শালারে মেরে ফেলেছে তা না হলে আমি নিজেই ওকে বাঁচতে দিতাম না।
তোর জীবন টা নিজের হাতে আল্লাহ বাঁচায়ছে।আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।
অতশী তখন হঠাৎ করেই বললো ভাইয়া,তাহলে তানিম কে ওরা মারলো কেনো?ওরা তো সবাই একজোট হইছিলো।
–সেটা তুই জেনে কি করবি?
তখন অতশী বললো,ভাইয়া তানিম যতই খারাপ করুক না কেনো সেই কিন্তু এডভোকেট মুহিব কে তোর কেসটা সলভ করার জন্য ঠিক করেছিলো।
–এসব রাজনীতি তুই বুঝবি না।অনেক পেজ ওর মাথায়।আম্মুর মন ভুলে সে যখন বুঝতে পারছে তোর সাথেই ওর বিয়ে হবে সে তখন আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে মাত্র।পাঁকা খেলোয়াড় একটা।
অতশী আর কোনো প্রশ্ন না করে তার রুমে চলে যেতে ধরলো হঠাৎ অয়ন বললো,এ মাস পূরন হতে আর কতোদিন আছে?
–কিসের মাস?
–কিসের মাস মানে?টিউশনির জন্য যে অগ্রিম টাকা নিয়েছিস সে মাস শেষ করতে হবে না?
অতশী তখন বললো, ভাইয়া থাক যাবো না আর।ওনাদের টাকা ফেরত দিয়ে দিবো।
–এখন যদি টাকা ফেরত দেই তাহলে মন খারাপ করবে মুহিব সাহেব।ওনাদের কি টাকার অভাব নাকি?সেজন্য এ মাস টা শুধু যা।বুঝেছিস?
অতশী হ্যাঁ বা না কিছুই বললো না।তবে তার আর ও বাড়িতে যেতে একটুও ইচ্ছা করছে না।কারন সে ইভান কে তো পরিষ্কার বলেই দিয়েছে সে আর যাবে না।এরপরও যদি যায় তখন ইভান তো তাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে।যা নয় তাই বলবে।এদিকে তার ভাই যেতে বলছে।অতশীর মাথা পুরাই হ্যাংক হয়ে গেলো।
অয়ন বাড়িতে আসায় অতশী বেশ কিছুদিন ধরে ভার্সিটিতেও যায় না।শুধু ফোনে খোঁজখবর নেয়।সেজন্য অতশী ঠিক করলো আজকে ভার্সিটিতে যাবেই যাবে।আর মিস করবে না ক্লাস।অতশী ভার্সিটিতে যাওয়ার নিয়তে বের হলো বাসা থেকে।কিন্তু কিছুদূর যেতেই তার মনে হলো কে যেনো তাকে ফলো করছে।পিছনে কারো আসার পায়ের শব্দ পেলো সে।অতশী সেজন্য পিছন ফিরে তাকালো।না,কেউ নাই। অতশী আবার হাঁটা শুরু করলো।আবার সেই শব্দ!অতশীর বুক টা কেঁপে উঠলো।সে মনে মনে দোয়া পড়তে লাগলো।আর ভাবতে লাগলো এই ভার্সিটি আসার রাস্তাটা কেনো যে এতো নির্জন!কেউ একজন আসলে তার সাথে সাথে যেতে পারতো সে।
হঠাৎ কে যেনো তার গলা জড়িয়ে ধরলো।অতশী চিৎকার করতে যাবে ঠিক তখনি নেহা তার সামনে এসে বললো,কি রে চিৎকার করছিস কেনো?আমি?
অতশী সাথে সাথে বুকে থু থু ছিটিয়ে দিয়ে বললো,শয়তান মেয়ে!এইভাবে রাস্তায় কেউ জড়িয়ে ধরে।আমি তো ভয় পেয়ে গেছি!
নেহা তখন বললো এতো কিসের ভয় তোর!আর দিনের বেলায় কার এতো বড় সাহস যে তোকে জড়িয়ে ধরবে!
শুনলাম অয়ন ভাইয়া ছাড়া পেয়েছে।আমাদের তো একবারও জানালি না।
অতশী তখন বললো, কেনো জানাতে হবে?তোকে তো আজকাল পাওয়াই যায় না।সারাক্ষন বিজি থাকিস।
নেহা তখন হাসতে হাসতে বললো,নতুন নতুন তো সেইজন্য!
