আজও বৃষ্টি নামুক পর্ব-২০

0
362

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২০
_________________

হুট করেই চেনা পরিচিত এক অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়েস কানে আসতেই চমকে উঠলো প্রিয়তা। পাশ ফিরে তাকালো তক্ষৎনাত। অপূর্ব এসেছে, তাও মুখে মাস্ক আর চোখে কালো সানগ্লাস পড়ে গায়ে নেভি ব্লু কালার শার্ট। প্রিয়তা পর পর কয়েকবার পলক ফেলে বললো,

‘ আপনি এখানে?’

উওরে খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলে অপূর্ব,

‘ কেন আমি আসতে পারি না বুঝি।’

খানিকটা ভড়কায় প্রিয়তা। বলে,

‘ না তা হবে কেন। তা এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?’

প্রিয়তার কথা শুনে একটা গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো অপূর্ব,

‘ দেখি কোথায় যাওয়া যায়। তা তুমি কোথা থেকে আসছো?’

‘ ভার্সিটি।’

‘ আচ্ছা তুমি ফোন ইউস করো না কেন?’

খানিকটা বিষম খেল প্রিয়তা। বললো,

‘ না মানে আমার আসলে ফোন ইউস করতে ভালো লাগে না।’

‘ তুমি মিথ্যে বলতে শেখোনি মেয়ে।’

প্রিয়তা যেন আবার চমকালো। ভারাক্রান্ত গলায় বললো,

‘ মানে?’

‘ বাদ দেও তা ভার্সিটির পর আর কোথায় যাও আর?’

‘ না তেমন কোথাও যাই না শুধু বিকেলে একটা টিউশনি পড়াই।”

উওরে শুধু এতটুকুই বলে অপূর্ব,

‘ ওহ।’

প্রিয়তাও বেশি না ভেবে বললো,

‘ হুম।’

রোদ্দুরে ঘেরা আকাশ ছিল। হুট করেই তার আবহাওয়া পাল্টালো। ধেঁয়ে আসলো ঘন কালো অন্ধকার। রোদ্দুরে ঘেরা আকাশটায় এমন আচমকাই পরিবর্তনটা যেন এলেমেলো হলো। প্রিয়তা আকাশ পথে তাকিয়ে বললো,

‘ বৃষ্টি হবে বোধহয়।’

উওরে অপূর্ব বললো,

‘ বোধহয় নয় হচ্ছে দেখ,

অপূর্বের কথা শুনে প্রিয়তাও তাকালো বাহিরে সত্যি সত্যি ঝিরিঝিরি শব্দে বৃষ্টি পড়ছে। প্রিয়তা হতভাগ হয়ে বললো,

‘ এত জলদি নামলো বৃষ্টি।’

খানিকটা হাসে অপূর্ব। বলে,

‘ বৃষ্টি কি আর সময় নিয়ে আসে মেয়ে।’

অপূর্বের কথা শুনে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় প্রিয়তা অপূর্বের দিকে। অপূর্বও তাকায় চোখাচোখি হয় দুজনের। হঠাৎই অপূর্ব একা মনে আওড়ায়,

‘ ওভাবে তাকিও না মেয়ে আমি কেন যেন তোমার দৃষ্টি নিতে পারি না।’

অপূর্ব দৃষ্টি সরালো যা দেখে প্রিয়তাও সরালো। কি হলো মাত্র ভেবে খানিকটা লজ্জা লাগছে তার। ছিঃ ছিঃ নিশ্চয়ই অপূর্ব তাকে নির্লজ্জ ভাবলো।

সময় চলছিল আর সময়ের সাথে সাথে এগোচ্ছিল বাস। বাহিরে ঝিরিঝিরি শব্দের বৃষ্টি, চারপাশে শীতল শীতল ভাব, চোখ জুড়ে একরাশ মুগ্ধতা, হৃদয় জুড়ে খানিকটা অন্যরকম অনুভূতি। অপূর্ব তার বুকে হাত দিলো কিছু একটা হচ্ছে তার মাঝে, অপূর্ব কি তবে প্রেমে পড়ছে সামনের মেয়েটির, মুগ্ধতায় আষ্টেপৃষ্টে যাচ্ছে ভিতরটা। অপূর্ব খুব অবাক হলো, এ কেমন ভাবনা! ভালোবাসা, এটা কি আধও তার জন্য। হঠাৎই অপূর্বের কি যেন হলো বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে, বাস থামাতে বললো মুহূর্তেই। হুট করেই অপূর্বের এহেম কান্ডে প্রিয়তা ভড়কানো গলায় বললো,

‘ কিছু কি হয়েছে অপূর্ব?’

