তুমি যে আমার পর্ব-৪১+৪২

0
763

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#part_41

কমিশনারের মেয়ের বাথর্ডে পার্টিতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে তূর্য। বিছানায় বসে আছে বর্ষা। ওর হাতে ফোন যেটা তূর্য কে দেখিয়ে হাতে নিয়ে বসেছে। কিন্তু ওর নজর তূর্য এর উপর। একটু পর পর আড়চোখে তূর্য এর দিকে তাকাচ্ছে।
তূর্য কালো শার্ট, কালো প্যান্ট, কালো কোর্ট পরেছে। চুল ঠিক করছে, পারফিউম দিচ্ছে। একদম নায়ক সেজেছে। বর্ষা বুঝতে পারছে না এতো সেজে গুজে যাচ্ছে কোথায় এই রাতের বেলা?
বিকেলে ওকে বিরক্ত করেই তুর্য বাসার ভেতরে এসেছে। বর্ষা সন্ধ্যা নাগাদ রুমে এসেছে। তখন তূর্য ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়েছিল। ঘুম থেকে উঠে ওর দিকে তাকিয়ে একটা কথাই বলেছে,

‘ রেডি হয়ে নাও।’

তূর্য এর কথা শুনে বর্ষা বলে, ‘ রেডি হয়ে নেব মানে কোথায় যাব?’

‘ গেলেই দেখতে পাবে।’

‘ আমি আপনার মত লোকের সাথে কোথাও যেতে রাজি নয়। আপনি একাই যান। আমি কোথাও যেতে পারবো না। আর আমাকে জোর করতে আসবেন না।’ বলেই ফোন নিয়ে টিপতে লাগল বর্ষা।

তূর্য ওয়াশরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে। আলমারি থেকে ড্রেস বের করে রেডি হতে শুরু করে দিয়েছে। 1 ঘন্টা যাবত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এটা-ওটা মাখছে। আমি যে এত সাজগোজ করি আমিও বোধহয় ওনার মত এতক্ষণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকি না। বর্ষা ওর কান্ঠ কারখানা দেখছে খালি। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। ভাব! এই ভাব, সৌন্দর্য দেখিয়ে যে কত মেয়ের জীবন সর্বনাশ ডেকে এনেছে আল্লাহ জানে। আমার মতো কতো মেয়েকে যে…

বর্ষার ভাবনা থেমে গেলো হাতের স্পর্শে। তূর্য এর সামনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে হাত শক্ত করে ধরেছে। ও কিছু বলার আগেই টেনে বিছানা থেকে নামিয়ে নিলো টেনে।আর হাতের মুঠোয় থাকা অ্যাশ কালারের শাড়িটা বর্ষার হাতে দিয়ে বলল,

‘ আধা ঘন্টা সময় দিলাম।তাড়াতাড়ি শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে নাও। আর যদি না হও রেডি, যেভাবে আছে এভাবেই তুলে নিয়ে যাব। আমাকে তো চেনো। আমি যখন নিয়ে যাব বলেছি নিয়ে যাব‌ই। তাই যদি এভাবে যেতে না চাও তাড়াতাড়ি রেডি হও।’

বলেই হনহন করে রুমের বাইরে চলে গেলো। বর্ষা শাড়িটা ছুড়ে মারলো ফ্লোরে। ডান হাত টেনে ধরে ছিল তূর্য। বর্ষা হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো। হাতটা লাল হয়ে গেছে ব্যথাও করছে। ওর চোখে জল চিকচিক করছে ওইভাবে আবার শক্ত হয়ে বসে পরলো বর্ষা।পরবে না শাড়ি ও। লোকটা পেয়েছে কি পুতুলের মত আমাকে নাচাবে নিজের ইচ্ছামত। আমি বর্ষা নাচবো না উনার কথায়। যাব না বলেছি যাব না। দেখি উনি আমাকে কিভাবে নিয়ে যায়। সব সময় জোরজবরদস্তি না করলে উনার পেটের ভাত হজম হয়না। এত নিকৃষ্ট আর খারাপ লোক দুনিয়াতে বোধহয় দুটো নেই। এই লোকটাকে কিনা আমার ভাগ্যে জুটতে হলো। আধা ঘন্টা পর তূর্য রুমে ঢুকে দেখে বর্ষা ফ্লোরে শাড়ি ফেলে রেখেছে। আর শক্ত হয়ে বসে আছে বিছানায়। ওর চোখের কোনে জল। সেদিকে তোয়াক্কা করল না তূর্য। ওর রাগ মাথায় উঠে গেলো বর্ষা এখনো রেডি হয়নি তা দেখে। তূর্য বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে এলো বর্ষার দিকে। আর হুংকার দিয়ে উঠলো।