–মানে! প্রেম করছিস নাকি?
–ওইরকমই!
অতশী সেই কথা শুনে বললো,তোদের মনটা এতো বড় কেনো রে!
–বুঝলাম না।
–বলতে চাইছি এই মনে কতজনের বসবাস!দুইদিন পর পর চেঞ্জ হয়!
–না,না।এবার একেবারে পাক্কা।
–তা ছেলেটা কে?
–আগে ঠিকঠাক হোক।তারপর বলবো?
অতশী আর বেশি জোর করলো না নেহাকে।কারণ অতশী অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করছে।আজ তার অয়ন ভাই এর কথা শুনে মনে হলো অনেক শত্রু তার।কেউ যদি আবার তাকে ইউজ করে তার ভাই এর ক্ষতি করে!না,না এভাবে আর একা একা আসা যাবে না।অতশী তখন নেহাকে বললো,এই তোরা ভার্সিটিতে আসার সময় আমাকে ফোন দিবি।আমি বাসা থেকে না বের হওয়া পর্যন্ত খবরদার ভার্সিটিতে যাবি না।
নেহা সেই কথা শুনে বললো ঠিক আছে।আমারও একা একা যেতে ইচ্ছে করে না।
অতশী ভার্সিটিতে ঢুকতেই সবার আগে সেই জায়গাটার দিকে তাকালো যেখানে ইভান আর তার ফ্রেন্ডরা আড্ডা দিতো।কিন্তু আজ কেউ নাই সেখানে।
অতশী দেরী না করে নেহার সাথে ক্লাস রুমে চলে গেলো।অতশী এখনো জানে না ইভান একজন সি আই ডি অফিসার।আর অতশীর ফ্রেন্ডরা ভেবেছে সে হয় তো জানে সবকিছু সেজন্য তারা আর এ নিয়ে আলোচনা করলো না।
ক্লাস শেষ করে অতশী যখন বাড়িতে যাচ্ছিলো তখনো একবার তাকালো সেই জায়গার দিকে।এবারও কাউকে দেখতে পেলো না।অতশী ভাবলো ইভান হয় তো রেস্টে আছে।সেজন্য ভার্সিটিতে আসে না।পরে আবার ভাবলো তাহলে আমাদের বাসায় আসলো কেনো!
দূর!কেনো ভাবি আমি এই ছেলেটাকে নিয়ে।এই বলে অতশী চুপচাপ বাসায় চলে গেলো।
বিকাল চারটা।অতশী ইভানদের বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।আর প্রাকটিস করছে ইভান অপমান জনক কোনো কথা বললে সে তার কি উত্তর দেবে!
অতশীকে বের হওয়া দেখে তার ভাইয়া বললো,কই যাচ্ছিস?
–ভুলে গেলি ভাইয়া?তুই তো যেতে বললি?
–কোথায় যেতে বললাম আমি?
–ওই যে টিউশনি!
–ও,ভুলেই গেছি।চল তোকে রেখে আসি।অয়ন অতশীর সাথে বের হলো।হঠাৎ অয়নের ফোনে কল আসলো।আর অয়ন কল টা কেটে দিয়ে বললো অতশী তোকে একটা সি,এন,জি ঠিক করে দিচ্ছি।সাবধানে যাস।আমার একটা দরকারী কাজ আছে।এই বলে অয়ন একটা সি,এন,জি ডেকে আনলো।আর সি,এন,জি আলাকে বললো সাবধানে নিয়ে যেও মামা।কিছু হলে কিন্তু খবর আছে!
–এভাবে থ্রেড দিয়ে বলছিস কেনো অয়ন?
–সাবধান করে গাড়ি চালাতে বললাম।বাকি টা উপরওয়ালার হাতে।বোন হয় আমার!এই বলে অয়ন অতশীর মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললো আমি চললাম। অয়ন চলে গেলো।এদিকে সি,এন,জিও স্টার্ট দিলো।
অতশী তার ভাই এর এমন কেয়ারগুলো এতোদিন ভীষণ মিস করছিলো।তার ভাই যে তাকে কত ভালোবাসে সেটা শুধুমাত্র সেই জানে!তার ভাই এর শাসন গুলো তার খুব ভালো লাগে।মাঝে মাঝে যদিও রাগ লাগে তবুও তার ভাই তার কাছে সেরা।
#চলবে
#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_২১
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
ভীষণ মিস করেছি তোমাকে।এ কয়দিন কেনো আসো নি?কাউকে কিছু না বলে এভাবে কেউ উধাও হয়ে যায়?কতবার ফোন করেছি!কথাগুলো বলেই মৌরি অতশীকে জড়িয়ে ধরলো।
এতো ভালোবাসে মৌরি তাকে!অতশী ভাবতেও পারে নি কখনো।
অতশী তখন বললো, ভাইয়া জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে সেজন্য আসি নি।আসলে ভাইয়া টিউশনি করা পছন্দ করে না।
–ও,তাই?তাহলে ভাই কে পেয়ে ভুলে গেছো আমাদের!
