তুমি যে আমার পর্ব-৩৫+৩৬

0
778

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_35

‘কবুল’ বলতেই চারপাশ থেকে হ‌ইহল্লা দেখা গেলো। বর্ষা মায়ের বুকে মাথা রেখে কাঁদছে। পরী ওর পাশেই বসে ছিলো। বাচ্চা মেয়েটাও বর্ষার কান্না দেখে কাঁদছে। বর্ষার রুমেই বর্ষা বসে ছিলো।বাইরে বর। রুমে মানুষ গিজগিজ করছে। রেজিস্ট্রি পেপার এ সাইন করার সময় ও খুব কেঁদেছে বর্ষা ওর মাথা ঘুরছে এখন কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে‌।‌ যেটুকু সেজেছিল সব নষ্ট হয়ে গেছে কান্নার ফলে।কাজল লেপ্টে চোখ কালো হয়ে গেছে।ওকে কেউ থামাতে পারছে না।বাবা মাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে ভাবতেই ও চিৎকার করে উঠে।
বর্ষার বাবা মা ও কাঁদছে খুব। একমাত্র মেয়েকে এইভাবে পর করতে চায়নি। কিন্তু মেয়েকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কিছু করার ছিলো না।বর্ষার বাবা নিরবে চোখের জল ফেলছে। মেয়ের কাছে যেতে পারছে না।মেয়ের কান্না তার বুকে তীরের মতো বিঁধছে। তবুও ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো।
বর্ষা মায়ের বুকে থেকে বাবাকে দেখে জাপ্টে ধরলো নিজের বাপিকে। আর কাঁদতে লাগলো। এখন বিদায় হবে কিন্তু বর্ষা কিছুতেই যাবে না বলে মনে স্থির করেছে।‌ও কিছুতেই বাপি মাম্মা কে ছাড়া থাকতে পারবে না।বর্ষা কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেলো বাবার বুকেই। নিবিড় চৌধুরী মেয়েকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চোখের জল ফেলতে লাগলো।
রুমে মানুষ গিজগিজ করছে ফ্যানের বাতাসে কিছু হচ্ছে না যেন। একেতে গরম তার উপর ভাড়ি সাজ গোজ আবার কান্না এজন্য বর্ষা জ্ঞান হারিয়েছে। ডাকা ডাকি করেও বর্ষার জ্ঞান ফেরাতে পারছে না। চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়েছে কাজ হচ্ছে না।

তূর্য সোফায় বসে আছে তার একপাশে বসা মামা শ্বশুর আরেক পাশে বসা ফুফা শশুর। তূর্য কে ভদ্র হয়ে চুপচাপ বসে থাকতে হচ্ছে এদিকে ফোনটা ভেজেই যাচ্ছে। শাওন আজ এতো কল করে ডিস্টার্ব। ফোন রিসিভ করে ধমক ও দিতে পারছে না কারণ শশুর বাড়ির লোকের সামনে এসব করে মান সম্মান খুয়াতে চায় না তূর্য। বিয়ে হয়েছে আধা ঘন্টা হয়ে গেছে। রুমে ভেতরে থেকে বর্ষার চিৎকার ভেসে এসেছে এখন আর আসছে না। কান্না কাটি শেষ হলো নাকি। আর কতো ক্ষণ বসে থাকতে হবে কে জানে বিরক্তিকর। তখন লোপা দৌড়ে তূর্য দের সামনে এসে বললো,

‘ বর্ষা কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেছে।সবাই ডাকছে কিন্তু উঠছে না। ডাক্তার ডাকতে হবে বোধহয়।’

