#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১৪
বন্যা কথাটা যাস্ট ইগনোর করে চলে যায়। সে শুনতে চায় না এই মহিলার কথা। সে প্রয়োজন বোধ করছে না এই মহিলার কথা শোনার। আনজুম বেগম ( বন্যার মা ) অনেক কিছু বলছেন কিন্তু বন্যা সেই কথাগুলো কর্ণপাত করলো না। নিজের রুমে চলে এলো। নিজের রুমে এসেই বন্যা হতভম্ব হয় যায়। তার রুমে দু দুটো ছেলে বসে আছে।
দুজন ছেলেই তার অপরিচিত। দুজনকে আগে দেখেছে বলেও তার মনে পড়ছে না। হয়তো তার মা আর তার মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর সাথেই এসেছে। কিন্তু গেস্ট হলে গেস্ট রুমে থাকবে। এখানে কী করছে? তখনি তার বড় মামি বলে,
আরে বন্যা এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
বন্যা ছেলে দুটোর দিকে ইশারা করে বলে, উনারা কে? আর আমার রুমে কী করছে?
ছেলে দুটো এতক্ষণ বন্যাকে খেয়াল করেনি। বন্যার কন্ঠ শুনে চমকে দরজার দিকে তাকায়। বন্যার বড় মামি একবার ছেলে দুটোর দিকে তাকিয়ে বলে,
ওহ। এটা হচ্ছে তোর ম মানে বড় খালার ছেলে আসিফ। এটা হচ্ছে আসিফের বন্ধুর ভাই। ওরা আজকে এই রুমে থাকবে। তুই মিতুর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
বন্যা অবাক হয়ে যায়। তার তো কোনো খালা নেই। তার মায়ের তো কোনো বোনই নেই।
বন্যার আর বুঝতে বাকি থাকে না আসিফ তার মায়ের দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান। আসিফ হয়তো জানে না আনজুম বেগমের আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল। আর একটা মেয়েও আছে। তাই হয়তো তাকে খালাতো বোন বলে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। কথাগুলো ভাবতেই বন্যার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে ওঠে। সন্তান বড় হলে বাবা-মাকে ভুলে যায় বা নিজের বাবা-মা পরিচয় দিতে চায় না। বাবা-মা ও যে সন্তানকে ভুলে যায় বা নিজের সন্তান বলে পরিচয় দিতে চায় না এটা ইতিহাস বিরল।
আসিফ আর নোমান ও হলো বন্যা আসিফের খালাতো বোন।
বন্যা মিতুর রুমের দিকে পা বাড়ায়। এটা তার নিজের বাড়ি না। সে এই বাড়ির আশ্রিতা। তাই তার কোনো অধিকার নেই এই বাসার ওপর। যে যেখানে থাকতে বলবে তাকে সেখানেই থাকতে হবে। দয়া করে এখানে থাকতে দিয়েছে, তিন বার খেতে দিচ্ছে, পড়াশোনা করাচ্ছে এটাই তার ভাগ্য। তাই এই বাসার কারো মুখের ওপর সে কথা বলে না। সে বড়ই হোক কিংবা ছোট।
আসিফ ও হচ্ছে তোমার ছোট খালার মেয়ে। বলেছিলাম না যার বাবা-মা দুজনেই মারা গেছে।
আসিফ বন্যার মুখের দিকে তাকায়। তার খালাতো বোনের ফেইস আর তার মায়ের ফেইস প্রায় মিলে যাচ্ছে। সে ভাবছে এটা কী করে সম্ভব? হয়তো তার মায়ের বোনের মেয়ে বলেই এতোটা মিল। আসিফ আর নোমান বন্যার সাথে কথা বলার আগেই বন্যা নিজের জামাকাপড় নিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে। এতে তারা একটু অপমান বোধ করে। কিন্তু সেটাকে পাত্তা দেয় না। ভাবে অপরিচিত ছেলেদের সাথে কথা বলতে আনকম্পোর্টেবল ফিল করে তাই চলে গেছে।
__________________
বন্যা মিতুর রুমে এসে দেখে মিতুর সাথে একটা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটা আনজুম বেগমের মতো দেখতে। শুধু এতটুকু পরিবর্তন মেয়েটা বিদেশীদের মতো ধবধবে সাদা। এটা হয়তো আসিফের বোন। বন্যা একনজর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। জামা কাপড়গুলো বেলকনিতে মেলে দিয়ে ফোন নিয়ে সোফায় বসে। সাফাতকে ফোন লাগায়।
ঐ বন্যা আপু ও হচ্ছে …….
