#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_১৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
বান্দরবানের এক নামকরা ক্যাফে ” পিংক মাসালা “। ঐশী সেই ক্যাফের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সাইড ব্যাগ আকড়ে ধরে কপালের মুক্ত ঘামটুকু মুছে নিলো। বুকের ভিতর জানা শঙ্কায় টিপটপ করছে। কিন্তু ভয় পেলে তো চলবে না। তাই ঐশী দোয়া দুরুদ পড়ে ক্যাফের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো। চারিদিকে শুধু কাপল দেখা যাচ্ছে। একপাশে একটা সেলফি স্টেজও আছে। ঐশী আশপাশে একবার চোখ বুলালো। যে যার মতো ব্যাস্ত। ঐশী নিজের ধুকপুক মন সামলে কাউন্টারের দিকে গেল। কাউন্টারে একজন তরুণ ছেলে টাকা সামলাচ্ছে। ঐশী তার কাছে গিয়ে বলল,
” এক্সকিউজ মি। ”
ছেলেটার কপালে ভাজ পরলো। মুখ থেকে থুথু নিয়ে টাকা গুনতে গুনতে বললো,
” জায়গায় গিয়ে বসে খাবার অর্ডার করুন। চলে আসবে। ”
ঐশী মাথা নিচু করে লম্বা উষ্ণ নিঃশ্বাস নিল। মনের ভিতরের কথাগুলো ক্রমান্বয়ে সাজিয়ে কথার পসরা বানালো। তারপর সাহস জুটিয়ে বললো,
” ক্যান আই গেট এ পার্ট টাইম জব ? ”
ছেলেটার হাত থেমে গেলো। টাকা গুনা বাদ দিয়ে ঐশীর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কন্ঠে তুচ্ছতা ঢেলে বললো,
” মেয়ে মানুষ , এইখানে পার্ট টাইম জব দিয়ে কি করবেন ? চল ফুটেন। দয়া ভান্ডার খোলা হয়নি এখানে। যান যান। ”
ঐশী ছেলেটার কঠিন কথা শুনে তীক্ষ্ম চোখে তাকালো। রাগ লাগছে ওর। এভাবে অপমান করলো কেনো ? কিন্তু এখন তো রাগলে চলবে না। তাই ঐশী ভ্রু সোজা করে বললো,
” প্লিজ প্লিজ। আমার টাকার খুব দরকার। একটা চাকরি হলেই হবে। বেশি বেতন দিতে হবে না। প্লিজ। প্লিজ। একটু ভেবে দেখেন। আমার চাকরিটা খুব দরকার। আমি…”
ছেলেটা ঐশীর কথার পিঠে রাগী চোখে তাকালো ওর দিকে। মুখ থেকে গালি বের করতে করতে থেমে গেলো। নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
” আপনি যাবেন ? চাকরি নেই কতবার বলবো। যান এখন। আপনি যাবেন নাকি আমি…”
” আরে রাতুল , একটা চাকরিই তো। দিয়ে দে না এই সুন্দরীকে । ”
একটা মাতাল কণ্ঠ শুনে ঐশী পিছন ফিরল। হুম। যাকে ভেবেছে সেই। এবার তো কাজ করা আরো সহজ হবে। ঐশী কাজ শুরু করে দিলো। চোখে রাজ্যের কৃতজ্ঞতা নিয়ে তাকালো তন্ময়ের দিকে। আদুরে গলায় বলল,
” স্যার। প্লিজ একটু বুঝান না উনাকে। চাকরিটা আমার খুব দরকার। প্লিজ স্যার। ”
তন্ময় মাদক চোখে আগাগোড়া নিরক্ষন করলো ঐশীকে। ঐশীর অসস্তি লাগছে। তবে বাইরে বাইরে ও নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তন্ময় ড্রিঙ্কসের বোতল নিয়ে হেলতে হেলতে এগিয়ে এলো ঐশীর ধারে। ঐশীর দিকে হেলেদুলে তাকিয়ে ছেলেটাকে বললো,
” রাতুল , এই সুন্দরীকে একটা চাকরি দিয়ে দে তো । বেতন ধর দশ হাজার টাকা। ”
