গোধূলির শেষ প্রণয় পর্ব-০৬

0
10

#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৬

বসার ঘরে বড়রা বসে আলোচনা করছেন। আর একটা দিন পরেই বিয়ে। সব আত্মীয় স্বজনরা চলে আসছে। আজ সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ অয়ন আর নিরার। সময়টা কিভাবে পার হয়ে যাচ্ছে। সময় যত চলে যাচ্ছে মানহার যাওয়ার দিন তত ঘনিয়ে আসছে। সে থাকতে চায় না এই বিষাক্তময় শহরে। যে শহর তাকে অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক পীড়া দেয়। থাকতে চায় না সেখানে যেখানের মানুষ গুলো তাকে ডিভোর্সি শব্দটা সম্মোধন করে। নিজের আপনজনদের ছেড়ে চলে যাবে। নিজের কষ্ট হলেও ছেড়ে থাকতে হবে মা বাবা ভাই বোন সবাইকে। মানহার জবটাও হয়ে গেছে। আমেরিকার বিখ্যাত ইউনিভার্সিটিতে। নিজের যোগ্যতায় পেয়েছে তার চাকরিটা। বিয়ের পরেও চুরি করে পড়াশোনা চালিয়ে গিছিলো মানহা। সেটা তার প্রাক্তন স্বামী জানতো না। পরিবারের কাউকে সে জানায় নি। কিভাবে জানাবে। জানালে সে যেতে পারবে না। তাকে আঁটকে দেবে। মায়ের মুখটা বার বার ভেসে উঠছে মানহার। প্রথম যেদিন এসেছিল সেদিন কি খুশি হতে দেখছিল। আর যেদিন কাউকে না বলে চলে যাবে সেদিন কি হবে? তার মা কাঁদবে? হ্যাঁ। তার মা বাবা তার জন্য কষ্ট পাবে। কান্না করবে। আর তার অয়ন ভাই বাড়ি এসে যখন দেখবে মানহা চলে গেছে তখন খুব কি কষ্ট পাবে। তার ছোট্ট ভাই মিরাজ আপুকে না কান্না করবে। হয়তোবা। তার বড় চাচ্চু চাচি তারাও কি তার জন্য মন খারাপ করবে। সবটা ভেবেই খুব কান্না পাচ্ছে মানহার। নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে হাউমাউ করে কান্না করছে মানহা।

অতিরিক্ত কান্না করার ফলে হেঁচকি ওঠে। সবকিছু এলোমেলো লাগছে সবকিছু। বাড়িতে এতবড় আয়োজন, হাসি ঠাট্টা সবকিছু বিদঘুটে লাগছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। সব কিছু অসহ্য লাগছে। চারদেয়ালে নিজেকে বন্দী করে রাখছে। সবার সামনে যেতে মন সায় দিচ্ছে না। বাইরে গেলেই একাকজন একাক কথা বলবে যেটা মানহা সহ্য করতে পারবে না।

মানুষের মুখ কি ঠেকানো যায়? না। যায় না? মানহা কিভাবে ঠেকাবে সেই তো সবার মুখ থেকে ডিভোর্সি শব্দ টা শুনতে হবে। তার থেকে ভালো এই ঘরের সে ভালো আছে। তার আর সব ভাই বোনেরা কি সুন্দর জীবন পার করছে আর সে কিছু মানুষের তিক্ত কথা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
ওই ভিনদেশে তাকে বলার মতো কেউ নেই৷ না আছে এদের মত এক একটা অমানুষ না আছে কুটনামি।

সেখানে ঠিক মতো নিঃশ্বাস টা অন্তত নিতে পারবে। স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারবে। তাকে বাধা দেওয়া মতো কেউ নেই।

_______

নিরার গায়ে হলুদের জন্য তাদের বাগানটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আবরার নিজে সবকিছু তদারকি করছে। নিজ দায়িত্বে সব এরেজমেন্ট করছে৷ একমাত্র বোনের বিয়েতে কিছু কমতি রাখতে চায় না। নিরা খুব খুশি। নিজের ভালোবাসার মানুষ কে নিজের করে পাবে। এর মতো খুশি পৃথিবীতে আর একটাও নেই। সব ভালোই পূরণতা পায় না। নিরা খুব ভয়ে থাকতো যদি অয়নকে মেনে না নেয়। কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে সবাই অয়নকে মেনে নেয়। না মানার কোনো কারণ নেই। কারণ তাদের ও যেমন নামডাক আছে অয়নদের ও তেমন নামডাক আছে। কালকে সারাজীবনের জন্য অয়নকে নিজের করে পাবে নিরা। পার্লারের মেয়েরা এসে সুন্দর করে হাতে মেহেদী দিয়ে দিছে। হলুদের জন্য সুন্দর করে সাজিয়েছে। ভারি মেকাপের জন্য নিরাকে চেনা দুষ্কর হয়ে গেছে। নিরাকে নিয়ে স্টেজে বসানো হয়। প্রথমে নিরার মা আয়েশা বেগম হলুদ ছোয়ান তারপর একে একে সবাই নিরাকে হলুদ লাগায়। ক্যামেরাম্যান সুন্দর করে ছবি তুলছেন।

