#আসক্তি
পর্বঃ৪৫
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
শান-পাখির খুঁনসুটি মাখা ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে কেটে যায় আরো চারটি মাস।নিজের মাঝে বেড়ে ওঠা সত্ত্বাও বেড়ে উঠছে সময়ের তালে তালে।সাথে সাথে বেড়ে চলেছে অজানা ভয়।সে ভয় মূহূর্তে মূহূর্তে জানান দেয় মাতৃত্ব সত্যিই কতোটা কঠিন জিনিস!আবার এই মাতৃত্ব ছাড়াও নারী জীবন অসম্পূর্ণ।ভয়, ভালোলাগার সংমিশ্রনে কেঁটে যায় দিনগুলো।
শান এখন বেশিরভাগ সময় পাখিকে দেয়।পাখির সাথে কারণে অকারণে গল্প করা,খুঁনসুটি করা এসবই এখন তার তালিকার প্রধান কাজ।মাঝে মাঝে পাখিকে খেপাতেও তার মন্দ লাগে না।এই তো সেদিন শান অফিসে যাবার জন্যে রেডি হচ্ছে।হঠাৎ পাখির খেয়াল হয় শান সামনে দিয়ে প্রেগন্যান্ট মহিলাদের মতো হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে।ভ্রুকুচকে অবাক হয় পাখি।বুঝতে পারে তাকেই কপি করছে শান।
“ফাজিল একটা”-বলতে বলতেই চলে যেতেই শান ওর হাত ধরে ফেলে।পাখির দুই কাঁধে হাত রেখে আলতো করে বলে,”আচ্ছা পাখি, তোমার কি মনে হয় না স্বাভাবিকের থেকেও তোমার পেট কয়েকগুন বেশি বড়!”
চোখ দিয়ে ইশারা করে।
পাখি ঠিকই বোকার মতে নিজের দিকে দেখে পেটের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ নির্ণয় করে ঠোঁট উল্টে বলে,”সে রকম আমারও তো লাগে”
“আই থিংক, এক ডজন”-ভ্রু নাচিয়ে বলে শান অন্যদিকে চলে যায়।
“কিহহ”-অবাক হয়ে পাখি বলে।
শান হেসে হেসে কুটিকুটি হয় পাখির বোকামি দেখে।ঠোঁট চিপে হাসিটা সংবরনের চেষ্টা করে এরপর কপোট রাগ দেখিয়ে বলে,”এতো চিন্তার কি আছে বুঝি না।এক ডজন হলেই বা কি!আল্লাহ্ কি কম দিয়েছে আমায়!দরকার পরলে ফুটবল টিম বানাবো।এ্যানি প্রবলেম?”
পাখি রাগিচোখে চেয়ে থাকে শানের দিকে।শান বুঝতে পারে হাওয়া গরম;কেটে পরাই শ্রেয়।দরজার দিকে এগিয়ে আবারও পিছনে দু পা পিছিয়ে আসে।পাখির দুহাত ধরে বিছানায় বসিয়ে বলে,”কোন প্রকারের দূঃচিন্তা করবা না।আল্লাহর উপর ভরসা করো।টাইমলি খাবার খাবা।তোমার শরীর অনেক দূর্বল পাখি।এভাবে না খেলে সমস্যা হবে তো!”
পাখি কিছু না বলে অপরাধীর ন্যায় চুপসে বসে থাকে। শান পাখির গালে হাত রেখে বলে,”যাইই প্রয়োজন পরুক আমায় কল করবে। কেমন!”
