#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩১
জঙ্গলের ভেতরটা পুরোটা অন্ধকার। উপরের সেই চাঁদের আলো গাছের বড় বড় ডালপালা ভেদ করে মাটি স্পর্শ করতে পারছে না। একপ্রকার অন্ধের মতো নিজের সব শক্তি লাগিয়ে ইচ্ছেমতো একদিকে দৌড়ে চলেছে এক মানবী। চোখেমুখে আতঙ্ক স্পষ্ট। হৃদয়ের কম্পন বেড়ে চলেছে ভীতিতে। মাথায় যত্ন করে করা ছোট চুলের খোঁপার অবস্থাও করুন। প্রায় খুলে এসেছে। চুলগুলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। পায়ে ব্যথাও পেয়েছে বেশ। তবুও যে থামা যাবে না। ছুটতে হবে যদি সম্মান বাঁচাতে হয়। তবে বিধি বাম। এই অন্ধকারে মাথা গিয়ে খুব জোরে ঠুকে গেল মেয়েটির। কপালে অসহ্যরকম যন্ত্রণা করে উঠলো। খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ল। মাটিতে বৃষ্টির কারণে জমেছে কাঁদা। সেই সাথে বড় বড় গাছের পাতা। মেয়েটি আশেপাশে পাগলের মতো হাতাতে থাকে। নিজেকে রক্ষা করার মতো কোনো কিছুই পায় না। হঠাৎ সুক্ষ্ম আলোর দেখা মেলে। তড়িঘড়ি করে হামাগুড়ি দিয়ে একটা গাছের পেছনে লুকায় মেয়েটি। আড়াল থেকে দেখতে থাকে তাকে সেই চারজন বখাটে ছেলে গুলো খুঁজে চলেছে। মুখে রয়েছে অশ্রাব্য গালাগাল। এই প্রথম এমন কোনো পরিস্থিতির শিকার হয়েছে সে। জানা ছিল না নিজের সম্মান হারানোর ভয়টা এতো তীব্র। মাথাটা ভনভন করে ওঠে তার। গাছটা শক্ত করে ধরে থাকে। চোখটা বুঁজে গাছের সাথে মাথা লাগিয়ে দেয় সে। মিনিট দুয়েক সেভাবে থেকে সরাসরি যখন চোখে আলো লাগে চোখটা খিঁচে ফেলে সে। নেত্রপল্লব মেলতেও খানিকটা কষ্ট হয়। বুকটা ধক করে ওঠে। তার সামনেই সেই চার জন ছেলে লাইট ধরে হাসাহাসি করছে। উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই তার। বসে থেকে কিছুদূর পিছিয়ে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করল সে। সকলের নিকৃষ্ট হাসি দেখে মনে হচ্ছে এখানেই সব শেষ। না চাইতেও যে চোখ দিয়ে সহজে পানি পড়ে না সেই চোখ দিয়ে পানির ধারা ছুটতে লাগলো। ছেলেদের মধ্যে একজন এগিয়ে বলল,
“আরে মামনি! এভাবে হন্তদন্ত হয়ে কোথায় ছুটছিলে? লাভ আছে কোনো? সেই তো আমাদের কবলেই পড়তে হলো।”
চোখ থেকে অশ্রু বেরিয়ে আসা সেই অপরূপ নারীর দিকে নিচু হয়ে বসে পড়লো ছেলেটি। তার গালে ছেলেটি তার বিশ্রী স্পর্শ ঠেকাতেই তার শরীর জন্য ঘৃণায় রি রি করে উঠলো। শরীরের বাকি শক্তিটুকু দিয়ে নিজের পা উঠিয়ে ছেলেটির বুক বরাবর সজোরে লা’থি মে’রে বসলো। টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে গিয়ে খানিকটা দূরে পড়লো ছেলেটি। বেশ কষ্ট সহ্য করে উঠে দাঁড়ালো সেই মানবী। কোনো কিছুর পরোয়া না করে ছুট লাগালো সে আঘাত লাগা পায়েই। তবে তার মনে হলো সে বেশিক্ষণ নিজেকে বাঁচাতে পারবেনা। কিন্তু শেষ চেষ্টা করতে ক্ষতি কী? বেশিদূর এগোতে পারলো না। পা দুটো অসার হয়ে এলো। যেখানে এসে থামবে সেখানেও প্রশস্ত কিছুর সাথে জোরেশোরে ধা’ক্কা খেলো আবারও। মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে ‘উহ’ শব্দটা বের করলো সে। তৎক্ষনাৎ লাইট তার দিকে ধরা হলো। মেয়েটির মনে ধরা দিল আশঙ্কা। ছেলেদের মধ্যে একজন আবারও তাকে ধরে ফেললো? না চাইতেও তার মুখ দিয়ে মিনতির সুরে বেরিয়ে এলো,
“প্লিজ, আমাকে ছেড়ে দিন! যেতে দিন আমাকে।”
“আরে! আমি আপনাকে ধরলাম কখন?”
এই চিকন কন্ঠস্বরে যেন কোনোরকম জটিলতা নেই। সেখানে মেয়েটি পেলো না কোনো নিকৃষ্টতা। বরং কোথাও একটা ভরসার আশা জমা হলো। পিটপিট করে চোখ খুলল সে। অচেনা হয়েও চেনা লাগলো সেই মুখ। সেই দৃষ্টির মাঝে রয়েছে বিস্ময়। অর্থাৎ লোকটাও তাকে দেখে অবাক। এবার লোকটির মুখ ফুরে বেরিয়ে এলো একটা নাম।
“রাগিনী!”
