ইতির সংসার পর্ব-১৯+২০

0
234

#ধারাবাহিক_উপন্যাস
#ইতির_সংসার
পর্ব ১৯

আর এক মুহুর্ত ওখানে অপেক্ষা না করে ইতির হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে যায় নাঈম। রুমে গিয়ে ইতিকে বলে “ব্যাগ আনপ্যাক করিওনা। আমরা আবারও বের হব একটু পরেই। তুমি রেস্ট নাও, আমি টিকেট কেটে আনি।”

-“তুমি আগে কিছু খাও প্লিজ। কাল রাত থেকে কিছুই খাওনি।” বলে নাঈমকে টেনে ধরে ইতি।

-“আগে টিকেট কেটে তোমাকে নিয়ে বাসে উঠব তারপর কিছু মুখে দেব ইনশাআল্লাহ। তুমি চিন্তা করিওনা।” হেসে ইতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বের হয় নাঈম।

ইতি কিচেনে গিয়ে নাঈমের জন্য রান্না করতে লাগে। বক্সে করে নিয়ে যাবে, বাসে বসে খাওয়াবে। এমন সময় তুলি এসে হিসহিসিয়ে বলতে থাকে -“মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা বাসার বাইরে থেকেই আমার ভাইকে হাত করছিস। এতো বড় সাহস তোর। তোর জন্যই ভাইয়া এই প্রথম মার মুখে মুখে কথা বলছে। তোকে যদি এই বাড়ি থেকে বের না করি তাহলে আমার নাম পালটে রাখিস। আর আমার ভাইই তোকে এই বাড়ি থেকে বের করবে দেখিস। হানিমুনে যাওয়ার খুব শখ না? তোর হানিমুন আমি বের করব দাঁড়া।”

ইতি আস্তে করে “আচ্ছা” বলে চুপচাপ কাজ করতে থাকে। তুলিকে কিচেনে ঢুকতে দেখে চট করে ও ফোনের রেকর্ডার অন করে দিয়েছিল। ইতির আচ্ছা বলা শুনে তুলি আরো ক্ষেপে গিয়ে মাকে ডাকতে ডাকতে ঘরে চলে যায়।

রান্না শেষ করে ফ্যানের নিচে ঠান্ডা করে বক্সে উঠিয়ে নেয়। গোছল করতে যাবে ভাবতেই কলিং বেল বেজে ওঠে। দরজা খুলে দেখে নাঈম। চুপচাপ ঘরে এসে ইতিকে বলে -“বাস আরো দুই ঘন্টা পরে কিন্তু আমার আর এই সময় বাসায় থাকতে ইচ্ছে করতেছে না। দমবন্ধ লাগতেছে। চল এখনই বের হয়ে বাস কাউন্টারে গিয়ে বসে থাকি।”

-“আচ্ছা বের হব চল। কিন্তু আমি একটু গোছল করে নিতে চাচ্ছি। তোমার জন্য রান্না করলাম তো। তুমি ততক্ষণে খেয়ে একটু রেস্ট নাও, আমি গোছল করে আসি।” ইতি বলে। আসলে ও চাচ্ছিল নাঈম যেন একটু হলেও রেস্ট নেয়। অনেক ধকল গেছে ছেলেটার উপর দিয়ে।

নাঈম বের হবার সময় কি মনে করে ওর মায়ের রূমে যায়। -“মা, তোমার আমার যৌথ একাউন্টের এটিএম কার্ডটা দাও।”

-“কোন একাউন্ট?” সচকিত নাজমা বেগম জানতে চান।

-“দিনরাত মেহনত করে তোমার মেয়ের বিয়ের জন্য যে টাকা জমিয়েছি সেই একাউন্টের। দাও তাড়াতাড়ি, আমার দেরি হচ্ছে।”

-“কি বলিস বাবা? সেই টাকা তো তুলির। তোকে কার্ড কেন দেব?”