‘ আমার ভালো কথা তোমার ভালো লাগে না তাই না।ওকে নো প্রবলেম বর্ষা মনি তোমাকে কিভাবে সাইজ করতে হয় আমার জানা আছে।’

বলেই বর্ষার বাহু ধরে দাঁড় করিয়ে দিলো তূর্য। বর্ষা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো তূর্য কে আর বললো,

‘বিয়ে করে আপনার বাড়িতে এনে আমাকে টর্চার করছেন আমি মুখ বুঝে সহ্য করছি। এখন জোর করে আমাকে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না ভালো হবেনা কিন্তু। আপনার যেখানে খুশি একা চলে যান। আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।’

‘আমি যেহেতু বলেছি যেতে হবে। তাহলে তো তোমাকে যেতেই হবেই সেটা ইচ্ছায় হোক অথবা অনিচ্ছায়।’

বলতে বলতেই বর্ষার ওরনা টেনে ছুড়ে মারলো। জামায় হাত দিতে যাবে বর্ষা ছিটকে দূরে সরে যায়। দুহাত বুকের উপর রেখে কেঁদে উঠে,

“আচ্ছা আমি রেডি হচ্ছি আপনি বাইরে যান প্লিজ।’

‘অসম্ভব আমি কোথাও যাব না। রেডি হলে আমার সামনে হও। আর না হলে আমি তোমাকে জোর করে শাড়ি পরাবো। তখন চলে গিয়েছিলাম সময়টা কাজে লাগাওনি। আমার টাইম লস করছো তাড়াতাড়ি করো।’

‘এটা কি বলছেন আমি আপনার সামনে চেঞ্জ করবো। অসম্ভব প্লিজ দয়া করে আপনি বের হোন। আমি এবার আর জেদ করব না সত্যি রেডি হবো।’

‘নো এক্সকিউজ তাড়াতাড়ি করো না হলে কিন্তু আমি হাত চালাতে বাধ্য হব!’

বর্ষা অসহায় মুখে তাকিয়ে আছে। তূর্য দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পেছনে ঘুরে দাঁড়ালো আর বললো,

‘ ওকে অন্যদিকে তাকিয়েছি। এবার করো তোমার দিকে আমি তাকাচ্ছি না।’

‘ আপ….

‘বেশি কথা বললে কিন্তু ঘুরতে আমার এক সেকেন্ড সময় লাগবে না! অনলি টেন মিনিটস দিলাম এর মধ্যে কাজ শেষ করবা।’

বর্ষা আর কথা বাড়ালো না। তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেলো আর পেটিকোট ব্লাউজ পড়ে সে শাড়ি পরতে লাগলো। তাড়াতাড়িতে ও এখন কুচি তুলতে পারছ না কি এক মুশকিল। তূর্য ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। টেন মিনিট হতে পেছনে ঘুরে গেল। বর্ষা আঁচল বুকে দিয়ে কুচি তুলার চেষ্টা করছে কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে কুচি টা খুলে গেল। ও ব্যর্থ হয়ে আবার তোলার চেষ্টা করছে‌। বেখেয়ালিতে ওর আঁচলটা পড়ে গেলো তূর্য চমকে উঠলো। ঢোক গিলে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ ইডিয়েট আচল ঠিক করো। একটা শাড়ি পড়তে পারো না ঠিকমতো যতসব।’

তূর্য এর আওয়াজ পেয়ে বর্ষার বুক ধক করে উঠল। তাড়াতাড়ি কুচি ফেলে আঁচল টেনে নিল। আর বললো,

‘ আমি ঠিক ভাবে পড়তে পারছি না এখন কি করব?’

