#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
“পর্ব-১০”
“কী রে এতোটা রেগে আছিস কেন? কোনো প্রবলেম হয়েছে কী?”
–” আরে আর বলিস না এই স্টাফগুলো অনেক ফাঁকিবাজ হয়ে গেছে। এখানে সেখানে কাজ বাদ দিয়ে অলওয়েজ আড্ডা দেয়।”
ন্যায়রা একটু জোরে শ্বাস টেনে বলে,
— আয়ানননন, স্টাফরা সবাই ঠিক মতোই কাজ করছে। বরং আগের থেকে অনেক বেটার কাজ করছে। কিন্তু তোর কী হয়েছে বল তো? তুই তো আগে এমন ছিলি না। তাহলে এখন কেন সবকিছুতে এতো পজেটিভ হচ্ছিস?আমি লক্ষ্য করেছি বিশেষ করে তুই ওই নতুন মেয়েটা আসার পর থেকে এমন অদ্ভুত বিহেভ করছিস।ওই যে, মৃধা বলে মেয়েটা। আচ্ছা তোরা কী পূর্ব পরিচিত? সেদিন রাত থেকে আমি নোট করছি তুই ওর সঙ্গে একটু বেশিই রুড বিহেভ করছিস।
আয়ান কপালে হাত ঘষতে ঘষতে বলল,
— আরে ধুর কী সব বলছিস। ওকে আমি কীভাবে চিনব? আসলে ওই মেয়েটা একটু বেশিই অসহ্য তাই আরকি। ও সামনে আসলে আমার মেজাজটাই গরম হয়ে যায়। যাক বাদ দে এসব কথা। চল কাজ শুরু করি।
— ওকে, এ্যাজ ইউর উইশ
,,, ,,, ,,,
কাজ করতে করতে অনেকটা টায়ার্ড হয়ে পরেছে মৃধা। লাঞ্চ আওয়ার শুরু হতে আর মাত্র দশ মিনিট বাকি। এই দশ মিনিটে সে কিছুক্ষণ তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে নিল। তার মা তখন যোহরের নামাজ আদায়ের জন্য তৈরি হচ্ছিল। মায়ের সঙ্গে টুকটাক কথা বলে ফোন কেটে দিল সে। তারপর ঘড়ির কাঁটায় চেয়ে দেখল দুটো বেজে গেছে। তারমানে লাঞ্চ টাইম শুরু হয়ে গেছে। মৃধা ফাইলগুলো গুছিয়ে রেখে সোজা চলে গেল অফিসের ক্যান্টিনে। সেখানে বসেই লাঞ্চ টা কম্পিলিট করবে। শুধু মৃধা নয় অফিসের সবাই সেখানেই লাঞ্চ করে এমনকি আয়ান, আদ্র ও। মৃধা নিজের লাঞ্চ বক্সটি নিয়ে একটি টেবিলে বসে পরল। আজ তার লাঞ্চে আছে ডিম ভুনা আর ডাল চচ্চরি। মৃধা তৃপ্তির সহিত খাবার খাচ্ছে। ঠিক সেসময়ই তার চোখ যায় কয়েক টেবিল দুরে বসে থাকা আয়ানের দিকে। আয়ান মৃধার দিকেই তাকিয়ে ছিল। চোখাচোখি হতেই আয়ান চোখ সরিয়ে নিল। আয়ানের সামনে বসে লাঞ্চ করছে ন্যায়রা। পেছন পিঠ দেখলেও ন্যায়রাকে চিনতে অসুবিধা হল না মৃধার। মৃধার কেন জানি আর খেতে ইচ্ছে করল না। হাত ধুয়ে উঠে চলে যেতে নিল সে।ঠিক তখনই নয়ন এসে মৃধার সামনে দাড়াল। মৃধা কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে নয়নের দিকে। নয়ন তখন এক গাল হেসে বলল,
— আরে মৃধা এতো তাড়াতাড়ি লাঞ্চ করা শেষ?