জানি আমি।
অহি মিতুকে কথাটা শেষ করতে দেয় না। মিতু ভয়ে চুপসে যায়। সে বুঝতে পারছে বন্যা কোনো কারণে বিরক্ত। তাই আর কথা বাড়ালো না। একবার রিং হতেই সাফাত কলটা রিসিভ করে।
বাসায় পৌছে গেছো?
হুম, তুমি?
না। একটা ইম্পর্টেন্ট মিটিং ছিল সেটাই এটেন্ট করতে গিয়ে লেইট হয়ে গেছে।
ঐ মিটিং লবণ ছিল? তোমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল?
নিশ্চুপ।
এন্সার মি।
সাফাত এখন কী উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না। হ্যাঁ বললে বন্যা আজকে তার দফারফা করে ছাড়বে। বন্যার কথা শুনে মনে হচ্ছে ওর মুড ঠিক নেই। ঠিক তখনি আনজুম বেগম আর পরিবারের বাকি সদস্যরা মিতুর রুমে আসে। সবাইকে দেখে বন্যা ঠাস করে ফোনটা কেটে দিয়ে সাইলেন্ট করে ফেলে। সাফাত ভাবছে বন্যা রাগ করে ফোন কেটে দিয়েছে। তাই বার বার ফোন দিচ্ছে। কিন্তু বন্যা রিসিভ করছে না। আনজুম বেগম চোখের ইশারায় মিতু আর ঐ মেয়েটাকে রুম থেকে চলে যেতে বলে। আনজুম বেগমের ইশারা পেয়ে সুর সুর করে দুজন রুম থেকে চলে যায়। আনজুম বেগম কিছু বলতে যাবেন তার আগেই বন্যা উনাকে থামিয়ে দিয়ে কাঠ কাঠ গলায় উত্তর দেয়,
আমি জানি আপনি এবং আপনারা সবাই আমাকে কী বলতে এসেছেন। আমি আসিফ আর ঐ মেয়েটাকে কিছু বলবো না। আর না কোনোদিন নিজের পরিচয় দিব না। এতটুকু বিশ্বাস আমাকে করতেই পারেন। আপনার সুখের বাধা আমি কোনোদিন হয়নি আর না কোনোদিন হবো। এতটুকু ভরসা আমাকে করতে পারেন। এতো বছর যখন আপনার পরিচয় ছাড়া বড় হতে পেরেছি বাকি জীবনটা ও পারব। কিন্তু আপনি একদিন এসবের জন্য আফসোস করবেন।
নোমান এতক্ষণ ধরা দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে বন্যার কথাগুলো শুনছিল। আড়ি পাতার ইচ্ছে তার ছিল না। কিন্তু সে এদিক দিয়ে যাচ্ছিল আর বন্যার কথাগুলো তার কানে আসে। বন্যা রুম থেকে বের হয়ে আসে। বন্যা রুম থেকে বের হওয়ার আগেই নোমান দরজার আড়াল থেকে সরে যায়। বন্যার চোখের কোণে অভি চিকচিক করছে।
৩৩
অহির কান্নাগুলো গলায় দলা পাকিয়ে চলে এলো। কিন্তু কান্নার দলাগুলো চোখের পাতায় ঝড়লো না। কান্না মানে দুর্বলতা। যে মানুষটা তার না তার জন্য কেঁদে কেটে বন্যা বানানোটাই বোকামি। অহি চোখ বন্ধ করেই গান ধরে।
সোনারও পালঙ্কের ঘরে
লিখে রেখে ছিলেম দ্বারে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেকো, ভালো থেকো
মনে রেখ এই আমারে
বুকের ভেতর নোনা ব্যাথা
চোখে আমার ঝরে কথা
এপার ওপার তোলপার একা
বুকের ভেতর নোনা ব্যাথা
চোখে আমার ঝরে কথা
এপার ওপার তোলপার একা
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেকো, ভালো থেকো
মনে রেখ এই আমারে
মেঘের ওপর আকাশ উড়ে
নদীর ওপার পাখির বাসা
মনে বন্ধু বড়ো আশা
মেঘের ওপর আকাশ ওড়ে
নদীর ওপার পাখির বাসা
মনে বন্ধু বড়ো আশা
যাও পাখি যারে উড়ে
তারে কইয়ো আমার হয়ে
চোখ জ্বলে যায় দেখব তারে