তূর্য রাগী চোখে তাকালো বর্ষার দিকে। বর্ষার অসহায় মুখ দেখে আর কিছু বললো না। এগিয়ে আসতে লাগলো। আর নিজেই কুচি তুলতে লাগলো। বর্ষা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। তূর্য কাছে আসাতে ওর গলায় সমস্ত কথা আটকে গেছে। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। হাত-পা কাঁপছে তুর্য কুচি করে ওর হাতে দিয়ে সরে দাঁড়ালো বর্ষা তাড়াতাড়ি তা গুজে নিলো।

.
গাড়ি থেকে নামতেই একটা বিশাল বড় বাড়ি চোখে পড়লো বর্ষার। ও তাকিয়ে আছে বাড়িটার দিকে। তূর্য এসে ওর হাত ধরলো শক্ত করে তারপর হাঁটতে লাগলো ভেতরের দিকে।
না চাইতেও এই খবিশটার সাথে বর্ষার পা মেলাতে লাগলো।যত ভেতরে যাচ্ছে মানুষের আনাগোনা বাড়ছে। গাড়ি থেকে নামতেই বুঝতে পেরেছে বর্ষা এটা বার্থডে পার্টি। তাই আর তূর্য কে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন পড়ে নি। বর্ষা চুপচাপ তূর্য এর সাথে হাঁটছে। এত মাঝে কতো জনের সাথে যে কথা বলেছে তূর্য হিসেব নাই। বর্ষা শুধু তাকিয়ে দেখছে।
সবাই কথা বলার মাঝেই বর্ষার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেছে কে ও।

তূর্য শান্ত ভঙ্গিতে বলেছে, ‘ শি ইজ মাই ওয়াইফ।’

কিন্তু বর্ষা একজনের সাথেও কথা বলেনি। মুখে কুলু পেতে ছিলো। সবাই ভাবি বলে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করেছে। বর্ষা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো। তূর্য তখন নিজেই কিছু বলে ম্যানেজ করেছে। আর কঠিন চোখে বর্ষার দিকে তাকিয়েছে। অনেকে আবার বর্ষাকে চিনে যারা ওদের বৌভাতে ছিলো তারা দেখেই ভাবি বলে মুখে ফেনা তুলেছে কিন্তু বর্ষা নির্বিকার ভাবে ছিলো কথা আজ বলবে না বলে পর্ণ করেছে যেন।

আলতাফ মাহমুদ এর সাথে অনেকক্ষণ কথা বললো তূর্য তার মেয়ের বার্থডে পার্টি। তার মেয়ে জেসির দিকে তাকিয়ে আছে বর্ষা। মেয়েটা পুতুলের মতো সুন্দরী। সাদা গাউন পরেছে দেখতে ঠিক শুভ্র পরী লাগছে। মুখে নজর কাড়া হাসি। বন্ধু বান্ধবীদের সাথে হাসাহাসি করছে। বর্ষা হাঁ করে মেয়েটার সৌন্দর্য দেখছিলো। কিন্তু তা ব্যাঘাত ঘটায় একটা স্পর্শ। লাফিয়ে উঠে দেখে তূর্য ওর কোমর চেপে ধরেছে। বর্ষা চোখ বড় করে বলি,

‘ এখানে আবার আপনার অসভ্যতামি শুরু করে দিলেন? সরুন আমার থেকে দূরে থাকুন।’

তূর্য জেসির বাবার সাথে কথা বলছিলো বর্ষা সুযোগ বুঝে হাত ছাড়িয়ে একটু সরে দাঁড়িয়েছিলো। আর জেসি কে দেখছিলো। তখন এসব ঘটলো।

তূর্য ছারলো না ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বললো, ‘ কাকে দেখছিলে বর্ষা মনি?’