মৃধা একটু বিরক্ত হলো তবুও ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে বলল,
— ওই আসলে আর খেতে ইচ্ছে করছে না তাই।
নয়ন চিন্তিত ফেসে বলল,
— কেন কী হয়েছে? শরীর ঠিক আছে তো?
— হ্যাঁ শরীর ঠিক আছে বাট এমনিতেই ভালো লাগছে না।
– ওহ আচ্ছা তাহলে চলুন না আমরা কিচ্ছুক্ষণ গল্প করি তাহলে নিশ্চয়ই আপনার ভালো লাগবে।
— নাহ নাহ ঠিক আছে। তার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি তাহলে আসি এখন।
নয়ন মলিন মুখে জবাব দিল,
— আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি যেভাবে ভালো লাগে।
এদিকে ওদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে রয়েছে আয়ান। আয়ানের চোখ মুখ মুহূর্তেই রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। মৃধা চলে যেতেই সেও অর্ধেক খাবার বাকি রেখে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল।আয়ানের এভাবে হঠাৎ চলে যাওয়ার কারণ ন্যায়রার বোধগম্য হলো না। সে বোকার মতো আয়ানের যাওয়ার পানে চেয়ে রইল।
,,, ,,, ,,,
সবে মাত্র কাজ শুরু করতে যাচ্ছিল মৃধা ঠিক তখনই আয়ানের কেবিন থেকে বেল এলো। কাজ রেখে মৃধা ছুটল আয়ানের কেবিনে। আজ আর কোনো প্রকার ভুল সে করল না। দরজায় নক করে তারপর ভেতরে প্রবেশ করল। ভেতরে ঢুকতেই আয়ানের মুখশ্রী দেখে তার প্রাণ পাখি উড়ে যাওয়ার উপক্রম। তবুও নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে সে বলল,
— স্যার, ডেকেছেন আমায়?
আয়ানের রাগি কন্ঠস্বর,
— ইয়েস, মি. মৃধা মেহরিন। আপনার জন্য কিছু ওয়ার্ক রেডি করা হয়েছে।
— ওকে স্যার, বলুন কী কাজ। আমি করে দিচ্ছি।
আয়ান মৃধার কথায় বাঁকা হেসে টেবিল থেকে গুনে গুনে মোট আট টা ফাইল মৃধার হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর বলল,
— এই নিন এগুলো কম্পিলিট করে জমা দিয়ে যাবেন।
মৃধার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেছে। এতগুলো ফাইল কীভাবে আজকে জমা দিবে।মৃধার আর বুঝতে বাকি রইল না তাকে শাস্তি দিতেই আয়ান এমনটা করছে। এখন কিছু বলেও আর কোনো লাভ হবে না। কারণ আয়ান যেরকম একরোখা ছেলে তাকে করে সে কোনো কথাই মানবে না।তবুও মৃধা মুখ ফুটে কিছু একটা বলতে চেয়েছিল কিন্তু আয়ান তার আগেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
— উহুম, ডোন্ট এক্সকিউজ। এই ফাইলগুলো কম্পিলিট করে তারপরই আপনার ছুটি।
মৃধা বিষন্ন মনে সেখান থেকে প্রস্থান করল। আর আয়ান পরম শান্তিতে চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিল। তার তো এখন ভীষণ আরাম লাগছে। নয়নের সঙ্গে ঘেঁষে থাকার ফলস্বরূপ সে মৃধাকে এমন শাস্তি দিয়েছে। এবার বুঝুক মজা। ছেলেদের সঙ্গে কেন এতো ঘেঁষতে হবে তাও আবার তার নিষেধ অমান্য করে?