চোখ গোল গোল করে তাকালো মেয়েটি পোশাক ভর্তি কাঁদা লেগে আছে। ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। মনে একটাই প্রশ্ন! সে রাগিনী নামটা জানলো কী করে? হঠাৎ কানে এলো ছেলেগুলোর বাজে কথাবার্তা। মেয়েটির মনে জানান দিলো বাঁচতে হলে হয়তবা এই লোকটাই একমাত্র ভরসা! হাত-পা অনবরত কাঁপতে থাকলো তার। কি করে সাহায্য চাইবে সেটাও বুঝে উঠতে পারলো না সে। উপরন্ত মাথা ঘুরছে। টলমল করতে করতে হঠাৎ যখন সেই পুরুষালী হাতটা তাকে স্পর্শ করলো পুরো শরীরে বয়ে গেল এক আলাদাই কম্পন। অভিরূপ তাকে টেনে নিয়ে গভীর আবেশে এক হাতে ধরে বলল,
“আর ইউ ওকে? আমি ভেবেছিলাম আপনি স্ট্রং গার্ল! আমার ধারণা পাল্টে দিচ্ছেন আপনি।”
ঘোলা চোখে তাকালো সে একপলক। এবার মনে হচ্ছে সে মানুষটাকে চেনে। কোথাও দেখেছে! নিউজে? নাকি পেপারে? হ্যাঁ! এইতো সেই অভিরূপ চৌধুরী অভি। যাকে শে’ষ করার তাড়নায় সে প্রতিদিন তড়পে যাচ্ছে। যার প্রা’ণটা ছিনিয়ে নেওয়ার তার এতো আকাঙ্ক্ষা আজ সে-ই কিনা তার সম্মান বাঁচাতে ব্যাকুল? এসব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে মেয়েটি ঢলে পড়ল এবার। সেই সঙ্গে অভিরূপের শার্ট প্যান্টেও লেগে গেল কাঁদা। শরীরে এই মেয়েলি স্পর্শ লাগায় হৃদকম্পনকে যেন ঘোড়া মনে হলো অভিরূপের। এতো জোরে জোরে ছোটে নাকি? অন্যদিকে তার বুঝতে কমতি নেই ছেলেগুলো পেলে তাকে সহ রাগিনীকেও পিস পিস করে কে’টে ফ্রাই করে খাবে। বিরবির করে অসহায় সুরে অভিরূপ বলে উঠল,
“ওহ গড! আমাকে এমন সিচুয়েশনের মধ্যে ফেলো কেন তুমি? একদিকে এতো সুন্দর ফিলিং নিতেও পারছি না। অন্যদিকে এই ছেলেগুলো পেলে না জানি কি করে! বুঝিনা এই মেয়েটার সঙ্গে দেখা হলেই কি বিপদও ফ্রীতে মিলে যায় নাকি বিপদের সঙ্গে মেয়েটাও ফ্রী?”
অতি যত্নে তার দেখা রাগিনীকে পাজ কোলে তুলে ছুটতে থাকলো অভিরূপ। তবে ভাগ্য বোধহয় সাথ দেয়নি। অতিরিক্ত কাঁদায় সেও ধ’পাস করেই পড়লো মেয়েটি সমেত। হুঁশ ফিরে রাগিনীর। নড়েচড়ে তড়িঘড়ি করে পিছলে যায় অন্যদিকে। ছেলেগুলো তাদের সামনেই এসে পড়েছে। এবার অভিরূপ উঠে দাঁড়ায়। রাগিনীর দিকে ছেলেগুলো তেড়ে যেতেই অভিরূপ তাদের বাঁধা দিয়ে বলে,
“আরে ভাই! এতো তাড়া কীসের? আমাকে চেনো না তোমরা? অভিরূপ চৌধুরী আমি। একটু কথা তো বলো! এদেশে দেখি আমার মতো মানুষদের দামই দাও না তোমরা। সবাই লাইনে দাঁড়াও দেখি। একটু অটোগ্রাফ দিই। গান শুনতে চাইলে ফ্রীতে শোনাবো। তাও এতো তাড়াহুড়ো করবেন না। রিল্যাক্স!”
ছেলেগুলো এবার হতভম্ব হয়ে দাঁড়ালো। একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আরে এতো সত্যিই অভিরূপ চৌধুরী! দ্যা ফেমাস সিঙ্গার ওফ ইন্ডিয়া। সে এখানে কী করে?”
“আরে ভাই, আপনাদের জন্যই তো এসেছি। আপনাদের গান শোনাবো।”
বলেই একটা মিষ্টি হাসি দিল অভিরূপ। কী ভোলাভালা সেই হাসি! কিন্তু কে জানে সেই হাসির পেছনে কূটবুদ্ধি লুকিয়ে? হাতে ধরে রাখা একগাদা কাঁদা পালা করে ছেলেগুলোর চোখেমুখে ছুঁড়ে মারলো অভিরূপ। আর দেরি নয়। দ্রুত রাগিনীর হাতটা ধরে তাড়াহুড়ো করে বলল,
“আর সময় নেই। বাঁচতে চাইলে পালাই চলুন।”
রাগিনী থেমেই থামে। সরু চোখে তাকিয়ে থাকে অভিরূপের দিকে। তার এই চাহনি লক্ষ্য করে অভিরূপ আবারও তার হাত টেনে বলে,
“আরে আপনাকে নিয়ে বিয়ে করতে পালাচ্ছি না। আপনাকে বাঁচাচ্ছি।”
এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নেয় রাগিনী। অভিরূপ খেয়াল করে তার বাম হাতে একটা শক্ত গাছের বড় ডাল ধরে আছে। এবার সেটা ধরেই ছেলেগুলোর নিকটে যায় সে। অভিরূপের চোখ তখন কপালে! এই মেয়েই না একটু আগে জ্ঞান হারালো? ভয়ে কুঁকড়ে ছিল? এখনি তার চোখ দেখে মনে হচ্ছে তার চোখ দিয়ে আগুনের লাভা বেরিয়ে আসছে। বেশ ইন্টারেস্টিং তো! ছেলেগুলোকে এবার কৌশলে একের পর এক পিটিয়ে যাচ্ছে রাগিনী। আর জোরে জোরে বলছে,
“সুযোগ পেলে তোদের একটার ঘাড়েও মাথা থাকতো না। আজকে আমি নিরুপায় ছিলাম বলেই বেঁচে গেলি। জানো’য়ার! হাতের কাছে কিছু ছিল না বলে আমার উপর ভালোই জোর দেখিয়েছিস। এখন কোথায় যাবি?”
ছেলেদের মা’র খাবার পর একেকটা আর্তনাদ শুনেই অভিরূপের শিরদাঁড়া শিরশির করে উঠলো। মেয়েটাকে সে যতটা ভীতু ভেবেছিলো সে ততটাও না। বেশ ডেঞ্জারাস লেভেলের! একসময় মে’রে ক্লান্ত হয়ে সেই রক্তিম আঁখি দ্বারা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সে অভিরূপের দিকে। অভিরূপ ঢক গিলে একটা ক্যাবলা হাসি দেয়। আর বলে,
“যাওয়া যাক? এভাবে তাকাবেন না। আর হাত ধরে টানাটানি করব না। সো ম্যাডাম, ক্যান উই গো নাউ?”
রাত প্রায় বারোটা পেরিয়েছে। প্রকৃতিতে নেমে এসেছে পিনপতন নীরবতা। ঝিঁঝি পোকার শব্দ সেই নিস্তব্ধতাকে কমিয়ে দিলেও খুব একটা বেশি পারছে না। ‘শাহ্ মানসিক হাসপাতাল কেন্দ্র’ অর্থাৎ মেন্টাল হসপিটালের পেছনদিকের বড় দরজায় তালা খোলার শব্দ তীব্র হচ্ছে ধীরে ধীরে। পেছনদিকে মানুষ চলাচল করার জন্য নয়। এদিক দিয়ে বড় বড় গাড়ি আর সেইসব এম্বুলেন্স ঢুকানো হয়। আজিম বড় তালা খুলে দিয়ে গেট ফাঁক করে দিয়ে একটা স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে কোহিনূরের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“আসেন স্যার! অনেক ক্লান্ত হইছেন না? কিছু খাইতে দিব?”
