#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৮
_________________
বেশ খানিকটা অবাক সাথে হতাশা ভরা চেহারা নিয়ে তাকিয়ে অপূর্বের বাবা অপূর্বের মুখের দিকে। খুন করার মতো কত বড় শক্ত পক্ত কথা বললো অথচ কত শান্ত গলায়। যেন খুব স্বাভাবিক একটা কথা। অপূর্বের বাবা অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কে করেছে এমনটা?’
‘ তুমি সব জানো বাবা?’
‘ একটু আকটু। তোমায় এটাক করেছে তুমি কি তাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে,
‘ মানুষ খুব খারাপ বাবা?’
‘ কে ক্ষতি চাইছে তোমার আকিব,
‘ ও আমার ভাই বাবা ও এমনটা কখনোই করবে না।’
‘ আকিবের বাবা তো আমার বন্ধু।’
হাসে অপূর্ব। বলে,
‘ ড্রাইভার কারো বন্ধু হয় নাকি,
‘ ড্রাইভারের ছেলে বন্ধু হতে পারলে ড্রাইভার কেন হতে পারবে না।’
আবারো হাসে অপূর্ব। যেন তার বাবা হাসানোর মতো কিছু বলেছে। ছেলের হাসির দিকে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অপূর্বের বাবা। ছেলেটা যে কষ্ট পেয়েছে সেটা ঠিকই বুঝেছেন উনি। অপূর্বের বাবা অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তোমার কি মনে হয় ওই সব করেছে?’
‘ ও খুব বোকা বাবা কিন্তু আমায় খুব ভালোবাসে।’
‘ ভালোবাসার মানুষেরাই কিন্তু সবচেয়ে বড় আঘাতটা করে অপূর্ব।’
‘ তাহলে তো তুমিও করতে পারো বাবা।’
অপূর্বের বাবা থমকে গেলেন এই কথাটা একদমই আশা করেন নি তিনি ছেলের মুখে। অপূর্বের বাবা চুপ হয়ে গেল যা দেখে অপূর্ব তার বাবার কোলের ওপর থেকে মাথাটা সরিয়ে বললো,
‘ ঘুমাতে যাও বাবা রাত অনেক হয়ে গেছে।’
উওরে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো অপূর্বের বাবা,
‘ তুমি ঘুমাবে না।’
শুঁকনো হাসে অপূর্ব। বলে,
‘ হুম ঘুমাবো তো তুমি যাও,
কিন্তু অপূর্বের বাবা গেলেন না ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। যা দেখে অপূর্ব বলে,
‘ আজ রাতে কি এখানে থাকার প্ল্যান করেছো বাবা?’
‘ তুমি যাও আগে,
অপূর্ব শুনলো বাবার কথা এক নিমিষেই রাজি হয়ে বললো,
‘ ঠিক আছে গুড নাইট বাবা।’
বলেই মোবাইল হাতে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যায় অপূর্ব। হঠাৎই অপূর্বের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বললো অপূর্বের বাবা,
‘ কাল ওকে সত্যি মারবে অপূর্ব?’
জবাবে কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে অপূর্ব,
‘ দেখি,
অতঃপর চলে যায় অপূর্ব। আর ফিরে তাকায় না সে আর ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকে অপূর্বের বাবা। সে বুঝেছে
‘আজ তার ছেলের মন ভালো নেই’
____
সকালের ফুড়ফুড়ে আলো। গাছের পাতা নড়ছে আনমনে, শিরশিরিয়ে আসছে শীতল বাতাস। হঠাৎই টেবিলের কর্নারে থাকা এলার্ম ঘড়িটার বিকট শব্দ কানে আসতেই বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো প্রিয়তা। ভার্সিটি যেতে হবে তাকে, প্রিয়তা বেশি না ভেবেই দ্রুত ছুটে গেল ওয়াশরুমের দিকে,
বাড়ির চারদিকটা ঘুরে ঘুরে দেখছিল আয়মান। এই প্রথমই সে আসলো তার গ্র্যান্ডমার বাড়ি। এর আগে শুধু ফোনেই যা কথা বলেছে এই যা। আয়মানের বাবা জানে না আয়মান এখানে এসেছে। জানলে হয়তো আসতে দিত না। আয়মান বুঝে না আয়মানকে তার বাবা এখানে কেন আসতে দিতে চায় না। নিজেও আসে না আর তাকেও আসতে দিতে চায় না। আয়মান চারপাশ ঘুরতে ঘুরতে উঠে পড়ে ছাঁদে। তারপর খয়েরী রঙের রেলিংয়ের সাথে গা এলিয়ে দাঁড়ায় সে। এমন সময় হঠাৎই চোখ গেল তার কালো বোরকা পরিধিত হতভম্ব হয়ে এগিয়ে আসা এক রমনীর দিকে, মেয়েটা যে প্রিয়তা তা আয়মান ওর চোখ দেখেই বুঝেছে। আয়মান ডাকলো প্রিয়তাকে হঠাৎই বললো,
‘ এই যে মিস এড্রেস ওয়ালী এমন হতভম্ব হয়ে যাচ্ছেন কই?’
