#গল্পঃ_গোপনে |১৪|
#লেখাঃ_অনন্য_শফিক
আশফাক সুমন নাঈমের সঙ্গে দেখা করলো গোপন এক জায়গায়।নাঈমের সঙ্গে আমিও আছি।আমরা খুব সতর্কতার সঙ্গে গেলাম।যেন কোন ভাবেই কেউ কিছু বুঝতে না পারে।যেন এর মূল হোতা কিচ্ছু টের না পায়!
আশফাক সুমনকে দেখে আমি অবাক হলাম। এই কয়দিনে বেচারার চেহারা কেমন বুড়িয়ে গিয়েছে। কয়দিন কালার না করায় মাথার পাকা চুল স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।শেভ না করায় কাঁচা পাকা দাঁড়িতে তাকে কেমন যেন অদ্ভুত দেখাচ্ছে। চোখের নিচে কালিও পড়েছে। তাকে দেখে মোটেও স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
নাঈমকে পেয়েই সে বললো,’ ভাই, আমার অবস্থা খারাপ! ভয়াবহ রকমের খারাপ! আমার এমনিতেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা।চারটা টেবলেট খাই রোজ। ঘুমের ওষুধ তো এমনিতেই খাই। কিন্তু এই কয়দিনে আমি একেবারে কাহিল।ঘুম হয় না। খাইতে পারি না। অফিসে যাই না।একটু পর পর খালি ফোন দিয়ে বলে, জোগাড় করেছেন? জোগাড় না হলে কি হবে তো জানেনই! আপনার মেয়ে দুইটা যখন এসব দেখবে তখন কেমন হবে? আপনার স্ত্রী দেখলে আর কোনদিন ঘরে গিয়ে উঠতে পারবেন? আর সব জনগণ যদি দেখে? অফিসের সব কর্মচারীরা তখন কি হাল হবে আপনার?
খালি এইসব বলে হুমকি ধামকি দেয়।’
নাঈম তো এমনিতেই সব জানে। তবুও একটু না জানার ভান করলো।বললো,’ কিসের ভিডিও বলুন তো? মনে হচ্ছে তো গোপন কিছু। গোপন কিছু না হলে তো আর আপনার এভাবে ভয় পাওয়ার কথা না!’
আশফাক সুমন সেই কথার উত্তর না দিয়ে সে বললো,’ আমারে বাঁচান আপনি।দয়া করুন আমায়। আমার সংসার নষ্ট হয়ে যাবে।মান সম্মান সব যাবে।’
নাঈম বললো,’ ওইসবের ভিডিও তাই তো?’
আশফাক সুমন মাথা নিচু করে বললো,’ জ্বি।’
‘ কয়টা মেয়ের সঙ্গে এমন করেছেন এই পর্যন্ত?’
আশফাক সুমন কথা বলে না।মাথা নিচু করে রেখেছে।
নাঈম বললো,’ আপনি যদি সব সত্য বলেন তবে আমি আপনাকে হেল্প করতে পারবো। মিথ্যে বললে আপনি আমার থেকে বিন্দুমাত্র হেল্প পাবেন না। মিথ্যে বললে আমি সঙ্গে সঙ্গে বুঝে ফেলবো আপনি মিথ্যে বলছেন। তখন উল্টো আপনিই ফেঁসে যাবেন।’
আশফাক সুমন ভয়ে শিউরে উঠলো। আসলে নিজের পরিবারকে সবাই পায়। নিজের মেয়েদের কাছে সব বাবারাই সবচেয়ে সৎ এবং নিষ্ঠাবান পুরুষ মানুষ হয়ে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু বাকি মেয়েরা তাদের কাছে খাবারের সামগ্রীর মতো। পরের মেয়েদের প্রতি তাদের লোলুপ দৃষ্টি থাকে।
আশফাক সুমন বললো,’ আমি বুঝতে পারি নাই ভাই। শয়তানের ধোকায় পড়ে এইসব করেছি।শতো শতো মেয়ের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে —
আশফাক সুমন কথা শেষ করবার আগেই নাঈম তাকে থামিয়ে দিলো। থামিয়ে দিয়ে সে বললো,’ হয়েছে।আর বলতে হবে না।এসব শুনতেও খারাপ লাগে।বমি পায়। এখন শুনুন আপনাকে কয়েকটা কথা বলি। আপনি যা করেছেন তা আপনার টাকা দিয়েই করেছেন। এসবের জন্য রাষ্ট্র আপনাকে কখনোই শাস্তি দিবে না। দেশে অনেক পতিতালয় আছে।ওসবে রাষ্ট্র নিজেই লাইসেন্স দিয়ে রাখে।এটা বিষয় না।বিষয় হলো আপনি তো একটা মানুষ। একজন বাবা। আপনার নিজের দুটি মেয়ে আছে। এবার বলুন, আপনার নিজের মেয়েদের সঙ্গে যদি এভাবে আপনার মতো বাইরের কোনো পুরুষ টাকার বিনিময়ে এসব করে আর আপনি যদি তা শুনেন তখন আপনার কেমন লাগবে? মেনে নিতে পারবেন তো?’
