#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
“পর্ব-১৮(বোনাস পার্ট)
ভোরের স্নিগ্ধ আলো চোখে পড়তেই চোখ মেলে তাকালো আয়ান। আজ সকাল টা তার একটু অন্যরকম ভাবে শুরু হলো। এত সকালে সে কখনোই ঘুম থেকে উঠে না। তাই ভোরের আলো গায়ে মাখার সুযোগও হয় না। আজ অনেকটা স্নিগ্ধ লাগছে তার নিজের কাছে নিজেকে। বাসর রাতে বেলকনির ডিভানে বসে সিগারেট টানতে টানতে সেখানেই ঘুমিয়ে পরেছিল সে। নতুন বউ ঘরে ফেলে সে বেলকনিতে রাত কাটিয়েছে।
যাচাই বাছাই না করে হুটহাট কোনো কিছুকে বিশ্বাস করে নেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু মনের মানুষকে কনের সাজে অন্যপুরুষের হাতে হাত ধরে দাড়িয়ে থাকতে দেখলে কোনো পুরুষেরই মাথা ঠিক থাকার কথা নয়। আয়ানের ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই হয়েছে। গতকাল তাকে সেন্ডকৃত ভিডিও ক্লিপটি এমন ছিল যে, “মৃধা নয়নের হাতের ওপর হাত রেখে দাড়িয়ে আছে।” আর সেন্ডকৃত মেসেজটিতে লেখা ছিল,”আপনার হবু বউ তার প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করছে।” আসলে মৃধা নয়নের থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য নয়নের হাতের ওপর হাত রেখেছিল ঠিক সেই মুহূর্তেই কেউ ছোট্ট একটি ভিডিও তৈরি করে ফেলে এবং ভিডিওটি বর্তমান উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে আরও একটু জোরদার করে ফেলে।কিন্তু আয়ান সবটা না জেনেই এই বিষয়টাকে কেন্দ্র করে আয়ান মৃধার সঙ্গে বিয়েটা ভেঙে দিতে চেয়েছিল। মৃধা রাজি থাকায় সেটা আর সম্ভব হয়নি তাই এক বছরের কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করেছে। তবে রাতে যখন সে মৃধাকে কন্ট্রাক্ট পেপার ধরিয়ে দিয়ে বেলকনিতে এসে সিগারেট টানছিল ঠিক তখনই তার মাথায় আসে কে তাকে এসব পাঠালো? আয়ান ভাবল, এসব তো মিথ্যেও হতে পারে। সবকিছু না জেনে মৃধাকে সন্দেহ করাটা তার ঠিক হয়নি। সে ভাবল এই ছোট্ট ভিডিও, মেসেজকে বিশ্বাস না করে সরাসরি মৃধার সঙ্গে কথা বলবে। যেই ভাবা সেই কাজ আয়ান তখন সিগারেট ফেলে বেলকনি থেকে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল। আয়ান কিছু বলতে নিবে কিন্তু দেখল মৃধা ঘুমিয়ে পড়েছে। আয়ান আর কিছু বলল না প্রশ্নাত্মক মন নিয়ে ফিরে গেল বেলকনিতে। দিয়াশলাই দিয়ে ধরাল আরও একটি নিকোটিন। নিকোটিনের ধোঁয়া হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে দিতে তার চোখেও ভর করল ঘুমপরীরা। অগত্যা মনের কোণে অজানা প্রশ্ন নিয়ে সেও পাড়ি জমালো ঘুমরাজ্যে।
—————————
আহিবার ঘুম ভাঙল মিষ্টিমধুর আজানের ধ্বনি কর্ণপাত হতেই। আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুলল সে। ডানপাশে চোখ পড়তেই বলিষ্ঠ পুরুষ অবয়বটিকে দেখে লজ্জায় মিয়িয়ে গেল। দু-হাত নিজের মুখমন্ডল আড়াল করল। “এই পুরুষটি তার স্বামী”-ভাবতেই এক অন্যরকম ভালো লাগায় ছেয়ে যাচ্ছে তার মন প্রাণ। আবার কিছু মুহূর্ত মনে পরতেই তার লজ্জারাঙা মুখটি নিমেষেই ঢেকে গেল কালো আধারে।
গতরাতে আহিবার বাসর রাত ছিল। এই রাত নিয়ে প্রতিটি নারীর মতো তার মনেও অনেক স্বপ্ন ছিল। তার স্বামী তাকে ভালবাসবে, কাছে টানবে, মধুর মধুর আলাপ করবে এটাই চায় সব নারী। আহিবাও চেয়েছিল কিন্তু তার এসব স্বপ্ন ধুলিসাৎ করে দিয়ে আদ্র তাকে শুধু একটা কথাই বলল। আহিবা যখন আদ্র ঘরে ঢোকার পর তার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল। তখন আদ্র তাকে তুলে খাটের কোণে বসিয়ে দিল। তারপর নিজে সটান হয়ে দাড়িয়ে বলতে শুরু করল,
–‘ দেখো আহিবা আমার জীবনে কিছু জঘন্য অধ্যায়ের কারণে ছোট থেকেই আমি এই বিয়ে নামক পুতুলখেলার ঘরটাকে ভীষণ ভাবে ঘৃণা করি। তবুও দাদুর খুশির জন্য বিয়েটা আমাকে করতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। তাই তোমাকে মেনে নেওয়াটা আমার পক্ষে শত চেষ্টা করেও সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমি তোমাকে অস্বীকার করছি তা নয়। তুমি আমাকে কিছু দিন সময় দাও। আমি মন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। ইনশাল্লাহ একদিন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমরাও আর পাঁচটা স্বামী-স্ত্রীর মতো সংসার করতে পারব।’
