#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩৯
দুপুর গড়িয়ে তখন বিকেল। রোদের তেজ কিছুটা কমে এসেছে। তবে রাগিনীর ভারাক্রান্ত হৃদয় সেই ঘটনার রেশ কাটিয়ে উঠতে পারছে না। ক্ষণে ক্ষণে মনে জেগে উঠছে সংশয়। মস্তিষ্কে ছেয়ে গিয়েছে চিন্তায়। ভালো লাগার এক সুন্দর নিজ হাতে সাজানো পৃথিবী এলোমেলো হয়ে পড়েছে। কারণটা বোধহয় কোহিনূর। কারণ সেই পৃথিবীর রাজা তো তাকেই বানানো হয়েছিল। ভালোবাসা মাখানো এক মুকুট তাকেই পড়ানো হয়েছিল। মর্যাদা যে রাখতে পারল না। তবে তাকে দোষ দেওয়া ঠিক কিনা বুঝতে পারছে না রাগিনী। সে নিজের কাজ করেছে। দোষ কি তবে রাগিনীর? যে একপাক্ষিকভাবে নিজের পৃথিবী সাজিয়েছিল? অপরদিকের মানুষটা হয়ত নিজের অন্ধকার রাজ্য সাজাতে নিমগ্ন ছিল? এতোকিছুর মাঝেও নিজ মনে জড়তা চাপিয়ে রেখে অন্যমনস্ক হয়ে রেডি হচ্ছিল রাগিনী। বেগুনি রঙের একটা জামায় নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছে সে। তবে বিবর্ণ সেই চেহারা প্রাণবন্ত লাগছে না আজ। চুলে কোনোরকম বেণি করে সামনের বাম দিকটা ছেড়ে দিল রাগিনী। দৃঢ় শ্বাস ফেলে নিজেকে শক্ত এবং স্বাভাবিক করার ব্যর্থ চেষ্টা করল। আয়নায় দেখল নিজেকে। টেবিলে থাকা সাদা রঙের ঘড়ি হাতে জড়িয়ে নিল। কেমন জানি ঘুম ঘুম পাচ্ছে দুপুরের খাবার খাওয়ার পর থেকেই। চোখের পাতা লেগে আসছে। ইচ্ছে করছে যাওয়া ক্যান্সেল করে হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে যেতে। কিন্তু সেটা এখন আর করা সম্ভব নয়। সকলে তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যে নিশ্চয়। এই সময় যাওয়া বারণ করা এক ধরনের অভদ্রতার মাঝেই পড়বে।
চোখটা টেনে টেনে খুলে রেখে ঘর থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে কাঁধে ব্যাগ আর সেটার মাঝে ফোনটা তুলে চেইন লাগিয়ে নিয়ে দরজা বন্ধ করে বাহিরে চলে আসে। বেণি পেছনে চলে যাওয়ায় তা ঠিক করতে করতে করিডোর ধরে হাঁটতেই সামনে পড়ল সাহানা। ঘুম ভরা চোখে তাকে দেখে ঠোঁট টেনে হাসল রাগিনী। জিজ্ঞেস করল,
“কোনো দরকার?”
“না তেমন কোনো দরকার আছিল না। বাহিরে যাইতেছো ঘুরতে? যাও যাও। তোমার মন মনে হয় ভালা না। ঘুইরা আসো। ভালা লাগবে।”
বলেই রাগিনীর আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করলেন সাহানা। তারপর কিছু একটা ভেবে আবারও বললেন,
“তোমাগো এখনি বয়স ভালো কইরা সাজবা, স্টাইল কইরা মাথা বাঁধবা। তোমাগো বয়সে থাকতে কত সাজতাম আমি! আর তুমি দেখি সারাদিন একভাবে বাইরে বের হইয়া যাও।”
“আমার সাজতে ভালো লাগে না।”
মলিন হেসে জবাব দেয় রাগিনী। সাহানা যেন সন্তুষ্ট হন না। রাগিনীর চুলে দিকে তাকিয়ে বলেন,
“চুলগুলা সারাদিন বেণি কইরা থাকো। খোঁপা করো। আরো সুন্দর মানাইব জামার লগে।”
“সময় নেই এখন। বের হতে হবে। সবাই হয়ত ওয়েট করছে আমার জন্য।”
সাহানা কোনোরূপ কথা শুনলেন না আর। রাগিনীর পেছনে এসে তার চুলটা খুলে নিয়ে রাগিনী না চাওয়া সত্ত্বেও খোঁপা করে দিলেন হাত দিয়ে। অতঃপর রাগিনীর মুখশ্রীর দিকে চেয়ে মুগ্ধ হয়ে বললেন,
“এইতো সুন্দর দেখা যায় এখন। শুধু কমতি একটু ফুলের। বাড়ির পেছনে তো কাঠগোলাপের এতো বড় গাছ লাগাইয়া রাখছো। এখন ফুলটার শেষ সময় চলে। যাও দেখি ফুলগুলো খোঁপায় গুঁজে নাও। পরি দেখা যাইব তোমারে তখন।”
রাগিনী ঢক গিলে। চোখদুটো ডলে নেয়। সে পরি হতে চায় না এই মূহুর্তে। কারোর একান্ত পরি হতে চেয়েছিল সে নিজের আনমনেই। ইচ্ছেগুলো কোথাও মিলিয়ে গিয়েছে। যেমনটা দূর থেকে দেখা যায় আকাশটা মিলিয়ে যেতে ঠিক তেমনই মিলিয়ে গিয়েছে। রাগিনী ক্ষীণ সুরে বলল,
“সময় নেই। দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
“তোমরা খালি তাড়াহুড়ো করো ক্যান? ওই গায়ক সাহেবরে কইয়া দিছি তুমি যাইতেছো একটু পর। সে আর তার বন্ধু বাইরে গাড়ির কাছেই আছে বাগানে। তুমি পেছনের দরজা দিয়ে গিয়ে কাঠগোলাপ নিয়া যাইতে কত সময় লাগবে? চলো দেখি তোমারে সাজাইয়া দিই।”
সাহানা যেন রাগিনীর কথা মানতে নারাজ। উনি নিজের কথাকে বাস্তবায়ন করেই ছাড়বেন। রাগিনীকে নিজের মনমতো সাজিয়েই দম নেবেন। তাই রাগিনীর হাত ধরে হাঁটা লাগালেন। সিঁড়ি দিয়ে নেমে চিলেকোঠা পেরিয়ে সেই পেছনের গেটের দিকে উপস্থিত হয়েই সাহানা বললেন,
“যাও। দেখো নিচে অনেক ফুল পইড়া আছে। আমি রাতের রান্না বসাইছি একটু দেখে আসি। আর কিছু মনে কইরো না। আমার মাইয়া নাই তো তাই ইচ্ছা করে তোমারে সাজাইয়া দিতে।”
রাগিনী সাহানার এমন সরল কথা আর চাহনিতে ভালো লাগল। সে পরিবর্তে একটা সুন্দর হাসি উপহার দিতেই সাহানা উল্টোদিক হাঁটা লাগালেন। রাগিনী উপায়ন্তর না পেয়ে আরেকটু এগিয়ে দিয়ে পেছনের দরজার শক্ত ছিটকানি খুলল। দরজাটা খানিকটা ধা’ক্কা দিতেই খুলে গেল দরজা। বাহিরে বের হলো। কিছুটা সামনেই বড় কাঠগোলাপের গাছ। নিচে ফুলগুলো পড়ে আছে অবিন্যস্তভাবে। ঘুমের চোটে এবার ঘোলা দেখছে রাগিনী সবটা। হঠাৎ তার অনুভূত হয় তার পা থেমে গিয়েছে। এগোতে পারছে না। পা চালাতে পারছে না। ছটফটিয়ে উঠল গলায় চাপ লাগায়। বুঝতে সময় লাগল কেউ তার গলা বাহু দিয়ে চেপে ধরেছে। কে এমন করছে? ঘাড় পেছনে ঘুরিয়েও লাভ হলো না। একটা শক্তিশালী পুরুষকে ঘোলাটে দেখে চিনতে পারল না সে। ফট করেই মাথায় খেলে গেল কোহিনূরের নাম। না চাইতেও যেন ভয়ের মাত্রা বাড়ল। সে সবটা জেনে যাওয়ায় তাকে বুঝি এভাবে শা’স্তি দেওয়া হচ্ছে? তাকে কি আর বাঁচিয়ে রাখবে না? রাগিনী চিৎকার করতে চাইল। নখ দিয়ে আঁচড় কাটলো ইচ্ছেমতো। লাভের লাভ হলো না। এবার নিশ্বাসটাও নিতে পারল না সে। নাকের সামনে রুমাল জাতীয় কিছু আনা হয়েছে। অদ্ভুত ঘ্রাণে ঝাঁঝ লাগলো প্রথমে। পরক্ষণেই বাকি শক্তিও গায়েব হলো শরীর থেকে। পুরোটা নিস্তেজ হয়ে গেল রাগিনী।
রাগিনীকে ছেড়ে দিতেই সেন্সলেস রাগিনী মুখ থুবড়ে পড়ে গেল ঘাসযুক্ত মাটিতে। কবির নিচের হাতটা নেড়েচেড়ে দেখে নিল। আঁচড় দিয়ে অনেকটাই হাতের অবস্থা বেহাল করেছে মেয়েটা। নখ বসে গিয়েছিল একদম। কবির রাগিনীর দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“পারবে না তবুও ছাড়বে না। ঘুমের ঔষধ দিলে কী হবে! এই সাহানার ঘুমের ঔষধ দেখি কোনো কাজের না। তেজ কমে না মাইয়াটার। কী অবস্থা করল হাতের। ভাগ্যিস ক্লোরোফর্মের ব্যবস্থা করা গিয়েছিল।”
সামনে থাকা রূপাঞ্জনা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নিচে পড়ে থাকা দুটো ফুল হাতে তুলে নিয়ে বলল,
“মেয়ে মানুষ বলে কথা! তাদের তেজ আলাদাই।”
“যেমন আপনের।”
ফুলটা খোঁপায় গুঁজে কবিরের দিকে সরু চাহনিতে তাকাল রূপা। তার আবার তেজ? নেই বললে ভুল হবে। আছে তো অবশ্যই। নাহলে এতো এতো সরব ফেলে দিতে পারতো না নিশ্চয়। কবির রূপাঞ্জনাকে দেখে অবিশ্বাস্য হয়ে বলে,
“বস আপনাকে তো পুরাই এই রাগিনীর মতো লাগে এখন।”
“তাই নাকি? সেটাই যদি হয় তাহলে সেদিন কোহিনূর আমাকে চিনতে পারল কী করে? নিশ্চয় কোনো নিখুঁত পার্থক্য রয়েছে এখনো।”
“পুলিশের লোক, বস! বুঝতে হবে। চোখ দিয়েই সব বুঝতে পারে।”
“পুলিশের লোক হলেও বা কী? এতো পুলিশের চোখে ধুলো দিয়েছি। এটা শুধু তার কাছে কেসের অংশ নয়। হতে পারে মেয়েটা তার কাছে অন্য অনুভূতি!”
