তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-১০

0
1874

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১০
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

আমার রুম থেকে এখনি বেরিয়ে যাও। তোমাকে যেনো নেক্সট টাইম আমার রুমের আশেপাশে না দেখি।

না আমি যাবো না।

আমি মেয়েদের শরীরে টার্চ করি না। নাহলে থাপড়ায়া তোমার গাল লাল করে দিতাম।

তোমার হাতের থাপ্পড় খেলে আমি নিজেকে ভাগ্যমান মনে করতাম। কারণ তোমার হাতের ছোঁয়া আমার গালে লাগতো।

এই অসভ্য মেয়ে এখনি আমার রুম থেকে বের হও।

না হবো না। আর আমার একটা নাম আছে বার বার এই মেয়ে, এই অসভ্য মেয়ে না ডেকে আমার নাম ধরেও তো ডাকতে পারো।

ইউ নো হোয়াট আমি মেয়েদের থেকে দূরত্ব রেখে চলতে পছন্দ করি। তুমি এভাবে আমার কথা মানবে না। তোমাদের মতো অনেক গায়ে পড়া মেয়েদের আমি হ্যান্ডেল করেছি।

কথাটা বলেই আদিয়াত হাতের টাওয়ালটা মেয়েটির গলায় পেচিয়ে একটানে মেয়েটাকে রুম থেকে বের করে দরজা লক করে দেয়।

( আদিয়াত আয়মান তুর্ণ একজন সফল বিজনেসম্যান। সবার কাছে আদিয়াত আয়মান নামেই পরিচিত। হাইট ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি, গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা। হাসলে গালে টুল পড়ে, কথা বলার সময় এক গালে টুল পড়ে। ধূসর রঙের চোখের মনিগুলো সবাইকে সম্মোহিত করার জন্য যথেষ্ট। আদিয়াত আয়মান বলতে মেয়েরা অঙ্গান। কিন্তু আদিয়াত মেয়েদের থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে চলতে পছন্দ করে। মেয়েদের থেকে এতোটাই দূরত্ব বজায়া চলে যেনো মেয়েদের থেকে এলার্জি আছে তার। এক কথায় সে মেয়েদের ছায়াও তার পাশে সহ্য করতে পারে না। তার পৃথিবী তার বাবা-মাকে নিয়ে।)

আদিয়াত একটা শার্ট পড়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে তার মার সাথে আরুহিকে বসে থাকতে দেখে তার মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। ভেবেছিল তার মাকে বলে পরে বাসা থেকে বের হবে কিন্তু আরুহিকে দেখে তার কথা বলার ইচ্ছেটাই মরে গেছে। তাই সে হনহন করে চলে যেতে নেয় তখন পিছন থেকে রাহেলা বেগম ( আদিয়াতের মা) ডেকে ওঠেন,

এতো রাতে কোথায় যাচ্ছিস আদিয়াত?

জানি না।

জানি না এটা আবার কেমন কথা? কখন আসবি?

আসবো না।

আসবো না মানে কি?

এই মেয়ে (আরুহি) যেদিন আমাদের বাসা থেকে যাবে সেদিন আসবো। এই মেয়ে যতক্ষণ আমাদের বাসায় থাকবে ততক্ষণ আমি বাসার ত্রি-সীমানাই আসবো না।

কথাটা বলে আদিয়াত হন হন করে চলে যায়। রাহেলা বেগম ছেলের যাওয়ার দিকে আশাহত দৃষ্টিতে তাকান।

এই ছেলের রাগ কী কোনোদিন কমবে না?এই
ছেলে যখন শান্ত তখন খুব শান্ত। যখন রেগে যায় তখন ভয়ংকর হয়ে যায়।

কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রাহেলা বেগম। এবার আরুহির দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকায়। বেশ কড়া গলায় বলে,

তুই আদিয়াতের রুমে গিয়েছিলি?

মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়।

রুমে গিয়ে কী করছিলি যার জন্য এতো রেগে গেলো?

যাস্ট একটু জড়িয়ে ধরছিলাম।

তুই জানিস না আদিয়াত এসব পছন্দ করে না। তুই বড় হয়েছিস এভাবে হুট হাট করে একটা অবিবাহিত ছেলের রুমে ঢোকা ঠিক না। মানছি তুই বিদেশে বড় হয়েছিস তাই বলে এ দেশের কালচার সম্পর্কে তুই জানবি না।

আরুহি মাথা নিচু করে ফেলে। রাহেলা বেগম সোফা থেকে ওঠে চলে যায়।

২৩

আমি ফুফির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি। ফুফি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

ফুফি কোনো দিন কি আমি আমার মায়ের ভালোবাসা পাবো না।

কণা তোর লজ্জা করে না। যে মানুষটা তোকে সহ্য করতে পারে না তার কাছেই বার বার ছুটে যাস একটু ভালোবাসার জন্য।