________

অয়নদের বাড়ির ছাদে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়। অয়নকে ছাদে নেওয়া হয়। ফিড়ের ওপর দাড় করিয়ে দেয় অয়নকে। বাড়ির বয়স্ক মহিলারা তাকে হলুদ ছোঁয়াবে আগে। তারপর কাজিনরা। অয়ন ছাদে এসে সব জায়গায় চোখ বুলিয়ে নেয়। কিন্তু নির্ধারিত মানুষটাকে পায় না। অনেক্ক্ষণ ধরে খেয়ার করছে মানহাকে পাচ্ছে না বলতে তার ছায়া পর্যন্ত পায়নি। অয়ন ফিড়ে থেকে নেমে যায়। সবাইকে বলে আমি পাঁচ মিনিট পর আসছে।

সত্যি সত্যি পাঁচ মিনিট পর ফিরে আসে অয়ন সাথে মানহাকে নিয়ে। মানহা কিছুতেই আসবে না কিন্তু অয়ন জোর করে আনছে। মানহা কে ব্ল্যাকমেইল করছে সে যদি না যায় তাহলে সে হলুদ ছোঁয়াবে না। আর হলুদ না লাগালে বিয়ে হবে কিভাবে। মানহা বাধ্য হয়ে ছাদে আসছে। নিজের পাশে দাড় করিয়ে নিজে ফিড়ের ওপর দাড়ায়।।
ইয়াসমিন বেগম কে হলুদ লাগাতে বলে,, মুরব্বিরা হলুদ লাগানোর পর মানহা কে লাগাতে বলে, মানহা বাটি থেকে হলুদ নিয়ে অয়নের মুখে লাগাতে যাবে এমন সময় অয়নের মামির কথায় থেমে যায় মানহার হাত। চোখ ছলছল করে ওঠে,,

” এই মেয়ে দাড়াও। তুমি তো ডিভোর্সি। আর একটা ডিভোর্সি মেয়ে হয়ে কিভাবে হলুদ ছোঁয়াবে। তুমি হলুদ ছোঁয়ালে ঘোর অমঙ্গল হবে অয়ন বাবা।

“ইয়াসমিন এটা হতে দিস না। আমাদের অয়নের কপাল পুড়বে। এ কথা শুনে মানহা দৌড়ে চলে যেতে গেলে অয়ন হাত ধরে আটকে দেয় । অগ্নিদৃষ্টিতে তার মামির দিকে তাকায়। অয়নের তাকানো দেখে তিনি ভয় পেয়ে যান। আমতাআমতা করে ফের বলেন,

” ওমন করে তাকাস ক্যান আমি কিন্তু সত্যি কথা বলছি। তোর ভালোর জন্য।

” আমার ভালো আমি বুঝব। আমার ব্যাপারে কাউকে নাক গলাতে হবে না। আর মামি আমি আপনাকে যথেষ্ট রেসপেক্ট করি বাট আপনি যদি আপনার লিমিট ক্রস করে ফেলেন তাহলে আমার কিছু করার নেই। আমি ভুলে যাব সম্পর্কে আপনি আমার মামি হন। আর ভুলেও কোনো দিন ডিভোর্স শব্দ উচ্চারণ করবেন না আমার বোনের সামনে। শুধু আপনি না এখানে থাকা প্রত্যেকটা মানুষকে বলছি আমি যেন আর কোনো দিনও না শুনি আমার বোনকে এসব বলতে। তাহলে তার সাথে খুব একটা ভালো হবে না বলে দিলাম বলে একটু থামে। তারপর একটু নিঃশ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করে মানহা তুই তো এমন না? তুই কেন মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছিস? কেন প্রতিবাদ করছিস না? যে তোকে সম্মান করবে না তাকে কেন তুই সম্মান করবি? মানহা ভাইয়ের দিকে ছলছল নয়নে তাকায়। এখননি কেঁদে ফেলবে।

” আর শোনো সবাই। এখানে সবার সামনে মানহা আমাকে হলুদ লাগাবে। দেখি কে আটকায়। কার বুকের সাহস আছে মানহাকে বাঁধা দেওয়ার।

মহিলাটা চুপচাপ গিয়ে একপাশে দাড়ায়। মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। মনে মনে মানহা কে যা ইচ্ছে তাউ গালাগালি করছে।

তানিয়া বেগম শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ চেপে ধরে কান্না করছেন। তিনিও যে কাউকে কিছু বলতে পারছেন। আত্মীয় স্বজনদের সাথে খারাপ বিহেভ কিভাবে করবেন। ইয়াসমিন এগিয়ে এসে তানিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলে,

” কাঁদিস না বোন। আপার কথায় কিছু মনে করিস না।উনি এমনই জানিস তো। আমি জানতাম না আপা এমন একটা কাজ করবে। দেখ আমার অয়নটা সঠিক জবাব দিছে। অয়ন ওর বোনকে কষ্ট পেতে দেবে না দেখে নিস।

” হ্যা ভাবি। তুমি ঠিক বলছো।

মানহা অয়নকে হলুদ ছোঁয়ায়। মানহার সব ভাইবোন অয়নের জবাব দেওয়ায় খুব খুশি। মিরাজ তো মহিলাকে সাবান ছাড়ায় ধুয়ে দিচ্ছে। তার কোনো রাইট নাই তার আপুকে এভাবে বলায়। তানশি তো না পেরে বলেই ফেলে মহিলা কে সুইমিংপুলে ফেলে দিয়ে চুবাবে। তানশির কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে ফেলে।
হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতেই মুরব্বিরা যে যার কাজে চলে যায়। আর মেয়ে গুলো সব বিয়ের প্ল্যান করতে গোল হয়ে মানহার রুমে বসে। অনেক রাত পর্যন্ত সব ভাই বোনেরা মিলে আড্ডা দেয়। তারপর যে যার জায়গায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে,,,

চলবে ইনশা আল্লাহ