অপূর্ব জবাব দেয় না। কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,

‘ আমায় যেতে হবে তুমি সাবধানে যেও।’

বলেই আর দাঁড়ালো না অপূর্ব দ্রুত গতিতে বাস থেকে নেমে পড়লো সে। সে হয়তো আবেগের বসে ভুলভাল কাজ করে ফেলছে এমনটা করলে যে প্রিয়তারই ক্ষতি। মেয়েটা এক বিপদ থেকে বাঁচতে অচেনা শহরে পা রেখেছে আর সে কি না আবারও সেই মেয়েটাকে বিপদে ফেলতে চলেছে। না না অপূর্ব কাউকে ভালোবাসতে পারে না। ভালোবাসা মানেই যে হারানোর ভয়, দূরে যাওয়ার শুন্যতা, নিজের দূর্বলতা। আর অপূর্বের দূর্বলতা কেউ জানা মানে অপূর্বের সব শেষ।’

এরকম নানা কিছু ভাবতে ভাবতে বাস থেকে নেমে বৃষ্টির ভিড়েই নিজের গাড়ির দিকে অগ্রসর হলো অপূর্ব। প্রিয়তা জানালা বেয়ে শুধু দেখলো অপূর্বের যাওয়াটা। কেমন যেন লাগলো বিষয়টা।’

হঠাৎই বাস থামাতেই বাস ফলো করে পিছনে থাকা আকিবও তার গাড়ি থামালো। বাস থেকে অপূর্বকে নামতে দেখে সে যেন একটু অবাক হলো। অপূর্ব হেঁটে এসে বসলো আকিবের পাশ দিয়ে তারপর বললো,

‘ আকিব ভালো লাগছে না কিছু বাড়ি চল।’

আকিব অপূর্বের কন্ঠ শুনে বেশ হতাশার সুর নিয়ে বললো,

‘ কিন্তু ভাই?’

‘ আর কোনো প্রশ্ন নয় আকিব ভুলকে বেশি প্রশ্রয় দিতে নেই।’

আকিব আর কিছু বলার সুযোগ পেল না। গাড়ি ঘুরালো বাড়ি ফিরতে হবে তাকে। আকিব সত্যি বুঝলো না হুট করে অপূর্বের হলোটা কি?’

অতঃপর বাস ছুটলো তার গতিতে আর আকিবরা ছুটলো অন্য দিকে। কারন তাদের গন্তব্য যে ভিন্ন।’

___

বেশ চিন্তিত মাখা মুখ নিয়ে বাড়ির সামনের রাস্তাটা দিয়ে হেঁটে বাড়ি ঢুকছে প্রিয়তা। বৃষ্টি কমে গেছে অনেক আগে একপ্রকার নেই বললেই চলে। প্রিয়তা সাবধানে পা ফেলে কাঁদা মিশ্রিত মাটির পথটা অতিক্রম করছে। চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।
সে সত্যিই বুঝলো না অপূর্ব হুট করে এভাবে চলে গেল কেন? প্রিয়তা বেশ নিরাশা ভরা কন্ঠে বললো,

‘ ছেলেটা এমন কেন হুট করে এলো আবার হুট করেই চলে গেল। ছেলেটা কি বুঝে না তার হুট করে আসাটা ঠিক কতটা বিপাকে ফেলে প্রিয়তাকে।’

প্রিয়তা এসব ভাবতে ভাবতে চললো নিজের রুমের উদ্দেশ্যে। এমন সময় হঠাৎই বলে উঠল আয়মান,

‘ এই যে মিস এড্রেস ওয়ালী এভাবে চিন্তিত মাখা মুখ নিয়ে যাচ্ছেন কোথায়?’

