#এক_ফালি_সুখ🌼 |২৫|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
মেসেঞ্জার থেকে বেড়িয়ে এলো মৌরিন,ঠিক সেই মুহূর্তেই কারেন্ট টাও চলে গেলো। হঠাৎ ঘর অন্ধকার হয়ে যাওয়াতেও দৃষ্টি স্থির রইলো মৌরিন এর, পুরো ঘরে কেবল ফোনের অতি সামান্য আলো। সেটুকুও বন্ধ করে দিলো মৌরিন। বাতাসে জানালার পর্দা উড়ছে, ফলে চাঁদের আলোয় ঘর আলোকিত হচ্ছে কিছুটা,যদিও তা খুবই অল্প।
জানালায় পিঠ ঠেকিয়ে দাড়ালো মৌরিন। চোখের সামনে অন্ধকার ব্যাতীত কিছুই দেখতে পারছে না,জীবনটাও তো এমনি। পুরোটাই অন্ধকার, আর এই অন্ধকার এর মাঝেই তাকে হাটতে হবে,পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ। ভয় পায়না মৌরিন, নিজের উপর ভরসা রেখেই এই পথে হাটতে শুরু করেছে সে। তবে মানুষের মাঝে অলসতা নামক বস্তু আছেই,যেই অলসতা থেকে নিজেকে দূড়ে রেখেছে মৌরিন।
এই অন্ধকার চলার পথে কিছু মানুষ আসে ফোনের ফ্লাশ লাইট এর মতো এক ফালি রশ্মি নিয়ে, সেই আলো পেয়ে অলসতা ভর করে মানুষের মনে। নিজের কষ্ট লাঘব করার উদ্দেশ্যে সেই আলোর পথেই চলে যায় অনেকে। তবে ঐযে, সেটা ছিলো ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটের মতোন। খুব দ্রুতই চার্জ শেষ হয়ে যাবে ফোনের, আলোও নিভে যাবে, পথটা আবারো আধারে ডুবে যাবে। তবে রাস্তা বাকি থাকবে আরো অনেকটা। আলোর সাহায্য পেয়ে তখন হয়তো আর অন্ধকার এ চলাটা সম্ভব হয়না, মুখ থুবড়ে পরতে হয় মাঝপথেই। ব্যার্থতা ভর করে সমগ্র জীবনে। সেই আলো ছিলো ক্ষণস্থায়ী তবে অন্ধকার এ জরাজীর্ণ পথটা চিরকালের জন্য স্থায়ী হয়ে যায় তখন। না সামনে যাওয়ার সুযোগ থাকে আর না পিছনে ফিরে আসার।
আপাতত তূর্যকে তেমন ফোনের ফ্লাশ লাইটের এক ফালি রশ্মির সঙ্গেই তুলনা করতে চাইলো মৌরিন। বরাবরেই নিজেকে বোঝাতে পছন্দ করে সে। অন্যের দেওয়া হাজারো জ্ঞান তার উপর কিঞ্চিৎ প্রভাব না ফেললেও নিজেকে নিজের বোঝানো কথা তার উপর প্রভাব ফেলে ব্যাপক। তাই এই অন্ধকারের নির্জনতার মাঝে আনমনেই নিজেকে কথাগুলো বোঝাচ্ছে মৌরিন। মারুফা তাকে অনেক ক্ষেত্রে নারিকেল এর সঙ্গে তুলনা করে, বাহিরের দিকটা শক্ত হলেও ভিতরটা ঠিকই নরম।
তবে মৌরিন তার বিরোধিতা করেছে বরাবরেই, তার মতে মারুফার ধারণা ভুল। মৌরিন জানে, সে বাহিরে থেকে যেমন ভিতর থেকেও তেমনি, তার কোনো দুই রূপ নেই। রূপ কেবল একটাই, হয়তো তার মাঝেও অনুভূতি,কষ্ট নামক বস্তুগুলো আছে। মানুষ হিসেবে,মেয়ে হিসেবে এগুলো থাকবেই, তবে নিজের অনুভূতি নিয়ন্ত্রন করতে পারাটাই বড় ব্যাপার। আর সেটা মৌরিন বরাবরেই করে এসেছে, ভবিষ্যৎ এও সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