মন চলে যায় অদূর দূরে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেকো, ভালো থেকো
মনে রেখ এই আমারে
সোনারও পালঙ্কের ঘরে
লিখে রেখে ছিলেম দ্বারে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেকো, ভালো থেকো
মনে রেখ এই আমারে
অহির চোখের সামনে ভাসছে কিছু দৃশ্য। অহির চোখ দুটো জ্বলছে কিন্তু বৃষ্টি ঝড়ছে না। অহির এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আর থাকতে ইচ্ছে করে না। মানুষ যা চায় তা কেনো সে পায় না। অহি চোখ বন্ধ করে সোফায় শুয়ে পড়ে। অহির বন্ধ চোখের কোল ঘেঁষে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো সোফায়। অহি হঠাৎ করেই অনুভব করছে এই অশ্রুটুকু বিসর্জন দেওয়া ভীষণ প্রয়োজন ছিল। এই অশ্রু বিসর্জন দেওয়া ব্যাতিত এই বিষাক্ত রাতটা কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব হতো না।
আভিয়ান ঐশির সাথে ফোনে কথা বলছিল। অহির এমন বিষাধ গানের সুর শুনে অহির রুমের সামনে এসেছিল। দরজায় হালকা ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে যায়। বুঝতে পারে দরজাটা শুধু চাপানো ছিল। ঘরের ভিতর এক পা রাখতেই দেখে অহি সোফায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। এটা দেখে তার বুকের ভিতর ধক করে ওঠে। সে ভাবছে তার বোনও কী এক তরফা ভালোবাসার মতো ভুল করেছে? তাই এমন বিষাধ সুর। সে কিছুদিন ধরেই খেয়াল করছে অহির পরিবর্তন। সে ভেবেছিল পড়াশোনার জন্য হয়তো এমন চুপচাপ হয়ে গেছে। কিন্তু তেমনটা যে নয়। এটা প্রণয় গঠিত ব্যাপার।
আভিয়ান নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। অহির এমন অবস্থা মেনে নিতে পারছে না। তার বোনের চোখের এক ফোটা জলও যে তার সহ্য হয় না। সে ছোটবেলা থেকেই অহির কোনো আবদার অপূর্ণ রাখেনি। অহির সব ভালো লাগা ও পছন্দের জিনিস এনে দিয়েছে। কিন্তু এটা এনে দেওয়া যে সম্ভব নয়। সবকিছু জোর করে হলে ও ভালোবাসা জোর করে হয় না। যদি ভালোবাসা জোর করে হতো তাহলে ঐ ছেলেকে কিডন্যাপ করে হলেও এনে অহির সাথে বিয়ে দিয়ে দিত। কিন্তু তা তো সম্ভব না।
৩৪
কণা গালে হাত দিয়ে সোফার ওপর বসে আছে। সে অপেক্ষা করছে সারপ্রাইজ পাওয়ার জন্য। লোকটা বলেছিল বিকেলবেলা সারাপ্রাইজ দিবে। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা হতে চললো। কিন্তু এখনো সে সারপ্রাইজ পায়নি। কলিংবেলের শব্দে কণার ধ্যান ভাঙে।
কণা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে। দরজা খুলতেই দেখতে পায় একটা পার্সেল। আশেপাশে তাকায় কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। এবার পার্সেলটার দিকে তাকায়। পার্সেলের ওপর আবারও ধূলিকণা লেখা। কিন্তু এবার ধূলিকণা লেখা সুন্দর করে আর্ট করা। কণা পার্সেলটা নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
চলবে…….