কোহিনূর প্যান্টের পকেটে দুহাত গুঁজে ঘাড় এদিক ওদিক কাঁত করে বলল,
“নো নিড। খেয়ে এসেছি বাহিরে থেকে।”
“আচ্ছা তাইলে ভেতরে আসেন। কেউ দেইখা নিলে আবার বিপদ!”
“রিল্যাক্স। এতো রাতে কে আর আসবে! তুমি যে এসেছো এটাই আমার ভাগ্য। সিরিয়াসলি আজিম! এতো রাতে তোমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে জ্বালিয়ে দরজা খুলে নিচ্ছি। বিরক্ত হয়ে যাও খুব তাই না?”
“কী যে বলেন স্যার! আপনে তো এর বদলে আমাকেও কিছু হাত খরচ দেন নাকি?”
কোহিনূর মুচকি হাসে। নিজের ঘাড়ে একটা হাত রেখে শক্ত করে মোচড় দেয়। ঘাড় ব্যথা করছে। যতক্ষণ ধরে মিটিং হয়েছে আর তাকে কথা বলতে হয়েছে যে এখন কথাও বলতে ইচ্ছে করছে না। ভাগ্যিস এর মাঝে রাগিনী আর আসেনি! নাহলে তাকে না পেয়ে নিশ্চিত মেয়েটা সন্দেহ করতো? অতঃপর সে শান্ত গলায় বলে,
“এইতো আর কিছুদিন। তারপর এই জ্বালাতন সহ্য করতে হবে না তোমায়।”
“তা আপনাগো তদন্ত শেষ হইতেছে?”
“শেষ আর কোথায় হলো আজিম? কিছুই তো খুঁজে পাচ্ছিনা। তবে এটা নিশ্চিত রাগিনী মেয়েটাকে অযথা সন্দেহের খাতায় ফেলেছি। এখন নিজেই নিজের দিকে তাকাতে পারছি না।”
আজিম কোহিনূরকে আশ্বাস দিয়ে বলে ওঠে,
“আপনাদের কাজই তো সন্দেহ করা। কারণ আছিল বলেই সন্দেহ করছিলেন। এখন তো বুঝছেন। সমস্যা নাই।”
কোহিনূর কিছুক্ষণ নীরব থেকে গেট দিয়ে প্রবেশ করতে চাইলো। তবে কিছুটা দূরে একটা মেয়েলি অবয়ব আঁটকে দিলো তাকে। ঘাড় ঘুরিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো মেয়েটা এতো রাতে এই জনমানবহীন রাস্তায় হাঁটছে কেন? কোনো বিপদ হয়নি তো? আস্তে আস্তে যখন মেয়েটা এগিয়ে এলো তখন যেন কোহিনূরের পায়ের নিচের মাটির ভিত নড়ে উঠল। পা দুটো অবশ হয়ে এলো। মেয়েটির চোখমুখ তো তারই মনের অভ্যন্তরে তাকা। হ্যাঁ, সে তো রাগিনী। এতো রাতে রাগিনী? তাও এই বিধ্বস্ত অবস্থায়? সারা গায়ে কাঁদা আর কপাল ফোলা। কোহিনূরকে দেখে তার থেকে কিছুটা দূরত্বেই থেমে গেছে রাগিনী। থমকে গেছে তার চোখ। কোহিনূর এবার নিজের দিকে তাকালো। নিজের পা থেকে মাথা অবধি তাকালো। তার পরনে সিক্রেট অফিসারের ইউনিফর্ম। কালো লং কোট। পায়ে দামি বোট জুতো। মেয়েটা কি তবে সব ধরে ফেলল? কোহিনূর কাঁপা হাতটা বাড়িয়ে রাগিনীর দিকে একধাপ এগিয়ে গিয়ে ধীর সুরে কম্পন ধরানো কন্ঠে বলল,
“রাগিনী!”
কোহিনূরের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি উপলব্ধি করল অন্যকিছু। মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা বুঝে ফেলল সে। দৃষ্টি শক্ত হলো তার। হাত নামিয়ে নিল। মাথাটা এপাশ ওপাশ নাড়ালো। আর বিরবির করে বলল,
“না। রাগিনী না!”
হয়ত এই মেয়েটিও বুঝে নিয়েছে অনেক কিছুই। তাই সে ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছে। কোহিনূরের মাথায় যেন র’ক্ত চড়ে বসলো। দাঁত কটমট করে তেড়ে যেতেই মেয়েটা দৌড় লাগালো। কোহিনূরও দমে গেলো না। এবার পেয়েছে সে মেয়েটাকে। ছাড়া যাবে না এতো সহজে। সেও পিছু ছুটলো মেয়েটার। পেছন থেকে আজিম হতভম্ব হয়ে গেলো! কী হলো টা কী? কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না।
মেয়েটার পায়ের বেগ আছে মানতে হবে। অনেকটা দূরে ছুটেছে কোহিনূর। রি’ভলবার বের করে বেশ কয়েকবার ওয়ার্নিং করেছে। তবে ফলাফল হয়নি। সে লক্ষ্য করেছিল মেয়েটা খুঁড়িয়ে হাঁটছিল। অথচ তার দৌড়ানোর বেগ অসামান্য! অবশ্য অপরাধীরা এসব বিষয়ে পারদর্শীই হয়। তার খোঁজ না পেয়ে কংক্রিটের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পাশের গাছে জোরে লা’থি মার’লো কোহিনূর। মাথা যেন আগুনের দাবানলে পরিণত হয়েছে। নিজেকে কোনোরকম সংযত করে শান্তভাবে দ্রুত ফোনটা বের করে কোহিনূর। মেহরাজের নম্বর ডায়াল করে কল দিয়ে ফোনটা কানে ধরে। দৌড়ে গরম লাগছে ভীষণ। হাঁপিয়ে উঠেছে একেবারে। কোটের বোতাম একহাতে খুলতে খুলতে বিরক্তির সুরে বলে,
“দরকারের সময় ইডিয়টের ফোনে কল দিলে পাওয়ায় যায় না।”
পুনরায় কল করতে হলো কোহিনূরকে। এবার কিছুক্ষণ প্রতীক্ষার পরেই ওপাশ থেকে মেহরাজের ঘুম জড়ানো গলা শোনা গেল।
“আরে ভাই! এতো ভোর ভোর ফোন দেওয়ার কী আছে? কী সমস্যা? রাখ তো।”
মেজাজটা আরো চড়ে যায় কোহিনূরের। দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“আমি তোমার ভাই নয়, মেহরাজ!”
