ক্যামেলিয়া পর্ব-০৩

0
12

#ক্যামেলিয়া
#ফারহানা_চৌধুরী
[পর্ব ৩]

গ্রিল ভেদ করে আসা এক ফালি সূর্যের আলো মুখে পড়তেই ঘুমের মধ্যে মুখ কুঁচকে নিলো ইনায়া। ঘুমের মাঝেই ঘুড়ে শুলো অপর পাশে। হাত বিছানায় ছুঁড়ে রাখলো৷ তবে বিছানায় না পড়ে কোথাও একটা পড়লো। অনেক শক্ত কিছুর উপর। ইনায়া পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো। চোখের সামনে হুট করে একজন পুরুষকে দেখে ভড়কে গেলো। ধ্রুব তাকিয়ে আছে তার দিকে। ইনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো—“আপনি এখানে?”

বলতে বলতেই মনে পড়লো সে বিবাহিত! গতকাল তার বিয়ে হয়েছে। ধ্রুবর সাথে। ইনায়া তাকালো ধ্রুবর দিকে। তারপর নিজের দিকে। তাদের মধ্যকার দূরত্ব খুবই কম। যা দেখে ইনায়া চটপট উঠে পড়তে নিলো। তখনই হাতে টান খেলো। হুড়মুড়িয়ে পড়লো ধ্রুবর বুকে। চোখ বড়বড় তাকালো ছেলেটার মুখের দিকে। ধ্রুব বরাবরের মতোন নির্লিপ্ত, নির্বিকার মুখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ইনায়া ধ্রুবর বুক থেকে সরে যেতে গেলেই শক্ত এক টান পড়লো তার হাতে। চোখ বড় করে তাকালো সে। ইনায়া কপালে ভাঁজ ফেলে কটমট করে তাকালো ধ্রুবর দিকে—“আপনি কি করছেন এসব?”

ধ্রুব ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বললো—“নিজের হাসবেন্ডকে নিজের কাছে দেখে এত অবাক হওয়া উচিত না, মিসেস আহসান।”

ইনায়ার মুখে বিরক্তি ফুটে উঠলো। আবার উঠে বসতে গেলেই ধ্রুব হালকা একটা ঝটকা দিয়ে তাকে আরও কাছে টেনে নিলো। এখন প্রায় ধ্রুবর বুকের ওপর হেলান দিয়ে পড়েছে সে। ইনায়া রাগে গজগজ করতে লাগলো এবার—“আপনার সমস্যা কী?”

ধ্রুব এবার সত্যি হেসে ফেললো, চোখে একরকম দুষ্টুমি ঝিলিক দিয়ে উঠলো যেন। সে অসভ্যের মতোন বলল—“আমার সমস্যা তো তুমি।”

ইনায়া হতবিহ্বল হয়ে গেলো। এই ধ্রুবর কি হয়েছে? কালকের রাত থেকে এমন আচরণ কেন করছে? তার জানামতে ধ্রুব সবথেকে লাজুক টিচার তাদের ভার্সিটির। এখন এমন নির্লজ্জের মতোন ব্যবহার কেন করছে? ইনায়া কিছু বলবে তার আগে তার ফোন বেজে উঠলো। ধ্রুব তার হাত ছেড়ে দিলো। ইনায়া ধ্রুবর দিকে তাকালো। আশ্চর্য রকমভাবে ছেলেটার মুখে সেই হাসিটা নেই। মুখমণ্ডল গম্ভীর করে ধ্রুব বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ইনায়া অবাক হলো। হলো টা কি ধ্রুবর? এমন ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদল কেন করছে?

ইনায়া ভাবলো না তেমন। উঠে গিয়ে বিছানার পাশে রাখা টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নিলো। আননোন নম্বর। আড়চোখে একবার ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো। ধ্রুব ততক্ষণে ওয়াশরুমে চলে গিয়েছে। ফোন কানে ধরতেই পরিচিত কন্ঠস্বর শুনলো—“ইনায়া?”

ইনায়া ভ্রু কুঁচকে ফেললো ততক্ষণাৎ। কানের থেকে ফোন নামিয়ে নম্বরটা দেখলো। সে চেনে না এই নম্বর। তবে কে ফোন করছে সেটা বুঝতে পারছে। সে ফোন কেটে দিলো। পরপর আবার বেজে উঠলো ফোন। ইনায়া একই কাজের আবারও পুনরাবৃত্তি ঘটালো। কল কেটে দিলো। তারপর আবারও বেজে উঠলো ফোনটা। ইনায়া প্রচণ্ড বিরক্ত হলো। রাগ নিয়ে ফোন তুলে কানে ধরলো। ঝাঁঝালো গলায় জিজ্ঞেস করল—“সমস্যা কি তোমার?”

