#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_৩৭
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
ইভান মেঝেতে পড়ে গিয়েও একটুও রাগ হলো না।বরং সে নিজেকেই দোষারোপ করতে লাগলো।সে মনে মনে ভাবতে লাগলো একজন ঘুমন্ত মেয়েকে এভাবে কিস করা ঠিক হয় নি তার?কেনো যে এভাবে কিস করতে গেলো অতশীকে?
অতশী নিজেও বেশ অবাক!সে ভাবতেই পারছে না ইভান তাকে কিস করেছে।
ইভান কে এভাবে মেঝেতে পড়ে থাকা দেখে অতশী তার হাত বাড়িয়ে দিলো।কিন্তু ইভান অতশীর হাত না ধরে একা একা উঠলো।
দুইজনই কিছুক্ষন চুপচাপ থাকলো।তারপর ইভান তার ল্যাপটপ টা এনে বিছানায় বসে কাজ করতে লাগলো আর অতশী সেই আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইলো।
হঠাৎ অতশী জিজ্ঞেস করলো আপনার কিছু লাগবে কিনা?ইভান মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলো লাগবে না।অতশী সেজন্য রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
অতশী চলে যাওয়ার সাথে সাথে ইভান দরজায় এসে দাঁড়ালো।সে বুঝতে পারছে না কি করবে এখন?কিভাবে অতশীকে তার রুমে তারই বেডে থাকতে বলবে।আর কিভাবেই বা তাকে ভালোবাসবে।রাগের মাথায় তো অনেক কথাই বলেছিলো সেদিন কিন্তু আজ কেনো জানি খুব খারাপ লাগছে তার।সে আর এমন দূরত্ব কিছুতেই চাচ্ছে না।ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাচ্ছে অতশীকে।ইভান অনেক বেশি সাহসী একটা ছেলে হয়েও আজ ভীষণ নার্ভাস ফিল করছে।শুধু একটা কথা বলবে যে অতশী মৌরির রুমে থাকতে হবে না আজ থেকে তুমি তোমার নিজের রুমেই থাকবে।কিন্তু কিছুতেই বলতে পারছে না কথাটা।
অতশী একবারের জন্যও পিছন ফিরে তাকালো না।কিন্তু ইভান দরজাতেই দাঁড়িয়ে রইলো।যদি অতশী একবার পিছন ফিরে চায়।
অতশী সোজা মৌরির রুমে চলে গেলো। অতশীকে দেখামাত্র মৌরি এগিয়ে এলো। ভাবি তুমি উঠেছো?এখন কেমন লাগছে তোমার?
–হ্যাঁ ঠিক আছি এখন।এই বলে অতশী মৌরির বেডে শুয়ে পড়লো।
অতশীকে শোয়া দেখে মৌরি বললো,ভাইয়া কি বকেছে তোমাকে?এ ঘরে আসলে যে?
অতশী সেই কথা শুনে বললো, মৌরি এটা ঠিক করি নি আমি।এইভাবে ওনার বেডে শোয়া মোটেও ঠিক হয় নি আমার।উনি এখন কি ভাবছেন কে জানে?
মৌরি সেই কথা শুনে বললো, কি ভাববে?তুমি কি বাহিরের মেয়ে?যাও ভাইয়ার রুমে যাও।তাছাড়া আমার মনে হচ্ছে ভাইয়া নিজের থেকে বলতে লজ্জা পাচ্ছে।ও যদি তোমাকে দেখে বিরক্তই হতো তাহলে রাগ দেখাতো।তোমাকে অনেক বকতো।
–উনি ছেলে হয়ে যদি লজ্জা পান আর আমি মেয়ে হয়ে কোন লজ্জায় নিজের থেকে ওনার রুমে থাকবো!না আমি যাবো না।
মৌরি আর অতশী কথা বলতেই হঠাৎ ইভান প্রবেশ করলো রুমে।দুইজনই বেশ অবাক!কিন্তু ইভান ডাইরেক্ট অতশীর কাছে চলে এলো।আর রাগ দেখিয়ে বললো,রাতের খাবার খাবো কখন?যাও তাড়াতাড়ি আমার খাবার রেডি করো?