এবার যেন ওপাশের মেহরাজের টনক নড়ে। তড়িঘড়ি করে বলে,
“সরি স্যার, সরি। এতো রাতে ঘুমাচ্ছিলাম স্যার তাই…”
“তোমার বাড়তি কথা রাখো। দ্রুত অফিস যাও। রাগিনীর লোকেশন চেক করো। আর পুলিশ ডিপার্টমেন্টে জানাও শাহ্ মানসিক হাসপাতাল কেন্দ্রের আশেপাশে সবখানে চেক পোস্ট দিতে। রাগিনী তাজরীনের মতো কাউকে দেখতে পেলেই তাকে যেন আটক করা হয়। গট ইট?”
“ওকে স্যার। বাট…”
কোহিনূর ফোনটা কেটে দিলো। মেহরাজের সব কথা বলেও বলা হলো না।
সকাল সকাল আজ রাগিনীর বাড়িতে উপস্থিত হয়েছে উর্মিলা। এর আগে বেশ কয়েকবার রাগিনীর বাড়ি এলেও ব্যস্ততা এবং তেমন যোগাযোগ না থাকার কারণে মাঝখানে আর আসাই হয়নি। আসার সাথে সাথেই সৈয়দ তাকে হলরুমের সোফায় বসতে দিয়েছে। বসে বসে হলরুমের চারিদিকটা দেখতে দেখতে বেশ মুগ্ধ হয় উর্মিলা। সবটাই পরিপাটি করে সাজানো। দামি দামি শোপিচে ময়লাও জমেনি। নিশ্চয় প্রতিদিন পরিষ্কার করা হয়! পরক্ষণেই নিজের পরনের চশমাটা খুলে নিলো উর্মিলা। ওড়না দিয়ে হালকা করে মুছে রেখে দিল তারই পাশে। তখনই সৈয়দ উপর থেকে নেমে এলো। উর্মিলার উদ্দেশ্যে বেশ নম্র সুরে বলল,
“আপনেরে রাগিনী মামনি উপরে যাইতে বললো। সে নিজের ঘরেই আছে। উপরে গিয়া ডান দিকের প্রথম ঘরটাই তার।”
উর্মিলা হালকা হেঁসে উঠে দাঁড়িয়ে সিঁড়ির দিকে ধাবিত হয়। সোফায় ফেলে যায় তার চশমা।
দরজায় টোকা পড়তেই রাগিনীর বুঝতে দেরি হয় না দরজার ওপাশে কে। তাই রিও কে ব্যস্তরত রাগিনী কিছুটা জোরেই বলে ওঠে,
“ভেতরে আয়।”
উর্মিলা ধীর পায়ে রাগিনীর ঘরে প্রবেশ করে। বেডে বসে থেকে একটা বিড়াল ছানাকে খাইয়ে দিচ্ছে রাগিনী। উর্মিলা বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে দ্রুত বিছানার কাছে গিয়ে বলে,
“ওয়াও! সো কিউট কিটি! নাম কী রে ওর?”
“রিও।”
“নামটাও মিলিয়ে রেখেছিস! দারুণ তো। তোর মতোই কিউট গোলুমোলু দেখতে।”
রাগিনী এক ঝলক হাসে। তারপর রিও কে কোলে নিয়ে শান্ত গলায় বলে,
“দাঁড়িয়ে আছিস যে! বস।”
উর্মিলা রাগিনীর পাশ ঘেঁষে বসে পড়ে ধপ করে। তারপর জিজ্ঞেস করে,
“তারপর বল! সব ফাইলস্, ডিটেইলস ঘেঁটে দেখলি? কী মনে হচ্ছে এখন তোর?”
“সবই ঘেঁটে দেখেছি উর্মিলা। আর যত পড়েছি তত সন্দেহ আর তীব্র হয়েছে। কোহিনূরের মাঝে কোনোরকম লক্ষণ দেখতে পাইনি আমি। সবটা গুলিয়ে গিয়েছে আমার।”
তপ্ত শ্বাস ফেলল রাগিনী। উর্মিলা কিছু ভেবে বলল,
“উমম…সেদিন আমাকে যা যা বলেছিলি আমারও ঠিক এটাই মনে হয়েছিল। ওই কোহিনূর একদম সুস্থ। অসুস্থ হবার ভান ধরেছে।”
রাগিনীর জবাব এলো না এবার। সে গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত। যেন অন্য জগতে হারিয়েছে। উর্মিলার মাথায় ফট করেই একটা বিষয় ঘুরপাক খেতেই তড়িঘড়ি করে সে রাগিনীর হাতটা চেপে ধরে বলল,
“আচ্ছা! সে যদি সুস্থ হয় আর এমন ভান করে থাকে তাহলে নিশ্চয় তার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে? এখন তো কয়েকদিন ধরে টে’রোরিস্ট হাম’লার বিষয়টা চলছেই। এমন নয় তো? যে ওই কোহিনূর কোনোভাবে টে’রোরিস্ট টিমের সাথে যুক্ত?”
