আকাশ মোড়ানো চিরকুট
লেখনী – সাইমা ইসলাম প্রীতি
২১.
রঙিন এক প্রজাপতি উড়াউড়ি করছে কুহেলীর ঘর জুড়ে।হালকা হলুদ তার গায়ের রং, ভোর বেলা তেজ ছাড়া সূর্যের ন্যায় গলে পড়ছে বাহার। প্রজাপতি ভীষণ ভীষণ আকর্ষণ করে কুহেলীকে। ছোট থেকেই প্রজাপতি দেখলে তার পিছু পিছু দৌড়ে যাওয়া ছিল তার নেশা, এক প্রকার ভালোলাগা!কুহেলী দু-তিন বার প্রজাপতিটার দিকে গভীর দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে দেখলে আরশ হাতের মুঠোয় ধরে এনে দেয় প্রজাপতিটা তাকে।কুহেলী বড্ড খুশি হয়। সন্ধ্যা গড়াতেই চন্দ্রিমাকে নিয়ে এসেছে আরশ।কুহেলীর সাথে আড্ডা দিবে আজ অনেকক্ষণ।শর্মিলাও কুহেলীকে দেখতে এসেছে।সবাই মিলে ছাদে পাটি বিছিয়ে গল্পের আশর বসিয়েছে।শুকনো খাবারো আছে সাথে।গল্প হবে সারারাত ধরে।সমারোহ থাকতে না চাইলেও সান্দ্র আর মাইশা জোর করে নিয়ে আসে তাকে।যে যেটা পারছে গাইছে, নাচছে, আবৃত্তি করছে। সমারোহ সবকিছু্র ফাঁকে কুহেলীর দিকে দেখছে বারংবার। বিষয়টা খুব বেশি ডিস্টার্ব করে আলোকে। কিন্তু তাও কিছু করার নেই তার। জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা ছিল সমারোহর সাথে প্রতারণা।যদি সে বিয়ে না করতো তবে এখন হয়তো সমারোহর পাশে বসার সুযোগটা পেতো।জ্যোৎস্নার সুন্দর আকাশের নিচে ঘন্টার পর ঘন্টা সমারোহর কাঁধে মাথা রেখে কাটিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু আফসোস, ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন!
কথায় কথায় আড্ডার মোড় ঘুরে যায় ভূতের গল্পে।সবাই তাদের শোনা ভূতের গল্পগুলো আরো তেলমশলা মেখে ভয়ংকর করে বলছে।এর মাঝে সারিকা তার ছোট বেলার একটা ভূতের কাহিনী শোনায় সবাইকে। ছোট বেলা শিমুলপাড়ায় থাকতে অনেকবার ভূত দেখেছে চোখের সামনে, অনেক ভূতের কাহিনী জানা আছে তার।ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে সবাই এক সাথে বসে গল্প শুনে। ভূতের গল্প শুনতে শুনতে একসময় ভয়ে কান্নাই করে দেয় শর্মিলা।ভয় কাটানোর জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবার গানের কলি খেলা হবে।গানের কলি খেলতে খেলতে এবার আরশের গান গাওয়ার পালা আসে।একটু আধটু লজ্জা পেলেও গান শুরু করে আরশ,
“আমার পরান যাহা চায় তুমি তাই,
তুমি তাই গো,আমার পরান যাহা চায়।
তোমা ছাড়া আর এ জগতে মোর কেহ নাই,
কিছু নাই গো,আমার পরান যাহা চায় তুমি তাই,
তুমি তাই গো আমার পরান যাহা চায়।
তুমি সুখ যদি নাহি পাও যাও সুখের সন্ধানে যাও
তুমি সুখ যদি নাহি পাও যাও সুখের সন্ধানে যাও
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে
আর কিছু নাহি চায় গো
আমার পরান যাহা চায় তুমি তাই,
তুমি তাই গো,আমার পরান যাহা চায়।”
আরশ পুরোটা সময় কুহেলীর দিকে তাকিয়েই গান গায়।কুহেলী খেয়াল করে বিষয়টা। বুঝতে পারলেও কিছু করার নেই। আড়ষ্টতার চাদরে মুড়ে বসে থাকে পুরোটা সময়।গান শেষ হলে সবাই হাত দিয়ে উঠে একসাথে।আরশের প্রশংসায় ব্যস্ত হয়ে পরে।তারপর সমারোহকে গান গাইতে বললে চোয়াল শক্ত করে বসে থাকে সে।মুখের ভঙ্গিমায় এমন প্রকাশ পায় যেন এখানে যারা যারা আছে সবাইকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।রাগে গিজগিজ করতে করতে বলে,
‘তোরা ফাজলামি করছোস কর।আমাকে এসবের মাঝে টানবি না।’
বলেই উঠে গিয়ে ছাদের উত্তর দিকে গিয়ে একাকী রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।আলো উঠে সেদিকে যেতে নিলে সারিকা তার হাত ধরে আবার বসিয়ে দেয়।বলে,
‘আবার ঝাড়ি খাওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি ভাইয়ের কাছে?না থাকলে চুপচাপ বসে থাকো।পরে যেও।’
‘কিন্তু ওর যে মন খারাপ?’
‘মন খারাপ নাকি রেগে আছে কারোর উপর খোদা জানে। ইদানিং ওর হাবভাব কিছুই বুঝা যায় না। তুমি গেলেই আরো রেগে যাবে।’
আলো আর কিছু বলেনা। একটু পর আনরুবা ছাদে এসে সবাইকে নিচে আসতে বলেন। খাবার খেয়ে যেতে।সবাই উঠে মে তার মতো নিচে যাচ্ছে।কুহেলী নিচে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালে তার মোবাইলে মেসেজ আসে,
‘তুমি যাবে না কোথাও। যেখানে বসে ছিলে চুপচাপ সেখানেই বসে থাকো।’
কুহেলীর কপাল কিঞ্চিৎ কুঁচকে যায় মেসেজ দেখে।চোখ আপনা-আপনি চলে যায় সমারোহে দিকে। অন্ধকারে ভালো ভাবে দেখা যায় না সমারোহ কে।কুহেলী মেসেজের রিপ্লাই দেয়।
‘সবাই তো যাচ্ছে। চন্দ্রিমাকে কি বলবো?’
‘ভালো চাও তো বসে থাকো।নিচে গেলে সবার সামন থেকে তুলে নিয়ে আসবো যেভাবে সেদিন রাতে বেলকনি থেকে ঘরে নিয়ে গিয়েছিলাম।’
ভড়কে যায় কুহেলী।নাউজুবিল্লাহ্, এ কেমন কথা!ভয়ে হুড়মুড় করে আবার বসে পড়ে কুহেলী। চন্দ্রিমা পাশে থাকায় সে অবাক হয়ে বলে,
‘কিরে বসে পড়লি কেন?নিচে যাবি না?’