#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১৫
কণা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে। দরজা খুলতেই দেখতে পায় একটা পার্সেল। আশেপাশে তাকায় কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। এবার পার্সেলটার দিকে তাকায়। পার্সেলের ওপর আবারও ধূলিকণা লেখা। কিন্তু এবার ধূলিকণা লেখা সুন্দর করে আর্ট করা। কণা পার্সেলটা নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
কী ফাজিল লোক আমাকে ধূলিকণা ডাকে। আমার নাম শুধু কণা। এই বেডায় আমার নামের আগে ধুলাবালি লাগিয়ে দিছে। আমি কী দেখতে ধুলোর মতো নাকি? যত্তসব।
কণা বকবক করতে করতে নিজের রুমে চলে এসে। রুমে এসে পার্সেলটা খুলে। পার্সেলের ভিতর একটা সাদা রঙের শাড়ি, দুই ডজন কাঁচের চুড়ি, কাজল, আলতা। দুইটা শিউলি ফুলের মালা, আর কিছু শিউলি ফুল। সাথে একটা চিঠিও আছে। কণা চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করে।
প্রিয় ধূলিকণা
ধুলিকণা বলি বলে তোমার রাগ হয় তাই না? কিন্তু রাগ হলেও আমি তোমাকে ধূলিকণাই ডাকবো। কণা তো তোমাকে সবাই ডাকে আমি না হয় একটু ব্যতিক্রম ডাকলাম। তুমি আমার কাছে স্পেশাল। তাই তোমার নামটাও স্পেশাল। সাদা রঙটা আমার ভীষণ প্রিয়। তাই তো তোমাকে এই রঙের শাড়ি দিলাম।
তুমি বাঙালি মেয়েদের মতো কুচিবিহীন শাড়ি পড়বে, হাতে এক মুঠো কাঁচের চুড়ি পড়বে, চোখে ঘন কালো কাজল, আলতা দিয়ে রাঙানো থাকবে তোমার পা দুটো, খোপায় শিউলি ফুলের মালা আর লাল রঙে রাঙানো থাকবে তোমার ঠোঁট। ঠোঁটের কোণে থাকবে লাজুক হাসি। তুমি আলতো পায়ে হেঁটে এসে আমার সামনে দাঁড়াবে। আমি তোমার পায়ের নূপুরের রিনিঝিনি শব্দে পুলকিত হবো। তোমার দিকে বাড়িয়ে দিব এক মুঠো শিউলি ফুল। আমি তোমাকে আলতো করে ছুঁয়ে দিব তুমি লজ্জাবতী গাছের ন্যায় নুইয়ে যাবে। তারপর তোমাকে আমার কন্ঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা শুনাবো।
‘শরত্, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি
ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি।
শরত্, তোমার শিশির-ধোওয়া কুন্তলে-
বনের পথে লুটিয়ে-পড়া অঞ্চলে
আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি।।
মানিক-গাঁথা ওই-যে তোমার কঙ্কণে
ঝিলিক লাগায় তোমার শ্যামল অঙ্গনে।
কুন্ঞ্জছায়া গুন্ঞ্জরণের সংগীতে
ওড়না ওড়ায় একি নাচের ভঙ্গিতে-
শিউলিবনের বুক যে ওঠে আন্দোলি।।
বৃষ্টি বিলাস, চন্দ্র বিলাস এসব কিছু আমার কাছে ছেলে মানুষি মনে হয়। কিন্তু কী করবো বলো এগুলো যে আমার প্রাণ প্রেয়সীর স্বপ্ন। তার ইচ্ছে বিয়ের পর সে তার হাজবেন্ডের সাথে বৃষ্টি বিলাস করবে, গল্প করতে করতে চন্দ্র বিলাস করবে, গৌধুলি লগ্নে হাতে হাত রেখে হাঁটবে। সত্যিই তুমি বাচ্চা টাইপ।
তুমি হয়তো ভাবছো আমি এগুলো কী করে জানলাম? যাকে ভালোবাসি তার সম্পর্কে এই টুকু জানবো তা কী করে হয়? হ্যাঁ ঠিক শুনছো আমি তোমাকে ভালোবাসি। বড্ড ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারি না। তুমি আমার ভালোবাসা শুধুই আমার ভালোবাসা। জানো আমার বাসার ছাদটা ঠিক তোমার মনের মতে করে সাজানো। আমার রুমে বেলকনিটাও। শুধু তোমার এই বাসায় বউ হয়ে আসার অপেক্ষায়।
আমি অপেক্ষার প্রহর গুনছি কবে তুমি আমার বউ হয়ে এই বাসায় আসবে। আমি তোমাকে আমার বুকে জড়িয়ে ধরে বলবো তুমি শুধু আমার প্রেয়সী। শুধুই আমার প্রেয়সী। তুমি শুধু একবার আমার কাছে চলে এসো আমি তোমাকে আমার নিজের বুকের ভিতর আগলে রাখবো। কোনো দুঃখ তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না। তুমি যেদিন আমাকে নিজের চোখে দেখবে সেই সময়টা থাকবে গৌধুলি লগ্ন। আমি সুর্যের লাল আভায় তোমার মায়াবী মুখটা দেখবো।