প্রিয়তা যেন চমকালো ছাঁদের দিকে তাকালো সে। কালকের সেই ছেলে আয়মানকে দেখে খানিকটা অবাক হয়ে বললো,
‘ আপনি?’
‘ হুম আমি তা যাচ্ছেন কই?’
প্রিয়তা বেশি ছড়ালো না হেঁটে যেতে যেতে বললো,
‘ জ্বী ভার্সিটি।’
বলেই আর না দাঁড়িয়ে চলে গেল প্রিয়তা। আর আয়মান প্রিয়তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলো। তার কি মেয়েটাকে ভালো লেগেছে ঠিক বুঝতে পারলো না।’
___
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক দুপুর বারোটার কাটায় ছুঁই ছুঁই। অপূর্ব বসে আছে আসিফ নামের সেই ছেলেটিকে আনা পুরনো বাংলোর ভিতর। তাকে ঘিরে ধরে আছে অনেক লোক। অপূর্ব চুপচাপ বসে আছে কাউকে কিছুই বলছে না সে, হঠাৎই তুহিন এগিয়ে আসলো বললো,
‘ ভাই আকিবকে ফোন করেছি ও আসছে?’
উওরে শুধু এতটুকুই বলে অপূর্ব,
‘ ঠিক আছে।’
অপূর্ব বসে আছে চুপচাপ। প্রায় দশ মিনিটের মতো সময় নিয়ে আকিব আসলো অপূর্বের কাছে। অপূর্ব স্থির দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে রইলো আকিবের আসার পানে, আকিব এসে দাড়ালো অপূর্বের থেকে চারহাত দূরত্ব নিয়ে। আকিব দাড়াতেই অপূর্ব তুহিনকে কিছু ইশারা করলো তুহিনও বুঝলো সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সকলকে ইশারা করলো তুহিন। তুহিন ইশারা করতেই বাংলোতে উপস্থিত সবাই চলে গেল ওখান থেকে শুধু থেকে গেল তুহিন আর আকিব। পাশাপাশিই দাঁড়িয়ে ছিল। আকিব অপূর্বের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘ কিছু কি হয়েছে ভাই? আপনায় ঠিক লাগছে না।’
অপূর্ব এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো একটু একটু করে এগিয়ে যেতে লাগলো সে আকিবের দিকে। তারপর শান্ত গলায় বললো,
‘ কাল সকালে তুমি কোথায় ছিলে আকিব?’
আকিব খানিকটা থমকালো। বললো,
‘ কেন ভাই আপনার কথা মতো শাহরিয়া আদনানের খোঁজ করতে গেছিলাম?’
‘ খোঁজ করতে গেছিলে নাকি খুন করতে?’
আকিব অবাক হলো, চরম অবাক হলো। ভড়কানো গলায় বললো,
‘ এসব আপনি কি বলছেন ভাই?’
‘ বেশি বোকা সেজো না আকিব, তোমাকে বোকা ভেবে এতদিন আমি ভুল করেছি, কি করে তুমি আমার সাথে বেইমানি করলে আকিব? আমি তোমায় বন্ধু ভেবেছিলাম, আমায় এভাবে ঠকালে আমারই লোক হয়ে আমাকেই খুন করতে সাহায্য করলে?’
আকিব যেন আকাশ ভেঙে পড়লো, তার বুক ধড়ফড় করছে এসব কি বলছে তার অপূর্ব ভাই। আকিব থমথমে গলায় বললো,
‘ এসব কি বলছেন ভাই?’
‘ তুমি কিছু বুঝচ্ছো না আকিব?’