আদ্রের কথা শুনে আহিবা কিছু বলল না। শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। সে মনে করে আদ্রকে তার সময় দেওয়া উচিত। প্রত্যেকটি মেয়ের যেমন স্বামীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় প্রয়োজন তেমনই ছেলেদেরকেও সময় দেওয়া উচিত। সব ছেলেরা তো আর এক নয়। আদ্র আহিবার সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা না থাকলেও আদ্র আহিবার সঙ্গে বন্ধুক্তপূর্ণ আচরণই করছে। তারা এক খাটেই দুজনে ঘুমিয়েছে তবে খাটের এপাশ ওপাশ করে।
—————————–
ভোরের আলো গায়ে মাখার পর আয়ান বেলকনি ছাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। গতরাতের অসম্পূর্ণ কথাগুলো আজ যেকরেই হোক মৃধাকে সে বলবে। সবকিছু মৃধার মুখ থেকে না শোনা পর্যন্ত সে কিছুতেই স্থীর থাকতে পারছে না।
ঘর প্রবেশ করতেই তার চোখ জোড়া আটকে গেল বিছানায় এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে থাকা সুন্দরী রমনীর দিকে। ঘুমের প্রকোপে অগোছালো হয়ে রয়েছে মৃধার সর্বাঙ্গ। মাথার টিকলি কপাল থেকে সরে অন্যপাশে পড়ে রয়েছে, বেবি হেয়ারগুলো ক্লিপ থেকে বেড়িয়ে কপালের ওপর পড়ে রয়েছে,হাত-পা এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সবথেকে বেশি যেটা আয়ানকে আকর্ষণ করছে সেটা হলো মৃধার উন্মুক্ত পেট আর পায়ের কাছের কিছু অংশ। যেখান থেকে শাড়ি সরে গিয়ে তার ফর্সা শরীর উন্মুক্ত হয়ে রয়েছে। আয়ান চেয়েও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। অবাধ্য মন বারবার চাইছে মৃধাকে একটু ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু না সবকিছু প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত সে কিছুতেই মৃধার নিকটে যাবে না। চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস টেনে নিজেকে সংযত করে নিল আয়ান। তারপর দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।
——————————
“নির্লজ্জের মতো আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসো।”
চোখ বন্ধ অবস্থাতেই কথাটি বলল আদ্র। এদিকে আহিবা বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল আদ্রের কথায়। সে মনে মনে ভাবল,’লোকটা কী চোখ বন্ধ করে দেখতে পায় নাকি?’
আদ্র চোখ খুলল।আহিবার ভাবনাকে উপেক্ষা করে আদ্র বলল,
–‘ নাহ আমি চোখ বন্ধ করে কিছুই দেখতে পাই না তবে অনুভব করতে পারি। খেয়াল করে দেখলে এমন অনুভব তুমিও করতে পারবে।’
আহিবা অবাক নয়নে বলল,
–‘ আপনি কী মাইন্ড রিড করতে পারেন নাকি নয়তো আমার মনের কথা কীভাবে জানলেন?’
আদ্র উঠে বসল আহিবার পাশে। আহিবার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
–‘ নাহ আমি মাইন্ড রিড করতেও জানি না। তবে তোমাকে বলা আমার ওই কথার পরিপ্রেক্ষিতে তুমি যে এটাই ভাববে সেটা বোঝা টা কী খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার?’
আহিবা মাথা নাড়ল যার অর্থ না। আদ্র আহিবার ইশারা দেখে বলল,তাহলে? আহিবা বোকার মতো চাহনি দিয়ে উত্তর দিল,কিছু না। আদ্র তারপর তাড়া দেওয়ার সুরে বলল,
— ‘ তাহলে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নিচে যাও।নতুন বউ বেলা করে নিচে নামলে বিষয়টা খারাপ দেখায়।’
আহিবা মুচকি হেসে উত্তর দিল, হুম যাচ্ছি। তারপর সে লাগেজ থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেল। আহিবা চলে যেতেই আদ্র উঠে পড়ল দ্রুত। তার আবার এক্সারসাইজ করার সময় হয়ে গেছে। কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে সে ছুটল এক্সারসাইজ রুমে।
চলবে,