আমায় একটু ভালবেসো পর্ব-১৭

0
300

#আমায়_একটু_ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফেরদৌস_কেয়া

(১৭)

সবাই চুপচাপ হয়ে আছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই।অর্ণার ছোট চাচা অনল বলল,
,সবই ঠিক আছে। কিন্তু তাই বলে তুই অর্ণার ক্ষ তি করবি?এটা কি আদৌ ঠিক হয়েছে? অর্ণার কি দোষ ছিল বল তো? ও তো তোর কোনো ক্ষ তি করেনি।
পর্ণা মাথা নিচু করে ফেলল। বিগত কয়েক বছর ধরে এই কথাগুলো, নিজের মধ্যে চেপে রেখেছিল। তাই আস্তে, আস্তে কখন যে অর্ণার প্রতি এতো রা গ জমে গেছে। তা টেরই পাইনি।সবসময় মনে হতো, সব দোষ অর্ণার। অর্ণার জন্যই তার প্রতি এত অবহেলা করা হয়।তবে আজ কেন যেন নিজের প্রতি ঘৃ না হচ্ছে পর্ণার। নিজেকে কবে যে এতো নিচু পর্যায় নিয়ে গেছে, তা আজ উপলব্ধি করছে।
পর্ণা অর্ণার পা ধরে বসে পড়লো।কাঁদতে, কাঁদতে বলল,
,আমার ভুল হয়েছে রে অর্ণা, আমার জন্য তোর অনেক ক্ষ তি হয়েছে। নিজের ভালবাসার মানুষ কে হারিয়েছিস, কলেজে সবার সামনে অপমানিত হয়েছিস। নিজের পরিবার ছেড়েছিস। আমি জানি,আমি ক্ষমার অযোগ্য। তবুও বলছি, আমায় তুই মাফ করে দে। এই অপরাধের বোঝা নিয়ে, আমি যে বাঁচতে পারবো না। তুই যদি চাস,আমি আদনান কে ও তোকে দিয়ে দেব। তোর হারানো সম্মান ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা করবো। জানি আগের মতো সব হবে না। তবু্ও, আমি আমার পা পের প্রায়শ্চিত করতে চাই!
সবাই যেন আজ শুধু অবাকই হচ্ছে। পর্ণার কথা শুনে আরেক দফা অবাক হলো সবাই।অনল সাহেব জিজ্ঞেস করলো,
,এসব তুই কি বলছিস পর্ণা? আদনান কে দিয়ে দিবি মানে? আর কলেজে কি হয়েছে? আমরা তো কিছুই জানি না!
পর্ণা মাথা নিচু করে, একে,একে সব খুলে বলল।যে অর্ণার সাথে ঠিক কি,কি করেছে পর্ণা। সব শুনে সবাই ছি,ছি করতে লাগলো পর্ণাকে। সবাই পর্ণার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। মানুষ কি করে এতো নিচু মনমানসিকতা হতে পারে, তা পর্ণাকে না দেখলে জানা যেত না।
অর্ণা দু হাতে আগলে ধরলো পর্ণাকে।উপস্থিত সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলল,
,তোমরা কি শুরু করে দিয়েছো?হ্যা মানছি ও ভুল করেছে, কিন্তু এখন তো তার জন্য ক্ষমা চাইছে?
অনল সাহেব মাঝখান থেকে বলে উঠলো,
,চুপ কর অর্ণা।ও যদি শুধু ভুল করতো, তবে আমরা ক্ষমা করে দিতাম।কিন্তু ও যে কাজ করেছে, তা মানুষ মা রা চেয়ে ও বেশি। এমন জ ঘন্য কাজে র ক্ষমা হয় না।তুই একবার ভাবতে পারছিস, ও কতটা নিচে নেমে গিয়েছিল।
ভবিষ্যতে যে করবে না। তারই বা কি গ্যারান্টি আছে?
অর্ণা বেশ সহজ গলায় বলল,
,আচ্ছা ছোট বাবা,ধরে নিলাম পর্ণা যা করেছে, তা অতিমাত্রায় জ ঘন্য কাজ। আচ্ছা ছোট বাবা, পর্ণার থেকে জ ঘন্য কাজ কি পৃথিবীতে কেউ করেনি।নিশ্চয়ই করেছে। কিন্তু সে যদি সিজদায় লুটিয়ে পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই,আল্লাহ কি ক্ষমা করবেন না? অবশ্যই করবেন। যদি সেই বান্দা খাস দিলে তওবা করে, আল্লাহ কি ক্ষমা না করে পারবেন? পারবেন না।তবে আমরা কেন তার বান্দা হয়ে এই কাজটা পারব না।ক্ষমা হচ্ছে মহত্ত্ব গুন,যা সবার মধ্যে থাকে না। আমাদের সবারই উচিৎ, যে ভুল করেছে তাকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দেয়ার। কিন্তু আমরা তা করিনা।সে পা প করেছে, আমরা শুধু এটা নিয়েই পড়ে থাকি। সে যে আবার ভালো হতে পারে, সেই চিন্তা টা করি না। পা প কে ঘৃ না করো পাপিকে না।
আর পর্ণার প্রতি, আমার আর কোনো অভিযোগ নেই। কারণ তার জন্যই,আজ আমি তাহমিদের মতো ভালো মনের মানুষ কে, আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছি। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী। যে তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে, তার জন্য আর ভেবো না। আল্লাহ এর থেকে উত্তম কিছু তোমার জন্য রেখেছেন।
সবাই অর্ণার কথা মন দিয়ে শুনলো।এবং পর্ণাকে ক্ষমা করে দিল।
এতকিছুর মাঝে হঠাৎ করে দরজায় নজর গেল পর্ণার, আদনান তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখাচোখি হতেই আদনান চলে গেল। পর্ণা শুকনো একটা ঢোক গি ল লো। আদনান কি সব শুনে ফেলেছে? তবে কি ভেঙে যাবে তার সংসার?
দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে, যে যার রুমে বসে আছে।একটু পরই বের হবে অর্ণার বিয়ের শপিংয়ের জন্য। অর্ণার বলা কথার পর কেউ আর পর্ণার সাথে খা রা প ব্যবহার করেনি। সবাই স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছে।
ঐ ঘটনার পর আদনানের সাথে আর কথা হয়নি পর্ণার। আসলে কথা বলার সুযোগ পায়নি। কি এক জরুরী কাজ আছে বলে,বাড়ি থেকে তক্ষুনি বেরিয়ে যায়।পর্ণা অনেক বার কল করে। কিন্তু ফোন রিসিভ হয়নি।পর্ণা ভালো করেই চিনে আদনানকে। যখন সে ভালবাসবে কাউকে,তখন উজার করে দিবে সব।আর যখন ঘৃ ণা করবে,তখন হাজার বার ক্ষমা চাইলে ও তা গ্রহনযোগ্য হবে না।এতদিনে এটুকু বুঝতে পেরেছে পর্ণা।
ঘরের ভিতর মূর্তির মতো বসে ছিল পর্ণা। নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।এই মুখ কাউকে আর দেখাতে মন চাই না। অর্ণার কথায় সবাই তার সাথে কথা বলে ঠিকই,কিন্তু মনে, মনে ঘৃণা করে। এটা ঠিকই বুঝতে পারে পর্ণা।ভালবাসার মানুষ গুলো যখন ঘৃণার চোখে দেখে, এর থেকে ম রে যাওয়াও অনেক ভালো হয়।
আচ্ছা আমি কি আর কখনো ভালো হতে পারবে, এই মানুষ গুলোর কাছে? মনে,মনে শুধু এই কথায় আওড়ায় পর্ণা।

(আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমার এই গ্রুপের পাঠক-পাঠিকার,যদি আমার পোস্ট গুলোতে 1kরিয়েক্ট আসে। তবে আমি গল্পটা প্রতিদিন দেব।ইনশাআল্লাহ।)

বিকেলে এসে পর্ণাকে সাথে নিয়ে শপিংয়ে যায় অর্ণা।যদিও পর্ণার যাওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না।তবুও অর্ণার কথা ফেলতে পারেনি।মেয়েটা তার জন্য এতো করে যাচ্ছে। তার ঋণ কখনো শোধ করতে পারবে কিনা কে জানে?
শপিংয়ে এসে ঘুরে, ঘুরে সব দেখছে অর্ণা।তার মনমেজাজ আজ খুব ভালো। গুনগুন করে গানও গাইছে। তাহমিদ কল করেছিল,সে জানালো, সে আসছে এখানে। তারপর থেকেই মনটা আরো ভালো হয়ে গিয়েছে। আজকাল তাহমিদকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগে না তার। নিজেকে দেখে ভারী অবাক হয় সে,একসময় আদনানকে পা গলের মতো ভালবাসতো।অথচ এখন তার ছিটেফোঁটা নেই। কি অদ্ভুত! এসব কথা ভাবতে, ভাবতে হাটছিল অর্ণা, হঠাৎ পেছন থেকে ডাকলো কেউ,,,,,,

চলবে,,