#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_১০
#বোনাসপর্ব
মানহা পাসপোর্ট খুজতে ব্যস্ত তখন পিছন থেকে কেউ একজন বলে ওঠে খুজে লাভ নাই পাসপোর্ট আমার কাছে। দুজনে পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। বিস্ময়ে মানহার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে যায়। ঘোর থেকে বেড়িয়ে বলে,
” তুমি?
ভাইয়া তুমি আমার পাসপোর্ট নিয়েছো বাট হোয়াই?
” কেউ যদি চুরি করে বাসা থেকে পালাতে চায় তাহলে আমার কি করার আছে। কিছু না কিছু করতে তো হতোই।
” তুমি কি ভাবে জানলে চমকে বলে।
” চোরের মন পুলিশ পুলিশ বোন” তুই যতই আমাদের কাউকে না বলে বাসা থেকে চলে যেতে চাস না কেন পারবি না। আমাদের এত গুলো মানুষের চোখ এড়ানো সম্ভব না।
” অয়ন তুই কিসব বলছিস। মানহা চলে যাবে মানে। কোথায় যাবে? তানিয়া বেগম বলেন,
” তোমার মেয়ের কাছেই শুনে দেখো না মানহার দিকে তাকিয়ে বলে।
” ভাইয়া তুমি কি করে জানলে সেটা তো বলো?
অয়নের মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা। আবরার অয়নকে ফোন দিয়ে তার সাথে দেখা করতে বলে ইমার্জেন্সি। খুব আর্জেন্ট কথা নাকি। অয়ন তাড়াহুড়ো করে শো রুম থেকে আবরারের সাথে দেখা করতে যায় তাদের বাসা থেকে দশমিনিটের দুরত্বে একটা পার্কে। আবরার সেখানে বসে অপেক্ষা করছিল অয়নের জন্য। অয়ন সেখানে পৌঁছালে তাকে সমস্ত কথা গুলো বলে।
আবরার নিরার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। তখন তার ফোনে একটা কল আসায় কথা বলার জন্য ছাদে যায় কিন্তু চিলেকোঠার ওখানে গিয়ে পা থেমে যায় তার। মানহা কারোর সাথে ফোনে কথা বলছে। সে এউ বলে আর দুদিন পর তাদের দেখা হচ্ছে। এই শহরে থাকতে তার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সবকিছু বিষাক্ত লাগছে। আবরার এক কথায় বলে মানহা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কাউকে না জানিয়ে।
অয়নের কানে শুধু একটা কথায় বাজছিল মানহা দেশ ছেড়ে চলে যাবে। সে বেচে থাকতে কখনই এটা হতে পারে না। সে আটকাবে। কিন্তু কিভাবে? অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয় মানহার পাসপোর্ট ভিসা সব নিয়ে নেবে। আর ঠিক তাই করে। মানহা বাসা থেকে বের হলে তার রুমে গিয়ে অনেক খুজে খুঁজে সাইড ব্যাগ থেকে খুজে পায়। আর সেটা নিজের কাছে গোপনে রেখে দেয় সেটা কেউ জানে না বা অয়ন কাউকে বুঝতে দেয়নি। মানহার ডাকে ভাবনার ছেদ পড়ে অয়নের। হ্যাঁ বল।
” তুমি কিভাবে জানলে আমি চলে যাব? তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট দাও আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।
” কিছু কিছু কথা না জানায় বেটার। সব কথা জানতে হয় না। আমি কিভাবে জানলাম সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা তুই কিভাবে এটা করতে পারলি। তোর বিবেকে বাধল না। একবারও বাড়ির কারোর কথা মনে আসেনি। আমাদের কথা না হয় বাদই দিলাম ছোট মা’ র মুখটাও কি তোর চোখের পাতায় ভাসে নি। একটা বার ভাবলি না তোর এই কাজের জন্য বাড়ির সবাই কষ্ট পাবে। আর তুই চলে যাবি বলছিস। কিভাবে যাবি যদি পাসপোর্ট না দেয় তাহলে।
” ভাইয়া অনেক গুলা টাকা দিয়ে টিকিট কাটছি আ
