অবাধ্য প্রেম পর্ব-২৩+২৪

0
462

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_২৩
#নন্দিনী_নীলা

নিবিড়ের ছোট চাচি এসে আমাদের চিৎকার করতে দেখে ধমক দিয়ে থামালো। আমি থেমে গেলাম। নিবিড়কে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে?

নিবিড় বলল, ওকে দেখে চিৎকার করেছি।

তিনি আমার দিকে চেয়ে বলল, ‘ ও দেখতে এতোটাই বাজে যে তুই ওকে দেখে ভূত দেখার মতো চেচালি।’

নিবিড় বলল, ‘ ও এই বাসায় কি করছে?’

‘ সেটা তোর কাকাকে জিজ্ঞেস কর। এই মেয়েকে বিয়ে করবে না বলে নাচানাচি করল। এখন তাকে বাড়ি এসে উঠিয়েছে‌।’

‘ কাকা নিয়ে এসেছে?’

‘ হুম।’

‘ কবে?’

‘ দুইদিন হয়ে গেলো।’

নিবিড় অবাক স্বরে বলল, ‘ দুইদিন ধরে আমার বাসায় আছে আর আমি জানি না কেন?’

‘ তুই কি বাসায় থাকিস।’

উনার মেয়ের ডাকে উনি চলে গেল। আমি নিজের কাজ করছি। আশা এসে দাঁড়িয়েছে পাশে। নিবিড় আশাকে কফি দিতে বলল।

আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন বলল আমি তার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না। ওই শয়তানটার দিকে তাকিয়ে কথা বুঝতে গিয়ে আমি অসাবধানতাবশত হাত দিয়ে ভাতের গরম হাঁড়ি স্পর্শ করে ফেললাম। সাথে সাথে হাত লাল হয়ে উঠল আমি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠি। আর্তনাদ করে ওঠি। নিবিড় চলে গেছে আশা আমার আর্তনাদ শুনে এগিয়ে এসে বলে, ‘ পাগল হয়েছ নাকি। গরম পাতিলে হাত দিয়েছো কেন?’

আমি ব্যাথায় চুপসে যাওয়া মুখে বলি, ‘ ভুলে দিয়েছি‌।’

আশা চলে গেল কফি নিয়ে আমি ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত ধুয়ে কাজ করছি আর নিবিড় কে বকছি। লোকটা আমার জন্য বিপদজনক। আসলেই একটা না একটা ঝামেলা হবেই।

রান্না শেষ করে উপরে চলে এলাম। গোসল করে খেয়ে বাইরে এসে দেখি নিবিড়ের সেই চাচাতো বোন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমার রুমের দিকে উঁকি মারছে। ওকে দেখে আমার খুব রাগ হলো এতো বড় একটা মেয়ে সে কিনা ছোট পোশাক পরে আছে। এগুলো তো বাচ্চা দের পোশাক। ছোট স্কার্ট ও ফতুয়া ওরনাও নেয় নাই। বেয়াদব মেয়ে।

আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, ‘ এই মেয়ে তুমি আমার রুমের দিকে তাকিয়ে আছো কেন?’

মেয়েটা বলল, ‘ মেয়ে বললে কেন? আমার একটা সুন্দর নাম আছে।’

আমি বললাম, ‘ তোমার নাম কি?’

মেয়েটি বলল, ‘ মাহি।

‘ ও আচ্ছা।’

মাহি একাই আমার রুমে চলে গেল। আমি বিরক্তকর কন্ঠে বললাম, ‘ কি ব্যাপার মাহি তুমি আমার রুমে এসে ঢুকছো কেন?’

মাহি উত্তর না দিয়ে রুমে ঢুকে ঘোরাঘুরি করছে।
আমি রুমে ঢুকার পর মাহি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এমনি তোমার রুমটা দেখছি। তুমি এই পিচ্চি রুমে কিভাবে থাকছো? আমি হলে তো থাকতেই পারতাম না। আমার রুম দেখবে? চলো তোমাকে আমার রুম দেখাই।’

‘ তার দরকার নাই। আমি নিচে যাব না।’

‘সবাই তোমাকে বকবে ভাবছো এজন্য যাবেনা? এখন বাসায় কেউ নাই আমি একা। আব্বু আর কাকারা সবাই অফিসে আর আম্মু রা সবাই শপিংয়ে গেছে আমাকে বাসায় একা রেখে গেছে আর আশা ও তো টিভি দেখছে‌‌। তুমি এখন নিচে গেল ও বকার মত কেউ নাই।’

আমি রাজি হয়ে গেলাম। মাহির কথায় এখন আমার নিচে যাওয়া দরকার বাসায় যেহেতু কেউ নাই এখন যদি কোন ভাবে জানতে পারি নিবিড়ের রুম কোনটা তাহলে আমি লকেটটা খোঁজ করতে পারব।

মাহি আর আমি নিচে নামছি সিড়ি বেয়ে মাহি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ তুমি একা একা উপরে কিভাবে থাকো তোমার ভয় করে না? আমি একা থাকতেই পারি না।’

‘ একা থাকতে পারো না তাহলে কি এখনো আব্বু আম্মুর সাথে থাকো?’