জীবনে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ভুলেরও মাশুল দিতে হয়। আর নিজের তুলনামূলক কঠিন জীবনে নতুন করে আর কোনো ভুল করতে চায়না মৌরিন। এমনিতেই নিজের অজান্তে কত ভুলই তো করে ফেলে মানুষ, সজ্ঞানে করা ভুলের পরিমাণ টা বাড়ানো থেকে নাহয় বিরত থাকুক।
______
আইডিটা আরো কিছুক্ষন পর অ্যাকটিভ করলো তূর্য, মৌরিন মেসেজ সিন করেছে সেটাও বুঝতে পারলো। পুনরায় ফোনটা লক করে নামিয়ে নিলো তূর্য, আইডিটা আর ডিঅ্যাকটিভেট করলোনা। মনে হয়না মৌরিন দ্বিতীয়বার তার এই আইডির খোজ করবে বলে। নিজে থেকেই অনেক কিছু ভেবে নিচ্ছে তূর্য, মনে হচ্ছে সে মৌরিনকে কতই না ভালো করে চেনে, অথচ তেমনটা একদমই নয়। মৌরিন এর সাথে তার কথাই হয়েছে হাতেগোনা কয়েকবার।
দোলনায় হেলান দিয়ে বসে মাথা পিছনের দিকে কিছুটা ঝুঁকিয়ে নিলো তূর্য। চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো সে, কি করছে সে এগুলো? নিজের জন্য সবসময় সেরাটা খোজা তূর্য কিনা অস্থির হচ্ছে মৌরিন নামক সাধারণ মেয়ের জন্য? অবশ্য কথাটা সঠিক নয়, মৌরিনকে সাধারণ বলাটাই ভুল। তবে তূর্য চেয়েছে রূপে,গুণে সবদিক থেকে উপরে থাকা মেয়েকে। যেখানে মৌরিন এর রূপের বর্ননা দেওয়ার মতোন কিছুই নেই, যদিও তার গুণের কথা বলাই যায়।
তবে কি সবটাই ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভর করে? বরাবরেই নিজেকে নিয়ে গর্ব করা,অহংকারী তূর্য মুগ্ধ হয়েছে মৌরিনের ব্যক্তিত্বে? তাহলে আদতেও কি কখনো রূপের কাঙাল ছিলো তূর্য? তেমনটা হলে তো দিয়াকে রিজেক্ট করার কোনো কারণই ছিলো না।
প্রশ্নগুলো নিজেকে করলে এর কোনো উত্তর খুজে পায়না তূর্য। সবসময় মুখে বলা কথাটা কি আসলেই তার মনের কথা ছিলো? তার মন কি গায়ের রঙের উপর কখনো দূর্বল ছিলো? বর্তমান সময়ে প্রশ্নটার উত্তর খুজতে গেলে প্রথমেই ভিতর থেকে ‘না’ শব্দটাই কেবল বেরিয়ে আসছে।
হয়তো নিজেকেই ভুল চিনেছে তূর্য, যেই ভুলটা ভাঙলো মৌরিন এর মাধ্যমে। মনটা হয়তো তার ‘ইউনিক’ শব্দটাই খুজতো, যা পরিপূর্ণভাবে রয়েছে মৌরিন এর মধ্যে। সত্যিই কি মনটা তার আটকে গেলো শ্যামবর্নের, গুরুগম্ভীর, আত্মবিশ্বাসী, অসাধারন ব্যক্তিত্বের মৌরিনের উপর?
মাথার উপর কারো হাতের ছোঁয়া পেতে চোখ খুলে তাকায় তূর্য,নিজের সম্মুখে ইলমা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সোজা হয়ে বসে সে। ইলমা তার ঠিক পাশে বসে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে ছেলের দিকে। তূর্যের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন,
_”কি হয়েছে?”
_’হুম?”
পাশ ফিরে বলে তূর্য। ইলমা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে তার হাতের উপর হাত রেখে বলে,
_”এভাবে তো কখনো বসে থাকিসনা, তাই জিজ্ঞেস করছি, কি হয়েছে?”
