তুমি হাতটা শুধু ধরো ২ পর্ব-৩০+৩১

0
403

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ৩০
#Jhorna_Islam

সোহার ঘুম ভেঙে যায় আড়মোড়া ভেঙে পিটপিট করে চোখ খুলে আশেপাশে তাকায়।কিছু সময়ের জন্য সে ভুলেই গিয়েছিলো সে হাসপাতালে আছে।

তারপর আস্তে আস্তে সব মনে হয়। ক্যাবিনে সে ছাড়া আর কেউ নেই। একা একা ভালো লাগে না সোহার।তাই আস্তে করে নোহাকে ডাক দেয়। কয়েকবার ডাক দিয়ে ও কোনো সারা শব্দ পায় না।

এবার মা,বাবা কে ডাক দেয় ওদের ও কোনো খবর নেই। শরীরটা খুবই দূর্বল।অনেক কষ্টে শোয়া থেকে উঠে বসে।একেক করে সকলকেই ডাকে কারো কোনো খবর নেই।
এবার সোহার ভিতর থেকে কান্নারা ঠেলে বেরিয়ে আসে।

বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,,তোমরা কোথায় চলে গেলা আমার ভালো লাগছে না। আম্মু, বড় ফুপি এই আপু।বলেই এবার শব্দ করে দুই হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠে।

দায়ান তখনই ক্যাবিনে প্রবেশ করে। সোহার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা মুখ ঢেকে কাদছে।দৌড়ে সোহার কাছে যায়।

বেডের উপর বসে সোহাকে নিজের সাথে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,, এই পা/গলি কি হয়েছে কাঁদছো কেনো? খারাপ লাগছে? কোথাও কষ্ট হচ্ছে বলো আমায়।

সবাই কোথায় চলে গেছে? কখন থেকে ডাকছি কেউ সারা দিচ্ছে না। আমার একা একা ভালো লাগছে না।

সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।তুমি ঘুমোচ্ছিলে তাই বলা হয়নি। সবাই খুব ক্লান্ত ছিলো রেস্ট নেওয়ার দরকার নয়তো ওরা ও অসুস্থ হয়ে যাবে। তাই আমিই জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছি।

আমি বাড়ি যাবো।এখানে আমি থাকবো না।আমি একদম সুস্থ আছি।আমায় বাড়ি নিয়ে চলুন।

যাবো তো কালই আমরা চলে যাবো। এখানে থাকতে হবে না। শুধু আজকের রাতটা একটু কষ্ট করো। ভ’য় পেয়ে ছিলে একা একা?

আ’ম সো স’রি পাখি।তুমি ঘুমোচ্ছিলে বলে আমার ক্যাবিনে গিয়েছিলাম একটু।আর যাবো না ঠিক আছে? এই যে তোমার পাশে থাকবো।

সোহা দায়ানের থেকে সরে এসে বালিশে হেলান দিয়ে বসে চুপচাপ অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে।দায়ান সোহার কাজে নিঃশব্দে হাসে।পা’গলিটার অভিমান এখনো শেষ হয়নি।

ঠিক তখনই দরজায় কেউ ন’ক করে।

দায়ান তাকিয়ে দেখে নার্স খাবারের প্লেট নিয়ে দাড়িয়ে আছে। দায়ান অনুমতি দেয় ভিতরে আসার।নার্সটা খাবারের প্লেট এনে টেবিলের উপর রাখে।তারপর সোহার কাছে এগিয়ে যায় খাইয়ে দেওয়ার জন্য।

সোহা খাবারের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কোচকে ফেলে। এসব কি ছিঃ ইয়াক আমি এসব খাই না। এইসব ঘাস পাতা সরান আমার সামনে থেকে। আমি এসব একদম খাবো না।

দায়ান নার্সকে উদ্দেশ্য করে বলে,,আপনাকে খাইয়ে দিতে হবে না। আমিই খাইয়ে দিবো।তারপর নিজেই প্লেট টা হাতে তুলে নেয়। এক চামচ সোহার মুখের সামনে ধরে।সোহা মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারপর নার্সের দিকে চোখ যায়।মেয়েটা দায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।

সোহার রা’গ উঠে যায়। দাঁত কটমট করে বলে,,,আপনি আমাকে খাবার খাওয়াতে এসেছেন? নাকি নিজে চোখ দিয়ে খেতে এসেছেন?