হ্যা সূচক ইশারায় পাখি মাথা দুলিয়ে সম্মতি দেয়
পাখিকে বাসায় রেখে আসতে তার মন কিছুতেই সায় দেয় না কিন্তু কিছুই করার নেই দায়িত্বে আবদ্ধ সে।
🌸🌸
পাপের শাস্তি অবশ্যই সবাই পায়।কিছুদিন আগে কিংবা পরে।নীরাও শাস্তি পেয়েছে।ফয়েজ সামিহাকে ছেড়ে দিয়েছে দুই মাস হলো।মাদকদ্রব্যের ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত থাকার ফলে নীরার ১৫ বছরের কারাদন্ড হয়।নীরার কেইসের ইনভেস্টিগেশনে সামিহার নামও উঠে আসে।অপরাধের পরিমান অনুসারে সামিহার ৫ বছরের কারাদন্ড মঞ্জুর করে আদালত।আদালতে নিজের পাপের শাস্তির কথা শুনে নীরা স্তম্ভিত হয়ে যায়।মুখ দিয়ে কোন শব্দটি বের করতে পারে নি।সামিহা কান্নাকাটি করেছে পাগলের মতো।বার বার বাবা মায়ের কাছে সাহায্য চেয়েছে ;পায় নি।নিরুপায় বাবা মেয়েদেরকে জেলের কয়েদি রূপে দেখে নিজেকে আর সহ্য করতে পারে নি।বাড়ি ফিরে যায়।মেনে নেয় পাপের শাস্তি সবারই প্রাপ্য।
🌸🌸
এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো একটি মাস।নয় মাস চলছে প্রেগন্যান্সির।এখন পুরোদমে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী মনে হয় পাখিকে।চুলগুলো অযত্নে অযত্নে কেমন গ্লেইজ হারাচ্ছে।কোন কিছুই আর আগের মতো মন দিয়ে করতে পারে না ।মনোযোগ শুধু আগত সন্তানের দিকে।মাস পরার সাথে সাথেই ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়েছে পাখি। কারণ কাঙ্খিত তারিখ আসতে বাকি আর মাত্র কয়েকটা দিন।
এদিকে দিনের পর দিন বাচ্চার জন্যে শানের পাগলামি গুলো বেড়েই চলেছে।সাথে পাখির যত্ন নেয়া গুলোও।দিনদিন পাখিরও যেন উত্তেজনার শেষ থাকে না। বার বার আয়নায় ঘুরে ঘুরে দেখা,হাত বুলিয়ে দেয়া সবই করছে সে।আবার দিন যতো গড়াচ্ছে কষ্টের কথা ভাবতেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসে পাখির।
শানের কড়া নির্দেশ সারাদিনে বার বার পানি খেতে হবে।মুখ নাড়াতে হবে সারাদিন।কোন প্রকার দূঃচিন্তার ভার যেন পাখিকে স্পর্শ না করে সে জন্যে কড়া আদেশ ছিলো সবার উপর।দিন যতো যায় সবার আগ্রহের মাত্রা বেড়ে যায়।দিন গোনা শুরু হয় কবে আসবে নতুন অতিথি।শর্মিলা বেগমের জান যেন ওষ্ঠাগত। আর তর সইছে না। কবে আসবে সে দিনটা সেটারই অপেক্ষা তার।
…..
সকাল বেলা খেয়ে দেয়ে পাখি বেলকোনিতে বসে আছে।পেটে ভীষণ চুলকাচ্ছে।চিরুনি দিয়ে খসখস করে চুলকাতে ইচ্ছে করছে তার।শান দেখে হেসে ফেলে আর পাখির হাত ধরে ফেলে।মেঝেতে বসে পেটে আলতো হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,”তোমার ছোট্ট শানের চুল গজিয়েছি না?সে তো আর ভিতরে থাকতে চাইছে না। আর তাই সেগুলো দিয়েই তোমায় বিরক্ত করছে।”
শানের কথায় অজানা ভালো লাগা এসে চেপে ধরে পাখিকে।মুচকি হেসে উঠে যেতেই শান হাত টা ধরে ফেলে পিছন থেকে জড়িয়ে নেয় ।ঘাড়ে নাক মুখ ডুবিয়ে ঘনঘন শ্বাস নিতে থাকে।
পাখি শানকে ছাড়িয়ে বলে,”সরম নাই?