চন্দ্রিমার কথা শুনে আরো কয়েকটা চোখ উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো কুহেলীর দিকে।কুহেলী কি বলা উচিত অনুচিত না বুঝেই বলে ফেলে,
‘মাথাটা হঠাৎ কেমন যেন করলো, দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছি না।’
আরশ চিন্তিত হয়ে বলে, ‘আর ইউ ওকে কুহেলী?’
কুহেলী মাথা নাড়িয়ে হুম বলে।মাইশা তাকে পানির গ্লাস আগিয়ে দিলে পানি খেয়ে বলে,
‘তোমরা যাও আমি চন্দ্রিমাকে নিয়ে আসছি।’
‘আসছো কি,আমরা তোমাকে একা রেখে যাব নাকি!চলো আমাদের সাথে।’ আরশ বলে।
সমারোহ ততক্ষণে সান্দ্রর পাশে এসে দাঁড়ায়।মনে মনে তার কুহেলীকে জন্মের গাধা মনে হয়।বলল একা থাকতে আর মহাগাধী সবার যাওয়া আটকে দিল। আল্লাহ জানে এই গাধীর দ্বারা ডাক্তারি পড়া কিভাবে হয়!সমারোহ আস্তে করে সান্দ্রর পেটে চিমটি কেটে বলে,
‘সবাইকে নিয়ে নিচে যা।’
‘ওফ,ভাই চিমটি দেস কে?জ্বইল্লা যাইতাছে।’
‘আরো কয়টা খেতে না চাইলে যা। আমি নিয়ে আসছি কুহেলীকে।’
সান্দ্র অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে থাকে কিছু সময় সমারোহর দিকে। তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলে,
‘কুহেলী একটু বসুক এখানে।মাইশা আর আমি আছি তোমরা সবাই নিচে এসো।আম্মা অনেকক্ষণ ধরে ওয়েট করতেছেন।’
আরশ ভ্রুঁ উঁচিয়ে বলে, ‘ওকেহ, একসাথে যেতে চাইছিলাম।বাট,কুহেলী তুমি বসো আরেকটু, ভালো লাগলে এসো।’
কুহেলী মাথা উপর নিচ করে সম্মতি জানায়।সবাই চলে যাওয়ার পর সান্দ্রর ইশারায় মাইশা ও চলে আসে নিচে।সান্দ্র সমারোহর কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে ,
‘বেষ্ট অফ লাক ভাই, চালিয়ে যা।’
সমারোহ রক্তচক্ষুতে তাকাতেই শিঁশ বাজাতে বাজাতে চলে যায় সান্দ্র।কুহেলী চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে ছাদের এক কর্ণারে।সদ্য ফোঁটা বেলী ফুলের সুবাসে আকাশ বাতাস মাখামাখি।জ্যোৎস্নার মৃদু মিষ্টি আলো এসে পড়ে কুহেলীর সর্বাঙ্গে।লাজে নাক-গাল টকটকে লাল রং ধারণ করেছে।এই বাড়িতে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত কুহেলীর মধ্যে পার্থক্য কেবল এই, কোমর সমান কেশযুগল হাঁটু ছাড়িয়েছে।ঘন খয়েরি চুলগুলোতে নেশাতুর ঘ্রাণে মাখামাখি হয়ে থাকে সবসময়। সমারোহ মুগ্ধ চোখে দেখে কুহেলীর জ্যোৎস্না বিলাস। চাঁদ হয়তো আজ স্বার্থক হবে তার আলোয় কুহেলীর চুলের ঝলকানি দেখে। মায়াবী কৃষ্ণলতা আজ জ্যোৎস্নায় ভিজেছে যে!
কুহেলীর চুল কানের পেছন গুঁজে টুকুর টুকুর চোখে তাকায় সমারোহর দিকে।বুকটা ধক করে ওঠে। সমারোহর নাকের ডগায় যেন রাগেরা বাসা বেঁধেছে।কুহেলীর বুকে হাতুড়ি পেটানো শুরু হয়ে যায় ভয়ে।সমারোহ তার দিকে এগিয়ে আসছে দেখে হাতে পায়ে কাঁপুনি ধরে।ভয়ে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে দিতে ইচ্ছা করে। সমারোহ কুহেলীর দিকে এগুতে এগুতে ছাদের রেলিংয়ের কাছে গিয়ে আটকে যায় কুহেলী।
একদম কাছাকাছি গিয়ে সমারোহ একপলক দেখে নেয় কুহেলীকে। তারপর মাথা ডানে বাকিয়ে না দেখার ভান করে কুহেলীর দুই পাশে হাত বাড়িয়ে রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়। সমারোহর মাঝে আটকে যায় কুহেলী।কুহেলীর দিকে তাকিয়ে দেখে আড়ষ্টতায় মেয়েটা এক আঙ্গুল সমান হয়ে গেছে। চোয়াল শক্ত করে সমারোহ বলে,
‘আমার পরান যাহা চায় তুমি তাই!তাই না?’
কুহেলী ঘাবড়ে তাকায় সমারোহ দিকে। সমারোহ এমনভাবে দেখছে যেন এক্ষুনি কোনো দৈবশক্তি বলে ভষ্ম করে দেবে কুহেলীকে।কুহেলী আমতা আমতা করে বলে,
‘উনি আমার দিকে তাকিয়ে গাইলে আমার কি দোষ?’
সমারোহ উত্তর দেয়না, নড়েচড়ে না। অন্ধকারে তার চাহনি অস্পষ্ট।কুহেলী ঠোঁট বাঁকিয়ে হালকা ভেংচি কেটে মনে বিন্দু বিন্দু সাহস জুগিয়ে বলে,
‘আর যদি, যদি আমার দিকে তা তাকিয়ে ও গায় তবে, তবে আ-আপনার কি?’