রূপাঞ্জনা আর কবিরের উত্তরের অপেক্ষা করল না। রাগিনীর হাতের ব্যাগ থেকে ফোন থেকে শুরু করে যা যা নিয়েছিল সব নিজের ব্যাগে নিয়ে হাঁটা দিল সামনের দিকে। হাতে সময় কম। যত দ্রুত কাজ শেষ করা যায় ততই ভালো। তবে আশংকা একটাই! সে যে মনস্থির করতে পারছে না নিজেকে। লক্ষ্যভ্রষ্ট না হতে হয়!
অস্থির মনে, এলোমেলো পায়ে বাগান দিয়ে ঢুকল উর্মিলা। রাগিনীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছে সে। মেয়েটার কণ্ঠ তখন ফোনে শুনে ঠিকঠাক লাগেনি উর্মিলার কাছে। মনে হলো এই মূহুর্তে তার একটু রাগিনীর পাশে থাকা উচিত। অন্তত সাহস দেওয়া উচিত। বিরবির করে সে আনমনে বলল,
“ভয় পাওয়াই কথা। এতোদিন একটা আত’ঙ্কবা’দীর সেবাযত্ন করার পর যখন তার আসল পরিচয় জানতে পারা যায় তাহলে ভয় পাবেই। আমি ওর জায়গায় থাকলে তো আরেক দফা জ্ঞান হারিয়ে চিত হয়ে থাকতাম। কে জানে এখন…”
শেষ কথাটা অসম্পূর্ণ রইল উর্মিলার। শক্ত কিছুর সাথে ধা’ক্কা খেয়ে নিজেকে সামলে নিল সে। চোখে চশমা নেই। সবই ঘোলাটে দেখে। সামনে তাকিয়ে কেমন যেন পিলার পিলার লাগছে তার। ভ্রু কুঁচকে তাকাল উর্মিলা। এবার পুরুষালি কণ্ঠ ভেসে এলো কর্ণকুহরে। ওমা! পিলার কথাও বলে!
“মাঝে মাঝে তো দেখে চলার অভ্যেস করতেই পারেন মিস. চাশমিশ।”
কণ্ঠস্বর কেমন চেনা চেনা ঠেকল উর্মিলার কাছে। স্মরণে এলো কিছুক্ষণ পর। চোখ পাকিয়ে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার পর বুঝল এটা সেই কুচুটে লোক। আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করে শুধু শুধু। তৎক্ষনাৎ কপালে ভাঁজ পড়ে উর্মিলার। তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে সে।
“আপনি আবার? আমার দিনটাই খারাপ যাবে আজকে। আপনার জন্য আসতেই চাইছিলাম না আজ রাগিনীর বাড়ি। নেহাত ওর পাশে থাকতে হবে তাই এলাম। এসেই যে এমন কুচুটে মুখ দেখতে হবে জানলে আসতাম না।”
“ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, আজকের দিনটা অলরেডি চলে গিয়েছে। এখন বিকেল। তাই দিন নষ্ট হওয়ার কোনো চান্স নেই। রাত নষ্ট হলে হতে পারে। আর আমিও এমন ঝগড়ুটে মেয়ের দেখা আবার পাব জানলে আরো পরে বের হতাম।”
সর্বাঙ্গ জ্বলে ওঠে উর্মিলার। ইচ্ছে করে নিজেই নিজের চুল টেনে ছিঁড়তে। কেউ এতো শান্তভাবে কাউকে জ্বালাতে কী করে পারে। রেগেমেগে বলল,
“শুনুন, আপনার সাথে ঝগড়া করে মুড নষ্ট করার ইচ্ছে আমার নেই। রাগিনী কি বাড়ির ভিতরে আছে?”
“মেবি! রেডি হচ্ছে। আমাদের শহর দেখাতে নিয়ে বের হবে তাই।”
উর্মিলা আর কথা বাড়াল না। রাগে গজগজ করতে করতে নোমানের পাশ কাটিয়ে যেতেই নোমান হুট করেই তাকে পিছু ডেকে বলল,
“হ্যালো, মিস. চাশমিশ! একা একা বাড়ির মধ্যে ঢুকতে পারবেন তো? নাকি আমি এগিয়ে দিয়ে আসব? বলা যায় না আবার কখন কোন দেয়ালের সাথে মাথা ঠুকে যায়।”
উর্মিলা ঝাঁঝালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করল এবার। নোমান ঠোঁট টিপে হাসল। কেন সে জানে না তবে রাগাতে ভালো লাগছে তাকে। ইচ্ছে করছে আরো জ্বালাতে। আরো রাগাতে! রাগিনীকে দেখে নোমান বলল,
“ওইযে তোমার বান্ধবী!”
পেছন দিক থেকে রূপাকে আসতে দেখেই সকলেই রাগিনী ভেবে ভুল করল এবার। করারই কথা। এতো নিখুঁত মিল থাকলে কাছের লোকজন ছাড়া যে কেউ ভুল করবে। তবে রূপাঞ্জনার ভয় করছে। কারণ রাগিনীর স্বভাবচরিত্র সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। যদি ভুল কিছু বলে বা করে একবার ধরা পড়ে তবে আর পালানোর চান্স নেই। উর্মিলা রূপাকে দেখেই তার দিকে দ্রুত এগিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। জাপ্টে ধরে ফিসফিস করে বলে,
“ঠিক আছিস তো তুই?”
রূপাঞ্জনা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল জবাব দিল না কিছুর। বিরক্ত লাগল বেশ। এভাবে কেউ হা’মলে পড়ে নাকি? এটা একদম তার পছন্দ নয়। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে ধ’মকে সরিয়ে দিয়ে। তবে তা তো করা যাবে না। কিছুটা সময় নিয়ে কণ্ঠ চিকন করে বলল,
“আমি ঠিক আছি।”
“আমি তো ভেবেছিলাম তুই একদম ভয়ে ঘর থেকেই বের হচ্ছিস না। কিন্তু এখানে এসে দেখি কাহিনী অন্য। তুই সবার সাথে ঘুরতে বেরিয়ে যাচ্ছিস। আমিই বাড়িতে টেনশন করে ম’রছিলাম।”
রূপাঞ্জনা বুঝতে পারল এটাই সেই রাগিনীর ফ্রেন্ড হবে। নামটাও শুনেছিল মনে হয়। উর্মিলা! অতিরিক্ত বকবক করে। রূপাঞ্জনা শান্ত থাকার চেষ্টা করে বলল,
“আমার আর কী হবে! তুইও চল না আমাদের সাথে।”
“মোটেও না। তোরা যা। আমি কুচুটে লোকের সাথে যেতে পারব না।”
বলেই আঁড়চোখে নোমানের দিকে তাকাল উর্মিলা। নোমান কিছুটা চটে গেলেও শান্ত রাখল নিজেকে।
“আমার পক্ষেও এই আধকানা মেয়ের সাথে যাওয়া পসিবল না। দেখা যাচ্ছে কোথায় গিয়ে মাথা ঠুকে যাবে! নয়তবা পড়ে যাবে। আমাদের ঘোরাঘুরিই স্পয়েল হয়ে যাবে। তখন ম্যাডামকে হসপিটালে দৌড়াতে হবে। রাগিনী, এতো রিস্ক নেওয়ার কোনো দরকার নেই।”
তেতে উঠল উর্মিলা এবার। এতো বড় সাহস? তাকে এতো সহজে আধকানা উপাধি দিয়ে দিল? এবার উর্মিলার মন চাইছে লোকটারই চুল ছিঁড়তে। ক্ষুদ্ধ হয়েই সে বলল,
“রাগিনী, আমি তোদের সাথেই যাব। আর অনেক অনেক ঘুরব। একজনকে দেখিয়ে দেব আমি আধকানা কিনা!”