-“তুলি নিজে আয় করে জমাইছে? ওর বিয়ের জন্য জমাইছি আমি রক্ত পানি করে। ওর বিয়েতে এক টাকাও লাগেনি কারণ আমার বন্ধু ওকে বিয়ে করেছে। এখন আমার টাকা লাগবে, কার্ড দাও।” বিরক্ত হয়ে বলে নাঈম।

-“কি করবি তুই টাকা?” নাজমা বেগম জানতে চান।

-“কি আশ্চর্য কথা। আমার আয়ের টাকায় আমি কি করব তার কৈফিয়ত দিব? আচ্ছা শুন তাহলে। নাটক করে ফিরিয়ে এনে আমাদের ট্রিপের পুরো টাকা নষ্ট করেছ। এখন এই টাকা দিয়ে আমরা ট্রিপে যাব। আর শুন আমরা যাওয়ার পরে তুমি ব্যাংকে কল করে কার্ডের ট্রাঞ্জেকশন বন্ধ করাবা না। যদি সেটা কর তুমি ছেলে হারাবা। এখন কার্ড দাও।” কঠোর গলায় বলে নাঈম।

ছেলের কন্ঠ শুনে কিছুটা ভয় পান নাজমা বেগম। চুপচাপ কার্ড এনে ছেলের হাতে দিয়ে শেষ চেষ্টা করেন -“বাবা তুই তো এমন ছিলি না। এমন পালটে গেলি কেন?”

-“পালটেছি তোমার আচরণে মা। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা। ইতিকেও তেমন ভালোবাসি। কিন্তু তুমি ক্রমাগত ওকে কষ্ট দিয়ে যাও। জানিনা ওর সাথে তোমার কিসের শত্রুতা। আমার যেমন তোমার জন্য কর্তব্য আছে ঠিক তেমনই ওর দায়িত্ব আমার, ওকে ভালো রাখাটা আমার দায়িত্ব। ইতি কখনও তোমাদের সাথে লাগতে যায়না। বরং সবসময়ই একসূত্রে গাঁথার চেষ্টা করে কিন্তু তুমি এক তরফা ভাবে ওর সাথে লাগো, ওকে কষ্ট দাও। আর সেকারণেই ওকে আমার সাপোর্ট করতে হয়। তোমার পায়ের নিচে যেমন আমার বেহেশত ঠিক তেমনই ওর সার্টিফিকেট আমার বেহেশতের টিকেট। বেহেশত খুঁজে পেলাম, কিন্তু টিকেট ছাড়া ঢুকতে পারলাম না তাহলে হল? ভালো থাকো। আর হ্যাঁ এবার বাসায় না ফেরা পর্যন্ত দুজনেরই ফোন বন্ধ থাকবে।” কথাগুলো বলে মা বোনকে বিদায় জানিয়ে ইতিকে নিয়ে বের হয় নাঈম।

বাসে উঠে ইতির ফোন নিয়ে দুজনের ফোন অফ করে ব্যাগে রেখে দেয় নাঈম। বাস চলা শুরু করলে ইতির আনা বক্স খুলে দেখে ভিতরে মুগডাল দিয়ে পোলাওয়ের চালের ভুনা খিচুড়ি আর চাকা চাকা করে আলু ভাজা। নাঈমের সবচেয়ে প্রিয় খাবার। দেখেই খুশি হয়ে যায়। ইতি ব্যাগ থেকে চামচ বের করে এগিয়ে দিতেই নাঈম বলে -“এতো অল্প সময়ের মধ্যে তুমি আমাকে এতো ভালো করে বুঝলে কি করে বলত? আমার প্রিয় খাবার, আমার প্রিয় কাজ, আমার সবকিছুর দিকে তোমার এতো খেয়াল। সত্যি ইতি আমি কখনো ভাবিনি আমি জীবনে এমন কাউকে পাবো যে আমাকে তার প্রায়োরিটি লিস্টের একদম প্রথমে রাখবে। আমি খুব লাকী।”