–না,না ভুলি নি।ভুললে কি আর আসতাম নাকি?
ইশান আর ইমান ও দৌঁড়ে এলো।ম্যাম কেনো আসেন নি পড়াতে?কি হয়েছিলো আপনার?
–এই তো আসলাম।সময় নষ্ট না করে চলো পড়তে বসি।এই বলে অতশী ওদের নিয়ে চলে যেতে ধরলো।
মৌরি তখন অতশীর হাত ধরে বললো অতশী কয়েক মিনিট পর পড়াটা শুরু করো প্লিজ।তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
অতশী তখন বললো,পড়াশোনা টা শেষ করি আগে।তারপর ইচ্ছেমতো গল্প করবো।এই বলে অতশী ইশান আর ইমানের রুমে চলে গেলো।
অতশী ইশান আর ইমান কে অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়াতে লাগলো।তারপর তাদের এক এক করে পড়া ধরতে লাগলো।কিন্তু এই কয় দিনে ছেলেদুটো সবকিছু ভুলে গেছে।অতশী এদের পড়াশোনার এমন অবস্থা দেখে বললো,আমি না আসায় একদিনও পড়তে বসো নি তাই না?কিছুই তো বলতে পারছো না।
ইশান তখন বললো,ম্যাম আপনি না আসায় আমাদের ভীষণ মন খারাপ হয়েছে।সেজন্য আমরা রাগ করেই পড়তে বসি নি।
–ওরে বাবা!তোমাদের রাগ ও আছে?
ইমান সেই কথা শুনে বললো হ্যাঁ,অনেক রাগ আমাদের।আমরা রাগ করলে কারো সাথে কথা বলি না।
–ও তাই?
হঠাৎ মৌরি রুমে প্রবেশ করলো আর বললো, অতশী আর কত পড়াবে!এবার শেষ করো।
ইশান সেই কথা শুনে বললো,আপু তুমি যাও তো।ডিস্টার্ব করো না।আমরা আরো পড়বো।
মৌরি সেই কথা শুনে বললো চুপ থাক।বড়দের মুখে মুখে তর্ক করা!
ইমান সেই কথা শুনে বললো তোমাদের সেই জন্য আমাদের ভালো লাগে না।সবসময় শুধু ধমক দাও।আমাদের ম্যাম কত সুন্দর করে কথা বলে!কত ভালোবাসে আমাদের।
অতশী তখন বললো, ইশান আর ইমান তোমরা কিন্তু অনেক বেশি দুষ্ট হয়েছো।এভাবে বড়দের মুখের উপর কথা বলবে না।
বুঝেছো?
–ওকে ম্যাম।
–আচ্ছা ঠিক আছে।আজ তোমাদের ছুটি।বাকি পড়া কাল ধরবো।এই বলে অতশী উঠে পড়লো।
মৌরি তখন অতশীর হাত ধরে টেনে তার রুমে নিয়ে গেলো।তারপর দরজা বন্ধ করে দিলো।
অতশী বেশ অবাকই হলো।দরজা বন্ধ করলো কেনো মৌরি!
মৌরি তখন বললো অতশী একটা হেল্প করবা প্লিজ।
–কি হেল্প!
–আমার বিয়ে ঠিক করেছে সবাই।কিছুদিন পর দেখতে আসবে।যদি পছন্দ হয় তাহলে সেইদিনই বিয়ে।তুমি তো জানো আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।কি করে বিয়ে টা করি!
–এতো তাড়াহুড়ো কেনো?
–অনেক কারণ আছে।একদিন সময় করে বিস্তারিত ভাবে বলবো।আজ বলা যাবে না।কারণ কিছুক্ষণ পর ভাইয়া আসবে বাসায়।তোমার সাথে আমাকে গল্প করা দেখলে রেগে যাবে।
অতশী সেই কথা শুনে বললো, ওনার কিসের এতো অহংকার!আমাকে কি মানুষ মনে করে না!আমার সাথে তুমি যদি কথা বলো তাহলে কি ওনার জাত চলে যাবে!