নোমান মিটমিটিয়ে হাসতেই গ্যারাজের কাছ থেকে হেঁটে এলো অভিরূপ। এ্যাশ কালার একটা শার্ট পড়েছে সে। হাতা গুটিয়ে রেখেছে কনুইয়ের কাছে। বোতামের ফাঁকে ঢুকানো সানগ্লাস আর হাতে কালো বেল্টের একটা ঘড়ি পড়েছে। পুরোটা ফর্মাল ড্রেসআপ তার। বিকেলের মিষ্টি আলো তার মুখে পড়লে আশ্চর্য রকম সুন্দর লাগে। রূপাঞ্জনা তাকে দেখেই থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মানুষটাকে সে আগে মনোযোগ দিয়ে দেখেনি। আজ দেখতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। কোথাও খুঁত বের করার চেষ্টা করছে যেখানে তাকালে মনে হবে তাকে এলোমেলো লাগছে, অসুন্দর লাগছে। এমন করতে করতে রূপাঞ্জনার চোখটা আটকায় অভিরূপের মাথায় ঝাঁকড়া আর অযত্নে রাখা চুলগুলোর দিকে। কপালে অযত্নে পড়ে আছে অগোছালো হয়ে। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এই অগোছালো জিনিসটাই ভালো লাগছে রূপার কাছে। সে পুলকিত হয়ে চেয়েই রইল। সবার মাঝে যে কথোপকথন হচ্ছে তাতে কান গেল না তার। হুট করে চোখের সামনে হাত নাড়ানো দেখে হকচকিয়ে তাকাল সে। অভিরূপের সুমিষ্ট কণ্ঠে বলা কথাগুলো এবার কানে পৌঁছালো তার।
“হ্যালো, ম্যাডাম! আপনি কি আবারও আমাকে মামা, চাচা কোনটা ডাকা যায় সেটা ভাবছেন?”
রূপা কপাল কুঁচকে জবাব দিল,
“মামা, চাচা ডাকব কেন? আপনি আমার কোন জন্মের মামা, চাচা?”
রাগিনী রূপী রূপাঞ্জনার কথায় অন্যরকম ঝাঁঝ পেয়ে উৎসুক হলো অভিরূপ। এইতো মেয়েটা! মনে হচ্ছে অসুস্থতা কাটিয়ে নিজের ফর্মে ফিরে এসেছে। এখন তাহলে বুঝি কথায় কথায় চোখ রাঙিয়ে তাকাবে? ঝাঁঝালো গলায় কথা বলবে? অভিরূপের তো প্রিয় এটাই! সে তো এটার জন্যই চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষা করেছিল। মেয়েটা হয়তবা জানে না।
“সেটা তো আমিও তোমাকে বলি! কিন্তু আমাকে সুযোগ পেলেই অদ্ভুত সম্পর্কে জুড়ে দাও।”
“এসব বাদ দে তো। তুই কী যেন বলছিলি! আজ গাড়িতে যাবি না। তো কীসে যাবি?”
অভিরূপের নেত্র দুটো চকচক করে উঠল নোমানের কথায়। প্রগাঢ় হেসে বলল,
“হ্যাঁ। আমি তো কখনো রিকশায় উঠিনি। তুই জানিস সেটা। তাই আমি ঠিক করেছি আজ আমরা রিকশাই ঘুরব। আর স্ট্রিটফুড ট্রাই করব।”
“আর ইউ সিউর অভি? তুই রিকশায় যাবি? দেখ, ভেবেচিন্তে কথা বল। রিকশাই কিন্তু এসি নেই। পরে চিল্লাচিল্লি করতে পারবি না।”
“আপনি চুপ করুন। আপনারা ওই গাড়ির কাঁচের মধ্যে থেকে প্রকৃতি দেখে কী বোঝেন বলুন তো? উনি এবার সত্যি প্রকৃতির রিয়েল ফিল নিতে চাইছেন আর আপনি কিনা ভয় দেখাচ্ছেন?”
ধমকে বলল উর্মিলা। নোমানে জবাবে স্পষ্ট ভাবে বলল,
“মিস. চাশমিশ! একটা চুল পরিমাণও তো এই ভদ্রলোককে চেনেন না। আমি তো ছোট থেকে দেখে আসছি তাই বুঝি। মাঝরাস্তায় রিকশা থেকে নেমে গরমে হাঁপিয়ে গাড়ি গাড়ি করবে। আর স্ট্রিটফুড দেখলেই তো ও নাক শিটকায়।”
“তুই কী মনে করিস আমাকে? আমি রিকশায় যেতে পারব না? স্ট্রিটফুড ট্রাই করতে পারব না? সবসময় আমার বদনাম না করলেই তোর চলে না। তাই না?”
গাল ফুলিয়ে বলে অভিরূপ। বাচ্চাদের যেমন তাদের বায়না পূরণ না হলে জেদ ধরে মুখ বেলুনের ন্যায় ফুলিয়ে রাখে ঠিক তেমনই করেছে অভিরূপ তার মুখভঙ্গি। এরই মাঝে হাসি পেল রূপার। তবুও তা চাপিয়ে গাম্ভীর্যের সাথে বলল,
“আচ্ছা সে দেখা যাবে কার কথা ঠিক হয়। এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে তো আর রিকশা আপনাআপনি নিয়ে যাবে না। ঠিক করতে রিকশা। কোথায় যাবেন আপনারা?”
“তুমি যেখানে নিয়ে যেতে চাও!”
রূপাঞ্জনা ভ্রু কুঁচকালো। আর কথা বাড়াল না। কথা বাড়িয়ে সময় তো নেই। তারা সবাই মিলে বাহিরে বের হলো। বের হওয়ার আগে বাড়িতে আবার কিছু একটা নেওয়ার জন্য গিয়েছিল নোমান। ফিরে আসা মাত্র মেইন রোডে একে একে দুটো রিকশা ঠিক করল রূপাঞ্জনা। অভিরূপ প্রথমটায় তড়িঘড়ি করে উঠে বসল বেশ আগ্রহের সাথে। তারপর উল্লাসের সাথে বলল,
“দেরি করছো কেন? উঠে পড়ো। নোমান, তুই উর্মিলার সাথে আয়। আর রাগিনী আমার সাথে আসুক।”
কথাগুলো খুব সহজে বলে দিলেও রূপার অদ্ভুত প্রতিক্রিয়ায় থমকে গেল অভিরূপ। নোমানও সরু চোখে তাকিয়ে আছে। যেন দৃষ্টি দিয়ে খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করছে, ‘বাহ! বেশ ভালোই তো রাগিনীকে নিজের পাশে বসিয়ে যেতে চাচ্ছিস। অতি বাড় বেড়ো না বাছা, ঝড়ে পড়ে যাবে। আমি কিছুতেই এই বাচাল মেয়েটার সাথে যাচ্ছি না।’
নোমান ইশারা করে রাগিনীর বাড়ি দেখিয়ে দিল। অর্থাৎ সে বাড়ি ফিরে গিয়ে শুয়ে পড়বে। অভিরূপও বেশ নিষ্পাপ মতো একটা ভঙ্গি করে অনুরোধ করল না যেতে। আবারও রূপার দিকে দৃষ্টি যেতেই শুকনো ঢক গিলে নিয়ে বলল,
“ইয়ে মানে, নোমান আর আমি কেউই তো শহর চিনি না। তাই হারিয়ে গেলে কী হবে? তাই ভাবছিলাম দুজনের কাছে দুটো গাইড থাক। তাতে ভালো হবে। তাই না?”
রূপাঞ্জনা উত্তরে আর কিছু বলল না। কিছুটা সংকোচ নিয়েই উঠে বসল অভিরূপের পাশের সিটে। তার তো অভিরূপের কাছে কাছেই থাকতে হবে। মূল লক্ষ্য তো একটাই। তার হাতের ব্যাগে রয়েছে মোক্ষম জিনিসপত্র। প্রথমটা বো*ম। টাইমিং ফিট করা আছে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের। এই সময়ের মধ্যে কাজ না হলে টাইম শেষ হলে আপনা-আপনি ব্লা’স্ট করবে সেটা। তাই এতো তাড়াহুড়ো রূপার। ভয় একটাই যেই হাতে এতো মানুষের র’ক্ত লেগে আছে। সেই হাতটা যেন আজ না কাঁপে। তাহলে সে আজ নিজের কাছে হেরে যাবে।
অভিরূপের পাশে বসতেই চেঁচিয়ে উঠল উর্মিলা।
“রাগিনী! তুই এমনটা করতে পারলি? আমি এই কুচুটের সাথে যাব তাও এক রিকশায়? আমাকে একা রেখে যেতে পারছিস তুই?”
