উপসংহারে ভালোবাসা পর্ব-০৩

0
351

#উপসংহারে_ভালোবাসা
#পর্ব_৩
#তিয়াশা_জেরিন

মেহেরাব বাইরে গিয়ে দেখলো প্রিয়া একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।মেহেরাবের রাগে চোখমুখ লাল হয়ে উঠলো।প্রিয়ার পাশে সে অন্য কোনো ছেলের ছায়াকেও সহ্য করতে পারে না।মেহেরাব সামনের দিকে এগিয়ে যেয়ে প্রিয়ার কাছে এসে দাঁড়ায়।প্রিয়া মেহেরাবকে দেখেও সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ করলো না।সে নিজের মতো ছেলেটির সাথে কথা বলে চলেছে।আর মেহেরাব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ছেলেটিকে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে।কথা বলার এক পর্যায়ে ছেলেটি মেহেরাবকে দেখিয়ে প্রিয়াকে বলে উঠে,

-“প্রিয়া ইনি কে?”

প্রিয়া মেহেরাবের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলে,

-“উনি মেহেরাব ভাইয়া।আমার কাজিন।”

ছেলেটি ওহ বলে মেহেরাবের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।মেহেরাবও নিজেকে স্বাভাবিক করে ছেলেটির সাথে হাত মিলায়।এরপর প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-“প্রিয়া চল,আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।তোকে নামিয়ে দিয়ে চলে যাবো আমি।”

প্রিয়া মেহেরাবের কথায় তাকে বলে,

-“আমি একাই চলে যেতে পারবো,তুমি চলে যাও।”

এই বলে প্রিয়া আবার ছেলেটির সাথে কথা বলতে থাকলো।এবার মেহেরাবের ভীষণ অপমানবোধ হলো।ও শুধুমাত্র ওর জন্য দাঁড়িয়ে আছে আর ও তাকে যাবে না বলে দিলো।এতে মেহেরাবকে ছেলেটির সামনে কেমন ছোট হতে হলো।মেহেরাব ছেলেটির সামনে প্রিয়ার সাথে কোনো রুড বিহেড করতে চাচ্ছে না।তাই সে তাদের কথা বলার মাঝে হঠাৎ সেই ছেলেটির উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

-“আসি ভাইয়া।ভালো থাকবেন।”

কথাটা বলে মেহেরাব প্রিয়ার হাত ধরে ওখান থেকে নিয়ে চলে আসে।প্রিয়া মেহেরাবের হাত থেকে তার হাত সরানোর চেষ্টা করতে থাকে,তাকে হাত ছাড়তে বলে।

-“ভাইয়া হাত ছাড়ো,কি হচ্ছেটা কি।আর ওইভাবে ওনার সামনে থেকে নিয়ে আসলে কেন।”

এরকম আরো কথা বলতে থাকে আর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু মেহেরাব তার কোনো কথাতেই কান দিচ্ছে না সে নিজের মতো প্রিয়ার হাত ধরে হেঁটে আসছে।প্রিয়াকে নিয়ে তার গাড়ির কাছে এসে দরজা খুলে তাকে সিটে বসিয়ে সেও নিজের সিটে বসে।প্রিয়া রাগে গাড়ির দরজা খুলে নেমে পড়তে গেলে মেহেরাব বলে উঠে,

-“গাড়ি থেকে এক পা নেমে দেখ তুই।”

মেহেরাবের এমন শাসানোতে প্রিয়া এবার একটু ভয় পেয়ে যায়।সে আবার গাড়ির দরজাটা লাগিয়ে মেহেরাবের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই মেহেরাব তাকে প্রশ্ন করে,

-“ছেলেটা কে ছিলো?”

মেহেরাবের কথা শুনেও সে তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের মতো বলতে থাকে,

-“এটা কি ধরণের ব্যবহার মেহেরাব ভাইয়া।এমন করছো কেন তুমি?আর বারবার এই অভদ্র মেয়ের সাথে কথাই বলতে আসছো কেন তুমি?তুমি তো খুব ভদ্র আর ভালো।একজন অভদ্রের কাছ থেকে দূরে থাকাটাই বেটার।

প্রিয়ার এমন কথা শুনে মেহেরাব প্রিয়ার অজান্তেই একটা মুচকি হাসি দেয় আর মনে মনে বলে,

-“এই অভদ্র মেয়েটাকেই আমার অত্যাধিক পছন্দ।”

মেহেরাবের ভাবনার মাঝেই প্রিয়া আবার গাড়ি থেকে নামতে নিলে মেহেরাব এবার প্রিয়ার হাত ধরে জোরে টান দিয়ে সিটে বসিয়ে দেয় এবং সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে গাড়ির দরজাটা লক করে দেয়।ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে গেল যে প্রিয়ার মস্তিষ্কে সবকিছু অনুযায়ী রেসপন্স দিতে সময় লাগলো।সে কিছুক্ষণ ওভাবেই হতভম্ভের ন্যায় বসে ছিল।এরপর প্রিয়া বলে উঠলো,