–না,না।সেরকম কিছু না।তুমি প্লিজ ভুল বোঝ না।কথা দাও হেল্প করবা।
–তোমার বয়ফ্রেন্ড এর কথা বলো সবাইকে।তুমি তো বলেছিলে তিনি জব করেন।তাহলে কিসের এতো চিন্তা!
মৌরি তখন বললো,ভাইয়া সবকিছুই জানে।সে কিছুতেই রাজি না।আর ওই ছেলের কথা সবাইকে বলতে বারণ ও করেছে।
অতশী কিছুই বুঝতে পারলো না মৌরি আসলে কি বলতে চাচ্ছে!আর অতশী তাকে কিভাবে হেল্প করবে!
মৌরি তখন অতশীর হাতে একটা ফোন দিয়ে বললো। আজ থেকে এটা তোমার।তোমার কাজ হলো ওই ছেলেকে প্রেমের জালে ফেলা।তারপর ওকে দুশ্চরিত্রা প্রমাণ করা।কারণ ভাইয়া দুশ্চরিত্রা ছেলেদের ভীষণ অপছন্দ করে।সে জেনে শুনে কখনোই তার বোন কে এমন ছেলের সাথে বিয়ে দেবে না।
অতশী সেই কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়ে বলে কি?যে তার ভাই এর ভয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলতে পারে না!সে নাকি আবার কোনো ছেলেকে প্রেমের জালে ফেলবে!
অতশী তখন ফোনটা মৌরির হাতে দিয়ে বললো, এই কাজ আমার দ্বারা হবে না মৌরি।আমার ভাই যদি দেখে এটা একদম পুঁতে ফেলবে।তাছাড়া আমি ফোন ইউজ করি না।অনেক কিছুই বুঝি না ফোনের।
হঠাৎ কে যেনো দরজা ধাক্কাতে লাগলো।মৌরি তা দেখে ভয়ে তাড়াতাড়ি করে আলমারি থেকে একটা কাপড় বের করে পেঁচিয়ে নিলো।তারপর অতশীকে বললো,দরজা টা খুলে দাও।
অতশী কিছুই বুঝতে পারলো না।মৌরি হঠাৎ শাড়ি বের করে এভাবে পেঁচাচ্ছে কেনো?
মৌরি চোখ দিয়ে ইশারা করে বললো,যাও খুলে দাও।
সেই কথা শুনে অতশী দরজা খুলতে গেলো।
দরজা খুলতেই দেখে ইভান!
ইভান কে দেখামাত্র মৌরি বললো,ভাইয়া কাপড় পড়া শিখছিলাম।অতশী খুব সুন্দর ভাবে শাড়ি পড়াতে পারে।
ইভান কোনো কিছু বললো না মৌরিকে। তবে অতশীর দিকে তাকিয়ে বললো,কি জন্য এসেছো বাসায়?খুব তো তেজ দেখিয়ে বললে আসবে না।
অতশী জানে ইভান এইরকম কিছু বলবে।সেজন্য সে কি বলবে আগে থেকেই তা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে!
অতশী তখন বললো, আমি আপনার কথাই আসি নি।আংকেল ফোন দিয়েছিলো।সেজন্য এসেছি।কারণ আংকেল কে আমি অনেক বেশি শ্রদ্ধা করি।সেজন্য না করতে পারি নি।
–তা পড়ানো কি শেষ হয়েছে?
–হ্যাঁ।
–তাহলে এখন আসতে পারো।
অতশীর ইচ্ছা করছিলো ইভানের চোখ দুটো তুলে মার্বেল খেলাতে।আর তার হাতের আংগুল টা কেটে ফেলতে!এই চোখ আর আংগুল ভীষণ অপমান করছে তাকে!এমন ভাবে তাকায় মনে হয় এখনি খেয়ে ফেলবে।আর আংগুল দেখিয়ে দেখিয়ে কথা বলে মনে হয় কোনো বিচারক।
অতশী আর কিছু না বলে চলে যেতে ধরলো।হঠাৎ বিছানার দিকে নজর গেলো ইভানের।বিছানার উপর সেই ফোনটা যেটা মৌরি অতশীকে দিতে চাচ্ছিলো।
ইভান ফোনের দিকে তাকাচ্ছে দেখে মৌরি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো।এই বুঝি ধরা পড়ে যায়।
এখন কি হবে!