ঐশী লাজুক হাসার ভান করে মাথা নিচু করল। রাতুল যেনো আকাশ থেকে পড়লো। ভ্রু উচু করে বলল,
” এই ক্যাফের কোনো চাকরির বেতন তো দশ হাজার টাকা না ভাই। এত টাকা একা এই মেয়ে নিবে ? ”
তন্ময় বিরক্ত হলো। বোতল থেকে এক ঢোক পানীয় পান করতে করতে রাতুলের দিকে তাকালো। বোতলের সিপ থেকে মুখ তুলে দাঁত চেপে বললো,
” এই ক্যাফের মালিক তুই না আমি ? এখন তুই ডিসাইড করবি আমি কাকে কত টাকা দিবো ? হ্যা ? ”
রাতুল তন্ময়ের কথা শুনে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে গেলো। সঙ্গেসঙ্গে মাথা নিচু করে অপরাধের সুরে বললো,
” ভাই , সরি ভাই। আর হবে না । আমি এক্ষুনি ওকে চাকরি দিয়ে দিচ্ছি। ”
রাতুল ড্রয়ার হাতড়ে পেপার বের করতে মশগুল হলো।
ঐশী সেদিকে একবার তাকিয়ে আবারও তন্ময়ের দিকে তাকালো। লাজুক হেসে বললো,
” ধন্যবাদ স্যার। আজ আপনি না থাকলে এতকিছু পসিবল হতো না। এগেইন থেন্কস। ”
তন্ময় মাথা চুলকালো। ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি টেনে বললো,
” প্লিজ ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবেন না। অসহায় মেয়েদের আব আমার মতে মানুষদের হেল্প করাই আমার লক্ষ। আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি তাছাড়া আর কিছু নয়। ”
ঐশী মাথা নেড়ে লাজুক হাসলো। ইতিমধ্যে রাতুল ছেলে এসে ঐশীর পাশে দাঁড়ালো। ঐশীর দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বললো,
” এই কাগজে সকল রুলস আছে। কাল থেকে চাকরি শুরু করবেন। সময় বিকেল তিনটা থেকে পাঁচটা। ”
ঐশী কাগজটা নিয়ে মাথা নাড়ল। তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তন্ময়ের চোখে নজর যায়। যেই চোখ দুটি ঐশীর লতানো দেহে ঘূর্ণায়মান। ঐশী সেই নজর দেখে খুব বেশি অস্বস্থিতে পড়ে যায়। কিন্তু ঠোঁটে জোরপূর্বক হাসি টেনে বললো,
” স্যার ,,, স্যার। ”
তন্ময় ঐশীর ডাক শুনে স্তম্ভিত ফিরে পেলো। কিছুটা থতমত খেয়ে ঐশীর শরীর থেকে নজর সরিয়ে ওর চোখের দিকে তাকাল। অপ্রস্তুত কণ্ঠে বললো,
” হুম। কিছু বলেছিলে ? ”
” জ্বি স্যার। আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো আমি জানিনা। আজ তাহলে আসি। কাল দেখা হবে। ”
ঐশী চলে যেতে উদ্যত হলে তন্ময় পিছন থেকে ডাকে,
” এই মেয়ে। ”
ঐশী পিছন ফিরে। তন্ময় লাজুক হেসে বলে,
” তোমার নাম কি সেটাই তো বললে না.। ”
ঐশী ভাবাভাবি ছাড়াই বললো,
” ভূমি। ভূমি আমার নাম। ”
” ওয়াও। সাচ এ কিউট নেম। একদম তোমার মত। ”
ঐশী ভিতরে ভিতর দাত কিড়মিড় করলো। তবে বাইরে সৌজন্যমূলক হাসি হেসে বললো,
” থ্যাংক ইউ স্যার। এবার আসি। ”
তন্ময় মাদক চোখে তাকিয়ে কাউন্টার টেবিলে হেলান দিল। বললো,
” আসো তবে। কাল দেখা হচ্ছে কিন্তু। ”
ঐশী মুচকি হেসে ক্যাফে থেকে বেরিয়ে গেল। আর এদিকে তন্ময়ের রাতের ঘুম হারাম হলো ঐশীর চিন্তায়।মেয়ে মানুষ!