চলবে…
#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩২
মূহুর্তের জন্য যেন নিঃশ্বাস কোথাও একটা আঁটকে গেল। এই কথা আগে কখনো মাথা আসেনি রাগিনীর। হুট করেই বলা উর্মিলার এই কথায় যেন তার নেত্রপল্লব চড়কগাছ হলো। দুটো হাত শক্ত করে মুঠো করে কোহিনূরের সাথে দেখা হওয়ার পর প্রতিটা ঘটনা পরপর সাজিয়ে নিলো সে মনে মনে। কোথাও একটা সত্যিই সূক্ষ্ম সন্দেহের রেখা পেতেই পা থেকে মাথা অবধি অদ্ভুত ঝাঁকুনির সৃষ্টি হলো। নিজেকে সামলে সে বলে উঠল,
“কীসব বলছিস! আমার সন্দেহ হচ্ছে ঠিকই তবে এতো বড় ক্রাই’মের সাথে সন্দেহের বশে উনাকে যুক্ত করা ঠিক হবে না। এটা টেরো’রিস্ট কেস উর্মিলা। সাধারণ ক্রা’ইম নয়। যা বলবি ভেবেচিন্তে বল।”
“আরে বাবা এতো হাইপার হচ্ছিস কেন? আচ্ছা আমাকে একটা কথা বল মেন্টাল হসপিটাল কি শখ করে থাকার কোনো জায়গা? যে তোর ইচ্ছে হলো আর তুই চলে গেলি থাকতে? তাও আবার ছদ্মবেশে। এমনটা কারা করে? যারা অপরাধ করে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করে বা যাদের মধ্যে অপরাধ করার প্রবণতা থাকে। কোহিনূর কি এমনি এমনি সেখানে আছে তোর মনে হয়? তোর অতিরিক্ত বিশ্বাসকে একটু মাটিচাপা দিয়ে যতটা পড়াশোনা করেছিস সেই জ্ঞান থেকে। সাইকোলজির স্টুডেন্ট তুই। বুদ্ধি তো তোর বেশি থাকার কথা।”
রাগিনী বিষয়টা যতই এড়িয়ে যেতে চাইছে ততই যেন উর্মিলা কথাগুলো একেবারে তার মস্তিষ্কে গেঁড়ে দিচ্ছে। তার গায়ের লোম শিউরে ওঠে। মনেপ্রাণে চায় এমনটা না হক। তাহলে নিজের মনের মাঝে বুনে রাখা সেই সুন্দর অনুভূতির বীজগুলো আপনাআপনি অবিশ্বাস নামক কীটনাশক ব্যবহারে ধ্বংস হয়ে যাবে। ঢক গিলে নিজের কথাগুলো একের পর এক সাজাতে থাকে রাগিনী। বিরবির করে বলে ওঠে,
“পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার মানে বিচ্ছিন্নকারক বা বহুব্যক্তিত্ব রোগ। এই যে এমন একটি মানসিক রোগ যে দুটি স্বতন্ত্র বা ব্যক্তিত্ব বজায় রাখে। বিভিন্ন কারণে এই রোগের সৃষ্টি হতে পারে। তার মধ্যে প্রধান কিছু কারণ হলো মাদ’কদ্রব্যের সেবন, বিষণ্নতা, খাওয়ার ব্যাধি, এমনকি এমন কিছু অতীত যা মানুষকে ট্রমার মধ্যে ফে’লে দেয়। কোহিনূরের ডিটেলস থেকে আমি যা পেয়েছি সেটা হলো উনার পুরো পরিবার একসাথে কোথাও ট্রাভেল করতে গিয়ে এক্সি’ডেন্ট করে। সেই ট্রমা থেকে উনার এই রোগ। আশ্চর্যের বিষয় হলো প্রথম প্রথম উনার দুটি ব্যক্তিত্ব লক্ষ্য করলেও আস্তে আস্তে উনার একটি ব্যক্তিত্ব স্থায়ী হয়। উনার কথাবার্তায় ম্যাচিউরিটি দেখা যায়। অদ্ভুতভাবে, উনার গাড়ি বা যানবাহন দেখে ভয় পাওয়ার কথা তবে উনি খুব দক্ষতার সাথে একবার গাড়ি কন্ট্রোলও করেছিলেন। সন্দেহের শুরু হয় সেখান থেকেই।”
কথার মাঝে ফাঁকতালে উর্মিলা বেশ ধীর সুরে বলে ওঠে,
“তাহলে তুই নিজেই ভাব তোর সন্দেহ করাটা কি অযৌক্তিক? নাকি আমি যা বলছি তা অযৌক্তিক? মানুষ ছদ্মবেশে থাকে কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে।”
“তবে আজ পর্যন্ত ঊনার দ্বারা তো কোনো ক্ষতি হয়নি।”
“হতেও তো পারে সে প্ল্যানিং সাজাচ্ছে।”
এবার মাথাটা ধরে যায় রাগিনির। চোখটা বন্ধ করে দেয়ালের সাথে ঠেস মেরে বসে। উর্মিলা জিজ্ঞেস করে,
“দেখি দে ফাইল গুলো কোথায়? আমিও একটু দেখি।”
বলার পরে তার খেয়ালে এল তার চোখে কোনো চশমা নেই। আশেপাশে হাতাতে থাকল সে। না পেয়ে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে সে বলল,
“আরে আমার চশমাটা কোথায়? দেখেছিস তুই?”
“না আমি তোর চশমা দেখিনি। তুই তো আমার ঘরে এসেছিলি চশমা ছাড়াই।”
“কী বলিস! তাহলে নিশ্চয়ই নিচে ফেলে এসেছি। যাই গিয়ে নিয়ে আসি।”
উর্মিলার চোখে একটু সমস্যা রয়েছে। চশমা ছাড়া ছোট লেখাগুলো অস্পষ্ট দেখে। যার কারণে চশমা ব্যবহার করতে হয়। তাই বিলম্ব না করে চশমা নেওয়ার উদ্দেশ্যে সে রাগিনীর রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
বরাবরের মতো সকলের ঘুমটা একটু দেরিতে ভেঙেছে। মুখে ব্রাশ নিয়ে দাঁত ঘষতে ঘষতে হলরুমে পায়চারি করছে অভিরূপ। নোমান সৈয়দের হাতের কফি নিয়ে অভিরূপের কাছে এসে দেখল সে পায়চারি করছে। গতকাল রাতেই তারা রাশেদ সাহেবের বাড়িতে এসে পৌঁছেছিল। তবে অভিরূপের মুখটা গত রাত থেকেই বিষণ্ণ। তা দেখে নোমান কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলে,
“কি হয়েছে এমন বেতালের মতো পায়চারি করছিস কেন?”
অভিরূপ ব্রাশ করতে করতে নোমানের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বাচ্চাদের মতো বলল,
“ওই মেয়েটা!”
“কোন মেয়েটা? গত রাতে যার জন্য কাঁদায় গড়াগড়ি খেয়েছিলি সেই মেয়েটা?”
“হু! সে এভাবে পালিয়ে গেল কেন? আমি কি বাঘ না ভাল্লুক? নাকি ওকে বিয়ে করতে নিয়ে যেতাম? আরে বাবা আমি তো শুধু ওকে ওর বাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। আসলে সব তোর দোষ।”
থতমত খেয়ে যায় নোমান। আশ্চর্য হয়ে অভিরূপের দিকে তাকায়। বিস্ফোরিত সুরে বলে ওঠে,
“আমি আবার কী করলাম?”
“তোর সাথে কথা বলতে বলতেই তো মেয়েটা কোথাও যেন হাওয়া হয়ে গেল।”
“তেরে কিসমত মে নেহি হে ও লারকি।”
“আমি তো শুনেছিলাম আঙ্কেলের মেয়ের নামও রাগিনী। সকাল থেকে তো সেই মেয়েটার দেখাই পাচ্ছি না।”
নোমান এবার আর অভিরূপের কথায় পাত্তা দেয় না। ছেলেটা রাগিনী রাগিনী করে সারা রাত জ্বালিয়েছে। আর নামটা শুনতে চাইছে না। কফির কাপ সোফার সামনের টেবিলে রেখে ফট করেই সোফায় বসে পড়ে। একটা উদ্ভট আওয়াজ পায় কানে। কোনো কিছু মটমট করে ভাঙার শব্দ হয়। কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রয় নোমান। সে যেখানে বসেছে সেখানেই কিছু ভেঙেছে বুঝতেই হুড়মুড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। পেছন ফিরে সোফার দিকে চাইতেই দেখতে পায় একটা ভেঙে যাওয়া চশমা। চশমার গ্লাস ভেঙে সোফায় মুষড়ে পড়েছে।
“আরে এটা কার চশমা?”