“তোর সমস্যা হলে অন্য রিকশা নে। আলাদা চলে আয়। আর নাহলে দুজনই মুখে পারমানেন্ট তালা মে’রে নে। মৌনব্রত কর। কথা বলতে হবে না।”
রাগিনীর শান্ত কণ্ঠে উত্তর শুনে উর্মিলা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
“বুঝি বুঝি! দ্যা চকলেট বয় অভিরূপকে পেয়ে এখন আমাকে ভুলে যাচ্ছিস তুই। আমি সব বুঝি।”
রূপাঞ্জনা বিরক্ত হয়ে তাকাল। অভিরূপ হেসে একটু চুলগুলো হাত দিয়ে নাড়ালো। আর রিকশাওয়ালার উদ্দেশ্যে বলল,
“মামা, চলেন আপনি।”
রিকশাওয়ালা যেই কিনা প্যাডেল করা শুরু করল মাথা থেকে হাত সরে গেল অভিরূপের। কেমন যেন কাঁপছে রিকশা। আবার দুলছেও। ভয় ধরে গেল অভিরূপের। আচমকা রিকশার হুক চেপে ধরে জোরে জোরে বলল,
“এই মামা, আপনার রিকশায় সমস্যা আছে নাকি? এমন করে কেন?”
“একদম ফিট রিকশা। কোনো সমস্যা তো নাই। আপনে ভালা কইরা বসেন।”
রিকশাওয়ালার উত্তরে মুখ ফ্যাকাশে হলো অভিরূপের। ক্যাচক্যাচ শব্দও করছে। তবুও চেষ্টা করল রূপাঞ্জনার সামনে সাহস ধরে রাখার। রূপা অন্যদিকে চেয়ে থেকে আপনমনে কিছু ভাবছে। আনমনেই সে বলল,
“রিকশা এভাবেই চলে। টালমাটাল হয়ে, হেলেদুলে।”
ফট করেই রাস্তার গর্তে যখন রিকশা খানিকটা হোঁচট খেল আরো বেশি নড়চড় দিয়ে উঠতেই অভিরূপ আর আগপাছ না ভেবে রূপার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
“ও মাই গড! আমি পড়ে যাব! এ কোন বিপদে পড়লাম! ওহ গড, প্লিজ সেভ মি।”
রূপাঞ্জনার হাতে আচমকা এই স্পর্শে চকিতে তাকালো অভিরূপের পানে। চোখ বড় বড় করে তাকাল নিচে যেখানে তার আর অভির হাত মিলিত। অদ্ভুত এক নবীন অনুভূতি, অস্বস্তি সব মিলিয়ে মিশ্র অনুভূতি জায়গা করল মনে। কপাল ঘেমে উঠল। ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই অভিরূপ ভয়ে ভয়ে ছেড়ে দিল রূপার হাত। আর মিনমিন করে বলল,
“সরি।”
“রাস্তা ভালো নয় তেমন। অনেক গর্ত আছে। এমনটা হবেই রিকশায়।”
বলে থামল রূপাঞ্জনা। অভিরূপের ভয় মাখা ফ্যাকাশে চুপসে যাওয়া চেহারার দিকে তাকালো একবার। তারপর বিস্ময়ের সুরে বলল,
“ভেবেই আশ্চর্য হচ্ছি যেই মানুষ সেদিন আমায় ওসব বখাটে ছেলেদের হাত থেকে বাঁচাতে কত নাটক করল সাহসের সাথে সেই মানুষটাই রিকশায় এতো ভয় পায়?”
“কখনো উঠি নি তো। আর সাহসও পাচ্ছি না।”
বলতে বলতেই আবারও একটা গর্তে পড়ল রিকশা। চমকে উঠে না চাইতেও রূপাঞ্জনার হাতটা আবারও নিবদ্ধ করল নিজের হাতে। এবার ঠোঁট কামড়ে সেই স্পর্শ সহ্য করল রূপাঞ্জনা। এই স্পর্শ যেন চামড়া ভেদ করে পুরো শরীরে নাড়া দিচ্ছে। অভিরূপ ভয়ে ভয়ে বলল,
“আমি তোমার হাতটা ধরে থাকি প্লিজ? প্রমিস, অন্যকিছু করব না।”
“অন্যকিছু বলতে?”
“ইয়ে মানে নাথিং! ধরে থাকি হাতটা?”
রূপাঞ্জনা আর কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ায়। অভিরূপের উষ্ণ আরো প্রগাঢ় হয়। নিজেকে সংবরণ করার চেষ্টায় মত্ত থাকে রূপাঞ্জনা।
উর্মিলা আর নোমান রিকশার দুই ধারে দুজন বসে আছে। দুজন দুদিকে মুখ করে রয়েছে। ভুলেও একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে না। তাকালেই যেন তৃতীয় বিশ্বযু’দ্ধ নিশ্চিত। হুট করে রাস্তার গর্তে রিকশা হেলেদুলে উঠলে পরিস্থিতির চাপে দুজন কাছাকাছি এসে দ্রুত বিদ্যুতের বেগে আবারও আগের জায়গায় ফিরে যাচ্ছে। খানিকক্ষণ পর কিছু একটা ভেবে নিজের পকেট থেকে আস্তে করে চশমার বক্স বের করে নোমান। বক্স খুলে চশমা নিয়ে পুনরায় চশমার বক্স পকেটে ঢুকিয়ে চশমা নিজে পড়ে উর্মিলার উদ্দেশ্যে বলল,
“দেখো তো আমায় কেমন লাগছে?”
উর্মিলা রাশভারি হয়ে তাকালো নোমানের পানে। তার চোখে পছন্দের ফ্রেমের চশমা দেখে বিরক্তি কোথায় যেন উবে গেল। হা হয়ে দেরি না করেই টেনে খুলে নিল চশমা। নিজের দুহাতে ধরে অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বলল,
“আমার চশমা! আমার পছন্দের ফ্রেম।”
নোমানের মাথায় খেলে গেল দুষ্টু বুদ্ধি। সে ছো মেরে নিয়ে নিল চশমা। আর শক্ত গলায় বলল,
“আশ্চর্য তো! আমার চশমাকে তুমি নিজের চশমা কী করে বলছো? এটা আমি আমার টাকা দিয়ে কিনেছি। তুমি তো দেখছি মহা ডা’কাত।”
“কিন্তু এটা তো মেয়েদের ফ্রেমের চশমা।”
“তো কী হয়েছে? আমি আমার গার্লফ্রেন্ডের জন্য কিনেছি।”
নাক ফুলিয়ে চোখ রাঙালো উর্মিলা। একটুর জন্য খুশি হয়েছিল তা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। মুখ পেঁচার মতো করে আবারও অন্যদিকে ফিরিয়ে নিতেই ফট করে নোমান তার হাতে চশমা ধরিয়ে বলল,
“নাও তোমার চশমা। তোমার জন্যই কিনেছিলাম। সেদিনের জন্য সরি। অনেক ঘুরে তোমাকে সরি বলার জন্য এই ফ্রেম পেয়েছি। আর পড়ে দেখো পাওয়ার এক কিনা!”
উর্মিলার মুখে দেখা গেল হাসির ঝিলিক। যেন একঝাঁক খুশির দল হা’না দিয়েছে তার মুখেই। বিকেলের কমলা রোদ তার হাসিময় রূপটাকে বাড়িয়ে দিতে আরো সাহায্য করছে। উর্মিলা চশমা পড়ল। তারপর উৎসুক হয়ে বলল,
“সব ঠিকঠাক।”
নোমান নিঃশব্দে হেসে সামনে তাকায়। হঠাৎ করেই উর্মিলা প্রশ্ন করে,
“এটা কোন দোকান থেকে কিনেছিলেন?”
“অনেক ঘুরতে হয়েছে এটার জন্য। ঠিক মনে নেই নামটা। বাট বসুন্ধরা থেকে কিনেছিলাম।”
“ওখানে কি একপিসই এই ফ্রেম ছিল?”
নোমান মাথা নাড়িয়ে জবাব দিতেই আবারও উর্মিলা তেতে উঠে বলল,
“তার মানে আপনিই সে-ই লোক যে লাস্ট পিস কিনে নিয়েছিলেন আর আমাকে ঘুরে আসতে হয়েছিল?”
নোমানের চোখজোড়া সরু হয়ে আসে। বুঝে উঠতে পারে না কিছুই। উর্মিলা আরো রেগে বলে,
“আপনার জন্য আমাকে ঘুরে আসতে হয়েছে। বলেছে, লাস্ট পিস একটা লোক কিনে চলে গিয়েছে। আপনি না কিনলে ওটা আমি পেতাম।”
কিছুটা সময় নিয়ে নোমান বুঝল বিষয়টা। হতভম্ব হলো নিজেই। কোনোরকমে জবাব দিল,
“বাট, এনে তো তোমাকেই দিলাম। তাহলে ক্ষতি কীসে হলো?”