আকিব মাথা নাড়ালো যার অর্থ সে সত্যি কিছু বুঝচ্ছে না। অপূর্ব আকিবের মাথা নাড়ানো দেখে তুহিনকে বললো,
‘ আকিবকে ভিডিওটা দেখাও তুহিন?’
তুহিনও অপূর্বের কথা মতো এগিয়ে এসে মোবাইল হাতে দেখালো একটা ভিডিও ফুটেজ। যেখানে দেখাচ্ছে শাহরিয়া আদনানের পেটের ভিতর থেকে ধারালো চাকু বের করছে আকিব। আকিব যেন এই ভিডিও দেখে থমকে গেল। অপূর্বকে ঘাবড়ানো গলায় বললো,
‘ ভাই আমি কিছু করে নি আমি আদনানকে মারি নি?’
অপূর্ব শুঁকনো হাসে। বলে,
‘ আমি তোমায় একবারও বলেছি তুমি আদনানকে মেরেছো আকিব।’
আকিব ঘাবড়ে গেছে তার শরীর থরথর করে কাঁপছে। অপূর্ব আকিবের দিকে এগিয়ে গেল প্যান্টের পিছন থেকে ধারালো চাকু বের করলো সে। তারপর শান্ত ভাবেই বললো আবার,
‘ এমনটা কেন করলে আকিব, তুমি তো আমার বিশ্বস্ত ছিলে।’
আকিব অসহায় দৃষ্টিতে অপূর্বের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘ আমি কিছু করি নি ভাই বিশ্বাস করুন।’
অপূর্ব হাসে। মারাত্মক রহস্যময়ী হাসি দেয় সে। তারপর একপলক আকিবের দিকে তাকিয়ে তুহিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ বিশ্বাস, মানুষ তো বিশ্বাসের উপযোগী নয় তাই না তুহিন?’
তুহিনও সায় দেয় অপূর্বের। বলে,
‘ জ্বী ভাই। আমিও ভাবি নি আকিব এমন কিছু করবে?’
অপূর্ব তুহিনের থেকে দৃষ্টি সরায় বলে,
‘ দেখলে তো আকিব তুহিনও তাই বলছে।’
আকিব ভেবে পায় না কি বলবে এখন। তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করা হচ্ছে এটা কি তার অপূর্ব ভাই বুঝচ্ছে না। সে সত্যি কিছু করে নি। আকিবকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বলে অপূর্ব,
‘ তোমায় এখন মেরে দিলে তুমি কি খুব যন্ত্রণা পাবে আকিব?’
আকিব জবাব দেয় না। নির্বিকার হয়ে শুধু তাকিয়ে রয় সে অপূর্বের দিকে। অপূর্ব একটু একটু করে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে আকিবকে। তারপর বলে,
‘ আমি তোমার থেকে এমনটা আশা করি নি আকিব, বিদায় বন্ধু।’
বলেই হাতে থাকা ধাঁরালো চাকুটা চালালো অপূর্ব। সঙ্গে সঙ্গে থমকে গেল আকিব চোখ বন্ধ করে নিলো নিমিষেই।’
প্রায় পাঁচ সেকেন্ড পর,
হঠাৎই আকিব বুঝলো সে কোনো আঘাত পায় নি। তার কোনো কষ্টও লাগছে না। তবে কি আকিবকে মারে নি অপূর্ব।’
অন্যদিকে,
তুহিন হতভম্ব হলো হুট করে কি থেকে কি হলো সে বুঝে উঠতে পারলো না। কারন অপূর্ব তার হাতের চাকুটা আকিব নয় সোজা তুহিনের পেটের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছে। তুহিন এলিয়ে পড়লো নিচে, তাজা রক্তে ফ্লোর গেল ভিজে। অপূর্ব তুহিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ মানুষ আসলেই বিশ্বাসের উপযোগী নয় তুহিন?’
#চলবে…..
