অন্তরালে তুমি পর্ব-০৫

0
2202

#অন্তরালে_তুমি
#Part_05
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
ইহান এইবার একরাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে যেতে নিতেই পানির দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠে। কেন না পানির কিছুটা অংশ লাল হয়ে আছে। যা ধীরে ধীরে চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। ইহান বুঝে উঠতে পারছিল না যে এই লাল রঙ কোথা থেকে আসছে। ইহান খেয়াল করে দেখে লাল রঙটির উৎপত্তি আরিহার ডান দিকের পা থেকে। ইহান এইবার চট জলদি আরিহার পা টা পানি থেকে উঠিয়ে ওর কোলে রাখে। এমন কিছু আরিহা আশা করে নি যার ফলে সে সামান্য পরিমাণ চমকে উঠে।
ইহান পা চেক করে দেখে তাতে অনেক গভীর একটি ক্ষত। যার মধ্য হতে রক্ত চুয়ে চুয়ে পড়ছে। এর উপরে শুধু মাত্র দুটি ওয়ান টাইম বেন্ডেজ করা যা পানিতে ভিজে খুলে এসেছে। ইহান এইটা ভেবে অবাক হচ্ছে যে আরিহা কিভাবে এই ক্ষত নিয়ে দিব্বি ঘুরে বেরাচ্ছে। মুখে তার কোন প্রতিক্রিয়াই নেই। ওর জায়গায় অন্য কেউ হলে তো এতক্ষণে কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে যেত। বিছানা থেকেই উঠতে চাইতো না। কিন্তু আরিহা! এই ভেবেই ইহান এক দীর্ঘ শ্বাস নেয়। তারপর কিছু না বলে দ্রুত হল রুমে চলে যায়। আরিহা সবকিছুই এতক্ষণ শান্ত দৃষ্টিতে দেখছিল। ইহানের চলে যাওয়াতে সে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই পুষ্পিতা আর নীরা এসে হাজির হয়। চোখে মুখে তার চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। নীরার হাতে একটি ফাস্ট এইড বক্স। দুইজনই দ্রুত আরিহার কাছে এসে ওর কাছে হাটু গেড়ে বসে। নীরা বিচলিত গলায় বলে উঠে,

— তোর পা বলে কেটে গিয়েছে দেখি। কোথায়? দেখা আমাকে।

তখন পুষ্পিতা বলে উঠে,
— আরেহ ও জীবনে বলবে? তুই পা সামনে এসে দেখ গাধী।

পুষ্পিতার কথা নীরার পছন্দ হওয়ায় সে দ্রুত আরিহার পা টেনে নিজের সামনে আনে। আর সাথে সাথে ডান পায়ে থাকাটি ওদের চোখের সামনে ভেসে আসে। ক্ষতটা একটু পুরানো কিন্তু পায়ে চাঁপ পড়ায় আর পানির সংস্পর্শে এসে আবার সতেজ হয়ে উঠে। নীরা কাঁদো কাঁদো হয়ে সেই জায়গায় ড্রেসিং করতে শুরু করে। এইসব দেখে আরিহা বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই পুষ্পিতা এক ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়,

— এই খাটাস মাইয়া একদম চুপ। মুখ দিয়ে আজকে একটা কথা বের হলে তোকে আজকে এই পানিতে চুবিয়ে মারবো। হারামি একটা! পা কেটে গিয়েছে ভালো কথা। আমাদের বলবি না তা তো জানা কথা কিন্তু নিজেতো ঠিক মত বেন্ডেজটা করে নিবি। নিজের প্রতি কোন চিন্তাই নেই তোর। মরবি না তো তুই কিন্তু আমাদের ঠিকই টেনশনের জালে ফেলে ঠিকই মেরে ফেলবি।

আরিহা এইবার পুষ্পিতার দিকে তাকায়। চোখে মুখে কেমন এক বিচলিত ভাব ফুটে উঠেছে। সাথে আরিহাকে নিয়ে চিন্তা। যা দেখে আরিহা মুচকি হাসে। নীরা পায়ের ক্ষতটাতে ঔষধ লাগাতে লাগাতে বলে,