-“মহাশয় আপনি কখনো নিজের কথা ভাবেননি। পরিবারের জন্য করে গেছেন। তাই বলে আল্লাহ কি আপনার জন্য ভাববেন না? তুমি নিজের সুখ সুবিধার জন্য বেখেয়াল, তাই আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন যাতে আমি সেসব খেয়াল রাখতে পারি। সত্যি বলতে কি আমার পুরো সময় কাটে তোমাকে স্টাডি করে। এখন আর কথা না বাড়িয়ে খাও প্লিজ।”

ওরা কল্যাণপুরে বাস থেকে নামতেই কক্সবাজারের জন্য টিকেট কেটে রাখা গ্রীনলাইন স্লীপার কোচ থেকে ফোন আসে। ওদের বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেছে। সব যাত্রী এসে গেছে ওরা বাদে। ওদের অবস্থা বুঝিয়ে বললে সুপারভাইজার জানায় তাহলে আরো এক ঘন্টা পরে ওদের নেক্সট বাসে সীট করে দিবে আর নেক্সট বাসের যাত্রী এক কাপল সময়ের আগে এসে বসে আছে তাদের এখন নিয়ে যাবে। নাঈম খুশি হয়ে সম্মতি জানায়।

জ্যাম ঠেলে কল্যাণপুর থেকে রাজারবাগ এসে দেখে বাসের যাত্রীদের বাসে উঠার জন্য এনাউন্সমেন্ট হচ্ছে। ডাবল বেডের সীটে উঠে পরে ওরা দুজনেই। বাসে উঠে একবার ফোন অন করে ইতির মায়ের সঙ্গে কথা বলে আবারও ফোন বন্ধ করে দেয়।

পরদিন সকালে কক্সবাজার নেমে হোটেলে চেক ইন করে লাগেজ রেখে যায় সৈকতে। মন ভরে পানিতে ঝাঁপাঝাপি করে, ছবি তুলে ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসে রুমে। গোছল করে আবারও বের হয় লাঞ্চ করতে। রিল্যাক্সেই শেষ হয় ওদের ৩ রাত ৪ দিনের প্যাকেজ। পুরোটা সময় ফোন বন্ধ রাখে দুজন। শুধু রাতে একবার করে অন করে ইতির মায়ের সঙ্গে কথা বলে।

ট্রিপ শেষে ফিরে আসে বগুড়ায়। কিচ্ছু শপিং করেনি। মন ভরে খাইছে, ঘুরছে আর প্রচুর ছবি তুলেছে। ফেরার পথে ছবি গুলো আপলোড করতে করতে আসে সারা রাস্তায়। বাসায় ফিরে দেখে তুলি দরজা খুলেই ওদের জন্য দুই গ্লাস শরবত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এমন আবহাওয়ায় শরবত কেন জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করেনা নাঈম। অলস বোন শরবত বানাইছে এই খুশিতেই এক চুমুকে পুরো গ্লাস শরবত শেষ করে ফেলে।

রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাঈম বাইরে যায়। ইতি রাতের জন্য রান্না বসিয়ে দেয়। রান্না শেষ হবার পরে ওর শাশুড়ী পায়েস বানাতে বলে। চুপচাপ পায়েস বানিয়ে বাটিতে ঢেলে টেবিলে রাখে ঠান্ডা হবার জন্য। তুলি এসে এক চামচ মুখে দিয়ে মাকে ডেকে উঠে -“মা, ভাবির পায়েসে মিষ্টি কম হইছে। কেমনে খাবো?”

নাজমা বেগম হাতে করে একটা চিনির বয়াম এসে সেখান থেকে কিছু চিনি ছিটিয়ে দিয়ে ভালো করে নেড়ে দেন যাতে চিনিটা মিশে যায়। ইতি দেখে কিন্তু কিছু বলেনা, স্বাভাবিক মনে হয় তার কাছে। কলিং বেল বেজে উঠলে দরজা খুলে দেখে নাঈম দাঁড়িয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করে -“কই গেছিলা?”

সাথে সাথে নাঈম উত্তর দেয় -“সবই কি তোমাকে বলতে হবে?”