সমারোহর ভ্রুঁ হালকা কুঁচকে আসে।আরো একটু কাছে এগিয়ে এসে কুহেলীর কাঁধের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
‘বেশি কথা ফুটেছে নাকি মুখে? এমন অবস্থা করবো না যে আর কথা বলার অবস্থাতেই থাকবে না।ওই ছেলেকে যদি এরপর আর কোনোদিন আশেপাশে দেখিনা, জাস্ট খুন করে ফেলবো! শুধু এতোটুকুই বললাম।’
কুহেলীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে যায় সমারোহে।কুহেলী শুধু অবাক হয়ে চেয়ে থাকে।মানে কি এসবের?কার আশেপাশে?কুহেলীর কি দোষ?ওকে কেনো বকলো?মানে যাচ্ছেতাই! পাগল লোক এটা।
রাতে খাওয়া শেষে বৃষ্টি নামে ইলশেগুঁড়ি।ছাদে গিয়ে আবার গল্পের আশর জমানো আর হয়ে ওঠেনা।আরশ আর চন্দ্রিমা বাড়ি ফিরে যায়। সান্দ্র গাড়ি করে তাদের পৌঁছে দিয়ে তারপর মাইশা কেও পৌঁছে দিয়ে আসে।যাওয়ার আগে চুপিসারে কুহেলীর টেবিলে অনেকগুলো চকলেট আর তার ফাঁকে একটা চিরকুট রেখে মুচকি হেসে বের হয়ে আসে আরশ।কথায় আছে মিষ্টি প্রেমের শুরু এই চিরকুট থেকেই।
–
থার্ড ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা আর একমাস পর।এর মাঝেই দুচারটে ভালো বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে সেঁজুতির জন্য।একজনকে জহির পছন্দ ও করে ফেলেছেন।সামনের শুক্রবার তারা দেখতে আসবে সেঁজুতিকে।নয়নার, সৌরভ ভাইয়ার সাথে সম্পর্ক রয়েছে তা সবাই কিন্তু সেঁজুতির মনের খবর কারো কাছে নেই।থাকবেই কিভাবে তার মনের খবর তার নিজের কাছেই তো নেই!জীতু তাকে ভালোবাসে কিনা, চায় কিনা তা জানা নেই।তাই আজ জানতে এসেছে।আজ যদি সঠিক উত্তর না দিয়েছে তো জীতুর গর্দান নেবে সে।তবে উত্তর যদি না হয় তাহলে! সেঁজুতির তো মরে যেতে ইচ্ছা করবে তখন।নাহ, না কেন বলতে যাবে জীতু?জীতু চোখে মুখে সে স্পষ্ট প্রেম দেখেছে সেঁজুতির জন্য।
সেঁজুতির এতোক্ষণ ধরে করা চিন্তা ভাবনা সব উল্টোপাল্টা হয়ে যায় যখন জীতুকে দেখতে পায়।একটু লেইট হলেও হুড়মুড়িয়ে এসে জীতু সেঁজুতিকে বলে ,
‘উঠো অন্য কোথাও গিয়ে বসবো,এই জায়গাটায় অতিরিক্ত সমাগম, ভাল্লাগে না।’
জীতুর কথাতেও উঠে না সেঁজুতি, কেবলই হা করে তাকিয়ে থাকে জীতুর দিকে।গত দেড় বছরের পরিচয়ে এই প্রথম সে জীতুকে ফরমাল ড্রেসে দেখছে।হালকা কফি রঙের শার্টের উপর কালো ব্লেজার,কালো প্যান্ট,হাতে ম্যাচিং রিস্ট ওয়াচ। চুলগুলো আজ অগোছালো নয়। সেঁজুতিকে এভাবে হাঁ করে চেয়ে থাকতে দেখে জীতু কপাল কুঁচকে বলে,
‘ ইন্টারভিউ ছিল একটা, খুব বাজে হয়েছে।’
‘কেনো বাজে কেনো হলো? প্রিপারেশন নিয়ে যাননি?’
‘না।’ সহজ কন্ঠস্বর জীতুর।
‘কেনো? চাকরি কি করবেন না নাকি?’ উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে সেঁজুতি।
‘করতে তো ইচ্ছে করে না।তবে এখনকার যুগের মেয়ের বাপ মা গুলো এতো শেয়ানা হয়েছে যে ছেলে সরকারি চাকরি না করলে মেয়েই দিতে চায়না। সারাজীবন তো আর সন্ন্যাসী থাকা যায়না!’
অবাকের চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায় সেঁজুতি।এটা চাকরির ইন্টারভিউ।ফালতু কোনো পরীক্ষা না।লোকটা কিনা নিজের ক্যারিয়ার গড়ার বদলে বিয়ে করার জন্য চাকরি খুঁজছেন! সেঁজুতির মনটা উশখুশ করে।মেয়ে কি খুঁজে রেখেছে নাকি যে এতো তাড়াহুড়ো! হাঁটতে হাঁটতে জীতু হঠাৎ জিজ্ঞেস করে ,
‘রিকশায় আমার পাশে বসতে সমস্যা নেই তো?’
সেঁজুতি মনে মনে বলে শুধু রিকশায় কেনো বিয়ের পিঁড়িতেও আপনার পাশে বসতে অসুবিধা নেই।
সেঁজুতিকে চুপ থাকতে দেখে জীতু রিকশা দাঁড় করিয়ে উঠে বসে। সেঁজুতি বসলে তার পিছনে হাত রাখে কিন্তু সেঁজুতিকে স্পর্শ করে না।জীতুর ছোট ছোট কেয়ারিং গুলো মন ছুঁয়ে যায় সেঁজুতির। সেঁজুতি নরম গলায় জিজ্ঞেস করে,
‘কোথায় যাচ্ছি আমরা?’
জীতু বেশ উঁচু স্বরে চেঁচিয়ে বলে,
‘মামা যেদিকে মন চায় যাও।এক ঘন্টা ঘুরাবা।তারপর রিকশা থামাবা তবে এক জায়গায় বারবার চক্কর দিতে পারবা না।’
জীতুর এমন কান্ডে হা হয়ে চেয়ে থাকে সেঁজুতি। সেদিন একঘন্টার বদলে দুঘন্টা ঘুরে সেঁজুতিকে নিয়ে। ফুচকা, চটপটি, আইসক্রিম, আচার সব খাওয়া হয়। সেঁজুতির কাছ থেকে ধার নেয়া টাকাও ফিরিয়ে দেয়া হয়।জীতু ফুটপাতের একটা বাচ্চা মেয়ের কাছে থেকে শিউলি ফুলের মালা কিনে গুঁজে দেয় সেঁজুতির খোঁপায়।জীতুকে এতোটা খুশি সেঁজুতি আর কখনো দেখেনি। পরীক্ষা খারাপ হলে বুঝি মানুষ এতো খুশি হয়? সেঁজুতি এমন প্রথম দেখলো।বিয়ের কথাটা আর বলাই হলো না জীতুকে। মানুষটা যখন এতো খুশি তখন আরো কিছু সময় স্থায়ী হোক না ঠোঁটের হাসিটুকু! সেঁজুতি উৎসাহিত হয়ে বলে,
‘পরীক্ষা খারাপ হলো। কিন্তু এতো খুশি কেনো আজ?’
অকপটে বলে ফেলে জীতু,
‘মা বিয়ের জন্য মেয়ে ঠিক করে ফেলেছে।আমারো মেয়ে পছন্দ হয়েছে।তাই ট্রিট দিলাম তোমায়।’
চলবে.
আকাশ মোড়ানো চিরকুট
লেখনী – সাইমা ইসলাম প্রীতি
২২.
পরদিন সকালে সান্দ্রকে পাগল বানিয়ে ছাদে নিয়ে আসে কুহেলী।কুঞ্জার পুরো বিষয়টা না জানা অব্দি শান্তি হচ্ছে না তার।ছাদে এসে গতরাতের রাখা মোড়ার উপর বসে খানিক জিরিয়ে নেয় সান্দ্র।তারপর বেশ নরম গলায় বলে,
‘হ্যা বলো কি বলছিলাম?’