‘ এতো মানুষের মধ্যে ও আপনি এমন বেহায়াপনা বাদ দিবেন না?’

‘ নো, আমার ব‌উ তাই আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। তুমি এমন গভীর ভাবে কাকে দেখছিলে জেসি কে?’

তূর্য এর হাত কোমর থেকে সরিয়ে দিলো বর্ষা। তারপর রাগী চোখে তাকিয়ে বিরবির করে বললো,
‘ খবিশ।’

‘ হুম কতো সুন্দর দেখছেন একদম পুতুলের মতো।’

বলেই বর্ষার জেসির দিকে তাকালো। তূর্য ওর দিকে এগিয়ে এলো। এবার আর স্পর্শ করলো না।

‘ এই মেয়ে আমাকে বিয়ে করার থ্রেট দিয়েছিলো জানো!’

বর্ষা চমকে তাকালো তূর্য এর দিকে। তার পর তাচ্ছিল্য করে বললো,

‘ আপনার এই মিথ্যে কথা আমি বিশ্বাস করবো অসম্ভব। দেশের সব মেয়ে আপনার জন্য পাগল এটাই তো বুঝাতে চান সব সময়।’

‘ বুঝানোর কি আছে। যা সত্যি তাই বললাম। আমার এতো নিজেকে নিয়ে বানিয়ে বলার দরকার হয় না।’

‘ এই মাত্র বললেন এখন আবার ভাব নিচ্ছেন আসলে আপনি….

‘ চুপ দেখো কে আসছে।’

বলেই সামনে তাকাতে বললো। বর্ষা সামনে তাকিয়ে দেখে জেসি ওদের কাছে আসছে। এসেই তূর্য এর দিকে তাকিয়ে হাসলো আর বললো,

‘ হাই আদিল, হাউ আর ইউ?’

‘ আই এ্যাম ফাইন।’

জেসি বর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ শি..

জেসির কথা শেষ হ‌ওয়ার আগেই তূর্য বললো, ‘ আমার একমাত্র ব‌উ।’

জেসি এতোক্ষণ তূর্য এর দিকেই তাকিয়ে ছিলো। এখন পূর্ণ দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকালো। বর্ষাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে নিলো। তারপর তূর্য চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ তোমার পাশে একদম মানাচ্ছে না। তোমার পাশে আমার মতো কাউকেই মানায়। এই মেয়েকে তুমি কি দেখে পছন্দ করলে আদিল? গায়ের রং ও ফর্সা না। এই মেয়ের জন্য তুমি আমাকে ছাড়লে।’

জ্বলন্ত চোখে বর্ষা তাকিয়ে আছে জেসির দিকে। অগ্নিমূর্তি ধারণ করে একবার তূর্য এর দিকে তাকালো। রাগে ওর গা জ্বলে যাচ্ছে। এতো বড় অপমান করলো এই শাকচুন্নি মেয়েটা আমাকে। এতোক্ষণ এই জেসিকে নিয়ে যত ভাবনা ছিলো নিমিষেই সব চূর্ণ ভিন্ন হয়ে গেলো। তূর্য আর জেসি কি যেন কথা বলছে। বর্ষা সেসব কানেও নিচ্ছে না। ওর কান দিয়ে তো গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। ওকে গায়ের রং নিয়ে খোটা দিলো মেয়েটা। এতো বড় সাহস। কখনো এই গায়ের রং নিয়ে ওকে অপমান করে নি কেউ। ওল্টা সবাই ওর গায়ের রংটি পছন্দ করে। ওকে কখনো কেউ কালো বলে নি। ফর্সা না বললেও কখনো কেউ কালো বলতে পারেনা। আমি অতোটাও কালো না উজ্জ্বল ফর্সা শ্যামলা আমার গায়ের রং। আমি এতেই হ্যাপি। কিন্তু এই মেয়ে আমাকে কি বললো আমাকে তূর্য এর সাথে মানায় নি। কাগজের মতো ফর্সা না তাই এইভাবে অপমান।তূর্য এর ধরে রাখা হাতের দিকে তাকালো বর্ষা। তূর্য আমার থেকে অনেক বেশি ফর্সা। ধবধবে ফর্সা হাতের সামনে আমার হাত কালোই লাগছে। বর্ষা তাও আফসোস করছে না। কিন্তু এই মেয়ের বলার জন্য বর্ষার রাগ আকাশ উঠে গেছে। বর্ষা কটমট করে মাথা উঁচু করলো। জেসি চলে যাচ্ছে।