আশফাক সুমনের শরীর থরথর করে কাঁপছে। তিনি বসা থেকে পড়ে যাচ্ছেন। নাঈম আমায় বললো,’ উনাকে ধর পেছন থেকে।’
তারপর নাঈম ওপাশ থেকে একটা পানির বোতল নিয়ে ওখান থেকে পানি খেতে দিলো আশফাক সুমনকে।একটু পানি তার হাতে নিয়েও ছিটিয়ে দিলো আশফাক সুমনের চোখে মুখে। তারপর বললো,’ একটু রেস্ট নিন। এরপর কথা বলি।’
আশফাক সুমন বললো,’ এসবের সময় নাই। সর্বনাশ হয়ে যাবে আমার।যদি ভিডিও আমার মেয়েদের কাছে পৌঁছে তবে ওরা আমায় খু*ন করবে নয়তো নিজেরাই গলায় ফাঁ*স নিয়ে মরবে!’
নাঈম আশফাক সুমনের সামনে বসলো। তারপর বললো,’ মেয়েদের ভয় পাচ্ছেন।যিনি আপনাকে সৃষ্টি করলেন তাকে ভয় পান না? মেয়েদের আড়ালে কিন্তু পাপ করা যায। মেয়েদের ধোঁকা দেয়া যায়। তাদের থেকে সব গোপন করা যায় । কিন্তু আপনাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন তার চোখকে কিভাবে ফাঁকি দিবেন? তার থেকে এসব কিভাবে গোপন করবেন? আমি মানলাম আমি চেষ্টা করে যেভাবেই হোক আপনার মেয়েদের কাছ থেকে আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারবো।দিবোও বাঁচিয়ে। কিন্তু আল্লাহর হাত থেকে কিভাবে বাঁচবেন?’
আশফাক সুমন খুব শক্ত লোক আমি যতোটা জানি। কিন্তু এই শক্ত লোকটাই কেমন কোমল হয়ে গেল এই মুহূর্তে। তাকে ছোট্ট শান্ত শিশুদের মতো দেখাচ্ছে এখন। তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। এই জল কি অনুশোচনার?
কি জানি!
