#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৮
গোধূলি রাঙা বিকাল। চারপাশে রোদের নেই বললেই চলে। সাজিয়া সুন্দর করে শাড়ি পরে চিত্রাদের বাড়িতে এসে হাজির। মরিয়ম সুলতানা এবং আরমান সাহেবের সাথে কুশল বিনিময় করে চিত্রার রুমের দিকে পা বাড়ালো সাজিয়া। সে হয়তো জানেও না তার জন্য কি অপেক্ষা করছে সামনে। শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে করতে রুমে প্রবেশ করলো।চোখ তুলে তাকাতেই বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সে কখনোই চিত্রাকে শাড়ি পড়তে দেখেনি। আজই প্রথম দেখছে।
“চিত্রা তুই শাড়ি পরেছিস?”
“হু!কেনো ভালো লাগছে না আমায়?”
“উহু অপূর্ব লাগছে চিত্রা তোকে। এই রূপে আমি প্রথম দেখছি। তোকে যে গত ছয় বছরে একবারও শাড়ি পড়তে দেখেনি। আজ শাড়িতে অন্য রকম লাগছে তোকে।”
“হু চল আমি তৈরি বের হতে হবে তো নাকি?”
সাজিয়া সম্মতি দিলো।দু’জন রুম ত্যাগ করলো। চিত্রাকে দেখে প্রহর বেশ অবাক হলো। বোনকে এই প্রথম রাগান্বিত বা বিরক্ত ছাড়া অন্য রকম লাগছে। এই মেয়েটিকে দেখলে যে কেউ তাকে সহজ সরল মিষ্টি একটা মেয়ে বলবে। তবে নাহ মেয়েটি কঠোর হৃদয়ের। যার ভালোবাসা হৃদয়ের গহীনে সুপ্ত রয়েছে। দু’জন রিকশায় চড়ে বসলো। প্রহর তাকিয়ে দেখছিলো বোনকে। আশে পাশে দেখা মিললো শতশত মানুষের। ভার্সিটির সামনে এসে রিকশা থামতেই নেমে পরলো দু’জন। ভার্সিটির ভেতরে প্রবেশ করলো। শতশত ছাত্র ছাত্রী ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ হাতে হাত রেখে প্রেমালাপ করে চলেছে। সাজিয়া নিশীথকে মিস করছে।
লোকটার সাথে গভীরভাবে মিশে গিয়েছে সে। সাজিয়ার খুব ইচ্ছে করছে হাতে হাত রেখে ঘুরতে তার ব্যক্তিগত পুরুষটির সাথে। সে জানে নিশীথ আসবে। তাই বেশি ভাবলো না। কিছুক্ষণ হেঁটে অনুষ্ঠানের যেখানে হচ্ছে সেখানে আসলো। গান বাজছে জুনিয়ররা নাচছে। চিত্রা বিরক্ত হয়ে সাজিয়াকে নিয়ে ভার্সিটির পেছন দিক টায় আসলো।সাজিয়ার কাঁধে মাথা রেখে বসলো চিত্রা।
“আমায় সত্যি করে বলতো চিত্রা কেনো পরেছিস শাড়ি? আষাঢ় ভাইয়ার জন্য?আষাঢ় ভাইয়াকে দেখানোর জন্য? আষাঢ় ভাইয়কে পছন্দ করিস তুই?”
