#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
“পর্ব-২২”
বিষন্ন মনে ছোট্ট ছোট্ট পদচারণে বেলকনির দিকে অগ্রসর হচ্ছে মৃধা। শরীর টা ভীষণ খারাপ তার। মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। চোখজোড়া অসম্ভব ফোলা। হয়তো সারারাত কান্না করার ফলে এমনটা হয়েছে। আয়ান তাকে এতটা অবিশ্বাস করে এটা সে কখনোই ভাবেনি। এই সামান্য করানে আয়ান তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে? সবকিছু না জেনে শুনে এভাবে অন্যের কথা নিজের ভালবাসাকে অবিশ্বাস করাটাকে আর যাই হোক অন্তত ভালবাসা বলা যায় না। মৃধা নিজের মনে শপথ করে নিল, সে আর কখনোই আয়ানের কাছে কিচ্ছু প্রমান করতে চাইবে না। কী হবে প্রমাণ দিয়ে? যে ছেলের ভালবাসায় বিশ্বাস নেই তাকে কীসের প্রমাণ দেবে মৃধা? এখনও যদি সে আয়ানের আয়ত্তে চলাফেরা করে তাহলে নিজের বিবেকের কাছে চরম মাত্রায় পরাজিত হতে হবে তাকে। কিন্তু মৃধা সেটা কখনোই করবে না।
গতরাতে আয়ান নেশার ঘোরে মৃধাকে সেই ভিডিও সহ সেদিনকার সমস্ত ঘটনা খুলে বলেছে। মৃধা প্রথমে ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল কারণ সে ভেবেছিল আয়ান তার সঙ্গে স্বামীর অধিকার ফলাতে চায়। কিন্তু না সেই মুহূর্তে আয়ান তাকে অবাক করে দিয়ে বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করে দেয়। মৃধার হাতজোড়া তখন আয়ানের দু’হাতে আবদ্ধ আর আয়ানের মুখ মৃধার গলার মাঝ বরাবর অবস্থানকৃত। আয়ানের এমন কান্নার মানে মৃধা কিছুই বুঝতে পারছিল না। পরক্ষনেই আয়ানকে জিজ্ঞেস করলে সে নেশার ঘোরে সবটা স্বীকার করে নেয় মৃধার কাছে।স্বীকার করে নেয় মৃধাকে ঘিরে শুরু থেকে তার লুকায়িত অনুভূতির কথা এবং বিয়ের দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনা । তারপর ওভাবেই মৃধার শরীরের ওপর নিজের সমস্ত ভর ছেড়ে দিয়ে পাড়ি জমায় ঘুমরাজ্যে। মৃধার চোখে ঘুম নেই। সে শুধু একটা কথাই ভাবছে, এত ভালবাসার পরেও একটা মানুষ কীভাবে পারে এত সহজেই অবিশ্বাস করতে তাও আবার সামান্য একটি ভিডিও ক্লিপ এর ওপর নির্ভর করে।
————————-
আহিবা মৃধার বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার সাপেক্ষে আগে থেকেই মুগ্ধের সাথে তার ভালো সম্পর্ক। মৃধার মতো আহিবাকেও মুগ্ধ বোনের মতো ভালবাসে। এ বাড়িতে এসে মৃধার সাথে সাথে আহিবাকেও সারাজীবনের জন্য একত্রে পেয়ে মুগ্ধ অনেক খুশি হয়েছে। আজ মুগ্ধের এইচ.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবে। মুগ্ধ আপাতত অনেকটাই নার্ভাস। সে জানে তার পরীক্ষা ভালো হয়েছে তবুও চিন্তা কিছুতেই কমে না। আহিবা কিচেনে গিয়েছিল পানি আনতে সেখান থেকে মুগ্ধকে অস্থির হয়ে পায়চারি করতে দেখে তার কেমন একটা খটকা লাগলো। সে পানির জগটা রেখে দ্রুত মুগ্ধর কাছে ছুটে এসে বলল,
–‘ কী হয়েছে ভাই? এভাবে অস্থির হয়ে পায়চারি করছিস কেন?’