স্মিত হাসে তূর্য, তার এই হাসি অন্যরকম। কয়েক সেকেন্ড বাদে কিছু না বলেই ইলমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে তূর্য। সরু কণ্ঠে বলে,
_”তুমি বুঝে যাও কি করে বলতো?”
ইলমা তূর্যের মাথায় হাত রেখে বলে,
_”বারে, মা হয়ে ছেলেকে বুঝতে পারবো না?”
চুপ করে রইলো তূর্য,কিছুক্ষন বাদে চোখ বন্ধ করেই বলে ওঠে,
_”নিজেকেই তো বুঝতে পারছিনা গো আম্মু।”
কয়েক সেকেন্ড বাদে তূর্য চোখ খুলে বলে,
_”আমি না তোমার কাছেই যেতাম।”
অবাক হয়ে যায় ইলমা, বিস্মিত কণ্ঠে বলে,
_”আমার কাছে? কেন?”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইলমাকে সবকিছু খুলে বলে তূর্য। কিছুক্ষন নিরবতা বজায় থাকে দুজনের মাঝে। ইলমা অবাক দৃষ্টিতে তূর্যের দিকে তাকিয়ে বলে,
_”মেয়েটাকে ভালোবাসিস তুই?”
_”হয়তো তাই।”
নির্দিধায় উত্তর দেয় তূর্য। ইলমা পুনরায় প্রশ্ন করেন,
_”এই কদিনেই ভালোবেসে ফেললি?”
_”নিজেই ভেবে দেখতো আম্মু, আমার মতো একটা ছেলে এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করছে। শুধুশুধুই আমি এমনটা করবো? এটা সম্ভব?”
ইলমা মুচকি হেসে বলেন,
_”ভালোবাসা তো খারাপ কিছু নয় তূর্য। তাহলে লুকিয়ে লুকিয়ে কেন? সরাসরি জানিয়ে দে মেয়েটাকে।”
_”ও বাকিদের মতো নয় আম্মু,সম্পূর্ন আলাদা। আর তাছাড়াও, আমার একটা প্রেস্টিজ আছে।”
_”এত প্রেস্টিজ নিয়ে তো ভালোবাসা যায়না তূর্য।”
_”আম্মু..”
করুন সুরে বলে তূর্য। ইলমা শান্ত কণ্ঠে বলেন,
_”ভুল কিছু বলিনি, এখন বাকিটা তোর হাতে। ভালোবাসা প্রকাশ করলে কারো প্রেস্টিজ চলে যায়না তূর্য।”
চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইলো তূর্য। আপাতত ভাবনা থেকে বিরত থাকলো সে। ইলমা ভুল কিছু বলেনি, তবুও যেন কোথাও গিয়ে আটকে যাচ্ছে তূর্য। কি করা উচিৎ সেটাই বুঝতে পারছে না।
_____
চতুর্থ দিনের শুটিং শেষের দিকে। মৌরিন বেরিয়ে যাবে এক্ষুনি, ভার্সিটিতে কাজ আছে একটু। বরাবরের মতো ব্যাগটা তুলতেই তার নিচে চিরকুট পায় মৌরিন। হাতে নিলো সেটা,খুলেও দেখলো। তাতে লেখা আছে,
“জানিনা পড়বে কিনা, তবে মনে হচ্ছে পড়বে। আজ তোমার থেকে একটা রিপ্লাই চাইছি। এতকিছু বললাম তোমায়, তার বিপরীতে একটা রিপ্লাই? প্লিজ?”
তূর্য দূর থেকেই লক্ষ্য করলো মৌরিন ব্যাগ থেকে কলম বের করে কিছু লিখছে চিরকুট টাতে। পুনরায় সেটা আগের জায়গায় ভাজ করে রেখে চলে গেলো মৌরিন।
শুটিং শেষ হতেই তূর্য দ্রুত পা বাড়িয়ে হাতে নেয় চিরকুটটা। তার লেখার ঠিক নিচে ছোট একটা লাইন লেখা,
“তেলে আর জলে কখনো মিশ খায় না।”
#চলবে?