নাঈমের উত্তর শুনে হতভম্ব হয়ে যায় ইতি। কথা না বাড়িয়ে টেবিলে খাবার রেডি করে সবাইকে ডাকে। খেতে বসে নাজমা বেগম জোর করে ছেলেকে অনেক গুলো পায়েস খাওয়ান কিন্তু অন্য কাউকে আর খেতে দেন না। খটকা লাগে ইতির। তবে কি…….

চলবে
©সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ

#ধারাবাহিক_উপন্যাস
#ইতির_সংসার
পর্ব ২০

নাঈমের কথা ও ওর মায়ের আচরণে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ে ইতি। ওর স্কুল খোলার আরো দুদিন বাকি, তাই ভাবে মায়ের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে। নাঈম অফিসে যাওয়ার সময় কথা টা পারে ইতি। এ সময় নাজমা বেগম বলে উঠেন -“আমার মেয়েটা শ্বশুর বাড়ি থেকে আসছে, তাকে দুইটা ভালোমন্দ রান্না করে খাওয়াবা কি বাপের বাড়ি পালাতে চাইছ?”

ইতি বলে -“আপনার মেয়ে তার বাপের বাড়ি আসছে, আমি আমার বাপের বাড়ি যেতে চাই কি সমস্যা বলুন?”

-“সমস্যা থাক আর না থাক তুমি যেতে পারবানা।” গর্জে উঠেন নাজমা বেগম।

-“আপনার মেয়ে বাপের বাড়ি আসলে দোষ নাই আর আমি যেতে চাইলেই…… ” কথা শেষ করতে পারেনা ইতি আচমকা এক চড় এসে ওর গালে পড়ায়। হতভম্ব হয়ে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে দেখে চড়টা এসেছে তারই প্রাণপ্রিয় স্বামী, যার সাথে সে আগের দিনই হানিমুন ট্রিপ থেকে ফিরেছে সেই নাঈমের হাত থেকে। চিৎকার করে উঠে ইতি -“কাজটা ভালো করলেনা। পস্তাতে হবে তোমাকে।”

নাজমা বেগম বলেন -“কি করবা? জেলে দিবা? দাও, জেল মানুষের জন্যই তৈরি হইছে।” একটা কথাও আর বলেনা ইতি, বলার রুচি হয়না। চড়ের ধাক্কায় আগেই মাটিতে পড়ে গেছিল, সেভাবেই পড়ে থেকে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে।

কাঁদতে কাঁদতে একসময় ক্লান্ত হয়ে মাটিতেই ঘুমিয়ে যায় ও। কেউ আসেনা ওকে ধরে ঘরে নিয়ে যেতে। একসময় ঘুম ভেঙে দেখে দুপুর হয়ে গেছে। নাঈম ওকে চড় মেরেই অফিসে চলে গেছে। আস্তে আস্তে উঠে রুমে যায় ইতি। ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। খাটে শুয়ে ভাবতে থাকে ওর পরবর্তী করণীয় কি?

একবার ভাবে আর নাঈমের সাথে সংসার করবেনা, একবার যখন হাত উঠে গেছে এরপর বারবার হাত উঠবে। আরেকবার ভাবে হঠাৎ করে কি হল যে নাঈম কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে পালটে গেল। আবার ভাবে এতো সহজে ওদের জিততে দেয়া যাবে না। ওরা মা মেয়ে তো চায়ই ইতি চলে যাক নাঈমের জীবন থেকে যাতে ওরা আবারও ওকে চুষে খেতে পারে।

শেষে ঠান্ডা মাথায় ভেবে ঠিক করে সবাইকে একটা শিক্ষা দিতে হবে। এতো সহজে ছেড়ে দিলে হবে না। প্রথমেই যদি ছাড় পেয়ে যায় তাহলে অভ্যাস হয়ে যাবে। চড়ের ধাক্কায় ঠোঁটের একপাশে কেটে ফুলে গেছে, কাঁদতে কাঁদতে চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। এই অবস্থায় এলোমেলো চুলে এই চেহারার একটা সেল্ফি তুলে নেয়। তারপর পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা ফিমেল গ্রুপে। জানতে চায় “শাশুড়ী ও ননদের উস্কানিতে হাসবেন্ড এভাবে আঘাত করছে। মামলা করা ছাড়া কিভাবে তাদের শায়েস্তা করা যায়?”