অতশী সেই কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে উঠলো আর সোজা কিচেন রুমে চলে গেলো।তার একটুও রাগ হলো না।সে ইভানের কাজ করতে পেরে বরং আনন্দই পাচ্ছে।
কিন্তু মৌরি ইভান কে বললো, ভাইয়া আজ ভাবীর শরীর টা ভালো নয়।ওকে আজ খাবার বানাতে বলিস না।যা আছে সেটাই খা।
ইভান তখন বললো, কেনো কি হয়েছে ওর?
–এমনিতেই শরীর ভালো না।
ইভান অতশীর শরীর খারাপের কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।
এদিকে অতশী রান্না করার জন্য দরকারী সব জিনিসপত্র তার সামনে আনলো।আর রান্না করার জন্য একটা প্যান বসিয়ে দিলো চুলায়। ইভান সেই সময়ে কিচেন রুমে প্রবেশ করলো আর অতশীর হাত থেকে রান্না করার চামুচ কেড়ে নিয়ে বললো,লাগবে না রান্না করা।চুলা অফ করো।
–কেনো লাগবে না?কি খাবেন তাহলে?
–যা মন চায় তাই খাবো।এই বলে ইভান অতশীকে টেনে তার রুমে নিয়ে গেলো। অতশী কিছুই বুঝতে পারলো না।হঠাৎ ইভানের কি হলো?সেজন্য সে চুপচাপ ই থাকলো।ইভান অতশীকে তার বেডে বসিয়ে দিয়ে বললো কি হয়েছে তোমার?মৌরি বললো শরীর খারাপ তোমার?
–হ্যাঁ।কিন্তু এখন ঠিক হয়েছে।
–তুমি খাইছো কিছু?
–না।
ইভান সেই কথা শুনে অতশীকে বললো চুপচাপ এখানেই বসে থাকো।এই বলেই ইভান রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
আধা ঘন্টা পার হয়ে গেলো। ইভান তবুও আসলো না।অতশী বুঝতে পারছে না কিছু।এভাবে ঘরের মধ্যে তাকে বসিয়ে রেখে ইভান কই উধাও হলো?
কিছুক্ষণ পরে এক বাটি নুডলস হাতে করে নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো ইভান।অতশী বেশ অবাকই হলো।ইভান নিজেই রান্না করে এনেছে!
ইভান নুডলসের বাটি টা নিয়ে অতশীর কাছে এলো।আর তার পাশে বসলো।তারপর অতশীকে বললো হা করো।
–হা করবো মানে?না না খাবো না আমি।
–যা বলছি সেটাই করো।
অতশী হা করতেই ইভান নিজেই অতশীকে খাইয়ে দিলো।অতশী খাবার মুখে নিয়ে ড্যাবড্যাব করে ইভানের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইভান তা দেখে বললো কি হলো? খাও?
অতশী সেই কথা শুনে খেতে লাগলো।এইভাবে ইভান আবার অতশীকে হা করতে বললো আর মুখের ভিতর নুডলস পুরে দিলো।ইভান বার বার শুধু অতশীকেই খাওয়াতে লাগলো।অতশী তা দেখে বললো আপনিও খান।শুধু আমাকে খাওয়াচ্ছেন যে?
–আমাকে খাওয়ানোর কে আছে?যে খাবো আমি?
অতশী সেই কথা শুনে নুডলসের বাটি টা তার হাতে নিয়ে ইভান কে খাওয়াতে লাগলো।
ইভান তখন একটু ভাব নিয়ে বললো,
না লাগবে না।আমি নিজেই খেয়ে নিতে পারবো।অতশী তখন নিজেও জোর করেই ইভানের মুখে নুডলস পুরে দিলো।ইভান এবার আর বারণ করলো না।সে খেতে লাগলো আর অতশীর দিকে তাকিয়ে রইলো।
অতশী তা দেখে বললো,আপনি অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছেন।আপনাকে আমি কিছুতেই চিনতে পারছি না।আপনার রাগও অনেক কন্ট্রোলে এসেছে।আর সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হচ্ছি যে, আমার অসুস্থতার কথা শুনে নিজের হাতে আমার জন্য নুডলস বানিয়ে এনেছেন?তাহলে কি আপনি আবার আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছেন?