#এক_ফালি_সুখ🌼 |২৬| [বোনাস পর্ব]
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
বেশ কিছুক্ষন চিরকুট টার দিনে তাকিয়ে থেকে সেটা নিচে নামিয়ে নিলো তূর্য। মুখ খুলে নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। আগে থেকেই আন্দাজ করছিল,হয়তো মৌরিন চিনতে পেরে গেছে ওকে, এই রিপ্লাই দেখে নিশ্চিত হয়ে গেলো। এর পর আর তূর্যের ও কিছু বলার রইলো না, আগে থেকেই মৌরিন তাকে ইনডিরেক্টলি রিজেক্ট করে দিলো।
ফোনটা বের করে অনেক বড় একটা মেসেজ টাইপ করলো তূর্য,তবে সেন্ড করতে পারলো না মৌরিন কে। আবারো বাঁধা দিলো সেই ইগো নামর বস্তু, ফোনটা পকেটে রাখলো তূর্য,সঙ্গে যত্ন করে রেখে দিলো সেই চিরকুট টাও।
_______
জ্যোতির পাশে একপ্রকার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হাটছে নির্ঝর। জ্যোতিও এখন চুপচাপ হয়ে গেছে, এতটা অবহেলা আর নিতে পারছেনা সে। অনেক ভেবে চিন্তে একটা মিথ্যে কথা বলেছিল ইটালি চলে যাওয়ার,তাতেও নির্ঝর এর মাঝে কোনো পরিবর্তন এলো না। এবার আসলেই কান্না পাচ্ছে জ্যোতির,তবে কাঁদা যাবে না। নির্ঝর এর সামনে একদমই না,তাই অতি কষ্টে কান্না আটকে রেখেছে সে।
চোখের সামনে পপকর্ন এর প্যাকেটটা দেখতে পেয়ে পাশে ফিরে তাকায় জ্যোতি,নির্ঝরই তার দিকে এগিয়ে দিয়েছে এটা। জ্যোতি নিলোনা,বরং কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে এগিয়ে গেলো। বেশিদূর যদিও এগোতে পারলোনা, নির্ঝর দৌড়ে এসে তার সামনে দাঁড়ালো। নদীর পাড়ের এই জায়গাটায় মাঝেমধ্যেই ঘুড়তে আসতো তারা,এবার অনেকদিন পর এলো। জায়গাটা বিশেষ করে জ্যোতির খুব পছন্দের।
জ্যোতি সেখানেই স্থির রইলো,তাকালো না নির্ঝর এর দিকে। নির্ঝর কিছুক্ষন গম্ভীর ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে হো হো করে হাসতে লাগলো। খানিকক্ষণ বাদে নিজের হাসি থামিয়ে জ্যোতির নাক টেনে দিয়ে বললো,
_”হায়রে বলদি, একটু মিথ্যে কথাটাও ঠিক করে বলতে শিখলি না?”
জ্যোতি জলে টইটুম্বুর চোখ নিয়ে নির্ঝর এর দিকে তাকাতেই নির্ঝর বলে ওঠে,
_”মাফ কর,এখন আবার কান্নাকাটি শুরু করিস না।”
জ্যোতি নাক টেনে বলে,
_”কেন কাঁদবো আমি? কান্নার কোনো কারণ আছে কি?”
_”সেটা তুই ভালো জানিস।”
কিছু বলেনা জ্যোতি,নির্ঝর এবার ঠোঁট চেপে হেসে বলে,
_”যে মেয়ে রাতে একা ঘুমোতেই পারেনা,সে কিনা যাবে ইটালি! এত বোকা মনে হয় আমাকে? তুই বলবি আর আমি বিশ্বাস করে নেবো?”
উত্তর দিলোনা জ্যোতি,নির্ঝর এর পাশ কাটিয়ে সামনে হাটতে লাগলো। নির্ঝর ও তার পিছন পিছন এসে বললো,
_”মিথ্যে বললি কেন আমাকে?”
জ্যোতি তখনও নিশ্চুপ। নির্ঝর আবারো তার সামনে এসে বলে,
_”না বললে আমি বুঝবো কি করে শুনি?”