বাকিটুকু আর বলতে পারলো না অয়নের ধমকে। এখনও চলে যাবি বলছিস। আরে এমন আরও টাকা যাক না তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। বুঝছিস।
অয়নের চেচামেচি শুনে বাড়ির সবাই মানহার রুমে চলে আসে। মানহার বাবা আর বড় চাচ্চু উপরে চলে আসে। অয়ন তাদের কে বাসায় আসতে বলছে। অনেক ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে তাই বলে। অয়ন কখনও এত জুরুরি ভাবে আসতে বলে না সেজন্য দুজনে বাসায় আসছেন। মিনহাজ খান মেয়ের কাজে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। মুখ দিয়ে তার কোনো কথা বের হচ্ছে না। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছেন।
মানহা মাথা নিচু দাঁড়িয়ে আছে। চুপচাপ চোখের পানি ফেলছে। তারই বা কি করার ছিল। মানুষের এত অবহেলা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য সহ্য হয় না তার। তাদের কথা গুলো বুকে গিয়ে বাধে। কিছু কিছু মানুষের কথার উত্তর দিতে পারলেও কোথাও গিয়ে বাঁধে।
মানহার বড় চাচ্চু মিলন খান মানহার কাছে গিয়ে দুহাত দিয়ে আলতো করে চোখের পানি মুছে দেয়। কাঁদতে মানা করে। ফের বলে,
” মামনি রে তোকে আমরা কেউ ভালোবাসি না? এমন একটা ডিসিশন একা নিতে পারলি? কাউকে জানানোর প্রয়োজন টুকু মনে করলি না? এতটাই পর করে দিলি আমাদের?
” চাচ্চু তোমরা সবাই ভুল বুঝছো।
” তোর চাচ্চু তো ঠিকই বলছে। তোকে আমরা কেউ ভালোবাসি না। যদি আমাদের ভালোবাসা টা বুঝতিস তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। চুরি করে নিজের বাড়ি থেকে কেউ পালায়। যা চলে যা দরজা খোলা আছে তোকে কেউ আটকাবে না। অয়ন তুই ওর পাসপোর্ট দিয়ে দে বলে মুখ চেপে ধরে কান্না করেন।
” মা তুমি,,
” খবরদার আমাকে মা বলে ডাকবি না। আমি যদি তোর মা হতাম তাহলে এভাবে পর করে দিতিস না।
” মানহা এবার বাবার কাছে যায়। আব্বু তুমিও কি সবার মতো আমাকে ভুল বুঝছো? মিনহাজ খান চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন। মানহা ঢের বুঝতে পারছে সবাই খুব রাগ করছে সাথে অভিমান ও করছে।
এসব আর নিতে পারছে না মানহা। মেঝেতে ধপ করে বসে পরে হাউমাউ করে কান্না করে দেয়। তাকে কেউ বোঝে না। সবাই শুধু তাকে ভুল বুঝে যায় কেন? কেন? কেন? তোমরা কেন বুঝো না এই শহরে থাকতে আমার কষ্ট হয়। ঠিক ভাবে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারি না। ঘুম হয় না রাতে। বিষাক্ত স্মৃতি গুলো আমাকে তাড়া করে বেড়ায়।আমি আর নিতে পারছি না। এসব থেকে মুক্তি চায় মুক্তি। কেউ পারবে দিতে। চুপ করে আছো কেন? জানি তো কেউ পারবে না।
নিরা আর তানশি দৌড়ে এসে মানহা কে ধরে। দু’জনেই মানহার কান্না দেখে কান্না করে দেয়। তানশি মানহা কে জড়িয়ে ধরে রাখছে। তার আপুর খুব কষ্ট হচ্ছে। তানশি আপুর কষ্ট সহ্য করতে পারে না।
পুরো বাড়িটা নিস্তব্ধ। মনে হচ্ছে খান বাড়িতে কোনো মানুষ নেই। একটা শব্দ পর্যন্ত নেই। মানহা দাঁড়িয়ে আছে বেলকনিতে। হ্যা সে যেতে পারলো না। তাকে যেতে দেওয়া হয়নি। আটকে দিলো সবাই। বেলকনির গ্রীল ধরে এক মনে তাকিয়ে আছে আকাশের পানে। দুরের আকাশে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। আনমনে বলে ফেলে,
❝ চাঁদ মামা গো দিনশেষে আমিও তোমার মতো একা। হবে কি আমার একাকিত্বের সঙ্গী❞
চলবে ইনশা আল্লাহ।