বর্ষা ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, ‘শাকচুন্নি, পেত্নী।’একটু জোরেই বলেছে কথাটা বর্ষা। তাই তূর্য সহ আশেপাশের অনেকে কথাটা শুনেছে আর চোরা চোখে বর্ষার দিকে তাকিয়েছে।
বর্ষা সবাইকে তাকাতে দেখে থতমত খেয়ে চুপ করে গেলো। এই বাসায় আর একটা খাবার ও খেলো না।যেখানে ওকে অপমান করেছে সেখানকার কিছু মুখে তুলবে না ও। তূর্য ও জোর করলো না।

#চলবে…..

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#part_42

‘ দেখ তূর্য তোর সাথে আমার দ্বন্দ্ব কাজের সূত্রে। তুই আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে ঝামেলা করতে পারিস না। চলে যা তুই। আমাকে আমার কাজ করতে দে। ও আমার ভালোবাসা। ওকে পেতে যা করতে হয় আমি করবো। এই ব্যাপার এ তুই নাক গলাতে পারিস না। আমি বুঝতে পারছি না তুই কেন আমকে বাধা দিচ্ছিস। এখানে ওর ওই সো কল্ড হাজবেন্ড থাকলে মানা যেতো। কিন্তু ও তো আমার হাতেই বন্দি ওর তো আসা সম্ভব না।তুই কেন এসেছিস বল। নিদুর সাথে তোর কি সম্পর্ক বল?’

তূর্য ওর কথার উত্তর না দিয়ে বললো, ‘ ঝামেলা না করে দুজনকেই ছেড়ে দে। আমি তোর সাথে এখন লড়তে চাইছি না।’

‘ তুই নিজেকে কি মনে করিস। আমি তোকে ভয় পায়। তুই বলবি আর আমি তোকে ভয় পেয়ে ছেড়ে দিব ওদের ইম্পসিবল। জান থাকতে এখানে থেকে ওদের নিতে পারবি না। আর না তুই বেঁচে ফিরতে পারবি। বাঁচতে চাইলে চলে যা না হলে আমার হাতে তোকে মরতে হবে।’

‘তাই তাহলে আয় মার আমাকে। তোর কথা শুনে আমি তো খুব ভয় পাইছি দেখ আমি কাপতাছি। টিটকারি মেরে হাসতে লাগলো তূর্য।

আরিয়ান রেগে তূর্য এর বুকে লাথি মেরে বসলো। তূর্য ছিটকে পরলো।

আরিয়ান চিৎকার করে উঠল, ‘ আজ তোকে আমি দেখাবো আরিয়ানের সাথে লাগতে আসার ফল কি হয়। আমার ভালোবাসা কেড়ে নিতে এসে কতোটা ভুল করেছিস আজ বুঝতে পারবি।’

বলেই এগিয়ে এসে আরেকটা লাথি মারলো। তূর্য হাত উঠানোর সময় পাচ্ছে না। কারণ ওকে ধরে রেখেছে আরিয়ানের লোকরা। তূর্য এর লোকরা ভেতরে আসতে পারিনি ওদের বাইরেই আঁটকে রেখেছে।

‘ মুখ আজ দেখেই ছাড়বো আমি তোর। আজ এখানে এসে কতো বড় ভুল করেছিস হারে হারে টের পাবি তুই।’