নাঈম বললো,’ কাঁদুন। আল্লাহর ভয়ে কাঁদুন। নিজের অপরাধের জন্য লজ্জিত হয়ে কাঁদুন।আর যেসব মেয়েদের সঙ্গে আপনি এসব করেছেন তাদের চেহারায় আপনার দুই মেয়েকে বসিয়ে ভাবুন।ওরা অসহায় ছিল।ওরাও ওদের অসুস্থ বাবা কিংবা অসুস্থ মাকে বাঁচাতে নিরূপায় হয়ে কিছু টাকার জন্য আপনার কাছে তাদের শরীর সঁপে দিয়েছিল। আপনি তখন উদ্দম আনন্দ নিয়েছেন।আপনারা তো বিরাট বড়লোক। আপনাদের পতিতালয়ের পতিতা দিয়ে পোষায় না। আপনাদের টার্গেট থাকে ভদ্র ঘরের অসহায় সুন্দরী মেয়েরা তাই না? আপনি এসব করে মনে মনে হয়তো খুব বাহাদুরি করতেন। শক্তিশালী পুরুষ ভাবতেন নিজেকে।ভাবতেন, কোনদিন আপনার এই শৌর্যবীর্য নষ্ট হবে না। কিন্তু এখন কি হলো? এই যে দিনের পর দিন পাপ করলেন আর আল্লাহ আপনাকে ছাড় দিয়েছিলেন। কিন্তু আপনি যখন মাত্রাতিরিক্ত পাপে ডুবে গেলেন তখন তিনি আপনাকে ধরলেন। শেষ পর্যন্ত কোন পথ না পেয়ে এখন কোমল হয়েছেন তাই না? এখন বুঝতে পেরেছেন আপনি আসলে কিছুই না। আপনার ক্ষমতা বা সম্মান আল্লাহ দেন আর তিনি তার ইচ্ছেতেই কেড়ে নেন এই জানলে এখন এসেছে। থাকবে তো বিপদ কেটে যাবার পর এই বোধ?
আশফাক সুমনের মুখে কোন কথা নেই। তাকে কেমন হাবাগোবা দেখাচ্ছে।
নাঈম বললো,’ আপনি যার মাধ্যমে এসব মেয়েদের কাছে যেতেন সেই তো এখন আপনাকে ব্লা* কমেইল করছে তাই তো? ‘
আশফাক সুমন বললো,’ জ্বি।’
ততোক্ষণে আশফাক সুমনের কাছে আবার কল এলো। আশফাক সুমন ফোনের ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে বললেন,’ আবার কল দিয়েছে। আবার!’
নাঈম বললো,’ রিসিভ করুন।’
আশফাক সুমন বললো,’ কি জানি আপনার সঙ্গে যে দেখা করেছি তা জেনে গেল কি না! ও বিরাট শয়তান! কিভাবে যেন সব জেনে ফেলে।সব খবর ও জানে! ও জেনে গেলে সর্বনাশ করে ফেলবে আমার। মেয়েদের কাছে ভিডিও পাঠিয়ে দিবে! ‘
নাঈম বললো,’ আপনার ভয়ের কিছু নাই।
সব জানলেও আমার হাত থেকে ওর মুক্তি নাই।আমি তার জম! আপনি কল রিসিভ করে লাউড স্পিকার অন করে দিন। শুনি কি বলে।’
আশফাক সুমন ফোন রিসিভ করে লাউড স্পিকার অন করে দিলো। তারপর বললো,’ হ্যালো।’
ওপাশ থেকে একটা নারী কন্ঠ তখন বলে উঠলো,’ সুমন সাহেব, আপনি তো লোক সুবিধার না! আপনার কি টাকা পয়সার অভাব আছে? মাত্র দশ কোটি চাইলাম, এ নিয়েই আপনার এতো তাল বাহানা! মান সম্মান চলে গেলে এই টাকা দিয়ে কি করবেন? টাকা দিয়ে কি তখন লজ্জা নিবারণ করতে পারবেন? ‘
আশফাক সুমন বুদ্ধি করে তখন বললো,’ আমায় একটু সময় দাও তুমি।আমি জোগাড় করে তোমার টাকাটা দিবো।’
ওপাশ থেকে মেয়ে কন্ঠ তখন হাসলো। বললো,’ সময় দিলাম যান।সময় মাত্র ৪৮ ঘন্টা।’
তারপর ওপাশ থেকে ফোন কেটে দিলো।
আমি ভীষণ রকম চমকে উঠলাম।এটা কিভাবে সম্ভব? এটা কিভাবে হতে পারে?
ফোনের ওপাশের মেয়ে কন্ঠটি আমি খুব ভালো করেই চিনি।নাঈমও চিনে। তবে কি এই সাদামাটা সহজ সরল জীবনযাপন করা মেয়ে লোকটিই এসবের মূল হোতা?