“সেদিন আমাকে পুরো মার্কেট ঘুরিয়ে বলছেন ক্ষতি হয়নি? বদ লোক!”
বিষম খেলো নোমান। যার জন্য এতো খুঁজে চশমা কিনলো এখন সেই কিনা কথা শোনাচ্ছে? এটা কী মানা যায়? একেই বোধহয় বলে, ‘যার জন্য করি চুরি সে-ই বলে চোর!’
চলবে…
#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪০
শোয়া থেকে উঠে বসল নির্জন। পুরো বেডে দুটো ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে ভরা। দুটো পা ঢাকা ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে। ঠান্ডা লাগছে কিছুটা। কপাল থেকে ভেজা রুমালটা সরিয়ে পাশে থাকা বাটিতে রেখে দিল। দৃঢ় শ্বাস ফেলতেই ভেতর থেকে গরম এক বাতাস তার হাতে এসে পড়ল। শান্তি পাচ্ছে না কিছুতেই। হাত দুটো ক্ষণে ক্ষণে কাঁপছে। ভেসে উঠেছে হাতের ভেতরে থাকা সবুজ রগ। সেটাই মনোযোগ দিয়ে দেখছে নির্জন। নয়নতাঁরার প্রবেশে মাথা উঠিয়ে তাকাল সে। নয়নতাঁরা হাতে একটা বাটি নিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নির্জনকে বসা অবস্থায় দেখে তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে এসে বলল,
“বিগ ব্রাদার, আবার কেন উঠে বসেছো তুমি? কিছুক্ষণের জন্য শান্তভাবে শুয়ে থাকা যায় না?”
“এমন হাবভাব করছো যেন আমার জ্বর নয় ক্যান্সার বা জন্ডিস হয়েছে। আই এম ফাইন। এভাবে শুয়ে থাকতে দম বন্ধ লাগছে আমার।”
“সারাদিন ক্যাঙ্গারুর মতো লাফিয়ে লাফিয়ে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছো একদম। দেখি, টেম্পারেচার কত?”
নির্জন কিছু বলার আগেই তার মুখে থার্মোমিটার পুরে দিল নয়ন। চোখ গরম করে নির্জনকে শান্ত হয়ে বসে থাকতে বলল সে। নির্জন চোখমুখ কুঁচকে বসে থাকল দুই মিনিট মুখে থার্মোমিটার নিয়ে। সময় হলে সেটা বের করে ভালো করে টেম্পারেচার দেখতেই চোখ দুটো ছানাবড়া হলো নয়নতাঁরার। নির্জনের সামনে থার্মোমিটার ধরে বলল,
“দেখেছো, দেখেছো? পুরো ১০২। আর ভদ্রলোক কিনা যাবেন অফিসে। আহা! আমি জানি তুমি ব্রিলিয়ান্ট মানুষ। অনেক শক্ত মানুষ। তাই বলে সুপারম্যান মনে করে নিজেকে ভুল ভেবে বসো না।”
“আমার কাজ আছে নয়ন। ভালো লাগছে না। কেমন যেন অস্থির লাগছে।”
নয়নতাঁরা দমে না। ধমকে বলল,
“তোমার কাজকে আমি তোমার রি’ভলবা’র দিয়ে গু’লি মা’রি। তুমি বেড থেকেও উঠবে না।”
কড়া চাহনি নিক্ষেপ করল নির্জন। এই নয়ন মেয়েটা যেন মূহুর্তেই বড় হয়ে গিয়েছে। প্রতিবারই যতবার নির্জনের কিছু হয় তখনি যেন ম্যাজিকের মতো সে ফট করে বড় হয়ে যায়। ভাইয়ের যত্ন করে দায়িত্ব নেয়। কথায় কথায় ভাইকে ধমক দেয়। আজও ব্যতিক্রম হয়নি তার। সকালের পর থেকে দুপুরে প্রচন্ড মাথাব্যথা নিয়ে বাড়ি আসে নির্জন। তারপর থেকে গা গরম হতে থাকে। নয়ন খেয়াল করে সবই। তারপর জ্বর পরিক্ষা করেই বর্তমানে নির্জনকে জোর করেই বেডে শুইয়ে রেখেছে। খোঁচা খোঁচা দাড়ি পূর্ণ গাল ছাড়া পুরো মুখে জ্বরের ভাবটা দেখা দিয়েছে রক্তিম বর্ণ হয়ে। চোখ দুটো কিছুটা ফুলে গিয়েছে। কথা বলতেও যেন মাথাটা ঝিমঝিম করছে। মাথা বাড়ালো না নির্জন। দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে বসতেই চোখটা বুজল সে। নয়নতাঁরা বাটি আবারও হাতে নিয়ে চামচ দিয়ে নাড়াতে নাড়াতে শান্ত গলায় বলল,
“বিগ ব্রাদার! এটা একটু খেয়ে নাও।”
চোখ মেলে ভ্রু কুঁচকে তাকাল নির্জন বাটির দিকে। চিকেন স্টু দেখেই নাক শিটকে এলো তার। গম্ভীর গলায় বলল,
“বিদেশে থেকে থেকে দেশি রান্নাবান্না ভুলে গিয়েছো? আমার এসব খাওয়ার রুচি হয় না। আর তোমার রান্না মুখে দেওয়া যাবে নাকি?”
নয়নতাঁরার চোখ ছোট হয়ে আসে। ঠেস মে’রে বলে,
“আমার রান্না তো মুখে দেওয়া যাবেই না। রাগিনী ভাবির হাতের খাবার তোমার মুখে লেগে গিয়েছে কিনা!”
“যখন তখন রাগিনীর কথা না তুললে চলে না তোমার তাই না?”
“বাবাহ্! এখনি যেভাবে কিছু বলতেই ক্ষেপে যাচ্ছো। বিয়ের পর কী হবে? আমি পাত্তা পাব তো?”
কথায় কথায় নির্জনের মুখে খাবার ধরে নয়নতাঁরা। খাবার মুখে নিয়ে গিলতে গিলতে বলে,
“কোথায় থেকে কোথায় চলে যাচ্ছো?”
“ঠিক জায়গাতেই আছি আমি। আমি বুঝি না নাকি? কীসের এতো অস্থিরতা? মন আকুপাকু করছে না?”
নির্জন চোখ গরম করে তাকায়। শক্ত গলায় বলার চেষ্টা করে,
“আই এম ইউর বিগ ব্রাদার! আর ভাইয়ের সাথে কেউ এসব কথা বলে নাকি?”
নয়ন ঠোঁট কামড়ে হেঁসে উত্তর দিল,
“সবাই বলে। শুধু তোমার মতো নিরামিষ ভাই থাকলেই বলে না। আচ্ছা শোনো, রাগিনী ভাবি সব সত্যিটা জানিয়েছো?”
নীরবতা অবলম্বন করে নির্জন। মুখটা আগের চেয়ে বেশি ভার হয়ে আসে। তার মুখভঙ্গি দেখেই নয়নতাঁরার বুঝতে দেরি হয় না এখনো তার ভাই যেই অবস্থাতে ছিল সেই অবস্থাতেই আছে। নাক ফুলিয়ে নয়ন বলল,
“তুমি তো দেখছি বাহিরের মানুষের কাছেই যত সাহস দেখাও। ভাবির কাছে একদম ভীতুর ডিম!”
“চেষ্টা তো কম করিনি। কিন্তু সে সামনে আসলেই তো সব উলোটপালোট হয়ে যায়। মুখের দিকে তাকালেই মনে হয় ও জানলেই সব শেষ। এ জীবনে আর আমার মুখোমুখি হবে না।”
“তুমি জোর করে তার মুখোমুখি হবে। সে যতবার চলে যাবে তুমি ঠিক ততবারই তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। তার মনেও যদি তোমার জন্য গুপ্ত আর সেই সব থেকে সুন্দর অনুভূতি গেঁথে থাকে তবে একসময় না একসময় ঠিক তোমার কাছে ধরা দেবে।”
নির্জন স্থির চোখে নয়নের দিকে তাকাল। তারপর হাত উঠিয়ে নয়নের নাকটা টেনে ধরে বলল,
“এসব কথাবার্তা কে শিখিয়েছে তোমায়?”
হাতটা সরিয়ে দিয়ে নাক ঘষতে ঘষতে নয়নতাঁরা বলল,
“প্রেমে পড়লে সবাই আপনা-আপনি শিখে যায়। আমি কিন্তু সিরিয়াস বিগ ব্রাদার। মিথ্যে দিয়ে কখনো কোনো সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি হতে পারে না। ইউ সিউরলি নো দ্যাট?”