বলেই মুখের দিকে হাত বাড়াবে তূর্য এবার আরিয়ানকে ঘুসি মেরে বসলো। আরিয়ান আর্তনাদ করে উঠলো। আরিয়ানের লোক গুলো তূর্য এর উপর ঝাপিয়ে পড়ল। একজন যত‌ই শক্তিশালী হোক না কেন এতো জনের সাথে পেরে উঠে না। তূর্য ও হাঁপিয়ে উঠেছে। তখন দরজা ভেঙে শাওন ও পেছনে আরো কয়েকজন ঢুকে আর সবাই দক্ষ হাতে লড়তে লাগে। শাওন গিয়ে আরিয়ান কে ইচ্ছে মতো ঘুসি মারছে। তূর্য নিদ্রা ও অভ্র কে খুঁজতে লেগে পরে। একটা দরজার কাছে এসে লাথি মেরে দরজা ভেঙে ভেতরে এসে হাত পা বাঁধা অবস্থায় অভ্র কে দেখে শরীর এ মারের দাগ। তূর্য অভ্র কে ছাড়াতে যেতে আরিয়ান এসে ওকে পেছন থেকে আঘাত করে।অভ্র বোকা চোখে দুজনের মারামারি দেখছে। তূর্য,আরিয়ান ও অভ্র ‌ছারা আর কেউ নাই এই রুমে। আরিয়ান চাকু বের করে তূর্য এর পেটে লম্বা টেনে আঘাত করে তূর্যের পেট থেকে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে।
আরিয়ান এই সুযোগে তূর্য এর কাছে গিয়ে ওর মাক্স টেনে সরিয়ে দেয় আর তূর্য কে দেখে অভ্র ও আরিয়ান দুজনেই থমকে যায়।

আরিয়ান কিটকিট করে হেসে উঠে বলল, ‘ ও মাই গড এ তো দেখছি আইনের কর্মকর্তা। একদিকে সত্যবাদী অফিসার আরেকদিকে সন্ত্রাসী। তুই তো ভালো খেলোয়াড় রে।’

বলেই কঠিন মুখ করে তূর্য এর আঘাত করা জায়গায় আঘাত করে। শাওন এসে এসব দেখে ব্রো বলে চিৎকার করে উঠল। তূর্য মাক্স আবার পরে আরিয়ানের নাক বরাবর ঘুসি মারে। আরিয়ান দেয়ালে জোরে বারি খায়। আর চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে আসে আরিয়ানের। জ্ঞান হারানোর আগে তূর্য কে একটা কথা বলে,

‘ নিদুর সাথে তোর কি সম্পর্ক কেন ওকে বাঁচালি আমার হাত থেকে কি স্বার্থ এতে তোর।’

তূর্য আরেকটা আঘাত করে ওর মাথায় ও ঠলে পরে ফ্লোরে।
তূর্য ও পেটের আঘাতে নিস্তেজ হয়ে শরীর এর ভার ছেড়ে দের। শাওন ওকে জাপ্টে ধরে।
তূর্য ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে‌।
নিদ্রা আর অভ্রর নিখোঁজ হওয়ার নিয়ে থানায় জিডি করেছে অভ্রর বাবা মা। এটা জানতে পেরেই তূর্য যা বুঝার বুঝে গেছে। তারপর ই বেরিয়ে ছিলো। শাওন তূর্য কে নিয়ে তূর্য এর আরেক বাসায় চলে আসে আর ডাক্তারকে রাস্তায় থাকতেই কল করেছিলো তাই তিনি চলে এসেছে। অভ্র ও নিদ্রাকে ওদের লোক বাসায় পৌছে দিবে বলে। আরিয়ানের লোক আহত নিদ্রাকে একটা রুম বন্ধ করে রেখেছিলো। নিদ্রা অভ্র কে দেখেই জরিয়ে ধরে কেঁদে ওঠে। অভ্রর শরীরে অনেক আঘাত ওই আরিয়ান করেছে তাই নিদ্রা এমন শক্ত করে জড়িয়ে ধরাতে আর্তনাদ করে উঠে। নিদ্রার চোখের পার কালো হয়ে গেছে দুই দিনে।

‘ কি হয়েছে তোর? নিদ্রা অভ্রকে ছেড়ে বলে।

‘ আগে বাসায় চল পরে এসব জিজ্ঞেস করিস!’