হুট করে এক ধা’ক্কা খেয়ে নিজের নির্ধারিত স্থান থেকে সরে যেতে বাধ্য হলো নোমান। এমন রূঢ় ধা’ক্কায় মেজাজ বিগড়ে গেল তার। রাগটা ঝাড়া দরকার। নিশ্চয় ধা’ক্কা দেওয়া ব্যক্তিটি অন্যায় করেছে! এবার মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে তার কর্ণকুহরে।
“আমার চশমা! আমার এতো সুন্দর চশমাটা ভেঙে দিলেন আপনি? কানা নাকি দেখতে পান না?”
এবার নোমানের চোখে আটকালো ছিপছিপে গড়নের একটা মেয়ে। গায়ে জড়ানো সবুজ রঙের কামিজ। সেই সাথে ওড়নাও সবুজ। সরু চোখ দুটোতে রাগি রাগি ভাব। মুখ চোখাচোখা করে রয়েছে। তবে মেয়েটির কথা শুনে নোমান যেন আরো চোটে গেল। মায়াবী সুন্দরী বলে তো ছেড়ে দেওয়া যায় না! সে কাঠ কাঠ গলায় বলল,
“আপনার মাথায় কি বুদ্ধি নেই? বুদ্ধিভ্রষ্ট? চশমা কেউ বসার জায়গায় রাখে? এমন করলে জায়গায় রাখলে ভাঙবেই। তাতে আমায় কানার উপাধি দেবেন?”
“আশ্চর্য লোক তো আপনি! একে তো নিজে ভুল করেছেন। কোথায় আপনার সরি বলা উচিত। তা না করে আমার সাথে গলাবাজি করছেন? লজ্জা করে না?”
“আমার লজ্জা করবে কেন? আমি চুরি করেছি নাকি ডাকাতি? আর সরি বলব কেন? ভুলটা কি শুধু আমার? চশমা টেবিলে রাখতে পারতেন। সোফায় কেন রেখেছেন? এটা চশমা রাখার জায়গা?”
অভিরূপ এবার দুজনের ঝগড়ায় কিছুটা তটস্থ হয়ে একবার নোমানের দিকে চাইছে তো একবার মেয়েটির দিকে। ব্রাশ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে তার। নোমান ছেলেটা বেশ শান্তশিষ্ট হলেও রাগ করলে ব্যাপারটা সুবিধাজনক আর থাকে না। দুজনের এমন ঝগড়ার মাঝেই অভিরূপের মাথায় প্রশ্ন খেলে যায় একটা। এই মেয়েটা আবার রাশেদ আঙ্কেলের মেয়ে রাগিনী নয় তো? ঢক গিলে আস্তে করে এগিয়ে এসে নোমানের পাশে দাঁড়ায় সে। মুখ ভর্তি পেস্টের ফেনা। তবুও নোমানের কাছে মুখ এগিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলার চেষ্টা করল,
“এই এখানেই থেমে যা। মনে হচ্ছে এই মেয়েটা রাগিনী!”
নোমান এবার একটু নিজেকে সামলায়। গলা খাঁকারি দিয়ে কঠোর দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকায়। উর্মিলা রাগে ফুঁসছে। নিজের হাতে যত্ন করে ভাঙা চশমা তুলে আফসোসের সাথে বলল,
“আমার পছন্দের চশমাটা। কত কষ্ট করে এতো সুন্দর ফ্রেম পেয়েছিলাম। সেটাও ভেঙে গেল।”
ঝগড়ার কথোপকথন রাগিনীর ঘর অবধি এসেছিল। বিশেষ করে উর্মিলার এমন রাগি কন্ঠ শুনে তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ির কাছে চলে এসেছে রাগিনী। দ্রুত বেগে সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতেই দেখতে পেয়ে যায় উর্মিলার সাথে আরো দুটো পুরুষকে। একজনকে দূর থেকে চিনতেও ভুল হয় না এক মূহুর্তও। মুখে ব্রাশ নিয়ে মুখটা ফুলিয়ে রেখেছে সে। এলোমেলো ঝাঁকড়া চুলে কোনোরকম চিরুনি পড়েনি এখনো। গোল গোল চোখ দুটো রাগিনীর দিকে স্থির হয়েছে। রাগিনী নিজেকে সামলে নিল। পায়ের বেগ কমতে লাগলো। ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নামল। নিজের গলায় দলা পাকানো কথাগুলো কোনোরকমে উগড়ে বলল,
“কী হয়েছে, উর্মিলা? উপর থেকে তোর গলা পেলাম!”
রাগিনীকে দেখেই উর্মিলা প্রায় কেঁদেই ফেলে। কাঁদো কাঁদো ভঙ্গিতে দুর্বল সুরে বলে,
“এই অভদ্র ছেলেটা আমার চশমা ভেঙে ফেলেছে।”
বলেই নোমানের দিকে ইশারা করিয়ে দেখিয়ে দেয় উর্মিলা। নোমান হতভম্ব। সামান্য চশমার জন্য এভাবে কেউ কেঁদে ফেলে নাকি? কিন্তু তাতে তার কী? নোমান ক্ষিপ্ত সুরে বলে,
“আবারও আমার দোষ দিচ্ছেন? মস্তিষ্ক তো পুরোটাই ফাঁকা।”
“দেখেছিস দেখেছিস? আমাকে ইন্ডাইরেক্টলি গাধা বলে ইনসাল্ট করছে। আপনি গাধা।”
নোমান বিদ্রুপের হাসি হেঁসে বলে,
“কে গাধা সে নিজে স্বীকার করে নিয়েছে।”
উর্মিলা লাল চোখে তাকায়। কাঁদবে নাকি রাগবে বুঝে উঠতে পারে না। এই মূহুর্তে সবথেকে অসহ্যকর লাগছে সামনে থাকা এই লোকটাকে। দশ তালার ছাঁদ থেকে টুক করে যদি ধা’ক্কা মে’রে ফেলে দিতে পারত তাহলে বোধহয় খুব শান্তি আসতো মনে। রাগিনী ততক্ষণে যা বোঝার বুঝে গেছে। সে উর্মিলার কাঁধে হাত রেখে চুপি চুপি বলে,
“উনারা আমাদের গেস্ট। প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড, উর্মি! তাও যেমন তেমন গেস্ট নয়। সিলেব্রিটি গেস্ট। তোর সামনে কিন্তু অভিরূপ চৌধুরী দাঁড়িয়ে।”
অভিরূপের নামটা শুনেই যেন উর্মিলা আপনা-আপনি শান্ত হলো। উত্তেজনা নামক অনুভূতিটা তড়তড় করে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ল। তার গান কে না শোনে? কী সুন্দর সুকন্ঠের অধিকারী! ইন্সটাগ্রামের কতশত ফলোয়ার। একটা ছবি আপলোড করলেই মিনিটেই কতগুলো করে রিয়েক্ট পড়ে। তার মারাত্মক হাসিতে তো মেয়েগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আর এখন রাগিনীর কথা শুনে উর্মিলা থরথর করে কাঁপছে। সে খেয়াল করেনি সেখানে আরো একজন উপস্থিত ছিল। এবার না চাইতেও নজর চলে যায় ব্রাশ মুখে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অভিরূপের দিকে। কীভাবে সে দেখছে। নিশ্চয় মনে মনে ভেবে নিয়েছে মেয়েটা পাগল! এবার পা থেকে মাথা অবধি পর্যবেক্ষণ করল উর্মিলা। হ্যাঁ, এ তো সত্যিই অভিরূপ! স্বপ্ন নয়। মাথাটা ভনভনিয়ে ঘুরল। ভালো করে নোমানের দিকে চেয়েও বুঝল একেও সে দেখেছে। অভিরূপের অনেক ইন্টারভিউ আর তার ইন্সটাতেও। দুই বেস্টফ্রেন্ডের একসাথে ফটোশুটও অনেকবার চোখে পড়েছে উর্মিলার! কত বড়সড় ব্যক্তি। তার সঙ্গে গলা উঁচিয়ে ঝগড়া করে ফেলল?