শান দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে,”উহু একদমই নাই”
হেসে ফেলে পাখি।
হঠাৎ করে পাখি চাপা স্বরে, “আউচচ” বলে ওঠে
“কি হলো “-চমকে উঠে প্রশ্ন করে শান।
পাখি শানের হাত টা পেটের উপর রেখে বাবুর কিক দেয়া পা টা স্পর্শ করতে দেয়।এটা আজ প্রথম না। এর আগেও কয়েকবার বাবু পেটের মধ্যে কিক দিয়েছিলো তবে শানকে কখনো সেভাবে দেখানোর সুযোগ হয়নি।
শান খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়।বুঝতে পারে না কি করবে সে।মুখে হাত দিয়ে হাঁটু গেড়ে নিচে বসে।চামড়া ভেদ করে বাহিরে আসতে চাওয়া পা টা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেয় শান।একজন ছেলের জীবনে এ যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মূহূর্ত গুলোর মাঝে প্রথম।
“আমার অংশ”-মুখে হাত রেখেই অস্ফুট স্বরে বলে শান। পাখি আবার চিল্লিয়ে ওঠে।এবার শানের হাত শক্ত করে চেপে ধরে ব্যথায় চোখ মুখ কুচকে ফেলে।শান হন্তদন্ত হয়ে বলে,”ব্যথা লাগছে?”
পাখি ব্যথা চেপে মিথ্যে বলে,”নাহহ”
“এভাবে তোমার মাকে কষ্ট দিবে না, কেমন!”
এরপর মাথা তুলে পাখির দিকে চেয়ে আবার বলে,”তোমার মা আমার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছে তবুও কোন শাস্তি আমি তাকে দিই নি।কারণ তাকে শাস্তি দেয়ার অধিকার আমি কাউকেই দিই নি”
বলার পরে, আলতো ঠোঁটে চুমু দেয় স্পষ্ট সেই পায়ে।
পাখি ছলছল চোখে চেয়ে বলে,”আমি জানি আমি কতো বড় অন্যায় করেছি।তার রেশ কি এখনো চালু রাখবেন?”
শান উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে,”পাখি, ঘা শুকালেও কিছু কিছু ঘায়ের দাগ থেকেই যায়।দাগ টার গভীরতা যদি বেশি হয়”
বিপরীত পাশে মুখ করে রাখে শান।কন্ঠে গাম্ভীর্যতা অক্ষুণ্ণ রেখে বলে,”আমার অভাবটা তুমি সেইদিন বুঝবে যেইদিন আমি আর তোমার কাছে থাকব না।”
একদৃষ্টে চেয়েই দু গন্ড বেয়ে জল গড়িয়ে পরে পাখির।নিঃশব্দে কেঁদে ফেলে শানের দৃষ্টির অগোচরে।
“আমি জানি, এই পাপের বোঝা আমায় বয়ে বেড়াতে হবে।তাই তো নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম।”-বলতে বলতে পাখি বসে পরে বিছানায়।
শান এগিয়ে এসে পাশে বসে।পাখির মুখটা দুহাতে তুলে শান্ত স্বরে বলে,”বড়ই অন্যায় করতে চলেছিলে সেবার।জীবনে এমন অনেক উত্থান-পতন, টানাপোড়েন আসে পাখি ইভেন সামনে আরো আসবে।তাই বলে কি নিজের জীবন দিয়ে সেটার ক্ষতি পূরন করা যাবে?উহু একদমই না।বরং শৌর্যের সাথে বেঁচে থেকে সে অবস্থার মোকাবিলা করতে হবে।যেমন আমি চাইলেও তোমার করা অন্যায়টা ভুলতে পারছি না আবার তোমাকে ছেড়েও থাকতে পারছি না।তাই এখন তোমার উচিত আমার মন থেকে তোমার দেয়া ঘাঁ টা শুকিযে ফেলা ইভেন দাঁগ টাও মুছিয়ে দেয়া।এখন সেটা তুমি কিভাবে দেবে সেটা তুমি ভালো জানো!আর এর ফল টা খুবই মিষ্টি হবে”
শান উঠে দাঁড়িয়ে সাইড টেবিল থেকে ফলের প্লেটটা পাখির দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলে,”এই যেমন ধরো, তুমি কয়েকমাস আগে আমার সাথে যা করেছো তা নিছকই তোমার পাগলামি ছাড়া কিছুই না।তুমি জানো কতো টা কষ্ট পেয়েছিলাম আমি?
বাগান বাড়িতে থেকেছি তিনদিন। বাড়ির কারোর সাথে কোন যোগাযোগ করি নি”
“উুহু খেতে হবে”-পাখির মুখে আপেলের টুকরোটা তুলে দিতে দিতে বলে শান।পাখির একদমই খেতে ইচ্ছে করছে না।চোখ ভরে আসছে নিজের করা বোকামির জন্যে।
“তুমি এমন একজন মানুষের কথা বিলিভ করেছো, যার ব্যপারে অলরেডি আমি সাবধান করে দিয়েছিলাম তোমায়। তবুও কারো কথা না শুনে…..