নার্স টা হকচকিয়ে তারাতাড়ি দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। দায়ান নার্সটার দিকে তাকিয়ে বলে,, আপনি যান আপনাকে এখানে আর প্রয়োজন নেই।নার্সটা তারাতাড়ি মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায়।

খেয়ে নাও পাখি প্লিজ। তুমি তো একটু অসুস্থ তাই এসবই খেতে হবে। সুস্থ হয়ে যা খেতে চাইবে তাই খাওয়াবো।প্লিজ খেয়ে নাও।

আমি খাবো না খিদে নেই এগুলো সরান আমার সামনে থেকে।

কাল রাতে কিছু খাওনি।আজ সারাদিন ও তোমার কিছু খাওয়া হয়নি।আবার বলছো খিদে নেই প্লিজ পাখিটা খাও।দেখো আমিও তোমার মতো কাল থেকে না খেয়ে আছি।প্রচুর খিদে লেগেছে আমার।তুমি না খেলে আমারও খাওয়া হবে না।

আর আমি খাবোওনা তুমি না খেলে।
সোহা আড় চোখে দায়ানের দিকে তাকায়। মুখ টা শুকিয়ে আছে। সোহা না খেলে যে দায়ান ও খাবে না সেটা সে বোঝে গেছে।
তাই কিছু সময় ভেবে বলে,,ঠিক আছে খাচ্ছি কিন্তু পুরো টা খাবো না।
দায়ান সোহার কথায় খুশি হয়ে যায়। সে দেখা যাবে তুমি আগে খাওয়া তো শুরু করো।তারপর জোর করে পুরো খাবার সোহাকে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়।

—————–
পরের দিন সকাল সকাল ই সোহাকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে দায়ান।
সেই থেকে যে লাপাত্তা হয়েছে সোহা দায়ানের সামনেই পরছেনা।হয় ওর মায়ের আঁচল ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে নয় দায়ানের মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকছে।

দায়ান সোহার কাছে আসলেই এড়িয়ে যায় নয়তো ঘুমের অভিনয় করে পরে থাকে।

দায়ান সোহাকে দেখলেই স’রি বলে। কিন্তু সে পাত্তাই দেয় না।

সোহা দায়ানকে পাত্তা না দিলেও দূর থেকেই সোহার খাওয়া দাওয়ার উপর ন’জর রাখছে। সকলকে বলে দিয়েছে তাকে যেনো হাসি খুশি রাখে।

সোহার খাওয়া শেষ হলেই ঠিক টাইমে দায়ান ঔষধ নিয়ে হা’জির হয়। সোহা অন্য দিকে তাকিয়ে দায়ানের হাত থেকে ঔষধ খেয়ে নেয়।

এমন করেই চলছে প্রতিদিন। তারপর হুট করেই দায়ান বলে উঠে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার কোনো দরকার নেই। যা করার যেনো করে আজ থেকেই দায়ানের রুমে যেনো শিফট করা হয় সোহাকে।

সোহা হা করে দায়ানের দিকে তাকিয়ে রয়। কেমন ঠোঁট কাটা লোক।কিভাবে বলে দিলো তাকে যেনো লোকটার রুমে শিফট করে। লজ্জা করলো না?

পরিবারের লোক দায়ানের কথায় আপত্তি করে নি।তারা পারিবারিক ভাবেই ওদের সব কিছু শে’ষ করে।সোহা অনেক বলেছে কিন্তু তার কথা কেউ শুনেনি।

তাই রা’গ করে কারো সাথে সে কথা বলছে না। চুপচাপ নিজের রুমে বসে আছে। এখানে বসে থাকলেই কি নোহা সব জামা কাপড় জিনিস পত্র বিকেলেই দায়ানের রুমে রেখে এসেছে।

সোহা তো অন্য ভ’য় পাচ্ছে। কাল তার অপারেশন সবাই বললেও ছোট্ট একটা অপারেশন তার মন মানছে না। মনটা খালি কু ডাকছে। অজানা ভয়ে ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠছে।এই কয়দিন দায়ানের থেকে দূরে থাকলেও তার ভালোবাসার গভীরতা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।