‘কে ছিল ওই লোকটা?আব্বার ঘরে কেনো গিয়েছে?’
কুহেলীর চেহারায় স্পষ্ট ভীতি।সান্দ্র কপাল কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত করে বলে,
‘আমি পরের দিন চাচার ঘরটা ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করি, যদিও তেমন সন্দেহজনক কিছু পাইনি তবে সেদিন রাতে ধরতে পারি সেই লোকটাকে। ঘরের উপরে কাঠের সিলিং এ। লোকটা প্রায় চার-পাঁচদিন ধরে সেখানে থাকছিল অথচ কেউ টের পায়নি।রজব বেদম মার মারলে লোকটা সব কথা শিকার করে নেয়।সেই রোজ কুঞ্জাকে বাহিরে নিয়ে যেত।’
‘অদ্ভুত! নিয়ে যেতো আর কুঞ্জা ঢং ঢং করে চলে যেতো?বাড়ির কাউকে ডাকতো না কেনো? আমার হিসাব মিলছে না।বলুন না তারপর?’
‘ব্ল্যাক ম্যাজিক করেছিল কুঞ্জার উপর। খুব সম্ভবত হায়দার বাড়ির কেউই করেছিল।সে লোকটা তাদের খাস লোক ছিল।মার খেয়েও সবটা শিকার যায়নি।কুঞ্জাকে শয়তানের কাছে বলি দেয়ার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল।’
মুখ হা হয়ে যায় কুহেলীর।মানে কি এসবের! দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে কান্না আটকায় সে।সান্দ্র ঢোক গিলে আবার বলতে শুরু করে,
‘লোকটাকে মেরে বেঁধে রাখা হয়েছিল পুকুর পাড়ের পেয়ারা গাছের সাথে।তার কথা মতো জঙ্গলের উপারে গিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় মাটি খুঁড়ে একটা পুতুল পেয়েছি আমরা। সেখানে কুঞ্জার চুল,চাচির চুল,কুঞ্জার কাপড়ের অংশ আরো কি কি দিয়ে যেনো প্যাঁচানো ছিল পুতুলটা।সব কিভাবে সংগ্রহ করেছে তারা আমার জানা নেই।কুঞ্জাকে পুরোপুরি তাদের বশে নিয়ে নিয়েছিলেন। বাড়িতে বড় হুজুর আনা হয়,তিনি এসে পুতুলের গাঁ থেকে প্রতিটা বান খোলেন।দোয়া দরুদ পাঠ করে সবকিছু ঠিকঠাক করেন। ততক্ষণে সবাই ব্যস্ত থাকায় বাড়ির পেছন দিক থেকে কেউ এসে সেই লোকটার বাঁধন খুলে দেন।তবে আমি প্রিতুস নামক লোকটাকে দেখেছি।’
কুহেলীর চোখ থেকে টপটপ করে দু’এক ফোঁটা পানি পড়ে।কি ভয়ংকর বিষয়।কুহেলীর সাথে বদলা নেওয়ার জন্য বাচ্চা মেয়েটার উপর নোংরামি করার মানে কি! মানুষ আসলেই স্বার্থপর প্রাণী। নিজের লোভের কাছে তারা এতোটাই বিকিয়ে যেতে পারে যে নিজের অস্তিত্বের কথাই ভুলে যায়। সান্দ্র কুহেলীকে শান্তনা দিয়ে বলে,
‘এখন সব ঠিকঠাক আছে তবে কুঞ্জা একটু অসুস্থ।সেসব কথা ভেবে এখন আর কষ্ট পেয়ো না।কুহেলী, তোমার জন্য নিজের পায়ে দাঁড়ানো টা খুব জরুরি। নিজের পরিবারকে ওই নোংরা লোকগুলোর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য হলেও।নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে তাদের যোগ্য জবাব দিতে পারবে। তোমার বাবা মার ভরসা তুমি। যা ঘটেছে সেটা ঘটে গেছে।এখন নিজেকে সুস্থ রেখে পড়ায় মন দাও।’
কুহেলী কান্না থামায়।হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে থমথমে গলায় বলে,
‘এর শাস্তি তারা পাবে।’
সান্দ্র মৃদু হাসে। ততক্ষণে সমারোহ ছাদে আসে ফলে তাদের আলোচনার এখানেই সমাপ্তি ঘটে।কুহেলী সমারোহকে দেখে কিছু না বলেই নিচে চলে যায়।মনমরা হয়ে নিচে এসে টেবিল থেকে বই নিতে গেলে টেবিলের এক কর্ণারে রাখা ডেইরি মিল্ক চকলেটের ইয়া বড় একটা বক্সের দিকে চোখ যায় কুহেলীর। কপাল কুঁচকে আসে।এটা খেয়াল করেনি তো এতোক্ষণ, কখন রাখলো এটা!আর কেই বা রাখলো?বক্সটা হাতে নিতেই তার নিচে ভাঁজ করা একটা চিরকুট চোখে পড়ে কুহেলীর।ঘরের দরজার দিকে একবার তাকিয়ে চিরকুটটা হাতে তুলে নেয়। চিরকুটটা খুব আকর্ষণীয় গোটা গোটা অক্ষরে লিখা।
এই যে শোনো,
এতো পাজি হয়েছো কেনো ইদানিং বলো তো? বারংবার মনের সাগরে উঁকি দিয়ে আমাকে পাগল কেন করে দাও বলতো?আচ্ছা, তোমার কি এক মিনিটের জন্যও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে না আমার ভাবনা?ভাবো আমার কথা?অনুভব করতে পারো আমায়! আমি তো করি প্রতিমুহূর্তে খুব বেশি করে করি। তখন তোমাকে নিয়ে হয়তোবা হারিয়ে যাই কোন এক জ্যোৎস্না সিক্ত রাতে। আচ্ছা, তুমি কখনো শরীরে জ্যোৎস্না মাখিয়ে সমুদ্র স্নান করেছো?আমি করিনি।শুধু তোমার জন্য করিনি।অপেক্ষায় আছি। তুমি এলে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে একটা চমৎকার জ্যোৎস্না বিলাস করবো বলে। তোমার ঐ সুদীর্ঘ চুলের ফাঁকে ফাঁকে চাঁদের আলো ঝলকানি থাকবে।এই মায়াবী রক্তিম চেহারা জুড়ে চাঁদের আলো পড়ে প্রতিফলনে মন ভড়াবে আমার। আমি অপলক চেয়ে দেখবো।দেখার শেষ হবে না। আচ্ছা তুমি কি হঠাৎ করে হারিয়ে যেতে যানো? আমি জানি। ছন্নছাড়া এই মন কখনো কখনো উদাসী দুপুরের খাঁ খাঁ রোদ্দুরে গা ভাসিয়ে একবুক শূন্যতা নিয়ে হারিয়ে যায় তোমার মাঝে।মনে গহীনে তিলে তিলে গড়ে ওঠা প্রেমগুলো একটু একটু করে তুমি নামক দহনে পুড়ে তামাটে রং ধারণ করে।যখনি ভাবি এই বোধ হয় যন্ত্রণার শেষ তখনই বৃষ্টি হয়ে ঝরো তুমি।প্রবল বৃষ্টি।যে বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটায় ফোঁটায় পাই তোমার স্পর্শ। তুমি নামক বিরহে মাখামাখি হয়ে যাই।বুকের তীব্র সূক্ষ্ম ব্যাথাটা কমে না, বাড়ে!বাড়তে বাড়তে অবশ হয়ে যায় অনুভূতি। আমি এই ‘তুমি’ কাছে না পাওয়ার বিষন্নতার চাদরে মুড়ে রোজ একবার করে মারা যাই। আমার সত্যিই তোমায় চাই। আমার বুকের কড়কড়ে খড়ায় একটু খানি ছায়া মেলে ধরা সুবজ পাতা হিসেবে তোমায় চাই কৃষ্ণলতা!