প্রিয়তা থেমে গেল তার পা আঁটকে গেল ওখানেই। সামনেই আয়মানকে এগিয়ে আসতে দেখে থমথমে গলায় বললো,

‘ জ্বী আপনি।’

‘ হুম আমি। তা ভার্সিটিতে দিন ভালো কাটে নি বুঝি চিন্তিত দেখাচ্ছে যে।’

উওরে বেশ বিস্মিত মাখা কন্ঠ নিয়ে বললো প্রিয়তা,

‘ না তেমন কোনো ব্যাপার নয়।’

‘ ওহ,

‘ হুম।’

বলেই আর দাঁড়ালো না প্রিয়তা তক্ষৎনাত এগিয়ে গেল নিজের রুমের দিকে। ফ্রেশ হতে হবে তাকে।’

অন্যদিকে,

আয়মানও বেশি ভাবলো না। প্রিয়তার যাওয়ার পানে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ছুটলো নিজের ঘরের দিকে। আর কিছুক্ষন কথা বলার ইচ্ছে ছিল তার কিন্তু প্রিয়তা তো দাঁড়ালো না। হতাশার সুর টানলো আয়মান। পরক্ষণেই ভাবলো মেয়েটা বোধহয় ক্লান্ত।’
___

আজ শুক্রবার! আর শুক্রবার মানেই ভার্সিটি অফ। আজ প্রিয়তা ভেবেছে আজ সবার জন্য রান্না সে নিজে করবে। এসেছে পর থেকে গ্র্যান্ডমাই সব করে তাই প্রিয়তা ভেবেছে আজ নিজ হাতে গ্র্যান্ডমাকে আর আয়মানকে রান্না করে খাওয়াবে।’

তাই রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা। টুকিটাকি সবজি কাটছে সে।’

‘ আমি কি কোনো কাজে আপনায় হেল্প করতে পারি মিস এড্রেস ওয়ালী।’

আচমকাই আয়মানের কন্ঠ কানে আসতেই নিজের সবজি কাটা বন্ধ করে আয়মানের দিকে তাকালো প্রিয়তা। দরজার কাছে আয়মানকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হাল্কা হেঁসে বললো,

‘ না এখানে তেমন কোনো কাজ নেই। আর যা কাজ আছে তা আমি একা পারবো।’

আয়মান পা ফেলে তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসলো প্রিয়তার দিকে তারপর বললো,

‘ কেন আপনার কি মনে হয় আমি আপনার কাজগুলো করতে পারবো না।’

‘ আমি তেমনটা কখন বললাম।’

‘ তাহলে কি বলেছেন আপনি? দ্রুত বলুন কিছু করতে হবে কি না আমি হেল্প করে দিচ্ছি।’

‘ লাগবে না তো হেল্প আমি একা পারবো বললাম তো।’

‘ আপনি না বড্ড জেদি বুঝলেন এত রান্না একা কি করে করবেন?’

‘ আমি পারবো আয়মান।’

আয়মান কি শুনলো প্রিয়তার কথা শুনলো না তো৷ উল্টো বললো,

‘ আপনি এমন কেন প্রিয়তা, যেচে হেল্প করতে চাইছি তাই দাম দিচ্ছেন না।’

প্রিয়তা হার মানলো। সে বুঝলো এই মুহূর্তে এই ছেলের সাথে তর্ক করে প্রিয়তা জিততে পারবে না। প্রিয়তা ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। বললো,

‘ আচ্ছা ঠিক আছে। আসুন আমায় কাটাকাটি করতে একটু হেল্প করুন।’

আয়মান যেন খুশি হলো খুশি মাখা মুখ নিয়েই বললো,

‘ সত্যি।’

হা বোধক মাথা নাড়ায় প্রিয়তা। যা দেখে আয়মান খুশি হয়ে বললো,

‘ হু এখন দ্রুত বলুন কি করবো আমি?’