হাতে নিলেই তো সে শেষ!
সেজন্য মৌরি অতশীকে ডাক দিয়ে বললো, এই অতশী!আগেই যাও না।তোমার ফোন নিয়ে যাও।এই বলে মৌরি ফোনটা হাতে নিয়ে অতশীর কাছে চলে গেলো।
ইভান তখন বললো, ফোন টা দে তো আমাকে।
এই বলে মৌরির হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো ইভান।মৌরি ভয়ে একদম কোনঠাসা হয়ে গেলো।কারন ফোনটা ওপেন করলেই ইভান টের পেয়ে যাবে।কারন এই ফোনে শুধু সেই ছেলের নাম্বার সেভ করা আছে।
ইভান ফোনের স্ক্রীন টাচ করতেই, অতশী কেড়ে নিলো ফোনটা ইভানের হাত থেকে।আর বললো, পারমিশন ব্যাতিত অন্যজনের ফোন ধরা যায় না জানেন তো সেটা?
ইভান তখন অতশীর হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নিয়ে বললো,এটা যে তোমার ফোন তার কি প্রমাণ?
অতশী তখন আবার ইভানের হাত থেকে কেড়ে নিলো ফোনটা আর বললো,আপনাকে প্রমাণ কেনো দিতে যাবো?এই বলে অতশী ফোন টা নিয়ে চলে গেলো।
অতশী তো ভাব দেখিয়ে ফোন টা নিয়ে এলো।কিন্তু এই ফোন রাখবে কোথায়?সেই চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে সে।অতশী মনে মনে ভাবছে এখন কি করা যায়?হঠাৎ তার মাথায় আইডিয়া এলো ফোনটা সে তার বিছানার গদির নিচে রাখবে।ওখানে কেউ দেখবে না।
অতশী বাসায় এসেই সেই গোপন জায়গায় ফোনটা লুকিয়ে রাখলো।
তবুও তার ভয় হচ্ছে যদি তার অয়ন ভাইয়া দেখে ফেলে কি হবে তখন?
সারাক্ষন শুধু তার ফোনের কথাই মনে হচ্ছে।
রাতের বেলা অয়ন বাসায় ফিরলে সবাই একসাথে খেতে বসলো।তবে অতশীকে বেশ অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিলো,যা অয়ন বুঝতে পারলো।অয়ন তখন জিজ্ঞেস করলো,কি রে এমন করছিস কেনো?শরীর খারাপ?
–না তো ভাইয়া।
–তাহলে খাচ্ছিস না কেনো,শুধু ভাত নাড়াচাড়া করছিস!
–এই তো খাচ্ছি।এই বলে অতশী খাওয়া শুরু করে দিলো।
হঠাৎ ফোনের রিং বাজতে লাগলো।এবং সেই আওয়াজ আবার অতশীর রুম থেকেই আসছে।অতশী একবার তার ভাই এর দিকে তো আরেকবার তার মায়ের দিকে তাকাচ্ছে।
সে বুঝতে পারলো এখনো কেউ শোনে নি।তা না হলে জিজ্ঞেস করতো।
অতশী ভাতের প্লেট রেখে তার রুমের দিকে দিলো এক দৌঁড়।তারপর তাড়াতাড়ি করে ফোনটা বের করে বন্ধ করে রাখলো।তারপর আবার সেই গোপন জায়গায় লুকিয়ে রাখলো।
অতশী মনে মনে মৌরিকে বকতে লাগলো।ফোন টা বন্ধ করেও রাখে নি।এ কোন বিপদে ফেলালো তাকে!
এদিকে অয়ন অতশীকে এভাবে দৌঁড়ে আসা দেখে সে ও পিছু পিছু চলে এলো।
অতশী তার ভাইকে দেখে অভিনয় করতে লাগলো,তার ভাইকে বোঝানোর চেষ্টা করলো যে তার মাথা টা ভীষণ ঘুরছে।
অয়ন অতশীকে এমন করা দেখে বললো,কি হয়েছে তোর?