— ইশশ! ক্ষতটা কত গভীর। অনেক কষ্ট হচ্ছে তাই না? কাঁদো কাঁদো কন্ঠে।

আরিহা এইবার নির্বোধভাবে বলে উঠে,
— এর বেশি কষ্ট বুকের ভিতর বয়ে বেড়াচ্ছি আমি। এর সামনে এই কষ্টটা অতি নগ্ন।

নীরা আর পুষ্পিতা কিছুক্ষণ দুইজন দুইজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। তারা দুইজন কিছু বলতে যাবে তখনই আরিহা গম্ভীর গলায় বলে উঠে,

— আচ্ছা ব্যথা পেয়েছি আমি। কাটা জায়গা হতে রক্ত পড়ছে আমার। তাতে তোরা দুইজন এত হাইপার কেন হচ্ছিস? হোয়াট ইজ দ্যা বিগ ডিল। আর নীরা তুই এমন ভাব করছিস যেন আমার পাটাই কেটে পানিতে ভেসে যাচ্ছে। ডোন্ট বি সাচ আ ইমোশনাল ফুল।

আরিহার কথায় খট করেই পুষ্পিতার মাথায় আগুন ধরে যায়। পুষ্পিতা আরিহা মাথায় একটা চাটি মারে। আরিহা এইবার রাগান্বিত দৃষ্টিতে পুষ্পিতার দিকে তাকায়। পুষ্পিতা দাঁত কেলিয়ে বলে,

— হাত আমার। শক্তি দিয়ে মারা চাটিও আমার। তুমি এত রাগ কেন দেখাচ্ছো বেবি?

সাথে সাথে পুষ্পিতা আর নীরা দমফাটা হাসিতে মেতে উঠে। আরিহা এইবার কিছু না বলে মুচকি হাসে।
আরিহা এইবার খেয়াল করে মাটিতে যে ময়লা আর তাতে যে তাদের ড্রেস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে তাদের কোন ভাবান্তর নেই। নীরা সুইমিংপুলের একদম কিনারায় বসায় তার ড্রেসের একটি অংশ ভিজে গিয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাও সে আরিহার পায়ের ক্ষতটা লাঘব করতে ব্যস্ত। আরিহা এইবার এক দীর্ঘ শ্বাস নেয়।

বেন্ডেজ করা শেষ হতেই আরিহা দাড়িয়ে যায় আর জুতা পড়ে হাটা শুরু করে। নীরা আর পুষ্পিতা কিছু বলতে নিবে তার আগেই কোথ ইহান উড়ে এসে আরিহার সামনে এসে দাড়ায়। আর হুট করেই আরিহাকে কোলে নিয়ে হাটা শুরু করে। আরিহা খানিকটা চমকে উঠে। ইহান আরিহাকে গাড়িতে বসিয়ে দেয় আর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালানো শুরু করে।

?

বিছানায় বসে আছে আরিহা। কিছুক্ষণ আগেই ডাক্তার এসে আরিহাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে গিয়েছে। ইনফেকশন যাতে না হয় তার জন্য। বারান্দায় ইহান দাড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছে। “আরিহার কিছুটা অসুস্থ”, এই কথা সকলকে জানিয়ে ইহান আরিহাকে নিয়ে আসে।
আরিহা এইবার ভাবনায় পড়ে যায়, “এইটা কি আমার জন্য ইহানের চিন্তা নাকি নতুন করে কোন প্লেনের অংশ মাত্র। আগের অবস্থা হলে হয়তো আমি এইটাকে আমার জন্য ইহানের চিন্তাই ভাবতাম কিন্তু এখন!”
আরিহা আবার ডুব দেয় অতীতে৷ যখন দ্বিতীয়বারের মত ইহানের সাথে দেখা হয়েছিল।

?
অফিসের কেবিনে বসে আছে আরিহা। সামনেই তার ল্যাপটপ। আপ কামিং ফ্যাশন শো- এর জন্য কিছু ইম্পোর্টেন্ট মেইল চেক করছে সে। তখনই রুমে আরিহার ম্যানেজার এসে হাজির হয়। হাতে তার মডেলদের ডিটেইলস পেপার। আরিহা ম্যানেজারের দিকে না তাকিয়ে বলে,

— মি. কালাম কোন কি দরকার ছিল?