তবুও কিছু বলেনা জ্যোতি। নির্ঝর ও এবার কিছু না বলে ওকে টেনে বাইক এর কাছে নিয়ে বলে,
_”ওঠ..”
_”কেন?”
_”যাবো এক জায়গায়,তোর ইটালিয়ান জামাই খুজতে।”
হাসলো নির্ঝর। জ্যোতিও তার পিছনে উঠে বসলো। নির্ঝর হেলমেট বা পরেই স্টার্ট দিলো বাইক। পাঁচমিনিট এর মতো বাইক চললো, এসে থামলো অনেকটা নির্জন জায়গায়। আশেপাশে তেমন মানুষ নেই, বড় একটা গাছ আছে কেবল। তার পাশে খানিকটা বসার জায়গাও আছে। এখানে আগেও এসেছে তারা। জ্যোতি চুপচাপ নেমে গিয়ে বসলো সেখানে। নির্ঝর ও এসে তার পাশে বসলো। গালে হাত দিয়ে বললো,
_”মানে আজ কি চুপ থাকার শপথ করেই এসেছিস?”
নিচের দিকেই তাকিয়ে ছিলো জ্যোতি,তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পরা অশ্রু দেখতে পেয়েই নির্ঝর তার মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
_”শুভ কান্নাময় জন্মদিন।”
ভ্রু কুঁচকে তাকায় জ্যোতি,নির্ঝর হাসতে হাসতে বলে,
_”এবার তো কান্না থামা, করলাম তো উইশ। আর কি চাই?”
জ্যোতি উঠে দাঁড়িয়ে চোখ মুছে বলে,
_”তোমার কি মনে হয়? আমি উইশ পাওয়ার জন্য কাঁদছি? ”
_”তা নয়তো কি?”
চোখ মুছে আবারো বসে পরলো জ্যোতি,তবে তার অশ্রু যেন বাধ মানছে বা আর। নির্ঝর ওর দিকে এগিয়ে এসে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
_”একটা লাইন শোনার জন্য এতো কান্না?”
পাশ ফিরে তাকায় জ্যোতি,অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
_”কি লাইন?”
_”সেটা তো তুই বলবি।”
মুচকি হেসে বললো নির্ঝর,জ্যোতি বিরক্ত হয়ে বলে,
_”মজা করছো তাইনা? ভালো লাগছে না আমার। যাও তো তুমি, ঐ দিয়ার সাথে গিয়ে মজা করো।”
নির্ঝর বেশ উচ্চস্বরে হেসে বলে,
_”চাইলাম তো যেতে, কিন্তু যেতেই দিলোনা রে।”
_”হ্যা হ্যা, এইজন্যই এখন আমার উপর দরদ উতলে উঠছে বুঝি?”
_”এহেম এহেম, দরদ দেখাবো না বলছিস?”
_”জানিনা।”
_”মামনি যে তোর বিয়ে ঠিক করছে জানিস সেটা?”
নির্ঝর স্বাভাবিক ভাবেই বললো, জ্যোতি সামনের দিকে তাকিয়েই বললো,
_”ঐ ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না।”
_”করবি না?”
_”নাহ”
_”সত্যি তো?”
_”একদম”
নির্ঝর আরো কিছুটা এগিয়ে আসে। জ্যোতির কাঁধে মাথা রেখে বলে,
_”তাহলে আর কি, তুলে নিয়ে যাই?”
উত্তর দিলোনা জ্যোতি, নির্ঝর একইভাবে বললো,
_”আম্মু আমার মাথাটা খারাপ করে ফেললো, বললো যে এই এক মেয়ে ব্যাতীত অন্য কাউকে বিয়ে করলে নাকি আমাকে বাসায় ঢুকতেই দেবে না। বউ ব্যাতীত বাড়ির দরজা আমার জন্য বন্ধ। বাধ্য হয়ে রাজি হলাম আরকি, আফটার অল, বাসার বিড়ালগুলো আমার ভীষণ পছন্দের। আর সেখানে তুই বলছিস কিনা বিয়ে করবি না?”
_”তুমি বাসায় ঢোকার জন্য আমাকে বিয়ে করবে?”