বলেই বেরিয়ে আসে এই নরক থেকে।

এদিকে বর্ষা গুটিগুটি পায়ে তূর্য এর বাবার রুমে উঁকি দিচ্ছে। আজ কি মনে করে যেন ভেতরে গেলো। লোকটার জন্য মায়া হলো। দুই মিনিট থেকেই চলে এসেছে। কেমন জানি অস্থির লাগছে ওর কোথা ও এক দন্ড দাঁড়িয়ে শান্তি পাচ্ছে না। সারা বাসা ট‌ইট‌ই করে ঘুরে রান্না ঘরে এসে ঢুকলো। শান্তা রান্না করছে। সারাটা বাসা কেমন ফাঁকা কেউ নাই যেনো। কেবল নয়টা বাজে। খাবার ও খেতে ইচ্ছে করছে না। রুমে এসে ব‌ই খুলে বসলো। কিন্তু পরতেই ভাল্লাগে না। ফোন হাতে নিলো বাপি কল করে দুজনের সাথে কথা বলে নিলো। এখন খিদে লাগছে খাবার খেতে টেবিলে এসে বসলো। রান্না ঘরে থেকে ফিসফিস করে কথার আওয়াজ আসছে খাওয়া রেখে গিয়ে দেখলো কাছের মেয়ে শান্তা। আমাকে দেখে ভয় পেয়ে গেলো আর বললো,

‘ ব‌উমনি কিছু লাগব। আমারে ডাকতেন কষ্ট করতে গেলেন কেন?’

বর্ষা ওর ভয় পাওয়া চেহারা দেখে সন্দেহ করলো আরো বেশি। কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়ে ও করলো না। চলে এলো। এগারোটা বেজে গেছে ব‌ই রেখে বিছানায় শুয়ে ভাবছে তূর্য এখনো আজ আসছে না কেন? প্রতিদিন তো চলে আসে। ভেবে নিজেই চমকালো। ওই নিষ্ঠুর লোকটার কথা আমি ভাবলাম কেন? ছিঃ উনি আসলে আসুক না আসলে না আসুক আমার কি? উনি এখনো আসেনি আমার ই তো ভালো। প্রতিদিন জোর করে জরিয়ে ধরে ঘুমানো কিস করা এসব থেকে আমি নিস্তার পেলাম। মনকে এসব বলে বর্ষা চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু হায় কপাল ঘুম আসছে না। সারা বিছানায় গড়াগড়ি খেয়েও ঘুম চোখে আনতে পারলো না। কেমন জানি খালি খালি লাগছে। ঘুম আসছে না। বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো বর্ষা। যাকে সব চেয়ে ঘৃণা করে। যার কাছে থাকলে নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে হয় এখন কিনা তার অনুপস্থিতিতে তাকে তীব্র মিস করছে ছিঃ
নিজের উপর রাগ হচ্ছে। তূর্য এর বুকে ঘুমাতে ঘুমাতে বদ অভ্যাস হয়ে গেছে দেখছি।

নিজেকে কঠিন ভাবে বকে শুয়ে পরলো। তাও ঘুম হলো সারা রাত জেগে পার করতে হলো। সকালের দিকে ঘুমিয়ে ছিলো। সকালে উঠে তূর্য কে আশেপাশে খুঁজতে লাগলো। না পেয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। তূর্য কে মিস করলেও পাত্তা দিলো না। দুইদিন তূর্য বাসায় এলো না। না চাইতেও বর্ষা ওই নিষ্ঠুর পাষাণ লোকটাকে মিস করেছে। আবার সাথে সাথে মনকে ধমক দিয়ে বলেছে,

‘ ছিঃ বর্ষা ওই লোকটাকে তুই মিস করছিস কি করে যার জন্য তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে কেন মিস করছিস? তার কিছু হলে তোর কি কিছু না তোর। লোকটা মরে গেলে তো তুই বেঁচে যাবি!’