ইভান সেই কথা শুনে বললো,মোটেও না।আমি তোমাকে কোন দুঃখে ভালোবাসতে যাবো?এখনো তোমার অনেক শাস্তি বাকি আছে।আর এই নুডলস আমি বানাই নি।রিয়াকে ঘুম থেকে তুলে রান্না করে নিলাম।আমি এসব মেয়ে মানুষের মতো রান্নাবান্না করতে পারি না।এই বলে ইভান অতশীর হাত থেকে নুডলসের বাটি টা নিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিলো।আর নিজের হাতেই অতশীকে পানি পান করালো।
অতশী তখন বললো আর কি শাস্তি দেবেন আমায়?আরো কি কি শাস্তি বাকি আছে?ইভান সেই কথা শুনে হঠাৎ অতশীকে তার বেডে শুইয়ে দিয়ে বললো আজ আমার সাথে আমার বেডেই ঘুমাবে।এটাই শাস্তি!আরো অনেক শাস্তি বাকি আছে।
অতশী ইভানের কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।এটা আবার কি ধরনের শাস্তি!।তাছাড়া ইভান এতো সহজে কিভাবে বললো কথাটা?নিজের মুখে যে এভাবে ইভান তাকে থাকতে বলবে অতশী ভাবতেও পারে নি।
অতশীকে চমকে দিয়ে ইভান নিজেই কাথা টা টেনে নিয়ে অতশীর গায়ে দিয়ে দিলো।
অতশী তখন কাঁথা টা সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলো আর বললো আমি আপনার সাথে ঘুমাবো না।আমাকে যেতে দিন।
ইভান সেই কথা শুনে হেসে উঠে বললো কেনো? ভয় পাচ্ছো আমাকে দেখে?
–ভয় পাবো কেনো?আপনি কি বাঘ না ভাল্লুক?
–তাহলে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।এই বলে ইভান নিজেও অতশীর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
ইভান কে শোয়া দেখে অতশী একদম বেডের কিনারায় চলে গেলো।।তবে সে স্পষ্ট বুঝতে পারলো ইভানের রাগ অনেক টাই কমে গেছে।সেজন্য তার সাথে এভাবে কথা বলছে।কিন্তু ইভান কোন শাস্তির কথা বললো?আবার কি শাস্তি দেবে তাকে?
এদিকে ইভান আরো কাছে আসলো অতশীর।অতশী তা দেখে আরো দূরে সরে গেলো।এভাবে সরতে সরতে অতশী একদম বেড থেকে পড়ে যেতে ধরলো। ইভান তা দেখে এক ঝটকায় অতশীকে তার বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিলো আর বললো আজকেই কি হতো?আর একটু হলে তো পড়েই যেতে?
এদিকে অতশীকে এভাবে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরায় তার পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো।তার মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হলো না।ইভান এমনভাবে তাকে জড়িয়ে ধরেছে যে সে একটুও নড়াচড়া করতে পারলো না।
অতশী তবুও নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।
ইভান তা দেখে ভীষণ রাগ হলো,সে চিৎকার করে বললো,এতো নড়াচড়া করছো কেনো? চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।
–ছাড়ুন আমাকে।এভাবে ধরে থাকলে কিছুতেই আমার ঘুম ধরবে না।
ইভান অতশীর কথা শুনে বললো,এখন থেকে রোজ রোজ এভাবেই ঘুমাতে হবে। সেজন্য এভাবেই ঘুমানোর চেষ্টা করো।এই বলে ইভান আরো জোরে জড়িয়ে ধরলো অতশীকে।
অতশী ভীষণ লজ্জার মধ্যে পড়ে গেলো।কিন্তু ইভানের একটুও লজ্জা লাগছে না।সে অতশীকে কোলের মধ্যে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