#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৯
_________________
চোখ মুখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে আকিব অপূর্বের মুখের দিকে কি থেকে কি হলো সব যেন তার মাথার উপর দিয়ে গেল। পুরোই বাকরুদ্ধ আকিব। তার বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটার মতো দক দক করছে। অন্যদিকে অপূর্ব সরে আসলো আকিবের থেকে হাতের চাকুটা ছুঁড়ে মারলো তুহিনের পাশে। তারপর ডাকলো কিছু লোককে তারা আসতেই তুহিনকে নিয়ে যেতে বললো তারাও বেশি কিছু না বলে নিয়ে যেতে লাগলো তুহিনকে। কারন তারা জানে মৃত ব্যক্তিকে এখন কি করতে হবে। অপূর্ব আবার আগের ন্যায় বসলো পিছনের চেয়ারে। হাতে খানিকটা রক্ত লেগেছে তার। তাই পায়ের পাশ দিয়ে থাকা পানির বোতলটা উঠিয়ে ধুয়ে নিলো হাত। আকিব শুধু নীরব দর্শকের মতো দেখে গেল অপূর্বকে। আকিব সত্যি ভেবেছিল অপূর্ব বুঝি সত্যি তাকে মেরে দিল। অপূর্ব তার পকেট থেকে রুমালটা বের করে ভেজালো হাতটা মুছে বললো,
‘ খুব ভয় পেয়েছিলে আকিব?’
আকিব জবাব দেয় না৷ তার ধ্যান এখনো ভাঙে নি। আকিবের অবস্থাটা বুঝলো অপূর্ব খানিকটা গম্ভীর কণ্ঠে জোড়ালো আওয়াজ করে বললো,
‘ আকিব,
আকিব চমকে উঠলো নিজের ধ্যান থেকে বেরিয়ে আসলো তারপর দ্রুত পায়ে অপূর্বের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
‘ ভাই আমি কিছু বুঝচ্ছি না।’
‘ পাশে বসো সব বোঝাচ্ছি তোমায়,
আকিব শুনলো আশেপাশে তাকিয়ে তার থেকে চার হাত দূরত্বে থাকা একটা চেয়ার দেখে তক্ষৎনাত এগিয়ে গিয়ে সেটাকে অপূর্বের পাশে রেখে বসলো আকিব। তারপর থমথমে গলায় বললো,
‘ এখন বলুন ভাই?’
অপূর্ব কিছুক্ষন চুপ থাকলো। তারপর বললো,
‘ তুমি কি জানো আকিব তোমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র চলছিল?’
আকিব বেশ অবাক হয়ে বললো,
‘ আমি সত্যি এসব কিছু জানি না ভাই।’
‘ সেদিন তুমি শাহরিয়ার আদনানের বাড়ি গিয়েছিলে ওইরকম সিচুয়েশনে পড়েছিলে আমায় বলো নি কেন?’
আকিব এবার থমকালো। হয়তো সে সেদিন তুহিনের কথায় অপূর্বকে কিছু না বলে ভুল করেছে। আকিবকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বললো অপূর্ব,
‘ কি হলো আকিব কথা বলছো না কেন?’
এবার আকিব মুখ খুললো খানিকটা থমথমে গলায় বললো,
‘ আমায় ভুল বুঝবেন না ভাই। আমি আপনার থেকে কিছু লুকাতে চাই নি, কিন্তু সেদিন আপনার ফোন করে শাহরিয়ার আদনানের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়ার কথাটা শোনার পর আমি তুহিনকে ফোন করি ওকে বলি শাহরিয়ার আদনানের খোঁজ খবর নেওয়ার কথা। ও সেদিন খুব স্বাভাবিকভাবেই বলে ঠিক আছে। এরপর ও একটা এড্রেস দেয় বলে এখানে গিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করলেই আমি নাকি শাহরিয়ার আদনানের সব খোঁজ পেয়ে যাবো। আমিও তাই করি, সত্যি বলতে ভাই শাহরিয়ার আদনানের