(চলবে)…
#গোপনে
‘
#গল্পঃ_গোপনে |১৫|
#লেখাঃ_অনন্য_শফিক
—
নাঈম বললো,’ এটা অলকা তাই না?’
আশফাক সুমন বললো,’ হ্যা ।দুইটাই। সে আর তার সাথে যে পুরুষ লোকটা থাকে সেও। এদের ধরে আমায় বাঁচান আপনি।দয়া করুন আমার উপর!’
নাঈম খানিকটা সময় চুপ করে কি যেন ভাবলো। তারপর বললো,’ তাহলে অলকা আর তার হাসব্যান্ডকে আমি অ্যারেস্ট করবো? ‘
আশফাক সুমন বললো,’ করুন প্লিজ! এটা করলে আপনার এই ঋণ আমি কোনদিন ভুলবো না! ‘
নাঈম বললো,’ বিনিময়ে কি দিবেন আমায়?’
আশফাক সুমন বললো,’ যা চান তাই।’
দ্রুত কথাটা বললো ।
আশফাক সুমনের এই কথা শুনেই বোঝা গেল অলকা আর তার স্বামীকে ধরতে পারলেই শান্তি। তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখন এটা।
নাঈম বললো,’অলকা যে পরিমাণ টাকা আপনার কাছে দাবি করছে সেই পরিমাণ টাকাই আমাকে দিতে হবে।এর থেকে এক পয়সাও কম দিলে হবে না।টাকা দিতে হবে ক্যাশ। আগে টাকা পরে কাজ।’
আশফাক সুমন কথা বাড়ালো না। সে বললো,’ পাঁচ কোটি ক্যাশ দিবো। বাকিটা কাজ হবার পর।’
নাঈম বললো,’ আশফাক সাহেব, আপনি বড় ধুরন্ধর লোক। বিপদে পড়লেও আপনার মাথা ঠিকমতোই কাজ করছে দেখছি! ঠিক আছে, পাঁচ কোটিই নগদ দিন। এখন দিন।’
আশফাক সুমন বললো,’ না এখন না।টাকা আমি সঙ্গে করে নিয়ে ঘুরি না।আপনি যান। আপনার বাসায় সময় মতো টাকা পৌঁছে যাবে।’
নাঈম বললো,’ আচ্ছা ঠিক আছে। এবার বলুন তো অলকারা কোথায় আছে এখন? আপনার তো তার সঙ্গে দীর্ঘ দিনের চেনাজানা। তার কোথায় কোথায় আত্মীয় স্বজন আছে এসব কিছু জানার কথা আপনার।নাকি? ‘
আশফাক সুমন বললো,’ আমি কিছুই জানি না। আপনি পুলিশ। আপনি খুঁজে বের করুন।চোর পুলিশকে খুঁজে বের করবে এটাই তো নিয়ম।’
আমি অবাক হলাম। আশফাক সুমনের মধ্যে ভীতু ভীতু ভাবটা এখন আর নাই। দীর্ঘদিন মেঘ শেষে রোদ উঠলে আকাশ যেমন ঝলমলে পরিষ্কার দেখায়, ওরকম দেখাচ্ছে তার মুখ। তার চেহারা। এছাড়া অবাক করার বিষয় হলো আশফাক সুমন যদি অলকাকে দশ কোটি টাকা দেয় তবে সে অলকার হাত থেকে বাঁচতে পারে কিন্তু অলকাকে টাকা দিবে না। নাঈমকে ঠিকই দশ কোটি টাকা দিতে সে রাজি হয়ে গেল। কেন?
এছাড়া নাঈমের প্রতিও আমার ভীষণ রাগ লাগছে। এতো দিন খুব নৈতিকতা দেখিয়েছে সে।বড় বড় নীতিবাক্য বলে বেড়িয়েছে। নানান উপদেশ দিয়েছে। এবার যখন কোটি টাকার প্রশ্ন এলো তখন তার ওইসব নীতি নৈতিকতার দিন শেষ হয়ে গেল। এখন তার পকেট ভারী করার পালা!