মি. কালাম তখন কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলে,
— ইয়েস ম্যাম। আপনি আপ কামিং ফ্যাশন শো – এর জন্য মেইল মডেলদের ডিটেইলসগুলো চেয়েছিলেন। তো সেইগুলাই এসেছিলাম। প্লিজ চেক ইট আউট। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা এসেও পড়বে। সব কিছু বুঝে নেওয়ার জন্য।

— ওকে দ্যান গিভ মি দ্যা পেপার।

মি. কালাম সেই ফাইলগুলো এগিয়ে দেয়। আরিহা একেক করে সকলের ডিটেইলস চেক করতে থাকে। অবশেষে একজনের ডিটেইলস দেখতে গিয়ে তার ভ্রুকুটি একত্রিত হয়ে যায়। সেই এইবার ভালো মত পড়তে শুরু করে,

“নাম ইহান মাহমুদ। হাইট ৬ ফিট। গায়ের রঙ হলদে ফর্সা। বাংলাদেশের নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছে। পেশায় একজন ইউটিউবার। ” দ্যা বিগ ব্যান্ড” নামের একটি নিজের চ্যানেল আছে। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের শর্ট-ফিল্ম, ফানি ভিডিও, রিমিক্স সং কম্পোস্ট করে থাকে। সাথে সাথে মডেলিং ও করে। এই পর্যন্ত প্রায় কয়েকটি নামীদামী ব্রেন্ডের জন্য মডেলিং করেছে সে। ”

পড়া শেষে আরিহা কিছুটা বাঁকা হাসে। তারপর মি. কালামকে বলে যে,

— সকলেই আসলে তাদের যেন কনফারেন্স রুমে বসানো হয় এবং তাদেরকে এই কন্টাক্ট পেপারে সাইন করানো হয়। মাইন্ড ইট।
মি. কালামের দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে। মি. কালাম সম্মতি জানিয়ে চলে যায়। আরিহা এইবার নিজের ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে মুচকি হাসে।

প্রায় ১ ঘন্টা পড়েই সকলে এসে হাজির হয়। আরিহার কথা অনুসারে সকলকেই কনফারেন্স রুমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আরিহার দেওয়া সেই কন্টাক্ট পেপারে সাইন করিয়ে নেয়। সকলেই বিনা পড়ে সেই কন্টাক্টটাতে সাইন করে দেয়। সাইন করা শেষে মি. কালাম সেই কন্টাক্ট পেপার গুলো নিয়ে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই আরিহা রুমে এসে হাজির হয়।
আরিহাকে দেখার সাথে সাথে একজনের মাথা গরম হয়ে যায়। সে বরং আর কেউ নয় ইহান। ইহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই সকলে দাড়িয়ে যায় আর একসাথে বলে উঠে,

— গুড ইভেনিং ম্যাম।

আরিহা তখন মুচকি হেসে বলে,
— গুড ইভেনিং। আমাকে ম্যাম বলতে হবে না। ইউ অল ক্যান কল মি মিস. আরিহা। নাও সিট ডাউন।

সকলেই সাথে সাথে বসে যায়। ইহান ফিসফিসিয়ে পাশের জনকে জিজ্ঞেস করে যে সে কে? তখন পাশের জন তাকে জানায় যে এ হচ্ছে আরিহা আহমেদ। এই ফ্যাশন হাউসের মালিক। এইটা শুনার সাথে সাথে ইহান অবাকের শীর্ষে পৌঁছে যায়। আরিহা তখন ইহানের এক্সপ্রেশন দেখে বাঁকা হাসে।
অতঃপর সে বলতে শুরু করে,