মুগ্ধ ভীত কন্ঠে বলল,
–‘ আরে আহিবা আপু ওপস সরি ভাবি। শোনা না আজকে আমার রেজাল্ট ঘোষণা হবে। টেনশনে মরে যাচ্ছি আমি। ‘
আহিবা মুগ্ধের এক কান টেনে দিয়ে বলল,
–‘ এতো টেনশনের কী আছে বুদ্দু। আমি জানি তোর রেজাল্ট খুব খুব খুব ভালো হবে। ‘
মুগ্ধ আহিবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
–‘ তাই যেন হয় ভাবি। ‘
আহিবাও মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–‘ ইনশাল্লাহ হবে। আচ্ছা শোন বাসার কেউ জানে না তোর যে রেজাল্ট বের হচ্ছে আজকে?’
–‘ নাহ এখানো কাউকে বলিনি। এই তোমাকে বললাম শুধু। বাড়িতে একবারে রেজাল্ট হাতে পেয়ে জানাব। তুমি কিন্তু আগে থেকে কাউকে বলবে না। ‘
–‘ আচ্ছা ঠিক আছে বলব না কাউকে। ‘
–‘ হুমমমম’
তারপর আহিবা চলে গেল আদ্র সহ বাকি সবাইকে ব্রেকফাস্ট করার জন্য ডাকতে। আর এদিকে মুগ্ধ আহিবা যেতেই সঙ্গে সঙ্গে ডাইনিং টেবিলে লাফ দিয়ে বসে পরেছে। টেনশনে কী করছে না করছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না।
————————–
হৈ-হুল্লোড়ের শব্দে রুম থেকে বের হতে নেয় মৃধা। ঠিক তখনই আয়ানের সঙ্গে স্বজোরে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নেয় সে। কিন্তু পড়ায় আগেই আয়ান তাকে নিজের বক্ষঃস্থলে আবদ্ধ করে নেয়। মৃধার ঘটনাটা বুঝতে কিয়ৎক্ষণ সময় লাগে। নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে নিয়ে মৃধা আয়ানকে ধাক্কা মেরে দুরে সরিয়ে দেয়। তারপর গটগট করে হেঁটে বাহিরে চলে যায়। ঘটনার আকষ্মিকতায় আয়ান হতভম্ব। উপকার করল অথচ ধন্যবাদের বদলে রাগ দেখতে হলো কেন? মৃধার আচরণে সকাল থেকেই ভয়াবহ পরিবর্তন লক্ষ্য করছে সে। কিন্তু এই পরিবর্তনের কারণ তার অজানা।
নিচে নেমে পুরো ঘটনা নিজের মস্তিষ্কে আয়ত্ত করে নিয়ে মৃধার আনন্দ আর দেখে কে। মুগ্ধ এইচএসসি-তে প্লাস পেয়েছে। এই খবর পেয়ে বাড়ি শুদ্ধ সবাই ভীষণ খুশি। আহিবা তো খুশিতে লাফিয়ে উঠে মুগ্ধকে বলছে,
–‘ কী বলেছিলাম না তোর রেজাল্ট ভালো হবেই।’
এদিকে আফরোজ চৌধুরী বলে দিয়েছেন মুগ্ধের ভালো রেজাল্টের জন্য বাড়িতে বড় করে সেলিব্রেশন হবে। কিন্তু মুগ্ধ এই প্রস্তাবে ঘোর আপত্তি জানিয়েছে। সে বলেছে সেই টাকা এতিমখানা সহ বিভিন্ন বৃদ্ধাশ্রমে বিতরণ করে দিতে। তাহলে অন্তত এতিম,বৃদ্ধ মানুষগুলো তার জন্য দোয়া করবে। সেই দোয়ায় সে আরও অনেক দুর যেতে পারবে। মুগ্ধের এমন সিদ্ধান্তে আপ্লুত সবাই। সবার ছোট হয়েও তার মধ্যে কী সুন্দর স্বচ্ছ চিন্তাধারা। এসব চিন্তার সঞ্চার হয়তো সেই ছোট্ট কুঁড়েঘরের জীবন থেকে হয়েছে। আয়েশ চৌধুরী ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