ফুফি আমার তো ইচ্ছে করে মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমুতে। তার কাছে সব দুঃখ কষ্ট শেয়ার করতে। আমার বয়সি বাচ্চারা যখন তার বাবা মার হাত ধরে স্কুলে গেছে তখন আমি একা বা বাসার ড্রাইভারের সাথে স্কুলে গেছি। মা থাকা সত্ত্বেও একজন অর্ধপরিচিত মহিলার কাছে বড় হয়েছি। আমার সব থেকেও কিছু চলে না। দিনের পর দিন এতিমদের মতো অবহেলা সহ্য করে বড় হয়েছি। আমার জীবনে এতো কষ্ট কেনো? আর পাঁচটা বাচ্চার মতো তো আমার জীবনটাও স্বাভাবিক হতে পারতো। দিনের পর দিন নিজের মা, নিজের পরিবার থেকে এতো অবহেলা আমি নিতে পারছি না।

কথাগুলো বলে কণা ফুফিয়ে কেঁদে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে এক সময় আহানা রহমানের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায় কণা। আহানা রহমান গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের কোণের পানিটা মুছে নেন। তিনি তো জানেন ছোটবেলা থেকে কতো কষ্ট করে এই মেয়েটা বড় হয়েছে। নিজের চোখে মেয়েটাকে রাতের পর রাত কাঁদতে দেখেছেন। খুব সাবধানে কণার মাথা নিজের কোল থেকে বালিশে নামিয়ে রাখেন। কপালে একটা চুমু দিয়ে রুম থেকে চলে যান আহানা রহমান।

২৪

সকালের রোদ চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় কণার। পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনে মন খারাপ হয়ে যায় কণার। কারণ তার একটা পাখি ছিল তার নাম ছিল মিদু। পাখিটা তার এক ফ্রেন্ড গিফট করেছিল। নামটাও তার সেই ফ্রেন্ডই ঠিক করে দিয়েছিল। পাখিটাকে তার মা মেরে ফেলে। এসব পশুপাখি তিনি একদম পছন্দ করেন নাহ আর কণার পছন্দের জিনিস একদমই রাখতে দেন না। কণা মন খারাপ করে খোলা চুলগুলো হাত দিয়ে খোপা করে ওয়াশরুমে চলে যায়।

_____________

ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে কণা। কারো দিকে না তাকিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে বসে যায় কণা। ব্রেকফাস্ট শেষ করে রুম থেকে বেগ নিয়ে আসে কণা। অভিক আহম্মেদ ( আভিয়ানের বাবা) তখন অফিসে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিলেম।

বড় আব্বু।

কণার ডাক শুনে থমকে যান অভিক আহম্মেদ। তারপর আভিয়ানের মাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

আফিফা ওর যদি টাকার প্রয়োজন হয় তাহলে ওকে টাকা দিয়ে দাও।

কথাটা বলেই বড় আব্বু হনহন করে চলে যায়।

তুই জানিস না ভাইজান তোর সাথে কথা বলে না। তাহলে কেনো আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাস।

মনটা এমনিতেই খারাপ ছিল এখন আরো খারাপ হয়ে গেলো। বড় আব্বুর কথাটা আমার গায়ে কাটার মতো বিধলো। আমি কি শুধু ওনার কাছ থেকে টাকাই নেই। অন্য কিছুর জন্য উনাকে ডাকতে পারি না। বড় আব্বু কোনো দিন আমার সাথে কথা বলেনি। ভুল করেও কোনোদিনও একটা কথা বলেনি। বড় আব্বুর মুখে আমার নাম কখনো শুনিনি।

কণা তুই এতো বেহায়া কেন? যে তোর সাথে কথা বলতে চায় না তার সাথে কেনো আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাস। তোর লজ্জা থাকলে দ্বিতীয় বার ঐ লোকটার সাথে কথা বলতে যাবি না।

কথাটা বলে অহি আমার হাত ধরে টানতে টানতে বাসা থেকে বের হয় আসে।

২৫

ভার্সিটির ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পাই একসাথে অনেকগুলো স্টুডেন্ট জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আর অহি ভীড়ের দিকে এগিয়ে যাই।

ভীড় ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই আমাদের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। আমি আর অহি অবাকের শেষ সীমানায় পৌছে যায়। ভার্সিটির ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় সিসি টিভির স্কিনে একটা ভিডিও চলছে। যেখানে একটা ছেলে একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে, ঠোঁটে কিস করছে। ছেলেটার মুখ স্পষ্ট নাহলেও মেয়েটার মুখ স্পষ্ট।

চলবে……….