,,, ,,, ,,,
কাজ করতে করতে অফিস টাইম ওভার হয়ে গেছে তবুও মৃধার ফাইল গুলো কম্পিলিট হয়নি। ইতোমধ্যে সবাই চলে গেছে শুধু মৃধা একাই কাজ করছে। মৃধার ফাইলগুলো শেষ করতে করতে রাত নয় টা বেজে গেল। তারপর ফাইলগুলো জমা দিতে গিয়ে দেখল আয়ানের কেবিন ফাঁকা অর্থাৎ সে ও চলে গেছে। এখন মৃধা ফাইলগুলো কাকে দিবে। মৃধা অফিস থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলে একজনকে দেখে থমকে যায়। সে হলো সেদিনের সেই ভিক্ষুক যার সঙ্গে আয়ান চেচামেচি করছিল। মৃধা লোকটির কাছে এগিয়ে গেল। লোকটি দারোয়ানের পোশাক পরিধান করে অফিসের গেটের কাছে একটা টুলে বসে আছে। মৃধা লোকটিকে বলল,
— ” আপনি এখানে কী করছেন চাচা?”
লোকটি বলল,
— ” আমি তো এইহানের দারোয়ান।
–” আপনাকে আগে তো কখনো দেখি নি?
— আমার ডিউটি সাত টার পর থেইকা ভোর পর্যন্ত তারপর অন্য লোক আহে।
— ও আচ্ছা, তা আপনাকে এখানে কে চাকরি দিল? আপনি না রাস্তায় ভিক্ষে করতেন?
লোকটি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলতে শুরু করল,
— এক ফেরেস্তার মতো মানুষ আমারে রাস্তা থেইক্কা তুইলা আইনা এইহানে ঠাঁই দিছে।
মৃধা কৌতুহলী হয়ে বলল,
— কে সেই মানুষ?
লোকটি চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল,
— আমগো আয়ান সার(স্যার)। রাস্তায় ভিক্ষা করতে দেইখা তিনি আমারে এইখানে কামের ব্যবস্থা কইরা দেয়। এহন আলহামদুলিল্লাহ তার দয়ায় ভালোই আছি।
মৃধা বুঝতে পারল সেদিন সে আয়ানকে ভুল বুঝেছে। আয়ানের জন্য তার মনে এবার কিছুটা হলেও একটা সফট কর্ণার তৈরি হলো। মৃধা মনে মনে আয়ানের কথা ভাবতে ভাবতে চলে যাচ্ছিল ঠিক তখনই লোকটি পেছন থেকে আবার তাকে ডেকে বলল,
— খাড়াও মা। আয়ান সার(স্যার) কইছে তোমারে তার বাড়িত গিয়া ফাইল জমা দিয়া আইতে। যাওয়ার আগে আমারে কইয়া গেছে তোমারে জানাইয়া দিতে।
মৃধা বেশ চিন্তায় পরে গেল। এখন প্রায় রাত নয় টা বিশ বাজে। এখন আয়ানদের বাড়িতে গিয়ে ফাইল জমা দিয়ে বাড়ি যেতে তো প্রায় এগারো টা বেজে যাবে। এতো রাতে একা একটা মেয়ে হয়ে সে কীভাবে সাহস করে এগোবে। তবুও কিছু করার নেই চাকরি বাঁচাতে এটুকু রিস্ক তাকে নিতেই হবে। অগত্যা মৃধা চলল আয়ানদের বাড়িতে।
,,, ,,, ,,,
আয়ান নিজের ঘরে বসে ফোন স্ক্রল করছিল ঠিক সেসময়ই নিচে থেকে তার দাদুভাই এর ডাক ভেসে এলো। আয়ান তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে এলো।সে ভাবল যদি দাদুভাই এর কিছু প্রয়োজন হয় এমনিতেই অসুস্থ শরীর তার। কিন্তু নিচে নেমে দাদুর পাশে মৃধাকে দেখে তার আর বুঝতে বাকি রইল না কেন তার দাদুভাই তাকে ডেকেছে।
চলবে,