-“মেহেরাব ভাইয়া দেখো আমি কিছু বলছি না বলে তুমি যা খুশি তাই করতে পারো না।”

মেহেরাব প্রিয়ার কথায় বলে,

-“আমি তো চাই তুই কিছু বল”

-“মেহেরাব ভাইয়া গাড়ি থামাও,আমি তোমার সাথে যাবো না।”

প্রিয়ার কোনো কথা না শুনে সে নিজের মতো গাড়ি চালাতে থাকে।প্রিয়া সেই তখন থেকে ননস্টপ বকেই যাচ্ছে।মেহেরাব এবার গাড়ি থামালো।প্রিয়া কিছু বলার আগেই মেহেরাব একটা আঙুল তার ঠোঁটের উপর দিয়ে চুপ করিয়ে দিল।তারপর হুট করে আলতো করে তার ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে দিল আর বললো,

-“এত বাজে বকিস কেন বলতো।”

প্রিয়া আর কোনো কথা বলতে পারলো না।মেহেরাব ভাইয়া এটা কি করলো।ছি,ছি তাকে চুমু খেল।তাও আবার তার ঠোঁটে।প্রিয়ার তো প্রচন্ড রাগ হওয়ার কথা কিন্তু প্রিয়া কিছু বলতে পারছে না কেন।প্রিয়াকে এমন চুপ থাকতে দেখে মেহেরাব হালকা হেসে আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো।মেহেরাব বুঝতে পারলো তার এমন হঠাৎ আক্রমনে প্রিয়া বেশ একটা ধাক্কা খেয়ে গিয়েছে।নইলে এ মেয়ে চুপ থাকার।মেহেরাব তাদের ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামিয়ে প্রিয়ার দিকে তাকাতেই তার বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো।একি মেয়েটা কাঁদছে কেন।আর প্রিয়ার মুখচোখ অত্যাধিক লাল হয়ে গিয়েছে।মেহেরাব দ্রুত প্রিয়াকে ধরতে গেলে প্রিয়া হাত উঠিয়ে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

-“ডোন্ট টাচ মি।আমাকে স্পর্শ করার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে?”

মেহেরাব এতক্ষণে বুঝলো প্রিয়া হয়তো তখনকার ঘটনার জন্য এমন রিয়েক্ট করছে।মেহেরাবের কাছেও পরে মনে হয়েছিল,এই কাজটি করা হয়তো তার ঠিক হয় নি।কেননা প্রিয়া তো আর জানে না মেহেরাব তাকে কি চোখে দেখে বা তাকে ভালোবাসে।মেহেরাবকে এমন চুপ থাকতে দেখে প্রিয়ার এবার ভীষণ রাগ হলো।প্রিয়া বিষ্ময়ে তখন কিছু বলতে না পারলেও পরবর্তীতে তার কাছে বিষয়টি প্রচন্ড খারাপ লেগেছে আর সাথে সাথে রাগটাও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।প্রিয়া এবার একটু চিল্লিয়ে বলে,

-আন্সার মি।

মেহেরাব তখন প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে প্রিয়াকে শান্ত করতে বলে উঠে,

-“দেখ প্রিয়া শান্ত হো।আমি বুঝছি তখন আমার ওই কাজটা করা ঠিক হয়নি।সরি।”

প্রিয়া কোনো কথা না বলে মেহেরাবের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো।প্রিয়ার এমন তাকানো দেখে মেহেরাব বলে উঠে,

-“দেখ খবরদার ওইভাবে তাকাবি না।আর আমার কি দোষ বলতো তুই যখন তোর ঠোঁটে হালকা পিংক কালারের লিপ্সটিক দিস তখন ঠোঁট দুটিকে কেমন গোলাপের পাপড়ির মতো মনে হয় ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দিতে।”

মেহেরাবের কাছ থেকে এমন ধারার কথা শুনে প্রিয়া অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল।তার মেহেরাব ভাইয়ার আজ কি হয়েছে এমন করছে কেন সে।প্রিয়া এতক্ষণ রেগে থাকলেও এখন সে কি বলবে বুঝতে পারছে না।আর তাছাড়াও মেহেরাবের কার্যকলাপে প্রিয়ারও কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে।তখন মেহেরাবের হঠাৎ কিস করাতে প্রিয়া যেমন অবাক হয়েছিল ঠিক তেমনি তার লজ্জাও লাগছিল।প্রিয়া ছোট করে বললো,

-হোয়াট?