শরীর খারাপ লাগছে।
–হ্যাঁ ভাইয়া।
অয়ন তখন ধমক দিয়ে বললো কতবার বললাম শরীর খারাপ নাকি!তখন তো কোনো উত্তর দিলি না।
–তখন খারাপ লাগে নি।এতোক্ষন দিয়ে লাগছে।
অয়ন সেই কথা শুনে একটা বাটি ভরা পানি এনে অতশীর হাত ধুয়ে তারপর মুছে দিয়ে অতশীকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। আর বললো,ঘুমানোর চেষ্টা কর।তাহলে ভালো লাগবে।
অতশী তার ভাই এর কথা শুনে চোখ বন্ধ করলো।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো না এটা করা ঠিক হচ্ছে না তার।ফোনটা কালকেই ফেরত দিতে হবে।এভাবে লুকোচুরি খেলা খেলতে পারবে না সে।
পরের দিন অতশী মৌরির ফোন ফেরত দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলো।কিন্তু বাসাতে ঢুকতেই দেখে খুব সুন্দর করে সাঁজানো হয়েছে বাসাটা। একদম বিয়ে বাড়ির মতো।ব্যাপার কি!অতশী বুঝতে পারলো না কিছু।সে ভেবেছে কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে।সে যে কেনো এভাবে আসতে গেলো?
অতশী বাসার কাউকেই দেখতে পেলো না।সেজন্য সে সোজা মৌরির রুমে চলে গেলো।
মৌরি একা একা বসে আছে রুমে।
অতশীকে দেখামাত্র মৌরি দৌঁড়ে এলো।আর তাকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কেঁদে উঠলো।অতশী তখন বললো কি হয়েছে?কাঁদছো কেনো?
মৌরি কাঁদতে কাঁদতে বললো,ছেলেপক্ষ আজকেই তাকে দেখতে আসছে!
মৌরির কথা শুনে অতশী চমকে উঠলো।কারণ পাত্রপক্ষ কয়েকদিন পর আসার কথা।তারা আজকেই কেনো আসছে?
অতশী তখন মৌরিকে শান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বললো,দেখতে আসলেই কি বিয়ে হয় নাকি?দেখবে,তারপর পছন্দ করবে,তারপর ডেট ফিক্স করবে।
মৌরি সেই কথা শুনে বললো,যদি পছন্দ হয় তাহলে আজকেই বিয়ে!
অতশী কথা টা শুনে ভীষণ আশ্চর্য হলো।এ আবার কোন জুলুম!
অতশী তখন বললো আচ্ছা কেঁদো না।এমনিতেই সব ঠিক হয়ে যাবে।সেই কথা শুনে মৌরি কেঁদে কেঁদে বললো,আজ যদি সত্যি সত্যি অন্য ছেলের সাথে বিয়ে হয় তাহলে কিন্তু আমি শেষ করবো নিজেকে!
অতশী সেই কথা শুনে মৌরিকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো,কি বলছো এসব?তেমন কিছুই হবে না।
এদিকে অতশী বুঝতেই পারছে না সে কি করবে এখন?
অথচ মৌরিকে না বুঝেই আশ্বাস দিলো।
অতশী রুম থেকে বের হতেই দেখে ইভান আসছে এই দিকে।
ইভান কে দেখামাত্র অতশী লুকিয়ে পড়লো।কারন ওকে যদি এখন এই মুহুর্তে দেখে যা নয় তাই বলবে!
ইভানের সাথে একজন মেয়ে ছিলো।বেশ মোটাসোটা। বাট দেখতে ভীষণ কিউট।ইভান মেয়েটিকে কি যেনো বোঝাচ্ছে।
ইভান আর সেই গুলুমুলু মেয়েটি রুমে প্রবেশ করলো।আর অতশী লুকিয়ে আছে আলমারির পিছনে।
ইভান মেয়েটিকে বললো,যেমন ভাবে বললাম ঠিক তেমন ভাবেই সাজাবে।একদম সিম্পল সাঁজ।দেখে যেনো মনে হয় কোনো মেকাপ করে নি।কারন ছেলে এসব সাজসজ্জা পছন্দ করে না।সে ন্যাচারাল সুন্দরী কে বিয়ে করতে চায়।ইভান এটা বলেই চলে গেলো।
অতশী বুঝতে পারলো এই মেয়েটিকে পার্লার থেকে আনা হয়েছে।এটাই সুযোগ।
ইভান চলে যাওয়ার সাথে সাথে অতশী বের হয়ে আসলো আলমারির পিছন দেখে।আর বললো ম্যাডাম আপনি এসেছেন?কখন আসলেন?
গুলুমুলু আপুটি একদম চমকে উঠলো।তিনি চমকে উঠে বললেন,তুমি কে?