“নাহ সাজিয়া। তাকে ভালো বলেছি বলে এই নয় যে আমি তাকে ভালোবাসি। আমি ভালোবাসি না তাকে। আমার এই ক’দিন সেই বিশ্রি বাজে দিনগুলোর কথা ভীষণ মনে পরছিলো তার জন্যই আজ শাড়িটা পরে সেগুলো থেকে বের হতে চাইছিলাম। তবে দেখ সেই মানুষটিকে আমার এখনো মনে পরছে। জগঘ্য তম মানুষ সে”
“চিত্রা চিত্রা কুল। সে নেই। কেউ নেই। আমি তুই এখানে। আমি আর তুই ছাড়া কেউ নেই। লোকটা জগঘ্য কিন্তু তুই তো ভালো। আজ শাড়ি পরেছিস তুই এবং এরপর থেকে যেনো তোকে শাড়ি পরতে এমন ভয় না পেতে দেখি। আজ ওগুলো ঝেড়ে ফেল মাথা থেকে।”
“চেষ্টা করবো। দেখি পারি কি না”
সাজিয়া কথা বলল না। ফোনে টুং করে শব্দ আসলো। সাজিয়া ফোন সামনে আনতেই নিশীথ নামক আইডি থেকে মেসেজ এসেছে। “কোথায় তোমরা?”এটুকু দেখে বুঝলো তারা এসে পরেছে। সাজিয়া সাবধানে টাইপ করলো ভার্সিটির পেছনে। এরপর ফোন রেখে দিলো। চিত্রা সামনের লেকের পানির দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে বোধ হয় কিছু। চিত্রা হুট করে বলে উঠলো,,,
“সাজিয়া আমার সাথেই কি এমন হওয়ার প্রয়োজন ছিলো। তার কি ক্ষতি আমি করেছিলাম বল তো। শুধু ভালোই তো বেসেছিলাম।”
“চিত্রা সে ছিলো তোর আসা ভুল মানুষ। তুই ভুল মানুষটিকে ভালোবেসেছিলি। তবে আমার কি মনে হয় জানিস তুই তাকে ভালোবাসিস নি আবেগ ছিলো তোর”
চিত্রা শুনলো কি শুনলো না বোঝা গেলো না। সে উঠে লেকের কিনারা ঘেষে দাঁড়িয়ে পরলো। সাজিয়া পেছন ঘুরতেই দেখতে পেলো তার সুদর্শন স্বামীকে। সাথে আষাঢ় ও আছে। সে জন্য বেশি সময় তাকালো না সে। নিশীথ আর আষাঢ় এগিয়ে আসলো দু’জন। চিত্রা পেছনে ফিরে দু’জনকে দেখে বেশ চমকালো।নিশীথ এসে চিত্রাকে উদ্দেশ্য করে শুধালো,,,
“কেমন আছেন চিত্রা?অনেক দিন পর দেখা হলো”
“জি ভালো আছি নিশীথ সাহেব”
আষাঢ় মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রিয় নারীর পানে। শাড়িতেই বাঙালি নারী। এরূপে দেখে আষাঢ়ের হৃদয় থমকেছে। আষাঢ়ের বড্ড ইচ্ছে করছে তার প্রিয় নারীকে নিজের বক্ষ পিঞ্জিরায় আগলে নিতে। যদিও সে অধিকার তার নেই। তাই দূর থেকে সে না হয় দেখলো চিত্রা নামক রমনীকে। ছুঁয়ে না হয় দেখবে অধিকার হওয়ার পর। অধিকার! আদেও জিনিসটা আষাঢ় পাবে কি না সন্দেহ। তবুও সে আশা রেখেছে। চিত্রা তার হবে। একান্তই তার। চারজন টুকটাক কথা বললো। তবে আষাঢ়ের পানে চিত্রা এক পলকই তাকিয়ে ছিলো। না হয় দেখতে পেতো আষাঢ়ের মুগ্ধ হয়ে তার পানে তাকিয়ে থাকা।
–
অরিহা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে ছাদের এক কোনে। বিকাল বেলাতে সবাই কত সুন্দর ঘুরছে। আর তার সাথে কথা বলারও কেউ নেই।একা একা ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। ভাইয়াটাও বের হয়েছে তার। নাজিফা থাকলে বেশ জমতো ব্যাপারটা। এখানে কোনো বান্ধবী ও নেই তার। তার জন্য একা দাঁড়িয়ে নিচে প্রহরদের ক্রিকেট খেলা দেখছে। যদিও সে ক্রিকেট খেলা তেমন বোঝে না। মাঝে মাঝে দেখে আষাঢ় ড্রয়িংরুমে বসে খেলা দেখে। সে নিজেও বসে বসে দেখে। বিশ্বকাপ খেলা চলছে। বাংলাদেশর অবস্থা ভীষণ শোচনীয়। তাই এখন আর দেখে নাহ।
আজ প্রহর কোচিং এ যায়নি।তাই তো বিকাল হতে না হতেই খেলা শুরু করেছে। প্রহর ব্যাট করছিলো, ছয় মারতেই বল গেলো অরিহাদের ছাদে। অরিহা অন্য পাশে দাঁড়িয়ে আছে বলে খেয়াল করেনি। সে ছাদের উদ্দেশ্যে দৌড় লাগালো।ছাদে এসে অরিহাকে মন খারাপ করে থাকতে দেখে প্রহরের মাথায় সয়তানি বুদ্ধি আসলো। সে পা টিপে টিপে অরিহার পিছনে এসে দাঁড়ালো।
“ভাউউউউ”
অরিহা লাফিয়ে দূরে সরে আসলো।সে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে। বুকে হাত দিয়ে হাঁপাচ্ছে সে। প্রহরকে হাসতে দেখে রাগি চোখে তাকালো প্রহরের দিকে।প্রহর হাসতে হাসতে বলল,,,
“তুমি আসলেই প্রচন্ড ভিতু অরিও বিস্কুট। এতো ভয় কেনো পাও তুমি বলো তো। কীভাবে লাফিয়ে উঠেছিলে!”