মেহেরাব প্রিয়ার কথার প্রতিত্তোরে বললো,

-“কি মানে কি।যা সত্য তাই বলেছি তুই-ই বল ভুল কি বলেছি।”

প্রিয়া ভেবে পাচ্ছে না তার কি বলা বা কি করা উচিৎ।একে তো এই কথাগুলো বলছে আবার ওর কাছেই জিজ্ঞেস করছে ভুল কিছু বলছে কি না।আজব।প্রিয়ার এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে কেটে পরতে হবে।এতগুলো ধাক্কা সে একসাথে নিতে পারছে না।এবার নির্ঘাত মাথা ঘুরে পরে যাবে সে।প্রিয়া আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে যেতে ধরলে আবার মেহেরাবের ডাকে তাকে দাঁড়িয়ে পরতে হলো।প্রথমবার ডাকে সে দাঁড়ায়নি কিন্তু দ্বিতীয়বার ডাকে তাকে দাঁড়াতেই হলো।

-“প্রিয়া আমি জানি তুই আমার ডাক শুনতে পেয়েছিস তুই যদি এখন না দাঁড়াস আর আমার যদি তোর কাছে যাওয়া লাগে তাহলে বোধহয় সেটা খুব একটা ভালো হবে না।”

ব্যস আর কি,প্রিয়া তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে যায়।এই লোকটা তো আগেও প্রিয়াকে থ্রেট দিয়েছে কিন্তু আজকের থ্রেটগুলো যেন প্রিয়াকে বেশি ভয় পাইয়ে দিচ্ছে।প্রিয়া শুকনো ঢোক গিলে পিছন ফিরে তাকায় মেহেরাব হাতের ইশারাতে তার কাছে যেতে বলে।প্রিয়া না যেয়ে বলে যা বলার এখান থেকেই যেন বলে।মেহেরাব যেই গাড়ির দরজা খুলতে যাবে ওমনি প্রিয়া দৌড়ে মেহেরাবের গাড়ির কাছে চলে যায়।মেহেরাব একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,

-“সেই তো এলি অযথা আমাকে দিয়ে এত নাটক করালি।”

প্রিয়া কিছু বলতে পারছে না কিন্তু ভিতর ভিতর তার ভীষণ রাগ হচ্ছে।মেহেরাব প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-“যাচ্ছিস যা,কিন্তু তোকে যেন কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে না দেখি।কথাটা মাথায় রাখিস আমার নজর সর্বক্ষণ তোর উপর আছে।যদি কথার এদিক ওদিক হয়েছে তো।”

প্রিয়া ঝটপট বলে,

-তো?

মেহেরাব হেসে উত্তর দেয়,

-“তেমন কিছুই না শুধুমাত্র কিছুক্ষণ যেটা হয়েছিল সেটাই আরো গভীরভাবে হবে।”

মেহেরাবের মুখে এমন কথা শুনে প্রিয়ার মনে হলো যেন দিন দুনিয়া ঘুরে গেল।সে আজ এ কোন মেহেরাব ভাইয়াকে দেখছে।মানুষ একরাতে কিভাবে পাল্টে যায়।প্রিয়ার এমন হা করে তাকিয়ে থাকার মাঝেই মেহেরাব গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়।হঠাৎ কারো ডাকে তার হুশ ফিরে।তাকিয়ে দেখে ইপ্সিতা।

-“কি রে তুই ভেতরে না যেয়ে এখানে এভাবে হা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

ইপ্সিতার কথায় প্রিয়া নিজেকে স্বাভাবিক করে উত্তর দেয়,

-“না কিছু না।চল।”

প্রিয়া যেতে যেতে ইপ্সিতার উদ্দেশ্যে বলে,

-“তা তোর সে কখন আসবে?”

ইপ্সিতা প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলে,

-“ওর আসার কথা দুটোর দিকে অফিসে লাঞ্চের ব্রেকের পর।কিন্তু আজ আমি ওকে সারপ্রাইজ করে দিবো।আমরা ওর অফিসে যাবো আজ চল।”

প্রিয়াও আর কিছু বললো না শুধু ইপ্সিতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।মেয়েটা বড্ড ভালোবাসে তার মানুষটিকে।

এদিকে মেহেরাব যেতে যেতে কেউ একজন তাকে ফোন করে বললো,

-“প্রিয়া মাত্র ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেল।”

মেহেরাব তাকে কড়াভাবে বলে দিলো সে যেন প্রিয়ার দিকে খেয়াল রাখে তার যেন কোনো অসুবিধা না হয় বা কোনো খারাপ কিছু হলে যেন মূহুর্তেই তাকে ইনফর্ম করা হয়।তার জানের কিছু হলে সে কাউকে ছাড়বে না।মেহেরাব এমনটা করেছে তার মানে এটা নয় যে সে তাকে বিশ্বাস করে না বরং সে যেন সেইফভাবে থাকতে পারে বা তাকে যেন কোনো বিপদ ছোঁয়ার আগে মেহেরাব ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারে এজন্য।

প্রিয়া আর ইপ্সিতা তাদের ঠিকানামতো পৌঁছে গিয়ে দেখলো…

চলবে…