#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৪০ ( স’মা’প্তি পর্ব )
সকাল হতেই খান বাড়িতে বিয়ের আমেজ লেগেছে। নভেম্বর ডিসেম্বর মাস মানেই বিয়ের মাস। মুরব্বিরা বলে, নভেম্বর আর ডিসেম্বর মাসে বেশি বিয়ে হয়। আর সেটাই মিরাজের ক্ষেত্রে প্রমাণিত হলো। মিরাজ খয়েরী রঙের শেরওয়ানি পড়েছে। দেখতে রাজপুত্রের মতো লাগছে। ফর্সা গায়ে খুব ভালো মানিয়েছে। একে একে ছোট বড় সবাই তৈরি হয় বরযাত্রী যাবার জন্য।
মানহা কালো রঙের জামদানী শাড়ি পড়েছে যেটা তাদের তৃতীয় বিবাহবার্ষিকীতে দিয়েছিল আবরার। মানহা’র সাথে ম্যাচিং করে কালো রঙের পাঞ্জাবি পরেছে আবরার। সাধারণত বিয়েতে প্রতিটা মেয়ে শাড়ি পড়তে ভালোবাসে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি। মানহা’র ছেলে আয়ুশ বাবা’র সাথে ম্যাচিং করে কালো পাঞ্জাবি আর আরুহি মায়ের সাথে ম্যাচিং করে কালো প্রিন্সেস ড্রেস পড়েছে। একটা হ্যাপি ফ্যামিলি তাদের। চারজন কে একই রকমের ড্রেসে মারাত্মক লাগছে। সিড়ি দিয়ে নামার সময় সকলের দৃষ্টি তাদের দিকে। কিছু কিছু মানুষ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অনেকেই তাদের প্রশংসা করেছেন।
______________________
পার্লার থেকে মেয়েরা এসে তানশি কে সাজাচ্ছে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে কোনো তার কমতি রাখছেন না তানশি’র বাবা তাহের আহমেদ। আহমেদ ভিলা সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে। রং বেরঙের ফুল দিয়ে পুরো বাড়িটা সাজিয়েছে। তানশি কে লাল রঙের শাড়ি পড়ানো হয়েছে। প্রতিটা মেয়ের ইচ্ছা। বিয়েতে লাল টুকটুকে শাড়ি পরে বউ সাজা। মনের মতো মেকাপ করা। নিজেকে নতুন ভাবে সাজিয়ে তোলা। পার্লারের দুইটা মেয়ে তানশি কে সাজাচ্ছে। তানশি চুপচাপ স্ট্যাচু হয়ে চেয়ারে বসে আছে। তার পাশে তানশি’র বেস্টফ্রেন্ড জেনি সুদূর আমেরিকা থেকে তানশি’র বিয়েতে এসেছে। তানশি খুব খুশি হয়েছে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা দিনে বেস্টফ্রেন্ডকে ক’জনই বা কাছে পাই। তাকে বোঝার জন্য। কষ্টের ভিতরও হাসি পাচ্ছে তানশি’র জেনি’র কান্ডে।
জেনি বাংলাদেশের কালচারের সাথে অভ্যস্ত নয় এজন্য প্রতিটা ক্ষেত্রে অস্বস্তি ফিল হচ্ছে। কোনো কোনো কাজে হেরফের করে ফেলছে। এই যেমন একটু আগে তানশি’র চাচাতো ভাই রিয়াদ এসে জেনি’র সাথে ফাজলামো করে গেলো। জেনি তেমন বাংলা বোঝে না বলে তেমন কিছু বলতে পারিনি।
জেনি সেজেগুজে তৈরি হয়ে বসে আছে। এখন তানশি’র শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। তানশি কে ভাড়ি মেকাপে আকাশের হুর পরী লাগছে। চেনা যাচ্ছে না তাকে। সাজানো কম্পিলিট হলে পার্লারের মেয়ে দুটো চলে যায়। জেনি তানশি কে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে বলে,