__________________________
শুটিং শেষ করে জুভান শাওয়ার নিচ্ছিল। আর মাত্র সাত দিন আছে সে এই জায়গায়। জুভান শাওয়ার নিয়ে গায়ে টাওয়েল জড়িয়ে বের হলো। ফর্সা উদোম বুক থেকে টিপটপ পানি পড়ছে। জুভান হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে এগিয়ে গেলো সোফার দিকে। সোফা থেকে একটা সাদা রঙের টিশার্ট গায়ে দিল। তার উপর নেভি ব্লু শার্ট পড়ে বোতাম খোলা রাখলো। সেই সাথে জিন্স। জুভান কাপড় পড়ে আয়নার সামনে দাড়ালো। চুল সেট করে শরীরে পারফিউম দিলো ঘনঘন। রেডি হওয়া শেষ হলে জুভান সোফায় বসে ফোন দিল ঐশীকে। কিন্তু বন্ধ দেখাচ্ছে ফোন। জুভানের রাগ লাগলো। বেশ কবার চেষ্টা করলো ফোনে। কিন্তু সফল হলো না। জুভান রাগে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে হোটেলের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রুম নম্বর ” ১০২” এ এসে ঐশীর রুমে নক করলো। বেশ কবার নক করার পরও কেউ দরজা খুললো না। জুভান বিরক্ত হলো। ঐশীর ফোনে আবার কল দিল। এবার রিং হচ্ছে। ফোন ধরতেই ঐশী কিছু বলার আগে জুভান ধমকে উঠল,
” ডাফার , কই তুমি ? ফোন দিচ্ছি , ধরছো না। দরজায় নক দিচ্ছি , খুলছো না। হোয়াই ? এক্ষুনি দরজা খুলো বলছি। ”
ঐশী মুখ ফুটে বললো,
” স্যার , আমি তো মাত্র.. ”
” আই সে ওপেন দা ডোর। ”
“কেনো ? আমি স্যার.. । ওকে , ওকে খুলছি। ”
জুভান ফোন কেটে দাঁড়িয়ে রইলো ঐশীর দরজার সামনে। ঐশী মাত্রই শাওয়ার নিল। তাই ভিজে চুল না মুছেই মাথার
তোয়ালে খুলে বেড থেকে ওড়না গায়ে জড়িয়ে নিলো। ফোন বেডে রেখে রুমের দরজা খুলে দিল।
ঐশী দরজা খুলে দিলে জুভান তীক্ষ্ম চোখে ঐশীর দিকে তাকায়। রুমের ভিতরে না ঢুকেই বলে ,
” জলদি আসো। আমরা এখন বান্দরবান ঘুরবো। নাফাখুম যাওয়ার ইচ্ছে আছে। সো কুইক আসো। ”
ঐশী মাথা নাড়লো । জুভান চলে যেতে নিলে আবারও পিছু ফিরে তাকায়। ঐশীর দিকে তাকিয়ে বলে,
” আমার স্ক্রিপ্টটা বোধহয় তোমার কাছে। ওটা দাও তো । ”
ঐশী মাথা নেড়ে পিছন ফিরলো। সাথেসাথে ঐশীর ভিজে চুল ঝমকে ছিটকে পড়ল জুভানের চোখেমুখে। জুভান চোখ বন্ধ করে থমকে গেলো। ভিজে চুলের মাদক গন্ধে নেশা লাগলো। শ্যাম্পুর তীব্র ঘ্রাণে মোহিত হলো। ঐশী ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ঝটপট পিছন ফিরল। জুভানকে এভাবে থমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভাবলো , হয়তো সে রাগ করেছে। তাই ঐশী অপরাধের সুরে বললো,
” আই অ্যাম রিয়েলি সরি। আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি। এভাবে আমি..”
জুভান চোখ খুলে তাকালো। বললো,
.
” কি শ্যাম্পু ইউজ করো ? ”
ঐশী কথার পিঠে থেমে গেলো। হঠাৎ এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে ভ্রু কুটি করে জিজ্ঞেস করলো,
” সরি স্যার ..”
“আই সে, কি শাম্পু ইউজ করো ? ”
ঐশী মিনমিনিয়ে বললো,
“ডা-ডাভ। ”
জুভান কিছু বলতে গেলেও থেমে গেলো। ঐশীকে জলদি রেডি হতে বলে নিজের রুমে চলে গেল। আর ঐশী ! সে তো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল জুভানের পথের পানে। কি অদ্ভুত এই লোক ? বুঝা দায় !
#চলবে