–‘ আমার ছেলেটা সত্যি সত্যিই অনেক বড় হয়ে গেছে। দোয়া করি এমন চিন্তাধারা তোমার মস্তিষ্কে সারাজীবন অব্যাহত থাকুক। গরীবদের কথা চিন্তা করে যে জন, তার কথা সয়ং আল্লাহ তায়ালা চিন্তা করেন। তোমার এমন বিবেচনাবোধ দেখে আমি সত্যিই ভীষণ ভাবে আনন্দিত এবং গর্বিত।’
আয়েশা চৌধুরীর কথায় সবাই সায় দিল। তবুও একদম কিছু হবে না সেটাতো হয় না। আদ্র বলল আজ রাতে খাওয়া দাওয়ার মেনুটা কিছুটা চেঞ্জ করা হবে। আপাতত এটাকেই আমরা সেলিব্রেশন বলে ধরে নিতে পারি। আদ্রের প্রস্তাবে সবাই রাজি। আয়েশা চৌধুরী আর আহিবা বলল তারা দু’জনে নিজেদের হাতে রান্না করে মুগ্ধকে খাওয়াবে৷ তাদের সঙ্গে সায় জানিয়ে মৃধা বলেছে সে মুগ্ধর পছন্দের একটা কেক তৈরি করবে। আয়ান বলেছে তার তরফ থেকে গিফট আসছে রাতে। সবার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেল।
—————————–
যত আনন্দঘন পরিবেশই হোক না কেন আয়ানের মনটা খারাপ। মৃধা তাকে ক্রমাগত ইগনোর করছে। কিন্তু কেন? এতদিন তো মৃধা এমন করে নি। তাহলে আজ কেন এমন করছে? তার দিকে একটি বার ফিরে অব্দি তাকাচ্ছে না। তার মনটা ভীষণ ছটফট করছে। ইতিমধ্যে সে অনেক বার চেষ্টা করেছে মৃধার সঙ্গে কথা বলার কিন্তু ফলাফল শূন্য।
ইয়া বড় একটা কেক নিয়ে হাজির মৃধা। সকলেই কেকটার খুব প্রশংসা করছে। এদিকে আহিবা মুগ্ধের জন্য তৈরি করেছে কিছু পদের পিঠা,মিষ্টি। আশেয়া চৌধুরী ছেলের পছন্দের সমস্ত খাবারের পদ আর সেই সঙ্গে পায়েস রেঁধেছেন। আয়ান আর আদ্র গিফট নিয়ে হাজির হয়ে গেছে। তাদের একমাত্র ছোট ভাইয়ের সেলিব্রেশন বলে কথা। তবে সব খাবার ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি। এই সেলিব্রেশনের মূল আকর্ষণ এটাই।
সবকিছু তৈরি। ঠিক কেক কাটার জন্য প্রস্তুত মুগ্ধ। মৃধার পাশে দাড়িয়ে মৃধার তৈরি কেকটা কাটতে চলেছে মুগ্ধ। সবেমাত্র মোমবাতি গুলো নিভিয়েছে সে। তারপর যখনই কেকটায় ছুড়ি চালাতে যাবে ঠিক সেসময়ই কেউ “আয়ান” বলে জোরে ডেকে ওঠে। সবার দৃষ্টি মুহূর্তেই চলে যায় সদর দরজায়।
চলবে,
#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
“পর্ব-২৩”
ন্যায়রার আগমনে বিরক্তির রেশ উপস্থিত সবার মুখে। আয়ানও মনে মনে ভীষণ বিরক্ত কিন্তু মুখে প্রকাশ করছে না। সবাইকে স্তব্ধ দেখে ন্যায়রার প্রশ্ন,
— কী হলো এভাবে চুপ মে’রে গেলে কেন সবাই? আর এখানে আমাকে বাদ দিয়ে কীসের সেলিব্রেশন হচ্ছে শুনি?