নাঈম বললো,’ আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আসি। আপনি টাকা পাঠালেই কাজ শুরু করবো আমি।’
আশফাক সুমন আর কিছু বললো না।
আমরা আশফাক সুমনের কাছ থেকে চলে আসবো ঠিক তখন আশফাক সুমন পেছন থেকে নাঈমের উদ্দেশ্যে বললো,’ অলকা যে নম্বর থেকে কল করেছে ওই নম্বরটা নিয়ে যান।এটা ট্র্যাক করলেই তো লোকেশন পেয়ে যাবেন।’
নাঈম মিটিমিটি হাসলো। তারপর বললো,’ ঠিকই বলেছেন।এটা মাথায় ছিল না।দিন, নম্বর দিন।’
আশফাক সুমন নম্বর দিয়ে দিলো।
ওখান থেকে বেরিয়ে আসার পরই তাকে রাগ দেখিয়ে আমি বললাম,’ নাঈম, তোর পথ তুই দেখ ভাই, আমার পথ আমি দেখি। তোর সঙ্গে আমার আর কোন রকম সম্পর্ক নাই।’
নাঈম অবাক হবার মতো করে বললো,’ কেন? কি হয়েছে?কি করেছি আমি?’
আমি বললাম,’ তুই একটা ঘুষখোর। খারাপ লোক! আমি তোকে যা ভাবতাম তুই ঠিক তার উল্টো।’
নাঈম হাসলো।ওর হাসি দেখে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।
হাসি শেষে সে বললো,’ তোকে এখন কিছুই বলবো না।সময় হলে ঠিকই সব বুঝতে পারবি । এবং আমি ঠিক না ভুল তাও বুঝতে পারবি!’
আমি আর কিছু বললাম না।চুপ করে রইলাম।
নাঈম ওখান থেকে সরাসরি তার বাসায় এলো। আমিও এসেছি তার সঙ্গে। সে আসার খানিক পরেই তার বাসার সামনে একটা গাড়ি এলো।গাড়ি থেকে একটা লোক নেমে এলো একটা মাঝারি সাইজের স্যুটকেস নিয়ে। লোকটা কোন কিছু না বলেই নাঈমের সামনে স্যুটকেস রেখে চলে গেল। লোকটি চলে যাবার পর নাঈম স্যুটকেস খুলে দেখলো। ভেতরে টাকা। পাঁচ কোটি টাকা যে দেবার কথা ছিল সেই টাকা।
নাঈম সেই টাকা তার খাটের নিচ দিকে চালান করে দিলো।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,’ ঘুষখোর।’
নাঈম আবারও হাসলো। হেসে বললো,’ জীবনে টাকার খুব প্রয়োজন শিহাব! খুব প্রয়োজন!’
আমি বসা থেকে উঠে পড়লাম। তারপর বললাম,’ আমি যাই। আমার আর তোর সঙ্গে থাকতে ইচ্ছে করছে না।’
নাঈম আমার হাতটা খপ করে ধরলো। তারপর বললো,’ এখন যেতে পারবি না।আরো কয়টা দিন আমার পাশে থাকতে হবে তোর। এরপর যাবি।’
আমার মোটেও ইচ্ছে করছে না তার সঙ্গে থাকতে। কিন্তু তবুও কেন তার কাছ থেকে চলে গেলাম না তা জানি না!
‘
নাঈম কাকে যেন আবার কল করলো।কল করে বললো, অলকার নম্বরটা ট্র্যাক করে দেখতে লোকেশন টা কোথায়। ফোনের ওপাশের লোকটা খানিক পরেই লোকেশন দেখে বললো, অলকা কিশোরগঞ্জ আছে।
নাঈম তখনই বললো ,’ চল।’
আমি বললাম,’ কোথায়?’