বাদ দাও।আমি চাইলেই তোমায় তখনিই ছেড়ে দিতে পারতাম।তাহলে কি এতো সুখ পেতাম!সত্যি কথা কি জানো সাময়িক একটু কষ্ট আমাদের ভবিষ্যতের সুখের চাবিকাঠি হয়ে ধরা দেয়।ঐ সময়ে কোন ডিসিশান নেয়ার পূর্বে ধৈর্য ধারন করাই শ্রেয়”
🔴পাখি অসহায় মুখ করে বলে,”আপনি জানেন, ঐ সময় নিঝুমের কয়েকজন রিডার্স আমায় কতো বকেছিলো!”
শান শান্ত ভঙ্গিতে চেয়ে থাকে পাখির দিকে।পাখি পরপর কয়েকবার নাকে ছিঁচকা শব্দ করে বলে,”আমি কালো,অসুন্দর,আনকালচার্ড,আনসোস্যাল, গাঁইয়া,আপনার সাথে নাকি আমার যায়ই না।আমি কোনদিক থেকেই নাকি আপনার যোগ্য নই।যোগ্যতার চেয়ে বেশি পাইলে নাকি মানুষ আমার মতো করে।আপনাকে ডিজার্ভ করি না।আরো কতো কথা বলেছিলো।কেউ কেউ তো এমনও বলেছিলো আমার নাকি মরে যাওয়াই উচিত।”
শান চোখ বন্ধ করে ফেলে মূহূর্তেই।ঠোঁট দুটো গোলাকৃতি করে পর পর কতোগুলো দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শান বলে,”তাই বলে তুমি ওমন একটা কাজ করতে যাবে”
“ছোটবেলা থেকে এসব শুনতে শুনতে বিশ্বাস করুন আমার আর সহ্য হয় না।আর সত্যিই তো আমি যে অন্যায় করেছি তার জন্যে ওটাই বেটার ছিলো”-অভিমানী হয়ে দুহাতের উল্টোপিঠে চোখের পানি মুছে বলে পাখি।
শান হাত সরিয়ে ওর চোখদুটো ভালো করে মুছিয়ে বলে,”যারা যারা এসব বলে,তারা বাস্তবেও এভাবেই মানুষকে হিউমিলিয়েট করতে রেডি থাকে।তাদের কাছে কি গল্প, কি বাস্তবতা দুটোই সমান।আমি বুঝি না, একটা মানুষের দোষ ত্রুটি থাকতেই পারে। তাই বলে সে দোষের ভাগিদার তার গায়ের রং কে কেন হতে হবে!আরে ওরা তো বাহিরের লোক, আউটসাইডার’স।আর তোমার প্রবলেম টা কি জানো? তুমি তাদের কথাকেই বেশি গুরুত্ব দাও।সামিহা ভাবির বেলায়ও যেমন করেছিলে।
তাদেরকে দেখিয়ে দাও তুমি কতো সুখী!তারা জ্বলে পুড়ে মরুক না!”