দায়ানের কথা ভাবলে বুক টা কেঁপে ওঠে। লোকটা তার প্রথম ভালোবাসা হারিয়েছে।এখন সোহা কে ভালোবাসে।যদি সোহার ও কিছু একটা হয়ে যায়। তাহলে লোকটা তো বাঁচবেই না।হয়তো পা’গল হয়ে যাবে।

তাইতো আরো বেশি করে দায়ানের থেকে দূরে থাকতে চাইছে সোহা।কিন্তু বেহায়া মন তো মানে না।দায়ানের কাছে দৌড়ে গিয়ে দায়ানের প্রশস্ত বুকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে। বলতে ইচ্ছে করে আপনার এই বু’কের ভিতর আমায় ঢুকিয়ে রাখুন।আমি কোথাও যেতে চাই না আপনাকে ছেড়ে। আমার যে বড্ড ভ’য় করছে। আপনার সাথে আমি অনেক অনেক বছর পথ চলতে চাই।
একসাথে হাতে হাত রেখে জীবন টা পাড় করতে চাই।আমায় শক্ত করে ধরে রাখুন তো একদম ছাড়বেন না।

কিন্তু কিছুই বলা হয় না। এই কয়দিনে এমনিতেই দায়ানের মুখ টা শুকিয়ে গেছে। খাওয়া দাওয়া আর ঘুম যে কিছুই ঠিক মতো করছে না দেখেই বোঝা যায়।

সোহা এসব ভেবে মুখ চেপে কেঁদে উঠে। কেনো সে লোকটার জীবনে আসতে গেলো যদি নাই বাঁচতে পারে এক সাথে। আরো কেনো আগে জানতে পারলো না তাহলে দায়ান কে নিজের অনিশ্চিত জীবনের সাথে কিছুতেই জড়াতো না। সোহার কিছু হয়ে গেলে লোকটা মরেই যাবে।

সোহার হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। দৌড়ে ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে যায় সোহা।পানির টে’প জোরে ছেড়ে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। মাঝে মাঝে নিজের ভিতর টা হালকা করার জন্য জোরে জোরে কাঁদা দরকার।প্রায় অনেক সময় নিয়ে সোহা বাথরুমের দেয়ালে হেলান দিয়ে কাঁদে। মনটা কিছু টা হালকা হলে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বেরিয়ে আসে। হাতে টাওয়াল নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের উপর চোখ যায়। একটা কাগজ রাখা।

কৌতূহল বসত এগিয়ে গিয়ে কাগজ টা হাতে তুলে নেয়।

“একটু ছাদে আসবে? তোতাপাখি প্লিজ একটু আসো।”

দায়ান তাকে ছাদে কেনো যেতে বলছে? লোকটা কেন এমন পা’গলামো করে সোহা তো আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না।লোকটা কেনো বুঝার চেষ্টা করে না।

প্রায় অনেক সময় বসে থেকেও দায়ানের ডাক উপেক্ষা করতে পারে নি সোহা। দৌড়ে ছাদে চলে যায়।

ছাদে গিয়ে বেশ অবাক হয় পুরো ছাদ বাহারি মরিচা বাতিতে লাইটিং করা।কতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। নানান ধরনের ফুল আর বেলুন দিয়ে ডেকোরেট করা হয়েছে সব কিছু। সোহা অবাক হয়ে চারপাশ দেখে।

হঠাৎ করেই সব আলো নিভে যায়।সোহা এতে কিছুটা হকচকিয়ে যায়। তারপর আবার আলো জ্বলে উঠে।

সোহা সামনে তাকিয়ে দেখে তার সামনে দায়ান হাঁটু গেড়ে বসে আছে। হাতে ফুলের তোরা।

দায়ান সোহাকে মায়াময় কন্ঠে ডেকে উঠে,, সোহা,,,

সোহা দায়ানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।

আমি জানি না কিভাবে প্রপোজ করতে হয়।এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে ও পারি না। তাই সোজাসাপটা বলছি।