ইতি
তোমার ব্যাক্তিগত কিছু একটা
চিঠিটা পড়ে থ’মেরে রয় কুহেলী।এতো আবেগ পায় কই! কুহেলীর ভেতরটা নাড়া দিয়ে উঠেছে চিঠিতে লেখা প্রতিটা শব্দে।তাকে চায়,কে চায়!এই চিরকুট টা তাকে দেয়ার মতো কে আছে?
মাথা কাজ করছে না কুহেলীর।তার ঘরে কেউ আসেনি।কাল রাতে যারা ছিল তাদের মধ্যে কেউ এমন চিঠি দিতে পারে বলে কুহেলীর মনে হয়না।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের উদয় হয় কুহেলীর। চেয়ারে বসে দুই আঙ্গুল মাথায় ঠেকিয়ে ভাবনায় তলিয়ে যায়। এর আগের চিঠিটা পড়া হয়নি মনে পড়তেই ব্যাগ হাতড়ে বই বের করে। তার মাঝের চিরকুটটা বের করে পড়া শুরু করে,
‘ভালোবাসি বলবো না তবে মায়ায় আমি জরিয়ে গেছি ঠিকই। খুব করে জড়িয়ে গেছি তোমার স্নিগ্ধ শীতল লোভনীয় সেই কাজল চোখে।ভ্রুঁ’র মাঝে যে তিলটা!খুবলে খেয়ে নিয়েছে আমার আমি কে।আমি ছন্নছাড়া অপরিচিত কেউ হয়ে গেছি নিজের কাছে।পাতলা মখমলে গোলাপী ঠোঁটের পাশের টোলে ভেঙ্গে চুরমার হয়েছি বারবার, শতবার।’
ছ’লাইনের চিরকুটটা রুদ্ধশ্বাস বেশ কয়েকবার পড়ে ফেলে কুহেলী। ভিতরে কি উথালপাথাল বয়ে যাচ্ছে তার হদিস নেই। শুধু হাতটা কাঁপছে স্পষ্ট বুঝতে পারছে,ধূরধূর করছে বুকটা। গভীর অস্থিরতার মাঝে পরে গেছে কুহেলী। চিরকুট দুটো ভালো করে মিলিয়ে দেখে একই হাতের লেখা। তারমানে একজন মানুষই দিচ্ছেন। কিন্তু তার ঘরে এসে দিয়ে গেল কিভাবে।কুহেলীর হঠাৎ করেই মনে হয় আচ্ছা এমনটা হতে পারে না যে চন্দ্রিমা সেই লোকটাকে সাহায্য করছে!
–
ঘনঘন মেয়েকে অসুস্থ হতে দেখে ঘাবড়ে রয়েছেন আনারুবা। খাবার দাবার ঠিক মতো খাচ্ছে না। চোখের নিচে কালি পড়েছে ,তার হাসিখুশি মেয়ে দিন দিন কেমন যেন মনমরা হয়ে পড়ছে। দুপুরে যা খেয়ে ছিল বমি করে ফেলেছে। সন্ধ্যায় জ্ঞান হারানোর পর টনক নড়েছে বাড়ির সবার। সমারোহ নয়নার হাতের পালস রেট চেক করে চোখের নিচ ভালো করে দেখে ঘর থেকে সবাইকে বের হয়ে যেতে বলে।সবাই অবাক হলেও যে যার মতো চলে যায়। দরজার বাহিরে কেবল ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে আনরুবা।মা’য়ের মনের বড় জ্বালা! কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর নয়নার গলার চিৎকার শুনতে পেয়ে কলিজা কামড় দিয়ে উঠে আনরুবার। ভিতরে প্রবেশ করতে নিয়েও করেন না। বুক কাঁপে। সমারোহ কি মেরেছে!কেনো মারতে যাবে? বোনদের গায়ে সে কখনো একটা টোকাও লাগতে দেয়নি।
এক মিনিট বাদেই দরজা খুলে সমারোহ। সজোরে দরজায় লাথি দিয়ে ত্রস্ত পায়ে হেঁটে চলে যায় সেখান থেকে।আনরুবার দিকে ফিরেও তাকায় না। আনরুবা ভয়ে মুচড়ে আসা বুকে নয়নার ঘরের ভিতর ঢুকে আৎকে উঠেন।
খাটের একদম কর্ণার ঘেঁষে নিচে বসে আছে নয়না।গলা ফাটিয়ে কাঁদছে। আনরুবা দ্রুত দৌড়ে গিয়ে মেয়েকে ধরতেই দেখেন গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেছে। ঠোঁট কেটে গড়গড়িয়ে পড়ছে রক্ত! আনরুবা হতবুদ্ধি হয়ে যায় মুহূর্তেই।নয়না কাঁদতে কাঁদতে পাগলের প্রলাপ বকে,
‘আমি খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি আম্মা। আমি সবাইকে কষ্ট দিছি। ভাইয়া ক্ষমা করবে না আমায়!তোমরাও করবে না। আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি।’
চলবে.
আকাশ মোড়ানো চিরকুট
লেখনী – সাইমা ইসলাম প্রীতি
২৩.