বাড়িটা আগেই চিনতাম আমি কিন্তু ওটাই ওনার বাড়ি কিনা শিওর ছিলাম না। সেদিন শাহরিয়ার আদনানের বাড়িতে একজন কাজের লোক আর শাহরিয়ার আদনান ব্যতীত কেউ ছিল না। আমি দরজায় নক করার পর কাজের লোকটা দরজা খুলে দেয়। আমি শাহরিয়ার আদনানের কথা জিজ্ঞেস করলেই বলে উনি উপরে আছেন। আমিও ভাবি এসেই যখন পড়েছি তখন দেখা করে যাই। যেহেতু ওনায় চিনতাম না চেনাও যাবে এইভেবে উপরে উঠি, উপরে উঠতেই দেখি আদনানের রুমেই ওনায় কেউ মেরে দিয়ে চলে গিয়েছে পেটে চাকু আর মুখটা পুড়োই থেতলে দিয়ে চলে গেছে আমি খুব ঘাবড়ে যাই ভাই। আদনানের বিশ্রিত মুখটা দেখে আমার কলিজা কেঁপে উঠে। আদনান তখন ব্যাথায় জর্জরিত ছিল আমি কিভাবে যেন এগিয়ে গিয়ে পেটের চাকুটা উঠিয়ে দেই তারপর পেটটাকে শক্ত করে বেঁধে দেই কিন্তু কেউ যে সেইসময় তার অর্ধেক ভিডিও করে নিবে এ আমি ভাবি নি। আমি ভেবেছিলাম উনি হয়তো বেঁচে আছেন তাই দ্রুত হসপিটাল নেওয়ার কথা ভাবি কিন্তু তার আগেই উনি মারা যায়। কাজের লোকটা তখন পুলিশে খবর দেয় আমি কোথাও যাই নি ওখানেই ছিলাম। মিডিয়ার লোক আসার আগ পর্যন্ত ওখানেই ছিলাম তারপরই আপনার কাছে ছুটে যাই। এসব ঘটনা আমি আগেই তুহিনকে বলি ওই বলে আমি যেন আপনায় কিছু না জানাই আমি সেদিন খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম তাই তুহিনের কথাটা মেনে নিয়েছিলাম।’
বলেই আকিব থেমে গেল। যা অপূর্ব দেখে বললো,
‘ ঠিক আছে এখন শান্ত হও আকিব। নেক্সট টাইম এমন কিছু ঘটলে সবার আগে আমায় জানাবে।’
উওরে মাথা নাড়িয়ে বলে আকিব,
‘ ঠিক আছে ভাই।’
অপূর্ব কিছুক্ষন চুপ রইলো। তারপর বললো,
‘ তুমি জানো আকিব আমাকে মারার বোম ফিট করার এস এর সাথে হাত মেলানো শাহরিয়ার আদনানকে মারা এইসবই তুহিন করেছে। এস এর সাথে মিলে।’
আকিব অপূর্বের কথা শুনে বেশ হতভম্ব হয়ে বললো,
‘ কিন্তু তুহিন এমনটা কেন করলো ভাই? ও তো আমাদের অনেক বিশ্বস্ত ছিল।’
অপূর্ব খানিকটা হাসে তারপর জবাব দেয়,
‘ তুহিন তোমার আর এস এ আমার জায়গাটা নিতে চেয়েছিল আকিব। অবশ্য চায় বলছি কেন এখনো হয়তো চায়।’
অপূর্বের কথা শুনে আকিব থমথমে গলায় বলে,
‘ কি?’
‘ হুম।’
‘ তার মানে এস এ সম্পর্কে তুহিন আগেই জানতো ভাই?’
‘ হুম।’
‘ তুহিনকে তো মেরে দিলেন এবার এস এ কে কি করে খুঁজে বের করবেন?’
‘ একটা আশ্চর্যের বিষয় কি জানো আকিব তুহিন নিজেও চিনে না এই এস একে।’
এবার আকিব যেন আরো চমকালো। হতভম্ব হয়ে বললো,
‘ কি বলছেন ভাই?’
‘ আসলে কি বলো তো কাল রাতে তোমার ওই ভিডিওটা দেখার পর আমি অনেক ভেবেছি আমি আগেই জানতাম তুমি এমন কিছু কখনোই করবে না। পরে সন্দেহের বসে তুহিনের পিছনে লোক লাগাই আর তখনই তুহিনকে এস এর সাথে কলে কথা বলতে দেখে আমার লোকেরা। আর তুহিনও যে এস এ কে চেনে না তাও কলের কথা বলার মাধ্যমে বোঝা যায় কারন তুহিন একবার বলে ‘আপনি আমার সামনে কবে আসবেন বস?’