— তো আপনারা আজ থেকে আমার আন্ডারে কাজ করছেন। কিছুক্ষণ আগেই আপনাদের একটা পেপার সাইন করানো হয়েছে। কেউ হয়তো তা পড়েছে আর হয়তো না। তাই সকলের সুবিধার্থে আমি ক্লিয়ারলি বলে দিচ্ছি। ওই পেপারে লিখাছিল যে আপনি আগামী ১৫ দিন আমার আন্ডারে কাজ করবেন। আমি যেভাবে বলবো সেভাবেই আপনাদের করতে হবে। ফ্যাশন শো-এর আগ পর্যন্ত কেউ কাজ ছাড়তে পারবেন না। যদি ছাড়েন তাহলে তার প্রতি স্ট্রিক্ট একশেন নেওয়া হবে। হতেও পারে এর জন্য আপনার পুরো ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সো বি কেয়ারফুল।
আজকে মি. কালামের থেকে সব কাজ বুঝে নিয়েন। কবে কি করতে হবে। এখন আমি আসি।

এই বলে আরিহা চলে যায়। যাওয়ার আগে ইহানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে। ইহান তা দেখে প্রচন্ড রেগে যায়। হুট করেই পাশে থাকা গ্লাসটা মেঝেতে ফেলে দেয়।
?

ইহানের ডাক কানে আসতেই আরিহা অতীতের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। চোখ তুলে সে ইহানের দিকে তাকায়।

— মেডিসিনগুলো নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ব্যথা কিছুটা কমে যাবে।

আরিহা ইহানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
— বাহ! বাহ! এত কেয়ার। তা আমাকে ভালবেসে ফেললে নাকি?

ইহান এইবার তেতে উঠে বলে,
— হোয়াট রাবিস! সবসময় সবকিছুকে ভালবাসার সাথে মিলিয়ে কেন বুঝি না। মনুষ্যত্ব বলতে কিছু আছে ওকে। এখন এই মেডিসিনগুলো খেয়ে আমায় উদ্ধার করো।

আরিহা এক রহস্যময় হাসি দিয়ে ঔষধগুলো খেয়ে নেয়। ইহান এইবার চলে যেতে নিলে আরিহা ইহানের হাত ধরে টেনে ইহানকে বিছানায় শুয়ে দেয় তারপর তার বুকে মাথা রেখে তাকে আঁকড়ে ধরে শুয়ে পড়ে। সবকিছু দ্রুত হওয়ায় ইহান হকচকিয়ে উঠে। অতঃপর সব বুঝতে পেরে চেঁচিয়ে উঠে,

— আরেহ এইসব কি হচ্ছে। ছাড়ো আমায় বলছি। ছাড়ো!

আরিহা আরও শক্ত করে ইহানকে জড়িয়ে ধরে বলে,
— আজকে এইভাবেই ঘুমাবো। আজকে কেন রোজ এইভাবেই ঘুমাবো। তোমার বুকে কেন জানি আলাদা শান্তি খুঁজে পাই। তাই আজকে থেকে বুক আমার পার্সোনাল প্রোপার্টি।

— হোয়াট রাবিস ইজ দিস। ছাড়ো আমাকে বলছি।
এই বলে আরিহাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে। কিন্তু কিছুতেই আরিহাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়াতে সক্ষম হলো না সে। তখন হুট করেই আরিহা ইহানের ঠোঁটে হাল্কা করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে,

— আমাকে রাগিও না। আমি রাগলে যে ঠিক কি কি করতে পারি তা তোমার অগচোর নয়। তাই এখন সুইট একটা বাচ্চার মত ঘুমাও। কথাগুলো একদম শান্ত গলায় বলা হলেও এর মধ্যে ছিল এক ভয়ংকর হুমকি।

কিন্তু ইহানের কানে এইসবের কোন কিছুই পৌঁছায়নি। সে তো এখনো শোকড হয়ে আছে। ওর সাথে একটু আগে কি হলো ও সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না।
আরিহা ইহানের অবস্থা বুঝতে পেরে একটু বাঁকা হাসে। অতঃপর এক তুরি বাজায়। তুরি বাজাতেই ঘরের সকল লাইফ অফ হয়ে যায়৷

?