মনে রেখো তুমি শুধু আমার ভালোবাসা। একদম অন্য কারো মন ভুলানো ভালোবাসায় ভুলবে না। আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমার দুষ্টুমিগুলোকে ভালোবাসি, তোমার হাসি ভালোবাসি, তোমার বাচ্চা সুলভ আচারণকে ভালোবাসি। আমি তোমার সৌন্দর্যকে ভালোবাসি না তোমার নিষ্পাপ মনটাকে ভালোবাসি। তাই তোমার চেহেরা নিয়ে একদম ডিপ্রেশড হবে না। আর হ্যাঁ নিজের খেয়াল রাখবে। মনে রেখো এই পৃথিবীতে হাজার মানুষের ভীরে এমন একজন ব্যক্তি আছে তোমার কিছু হলে তার ভিতরটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়। হৃদয়ে অজস্র ছুঁড়ির আঘাত লাগে। নিজের জন্য নাহলেও আমার জন্য নিজের খেয়াল রেখো।
ইতি
তোমার প্রেমিক পুরুষ
প্রেমিক পুরুষ কণা বার বার উচ্চারণ করছে। এটা উচ্চারণ করলেই কেমন যেনো অনুভূতি হয়। বুকের ভিতর তোলপাড় করে। কণা উপহারগুলো আরেক বার দেখে নেয়। শিউলি ফুলগুলো হাতে নেয়। বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে হাজার কল্পনা জল্পনা করে। ফুলগুলো ডায়েরীর বাঁজে রেখে দেয়। তখনি কণার ফোনের মেসেজ টোন বেঁজে ওঠে। মেসেজটা ওপেন করতেই কণার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি দেখা যায়। মেসেজটা যে ঐ আননোন নাম্বার থেকে এসেছে। কণা বার কয়েক বার মেসেজটা পড়ে।
“হঠাৎ একদিন আমার শহরে এসে পড়বে তুমি।
অচেনা শহরের অলিগলিতে তুমি দিকভ্রান্তের মতোন শুধু ঘুরবে।
তখনই জানবে আমার আকাশ কতটা নীল!
কত সমুদ্র আমার হৃদয়ে…”
___আকাশলীনা সুপ্তি
৩৫
বন্যা রেলিংয়ের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। কানে ইয়ারফোন গুঁজে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনছে। যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে। বন্যা আনমনে হাতে থাকা পেয়েরাটাই কামড় বসাচ্ছে। তখনি বন্যার পাশে এসে আসিফ বসে। বন্যা আসিফকে খেয়ালই করেনি। খেয়াল করবে কি করে সে তো নিজের ভাবনায় মত্ত্ব। আসিফ বন্যার কান থেকে ইয়ারফোন খুলে নেয় এতে বন্যার ভাবনায় ছেদ পড়ে। বন্যা রেগে পাশে তাকায়। নিজের পাশে আসিফকে দেখে একটু বিব্রতবোধ করে। সে ভেবেছিল মিতু হয়তো ফাজলামো করে তার কান থেকে ইয়ারফোন খুলে নিয়েছে। মিতু জায়গায় আসিফকে দেখে অস্বস্তিতে পড়ে যায়।
তুমি এমন কেনো? সব সময় মুখটাকে এমন করে রাখো কেনো? হোয়াই? তুমি কী হাসতে জানো না? হাসলে তোমাকে ভীষণ মিষ্টি দেখাবে। এমনিতেও তুমি দেখতে মিষ্টি একটা মেয়ে। শুধু আমাকে দেখলেই বাংলার পাঁচের মতো হয়ে যায়। আমার জানা মতে বাংলাদেশি মেয়েরা খালাতো ভাই বলতে পাগল থাকে। আর তুমি…
আসিফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বন্যা খালাতো ভাই শুনে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। যেখানে খালারই কোনো অস্তিত্ব নেই সেখানে খালাতো ভাই। বন্যা বেশ বুঝতে পারছে আসিফের মতি গতি। নিজের বড় বোনের সাথে ফ্লাট করতে আসছে। বন্যা হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
শুনো তুমি যদি আমাকে অন্য মেয়েদের মতো ভাবো তাহলে ভুল ভাবছো। আমি অমন টাইপ মেয়ে না যে নিজের খালাতো ভাই দেখে গলে পড়বো। আমার সাথে ফ্লাট করতে এসে নিজের সময় নষ্ট করো না। আমি তোমার থেকে বয়সে অনেকটা বড়। আর আমার সাথে তোমার কি সম্পর্ক সেটা নাহয় তোমার অজানায় থাক।
বন্যা রেলিং থেকে নেমে চলে যায়। আসিফ বন্যার যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। বন্যার কথার অর্থ সে বুঝতে পারেনি।
৩৬
আদ্রিয়ান আরুহির পিছনে পাগল কুকুরের মতো ঘুরছে। কিন্তু আরুহি পাত্তা দিচ্ছে না। সেই দিন আদ্রিয়ান যে মেয়েটাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিল সেই মেয়েটা আরুহি। আদ্রিয়ান আরুহির পিছনে যাচ্ছিল তখনি ছোঁয়া এসে আদ্রিয়ানের সামনে দাঁড়ায়। ছোঁয়াকে দেখেই আদ্রিয়ানের মুখটা কালো হয়ে যায়। আদ্রিয়ান বিরক্তি নিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
কী সমস্যা? এভাবে সঙয়ের মতো আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
সমস্যা আমার না তোমার। গতকাল থেকে ফোন কেনো ধরছো না?