তূর্য এর মরার কথা ভাবতেই বুকটা ধুক করে উঠলো ওর। আমি বোধহয় একমাত্র স্ত্রী যে নিজের স্বামীর মৃত্যু কামনা করলাম। যত‌ই খারাপ হোক তার মৃত্যু আমি চাইতে পারি না। নিজেকে বকে আবার তূর্য এর সুস্থতা কামনা করলো বর্ষা।
যে মানুষটার থেকে দূরে থাকতে চেয়ে আজ মানুষটা দুইদিন চোখের আড়াল হতেই বর্ষা তার জন্য ছটফট করছে।

তূর্য বাসায় এলো দুইদিন পর রাতে বর্ষা ব‌ই খুলে তখন উদাস হয়ে তূর্য এর কথাই ভাবছিলো। ধ্যান ভঙ্গ হলো ঘাড়ে কারো কোমল স্পর্শ পেয়ে। ভয় পেয়ে যায় বর্ষা চিৎকার করতে যাব কিন্তু পরিচিত একটা কন্ঠ স্বর শুনে চুপ করে যায় বর্ষা।

‘ বর্ষা মনি।’

তূর্য এর কথা শুনে কেঁপে উঠে বর্ষা। বর্ষা তড়িৎ গতিতে পেছনে ফিরে তূর্য এর দিকে তাকায়। আর ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,

‘ আপনি দুইদিন বাসায় আসেন নি কেন? কোথায় ছিলেন? জানেন আমি কতো চিন্তা করেছি।’

উত্তেজিত হয়ে কি থেকে কি বলে দিয়েছে বর্ষা নিজেও জানে না। তূর্য বর্ষার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বর্ষা ওর জন্য চিন্তা করেছে ভাবা যায়। কানে ভুল শুনলো না তো।
তারপর কি যেন ভেবে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো।

তূর্য বর্ষার কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিয়ে বললো, ‘ আমার ব‌উ আমার জন্য চিন্তা করছে। এটা আমি কি শুনলাম বর্ষামনি! কানে ভুল শুনলাম না তো?’

বর্ষা কথা বলে নিজেই চমকে উঠেছে। উত্তেজিত হয়ে কি‌ বলে ফেললো আল্লাহ।

‘ ছাড়ুন আমাকে অসভ্য বাজে লোক।’

‘ বর্ষা মনি কি এই অসভ্য বাজে লোকটার প্রেমে পরে গেলো নাকি? ভালোবেসে ফেললে এখন কি হবে?’

বলতে বলতে বর্ষার কানে চুল গুজে দিলো। বর্ষা ধাক্কা দিয়ে তূর্য কে সরিয়ে নিলো নিজের থেকে আর বললো, ‘ আমি আপনাকে ভালোবাসবো অসম্ভব। একটু চিন্তা করেছি সেটা ভালোবাসা ভেবে ভুল করবে না। মানুষ হিসেবে চিন্তা করেছি এছাড়া আপনার কিছু হলে আমার কিছু যায় আসে না।আপনি মরে গেলেও আমার চোখ থেকে জল বের হবে না উল্টা আমি খুশি হবো। আপনার মতো চরিত্রহীন লম্পট লোকের জন্য আমি চিন্তা ও করবো না আর কখনো ।’

রাগে গজগজ করতে করতে বর্ষা বেরিয়ে এলো রুম থেকে। আর তূর্য হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বুকে ব্যথা করছে ওর। বর্ষা বুকে ধাক্কা দিয়েছে তাই আঘাণ পাওয়া স্থানে আবার আঘাত পেয়েছে তূর্য। কিন্তু তার থেকেও বেশি আঘাত করেছে বর্ষার কথায়। শার্ট খুলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলো ব্যান্ডেজ এর ভিতরে থেকে ব্লিডিং হচ্ছে। দরজার আড়ালে থেকে বর্ষা চুপচাপ দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখলো।

#চলবে…..