অতশী তখন বললো, আমিই পাত্রী।তাড়াতাড়ি সাজিয়ে দিন আমাকে।একদম ন্যাচারাল সুন্দরীদের মতো।
পার্লারের মেয়েটি তখন বললো, ইভান তো এই মেয়েকে দেখিয়ে গেলো।
মৌরি সেই কথা শুনে বললো, আমি হলাম পাত্রীর বান্ধুবী।ওই পাত্রী।
–ও আচ্ছা।এই বলে মেয়েটি সাজাতে আরম্ভ করলো।
পার্লারের মেয়েটি সাজাচ্ছে আর বলছে তুমি তো এমনিতেই সুন্দরী!তার উপর যদি আমার এই ন্যাচারাল মেকাপ করানো হয় পাত্র তো বেঁহুশ হবেই সাথে পাত্রের সাথে আসা সকল লোকজন।
–আমি তো এটাই চাই।সবাই বেঁহুশ হোক।
–কিছু বললে তুমি?
–না বলি নি।আপনি সাজান।
অতশী নরমালি কারো সামনে চুল খোলে না।কিন্তু মৌরির জন্য আজ তাকে সেটাই করতে হলো।
পার্লারের মেয়েটি খুব মনোযোগ দিয়ে সাজিয়ে দিচ্ছে অতশীকে।প্রথমে একটা সুন্দর থ্রী পিচ পড়ালো অতশীকে।তারপর মুখে মেকাপ দিতে ধরলো মেয়েটি।
অতশী তখন বললো,মেকাপ দিতে হবে না, সামান্য একটু ক্রিম দিয়ে তার উপর পাউডার লাগালেই বেশি ভালো লাগে আমাকে।মেয়েটি সেই কথা শুনে বললো, তাহলে আমাকে এনেছে কেনো?তুমি কোনো উপদেশ না দিয়ে চুপচাপ বসে থাকো।কি করতে হবে আমি তা ভালো করেই জানি।এই বলে মেয়েটি হালকা করে মেকাপ দিয়ে দিলো অতশীকে।বোঝাই যাচ্ছে না সে মেকাপ করেছে।চিকন করে আইলাইনার দিলো,আর একদম চোখের কোটরে দিয়ে দিলো কাজল।অতশীর চোখের পাঁপড়ি এমনিতেই বড় আর ঘন ছিলো সেজন্য আলাদা করে ফলস পাঁপড়ি বসানো হলো না।ব্রু তে হাত দেওয়াই লাগলো না,ব্রু এমনিতেই চিকন আর কালো ছিলো।শুধু চিরুনি দিয়ে আঁচড়িয়ে দিলো।
অতশীর চুলগুলো অনেক বড় বড় ছিলো।সে জন্য মাঝখানে সিঁধি করে দিলো মেয়েটি।
পার্লারের মেয়েটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো অতশীকে।কারন সাঁজ খারাপ হলে ইভান তাকে ছেড়ে কথা বলবে না।সাঁজ কম্পিলিট হলে মেয়েটি চলে গেলো।
এতোক্ষন মৌরির ভীষণ মন খারাপ ছিলো।কিন্তু অতশীকে দেখে সে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।কোনো মেয়ে কি করে এতো সুন্দর হতে পারে!তাছাড়া মৌরি নিজেও এই প্রথম অতশীকে এভাবে খোলা চুলে দেখলো।
মেয়েটি চলে যাওয়ার সাথে সাথে অতশী তার সাঁজ তোলার চেষ্টা করলো।মৌরি তখন বললো কি করছো?সাঁজ তুলছো কেনো?তুমি এভাবেই যাবে সবার সামনে।যাতে আমাকে রেখে তোমাকে পছন্দ করে পাত্রপক্ষ। তাহলেই হয়ে যাবে কাজ।
অতশী সেই কথা শুনে বললো,কি বলছো এসব?
পাগল হইছো তুমি?
–হ্যাঁ আমি পাগল হইছি।এই বলে মৌরি নিজেও একটা থ্রী পিচ পড়লো।আর অতশীকে যেভাবে সাজানো হয়েছে দেখে দেখে সেও ওভাবেই সাঁজলো।তারপর মাথায় লম্বা একটা ঘোমটা দিলো।মৌরি কে একদম ভুতের মতো লাগছিলো।কারন মৌরি ভালো করে ফিনিশিং দেয় নি।মনে হচ্ছে সব আলগা করে বসানো হয়েছে মুখে।
হঠাৎ ইভান দরজা ধাক্কাতে লাগলো।আর বললো হয়েছে?আর কতক্ষণ লাগবে?