আমার ইচ্ছে করেনি তাই ধরিনি।
সবকিছু তোমার ইচ্ছে মতো হবে? আমার ইচ্ছের কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে?
হ্যাঁ সবকিছু আমার ইচ্ছে মতোই হবে। আমার কাছে আমার ইচ্ছে ব্যাতিত আরো কারো ইচ্ছার মুল্য নেই।
তুমি জানো তোমাকে ফোনে না পেয়ে আমি কতোটা টেনশনে ছিলাম? টেনশনে সারা রাত ঘুমুতে পারিনি। টেনশন করতে করতে সারা রাত কেটে গেছে।
আমি তোমাকে টেনশন করতে বলেছিলাম নাকি ঘুমাতে বারণ করেছিলাম? কোনটা?
তুমি এমন বিহেভ করছো কেনো? তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেনো?
তোমার সাথে যে কথা বলছি এটাই তোমার ভাগ্য। সরো তো আমার সামনে থেকে। তোমাকে আমি যাস্ট নিতে পারছি না।
সরবো না সামনে থেকে। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছি ততক্ষণ আমি সরবো না। কেনো আমার সাথে এমন করছো? আমি কী ভুল করেছি?
আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারি না। তাই যা বলার সোজাসুজি বলছি। তুমি কোন ভুল করোনি। তোমাকে আমার আর ভালো লাগে না। তোমাকে এখন অসহ্য লাগে। আজকে থেকে তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ। ব্রেকআপ।
আমাকে ভালো লাগে না। ঐ মেয়েটাকে ভালো লাগে তাই না?
হ্যাঁ ঐ মেয়েটাকেই ভালো লাগে।
কথা বলেই আদ্রিয়ান ছোঁয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে যায়। ছোঁয়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। কানে বাঁজছে কণার বলা কথাগুলো।
যে সৌন্দর্য নিয়ে তুই অহংকার করছিস। একদিন সেই সৌন্দর্য থাকবে না। আদ্রিয়ান তোকে ভালোবাসে? হা হা হা হাসালি আমাকে। এক সময় আদ্রিয়ান আমাকে ছাড়াও কিছু বুঝতো না। যে ছেলে এক বছরের সম্পর্ক চোখের পলকে মাঝেই শেষ করে ফেলতে পারে। সেখানে তোর সাথে দুই তিন মাসের সম্পর্কের কোনো মুল্য তার কাছে নেই। আদ্রিয়ান শুধু তোর সৌন্দর্যের মোহে পড়ে গেছে। একদিন এই মোহ কেটে যাবে। তোর থেকে সুন্দরী স্মার্ট মেয়ে পেলে তোর সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিতে আদ্রিয়ান দুই সেকেন্ড ভাববে না।
সত্যিই তো আদ্রিয়ান তার থেকে স্মার্ট সুন্দরী মেয়েকে পেয়ে তাকে ভুলে গেলো। আদ্রিয়ানের ভালোবাসা সে কখনোই ছিল না শুধু মোহ ছিল। কণার সাথে যে এতোদিন মিস বিহেভ করেছে এর জন্য ছোঁয়া একটুও অনুতপ্ত হয়নি। বরং তার মনে দাউ দাউ করে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। আরুহির এই সৌন্দর্য সে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেবে।
চলবে…….