নাঈম বললো,’ কিশোরগঞ্জ।অলকাকে ধরে নিয়ে আসি গিয়ে।’
আমি আমার মনের বিরুদ্ধে গিয়েই রাজি হলাম। বললাম, চল।
আমরা কিশোরগঞ্জ গিয়ে পৌঁছালাম সন্ধ্যা বেলায়। ওখানে যাবার পর নাঈম ওখানকার বিভিন্ন দোকানিদের কাছে জিজ্ঞেস করতে শুরু করলো, কানন নামের কোন ফার্মেসি, ফার্ম বা এরকম কিছু আছে কি না ওখানে।
দোকানিদের কেউই কিছু বলতে পারলো না।
তারা এই নামের কোন দোকান ফার্ম বা কিছুর নাম শুনেনি।
আমি এবার নাঈমকে বললাম, ‘ নাঈম, কানন নামের কিছু খুঁজে এখানে পাবি? আর অলকার সঙ্গে কানন নামের কোন কিছুর তো সম্পর্ক নাই।কানন নামের কোন কিছুর সম্পর্ক থাকলে তো তা আশফাক সুমনের সঙ্গে আছে।
নাঈম আমার পিঠে তখন একটা চাপড় দিলো। তারপর বললো,’ আরেকটু অপেক্ষা কর। তখনই বুঝতে পারবি।’
নাঈম এরপর আবার দোকানিদের কাছে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, কানন নামের কোন প্রতিষ্ঠান এখানে আছে কি না!
শেষমেষ জানা গেল, নদীর পাড়ে কানন মিষ্টান্ন ভাণ্ডার নামের একটি মিষ্টির দোকান আছে।
নাঈম সঙ্গে সঙ্গে বললো,’ চল। ওখানে যাবো।’
ওখানে গিয়ে দেখি ওখানে কানন মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ঠিকই আছে। মজার বিষয় হলো এর মালিক আশফাক সুমন না । একজন মহিলা এর মালিক। মহিলার নাম ফাহমিদা চৌধুরী।
নাঈম বললো,’ আশফাক সুমনের স্ত্রীর নাম কি যেন? জানিস কিছু নাকি?’
আমি বললাম,’ না জানি না তো।’
নাঈম এবার বললো,’ আশফাক সুমনের ফেসবুক আইডিতে তুই এড আছিস বা আইডি কোনটা জানিস কিছু?’
আমি বললাম,’ আশফাক সুমন ফেসবুক ইউজ করে না।’
নাঈম খানিকটা সময় চুপ করে থেকে তার মাথা চুলকে নিলো। তারপর পকেট থেকে তার ফোন বের করে ফেসবুকের সার্চ বক্সে গিয়ে ফাহমিদা চৌধুরী লিখে সার্চ করতেই অনেক গুলো আইডি সামনে এলো।সেসব আইডির একটা একটা করে প্রোফাইল ঘাঁটলো সে । তারপর হঠাৎ করেই সে উত্তেজিত গলায় বললো,’ এই তো, এই তো ফাহমিদা চৌধুরী। ফেসবুক প্রোফাইলের কভার ফটো দেখ, আশফাক সুমনের সঙ্গে ছবি দেয়া।’
আমি উঁকি দিয়ে ছবিটা দেখলাম। তারপর বললাম,’ তাই তো।’
কিন্তু আমি আসলে কিছুই বুঝতে পারছি না। আশফাক সুমনের কি সব জায়গায়ই কোন না কোন প্রতিষ্ঠান আছে নাকি?
আমরা দোকানের একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এরমধ্যে হঠাৎ করেই দেখা গেল দোকান থেকে অসীম বেরুচ্ছে।অলকার স্বামী অসীম।
সে যখন রাস্তা পেরিয়ে একটু সামনে এলো ঠিক তখন নাঈম তার কাছে গিয়ে পেছন থেকে তার পিঠে পি*স্তলের নলটা টেকিয়ে ধরলো। তারপর বললো,’ এদিকে এসো।’
বলে তাকে আড়ালে অন্ধকারের দিকে নিয়ে এসে বললো,’ অলকা কোথায়?’