আয়ান হেসে জবাব দিল,
— আজ আমাদের মুগ্ধের রেজাল্ট বেড়িয়েছে।মাশাল্লাহ, ভাই আমার খুব ভালো করেছে। সেটারই ছোট্ট সেলিব্রেশন হচ্ছে আরকি।
— তাই বলে আমাকে বাদ দিয়ে?দিস ইজ নট ফেয়ার আয়ান।
–ওকে সরি, এবার আয় তো লেট হয়ে যাচ্ছে তো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ আসছি
অনিচ্ছা সত্ত্বেও সবাই ন্যায়রাকে এই খুশির মুহূর্তের শামিল করতে বাধ্য হলো।সবথেকে বেশি যার ন্যায়রার প্রতি অনিহা সে আর কেউ নয় আমাদের মৃধা। তার অবশ্য সবথেকে বড় কারণ ন্যায়রা গিয়ে আয়ানের সঙ্গে চিপকে দাড়িয়েছে। কী দরকার আছে অন্যের বরের এত কাছে ঘেঁষাঘেঁষি করার। নিজে একটা বর তৈরি করে তার সঙ্গে চিপকে থাক না। কে মানা করছে তোকে? ডাইনি একটা, রাক্ষসী, আমার বরটাকে হজম করার ধ্যান্দা। এমনও হাজারটা গালি মনে মনে ন্যায়রার উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিচ্ছে মৃধা।
কেক কেটে সবাইকে কেক খাওয়ানোর পালা শেষ। সবাই মৃধার তৈরি কেকের অনেক প্রশংসা করেছে। শুধু আড়ালে মুখ ভেংচি কেটেছে ন্যায়রা। তারমতে কেকটা খুবই চিপ হয়েছে আরও স্ট্যান্ডার্ড হওয়া উচিত ছিল।
সবাই মিলে এখন আড্ডা দিচ্ছে ড্রইং রুমে। ন্যায়রা এখনো আয়ানের পাশ ঘেঁষে চিপকে আছে। মৃধা ওদের থেকে কিছুটা দুরে। আহিবা ন্যায়রাকে সেভাবে চেনে না তবুও তার কাছেও ওকে কেমন অসহ্য লাগছে। তার মনে হচ্ছে মেয়েটা একটু বেশিই বেহায়া নয়তো অন্যের বরের কোল ঘেঁষে বসার কী আছে? মনের সন্দেহ মনেই রেখে দিয়ে আড্ডায় মন দিল সে।
সবাই মিলে আয়ানকে চেপে ধরেছে একটা গান গাওয়ার জন্য। অবশেষে সবার রিকুয়েস্টে আয়ান সুর তুলেছে গিটারে।রুমের চারপাশে নিস্তব্ধতা মাঝখানে গিটারের টুংটাং আওয়াজে। যতবার গিটারে আওয়াজ উঠছে ঠিক ততবারই মৃধার বক্ষঃস্থল কেঁপে কেঁপে উঠছে। বারংবার মনে হচ্ছে এই গিটারের সুর শুধু তার নামে উঠছে। সত্যিই কী তাই?
( Ek villain মুভির Banjjara গানটি গাইল আয়ান। পুরোটা সময় আয়ান শুধু মৃধার চোখে নিজের দৃষ্টি আবদ্ধ রেখেছে। দুজন কেমন একটা ঘোরে ডুবে ছিল। এই দৃশ্য দেখে হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছিল ন্যায়রার হৃদয়।)
করতালির আওয়াজে ধ্যানভঙ্গ হয় আয়ানের। মৃধাও এতক্ষণে তার দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে অন্যত্র। সবাই আয়ানের গানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ শুধু নিস্তব্ধ মৃধা। মৃধাকে চুপ থাকতে দেখে মুগ্ধ বলল,
–‘ কী হলো আপুনি আমার ভাইয়ের গানটা কেমন লেগেছে বলো বলো?’