“আই নো দ্যাট। কিন্তু সত্যি স্বীকার করার সৎসাহস আমার নেই। এই প্রথম নিজেকে চরম মিথ্যেবাদী মনে হচ্ছে আমার নয়ন। এই মিথ্যে আমার রাতের ঘুম কেঁড়ে নিয়েছে। ব্যাস…এতো টুকু বুঝে গিয়েছি ও আমার সামনে আসলে আমি জীবনেও জবান খুলতে পারব না।”
নয়নতাঁরা বুঝল তার ভাইয়ের মনের কথা। কারণ ছেলেটার কণ্ঠসুরে অন্যরকন অনুনয়। এমনভাবে কথা বলতে কখনো শোনে নি সে। নির্জন আবারও অনবরত বলল,
“এবার নিজেকে সেই অপরাধীদের মতোই মনে হচ্ছে যাদের বন্দী করতে আমি দিনরাত খাটি।”
নয়ন চুপচাপ নির্জনের মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে ভাবলেশহীন হয়ে পড়ল। এভাবেই খাবার শেষ করে নির্জন। পিনপতন নীরবতা ছেড়ে খাবারের বাটি রেখে ফট করেই চোখেমুখে উজ্জ্বলতা নিয়ে নয়ন বলে ওঠে,
“ফাইন! তুমি তার সামনাসামনি কিছুই বলতে পারবে না। কিন্তু তার সামনাসামনি না থেকে তো বলতেই পারো। তাই না?”
নির্জন ভ্রু কুঁচকায়। কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ পড়ে। মুখ চোখা করতেই নয়নতাঁরা হাতিয়ে তার ভাইয়ের ফোনটা হাতে নিয়ে ভাইয়ের দিকে বাড়িয়ে বলে,
“এখন রাগিনী ভাবির নম্বর ডায়াল করো আর তাকে সব সত্যি বলে দাও।”
“আর ইউ ম্যাড নয়ন? ওর কণ্ঠ শুনলেই আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠবে। তাছাড়া জানি না কেন আজ হুট করেই আমায় কিছু না বলে চলে গিয়েছে। কারণটা এখনো জানি না।”
নয়নতাঁরা ভারি বিরক্ত হয় এবার। দাঁত কটমট করে রেগে রেগে জবাব দেয়,
“দিস ইজ টু মাচ বিগ ব্রাদার। দিন দিন ভিগি বিল্লি হয়ে যাচ্ছো। সবকিছুতে তোমার সমস্যা। কিন্তু নয়ন আজকে তোমাকে দিয়ে সত্যিটা বলাবেই। আচ্ছা নো প্রবলেম। আমি তোমায় সাজেস্ট করব যা যা বলতে হবে। এক নিশ্বাসে বলে দেবে।”
নির্জন বুঝলো এখন আর এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। তাছাড়া সে তো কম চেষ্টা করেনি। দেখা যাক আজ ইনিয়েবিনিয়ে সবটা বলতে পারে কিনা। বুকে সাহস নিয়ে দুরুদুরু মনে ফোনটা হাতে নেয় নির্জন। নয়নতাঁরা দ্রুত হাতে কলম আর খাতা নিয়ে বসে। নির্জন নম্বর ডায়াল করে কল করে।
মাওয়া ঘাটে এসেছে রূপাঞ্জনা আর অভিরূপ। নদীর স্রোত সবকিছু যেন ভেসে নিয়ে যেতে সক্ষম অদূরে। ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা হাওয়া এসে গায়ে লাগছে রূপার। ওড়না সামলাতে না পারার দরুন বার বার সরে যাচ্ছে অন্য জায়গায়। বেশ বিরক্ত হয় রূপা। ওড়না জিনিসটাকে এতো উড়তে হবে কেন? স্থির থাকা যায় না? অন্যদিকে ফুচকা খেয়ে অলরেডি পানির বোতলের উপর পানির বোতল কিনে ঢকঢক করে পানি গিলছে অভিরূপ। ঝাল ফুরাচ্ছে না মুখ থেকে। জিহ্বা বের করে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে মাঝে মাঝে। এমতাবস্থায় রূপাঞ্জনা আঁড়চোখে তাকিয়ে বলল,
“সবার পেটে সব সয় না। ভেবে ঝাল নেওয়া উচিত ছিল।”
“আ…আমি তো ভেবেছিলাম তু…তুমি যখন ঝাল খেতে পারছো আমিও পারব। তাই তো এক্সট্রা করে…”
“আপনি স্ট্রিটফুড খেয়ে অভ্যস্ত নন। নোমান ভাই ঠিকই বলেছিলেন। একে তো সারা রাস্তা হাতটা ধরে এসে আমার হাতটাই ব্যথা করে দিয়েছেন তার উপর ঝালে মনে হচ্ছে এখনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলবেন।”
এবার যেন অভিরূপের ইগোতে আঘাত লাগে। রাগিনী বুঝি তাকে এতোই দুর্বল ভাবে? সামান্য ঝালে জ্ঞান হারাবে এটা ভাবছে? নিজেকে ধাতস্থ করে অভিরূপ গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
“আমি এতোটাও উইক নয়।”
রূপাঞ্জনা কিছু বলল না। হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকাল একবার। হাতে বেশি সময় নেই। অনেকক্ষণ কেটে গিয়েছে আর রয়েছে মাত্র চল্লিশ মিনিটের মতো। এর মধ্যে যেকোনো ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো। নয়ত সব শেষ হবে। সবকিছুর সাথে সে নিজেও। অভিরূপের এই চাঞ্চল্যকর মুখটা পু’ড়ে কীভাবে বিভৎস হবে সেটা কল্পনা করতেই গা শিউরে ওঠে রূপার। কেমন যেন লাগছে তার। তার মনটা যেন খুব করে চাইছে আজ যেন সে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। কিন্তু এতে তো তার কোনো লাভ নেই। তবে? মাঝে মাঝে কিছু মনোবাসনা বোধহয় লাভ-ক্ষতি হিসেব করে না। অভিরূপের বায়না ধরা কণ্ঠে ধ্যানটা ভঙ্গ হয় রূপাঞ্জনার।
“এই সবাই কী নৌকায় উঠছে! আমরাও উঠি?”
রূপাঞ্জনা দৃঢ় কণ্ঠে বলে,
“হ্যালো, মিস্টার! ওটা নৌকা। কোনো এক্সপেন্সিভ জাহাজ বা ট্রলার না।”
“আমিও তো ওটাকে নৌকাই বললাম। জাহাজ না ট্রলার কখন বললাম?”
বিস্ময়ের সুরে জানতে চায় অভিরূপ। রূপাঞ্জনা ঘাড় কাঁত করে বলল,
“রিকশায় উঠেই আর একটু হলে স্ট্রো’ক করে দিতেন। আর নৌকা? শেষমেশ আপনাকে নিয়ে হসপিটালে দৌড়াতে হবে আমায়।”
“হ্যালো মিস. সাহসীনি! আমাকে মি. ভীতু ভেবো না। আমার যথেষ্ট সাহস আছে। আর এখন আমি নৌকায় উঠব। তার সঙ্গে তুমিও।”
বেশ ভাব নিয়ে কথাগুলো একনাগাড়ে বলার পর সিঁড়ি দিয়ে নেমে মাঝির সাথে কথা বলতে উদ্যত হলো অভিরূপ। রূপাঞ্জনা শুধু দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকে চেয়ে দেখল অপলক। লোকটার জানাও নেই সে মৃ’ত্যুকে নিজে আহ্বান করছে। রূপাঞ্জনা যে তার মৃ’ত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এটা জানলে ঠিক অভিরূপের কী প্রতিক্রিয়া হবে? ভাবতে ভাবতেই রূপাঞ্জনার মনে হয় ব্যাগের ভেতরে থাকা ফোনটা অনবরত ভাইব্রেশন হচ্ছে। সে দ্রুত এবার ফোন বের করতেই আনসেভ একটা নম্বর দেখতে পায়। গলা খাঁকারি দিয়ে সিঁড়ির উপরে উঠে একটু সাইডে আসে রূপা। ফোনটা না চাইতেও রিসিভ করে কানে ধরে।
ফোনটা রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে কেঁপে উঠে নির্জন। ঢক গিলে অনবরত ঘন শ্বাস ফেলতে থাকে। নয়নতাঁরা পাশ থেকে তাকে আলতো ধা’ক্কা দিয়ে ইশারায় বলে কথা বলতে। তৎক্ষণাৎ নির্জন কোনোমতে বলে ওঠে,
“হ্যালো, রাগিনী! আমি নির্জন। আই মিন কোহিনূর।”
ওপাশ থেকে বিস্ময়ের কন্ঠে ভেসে আসে এবার।
“আপনি?”
“হ্যাঁ আমি।”
বলেই আঁড়চোখে নয়নের খাতার লেখার দিকে তাকায় সে। তারপর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠসুরে বলতে থাকে,
“আমি জানি তুমি অবাক হয়েছো। হয়ত ভাবছো আমার কাছে ফোন এলো কী করে! আমি সব তোমাকে একে একে বলছি। বাট প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবে না।”
“বলুন?”
“একচুয়ালি আপনি কোনো মেন্টাল পেশেন্ট নয় রাগিনী। আমি একটা উদ্দেশ্য নিয়ে সেখানে এই রূপে থাকতে শুরু করি।”
ওপাশটা পুরোটা স্তব্ধ। নির্জন খুব করে অপেক্ষা করে রাগিনীর উত্তরের। কিন্তু রাগিনী চুপ হয়ে গিয়েছে। নয়নতাঁরার দিকে তাকিয়ে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলল,
“ও তো কোনো এন্সারই করছে না। এখন কী করব?”