তূর্য কথাটা শুনে বিরক্তে কপাল কুঁচকে ফেললো। ডিসগাস্টিং!! বরের বাসায় যাবে তাতে এতো কান্নাকাটির কি আছে? এমন কান্নাকাটি করল যে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম! এই মেয়েটা যে এত কাঁদতে পারে! এখন অজ্ঞান বউ নিয়ে বাসায় ফিরবো নাকি হাসপাতালে নিয়ে জ্ঞান ফেরাবো। তূর্য কোন দিকে তোয়াক্কা না করে বর্ষার রুমে গিয়ে উপস্থিত হলো। বিছানায় বর্ষা চোখ বন্ধ করে পরে আছে।আর নিবিড় চৌধুরী মেয়ের হাত ধরে ডাকছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।তূর্য কে দেখে সবাই সাইট করে দিলো ভেতরে ঢুকার জন্য।
বর্ষার বাবা তূর্য কে দেখে বললো,

‘ দেখো বাবা কি হয়েছে! বর্ষা অজ্ঞান হয়ে গেছে এখন কি করবো? জ্ঞান ও আসছে না।’

‘ ডোন্ট ওয়ারি আঙ্কেল। ওর কিছু হবে না।ও কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে অজ্ঞান হয়েছে মনে হয়।আমার মনে হয় ও এখন এইভাবেই থাক ওর জ্ঞান খুব দ্রুতই ফিরে আসবে। এদিকে রাত অনেক হয়ে গেছে আমার মনে হয় এখন আমাদের র‌ওনা হ‌ওয়া দরকার।’

‘ এই অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে যাবে? এটা কি করে হয়।’

‘ আঙ্কেল আমাকে ভরসা করেন তো?’

‘ এসব কি কথা তোমাকে ভরসা না করলে আমার কলিজা টুকরো কে তোমার হাতে তুলে দিতাম?’

‘ যদি আমাকে বিশ্বাস করেন তাহলে বর্ষাকে এভাবে আমার সাথে নিয়ে যেতে দিন আঙ্কেল। আমি ওর কোন ক্ষতি হতে দিব না বিশ্বাস রাখুন আমার উপর।’

বাবার মন কি এতো সহজেই মানে? তিনি তবুও রাজি হচ্ছিলেন না। তাই ডাক্তার ডাকা হলো।ডাক্তার বর্ষাকে দেখে বলল বর্ষা এখন ঘুমিয়ে আছে ওর শরীরটা দুর্বল। খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করে না। এজন্য এই অবস্থা।ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করা দরকার। এই অবস্থায় নিয়ে যেতে পারবে।বর্ষা ঠিক আছে শুনে বাবা মা দুজনেই বর্ষাকে নিয়ে যাওয়ায় মত দিলো। তূর্য ঝড়ের বেগে বর্ষাকে পাঁজকোলে তুলে নিলো। তারপর বেরিয়ে এলো বাসা থেকে।বর্ষার মা আঁচলে মুখ গুজে কাঁদছে। বর্ষার মামাকে পাঠানো হলো সাথে।
তূর্য বর্ষাকে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ওর পাশে বসে পরলো।সবার থেকে বিদায় নিয়ে নিলো। বর্ষার মামাকে অন্য গাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তূর্য’দের গাড়ি চলতে লাগলো। সাথে আরো তিনটা গাড়ি গেলো। তূর্য বর্ষার মাথাটা বুকের মধ্যে নিয়ে একহাত পেঁচিয়ে জরিয়ে নিলো। তারপর ফোন করলো শাওন কে।

‘ব্রো তুমি ফোন রিসিভ করছিলে না কেন? জানো আমি কতো কষ্ট করতেছি তোমাদের জন্য।’

‘ আমি একবার আসি। তারপর যদি তোর মাথা যদি না ফাটিয়েছি তো…

‘ তুমি আজ কিছু করতে পারবে না। রুমে ঢুকে উল্টা আমাকে জড়িয়ে চুমু খাবে?’

‘ হোয়াট কি করেছিস তুই?

‘সারপ্রাইজ।’

‘ কোন আকাম করলে কিন্তু আজকে তোকে….