অসীম কাঁপতে শুরু করলো। বললো,’ জানি না।’
নাঈম সঙ্গে সঙ্গে হাতের সবটুকু জোর দিয়ে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো অসীমের গালে। অসীম নিজেকে সামলাতে না পেরে ছিটকে গিয়ে পড়লো বাঁয়ে।নাঈম ওর কলার ধরে টেনে তুলে আরেকটা চড় বসাতে চাইতেই অসীম বললো,’ চলুন আমার সঙ্গে।অলকার কাছে আমি নিয়ে যাচ্ছি।’
অসীম আমাদের নিয়ে গেল মিষ্টির দোকানের পাশের গলি দিয়ে একটু ভেতরে। ওখানে বড় একটা বিল্ডিং। অনেক গুলো ফ্ল্যাট।সব খালি। শুধু একটাতে পাওয়া গেল অলকাকে। এখানেই অসীম আর অলকা থাকে।
নাঈম ভেতর থেকে ঘরের দরজাটা আটকে দিলো। তারপর বললো,’ কোন রকম ঝামেলা করলেই গু*লি করবো। চুপচাপ তোমরা দুজন একপাশে দাঁড়িয়ে থাকো।’
অসীম আর অলকা চুপচাপ একপাশে দাঁড়িয়ে রইল।
নাঈম এই সময় ঘরের দুটো রুম পায়চারি করলো।কি যেন খুঁজছে। খোঁজা শেষ করে এসে সে বললো,’ অলকা, তোমার মেয়ে কোথায়?’
অলকা তাড়াহুড়ো করে উত্তর দিলো।বললো,’ আমার বাবা বাড়িতে।’
নাঈম মিটিমিটি হাসলো। বললো,’ এইটুকু একটা বাচ্চাকে তোমার বাবা বাড়িতে রেখে এসেছো? কিন্তু কেন? ‘
অলকা বললো,’ কেন আবার কি? আমার মা চাইলেন নাতিন তার সঙ্গে কিছুদিন থাক।আমি না করিনি। রেখে এসেছি।’
নাঈম বললো,’ খুব ভালো। কিন্তু তুমি ময়মনসিংহ থেকে হুট করে এখানে চলে এলে কেন? তাও চোরের মতো পালিয়ে? আবার ওই বাসার আগামী তিন মাসের ভাড়াও পরিশোধ করে এলে! বিষয়টা কি বল তো?’
অলকা আমতা আমতা করে বললো,’ এমনি।’
নাঈম বললো,’ আচ্ছা কেন ওই বাসা ছেড়ে চলে এলে, কি কারণ এসব জানতে চাইবো না আমি। তুমি শুধু বলো তোমার মা কোথায় থাকেন? তার ঠিকানা বলো। তাহলেই হবে।’
অলকা চুপ হয়ে গেল।
নাঈম তখন গিয়ে অসীমের কানের উপরে কপালের একপাশে পিস্তলটা ধরলো। তারপর বললো,’ গু*লি করে দেই?করবো গুলি ? ‘
অসীম কাঁপছে থরথর করে।
নাঈম ওর কপালের একপাশ থেকে পিস্তল সরিয়ে নিয়ে সামনের দেয়ালে গুলিটা করলো। সঙ্গে সঙ্গে দেয়াল ছিদ্র হয়ে বুলেট ওদিকে চলে গেল। খুব শব্দ হলো!
অসীম কেঁদে ফেললো প্রায়। সে ভয়ে শুকিয়ে যাওয়া গলায় বললো,’ সব খুলে বলছি আমি।সব বলছি।’
আমি অসীমকে আগে থেকেই চিনি ও কতোটা ভীতু। ওর দিকে তাকিয়ে আমার হাসি পেলো। আগের বারের মতোই এবারও প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলেছে সে।
নাঈম বললো,’ এবার বলো তোমার বাচ্চা কোথায়? ‘
অলকা চোখে ইশারা করে কি যেন বললো অসীমকে।তা আমি দেখে ফেললাম। কিন্তু অসীমের মধ্যে সম্ভবত তার স্ত্রীর এই চোখ ইশারার কোন রকম প্রভাব পড়লো না। সে বললো আমার বাচ্চা —
‘
#চলবে…
#গোপনে