তখনই সব ক্লিয়ার হয়। এস এ কে জানলে তুহিন হয়তো এখনও বেঁচে থাকতো আকিব।’
বলেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো অপূর্ব। তুহিনের সাথে অপূর্বের পরিচয় চার’বছরের তাও অপূর্বের বাবার বন্ধুর ছেলের সুবাদে। তুহিনই ঝেচে এসেছিল অপূর্বের দলে। তুহিন ল্যাপটপ কম্পিউটার চালাতে খুবই পারদর্শী ছিল। তাই তো অপূর্ব রেখেছিল তার দলে ধীরে ধীরে বিশ্বাস জয় করলো আর বিশ্বাস ভেঙেও দিল।’
আকিব নিশ্চুপে বসে রইলো আর তাকিয়ে রইলো অপূর্বের ভাবনাময় মুখের দিকে। অপূর্ব ভাই তাকে কতটা বিশ্বাস করে আর কতক্ষণ আগে মনে মনে কতকিছু ভেবে নিয়েছিল আকিব। নীরবতা চললো দুজনের মাঝে। হঠাৎই আকিব বললো,
‘ সবই ঠিক আছে ভাই। তবে আমি একটা জিনিসই বুঝলাম না তুহিনই তো আমাদের আসিফকে খুঁজে বার করতে সাহায্য করলো এস এর নাম বললো তাহলে ওই কিভাবে আপনায় মারতে চাইলো ভাই?’
‘ এগুলো তো আমি বেঁচে যাওয়ার পরের ঘটনা আকিব। শুরু থেকেই সন্দেহের বসে ছিলাম আমি। কারন আমি যে খুলনা গিয়েছি সেটা তো হাতে গোনা কয়েকজনই জানতো। নিশ্চয়ই তাদের মধ্যেই কেউ লিক করেছিল কথাটা। তুহিন বুঝেছিল আমি জেনে যাবো ওই সবটা করেছে তাই আসিফকে ধরিয়ে দিয়েছে সাথে এস এর নামটার কথা বলেছে।’
‘ তাহলে কি এস এর নামটা ভুয়া ভাই।’
উওরে শুধু এতটুকুই বলে অপূর্ব,
‘ হতে পারে।’
নিশ্চুপ বনে যায় আকিব। কি সাংঘাতিক ব্যাপার তাহলে কি তারা এতদিন যে নামের মানুষটিকে খুঁজতে ছিল সেই নামের কোনো মানুষই নেই। আকিব অনেক ভেবে আবার প্রশ্ন করে,
‘ তাহলে শাহরিয়ার আদনানের খুনের বিষয়টা কি ভাই?’
‘ এটা এখনো অজানা আকিব?’ এই রহস্য এখনো রহস্য হয়েই থাকুক না হয় এটা নিয়ে পরে ভাববো এবার বিয়েটা করতে হবে আকিব। অনেক ভেবে দেখলাম আমার জন্য দু’দুটো মানুষ কষ্ট পাচ্ছে এটা ঠিক হচ্ছে না।’
বলেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো অপূর্ব। আবারও বললো,
‘ চলো আকিব একজনকে খুঁজতে যাবো দু’দিন হলো মানুষটার সাথে দেখা হয় না।’
আকিবও উঠে দাঁড়ালো। তারপর এগিয়ে যেতে যেতে বলে,
‘ কাকে ভাই?’
‘ দেখি কাকে পাওয়া যায়।’
বলেই হেঁটে গেল অপূর্ব। আর ওর পিছু পিছু আকিব। তবে রহস্য একটা রয়েই গেল সেটা হলো এস এ নামের আসলেই কি কেউ নেই? নাকি আছে। আর যদি নাই থেকে থাকে শাহরিয়ার আদনানকে মারলো কে?’
___
দুপুরের মাঝ বরাবর সময়। ভার্সিটি ছেড়ে বেরিয়ে আসলো প্রিয়তা। ভার্সিটিটা ঠিক কতটুকু মনে ধরেছে তার জানা নেই। কিন্তু কেমন যেন খাপছাড়া। প্রিয়তা কাল রাতের চিরকুটটার কথা মনে করলো কে লিখলো ওমন চিরকুট। প্রিয়তার এসব ভাবনাতেই তার বাস চলে আসলো প্রিয়তাও বেশি না ভেবে দ্রুত উঠে পড়লো বাসে। বাসের শেষ প্রান্তে দুটো সিট খালি থাকায় একটায় গিয়ে বসলো সে। সে বসতেই বাস চলতে শুরু করলো। কতক্ষণ পর আবার বাস থামলো কেউ উঠলো বাসে প্রিয়তা বেশি ভাবলো না নিজের মতো করে কিছু ভাবনা নিয়ে বসে রইলো। হঠাৎই কেউ একজন তার পাশে বসে বললো,
‘ তুমি কি সারাদিন এভাবেই নানান ভাবনায় মগ্ন থাকো মেয়ে?’
#চলবে….