সেল্ফিটা পাঠায় মুরাদের ইনবক্সে। বলে -“আপনার স্ত্রী আর শাশুড়ির উস্কানিতে আপনার বন্ধু আমার এই হাল করছে। আমি আর ওর সাথে সংসার করব না।”

ওর পোস্টে বিভিন্ন জন বিভিন্ন কমেন্ট করতে থাকে। সব দেখে কিন্তু রেসপন্স করেনা। এরমধ্যেই মুরাদ ম্যাসেজ দেখে সাথে সাথে কল দেয় ইতিকে -“ভাবি, কি বলেন নাঈম এই কাজ করছে আপনার সাথে? ওর কিভাবে সাহস হয় আপনার গায়ে হাত তুলার।?”

ইতি ওদের ট্রিপ থেকে শুরু করে সব জানায়। তুলির হুমকির কথাও জানায়। এটাও বলে যে সে আশংকা করতেছে খুব সম্ভব নাঈমকে কুফুরি কালাম করা হয়েছে নইলে শরবত ও পায়েস খাওয়ার পরে আচমকা আচরণ পালটে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার না। সব শুনে মুরাদও চিন্তিত হয়ে যায়।

মুরাদ ওর মাকে কল দিয়ে সব জানায়। এটাও জিজ্ঞেস করে এই কুফুরি কালামের প্রভাব কাটাতে কি করা যাবে? খাদিজা বেগম বলেন উনাদের এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেব আল্লাহর কালাম পড়ে একটা পানিপড়া দেন যেটাতে এইসব নেগেটিভ ভাইব কেটে যায়। উনি সেটা নাঈমকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিলেন। আর মুরাদকে বলেন তুলি ও নাঈমের সাথে কথা বলতে।

খাদিজা বেগম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন আছর নামাজের সময় প্রায় হয়ে গেছে। উনি এক বোতল পানি নিয়ে মসজিদের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখেন ইমাম সাহেব আসছেন। কাছাকাছি এলে সালাম দিয়ে কথা বলতে চান। নাম গোপন রেখে সব বিস্তারিত জানালে ইমাম সাহেব দুয়া কালাম পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে দেন। আর বলেন -“আম্মাজি আমার যা সাধ্য আল্লাহর নাম নিয়ে আমি করলাম। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।”

নাঈমকে ফোন করে ডেকে নেন খাদিজা বেগম। সাথে তুলিকেও নিতে বলেন। ওরা এলে তুলিকে ভিতরে ওর রুমে পাঠিয়ে দিয়ে নাঈমের সাথে কথা বলতে শুরু করেন। এটা সেটা দিয়ে শুরু করে আসল কথায় আসেন, কেন ইতির গায়ে হাত তুলেছে জানতে চান। নাঈম প্রথমে নিজেদের ব্যাপার বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে তুলি কাঁদতে কাঁদতে সামনে এলে অবাক হয়ে যায়। জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?

তুলি কাঁদতে কাঁদতে বলে -“মুরাদ আমাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেছে।”

-“কেন?” জানতে চান খাদিজা বেগম।

-“ভাবিকে ভাইয়া চড় মেরেছে সকালে, সেজন্য।”

-“দেখ তুলি, তোমার হাসবেন্ড তোমাকে কি বলেছে তাতে আমার কিছু বলা মানায়না। মুরাদ যেহেতু চলে যেতে বলেছে সেহেতু তুমি সবকিছু গুছিয়ে নাও। তোমার ভাই এখানেই আছে, ওর সাথে চলে যাও।”

-“আন্টি, মুরাদ অন্যায় কথা বলেছে, আমি এখনও ছেলের পক্ষ নিবেন?” বিস্মিত নাঈম জানতে চায়।

-“কেন নেবনা বাবা বল? তুমি যেমন তোমার মায়ের ছেলে তেমনি মুরাদও আমার ছেলে। অন্যায় করলেও ছেলের পক্ষ নিতে হয় এটা তোমার মায়ের থেকেই শিখেছি বাবা।”

-“আন্টি, মা আবার কখন আমার পক্ষ নিল?”