‘থাকতাম এখন দাদুর সাথে থাকি রাতে।’

আমি মাহিকে বললাম, ‘ তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?’

‘ টেনে ।’

‘ অনেক বড় হয়ে গেছে এখনো বাচ্চাদের মত বিহেভ করো কেন। তুমি ভালো পোশাক পরো। এসবে খুবই বাজে লাগছে।’

মাহি আমার কথায় পাত্তাই দিল না। নিজের রুমে গিয়ে লাফাতে লাফাতে সব দেখাতে লাগলো। রুম ভর্তি টেডি বিয়ার। জিনিস দিয়ে ভর্তি করে রেখেছে। আমি হাসি হাসি মুখ করে সবকিছু দেখছি আর সুন্দর বলছি। এই রুম দেখলে যে কেউ একটা দুই বছরের বাচ্চার নাম রুম বলবে। কিন্তু এখানে ১৫ বছরের বাচ্চা বসবাস।
মাহি নিজের ফোন এনে আমাকে কয়েকটা ছবি দেখালো। তারপর গেম খেলতে লাগলো আমার খুব বিরক্ত লাগছে বসে থাকতে।
আমি বললাম,,, ‘ আমি একটু আশার সাথে টিভি দেখে আসি। বাসায় যেহেতু কেউ নাই। তুমি গেইমস খেলো।’

বলে এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালাম না দ্রুত পায়ে নিচে চলে এলাম। আশা আমাকে দেখে টিভি অফ করে বলল,

‘ তুমি নিচে আসলে কখন?’

‘এইতো এইমাত্র আমাকে মাহি নিয়ে এসেছে। ও বলল আমাকে নাকি বাসাটা ঘুরে দেখাবে। বাসায় কেউ নাই। কিন্তু ও এখন গেমস খেলা মগ্ন হয়ে গেছে। বলল তোমাকে নিয়ে ঘুরতে। তুমি কি আমাকে বাসাটা ঘুরিয়ে দেখাবে? আসলে এত বড় আর এত সুন্দর বাসা তো আগে আমি দেখি নাই। খুব ঘোরার ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু কেউ তো আমাকে পছন্দ করে না এজন্য আমি নিচে আসি না। তুমিও তো একবার ভুল করো উপরে যাও না একা একা আমার উপরে খুব খারাপ লাগে।’

আশা খুব দুঃখ প্রকাশ করে বলল ,’ কেমনে যাই বলো এক সেকেন্ড আমাকে ডেকে না পেলেই খুব বকাঝকা করে। এজন্য আমি সবার কাছাকাছি থাকি। আর এখন তোমার কথা ভুলে গেছিলাম এখন একটু সুযোগ পেয়েছি টিভি দেখার আমি তো টিভি দেখতে খুব পছন্দ করি। কিন্তু সবাই থাকলে তো আর তা হয়না।

আশা আমাকে সব রুম ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে কার রুম কোনটা বাইরে থেকেই দেখতে হচ্ছে। ভেতরে ঢুকতে পারছি না। ওই ভাবেই ঘুরছি। রাফসান কাকার পরের রুমটা নিবিড়ের। আমি রুমটার দিকে তাকিয়ে আছি। এই রুমটা খুঁজতেই তো আমাকে এতক্ষন সবার রুম দেখতে হলো মিথ্যা করে। আমার কোন ইচ্ছে ছিল না এই বাসা ঘুরে দেখার।

সিঁড়ির কাছে এসে আশার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ আমি পরবো এখন তুমি কি আমার সাথে যাবে?’