‘আমি কিছু করলেই কেন তোমার মনে হয় আকাম করেছি।আমি কি ভালো কিছু করতে পারি না।

‘ চুপ এবার ফোন রাখ। আর একবার কল করলে মুন্ডু কাটবো এসে।

বলেই ফোন কেটে দিলো।

বর্ষা তূর্য কে নিয়ে একটা বাজে স্বপ্ন দেখে ধরফরিয়ে উঠে বসে। চোখ মেলে একটা নীল ড্রিম লাইটের ফুল দিয়ে সাজানো রুমে নিজেকে আবিষ্কার করে। বসে সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। ও প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে।
বর্ষা স্বপ্নে দেখেছে ওর বিয়ে তূর্য এর সাথে হয়েছে।এটা দেখে ওর হাত-পা থরথর করে কাঁপতে থাকে। এটা কিভাবে সম্ভব? আব্বু আম্মুর আমাকে বিয়ে কেন দেবে ওই রাক্ষস টার কাছে! অসম্ভব এটা! আমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে কি সব দেখেছি স্বপ্নে!
চোখ মেলে বুঝার চেষ্টা করেছে ও কোথায় আছে। গায়ে লাল বেনারসি। আস্তে আস্তে ওর বিয়ে,কান্না সব মনে পরে যায়। আমি তো বাপিকে ধরে কান্না করছিলাম এটা কোথায় চলে এলাম। বাসর ঘর সাজানো বিছানা থেকে নেমে দাড়ায় বর্ষা। ড্রিম লাইটের আলোতে রুম স্ক্যান করে। এটা কি তাহলে আমার শ্বশুরবাড়ি আমি শ্বশুর বাড়ি চলে এসেছি কখন এলাম? তার মানে বাবা-মাকে ছেড়ে আমি চলে এসেছি? এটা ভাবতেই বর্ষার কান্না দলা পাকিয়ে আসতে চায়! তখন দরজা খট করে শব্দ করে খুলে কেউ ভেতরে আসে। লোকটার পেছনের দিকে বর্ষা তাকিয়ে আছে। এটাই কি তাহলে আমার স্বামী? এই লোকটাই কি সবকিছু জেনে আমাকে বিয়ে করেছে? এতই মহান তিনি নাকি এর পেছনে তার কোন উদ্দেশ্যে আছে।

বর্ষা চুপচাপ মাথা নিচু করে অনেক কথা ভাবছে। আবছা অন্ধকারে নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে বর্ষা বলে উঠলো, ‘আপনি একটা ধর্ষিতা মেয়েকে বিয়ে কেন করলেন?আপনার এতে স্বার্থ কি? সত্যি করে বলুন!’

তূর্য বর্ষার একদম কাছে এসে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে। বর্ষা খুব পরিচিত একটা পারফিউমের গন্ধ শুঁকে থমকে যায়। পরিচিত স্পর্শ নিজের কোমরে পেয়ে ওর সারা শরীর কেঁপে ওঠে মুহূর্তে। ও মাথা উঁচু করে মানুষটার মুখ দেখবে কিন্তু তা দেখা হয়না কারন তূর্য ওর মুখটা বর্ষার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলছে,

‘ বর্ষা মনি’

লোকটার গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পরছে বর্ষার কাঁধে। ও চোখ খিচে বন্ধ করে ছিলো ‘বর্ষা মনি’ কথাটা শুনেই ওর হার্টবিট বেড়ে গেলো। অজানা ভয়ে ওর হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠলো। এটা তো তূর্য ওর কন্ঠ। আর এই পারফিউমের গন্ধ টা ও তো তূর্যের। বর্ষা মুহূর্তের মাঝে ভেবে ফেললো তাহলে কি স্বপ্নটা সত্যি হয়ে গেল। ও নিজের শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে তূর্য এর বুকের ধাক্কা মেরে নিজে থেকে সরিয়ে দিলো।
আর কাঁপা গলায় বলল, ‘ ক ক কে আ আপ নি?

#চলবে…….