_”পাত্রী টা যে তুই,সেটা কে বললো?”
ছোট ছোট চোখে নির্ঝর এর দিকে তাকায়,নির্ঝর ও ভ্রু নাচিয়ে তাকালো তার দিকে। কান্না বন্ধ হলো জ্যোতির। অন্যদিকে চোখ সরিয়ে মুচকি হাসলো সে। ধীর কণ্ঠে উত্তর দিলো,
_”আমি ছাড়া কেউ তোমাকে বিয়ে করবে না।”
_______
_”রুবেল ভাই,আই নিড সাম টাইম”
কথাটা বলেই চেয়ারে গিয়ে বসে পরলো তূর্য। আবরাজ আর তার শুট চলছে একইসাথে। তবে তূর্য ডায়লগ ডেলিভারি তে বারবার আটকে যাচ্ছে।
রুবেল অবাক হলো, তবে সময় দিলো তূর্যকে। আবরাজ ছোটছোট চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
_”অ্যাওয়ার্ড এর টেনশন এ ডায়লগ ও ভুলে যাচ্ছিস, সিরিয়াসলি!”
প্রতিত্তর করলোনা তূর্য,সে দুহাতে মাথা চেপে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মৌরিন রয়েছে একটু পাশেই, তবে তার মাঝে কোনো পরিবর্তন নেই। সে নিজের মতোই রয়েছে।
কিছুক্ষন বাদে আবরাজ এগিয়ে এলো তূর্যের দিকে। একটা চেয়ার টেনে বসলো তার পাশে। গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
_”প্রেমে ব্যার্থ হয়ে অ্যাকটিং ভুলে গেলো তূর্য! দারুণ নিউজ।”
কপাল কুঁচকে নেয় তূর্য, আবরাজ তাকে বেশ কয়েকবার চিরকুট রাখতে দেখে নিয়েছিল। মুখে কিছু না বললেও সবটাই বুঝতে পেরেছে সে।
তূর্য এবারো কিছু বললোনা আবরাজকে। আবরাজ এবার সবাইকে অবাক করে তূর্যের কাধে হাত রেখে খানিকটা বন্ধুসুলভ কণ্ঠে বলে,
_”ঢং করিস না তো, এমন ছ্যাকা কতো খেলাম জীবনে।”
_”ছাড়ো তো ভাই।”
_”বেশি হচ্ছে তূর্য, ছ্যাকা খেয়ে বাঁকা হয়ে গেলে জীবনে প্রেমে সফল হতে পারবিনা। চিল ব্রো, মেয়েরা প্রথমবার এমনিতেও রিজেক্ট করে, একটু ঘুড়তে হয় বুঝলি? শুরুতেই হার মেনে নিলে তো চলবে না।”
তূর্যের সামনে এসে দাঁড়ায় আবরাজ। তার এক কাঁধে চাপড় মেরে অন্যহাত এগিয়ে দিয়ে বলে,
_”চল ওঠ,বড়দের কথা শুনতে হয়।”
তূর্য তাকালো আবরাজ এর দিকে। সামান্য হেসে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে। এরপর সেই হাত ধরেই উঠে দাঁড়ালো সে।
অন্যদিকে তাদের একসঙ্গে দেখে চোখ কপালে উঠে যায় সবার। আবরাজ তাদের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
_”আরে এভাবে দেখার কি আছে? আমার একব্যাচ জুনিয়র তূর্য,একসাথে স্কুল এ পড়লাম। বড় হলাম একসঙ্গে। শত্রুতা একদিকে থাকতেই পারে, ভাই তো অন্যদিকে নাকি?”
হাসে তূর্যও,মৌরিন এর দিকে একনজর তাকায়। বাকি শুটিং শেষ করে সেই আইডি থেকেই মেসেজ করে মৌরিন এর আইডিতে,
_”শুনেছি রাসায়নিক মাধ্যমে নাকি তেল আর জলেও মিশ খাওয়ানো যায়। এক্ষেত্রে যদি সেই মাধ্যমটা হয় আমার ভালোবাসা, তাহলে কি খুব খারাপ হবে?”
#চলবে?