” দেখ তো তাশু বেবি তোকে কেমন লাগছে।
তানশি নিজেকে আয়নায় দেখে অবাক হয়৷ আগে কখনো এত ভাড়ি মেকাপ করেনি তানশি। নিজেকে নিজেই চিনতে পারছে না। বড্ড অচেনা লাগছে নিজেকে। ঠোঁটে লাজুক হাসি তানশি’র। তানশি’র আশ্চর্য, মুখে লাজুক লাজুক হাসি মুখ দেখে জেনি মুচকি হেসে বলে,
” হেই নতুন বউ। খুব সুন্দর লাগছে তোকে। আমি ক্রাশ খাইছি বেবি। তোকে যা লাগছে না মিরাজ ভাই দেখলে হার্টেটাক করবে।
” তুই চুপ কর না জেনি। আমার লজ্জা করছে খুব বলে মুখ নিচু করে নেয়।
**********
মিরাজ রা দুপুর দুইটায় বের হয় তানশিদের বাসার উদ্দেশ্য। বরের গাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সারি সারি অনেক গুলো মাইক্রোকার। অনেক গুলা বাইক। সব মিলিয়ে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।
তানশিদের বাসায় যেতে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ মিনিট সময় লাগবে।
****
তানশিদের বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে তিনটা বেজে যায়। বর কে গাড়ি থেকে নামানো। গেটের ঝামেলা সবকিছু মিটিয়ে নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে বসানো হয় বর কে।
খাওয়া দাওয়ার পাট চুকে গেলে।এবার বিয়ে পড়ানোর জন্য তাড়া দেয় কাজী সাহেব। সুন্দর ভাবে মিরাজ তানশি’র বিবাহ সম্পূর্ণ হয়। বিবাহ শেষ হলেই বিদায়ের জন্য তাড়া দেয় মিলন খান।
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
বাসর ঘরে বসে আছে তানশি। মিরাজের আসার কোনো নাম গন্ধ নেয়। সেই কখন থেকে বসে আছে সে। পায়ে ব্যথা হয়ে গেছে তার। তারজন্য সারা রুম পায়চারি করছে। হেঁটে হেঁটে রুমের প্রতিটা জিনিস দেখছে। একটুপর মিরাজ আসে রুমে। এসে তানশি কে হাঁটতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
” কি রে তানু বিবি তুই হেঁটে বেড়াচ্ছিস কেন?
সদ্য বিয়ে করা বরের মুখে তুই শব্দ শুনে ধপ করে মাথায় আগুন ধরে যায় তানশি’র। রেগে মিরাজের শেরওয়ানির কলার ধরে বলে,
” তোর সাহস তো কম না তুই আমাকে তুই করে ডাকছিস। তারপরও আবার সেই তানু বিবি।
মিরাজ এক টানে তানশিকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়। মিরাজের এহেন কাজে ভড়কে যায় তানশি। মিরাজ তানশি’র কোমড় জড়িয়ে বলে,,
” প্রথমত মুখ ফসকে তুই শব্দ টা বের হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত তোকে তানু বিবি ডাকতে আমার খুব ভালো লাগে। তোকে ভালোবেসে তানু বিবি বলে ডাকি। এখন থেকে তুই শব্দ আর ব্যবহার করব না। কারণ তুই ডাকলে অনেক পরপর লাগে। এখন থেকে তুমি করেই বলব। আর রইল তানু বিবি। সেটা আমি সারাজীবন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বলব।
এতক্ষণ সবটা মুগ্ধ হয়ে শুনলেও লাস্টের কথায় চমকে ওঠে তানশি। চোখ টলমল করে ওঠে। তানশি কাপাকাপা কন্ঠে বলে,