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_36

তূর্য’এর হাসি উজ্জ্বল মুখ দেখে বর্ষা আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। ভয়ে ওর চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসে। ওর শরীর সমস্ত শক্তি কমে গেছে। দাঁড়িয়েও থাকতে পারছে না। অতিরিক্ত ভয়ে আবার ও অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়ে। তূর্য তা দেখে ঝড়ের গতিতে বর্ষাকে ধরে সামলে নেয়। তারাতাড়ি বর্ষাকে বিছানার শুইয়ে ওর গালে মৃদু চাপর দিতে দিতে ডাকতে থাকে কিন্তু নো রেসপন্স।
‘ বর্ষা ওপেন ইউর আইস।’
শুধু ডাকাডাকি তে কাজ হচ্ছে না দেখে। বোতল থেকে পানি নিয়ে পানি ছিটা দিয়ে জ্ঞান ফেরাতে হলো। বর্ষা চোখ মেলে ওর মুখের ওপর তূর্য’কে ঝুঁকে থাকতে দেখে আবার মৃদু চিৎকার করে ওঠে। তূর্য দ্রুত বর্ষার মুখের উপর হাত দিয়ে আটকে চিৎকার থামায়।
বর্ষা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে তূর্য এর দিকে। আর মুখ দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু হাতের জন্য পারছে না কথা উম’উম শব্দ করে হচ্ছে। তূর্য বললো,

‘ চিৎকার করলে হাত সরাবো না। আরো চিৎকার করবে?

বর্ষা আচমকা তূর্য এর হাত কামড়ে উঠলো। তূর্য আহ করে হাত সরিয়ে নিলো। হাত ঝাড়ছে তূর্য। বর্ষা তড়িগড়ি করে উঠে বসলো। আর চেঁচিয়ে উঠলো,

‘আপনি আমাকে আবার কিডন্যাপ করেছেন কেন? আজ তো আমার বিয়ে ছিলো। আমি কিডন্যাপ হলাম কি করে? বাপি মাম্মার কাছে থেকে আমাকে কি করে কিডন্যাপ করলেন? আর কেন করলেন? আবার কি উদ্দেশ্যে কিডন্যাপ করেছেন? আগের সব কথা তো আমি শুনেছিলাম। আপনি তাও কেন আবার আমার জীবনে এসেছেন নরক করতে। আমার বিয়ে হয়েছে আমার তো বরের বাড়িতে থাকার কথা…..

‘ আরে বিয়ে হয়েছে আর কতো বার বলবে‌। আমি শুনেছি তো। আর বরের জন্য দেখি পাগল হয়ে গেছো এতো ভালোবাসো বরকে?’ বর্ষাকে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে তূর্য বলে উঠলো।

‘ আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। আর আমি আমার হাজবেন্ড কে ভালোবাসতেই পারি তাতে আপনার সমস্যা কোথায়? আর এই রুম এমন বাসর ঘরের মতো সাজানো কেন?’ বলেই বর্ষা তূর্য এর দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।

তূর্য বললো, ‘ কি বললে? তুমি আমাকে ভালোবাসো?’

‘ আপনার মাথা খারাপ নাকি? আমার বাংলা কথা বুঝতে পারছেন না। আমি আপনাকে কখন বললাম ভালো বাসি আমি আমার হাজবেন্ড এর করা বলছি।’

‘ ওই এক‌ই তো হলো।’

‘ মা‌নে এক হলো কি করে? কি সব বলছেন?’

‘ মানে আমি‌ই তো তোমার হাজবেন্ড। তো হাজবেন্ড কে ভালোবাসো মানে আমাকেই তো ভালোবাসা হলো তাই না বর্ষামনি!!

তূর্য এর কথা শুনে বর্ষা থমকে গেলো। কি সব বলছে এই লোক।

‘ আপনি আমার হাজবেন্ড। মিথ্যা বলার জায়গায় পান না তাই না। সত্যি করে বলেন আবার কেন আমাকে কিডন্যাপ করেছেন! আমার বিয়ে দিন কেন বারবার এমন করেন?’