পুরো রাত ইভান অতশীকে এভাবে জড়িয়ে ধরেই ঘুমালো।সে একটিবারের জন্য অতশীকে ছেড়ে দিলো না।কিন্তু অতশীর চোখে একটুও ঘুম নেই।অনেক চেষ্টা করেও অতশী দু চোখের পাতা এক করতে পারলো না।তার ভীষণ সংকোচ হতে লাগলো।সে ঘুমন্ত ইভানের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। ঘুমালে কত নিষ্পাপ লাগে ইভানকে!অতশী একদম পাগল হয়ে গেলো ইভান কে।সে কোনো সংকোচ না করে নিজেও ভালো করে জড়িয়ে ধরলো ইভান কে।আর ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
ফজরের আযান শোনার সাথে সাথে অতশী চোখ মেলে তাকালো।সে কখন ঘুমিয়ে ছিলো সেটা মনে করতে পারলো না।কিন্তু পাশে তাকাতেই দেখে ইভান নেই বেডে।অতশী তাড়াতাড়ি করে উঠে বসলো। তারপর ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো।ইভান ওয়াশরুমেও ছিলো না।অতশী সেজন্য আবার তার বেডে চলে আসলো।আর মোবাইল টা হাতে নিয়ে ইভান কে ফোন দিলো।ইভানের ফোনে রিং হলো কিন্তু ইভান ফোন রিসিভ করলো না।অতশী হঠাৎ খেয়াল করলো তার রুমের দরজা খোলা।অতশী বুঝতে পারলো ইভান ডিউটি তে গেছে।কিন্তু যাওয়ার সময় দরজাটা একটু দিয়েও যায় নি।এই ভেবে অতশী নিজেই দরজা লাগাতে গেলো।কিন্তু অতশী হঠাৎ খেয়াল করলো এক লোক ইভান দের গেস্ট রুমে ঢুকলো।সেদিনের মতো হুডি পড়া ছিলো। অতশী চিৎকার করতে যাবে ঠিক তখনি সে খেয়াল করলো আরো একজন লোক প্রবেশ করলো গেস্ট রুমে।আর তার সাথে ইভানের বাবাও ছিলো।অতশীর পুরো শরীর চক্কর দিতে লাগলো।সে তার নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারলো না।অতশী এই পরিস্থিতিতে কি করবে সেটাও বুঝতে পারছিলো না। তবুও সে চুপি চুপি রুম থেকে বের হলো।আর মৌরির রুমে চলে গেলো।কিন্তু গিয়ে দেখে মৌরির রুমের দরজা বাহির দিক থেকে লক করা।অতশী তা দেখে ভীষণ আশ্চর্য হলো।সে তখন তার শাশুড়ীর রুমের দিকে গেলো।কিন্তু একি!এ রুমের দরজাও লক করা বাহির দিক থেকে।অতশী বুঝতে পারলো না কিছু।সে অনেক সাহস নিয়ে গেস্ট রুমের দরজার কাছে চলে গেলো।কিন্তু ভিতর দিক দিয়ে দরজা লক থাকাই ভিতরের কোনো কথাই শোনা যাচ্ছিলো না।অতশী অনেক চেষ্টা করেও কিছুই শুনতে পেলো না।হঠাৎ সেই সময় অতশীর ফোনে রিংটোন বেজে উঠলো। ইভান কে কিছুক্ষন আগে ফোন দিয়েছিলো অতশী।কিন্তু ইভান ব্যস্ত থাকায় ফোন রিসিভ করতে পারে নি।সেজন্য এখন ইভান কল দিয়েছে।অতশী সাথে সাথে কল কেটে দিয়ে ইভানের রুমের দিকে দিলো এক দৌঁড়।
এদিকে রিংটোনের শব্দ শুনে ইভানের বাবা দরজা খুলে বের হয়ে আসলো।তিনি পাগলের মতো খুঁজতে লাগলেন।কিন্তু বুঝতে পারলেন না কে এসেছিলো তাদের দরজার কাছে।ইভানের বাবা এক এক করে সকল ঘরের দরজা চেক করতে লাগলেন।কিন্তু সব দরজাই তো এখনো বাহির দিক থেকে লক করা।তাহলে কে এসেছিলো?ইভানের বাবা তখন নিজেও দৌঁড়ে ইভানের রুমে চলে গেলো।কিন্তু ইভানের ঘরের দরজা বন্ধ হওয়ায় তিনি জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগলেন আর ইভান ইভান বলে ডাকতে লাগলেন।কিন্তু ইভানের কোনো সাড়া পেলেন না।ইভানের বাবা ভেবেছেন ইভান হয় তো বাসায় এসেছে।সেজন্য তিনি তাড়াতাড়ি করে গেস্ট রুমে চলে গেলেন আর রুমের সবাইকে চলে যেতে বললেন।
কিন্তু ইভানের বাবা যখন দেখলেন বাহিরে ইভানের গাড়ি নেই।তখন তিনি আবার ইভানের দরজায় ধাক্কাতে লাগলেন। অতশী এবার ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো।সে দরজা খুলতে চাইলো না।কিন্তু ইভানের বাবা বার বার দরজা ধাক্কা দেওয়ায় অতশী ঘুম ঘুম কন্ঠ নিয়ে বললো কে?