ওপাশের লোকটা হাসলো হালকা। বলল—“ইগনোর কেন করছো?”
“আই গেস, তোমাকে ইগনোর করার মতোন কোনো সম্পর্ক আমাদের মধ্যে নেই আরাফ।”

আরাফ হাসলো আবার। পরক্ষণেই চোখ-মুখ শক্ত করে গর্জে উঠলো—“সম্পর্ক নেই? আমি কি তাহলে? বয়ফ্রেন্ড হই তোমার!”

ইনায়া রুক্ষ গলায় বলল—“ছিলে! এখন নেই। আর আমার ওপর চেঁচাতে আসবে না। তোমার টাকায় চলি না, যে তোমার হুমকি-ধমকি এসব মেনে চলবো।”

আরাফ বহু কষ্টে নিজের রাগ দমালো। তারপর কন্ঠস্বর যথেষ্ট নরম করে বলল—“ইনায়া? সোনা, প্লিজ ফিরে আসো। আই সোয়্যার সব তোমার মন মতোন হবে।”
“আর তারপর? তুমি আমাকে রুমডেটের অফার করবে, আমিও তোমার মিষ্টি মিষ্টি কথায় গলে হ্যাঁ বলে দেবো। তারপর তুমি আমাকে ইউজ করে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। তাই তো?”

আরাফাত রেগে গেলো। তবুও হেসে বলল—“সোনা রাগ উঠিও না। ভালো কথায় বলছি, শোন। আমার রাগ হচ্ছে।”
“আর তাতে তো আমার খুব ছিঁড়ে যাচ্ছে না? ফোন রাখো। আর কোনোদিন কল করলে, জেলের ভাত খাওয়াতেও আমার দু’সেকেণ্ডও লাগবে না।”

বলে ফোন কাটলো ইনায়া। বিছানা ছেড়ে উঠতেই পিছে তাকিয়ে দেখলো ধ্রুবকে। যে আপাতত ওয়্যারড্রবের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইনায়া অপ্রস্তুত হলো। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে ধ্রুব? ধ্রুব কি সব শুনেছে? সে বোঝেনওনি কিছু। ইশ! ইনায়া তাকালো ধ্রুবর দিকে—“কি হয়েছে?”
“দেখছি।”
“কি?”
“ভার্সিটির ভদ্রসভ্য মেয়েটা ভেতরে ভেতরে এমন তা ঠিক হজম হচ্ছে না আমার, মিসেস আহসান।”

ইনায়া হাসলো। হালকা এগিয়ে এসে দাঁড়িয়ে বলল—“ভার্সিটির লাজুক ছেলেটা যে ভেতরে ভেতরে এমন, সেটা আমারও ঠিক হজম হচ্ছে না মিস্টার আ-হ-সা-ন।”

টেনে টেনে শেষ কথা টুকু বলল ইনায়া। ধ্রুব হাসলো। ইনায়ার দিকে হালকা ঝুঁকে এসে বলল—“এমনই থেকো। আই লাইক ইট।”

ইনায়া হেসে বলল—“কারো কথা এভাবে শোনা, ব্যাড ম্যানারের মধ্যে পড়ে।”
“হাজবেন্ড হই। এতটুকু তো জানতেই পারি না?”
“পারেন, তবে লুকিয়ে না। আমি যখন সময় হবে নিজেই জানাবো আপনাকে। এমন কিছু করবেন না তার আগে, যেন আপনাকে কোনো কিছু বলার ইচ্ছেটাই আমার মন থেকে উঠে যায়।”
“এজ ইউর উইশ।”

তখনই দরজায় নক করলো কেউ। ইনায়া তাকালো দরজার দিকে। তখনই বাইরে থেকে ইশমামের গলা এলো—“ছোট আপু? আম্মু ডাকছে তোমাদের নাস্তা করতে।”

ইনায়া ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো—“আসছি, তুমি যাও।”

ধ্রুব হেসে বলল—“চলুন?”

বলে সামনের দরজার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। তাকে আগে যাওয়ার জন্য বলছে। ইনায়া দেখলো সবটা। তারপর চুপচাপ সামনে হেঁটে গেলো। দরজা খুলে বাইরে বের হলো। ধ্রুব সেদিকে তাকিয়ে হাসলো। তারপর নিজেও বউয়ের পিছু পিছু বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।

#চলবে….