‘ পেঁয়াজ কাটুন আয়মান।’

আয়মানও শুনলো। হাসি মাখা মুখ নিয়েই বললো,

‘ ঠিক আছে দিন।’

অতঃপর এই কাটাকাটির আর টুকিটাকি কথোপকথনের মাধ্যমেই নিজেদের কাজে মগ্ন হলো প্রিয়তা আর আয়মান।’

___

সকাল থেকেই বেশ তোড়জোড় চলছে অপূর্বদের বাড়িতে। কি কারনে তোড়জোড় চলছে অপূর্ব জানে না। রোজ কারের মতোই নিজেকে পরিপাটি রূপে রাঙিয়ে চললো অপূর্ব নিজের কাজে। আজ অপূর্ব শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে, হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ, সাদা রঙের জিন্স, সিল্কি চুলগুলো সুন্দর মতো সাজনো, গা দিয়ে বেশ সুভাস বিশিষ্ট পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে। অপূর্ব লাস্ট বারের মতো নিজেকে আয়নার দেখে চললো নিচে।’

সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল অপূর্ব। এমন সময় হাজির অপূর্বের মা। খানিকটা খুশি খুশি মাখা মুখ নিয়ে বললেন তিনি,

‘ বাহ্! আমার ছেলেটাকে তো বেশ লাগছে।’

অপূর্ব হাসে এগিয়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

‘ থ্যাংক ইউ মা।’

মুচকি হাসে অপূর্বের মা। বলে,

‘ কিন্তু তুমি এখন কোথায় যাচ্ছো অপূর্ব?’

উওরে স্বাভাবিক কন্ঠ রেখেই বললো অপূর্ব,

‘ কেন মা রোজ যেখানে যাই সেখানে।’

‘ আজ কোথাও যেও না অপূর্ব।’

অপূর্ব বেশ অবাক হলো মায়ের কথা শুনে। বললো,

‘ কেন মা কি হয়েছে?’

উওরে অবাকের স্বরে বললো অপূর্বের মা,

‘ তোমার বাবা কিছু বলে নি অপূর্ব?’

অপূর্ব যেন আরো বিস্মিত হলো। বললো,

‘ কি বলবে বাবা কই কিছু বলে নি তো আমায়।’

এমন সময় হাতে এক বাটি মিষ্টি নিয়ে একটা খেতে খেতে সাথে হাসতে হাসতে বললো অয়ন,

‘ কেন ভাই তুই জানিস না আজ তোকে পাত্রীপক্ষ দেখতে আসবে?’

সঙ্গে সঙ্গে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো অপূর্ব। ভয়ানকভাবে অবাক হয়েছি ঠিকই। তবে পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

‘ হোয়াট?’

এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হয় আকিব। অপূর্বকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ ভাই গাড়ি রেডি দ্রুত চলুন।’

আকিবের কথা শুনে অয়ন এগিয়ে যায় আকিবের দিকে তারপর মুখে একটা মিষ্টি পুড়ে দিয়ে বলে,

‘ আজ তোমার অপূর্ব ভাই কোথায় যাবে না আকিব। কারন আজ যে তাকে পাত্রীপক্ষ দেখতে আসবে আকিব?’

সঙ্গে সঙ্গে বিষম খেল আকিব। গলায় মিষ্টি আঁটকে কাশি উঠলো তার। আকিবের অবস্থা দেখে অপূর্বের মা এগিয়ে গিয়ে পানি দিল আকিবকে। বললো,

‘ তুমি ঠিক আছো তো আকিব?’

আকিব জবাব দেয় না। ঢকঢক করে পুরো পানিটা খিলে বলে,

‘ এটা কি সত্যি আন্টি অপূর্ব ভাইকে দেখতে আসছে?’

উওরে অপূর্বের মা বলে,

‘ কি করবো বলো আকিব তোমার অপূর্ব ভাই তো আর পাত্রী দেখতে যাবে না তাই পাত্রীরাই দেখতে আসছে অপূর্বকে। আর এই সবটাই অপূর্বের বাবা করেছে।’

মায়ের কথা শুনে অপূর্ব কোনো রিয়েকশন দিলো না, নিজেকে শান্ত রাখলো অনেকক্ষণ। তারপর নিজের হাত ঘড়িটা খুলতে খুলতে বিড় বিড় করে বললো,

‘ আজ তো তোমার হচ্ছে বাবা। মান সম্মান পুরো দমে যাওয়ার জন্য তৈরি থেকো।’

#চলবে….