এতক্ষণ যেন নিজের ভুল ভেবেই উড়িয়ে দিচ্ছিল অভিরূপ। মনে হয়েছিল সকালের ঘুমটা এখনো কাটেনি। এমনি সেই সাহসী নেত্রপল্লব দিনে-রাতে, ঘুমিয়ে না ঘুমিয়েও দেখতে পায়। তাই সামনে থাকা স্বয়ং রাগিনীকেও নিজের ভ্রম ভাবছিল সে। কিন্তু এখন বুঝেছে এইতো সে! নিজের উত্তেজনা সামলে রাখতে না পেরে নোমানের কাঁধ ধরে বড়সড় লাফ দিয়ে উঠে আনন্দের সহিত চিৎকার দিয়ে উঠল সে। সকলে চমকে গেলেও উর্মিলা টলে পড়ল। তার আগে বিরবির করে বলল,
“এখন আমার কী হবে!”
রাগিনী কোনোরকমে উর্মিলাকে ধরতে গিয়ে হিমশিম খেতে হলো। না পেরে সাহায্য করতে এলো নোমান। একটু অস্বস্তি হলেও সাহায্যের উদ্দেশ্যে মেয়েটির ঠান্ডা হাত স্পর্শ করল। সেও বিরবির করে বলে উঠল,
“নির্ঘাত মেয়েটার মাথায় সমস্যা! নয়ত অযথা কেউ সেন্স হারায়? অভিরূপ কি কম ছিল যে এই মেন্টাল মেয়েটাও এসে জুটলো?”
বদ্ধ ঘরে সৃষ্টি হয়েছিল এক গুমোট পরিস্থিতি। অসহ্যকর এক গন্ধ আর ধোঁয়াশা ভরা ঘরটাকে একটু নিস্তার দেওয়া প্রয়োজন। তাই বড় জানালার পর্দা সরিয়ে থাই গ্লাসটা খুলে দিল এক পুরুষ। চোখেমুখে আলো পড়তেই চোখমুখ কুঁচকে এলো তার। সহ্য হয় না তার এতো আলো। অন্ধকার বেশ ভালোবাসে সে। নিস্তব্ধ পরিবেশে সে শান্তি খুঁজে পায়। সেকারণেই তো পুরো শহরটাকে নিস্তব্ধ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে। কলিংবেল বাজলো বাহিরের দরজায়। ঘাড় ঘুরিয়ে সে তাকাল। এলোমেলো পায়ে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বাহিরের ছোট ড্রয়িং রুমটার শেষ মাথায় থাকা দরজার লকটা খুলতেই বাড়িতে হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করল এক নারীজন। চোখেমুখে আতঙ্ক। কপাল ভর্তি ঘাম! রীতিমতো হাঁপিয়ে চলেছে। ঘরে ঢুকেই মূহুর্ত অপেক্ষা না করে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে দরজায় ঠেস মেরে মাস্ক খুলে বড় বড় শ্বাস নিতে থাকল সে। তাতে মানবটির কোনো ভ্রুক্ষেপ হলো না। সে নিজের প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক রেখে লম্বা ডিভানের কাছে গিয়ে তার পাশে শোপিসের মতোই সাজিয়ে রাখা বড় কাঁচের বোতলটা নিলো। পাশেই ছিল ছোট কাঁচের দুটো গ্লাস। বোতলের মুখ খুলে গ্লাসে ঢেলে নিলো তরল পদার্থ। ছেয়ে গেল ঘরটা এক বাজে গন্ধে। একটা গ্লাস সে নিজে নিয়ে চুমুক দিয়ে আরেকটা সেই নারীর দিকে বাড়িয়ে বলল,
“হাঁপিয়ে গেছো বুঝি? টেক ইট। ঠান্ডা করো নিজেকে।”
মেয়েটি লম্বা শ্বাস নিতেই ব্যস্ত। তবে এতোকিছুর মাঝেও যে তার সামনে থাকা লোকটা কী করে শান্ত থাকে খুঁজে পায় না সে। এখন সে রিল্যাক্স ফিল করছে? মেয়েটি শুধু গ্লাসটা হাত দিয়ে নিলো। তবে মুখ দিল না। ঢক গিলে কিছু বলতেই তার আগেই ডার্ক ম্যাক্স বলে ফেলল,
“তোকে বার বার এখানে যখন তখন আসবি না। সন্দেহ করবে আশেপাশের লোক। লেডি বস! তোর থেকে এতো বোকামি আশা করা যায় না।”
“আমি ইচ্ছে করে এখানে আসিনি। উপায় ছিল না। অনেক কথা ছিল। ইম্পরট্যান্ট কথা। যেটা না বললে হবে না। গতরাতে অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে।”
“কী এমন ঘটল আবার?”
লেডি বস এবার বড় শ্বাস নিয়ে বলা শুরু করল,
“গতরাত কিছু কাজে আমি বের হই। নিজের কাছে কোনোরকম অ’স্ত্র রাখিনি। কারণ পুলিশের চেকপোস্ট দিন দিন বাড়ছে। কয়েকজন ছেলে আমাকে তাড়া করে। আমি নিজেকে বাঁচাতে জঙ্গলে যাই আর ভাগ্যক্রমে অভিরূপ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় আমার।”
ডার্কের এবার টনক নড়ে। সরু চোখে তাকায়। এবার বেশ মনোযোগের সহিত বলে,
“তারপর?”
“সে আমাকে বাঁচায়।”
ডার্ক কিছুক্ষণ নীরব থেকে হঠাৎ ফিচেল হেসে মুখে গ্লাস ঠেকিয়ে সবটা পান করে। তারপর শব্দ করে হেঁসে বলে,
“ওহ ওয়াও! ইট ইজ লাইক সিনেমা ওর ড্রামা! হিরো হিরোইনকে বাঁচিয়ে নিল? কিন্তু তুই তো হিরোইন না। ভিলেন!”