ইভানের কন্ঠ শুনে মৌরি অতশীর কানে ফিসফিস করে কি যেনো বললো।অতশী তা শুনে আবার আলমারির পিছনে গিয়ে লুকালো।আর মৌরি নিজেই গিয়ে দরজা খুলে দিলো।মৌরি তার ভাই এর দিকে না তাকিয়ে সোজা চলে গেলো।
ইভান তখন বললো মৌরি দাঁড়া।আগেই যাস না।আমাকে আগে দেখতে দে।
মৌরি সেই কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো।এবারো তাকালো না ইভানের দিকে।না তাকিয়েই বললো,ভাইয়া পার্লারের মেয়েটা বলেছে বেশি দেরী করলে ন্যাচারাল ম্যাকাপ গলে যাবে।সেজন্য আমি তাড়াতাড়ি করে যাচ্ছি।এই বলে অতশী আবার হাঁটা শুরু করলো।আর ইভান তার পিছু পিছু চলে গেলো।
এদিকে অতশী আলমারির পিছন থেকে বের হলো।আর মৌরির কথামতো রুম থেকে চুপি চুপি বের হলো।কিন্তু এভাবে খোলা চুলে তার ভীষণ অস্বস্তি হতে লাগলো।সেজন্য সে ওড়না টি মাথায় দিয়ে দিলো এক দৌঁড়।মৌরির কথামতো একদম বাসার বাহিরে চলে গেলো।তারপর আবার মৌরিদের বাসায় আস্তে আস্তে ঢুকলো।যাতে কেউ মনে করে অতশী মাত্র আসলো।
হঠাৎ অতশীকে দেখে ফেললো মৌরির আম্মু।তিনি অতশীকে দেখে বললেন অতশী তুমি?
অতশী তা শুনে ভয় পেয়ে গেলো।সে ভেবেছে অতশীর আম্মু তাকে আগেরবার ঢুকতে দেখেছে।সেজন্য অতশী বললো না মানে! আমি!আন্টি!
মৌরির আম্মু তখন বললো, ও বুঝেছি। মৌরি আসতে বলেছে।আমি আরো ভাবছি ও মনে হয় খুশি নয়।কেমন যেনো মুখ চোখ ভার করে বসে আছে।তোমায় যখন আসতে বলেছে তাহলে নিশ্চয় মন থেকে মেনে নিয়েছে।
অতশী সেই কথা শুনে বললো,না আন্টি সেরকম কিছু নয়।আসলে ইশান এর একটা বই আমি ভুল করে ব্যাগে উঠাইছি সেটাই দিতে এসেছিলাম।ভাবলাম ইশান বই খুঁজে না পেলে পুরো বাসা মাথায় তুলবে।এই বলে অতশী ইশানের বই টা বের করতে ধরলো।
মৌরির আম্মু তা দেখে বললো,বই দেখাতে হবে না।
তা এসেছো যখন ভালোই করেছো।আজ মৌরিকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে।তুমি রুমে গিয়ে বসো মা।এই বলে মৌরির আম্মু চলে গেলো।
এদিকে ইভান দের বাসার কাজের মেয়ে রিয়া অতশী বেশ মনোযোগের সহিত দেখতে লাগলো।সে বললো ম্যাডাম আপনার কি জমজ বোন আছে?
–মা,আ,নে?
–আপনাকে তো আরো একবার ঢুকতে দেখলাম।কিন্তু আপনি এতোক্ষন দিয়ে আবার ঢুকছেন।বুঝছি না কিছু।
–কি,ই,বলো পাগলের মতো?
আমি তো মাত্র আসলাম।এই বলে অতশী গেস্টরুমের সামনে গেলো।রুমের মধ্যে অনেক লোকজন ছিলো।ইভান, ইভানের আব্বু,ছেলে আর ছেলেপক্ষের লোকজন।
মৌরি সবার সামনে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।
অতশী কারো সাথে কোনো কথা না বলে গেস্ট রুমের সামনে দিয়ে বার বার যাওয়া আসা করতে লাগলো।কিন্তু মৌরি বলেছিলো সে যেনো রুমে প্রবেশ করে।যাতে পাত্রপক্ষের নজর তার দিকে থাকে।
কিন্তু অতশী রুমে ঢোকার সাহস পেলো না।সে কি করে এই কাজটা করবে বুঝতে পারছিলো না।
চলবে,