ঘড়িতে ৯ টা বেজে ১৩ মিনিট হচ্ছে,
চারদিকে সূর্যের তীক্ষ্ণ রশ্মি ছড়িয়ে পড়েছে। পাখিরাও এইবার তাল মিলিয়ে সকালের আহবান জানিয়ে শুরু করে দিয়েছে তাদের শুভসকালের ডাক। ব্যস্ত শহরটি ধীরে ধীরে জীবন্ত হতে শুরু করেছে। হাল্কা বাতাসে বারান্দার সাদা পর্দাগুলো হাল্কা দোল খাচ্ছে। এক মুঠো রোদ এসে উঁকি দিচ্ছে রুমে। রোদের তীক্ষ্ণতার ফলে ইহানের ঘুমে বিঘাত ঘটে। সে পিটিপিটি করে চোখ খুলে। নিজের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করতে থাকে। অতঃপর বুঝতে পেরে লাফিয়ে উঠে।
চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। চোখ বুলাতেই ডান পাশে দেয়ালে থাকা আরিহার ছবিটি তার চোখে পড়ে। অতঃপর আরিহার কথা মাথায় আসতেই সে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। র ড্রয়িং রুমে আসতেই সে রান্নাঘর হতে কিছু শব্দ পায়। উঁকি মেরে দেখে আরিহা রান্না করছে। তা দেখে ইহান কিছু না বলে চুপচাপ রুমে চলে আসে। তারপর কাবার্ড থেকে নিজের জামা কাপড় নিয়ে নেয়। কালকে বাসায় আসার পর সে জানতে পারে যে আরিহা ওলরেডি ওর সকল জামা কাপড় নিয়ে এসেছে এবং তা কাবার্ডে সাজিয়ে দিয়েছে। ইহান তখন ড্যাবড্যাব করে আরিহার দিকে তাকিয়ে ছিল। মানে একজন মানুষ কিভাবে সকল কাজকর্ম এত নিখুঁত ভাবে করতে পারে তা সে ভেবে পায় না।
ইহান এইবার ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে। তখনই রান্না ঘর থেকে সাদা শাড়ি পড়া এক নারীর দিকে তার চোখ যায়। সাদা শাড়ির মধ্যে রঙে বেরঙের সুতো দিয়ে কারুকাজ করা। চুল গুলো ছাড়া। চোখে মুখে স্নিগ্ধতা। ঠোঁটে মিষ্টি হাসি। সে বরং কেউ নয় আরিহা।
আরিহাকে দেখার সাথে সাথে ইহান চোখ ফিরিয়ে নেয়। আরিহা ইহানের সামনে নাস্তা রেখে বলে,

— নাস্তা করে নাও। আজ আমি নিজের হাতে তোমার জন্য রান্না করেছি।

ইহান কিছু একটা বলতে নিয়েও বললো না। কেন না খাবার দেখার সাথে সাথে ওর পেট মোচড় দিয়ে উঠে। আর পেটের ইদুর গুলো জোরে জোরে ঢোল বাজাতে শুরু করে দেয়। করবেই না কেন? কাল সন্ধ্যা হতে যে ইহান এক গ্লাস জুস বাদে কিছু খায় নি।
ইহান এইবার পেটের দায়ে চুপচাপ খেতে শুরু করে। এমন সময় ওর চোখ যায় পাশে থাকা পত্রিকার দিকে। সাথে সাথে ওর চোখ চড়কগাছ। ইহান খাবার ছেড়ে দ্রুত পত্রিকাটি হাতে তুলে নেয়। আর তাতে লিখা পড়াগুলো পড়ার সাথে সাথে যেন ওর মাথায় বাজ পরে।

#চলবে