আঁধারিয়া অম্বর পর্ব-২০

0
1230

#আঁধারিয়া_অম্বর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
২০।

একটা পুরুষালী মিষ্টি গন্ধ নাকে ঠেকছে শ্যামার, পরিচিত সেই গন্ধ। শ্যামার মস্তিষ্কের নার্ভ যেন ধীরে ধীরে অচেতন হয়ে যাচ্ছে। শরীরে ভর করছে অসাড়তা। এত বছর.. প্রায়… ১১ টা বছর এই ব্যক্তিটির জন্য অপেক্ষা করেছিলো শ্যামা, সাত বছর আগে সেই দিনটি এখন ভুলতে পারেনি শ্যামা। প্রথম বার.. প্রথম বার দেখা করতে গেছিলো এই আগুন্তকের সাথে। কিন্তু সে আসেনি। চোখ বাঁধা শ্যামার ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটলো। অতিমাত্রায় আতঙ্ক, ভয়ের জন্য কি না! তার মস্তিষ্ক সুফিয়ানের অবয়ব তৈরি করছে? শ্যামা এবার চুপ করে গেলো। ঘর ভর্তি মৌ মৌ করছে সুবাস। শ্যামার এবার একটু ভয় করতে লাগলো। তার খুব কাছে এসে কেউ একজন দাঁড়ালো। স্পর্শ করলো গালে। নরম কন্ঠে ফিসফিস করে বলল,

“মনে পড়ে? আমাদের সেই প্রথম চাঁদ দেখার কথা?
মনে পড়ে? রাত জেগে হাজার তারার ভিড়ে, দুজন দুজনকে খুঁজা?
মনে পড়ে? সেই মুঠোফোনের এপার-ওপার হৃদছন্দের মিষ্টি স্বর?
মনে পড়ে সেই নিশ্বাস , যার শব্দ কানে না গেলে, ঘুমাতে পাড়তো না সেই সুফিয়ান?”

শ্যামা এবার কাঠ হয়ে গেছে। অগণিত গড়িয়ে পড়ছে চোখের কোনের জলের ফোয়ারা। শ্যামার টিকালো নাকটাও লাল হয়ে এসেছে টমেটোর মতো। সে দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো ইজহান। শ্যামা চুপ। এখন তার মস্তিষ্কের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে। সে বুঝতেই পারছে না, যা হচ্ছে? এটা কি সত্যি? নাকি কোনো কল্পনা? শ্যামার এই মুহূর্তেই মন চাইছে খুলে ফেলতে চোখের বাঁধান, হাতের বাঁধন। একটা বার… একটা বার দেখতে ইচ্ছে করছে সামনের ব্যক্তিটিকে। হাজার… হাজার প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে এই লোকটিকে। কিন্তু কি অদ্ভুত! মুখে রা নেই শ্যামার। শ্যামা বলতে চাইছে, চিৎকার করতে চাইছে, চেচিয়ে বলতে চাইছে,

“কেনো? কেনো এলে না সেদিন? কেনো.. কেনো এভাবে ধোকা দিলে আমায়? ”

শ্যামার মাথায় এবার তীব্র ব্যথা করছে..। সে এবার ঠোঁট নাড়লো,

“সুফিয়ান… ইট’স ইউ?”

ঠোঁট জেনে অনেক কাঁপছে শ্যামার। সে অধির আগ্রহে আগুন্তকের বলা কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছে…. সামনে থেকে কোনো বাক্য ভেসে এলো না… উল্টো পায়ের শব্দ হলো। হয়তো সুফিয়ান চলে যাচ্ছে? শ্যামা এবার চেয়ার থেকে উঠতে চাইলো, চিৎকার করে বার বার বলল,

“সুফিয়ান… আমি জানি এটা তুমিই… প্লিজ যেও না….. প্লিজ। সুফিয়ান????”

ততক্ষণে দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। ঘরের মাঝের কিছুক্ষণ আগের সেই মিষ্টি গন্ধটা এখন রয়ে গেছে। শ্যামা শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আবারো েকবার হারিয়ে ফেলেছে সুফিয়ানকে??

—————–

রিদ পায়চারি করছে। মাথা বিন্দু বিন্দু ঘাম। তখনি হুমায়ুন ঘরে প্রবেশ করলো। চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। রিদ চেচিয়ে বলল সেই সময়,

” বাবা শ্যামা কোথায়? তুমি বলেছিলে তোমার কাছে শ্যামা। তাহলে.. তাহলে কোথায় সে?”

হুমায়ুন চৌধুরী বলল,

“আমার লোক তাদের নিয়েই আসছিলো, আর তখনি… তখনি তাদের উপর কারা জানি এট্যাক করে.. আর ওদের..!”

রিদ রেগে তার বাবার কলার চেপে ধরে বলল,

“আমি অত কিছু জানি না, আমার শ্যামাকে চাই বেস। নয়তো, সব সব ধংস করে দিবো!”

হুমায়ুন চৌধুরী ভয় পেয়ে যান। ছেলের এমন রূপ আর কখনো দেখেন নি তিনি। ঠিক তখনি একটি লোক ছুটে এসে বলল,

“স্যার রেট পড়েছে আমাদের সকল আস্থানায়। আর খবর পেয়েছি পুলিশ যে কোনো মুহূর্তে এখানে আসচ্ছে। ”

রিদের রাগ আরো বেড়ে গেলো। রাগের বসে এক লাথি বসালো সামনের টেবিলে। আর চেচিয়ে বলল,

“ইজহান… তোকে আমি ছাড়বো না!”