নয়নতাঁরা পাতা উল্টে দ্রুত লিখে দেখালো নির্জনকে। যেন নির্জন নিজের কথা বলা চালিয়ে যায়। আর ফিসফিসিয়েই জবাব দিল,
“তুমি একটা সিক্রেট অফিসার। এতোটুকুতে ভয় পেলে চলে?”
নির্জন পুনরায় ফোন ভালো করে কানে ধরল। এবার একনাগাড়ে বলতে শুরু করে,
“কেসটা এতোটা জটিল ছিল যার মধ্যে তুমিও জড়িয়ে ছিলে। রাগিনী তাজরীন নামটা জড়িয়ে ছিল। তাই তোমায় পরখ করতেই আমার সেভাবে থাকা। কিন্তু আস্তে আস্তে আমার ধারণা সবটা পাল্টে দিলে তুমি। বুঝিয়ে দিলে তুমি কারোর ক্ষতি করার আগে নিজেই ম’রে যাবে। তাও তাকে আ’ঘাত করবে। এটাই ছিল রাগিনী তাজরীন। আমি উল্টোটা ভেবে সবসময় তোমায় সন্দেহের নজরে দেখেছি। আমার কাজটাই এমন ছিল যে আমি কাউকে সন্দেহের বাহিরে রাখতে পারতাম না। হ্যাঁ, আমি পুলিশের লোক। একজন সিক্রেট অফিসার। নির্জন আহমেদ কোহিনূর। তুমি শুধু আমার কোহিনূর নামটা জানতে। বাকিটা আজ জানলে। এখন বাকিটা তোমার হাতে। যা পানিশমেন্ট দেবে মেনে নেব আমি। ব্যাস…রিকুয়েষ্ট একটাই। এই নামহীন সুন্দর অনুভূতিগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ঘৃণার অনুভূতি তৈরি করো না এই কোহিনূরের জন্য।”
কিছুক্ষণ নীরব থাকে ওপাশ। শোনা যায় না রাগিনীর সেই রিনরিনে কণ্ঠ। তার নীরবতা যত বাড়ছে ততই যেন হৃদয় থেকে র’ক্তক্ষরণ হচ্ছে নির্জনের। গলা শুঁকিয়ে আসছে। নিশ্চিত টেনশনের চটে জ্বরটাও ধিকধিক করে বেড়েছে? ফট করেই কল কেটে যায়। ধড়ফড়িয়ে নির্জন আবারও কল করে সেই নম্বরে। ফোন সুইচ অফ বলতেই উন্মাদনা বেড়ে গেল নির্জনের। নয়নের উদ্দেশ্যে বলল,
“আমি বলেছিলাম! ও সহ্য করবে না। এতো বিশ্বাস যখন এক পলকে টং করে ভেঙ্গে যায় তখন হৃদয়ে আগুন ধরে। এখন কী হবে?”
“উফফ…প্রেমের চক্করে সবাই ভীতুর ডিম দেখি। ট্রাই করো ফোন করতে।”
নির্জন কথা না বাড়িয়ে বারংবার ফোনে কল দিতে থাকে। তবে ফলাফল শূন্য। তিন-চার বার এমন করার পরপরই তার ফোনেই উল্টে কল আসে। কোনোকিছু না দেখেই দ্রুত রাগিনীর কল ভেবে রিসিভ করতেই ধারণা পাল্টায় তার। পুরুষালি কণ্ঠ তাকে স্থির বানিয়ে দেয়।
“স্যার, একটা ইনফরমেশন পেয়েছি।”
“কী ইনফরমেশন মেহরাজ?”
“জটিল ইনফরমেশন। আপনার কথা অনুযায়ী ইন্সপেক্টর রায়ানের মাধ্যমে রাশেদ সাহেবের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের টিমের একজনকে কাজের লোকের ছদ্মবেশ ধরে আজ সকালে রাগিনীর বাড়িতে পাঠানো হলো। সে কিছুক্ষণ আগে আমাদের সাথে কনটাক্ট করেছে। আর বলেছে বাড়িতে সাহানা নামক মহিলাটি যথেষ্ট সন্দেহজনক। তার কাছে দুটো মোবাইল ফোন রয়েছে। আর মাঝে মাঝেই কার সাথে যেন কথা বলতে দেখেছে।”
নির্জন নড়েচড়ে বসে। ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছু একটা ভেবে বলে,
“তাহলে ঘরের শত্রু বিভীষণ!”
“স্যার, আরো একটা কথা বলার আছে।”
কিছুটা সংকোচ নিয়ে বলল মেহরাজ। নির্জন ছোট্ট করে জিজ্ঞেস করল,
“কী?”
“আজকে রাগিনী ম্যাডাম বেরিয়েছিল অভিরূপদের সাথে। আর রেডি হওয়ার পর ওই মহিলা মানে সাহানা কেন যেন পেছন দিকে দরজা দিয়ে রাগিনীকে বিদায় দিয়েছে। আর আমাদের লোক সেটা ফলো করতেই সাহানা চমকায়। আর বিভিন্ন বাহানা দিয়ে আমাদের লোককে সে চোখে চোখে রাখছে। মনে হয় সেও কিছু আন্দাজ করেছে।”
দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলো নির্জনের। শক্ত গলায় বলল,
“আচ্ছা, বাড়ির পেছনদিকে তো কোনো লোকজন থাকে না তাই না?”
“না স্যার। ওদিকে তো তেমন কেউ যায়ই না।”
নির্জন আবারও কথা বলা থামায়। ভাবনায় গভীরে চলে যায়। কিছু একটা মাথা আসতেই চোখ বড় বড় হয় তার। মেহরাজের উদ্দেশ্যে জোরে বলে ওঠে,
“ওয়েট অ্যা মিনিট! ওই মেয়ে আর রাগিনী দুজনই এক দেখতে। এর মানে এর মধ্যে কোনোকিছু ঘটে গিয়েছে।”
বলেই থামলো সে। অতঃপর দম দিয়ে তড়তড় করে বলে উঠল,
“রাগিনী ইজ ইন ডেঞ্জার। আর অভিরূপ চৌধুরীও। মেহরাজ, আমার কথা মন দিয়ে শোনো! ওই সাহানা নামক মহিলাকে এখনি আটক করার ব্যবস্থা করো। লেট করা যাবে না। আর অভিরূপ বা তার বন্ধু নোমান! যেকোনো একজনের ফোন ট্র্যাক করো জলদি। আর ট্র্যাক করার পর যেই লোকেশন দেখাবে সেখানে দ্রুত ফোর্স পাঠাও। আমি আসছি।”
ফোন কাটে নির্জন। দ্রুত তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ায়। মাথাব্যথা যেন আরো বেড়ে যায়। মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। ব্ল্যাঙ্কেট থেকে বের হতেই শরীরে ঠান্ডা লাগে বেশ। তবে দাঁড়ালে চলবে না। নয়নতাঁরা এমন অবস্থা দেখেই বেশ চিন্তিত হয়ে বলল,
“কী হয়েছে? এনি প্রবলেম?”
নির্জন কিছু বলে না। দেয়ালে হাত মুঠো করে আ’ঘাত করে জোর গলায় বলে,
“বুলশিট! আমি যদি ভুল না হয় একটু আগে ওটা রাগিনী নয়। ওই টেরো’রিস্ট গার্ল ছিল।”
বিস্ময়ের চরম সীমানায় নয়নতাঁরা। হতভম্ব হয়ে বলল,
“মানে?”
“এতো কিছু বলার সময় নেই এখন। আমি কাজে যাচ্ছি।”
নয়নতাঁরা নির্জনের হাত ধরে অসহায় পানে চেয়ে বলে,
“বাট বিগ ব্রাদার! তোমার জ্বর…”
দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে হাতটা সরিয়ে নেয় নির্জন। ধীর গলায় বলে,
“আমার সংলগ্নে থাকা নারীর বিপদ আমার অসুস্থতার কাছে তুচ্ছ। তার কিছু হলে নিজের মৃ’ত্যুই শ্রেয় মনে করব।”
নয়নতাঁরা আর বাঁধা দিল না। যাক না! এই প্রথম তার ভাই জীবনে কাউকে এতোটা ভালোবেসেছে। কোনো নারী তার মনটা চুরি করতে সক্ষম হয়েছে। সর্বস্ব দিয়ে আগলে রাখার প্রতিশ্রুতি করেছে নিজেকে। সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে তো হবেই।
ফোনটা সুইচ অফ করে সিঁড়ির নিচে নেমে এলো রূপাঞ্জনা। বিড়বিড়িয়ে বলল,
“সো স্যাড নির্জন আহমেদ কোহিনূর! রং নম্বরে কল না করলেও রং পারসনের কাছে কল এসেছে।”
“কী বিড়বিড় করছো?”