-“তুমি যখন তোমার স্ত্রীর গায়ে হাত তুললা তখনই তোমার মায়ের উচিৎ ছিল তোমাকেও একটা দেয়া। কিন্তু তা না করে উনি তোমাকে সাপোর্ট করেছেন। তাহলে আমি আমার ছেলেকে সাপোর্ট করলে দোষ কি বল?” খাদিজা বেগম ধীর স্থির ভাবে কথাটা বলেন।

কিছুক্ষণ পরে উঠে গিয়ে নিজে নাস্তা নিয়ে আসেন নাঈমের জন্য। সাথে পানি পড়াও। ততক্ষণে তুলি কাঁদতে কাঁদতে ওর দুইটা ট্রলি ব্যাগ আর একটা বড় লাগেজ ঠেলে ড্রইংরুমে চলে আসে। খাদিজা বেগম নাঈমকে তাড়া দেন নাস্তা করে নেয়ার জন্য। নাঈম সামান্য কিছু মুখে দিয়ে পানি খেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে খাদিজা বেগমকে আবারও অনুরোধ করে -“আন্টি আমি নাহয় একটা ভুল করেই ফেলেছি সেই ভুলের শাস্তি আমার বোনটাকে দিবেন?”

খাদিজা বেগম কোন উত্তর দেন না। নাঈম আস্তে করে বোনের হাত ধরে বের হয়ে আসে। বাসায় ফিরে দেখে ইতি তখনও ঘরে দরজা বন্ধ করে আছে। ঘরের দরজায় ধাক্কা দিতে যাবে এমন সময় মুরাদের ফোন আসে নাঈমের কাছে। নাঈম ফোন রিসিভ করে ড্রইংরুমে চলে যায়। মুরাদ ওকে ক্লিয়ার করে বলে -“দেখ নাঈম, আমি তোকে আগেই বলছি তুলি যেমন তোর বোন ঠিক তেমনই আমি ইতি ভাবিকে আমার বোন মানি। আমি তোর বোনকে মাথায় তুলে রেখেছি আর তুই আমার বোনের গায়ে হাত তুলেছিস। এতো সাহস তোর হয় কি করে? ইতি ভাবি সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর তোর সাথে সংসার করবেনা। আমি তুলিকে বিয়ে করেছি তোদের বিবাহিত জীবনে যাতে ইতির বিয়ের খরচের চাপ নামক কোন অশান্তি সৃষ্টি না হয়। তোদের সেই সংসারটাই যদি না থাকে তাহলে তুলির সাথে আমার বিবাহিত জীবন কন্টিনিউ করার কোন অর্থ আমি পাচ্ছিনা। খুব দ্রুতই তোর বোনকে আমি ডিভোর্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

মুরাদের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় নাঈম। -“কি বলছিস দোস্ত? আমার সংসার ভেঙে যাচ্ছে তার মানে কি? আমি তোর কথা কিছু বুঝতে পারছিনা তুই কি বলছিস?”

-“হ্যাঁ আমি সেটাই বলছি যেটা ইতি ভাবি জানিয়েছেন। আমিও সম্মত হয়েছি উনার কথায়। তুই কথা ভালো মতো করে না শুনে ফট করে বউয়ের গায়ে হাত তুলবি আর তোর বউ চুপচাপ সহ্য করবে? আমি তুলিকে মারলে তুই সহ্য করতি? উত্তর জানতে চাই তোর।” মুরাদ বলে।

কি উত্তর দিবে ভেবে পায়না নাঈম। সত্যিই তো কি করত সে?
চলবে….

©সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