আশা বলল, ‘ তুমি তো পরবে এখন গিয়ে আর কি করব। আমি না হয় টিভি দেখি তুমি পড়ো পরে আসব নি।’

আশা চলে গেল দৌড়ে। এই মেয়ে তো টিভির পাগল । ভালোই হয়েছে এ চলে গেছে।
আমি নিবিড়ের রুমে চলে গেলাম। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। রুমে কেউ নাই অথচ এসির পাওয়ার হাই করে রুম ফ্রিজ করে রেখেছে। আমি এসি অফ করে দিলাম। আর কোন দিকে না তাকিয়ে আলমারি খুলে খোঁজা খুঁজি করতে শুরু করে দিলাম। কিন্তু কিছুই পেলাম না এখানে আছে বলেও আমার মনে হয় না। ছোট টেবিলের ড্রয়াল খুলে চেক করতে যাব তখনই কেউ দরজা ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকলো। দরজা খুলে কেউ ভেতরে এসেছে এটা বুঝতে পেরে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল। বুক ধক করে উঠল। আমি কি ধরা পরে গেলাম নাকি। আমি যে হাত দিয়ে ড্রয়ার খুলতে গেছিলাম সেই হাতটা সরিয়ে ফট করে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে পেছনে তাকাতেই আমি কেঁপে উঠলাম ভয়ে।
নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক দৃষ্টিতে। আমি ঢোক গিলে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছি। কি এক্সকিউজ দেবো বুঝতে পারছিনা। নিবিড় তো আমাকে এখন জিজ্ঞেস করবে আমি এখানে কি করছি আমি তার উত্তরে কি বলবো।

আমার আর একটু সচেতন হয়ে আশা উচিত ছিল। সবকিছুতে আমার তাড়াহুড়া তাইতো এভাবে ধরা খেয়ে গেলাম এখন আমার কি হবে?

আমি বেক্কেলের মতো হেসে ফেললাম নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে। নিবিড় আমাকে কিছু বলতে নিচ্ছিল আমি তাকে সুযোগ না দিয়ে বললাম, ‘ আচ্ছা এটা কি রাফসান কাকার রুম । আমি কখন থেকে তাকে খুঁজছি ও তার রুম খুঁজছি পাচ্ছি না। আপনি কাকার রুমে কেন এসেছেন কোন দরকার নাকি আমার মতো কাকাকে আপনার?’

আমি কথা শেষ করে নিবিড়ের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠলাম। নিবিড় রক্ত লাল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি শুকনো ঢোক গিললাম।

#চলবে…..

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_২৪
#নন্দিনী_নীলা

নিবিড় নিজের পকেটে থেকে আমার লকেট টা বের করে আমার দিকে ধরে বলল, ‘ এটাই তো খুঁজতে আসছো তাই না।’

আমি চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছি‌। বদমাইশটা নিজের পকেটে নিয়ে ঘুরছে আর আমি এটা রুমে খোঁজে মরতাছি। আমি কটমট চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ আমার লকেট ফেরত দিন।’

বলেই আমি লকেট নিতে এগিয়ে আসলাম। নিবিড় হাতের মুঠোয় বন্দি করে ফেলল।
আর বলল, ‘ বের হ‌ও আমার রুম থেকে। আমাকে বানোয়াট গল্প শুনিয়ে লাভ নাই। তোমার মতিগতি আমি দেখলেই ধরে ফেলি।’

‘ তো আমি জেনে শুনে কি নিজের বিপদ ডেকে আনব। গল্প তো বলতেই হতো।’

‘ আবার মুখে মুখে তর্ক করছো?’

‘ আমার জিনিস ফেরত দিন না হলে কিন্তু আমি….

‘ না হলে কিন্তু কি?’

আমি এদিকে ওদিক তাকিয়ে আছি। কি করা যায়। দূরে এক ছোট ফটো দেখলাম একটা মেয়ের আমি ভেবে নিলাম এটা এই বদমাইশ টার গার্লফ্রেন্ড আমি ফট করেই দৌড়ে গিয়ে ফটো টা হাতে নিয়ে বললাম,
‘ দিন নাহলে এটা কিন্তু ভেঙে ফেলব!’

আমি কথাটা জাস্ট নিবিড় কে ভয় দেখাতে বলছি যাতে নিবিড় আমার কথা শুনে আর আমার জিনিস টা ফেরত দেয়। কিন্তু জানি না কি হলো আমাকে ফটো ফ্রেম টা ধরতে দেখেই নিবিড়ের চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়। ও আমার দিকে চেয়ে খুব শান্ত গলায় বলে, ‘ ছোঁয়া ওটা যেখানে ছিল রেখে দাও।’

আমি উনার শান্ত গলা শুনে যেন আরেকটু সাহস পেয়ে যায়।
আমি বলে উঠি, ‘ নাহ‌ আপনি আমার জিনিস ফেরত দিন আমি ও দিয়ে দেব না হলে এটা আমি…

আমির মুখ থেকে না শব্দটা শুনেই নিবিড় রাগে লাল হয়ে গেছে। আমি নিবিড়ের ফেস দেখে কথা থামিয়ে দিয়েছি। নিবিড় আমার দিকে এগিয়ে আসছে রেগে। আমি ভয়ে আতকে উঠি। আমার হাত কাঁপতে থাকে আর যার ফলে আমার হাত ফসকে পরে যায় নিচে তা দেখে নিবিড় চিৎকার করে উঠল,ছোঁয়া বলে। আমি ফ্রেমটা দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। আমি ফ্রেম টার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ সরি আমি ইচ্ছে করে এটা ফালাইনি। ভুলে পরে গেছে..