‘এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায় একি বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু
কোন রক্তিম পলাশের স্বপ্ন মোর অন্তরে জড়ালে গো বন্ধু ।
আমলকি পেয়ালের কুঞ্জে কিছু মৌমাছি এখনো যে গুঞ্জে
বুঝি সেই সুরে আমারে ভরালে গো বন্ধু ।
বাতাসের কথা সে তো কথা নয়
রূপ কথা ঝরে তার বাঁশিতে
আমাদেরও মুখে কোনো কথা নেই
শুধু দুটি আঁখি ভরে রাখ হাসিতে ।
কিছু পরে দূরে তারা জ্বলবে হয়তো তখন তুমি বলবে
জানি মালা কেন গলে পরালে গো বন্ধু ।’
গানটা গেয়ে রেকর্ড করে পাঠিয়েছে আবির। আবিরের গান বরাবরই সুন্দর। গানটা কম করে হলেও তিন চারবার শুনেছে চন্দ্রিমা, তাও যেন শুনতেই ইচ্ছা করছে।অশ্রু কণারা আজ অবাধ্য হয়ে বেরিয়ে আসছে। চন্দ্রিমার ভেতরখানি হাহাকারের প্রতিধ্বনি তুলছে।সব থাকতেও এতো একা কেনো লাগে!কেনো মনে হয় একাকিত্বের অতল গভীরে তলিয়ে গিয়ে দম আটকে আসতে চায়, বিভ্রান্তি চারিদিকে।গানটা পাঠানো কি খুব বেশি দরকার ছিল? চন্দ্রিমাকে কষ্ট না দিলে কি ভালো লাগে না লোকটার?দেশে থাকতেও কাঁদিয়েছে এখন দূরে গিয়ে আরো বেশি করে কাঁদাচ্ছে।কেনো?কোন এক অমাবস্যার রাতে চন্দ্রিমার পাশে বসে গভীর আবেগ দিয়ে গাওয়া যেতো না? বর্বর লোক কোথাকার! চন্দ্রিমা কান্না জড়িত কন্ঠেই মৃদু চিৎকার করে উঠল,
‘আমি কখনোই ক্ষমা করবো আপনাকে। আপনি আমার ক্ষমার যোগ্যই না আবির।একদম যোগ্য না।’
তখনই আবিরের কল আসে মোবাইলে। চন্দ্রিমা চোখ বুজে থাকে। রিং হতে হতে কল কেটে যায়। আবার ফোন দেয়। চোখ মুছে বড় একটা শ্বাস নিয়ে কষ্টগুলো লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে চন্দ্রিমা।বুকের ভেতরের জ্বলুনি কি এতো সহজে কমবার নাকি!কল রিসিভ করে কানে ঠেকাতেই উপর পাশ থেকে শক্ত পুরুষালী কন্ঠ ভেসে আসে।
‘ভালো আছো?’
চন্দ্রিমা খুব সন্তর্পণে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সন্দিহান গলায় বলে,
‘হুম।’
‘একটু সাবধানে চলাফেরা করলে কি হয়?’
‘আমি সাবধানেই চলি।ওটা একটা এক্সিডেন্ট। হওয়ার ছিল হয়েছে।’
‘সবাধানে চললে হতো না।বাস ফাঁকা দেখে নেমে যাওয়া উচিত ছিল। সময়মতো পুলিশ না পৌঁছালে কি ভয়াবহ কান্ড হতো ভেবে দেখেছো?তোমাকে আরেকটু হলেই হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি।’
‘আমাকে পেয়েছেন কখন যে হারাবেন?’
চুপসে যায় আবির।সময়টা থমকে থাকে দু’জনার কাছে।কারোর মুখে কোন শব্দ নেই। আশেপাশে কোনো রা নেই।একে অপরের দীর্ঘ হাতাশা গুলো গুনতে গুনতে সময় পার করে। মিনিট খানেক যাওয়ার পর আবির বড় করে শ্বাস টেনে নিয়ে উদ্বিগ্ন গলায় বলে,
‘গানটা শুনেছো?’
‘না।’
‘দেওয়ার সাথে সাথেই তো সিন হলো মেসেজ।’
‘অদ্ভুত কথা বলেন, মেসেজ সিন করেছি মানেই কি এই নাকি যে আপনি যা খুশি তাই বকবক করে পাঠিয়ে দিবেন আর আমি শুনে নিব?গান শুনতে বিরক্ত লাগে আমার।’
‘আচ্ছা!’
‘রাখছি।’
আবির কিছু বলতে চায়। চন্দ্রিমা না শুনেই রেখে দেয়। চোখ মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে এসে ভাবে লোকটা নিয়ে কেনো এতো ভাবছে সে! ভাববে না তাহলেই কষ্ট হবে না।
–
থমথমে গুমোট হয়ে আছে জহিরের বাড়ির পরিবেশ।ড্রইং রুমে মাথায় হাত ঠেকিয়ে বসে আছেন আনরুবা।নয়নার কাজে সকলের মন ভেঙ্গে গিয়েছে। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সমারোহ রাগের মাথায় বের হয়েছে যে আর ফিরেনি। হসপিটালে আছে ডিউটিতে। সান্দ্র নয়নার খেয়াল রাখছে। জহির মেয়ের মুখ আর কখনো দেখতে চান না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছেন।সারিকা আজ সকালেই শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছে নাহলে দিদারের সামনে কি বিশ্রী অবস্থাতেই না পড়তে হতো! প্রতিবেশীদের কাছে এখন মুখ দেবেন কি করে আনরুবা!মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে কতো শত পরিকল্পনা ছিল তাদের।মেয়ের খুশির জন্য তার প্রেমের সম্পর্কও মেনে নিয়েছিলেন সবাই, শেষে এই দিন দেখার জন্য?এই অন্যায় মেনে নিয়ে মেয়েকে চোখের সামনে শেষ হয়ে যেতে দেখার জন্য? আনরুবা নিজের চেয়েও বেশি ভয় পান জহিরের কথা ভেবে।লোকটার কাছে তার তিন মেয়ে ছিল ত্রিরত্ন।মেয়েদের কখনো কখনো কষ্টে থাকতে দেননি, কোনো কিছুর অভাব পেতে দেননি। মানুষটা এতো বড় কষ্ট কিভাবে সহ্য করবেন? অসহায় লাগে অনরুবার।বড্ড বেশি অসহায়।এতো ক্লান্তি এর আগে কখনোই আসেনি দেহে।মনের ক্লান্তিই যে বড় ক্লান্তি।মনের অসুখের কাছে দিনশেষে প্রতিটা মানুষই অসহায়। একজন মা ছাড়া আর কারোর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় সন্তানের দেয়া আঘাতের ক্ষত ঠিক কতখানি।
কুহেলী বুঝে উঠে না সে কি বলবে কি করবে।আনরুবার পাশে বসে থাকে চুপচাপ। এতো দিন পর সে টের পাচ্ছে সত্যিই এই বাড়ির প্রতিটি মানুষের সাথে তার আত্না কতোটা জরিয়ে গিয়েছে।তাদের বিষন্নতা উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় জাঁকিয়ে বসেছে কুহেলীর মনেও।এতো বিরহ মিশ্রিত পরিবেশ এ বাড়িতে আসার পর কুহেলী কখনো দেখেনি।এই থমথমে পরিস্থিতির সাথে কুহেলী মোটেই অভ্যস্ত নয়।