সেই মুহূর্তে ভেসে এলো শীতল, ঠান্ডা, বরফ কন্ঠ। বলল,

” আমি তোমার সামনেই আছি কি করবে তুমি? আছে নাকি কিছু করার ক্ষমতা? ”

রিদ রাগে ইজহানের দিকে তেড়ে যেতেই পিছন থেকে পুলিশের একদল বেড়িয়ে তাদের ঘিরে ফেলো। রিদ যেন আকাশ থেকে পড়েছে। ইজহান বাঁকা হেসে বলল,

” লুকোচুরি খেলা না হয় এবার শেষ হলো…! দ্যা গ্রেট মাফিয়া লিডার এখন কারাদণ্ডে.. নাইছ হেডিং না!”

রিদ কিড়মিড় করে উঠলো,

“আমি তোকে ছাড়বো না!”

ইজহান বলল,

” আগে নিজে মুক্ত হো। তারপর দেখা যাবে ছাড়বি কি ধরবি!”

রিদ রাগে শুধু ফুসতেই লাগলো। ইজহান আবার হেসে বলল,

” আশা করছি.. তোর জেলের সফর খুব রোমাঞ্চকর হবে! অফিসার প্লিজ। ”

এগিয়ে এসে রিদকে এক পুলিশ নিয়ে যেতে লাগলো। তখনি ইজহান আবারো ফিসফিস করে বলল,

“বলেছিলাম, শ্যামাকে তুই স্বপ্নে পাবি!”

রিদ শুধু কিড়মিড় করতেই লাগলো।

এদিকে যেই হুমায়ুন মুখ খুললো,

“ইজহান… এসব কি করছো? তুমি কোন ব্যাসিসে রিদকে এরেস্ট করাচ্ছো?”

ইজহান হেসে বলল,

” কটা বলবো বলুন তো আঙ্কেল? মুলত মাথাটা ওর আপনি নষ্ট করেছেন, এরেস্ট তো আপনাকে করানো উচিত। ”

হুমায়ুন থতমত খেয়ে বলল,

” আমি তোমাদের নামে মান হানির কেইস করবো!”

ইজহান হেসে বলল,

” ওহো শিউর।”

বলেই পা বাড়ালো। তারপর আবার পিছনে ফিরে বলল,

“বাই দ্যা ওয়ে আঙ্কেল, আপনার লাইসেন্স কিন্তু ক্যান্সেল করা হয়েছে। ”

হুমায়ুন চৌধুরীর মাথায় বাজ পড়লো এবার বলল,

“কিন্তু কেন?”

ইজহান কাঠ গলায় বলল,

“একটি অসহায় মেয়েকে জালিয়াতি করে তার বাবার সই নিয়ে বিক্রি করার মিথ্যা উইল করার জন্য।”

হুমায়ুন চৌধুরী জায়গায় জমে গেছে। চোখ বড় বড় করে দেখছে ইজহানকে। ঠান্ডা, চুপচাপ স্বভাবের ছেলেটি কিভাবে ঠান্ডা ভাবেই বাজি পালটে চলে গেলো…! হুমায়ুন চৌধুরী শুকনো ঢুক গিললো শুধু।

—————–

স্নিগ্ধ দুপুর, মৃদুল হাওয়ার ঝাপটা পড়ছে ম্যামার মুখে। চলতি গাড়ির বাহিরে তার স্থীর দৃষ্টি। থেকে ছোট ছোট চুল উড়ছে। আনমনে থাকা শ্যামার শুকনো মুখটি দেখে বড্ড মায়া হচ্ছে ইজহানের পুরোনো হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা আবারো খট খট করে নাড়া দিচ্ছে মনের দরজায়। গাড়ির মাঝে এখন পিনপতন নিরবতা। ইজহান গাড়ি চালাচ্ছে বার বার তাকাচ্ছে আনমনা এই নারীর দিকে। মেয়েটিকে চাইলেও সে বলতে পারে সেই তার সুফিয়ান। কিন্তু… কিন্তু কোথা একটা আটকা পড়ে যায় ইজহান। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাহিরে চেয়ে রইলো সে। তখনি পিছন থেকে জান্নাত বলে উঠলো,

“বড়পু, আজ ইজহান ভাইয়া, সময় মত না আসলে, রিদ ভাইয়া আমাদের হয়তো গুম করে দিতো। যতবার এসব মনে হয়, গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়।”

শ্যামা বাহিরে তাকিয়েই বিষন্ন উদাসীন কন্ঠে বলল,

“ভুলে যা সব!”

জান্নাত হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো। ততক্ষণে গাড়ি এসে থামলো ইজহানদের বাড়ির সামনে। শ্যামা অবাক হয়ে বলল,

” এখানে আনলেন যে?”

ইজহান গম্ভীর কন্ঠে বলল,

” এখন থেকে এখানেই থাকবে!”

শ্যামা বলল,

“কিন্তু!”

ইজহান তাকালো একবার নিষ্প্রাণ চাহনিতে। মনে হচ্ছিল চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিবে শ্যামাকে। শ্যামা যা বলতে চেয়ে ছিলো, সব টুকু কথা গিলে ফেললো।
তারপর হাটা ধরলো বাসার ভিতর। আর তখনি,

চলবে,