মৃধা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
–‘ কী বলবো? ভালোই ছিল নিশ্চয়ই। ‘
আয়ান সহ সকলে হতাশ হলো মৃধার জবাবে। পরিস্থিতি অন্যরকম দেখে মৃধা দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়ল। সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সময় কাধ বাঁকা করে ন্যায়রার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে কটু কথা শোনাতে ভুলল না সে। তারপর আবার দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেল নিজ কক্ষে।
—————————–
ভয়ংকর রেগে আছে মৃধা । যেন তার রাগের আগুনে সকলে ভষ্মীভুত হয়ে যাবে এমন। আয়ান তার থেকে কিছুটা দুরত্ব অবলম্বন করে আছে। কারণ এই মুহুর্তে মৃধা হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ছুড়ে মারছে। আয়ান বারকয়েক মৃধাকে থামানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। আয়ান কিছুতেই বুঝতে পারছে না মৃধা কেন এমন করছে। অবশেষে আয়ান নিজেকে ধাতস্থ করে ধীরে ধীরে মৃধার নিকটে পৌঁছল। তারপর পেছন থেকে মৃধার এক হাত ঘুরিয়ে এনে তাকে বক্ষঃস্থলে মিশিয়ে নিল। হঠাৎ আক্রমণে মৃধা খানিকটা শান্ত হলো। অনেকক্ষণ ভাঙচুরের ফলে এমনিতেই সে ক্লান্ত ছিল তাই আয়ানের তেমন একটা কষ্ট হয়নি তাকে বসে আনতে। আয়ান মৃধাকে বুকের শক্তে চেপে ধরে বলল,
–‘ কী প্রবলেম কী তোমার? এমন করছ কেন?পাগল হয়ে গেলে নাকি?সকাল থেকে দেখছি আমাকে ইগনোর করছ এখন আবার এমন পাগলামি? এসবের মানে কী মৃধা?
মৃধার রাগ যেন আয়ানের কথায় আরো দিগুণ বেড়ে গেল। সে জোরে আয়ানের বুক বরাবর হাত দিয়ে ধাক্কা মা’র’ল। আয়ান কিছুটা দুরে ছিটকে গেল। মৃধা আয়ানের দিকে ক্রোধান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কর্কশ কন্ঠে বলল,
–‘ নাটক হচ্ছে তাই না। তুই কিছুই জানিস না। এতসব কান্ড করে এখন নিজে কিছুই জানে না। যারা আমার ক্ষতি করতে চায় তাদের সঙ্গে সারাদিন ঢলাঢলি করে বেড়াবে আর দিনশেষে আমাকে এসে বলবে কী হয়েছে। তুই কেন এসেছিস এখানে? যা না তোর ওই ন্যায়রা ডাইনির কাছে যা। পেত্নী, শাঁকচুন্নি একটা আমার সবে সবে গড়ে ওঠা সংসার ভাঙার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছে। আর তুই আমার বর হয়ে কীনা সর্বক্ষণ ওই ডাইনিকে সঙ্গ দিস। আজ তোর একদিন কী আমারই একদিন। এই মৃধাকে যতটা নরম মনের ভাবছিস এই মৃধা ঠিক ততটাই কঠিন। আজ দেখাব তোকে মজা কাকে বলে। ঘরে বউ রেখে অন্য নারীর সঙ্গে ঘেঁষাঘেঁষি তাও আবার বউকে দেখিয়ে দেখিয়ে। দাঁড়া তোর হচ্ছে আজকে।’