“কথা সেটা নয় ডার্ক ম্যাক্স। সে আমাকে রাগিনী বলে সম্মোধন করেছে। আর আজ কবীর খবর দেয়, রাগিনীর বাবার সাথে নাকি অভিরূপের বাবার ভালো সম্পর্ক হওয়ায় অভিরূপ হোটেল ছেড়ে রাগিনী তাজরীনের বাড়িতে উঠেছে।”
কথাটা কর্ণকুহরে পৌঁছানো মাত্রই যেন ডার্কের স্বচ্ছ সাদা পর্দার মাঝে মার্বেলের মতো চোখের মণি দুটো চকচক করে উঠল। ঘাড় কাঁত করে বলল,
“রিয়েলি! এটা তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। তোকে সে রাগিনী বলে বিশ্বাস করেছে। আর রাগিনীর বাড়িতে সে উঠেছে। আমাদের পক্ষে তো রাস্তা আরো সোজা হয়ে গেল।”
মুখটা কাঁচুমাচু করে থাকে লেডি বস। চোখটা নামিয়ে নেয়। জড়তা কাটিয়ে আবারও বলে,
“কিন্তু খারাপ খবরও আছে একটা।”
ডার্কের নয়নে নেমে এলো আবারও তীব্র ক্ষিপ্রতা। ভ্রু উঁচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করল বিষয়টা জানাতে। গলা শুঁকিয়ে এলো মেয়েটার। ঠোঁট ভিজিয়ে কোনোরকমে বলল,
“আমরা রাগিনীর ব্যাপারে সব নিয়ে যা জেনেছি গত বেশ কয়েকদিনে রাগিনী কোহিনূর নামক একটা মেন্টাল পেশেন্টের সঙ্গে বেশি সময় কাটাচ্ছে। গতকাল রাতে অভিরূপের কোনোরকম সন্দেহ হওয়ার আগে একরকম পালিয়ে আসতে সেই মেন্টাল হসপিটাল অতিক্রম করতে হয় আমায়। পেছনের রাস্তা দিয়ে যেতে আমি ওই কোহিনূরকে দেখতে পাই।”
কথার মাঝে থামে লেডি বস। চোখমুখ ফ্যাকাশে হয়ে আসে তার। ঘাম যেন বেশিই ঝরতে থাকে। সেই সময় ডার্কের গম্ভীর গলা পেয়ে ভয়ে যেন কাঁপুনিও ধরে যায়।
“তো? কী এমন হলো? সে তো একটা পাগলই। পাগল তোকে পেলেও ভুলেও যাবে। আর…”
ডার্কের কথার মাঝে সে বাগড়া দিয়ে তড়িঘড়ি করে বলে,
“না। সে মেন্টাল পেশেন্ট হতেই পারে না। সে পুলিশের লোক। আমার যতদূর মনে হলো সে কোনো সিক্রেট টিমের মেম্বার। সে রাগিনীকে সন্দেহ করে পাগলের বেশে সেখানে রয়েছে।”
ডার্কের চোখেমুখে এবার উচ্ছ্বাস ফুটে ওঠে। ঝলমলে হাসি দিয়ে ডিভানে একটা থাবা দিয়ে বলে,
“এ তো গুড নিউজ। তার মানে আমাদের প্ল্যানিংটা সাকসেসফুল হয়েছে। পুলিশের লোক রাগিনীকে সন্দেহ করে এগোচ্ছে। আর এদিকে ওদের এমন ভুল ধারণাকে কেন্দ্র করে এই গোটা শহরে ধ্বংসলীলা চালানো সহজ হবে! ও মাই গড! আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে!”
ডার্ক ম্যাক্সের আনন্দ বেশিক্ষণ টিকলো না। আনন্দে পানি ঢেলে দিয়ে লেডি বস বলল,
“না ডার্ক ম্যাক্স। এতোটা বোকা পুলিশের লোক হয়নি এখনো। তারা ধরতে পেরেছে রাগিনীর মতো অন্যকেউ আছে। কাল প্রথমে ওই কোহিনূর আমায় রাগিনী ভেবে ভুল করলেও এক মূহুর্তেই চিনে ফেলে আমি সে নই। সে আমাকে ধাওয়া করেছে অনেক পথ। আমি ভাগ্যক্রমে বাঁচি। তারা বুঝে গেছে রাগিনী তাজরীন ফাঁসানো হচ্ছে।”
ডার্কের চোখে নেমে এলো অন্ধকার। সঙ্গে সঙ্গে হাতে থাকা গ্লাসটা চেপে প্রচন্ড ক্রোধের সহিত ফ্লোরে ছুঁড়ে মা’রল সেই গ্লাস। বিকট শব্দে চমকে উঠল লেডি বস। ডার্কের দপদপ করতে থাকা কপালের রগটা যেন বেরিয়ে আসবে যেকোনো মূহুর্তে। কিছুক্ষণ চলল নীরবতা। ডার্ক গভীর ভাবনায় ডুব দিয়েছিল যেন। কিছুটা সময় নিয়ে হঠাৎ লেডি বসের দিকে তাকাতেই চোখমুখ আপনাআপনি শুঁকিয়ে এলো তার। ধীর পায়ে যেন ডার্ক এগিয়ে এলো কম্পন বেড়ে গেল তার। কিছু বলতে চাইতেও পিছিয়ে এলো। ডার্ক তার এক হাত ধরে কাঁধের জামা টেনে ধরে বলে,
“এসব স্টাইলিশ পোশাক বাদ দে। রাগিনী তাজরীন কীসব যেন পড়ে? কামিজ, লং ড্রেসগুলো। যেগুলোর অভ্যেস যত দ্রুত করবি ততই ভালো।”
বলার পরপরই ডার্ক ম্যাক্স বেশ রূঢ় ভাবে মেয়েটির চুলের মুঠি টেনে ধরে। চোখ খিঁচে সে কুঁকড়ে উঠতেই ডার্ক থেমে থেমে বলে,
“একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ, তোকে এখানে রূপাঞ্জনা হিসেবে আনি নি। এনেছি রাগিনী তাজরীন হিসেবে। তাই রাগিনীর সম্পূর্ণ রূপ তোকে ধারণ করতে হবে। তোর নাম যে কখনো রূপাঞ্জনা ছিল সেটা ভুলে যা। আর রাগিনীর ওই অপরূপ রূপটাই ওই কোহিনূরকেও শে’ষ করবে সেই সাথে দ্যা ফেমাস অভিরূপ চৌধুরীকেও। রাগিনী তাজরীন নিজেও জানে না সে ডার্ক ম্যাক্সের তুরুপের তাস!”
চলবে…