” প্লিজ কখনো মৃত্যুর কথা বলবে না। তোমাকে হারাাতে পারব না আমি। খুব ভালোবাসি বলে জড়িয়ে ধরে।
” মিরাজের ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি। পূর্ণতার হাসি। প্রেয়সীকে পরম যত্নে আগলে নেয় হৃদমাঝারে।
******
মানহা বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে ছাদে চলে যায়। রাতের ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস শরীর ছুয়ে যায় তার।ছাদে কেউ নেয়। সে একা দাড়িয়ে আছে।
আবরার মানহা কে সারা বাড়ি খুঁজে খুজে কোথাও না পেয়ে ছাদে এসে দেখে তার বউ একা একা দাড়িয়ে আছে। পিছন থেকে গিয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে। মানহা ভয়ে চমকে ওঠে। পরমুহূর্তে বুঝতে পারে এটা আবরার। দুজনে কিছু একান্ত সময় কাটায় ছাদে। দু’জন দু’জন কে জড়িয়ে ধরে দোলনায় চন্দ্রবিলাশ করে। রোমান্টিক মুডে আছে দু’জনে। তাদের রোমান্টিকের বারোটা বাজানোর জন্য চলে আসে আয়ুশ আর আরুহি। দুজনে গুটিগুটি পায়ে এসে দুজনের সামনে দাড়ায়। সেটা আবরার বা মানহা কেউ টের পায়নি। আবরার যখন মানহা কে কিস করতে যাবে তখন আয়ুশ বলে,
” পাপা তুমি আমাদের মতো মাম্মিকে আদর করছো কেন? মাম্মি তো ছোট না।
দুই বছরের আয়ুশের কথায় ছিটকে দুরে সরে বসে আবরার মানহা। এতটুকু ছেলের কথায় আশ্চর্য হয়ে যায় দুজনে। বেশি অবাক এত রাতে তারা এখানে কি করছে। মানহা কৌতুহল নিয়ে বলে,
” আয়ুশ আরুহি তোমরা এখানে কি করছো। এত রাতে ছাদে আসলে কিভাবে সোনা।
পিছন থেকে নিরা হেঁসে ওঠে মানহা’র কথায়। দু’জনে ঢের বুঝতে পারে এদের কে নিরা আনছে। আবরার গিয়ে নিরার কান ধরে বলে,
” পাঁজি মেয়ে। এরকম কেউ করে। ওরা ছোট তুই বুঝিস না। ওদের কে কেন আনছিস এখানে।
” আহ ভাইয়া লাগছে ছাড়ো। আমি কি করব বলো। তোমার যে দুরন্তর ছেলে তোমাদের কে সারা বাড়ি খুঁজে না পেয়ে যখন আমাকে দেখে তখন বলে ফুপিমণি মাম্মি আর পাপা কোথায়। তখন আমি ওদের কে নিয়ে ছাদে আসি। আর আমি কি জানি আপনারা এখানে বসে বসে রোমাঞ্চ করছেন বলে মুখ বাকিয়ে চলে যায় নিরা।
আবরার মেয়েকে কোলে তুলে বলে, আরুহি মা এত রাতে বাইরে বের হওয়া তোমাদের ঠিক হয়নি প্রিন্সেস। আর কখনো এমন করবে না মা।
ছোট্ট আরুহি কি বুঝল সে জানে না। বাবা’র কথায় বলে, পাপা তোমরা এত রাতে ছাদে কি করছো? মেয়ে’র কথায় টাস্কি খেয়ে যায় আবরার। মানহা আয়ুশ কে কোলে নিয়ে খিলখিল করে হেঁসে ওঠে।
আবরার রাগি দৃষ্টিতে তাকায়। আবরারের তাকানো দেখে মানহা চুপ হয়ে যায় কিন্তু মুখ টিপে হাসে।
[ দুই বছরের বাচ্চা হলে কি হবে তাদের পুরো কথা স্পষ্ট ]
আবরার আর মানহা ছেলেমেয়ে কে নিয়ে দোলনায় বসে। আবরার বলে,
❝ ভালোবাসা কে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে নিয়েছি। নতুন ছন্দে মেতে উঠেছে জীবন ভালোবাসা রয়ে যাবে আজীবন ❞
[সমাপ্ত]