নয়নার জ্ঞান ফিরলে সে দেখতে পায় আলো তার হাতে পায়ে তেল মালিশ করছে। প্রেশার মেপে সান্দ্র গম্ভীর মুখে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। সেঁজুতি একমনা উদাসী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল দরজার ধারে।নয়না তাকে কাছে ডাকাতে সেও চলে যায়।নয়নার গলায় দলা পাকানো ব্যাথাটা বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে।এতো কষ্ট!এতো কষ্ট!এতো কষ্ট নিয়ে সে বাঁচবে কি করে?নয়না বিছানা ছেড়ে উঠতে নিলে আলো বাঁধা দেয়।বলে,
‘শুয়ে থাকো তুমি।সবাই রাগ করে আছে। সময় দেও তাদের।বড় ধাক্কা কাটাতে সময় বেশি লাগবে।তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।’
নয়নার চোখ বুজে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বলে,
‘আমি একটু আম্মার কাছে যাব।’
বিছানা ছেড়ে ধীর পদক্ষেপে নিচে নেমে আসে নয়না। দুর্বল শরীর। আনরুবা মাথায় হাত দিয়ে বসেই থাকেন আর থেকে থেকে কেঁদে উঠেন। নয়নাকে তিনি দেখেননি।কুহেলী আনরুবার পাশে থেকে উঠে দূরে সরে দাঁড়ায়।নয়না আকস্মিক ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে আনরুবার পায়ে।পা জড়িয়ে ধরাতে কেঁপে উঠেন আনরুবা। কপাল কুঁচকে মুখ বিকৃত হয়ে যায় মুহূর্তেই।এতো অন্যায় তার পক্ষে মানা সম্ভব না। নয়নার মুখটা দেখতে ইচ্ছা করছে না এই মুহূর্তে। নয়নার থেকে ছিটকে দূরে সরে যান তিনি। আর্তনাদ করে উঠেন আনরুবা,
‘তুই আমার মেয়ে না। চোখের সামনে থেকে সর আমার। আরেকবার আমার সামনে আসবি তো হয় তোকে খুন করবো নয়তো নিজে মরবো আমি। কুলাঙ্গার একটা,এই মেয়েকে আমি পেটে ধরেছি? আল্লাহ্! হাশরের ময়দানে আমি তোমার কাছে মুখ দেখাবো কিভাবে? আমি কি ভুল শিক্ষা দিয়েছি তাদের?’
বিড়বিড় করতে করতে আনরুবা চলে যান।নয়না কে গিয়ে জরিয়ে ধরে কুহেলী।নয়না যেন খাঁ খাঁ মরুভূমির মাঝে এক ফোঁটা জল পেয়েছ! আষ্টেপৃষ্ঠে জাপটে ধরে কুহেলীকে। চিৎকার করে বলে,
‘আমি মরি না কেন?আত্নহত্যা করা ছাড়া আমার কি আর কোনো রাস্তা আছে?কি করলাম আমি?’
কুহেলী নয়নার মাথা বুকের সাথে জাপটে ধরে শান্ত করে তাকে। নয়না জোরে জোরে শ্বাস নেয়।কিছুটা শান্ত হলে কুহেলী বলে,
‘জীবন তো একটা পরীক্ষা আপু।একটা পরীক্ষায় তুমি উত্তীর্ণ হতে পারোনি মানে তো আর এই না যে তুমি হেরে গেছো।আরো অনেকটা পথ আছে সামনে। মানুষ যদি ভুল না করে, সৃষ্টিকর্তার জন্য চোখের জল না ঝড়ায় তবে তার হৃদয় কি করে পরিপূর্ণ হবে?তাকে ভুল করতে হবে, অনুতপ্ত হতে হবে।চোখের জল ঝড়িয়ে এক আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে অন্তর পবিত্র করতে হবে। তুমিও ভুল করেছো,তা শিকার করেছো, ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছো আর অনুতাপে পুড়ছো।এবার ধৈর্য্য ধারণ করবে। আল্লাহ তোমার মনকে শান্ত করুক আপু।’
নয়না বাচ্চাদের মতো চোখ করে চেয়ে থাকে কুহেলীর দিকে।কুহেলী মাথায় হাত বুলায় নয়নার।নয়না আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
‘আমাকে ক্ষমা করবেন আল্লাহ!’
‘কেনো করবেন না?মন থেকে চাইলে অবশ্যই করবেন। তিনি কোরআনে বলেছেন, “তোমাদিগকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকো, সুসম্পর্ক বজায় রাখো, আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।”(সূরা আল বাকারা; ১৫৫)’
নয়না ধাতস্থ করে নিজেকে।কুহেলী বুকের সাথে চেপে ধরে রাখার পরও শরীর কাঁপছে তার।কুহেলী নরম হাতে চোখের জল মুছে দেয় নায়নার।নয়না আঠার মতো লেগে থাকে কুহেলীর স্নেহের পরশের সাথে।এই বুঝি একটা অবলম্বন পেলো।হালকা করে ধরলে যদি হারিয়ে যায়!
–
রাতে পড়া শেষ করে টেবিল ছাড়তে ছাড়তে দুটো বেজে যায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে এক বুক নিঃশ্বাস ফেলে জানালার ধারে যায় কুহেলী। চাঁদের চাকচিক্যে ঝলমল করে উঠা আকাশের বুক চিরে বাহারি তারারা উঁকি দিচ্ছে। চাঁদের নাকি বিয়ে জ্যোৎস্নার সাথে! ছোট বেলা রাতে যেদিন আকাশ জুড়ে বেশি তারা দেখা যেতো, বাচ্চা ছেলে মেয়েরা বলাবলি করতো চাঁদের হয়তো বিয়ে আজ, তারা রা তাই দাওয়াত পেয়েছে।রাতের আকাশের দিকে তাকালেই কি মন বিষন্ন হয়?কি আছে ওখানে?যতো দূর চোখ যায় কেবল শূন্যতার ছড়াছড়ি।যেমন ছক কষে মন খারাপের প্রহর নামায় ঐ আকাশ তেমনে গাঢ় কালচে নীল রঙটা প্রশান্তির মুগ্ধতা এনে দেয়।বুকটা ঠান্ডা করে দেয় নিমিষেই।কুহেলীর ও তো তাই দরকার।বুকে উথালপাথাল করা অনুভূতিটা দমানো দরকার।এক মুঠো প্রস্ফূটিত সৌরভ দরকার।কুহেলী স্পষ্ট দেখতে পায় বাগানের একাংশ জুড়ে আলো পড়েছে। সমারোহর ঘর থেকে আসছে সম্ভবত। চোখ বুঁজে দুবার জোরে জোরে শ্বাস নিল কুহেলী।নাহ, এভাবে হবে না।মন শান্ত করতে হলে ছাদে যেতে হবে।
চুপিসারে রান্নাঘরে গিয়ে ত্রস্ত হাতে এক কাপ কফি বানিয়ে ছাদে চলে আসে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে তলিয়ে আছে পুরো ছাদটা।যেন কোনো অতল গহ্বরের দিকে গিয়ে মিলিয়ে গিয়েছে।ভয় ভয় অনুভব হলেও শীতল অনুভূতিটুকু সুন্দর।কুহেলী ছাদের একপাশের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়াতেই বুকটা মুচড়ে উঠে।ছাদে কি সে ছাড়াও আর কেউ আছে! আকস্মিক ভয়ে অসাড় হয়ে যায় শরীর।ভয়ে ভয়ে মাথা বামে ঘুরিয়ে দেখে রেলিংয়ে পা ঝুলিয়ে কেউ একজন বসে আছে।হালকা ভয় পেলেও পরক্ষণেই বুঝতে পারে সেটা সমারোহ নয়তো সান্দ্র।কুহেলী ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
‘সান্দ্র ভাইয়া?’