ইভানের বাবা অতশীর গলার আওয়াজ শুনে চমকে উঠলেন।তিনি ভেবেছেন অতশী আর মৌরি এক রুমে আছে।কিন্তু অতশী যে আজ ইভানের রুমে আছে তিনি এটা জানেন না।
ইভানের বাবা অতশীর গলার স্বর শুনে বললো, অতশী দরজাটা খোলো তো?
সেই কথা শুনে অতশীর পুরো শরীর ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো।অতশী বার বার নিজেকে শান্ত্বনা দিলো।অতশী কোনোভাবেই ভয় পাওয়া চলবে না।এমন ভাব নিতে হবে যে তুই মাত্র ঘুম থেকে উঠলি।
অতশী এই সাহস নিয়ে দরজা খুলে দিলো।
দরজা খুলতেই মুহিব সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,তুমি কি গেস্ট রুমের দিকে গিয়েছিলে?
অতশী চোখ ডলতে ডলতে আর ঘুম ঘুম কন্ঠ নিয়ে বললো,না বাবা।আমি তো মাত্র উঠলাম।
ইভানের বাবা আর কিছু বললেন না।তিনি তার রুমে চলে গেলেন।অতশী মনে হয় তার দেহে প্রাণ ফিরে পেলো।কারণ সে ভীষণ ভয়ের মধ্যে ছিলো।যদি ইভানের বাবা জানতে পারতো অতশী সবকিছু দেখেছে তাহলে তো তাকে একদম শেষ করে ফেলতো।
এদিকে অতশী ফোন রিসিভ না করায় ইভান বার বার ফোন দিতে লাগলো।ফোনের রিংটোন শুনে অতশী তাড়াতাড়ি করে দরজা লাগিয়ে দিলো আর ইভানের ফোন রিসিভ করলো।
অতশী একদম হাঁপাতে লাগলো। সে কিভাবে আর কি দিয়ে শুরু করবে তা বুঝতে পারলো না।তখন সে শুধু বললো আপনি কখন আসবেন বাসায়?প্লিজ আজ একটু তাড়াতাড়ি আসুন।
ইভান বুঝতে পারলো না কিছু।সে তখন বললো আমার আজ একটু ফিরতে লেট হবে।আমি গুরুত্বপূর্ণ একটা মিশনে এসেছি।এই বলেই ইভান কল কেটে দিলো।অতশী তখন আবার কল দিলো ইভান কে।ইভান ফোন রিসিভ করে বললো কি হলো অতশী?বললাম তো কাজে আছি।পরে ফ্রি হয়ে ফোন দিচ্ছি।
অতশী সেই কথা শুনে বললো, সেদিনের সেই ছেলেটা আমাদের বাসায় আবার এসেছিলো।
–কোন ছেলে?
–ওই যে ফাইল চুরি করেছিলো যিনি।
ইভান সেই কথা শুনে বললো কি বলছো এসব?তুমি কাউকে ডাকো নি?
–কাকে ডাকবো?যাকে ডাকবো তিনি তো নিজেই গল্প করছেন ছেলেটার সাথে।
–মানে?কি বলছো এসব?
–হ্যাঁ।সত্যি বলছি।আপনার বাবা দুইজন ছেলেকে নিয়ে গেস্ট রুমের ভিতর গল্প করছে।সেই দুইজনের মধ্যে সেদিনের সেই হুডি পড়া ছেলেটাও ছিলো।
ইভান সেই কথা শুনে বললো তুমি হয় তো ভুল দেখোছো অতশী।
–আমি নিজের চোখে দেখলাম বাবাকে ওদের সাথে আলাপ আলোচনা করতে।
–আলাপ আলোচনা করতেই পারে।হয় তো কেউ কোনো কেসের ব্যাপারে এসেছে।জানোই তো বাবা একজন নামকরা উকিল।এরকম দুই চারজন ডেইলি ডেইলি আসে।এই বলে ইভান আবার কল কেটে দিলো।
অতশী ভাবলো সত্যি মনে হয় সে ভুল দেখেছে।হয় তো কেউ কোনো কেসের ব্যাপারেই এসেছে।কিন্তু বাবা সবার ঘরের দরজা লক কেনো করেছেন?এটা কিছুতেই অতশীর মাথায় ঢুকলো না।
#চলবে,