আমার কথা শেষ করতে দিল না। নিবিড় এগিয়ে এসে ফট করে আমার গালে থাপ্পড় মেরে বসলো। আমি গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে নিবিড়ের দিকে তাকালাম। নিবিড় আমার হাত মুচড়ে ধরে ধাক্কা দিয়ে রুমে থেকে বের করে দিলো।
আমি বাইরে এসে পরলাম। নিবিড় আমার দিকে আমার লকেট টা ছুড়ে মারল।

আর বলল, ‘ তুমি আর আমার চোখের সামনে আসবে না কখনো।’

আমি লকেট হাতে নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছি। নিবিড় ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিল আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি দরজার দিকে।
গালে চিনচিন ব্যাথা করছে বাবারে এতো শক্তি উনার শরীরে জানলে আমি ওই ফ্রেম টা হাতেই নিতাম না। ব্যাথায় আমার চোখ অশ্রু এসে ঠেকেছে। আমি সেসব পাত্তা দিলাম না। লকেট পেয়েছি এসেই খুশি আমি উপরে চলে এলাম।
মেয়েটাকে দেখে তো ছোট মনে হলো এতো বাচ্চা একটা মেয়ের সাথে উনি প্রেম করেন।
আমি তো ভাবছিলাম ওই আফিয়ার সাথে উনার ইটিশপিটিশ আছে।

এই বাসায় আসার পর আর তাহমিনা আপুর সাথে দেখা হয়নি। আমি কাকাকে বলে তার সাথেই গেছিলাম একদিন দেখা করতে তিনি ও এতে খুশি কারণ তিনি নাকি সারাদিন ঘুরেও আপুর সাথে কথা বলার সুযোগ পায়নি। আপু দেয়নি। এবার আমি থাকলে সব কিছুই হবে।
এজন্য আমাকে হাতিয়ার করে যাচ্ছে।
আর সফল ও হয়েছিল দেখা কথা সব‌ই হয়েছে। আমি আপুর সাথে কথা বলতে গেলেই বেশিরভাগ কথা কাকাকে নিয়ে বলি। যাতে কাকার জন্য আবার তার মনে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।

যাইহোক সেদিনের ঘটনার পর থেকে আমি আর নিবিড়ের আশেপাশে ঘেঁষি না। কলেজ অফ তাই এখন ফ্রী তে বাসায় বসে থাকি‌। মাঝে মাঝে মাহি আমার কাছে আসে। ও নিয়ে আসে নতুন জিনিস আমাকে এসেই দেখানো শুরু করে।

কাকার জন্য নাকি আরেক মেয়ে দেখছে। আমি শুনেই জোরে কি বলে উঠলাম।
আমাকে চিৎকার করতে দেখে আশা বলল , ‘ কি হয়েছে চিৎকার করলে কেন?’

আমি বললাম, ‘ বিয়ে কি ঠিক হয়ে গেছে?’

আশা বলল, ‘ সব ঠিক এখন রাফসান কাকু কিছু না করলেই হয়ে যাবে বিয়ে।’

আমি নখ কামড়াতে শুরু করে দিছি এই বিয়ে কাকা জীবনে করবে না আমি জানি। তাহমিনা আপু রাজি হয়ে গেলেই বিয়ে হতো বিয়ে খেতে পারতাম। নাহ আর ভালো লাগছে না কাকা আর কতো কাল একা থাকবে আমাকে একটা কিছু করতেই হবে।

আশা চলে গেছে। আমি তাহমিনা আপুর সাথে কথা বললাম। তারপর কল কেটে লিলিকে কল করলাম।

লিলি আমাকে খুব ঝাড়ল এটা অবশ্য আমার পাওনাই ছিল। কারণ এখনো দীপার বাসায় যায় নি। আমি কাল যাব সেটা বলে কল রাখলাম। রাতে নিচে চেঁচামেচি শুনে আমি নিচে আসলাম লুকিয়ে রান্নার ছুতোয়।
শুনতে পেলাম কাকার চেঁচামেচি। আমি এক পা দু’পা করে তার রুমে দিকে আসছি তখন এক ধাক্কা খেলাম নিবিড় এর মায়ের সাথে তিনি আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে আগুন চোখে আমার দিকে তাকালো আর গমগম গলায় বলল, ‘ কোথায় যাচ্ছ তুমি?’

আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ না মানে আসলে চেঁচামেচি হচ্ছে তাই..

‘ তাই চলে এসেছো ফাজিল মেয়ে যাও এখান থেকে এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার তুমি এখানে আসবে না।’

‘ আচ্ছা সরি আমি যাচ্ছি।’

উনি আবার আমাকে ডেকে বলল,, ‘ তোমার সাথে আমার ইমপর্টেন্ট কিছু কথা আছে। কাল আমার রুমে এসো একবার।’

আমি মাথা নেড়ে চলে এলাম।
পরদিন দীপার বাসায় আসলাম আমরা দুজন। প্রথম যাচ্ছি তাই মিষ্টি, ফল নিয়ে যাচ্ছি। আমি মিষ্টি কিনেছি আর বাকি জিনিস লিলি কিনেছে।

দীপা আমাদের সাথে রাগ করে আছে কল ধরে না তাই বাসা খোঁজ করতে শ্রাবণ ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ করতে হয়েছে তার সাথেই বাসার ভেতরে গেলাম।
দীপাকে দেখলাম শাশুড়ি জা সবার সাথে রান্না ঘরে আমাদের দেখেই চলে এলো। ও এসেই গম্ভীর গলায় বলল, ‘ না আসলেও পারতি। পর হয়ে গেছি আমার কাছে আসবি কেন?’

আমি আর লিলি দীপাকে জাপ্টে ধরে সরি বলতে লাগলাম।

দীপা আমাদের ধাক্কা দিচ্ছে সরাতে কিন্তু আমরা তো সরব না। যতক্ষণ ওর রাগ না কমে‌।

‘ সরি দোস্ত ক্ষমা করে দে। খুব ঝামেলায় ছিলাম রে আমার বাসা ঠিক করা নিয়ে।

দীপা বলল, ‘ আমাকে ছাড় এমন করে ধরে রাখলে আমি দম বন্ধ মরে যাব‌।’

‘ তোর রাগ কমেছে?’

‘ নাহ!”

‘ তাইলে ছাড়ছি না।’

‘ মেরে ফেলতে আসছিস।’

‘ হুম!’

‘ আমার সাথে কিন্তু আরেকজন মরবে। তোরা কি আমার জন্য আরেকজন কে মেরে ফেলবি।’

আমি আর লিলি ওকে ছেড়ে বললাম, ‘ তোরে একা ধরেছি মরলে তুই একা মরবি আরেকজন আসল ক‌ই থেকে?’

দীপা লজ্জা পাওয়া কন্ঠে বলল, ‘ আমি প্রেগন্যান্ট।’

আমি আর লিলি একে অপরের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললাম, ‘ কিহহহ সত্যি?’

‘ হু এজন্য তোদের আসতে বলেছি। সুখবর দিতে‌। আর জানিস এই খবর জানার পর‌ই আমার শশুর বাড়ির সবাই আমাদের মেনে নিছে।’

‘ বাহ দারুন তো। এক সাথে দুইটা খুশির খবর।’

লিলি বলল, ‘ এজন্য তো তোরে সুন্দর লাগছে। প্রেগন্যান্ট হলে কি মানুষ সুন্দর হয়ে যায় না কিরে!’

আমি বললাম, ‘ আগে তো লজ্জা পেতি না এখন শশুর বাড়ি এসে লজ্জা বতি হয়ে গেছিস?’

দীপার সাথে সারাদিন থাকা হলো। আসব আসব করেও আসতে দেয় না থাকতেই হবে বলে। অনেক জোর জবরদস্তি করে সন্ধ্যায় বের হলাম। লিলি আর আমার রাস্তা ভিন্ন ও তো ভয়ে আছে ওর মায়ের জন্য। আমার কোন ভয় নাই যেহেতু পরিবার নাই। আমি তো স্বাধীন।

সারে সাতটা বেজে গেল আসতে আমার। বাসার ভেতরে ঢুকব তখন দেখলাম নিবিড় আমার দিকে রাগী চোখে চেয়ে আছে। আমি তাকে ক্রস করে বাসায় ঢুকব তখন নিবিড় আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,’ কোথায় ছিলে?’

আমি তেরা কথা বলতে গিয়ে ও বললাম না বললাম, ‘ দীপার বাসায় গেছিলাম। কেন?’

‘ ভেতরে যাও।’

বলেই নিবিড় বাসার বাইরে চলে গেল। আমি কিছুই বুঝলাম না।

#চলবে….