‘ মিথ্যা না বর্ষামনি। তোমাকে কিডন্যাপ করে আনি নি। কবুল বলে বিয়ে করে নিয়ে এসেছি। তোমার বাপি আমার হাতে তোমাকে তুলে দিয়েছে সারা জীবনের জন্য। এখন তোমার বাপির থেকেও তোমার উপর অধিকার আমার বেশি। বিলিভ না হলে তুমি তোমার বাপিকে ফোন করে জানতে পারো। সাথে তোমার মামাও এসেছে। তিনি এখন গেস্ট রুমে বিশ্রাম নিচ্ছে। এখন আর এত কিছু ভেবে অসুস্থ হ‌ইয় না বর্ষা মনি। এখন খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। তোমার শরীর এমনিতেই দুর্বল। দুবার জ্ঞান হারালে অলরেডি।’

উনি আমার হাজবেন্ড মানে কি এসবের? বাপি কি শেষ পর্যন্ত এই লোকটার কাছে ওকে বিয়ে দিলো? না না অসম্ভব! এটা হতেই পারে না। এই জগন্য লোকটার সাথে ওর বিয়ে হতেই পারে না। লোকটাকে সব মিথ্যে বলছে আমার তো পুলিশ অফিসার আদিলের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
কাবিননামায় আমি তার নামে স্পষ্ট দেখেছি।আর এখন তূর্য কিনা বলছে আমার বিয়ে তার সাথে হয়েছে আর বাপি কিনা তার হাতে আমাকে তুলে দিয়েছে। ইম্পসিবল এটা হতেই পারে না।তূর্য এর পক্ষে কিডন্যাপ করা খুব বেশি সমস্যা না। সেই দিন এত এত মানুষের ভীড়ে বিয়ে আসর থেকে উনি আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে ছিল। উনার তো ভয় ঢর কিছুই নাই। আর আজকে এত মানুষ ও ছিলনা আজকে তার পক্ষে কিডন্যাপ করা অসম্ভব নয়। আমাকে এখন মনগড়া কথা বলছে। কিন্তু কেন? আবার কি স্বার্থ আছে তার। আবার কেন আমাকে এই নরকের টেনে আনলো। উনি কি আমাকে এক দন্ড বাঁচতে দেবে না।সব সময় কি উনি আমার পেছনে ছায়া মত পড়ে থাকবে! আমার জীবনটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি শান্ত হবে না!

তূর্য বাথরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে টাউজার আর টি-শার্ট পরে মাথার চুল মুছতে মুছতে রুমে আসে। বর্ষা এখনো চুপচাপ সেভাবেই বসে কি যেন আনমনা ভাবছে আর ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। এই মেয়েটা এত কাঁদতে পারে। ফ্যাচফ্যাচ করে সারাক্ষণ কাঁদবে আর চোখের জল ফেলতে থাকবে। তূর্য তোয়ালে রেখে বর্ষার কাছে এগিয়ে গেলো। তারপর হাত বাড়িয়ে ওর চোখের জল মুছে দিতেই বর্ষা হতচকিয়ে ভাবনা ছেড়ে বেরিয়ে এলো। আর নিজের খুব নিকটে তূর্য কে দেখে ঝামটা মেরে ওর হাত সরিয়ে দূরে সরে বসলো।

‘ডোন্ট টাচ মি! একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। না হলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।আপনি আবার আমার শরীর ভোগ করার জন্য আমাকে তুলে এনেছেন তাই না। একবার আমার শরীর ভোগ করে আপনার সাধ মেটেনি এখন আবার তুলে এনেছেন। ছিঃ এতো জগন্য কেউ হয় আপনাকে না দেখলে জানতে পারতাম না। আমি আপনার সব চাল বুঝতে পেরেছি।এভাবে মেয়েদের জীবন নষ্ট করে শান্তি পান তাই না। এখন আমি অন্য একজনের স্ত্রী। এখনো আপনি আমাকে ছাড়লেন না। লোকটা সবকিছু জেনেশুনে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে, বিয়ে করেছে। যেই দেখেছেন আমি একটু শান্তির মুখ দেখবে তখনি আবার আমার জীবনটা তছনছ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। আপনি কি আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দেবেন না। আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ না করলে কি আপনার পেটে ভাত হজম হয় না। আমি আপনার কি ক্ষতি করে ছিলাম যার জন্য এমন করছেন সব সময়। আমার বাপির জন্য আমার জীবন একবার নষ্ট করলেন। শুধু আমার জীবন নষ্ট করে ক্ষ্যান্ত হননি আপনি আমাদের বাড়ি গাড়ি সব কেড়ে নিয়ে পথে নামিয়েছেন। তাও চুপ ছিলাম এবার আবার কেন এসব করছেন। আমি এই যন্ত্রণায় না মরা পর্যন্ত কি আপনি আমাকে শান্তি দিবেন না।’