আবারও হাসতে থাকে প্রহর। অরিহা এসে প্রহরের হাঁটু বরাবর লাথি মারে। প্রহর ব্যাথায় বসে পরে। অরিহা এই সুযোগে এসে ওর চুল টেনে বলে,,,
“আমি ভিতু হলেও তোমাকে শায়েস্তা করার ক্ষমতা রাখি বুঝেছো খাম্বা”
“তোমাকে! তোমাকে তো আমি ছাড়বো না। অরিও বিস্কুটের বাচ্চা একবার পাই তোমাকে। আমার চুল। আমার এতো সাধের সুন্দর চুলগুলো এলোমেলো করে দিলে?উফ বজ্জাত মেয়ে”
“পারলে ধরে দেখাও না”
দু’জন ছুটে বেরাচ্ছে ছাদ জুড়ে। অরিহা শেষে না পেরে দাঁড়িয়ে পরে। অনেক সময় দৌড়িয়েছে সে। পা ব্যাথা করছে। প্রহর এসে অরিহার চুল টেনে বল নিয়ে দৌড়ে নিচে নেমে যায়। অরিহা মাথায় হাত দিয়ে রাগে ফুঁসছে। ছেলেটা তার চুল টেনে গেলো। এর কিছু তো একটা করবেই সে। বেয়াদব খাম্বা কোথাকার। তখন কেউ একজন এসে পেছন থেকে অরিহাকে জড়িয়ে ধরে। অরিহা ভয় পেয়ে ছাড়িয়ে পেছন ঘুরে তাকাতেই দেখে নাজিফা। নাজিফাকে দেখে ভীষণ খুশি হয় অরিহা। খুশিতে জড়িয়ে ধরে।
“নাজিফা তুই এসেছিস?আন্টি আসতে দিলো। আমি তো ভেবেছিলাম আন্টি তোকে আসতে দিবে না।”
“শান্ত হ জানু। তুই অসুস্থ হয়ে পরেছিলি আর আমি তোকে দেখতে না এসে পারি। আম্মু ও এসেছে।আন্টির সাথে গল্প করছে”
“কিন্তু বাড়ি চিনলি কীভাবে?”
“প্রহরদের বাড়ি তো চিনি তুই বলেছিলি পাশের বাড়িটা তোদের তাই চলে আসলাম”
–
“তা আপা দিন কাল কেমন চলছে?”
বেলী বেগম মুচকি হেসে বললেন,,,“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপা। আপনাদের?”
“জি ভালো । তা অরিহার নাকি একটা বড় ভাই আছে। নাজিফা বলল”
বেলী বেগম নাজিফার আম্মু নূরি বেগমের কথার জবাবে বলল,,,“জি আপা আমার একটাই ছেলে। বেশ ভালো চাকরিও করছে।যদিও বিয়ের বয়স হয়েছে তবে সে এখন এগুলো নিয়ে ভাবছে না”
“আপা আমার ভাগ্নি আছে বেশ ভালো। আপনি চাইলে আমি কথা বলে দেখতে পারি”
বেলী বেগম বেশ বিরক্ত হলেন মহিলার কথায়। হুট করে এসে যেচে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে এটা অবশ্যই বিরক্তিকর বিষয়। বেলী বেগম জোর পূর্বক হেসে বলেন,,
“না আপা এসবের প্রয়োজন নেই। আমার ছেলে একটা মেয়েকে পছন্দ করে । মেয়েটাকে আমারও ভীষণ ভালো লাগে। আমার ছেলে তাকেই বিয়ে করবে। আর আমি আমার ছেলের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। সে যাকে পছন্দ করবে তাকেই ঘরের বউ করবো।মেয়েটিকে যেহেতু আমাদের সবার পছন্দ তাই কিছুদিন পর বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো আমি”
#চলবে~