কথা শেষ করে মৃধা একটা ফুলদানি হাতে তুলে নেয় আয়ানের গায়ে ছোড়ার উদ্দেশ্যে। আয়ানের চক্ষু চড়কগাছ। একে তো মৃধা তাকে তুই তুকারি করছে তারওপর আবার থ্রেড দিচ্ছে। এখন আবার মা’রতে উঠছে। আয়ান দ্রুত পদে হেটে এসে মৃধার থেকে ফুলদানি টি তিনি নিল।অতঃপর বলল,
–‘ এসব কী বলছ তুমি মৃধা। আমাকে তুই তুকারি করছ। তুমি নিশ্চয়ই সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছ। আর ন্যায়রা তোমার ক্ষতি কেন করতে যাবে? তুমি শুধু শুধুই ওকে ভুল বুঝস।’
–‘তাই না আমি ভুল বুঝছি আর তুই তো খুব সঠিক বুঝছিস। তা কীভাবে বললে বিশ্বাস করবি তুই যে তোর ন্যায়রা আমার ক্ষতি চাইছে? গতরাতে মাতাল হয়ে সবই তো স্বীকার করে নিয়েছিস আমার কাছে তাহলে এখন এসব নাটক বাদ দে। তুই নাকি আমায় ভালবাসিস? তো কেমন ভালবাসা রে তোর যে সামান্য একটা দুই সেকেন্ডর ভিডিও দেখে আমাকে অবিশ্বাস করলি? আমি কী তোকে বলেছিলাম আমি নয়নকে ভালবাসি? আর না ওই ভিডিওতে আমি নয়নকে ভালবাসি বলেছিলাম? কোনটা বল? শুধু হাত ধরা দেখেই বুঝে নিলি আমি নয়নকে ভালবাসি। অদ্ভুত!’
আয়ান প্রশ্নাত্বক দৃষ্টি নিয়ে বলল,
–‘তাহলে নয়ন কেন তোমার হাত ধরে ছিল? ‘
–‘ ওই যে ষরযন্ত্র। ষরযন্ত্র করে আমাদের আলাদা করার জন্য এমনটা করেছে ন্যায়রা আর নয়ন। আমি সবকিছু ওদের কাছ থেকে জেনে নিয়েছি। ‘
–‘ কীভাবে? ‘
তারপর মৃধা আয়ানকে সবকিছু খুলে বলল। দুই -এ দুই-এ চার আয়ান বুঝতে পারল আসলেই মৃধা ঠিক কথা বলছে। আয়ান মৃধাকে বলে,
–‘ আচ্ছা আমারও একটা সন্দেহ ছিল কিন্তু সেটা পুরোপুরি সিওর ছিলাম না। তবে এখন আমি পুরো কনফিডেন্ট। কিন্তু আমাদের ওদেরকে ধরতে হবে নয়তো ওরা কিছুতেই ধরা দিবে না। ‘
–‘ হুম সেটা আমি জানি এজন্যই তো এতদিন সব জেনেও কিছু করতে পারছিলাম না। ‘
–‘ আচ্ছা তাহলে একটা কাজ করি আমরা দুজনে একটা প্ল্যান তৈরি করি যেটার মাধ্যমে খুব সহজেই ওদের ধরতে পারব। ‘
–‘ হুম করাই যায় তবে খুব একটা সহজ ব্যাপার নয় কিন্তু? ‘
–‘ খুব কঠিনও নয়। তুমি সাথে থাকলে সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে প্রস্তুত আমি।’
–‘ এ্যাহহহ ঢং, হুহহ
—————————
বেলকনিতে থাকা গোলাপ গাছে আজ লাল রঙা গোলাপের দেখা মিলেছে। সেই গোলাপ খুব সন্তপর্ণে ছুয়ে দিচ্ছে আহিবা। এই গোলাপ গাছটি আদ্র লাগিয়েছে। শুধু গোলাপ নয় আরও নানারকম ফুলের গাছ দিয়ে ডেকোরেট করা তার বেলকনি। আহিবার কোমল হাতের ছোঁয়ায় আদ্রের গাছগুলো আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। আহিবা ফুলগুলোর সঙ্গে আপন মনে খেলা করছে। হঠাৎই পেছন থেকে রাশভারী কন্ঠস্বর কানে বাজতেই কেঁপে উঠল সে।
–‘ আমার গাছে হাত দেওয়ার সাহস কী করে হলো তোমার? ‘
চলবে,