অভিরূপের কণ্ঠস্বরে কিছুটা হকচকিয়ে তাকায় রূপা। মাথা নাড়িয়ে জানায় কিছু না। নদীর হিম করা বাতাসে চোখ বন্ধ হয়ে আসে তার। তৎক্ষনাৎ অভিরূপ তার হাতে থাকা ঝালমুড়ি এগিয়ে দিয়ে বলে,
“চলো! খেতে খেতে নৌকা ভ্রমণ করব আজ।”
ঝালমুড়ির দিকে তাকিয়ে চোখ সরু করল রূপাঞ্জনা। লোকটা আবারও স্ট্রিটফুড কিনেছে? সহ্য হবে তো? অবশ্য সে কেন এতো ভাবছে। যা ইচ্ছে তাই হক। তবুও কথা দমাতে না পেরে সে বলল,
“এটাও কিন্তু ঝালের জিনিস।”
অভিরূপ ঝালমুড়ি মুখে দিয়ে বলে,
“আই ডোন্ট কেয়ার। সঙ্গে মিষ্টি মূহুর্ত, মিষ্টি বাতাস আর একটা মিষ্টি মানুষ থাকলে ঝাল নিজে নিজেই পালিয়ে যাবে।”
হতবিহ্বল হলো রূপাঞ্জনা এবার। কান দুটো কেমন যেন গরম হচ্ছে। পুরো দেহ জুড়ে উত্তেজনা ছোটাছুটি করছে। অভিরূপ কি তাকে মিষ্টি মানুষ বলে সম্মোধন করল? সে মিষ্টি? অতঃপর তার মনে হলো সে মিষ্টি নয়। রাগিনী মিষ্টি। আর অভিরূপ তো তাকে রাগিনী ভেবেই কথা বলছে নিশ্চয়। না চাইতেও ভারাক্রান্ত হলো মন। মনের মতিগতি কিছুই বুঝে উঠতে পারল না রূপাঞ্জনা। তখনি অভিরূপ ইশারা করল নৌকার দিকে। ছোট্ট নৌকায় পা বাড়িয়ে উঠে পড়ল রূপাঞ্জনা। পেছন ডাক শুনতে পেল,
“আমাকে ধরো!”
পিছু তাকিয়ে রূপা দেখল ভয়ে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে একটা পা নৌকায় বাড়িয়েছে অভিরূপ। লোকটা পারবেও না ছাড়বেও না। না পেরে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিল রূপাঞ্জনা। টেনে তুলে নিল তাকে। নৌকা চলল নিজ গতিতে। রূপাঞ্জনার দেখে দেখে অভিরূপও বসে পড়ল নৌকায়। প্রথমে কেমন যেন লাগছিল তার বসতে। তবে সংকোচ বোধ কাটল তার। গালে হাত দিয়ে চেয়ে রইল একমনে সেই নেত্রপল্লবের দিকে যা সবসময় গভীর নেশায় অভিরূপকে টানে। কী আছে ওই দৃষ্টিতে?
হঠাৎ করেই রূপা পা নৌকার নিচে পানিতে দুলিয়ে বসতেই দৃষ্টি ভড়কালো অভিরূপের। আর বলল,
“আরে! পড়ে যাবে তো।”
রূপা স্পষ্ট গলায় জবাব দিল,
“কখনো দেখেছেন পানি দুলিয়ে বসলে পড়ে যায়। এভাবে মজা লাগে।”
“সত্যি?”
রূপাঞ্জনা আর জবাব দেয় না। আবারও ঘড়ির দিকে তাকায়। বুকটা এই প্রথম দুরুদুরু করছে তার। পা দুলিয়ে দুলিয়ে শীতল পানিতে শান্ত করতে চাইছে মন। তখনি দেখল অভিরূপও তার পাশ ঘেঁষে সাহস করে পা নিচে দুলিয়ে দিয়ে ঠান্ডা পানির স্পর্শ পেতেই হেঁসে দিল। যেন কোনো বাচ্চা তার পছন্দের খেলনা পেয়ে মুখ ভর্তি হাসছে। অভিরূপ উচ্ছ্বাসের সাথে বলল,
“দারুণ তো! কিন্তু নৌকা একটু টলমল করছে। মনে হচ্ছে পড়ে যাব।”
“সাঁতার জানেন না?”
“জানি তবুও।”
রূপাঞ্জনা বিড়বিড় করে বলে,
“ভীতুর ডিম!”
অতঃপর নীরবতা। অভিরূপের ইচ্ছে করে আরো কথা বলতে। সারাদিন যদি কথা বলতে পারে, পাশাপাশি বসে থাকতে পারে তবুও তার কোনো অভিযোগ থাকবে না। ঢক গিলে অভিরূপ বলে,
“তোমার অনেক সাহস তাই না?”
ঘাড় ঘুরিয়ে গোল গোল চোখে তাকায় রূপাঞ্জনা। হঠাৎ এই প্রশ্ন করছে কেন লোকটা? রূপাঞ্জনা জিজ্ঞেস করে,
“কেন?”
“কেন মানে? সেদিন ওতো টে’রোরিস্টের সামনে একটা বাচ্চাকে বাঁচালে। আবার ওইদিন রাতে এতোগুলো ছেলেকে পি’টিয়ে সোজা করে দিলে। তাই বলছিলাম। তোমার মতো সাহস যদি সবাই ভালো কাজে লাগাতো।”
রূপাঞ্জনার মুখের রঙ পাল্টালো। ভালো কাজ? লোকটার তো ধারণাও নেই সে যা যা করেছে সবটাই নিজের স্বার্থে। রূপাঞ্জনা জবাব দিল না। খুঁজে পেল না কোনো শব্দ। অভিরূপ আবারও বলল,
“তোমাদের এখানে নাকি একটা টেরো’রিস্ট টিম এসেছে। যাদের কাজ শুধু জনগনের মনে সংশয় তৈরি করা। তারা ভয় দেখাতে কী মজা পায় আমি জানি না। তাদেরও কিন্তু অদম্য সাহস আছে। সাহসটাকে তারা কাজে লাগায় না। আরেকটা কথা! মানুষের প্রা’ণ নেওয়ার চেয়ে কারোর প্রাণ বাঁচানোর মধ্যে যে কী আনন্দ তারা যদি একবার জানতো তবে আর জীবনেও কারোর প্রা’ণ নেওয়ার চেষ্টাও করতো না।”
চকিতে তাকালো রূপাঞ্জনা। মনে একটাই প্রশ্ন এলো। সত্যিই বুঝি কাউকে বাঁচাতে আনন্দ লাগে? সুখ লাগে? শান্তি লাগে? সে তো কখনো কাউকে যেচে বাঁচাতে যায়নি। তাই এই আনন্দ বুঝি কখনোই পায়নি। অভিরূপ থামে না। একনাগাড়ে বলে,
“আমার বাবা একজন ডক্টর। উনি যেদিন সার্জারি করে সাকসেসফুল হন সেদিন উনার মুখের হাসি ধরে না। বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে আসেন খুশিতে।”
রূপাঞ্জনা ঢক গিলে ব্যাগের দিকে তাকায়। হাতে আর মাত্র কিছু মিনিট। হয় তাকে ব্যাগ রেখে নদীতে ঝাপ দিতে হবে। নয়ত অভিরূপের সাথে ম’রতে হবে। আরো একটা পথ খোলা আছে। সেটা এই ব্যাগটাকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া। লোকটাকে কি তবে বাঁচিয়ে নেওয়া উচিত? যে তাকে কোনোকিছুর পরোয়া না করে সেই রাতে আগলে নিলো তাকেই কিনা হৃদয়হীনার মতো মা’রবে রূপা? এটা কি ঠিক হচ্ছে? আকাশপাতাল ভাবতে ভাবতে চোখমুখ অন্ধকার হয়ে এলো তার। মনে জাগলো তৃষ্ণা। কাউকে বাঁচিয়ে কেমন আনন্দ পাওয়া যায় সেটা অনুভব করার তৃষ্ণা। দুটো বড় বড় শ্বাস ফেলল সে। ঘড়ির দিকে আবারও চাইলো। অনেক সময় পেরিয়ে গিয়েছে। একবার অভিরূপের দিকে তাকালো সে। ঝাঁকড়া চুলগুলো আনন্দিত হয়ে উড়ছে যেন। রূপাঞ্জনা দম নিয়ে নিজের হাতের ব্যাগটা দুলাতে থাকল। মনে মনে বলল, ‘সরি ডার্ক ম্যাক্স। এই প্রথম আমি চাই হেরে যেতে। যে আমায় সুন্দর রাখতে নিজের প্রাণের পরোয়া করেনি তার সুন্দর চেহারা বিভৎস অবস্থায় আমি দেখতে পারব না।’
ব্যাগটা দুলাতে দুলাতে ফেলে দিল হুট করে। ফেলে দিতেই চমকে উঠল অভিরূপ।
“আরে কী করলে? ব্যাগটা পড়ে গেল তো।”
রূপাঞ্জনা নির্লিপ্তে উত্তর দিল,
“যাক। মামা, আপনি নৌকা ঘুরান। সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে। আমি আর এখানে থাকতে চাই না।”
চলবে…