শান পাখিকে বুকে জড়িয়ে নিতে নিতে বলে,”তোমার যোগ্যতার মাপকাঠি তুমি নিজেই।একটা মানুষকে সুন্দর হতে হলে তার গায়ের ধবধবে সাদা রঙ্গের দরকার পড়ে না।তার আচরন, ভালো মন মানসিকতা,কথা বলার ধরন,সবাইকে আপন করার ক্ষমতা এসবই মূখ্য ব্যপার।কারণ যুবক চামড়া টা একদিন ঠিকই বুড়িয়ে যাবে অবশিষ্ট হিসেবে থাকবে শেষ সময়ের মানুষটার সাধারন অবয়ব টা;যুবক বয়সে করা ব্যবহার গুলো।নিঝুমের যে গুটি কয়েক রিডার্স তোমায় অসুন্দর বলে খোঁটা দিয়েছে, তাদের বলে দিও তোমার শান সম্পূর্ণ তুমিতেই মুগ্ধ,সম্পূর্ণ তুমিতেই আবদ্ধ।তোমায় নিয়ে আমার যদি কোন প্রবলেম না থাকে তবে আই ডোন্ট থিংক সো যে ওদের থাকা উচিত।ভুল মানুষেরই হয়।তাই বলে তাকে হিউমিলিয়েট করা মোটেই উচিত নয়।আমি তোমায় জানি, তোমায় চিনি বলেই তোমার বিপরীতে তোমার সাথে মিসবিহ্যাভ করিনি।আমি জানতাম তোমার ভুল ভেঙ্গে যাবে।আর সেদিন সবথেকে অনুতপ্ত হবে তুমি”
পাখির কপালে গাঢ় চুমু এঁকে শান বলে,”তোমার তুমিতেই আমার এই আমি কানায় কানায় পরিপূর্ণ।সেখানে কোন রম্ভ-রূপসির স্থান নেই।তোমায় খুব ভালোবাসি পাখি”
পাখি শানের টি-শার্টের কলার টা হাতে চেপে বুকে মুখ গুঁজে বলে,”আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি সার্জন সাহেব”
“উহু,তুমি।”
“হুমমমম??”
“বলো তোমাকে ”
পাখি মাথাটা উঠিয়ে বলে, “কি বলেন বুঝিনা তো!”
“বলো শান তোমায় অনেক ভালোবাসি,হুমম হুমম রেডি।বলো”
পাখি লজ্জায় পরে যায় ভীষণ ভাবে।কিভাবে কি বলবে বুঝতে পারে না
“এভাবে হুট করে?”
“তো?বিয়েরই বছর পার হইছে কতো আগে।অথচ এখন আপনি আজ্ঞে,সার্জন সাহেব,হার্ট সার্জন ব্লা ব্লা ব্লা। এসব কি? ”
পাখি শানের কথার ধরন শুনে ঠোঁট টিপে হেসে দেয়।
শান কোমড়ে দুহাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকে।এক হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলে,”আরে আমারও তো ইচ্ছে হয় বউয়ের মুখে তুমি ডাক শোনার।নিজের নাম টা অহরহ শোনার, নাকি!বাচ্চার বাবা হতে চললাম তবুও ঐসব নামে ডাকো।বাচ্চাও সে নামে ডাকবে, আমি শিওর”
পাখি উঠে দাঁড়িয়ে শানের বুকে মাথা রেখে শানের দুহাত দিয়ে নিজেকে জড়িয়ে নিতে নিতে বলে,”এই মিছে রাগগুলো না করলেই কি নয়!আমি তো আমার সার্জন সাহেবকে অনেক ভালোবাসি”
“ঐ দেখো আবারও”
“আমি তোমাকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি শান”-অট্টোহাসিতে ফেটে পরে পাখি।
“এইবার ঠিক আছে”-বলেই পাখিকে বুকে জড়িয়ে নেয় শান
শান পাখির মাথা বরাবর চুমু এঁকে বলে,”নিঝুমের মেয়ে রিডাররা খুব হিংসুটে বুঝলে।সবাই শুধু আমায় চায়।শুনলাম কমেন্ট বক্সে বলে বলে, এখন নাকি ওর ইনবক্সেও বলে আপু শানকে চাই।তাই তোমায় হিংসে করে।”
রাগে ফুসতে থাকে পাখি। রাগি চোখে বলে,”ঐগুলারে খুন কইরা ফালাইমু না?চোখ উপড়াইলামু,কইলজ্জা কাইট্টালামু। মনে রাখে যেন সবাই,হুহহহ!”
“এই মেয়েরা নিজ নিজ দায়িত্ব সিরিয়াল ভেঙ্গে চলে যাও।হাজার বার বলেছিলাম আই’ম বুক্ড।”
শানের কথায় হেসে ফেলে দুজনই।হাসির এক পর্যায়ে শান বুঝতে পারে পাখির সমস্যা হচ্ছে।
“আহঃ”-শব্দ করে পাখি শানের টি-শার্ট খামচে ধরে চোখ মুখ কুচকে ফেলে।
হন্তদন্ত হয়ে শান বলে “কি হলো?
‘ব্যথা, ব্যথা করছে।চিনচিনে ব্যথা”-ব্যথা সহ্য করার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে বলছে পাখি।
চলবে……