বলতে বলতে ফুঁপিয়ে উঠলো বর্ষা। তূর্য এগিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। বর্ষা ছটফট করে তূর্য এর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। বর্ষা হাত দিয়ে তূর্য কে আঘাত করে সরিয়ে দিতে চাইছে ও আরো অনেক কথা বলছে। তূর্য সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করল না। বর্ষাকে এখন শান্ত করতে হবে যেভাবেই হোক। তূর্য নিজের অধর দিয়ে বর্ষার কথা বলা বন্ধ করে দিলো।আর একহাতে বর্ষার হাত শক্ত করে ধরে আছে। বর্ষা শান্ত হতেই তূর্য সরে আসলো।রাগে ঘৃণায় ওর মরে যেতে ইচ্ছে করছে। স্বামী থাকতেও পর পুরুষ আবার ওকে স্পর্শ করল ভাবতে ওর মরে যেতে ইচ্ছে করছে। এই লোকটা এতো খারাপ কেন?

কথা বলছে না বর্ষা কাঁদছে ও না পাথরের মতো বসে আছে তূর্য ওকে জোর করে এক হাতে জরিয়ে ধরে খাইয়ে দিতে লাগলো। বর্ষা চুপচাপ খাবার মুখে নিয়ে বসে আছে। ও অনুভূতি শূন্য হয়ে গেছে। কিছু বলার ভাষা খুজে পাচ্ছে না। এত নিখুত অভিনয়। এদের দ্বারাই সম্ভব। কিভাবে ওর পরিবারটাকে তুর্য হাত করে নিয়েছে। তূর্য বর্ষাকে এই মাত্র বিয়ের প্রমাণ দিয়েছে সাথে ওই যে আদিল তা সব বলেছে। সব শুনে বর্ষা পাথর হয়ে গেছে। আবার ফাঁসিয়ে ওকে এই লোকটা নিজের খাঁচায় বন্দী করলো। আগের বার কিডন্যাপ করে আর এবার বিয়ে করে।কেন করছে লোকটা এমন? কি চায় লোকটা আমার থেকে? কি চায়? কিছু জানে না জানতেও চায় না। ওর শুধু একটা কথাই মাথায় আসছে ও কেন একবার তূর্য এর ছবি দেখলো না বিয়ের আগে। মাম্মা কতো দেখাতে চেয়েছে কিন্তু ও দেখেনি। বিয়ে নিয়ে তেমন ইচ্ছা ছিল না বলে বরের চেহারা দেখার আগ্রহ দেখায়নি। ও ভেবেছিল বাবা মা যার কাছে তুলে দেবে তাকে ওকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করবে। কিন্তু এটা কি হলো এই জঘন্য পাষাণ লোকটাই কিনা আড়াল থেকে ছুরি মেরে সামনে এসে মলম লাগানোর চেষ্টা করেছে। কি নিখুঁত অভিনয় বাবা-মায়ের সঙ্গে। তাদের একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করেছে বাপির কতোটা বিশ্বাসযোগ্য হলে বাপি তার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেয় এই লোকটার সাথে।
এখন আমি কিভাবে বাবা-মাকে বুঝাবো এই লোকটায় তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু।যার কাছ থেকে রক্ষা করতে চাই , বাঁচাতে চাই আজকে তার কাছে তার মেয়েকে তুলে দিয়েছে। ভাগ্যের কি পরিহাস!!

#চলবে……..