অবয়বটা মাথা নাড়িয়ে তাকে দেখে।দেখেও আবার আগের মতো বসে থাকে।কুহেলী সন্দিহান চোখে চেয়ে থাকে।লোকটা হঠাৎই বলে উঠে,
‘এতো রাতে ছাদে আসো ডরভয় কিছু নেই?’
কুহেলী চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।ইশঃ! এমনটা ওর সাথেই কেনো হয়? লোকটার সামনে পড়তে চায়না তাও কেনো, কেনো বারংবার একই কাজ করে?কুহেলী সংক্ষেপে উত্তর করে,
‘ভয় নেই আমার।’
বলেই চুপচাপ সরে পড়তে চাইলে সমারোহ বলে,
‘একটু বসবে আমার পাশে?’
বড়ই স্নিগ্ধ শীতল শোনায় সে কন্ঠ, হতাশায় মোড়ানো।কুহেলী চুপচাপ গিয়ে রেলিংয়ের উঁচু অংশে উঠে বসে, সমারোহর থেকে বেশ খানিকটা দূরত্বে।পাশে রাখা কফি মগ বিনা অনুমতিতে তুলে নেয় সমারোহ।কুহেলী চুপচাপ বসে বসে উড়নার কোনা প্যাঁচাতে থাকে আঙ্গুলে। সমারোহ শক্ত গলায় বলে,
‘ঘুমাওনি কেনো?’
‘পড়ছিলাম।’
‘এতো রাত অবধি! একাকী ছাদে আসা উচিত হয়নি।এরপর আর কখনো একা আসবেনা।’
কুহেলি সচকিত। সমারোহর কন্ঠে অধিকারবোধের ছোঁয়া পাওয়া যায়। কিসের অধিকার খাটাতে চায় সে?কুহেলীর ভালোলাগে। ঠোঁটের ডান পাশের গর্ত সুস্পষ্ট হয়ে উঠে মুচকি হাসির দরুন।কুহেলী আঁধারের মাঝে দেখে সমারোহকে। চাঁদের আলোয় ফর্সা মুখখানি চকচক করছে। সমারোহ ভ্রুঁ কুঞ্চিত করে দূরে মনোযোগী হয়ে মগে দু’চুমুক বসিয়ে কুহেলীর দিকে এগিয়ে দেয়।কুহেলী মগ নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। সমারোহ মৃদু ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
‘ঠান্ডা হয়ে যাবে, খাও।’
কুহেলী থমকায়।সে খাবে সমারোহর চুমুক দেয়া কফি!কুহেলীর বলদের মতো চেহারা দেখে যেন সমারোহ স্বস্তি পায়।কড়া গলায় বলে,
‘কিছু ভাবতে বলিনি, খেতে বলেছি।’
কুহেলী আড়চোখে সমারোহকে দেখে এক নিঃশ্বাসে পুরো কফিটা খেয়ে নেয়। সমারোহর চরম হাসি পায় কুহেলীর এহেন কান্ডে।হালকা হাসার পর হাসি আবার মিলিয়ে যায়।কুহেলী উৎকণ্ঠা হয়।
‘নয়না আপুকে মাফ করে দেয়া যায় না?আপু তার ভুল বুঝতে পেরেছে। এখন আপু খুশি না থাকলে বাবুর জন্য সেটা ক্ষতিকর।’
‘ছোট থেকে ওর প্রতিটা ভুলে অনায়াসে মাফ পেয়েছে বলেই আজকের এই দিন।ক্ষমা শব্দটা বলতে যত সহজ এর ভাড় ততই বেশি।প্রত্যেক ভুলের ক্ষমা আছে তবে কতবড় ভুল সেটার উপর ডিপেন্ড করে ক্ষমা পেতে কতো সময় লাগবে। আমি আশা করবো তুমি আমার আর আমার বোনের মাঝে ঢুকবে না।’
‘দুঃখিত।’
কুহেলী অপমান বোধ করে।কথাটা সে সেভাবে বলতে চায়নি। সমারোহ একটু জোরে শ্বাস ছাড়ে। গুমোট চেহারা তার। শক্ত পুরুষালী কন্ঠে বলে,
‘ওকে ছোট থেকে সবকিছুতেই সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া হতো যতোটা সেঁজুতিকেও দেয়া হয়নি। ছোট থেকেই নয়না ছিল ডেম কেয়ার মনোভাবের। একমাত্র আমি ছাড়া আর কারোর কথার বাধ্য ওকে করা যায়নি।এখনো নিজের মন মতো চলেছে।আদরের বোন না হলে আমি ওকে চোখের সামনে আসতে দিতাম না কখনো। আঘাত ও আমাদের চেয়ে বেশি নিজেকে দিয়েছে। আব্বা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, আম্মাকে এতোটা চিন্তিত আমি আগে দেখিনি কখনো।’
‘আমিও আপনাকে এতটা উদাস দেখিনি এর আগে।’
‘হওয়াটাই স্বাভাবিক।’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে সমারোহ।
‘আপনি সৌরভ নামক লোকটাকে মেরেছেন?’
সমারোহ চমকে উঠে কুহেলীর কথায়।ভ্রুঁ উঁচিয়ে বলে,
‘তোমায় কে বললো? সান্দ্র পৌঁছে গেছিল বলে, নাহলে আজকে ওই অসভ্যকে খুন করে ফেলতাম আমি।’
‘আপু আমার ঘরে বসে কথা বলছিলেন তখন সৌরভ ফোন দেন।আপু ফোনটা আমার হাতে দিয়ে চলে যায় কথা বলবে না বলে। আমি রিসিভ করার পর দেখি সৌরভ ভাইয়ার বাবা ফোন দিচ্ছেন।আমাকে হুমকি ধামকি দিয়েছেন।’
‘আচ্ছা!’
সমারোহর গলা যেন এবার আরো শীতল হয়ে যায়।কুহেলী ভয়ে চুপসে থাকে সমারোহর রাগ দেখে।কথাটা কি বলে ঠিক করেছে সে!
চলবে