“আই লাভ ইউ ”

আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।তোমার সাথে আমার জীবন টা কাটাতে চাই।তুমি আমার এই ছন্ন ছাড়া জীবনে এসে আমাকে আবার নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছো।আমি আমার এই পাখি কে অনেক ভালোবাসি।

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি সোহা।

হুমম ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ মানে? আমি তোমাকে ভালোবাসি তো।

এই জন্যইতো বললাম ধন্যবাদ। আপনি আমাকে ভালোবাসেন তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ভালোবাসার বিপরীতে কেউ ধন্যবাদ বলে? প্লিজ উত্তর টা দাও না। তোমার মুখ থেকে উত্তর টা শোনার জন্য আমার কান দুটো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

ভালোবাসিতো পাখি।

#চলবে,,,,,,

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৩১
#Jhorna_Islam

দায়ান সোহার মুখ থেকে ভালোবাসার কথা শুনার জন্য
অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে চাতক পাখির মতো।

সোহা মাথা নিচু করে নির্বাক ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে। ওড়নার শেষ প্রান্ত হাতের মুঠোয় নিয়ে পেঁচাচ্ছে আর শুকনো ঢুক গিলছে।

দায়ানের সেই মোহনীয় আকুলতা ভরা চোখের দিকে তাকানোর একদম সাহস নেই সোহার।কি করে সে লোকটাকে উপেক্ষা করবে।কি করে সারা না দিয়ে থাকবে।সে যে নিজেও লোকটাকে পা’গলের মতো ভালোবাসে। নিজের মনে মনে এখনই কতোবার দায়ান কে ভালোবাসার কথা বলে ফেলেছে। অথচ ঠোঁট নাড়িয়ে সশব্দে উচ্চারণ করতে পারছে না।

কথা গলায় আটকে আছে মুখ দিয়ে একটা শব্দ ও বের করতে পারছে না।

দায়ান অনেক সময় নিয়ে সোহাকে অনুরোধ করে প্রপোজের রিপ্লাই দিতে।ঐদিনের ঘটনার জন্য আজও বার কয়েক স’রি বলেছে। এখন আর নিজেও কিছু বলছে না। চুপ করে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে।

এটাই ভাবছে তার ভালোবাসার চেয়ে সোহার অভিমান বেশি হয়ে গেলো। তার দিকে চোখ তুলেও তাকাচ্ছে না। বুক চিরে একটা দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে বলে ঠিক আছে তুমি যেতে পারো কিছু বলতে হবে না তোমায়।অনেক রাত হয়ে গেছে গিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পরো।নয়তো অসুস্থ হয়ে যাবা।

কথাগুলো সোহাকে বলেই হাতের ফুলের তোড়া টা দূরে ছুড়ে মারে।তারপর উঠে যেতে নেবে এমন সময় ঝড়ের গতিতে সোহা ছুটে এসে দায়ানের বু’কে ঝাপিয়ে পড়ে।

হুট করে দায়ান তাল সামলাতে না পেরে পিছনের দিকে হেলে পরে যেতে নেয়।দুই হাত ফ্লোরে রেখে নিজেকে পরে যাওয়া থেকে আটকায়।

সোহা দায়ানকে শক্ত করে আ’ষ্টে পি’ষ্টে জড়িয়ে ধরে। যেনো দায়ান ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে।

হঠাৎ করে সোহা দায়ানকে এমন ভাবে ধরায় দায়ান কিছু টা হকচকায়।

সোহা দায়ানের গলায় মুখ রেখে কেঁদে উঠে। আমি ও আপনাকে খুব ভালোবাসি দায়ান।খুব খুব ভালোবাসি।নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। এখন থেকে না সেই শুরু থেকেই আপনাকে ভালোবাসি।

দায়ান সোহার মুখে ভালোবাসার কথা শুনে চোখ বন্ধ করে শুকনো ঢুক গিলে। নিজের জীবন টা এখন স্বার্থক মনে হচ্ছে। নিজেকে সামলে সোহাকে নিয়ে নিচেই বসে পরে। তারপর দুই হাত দিয়ে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয় তার তোতাপাখি কে।সোহা এখনো কেঁদে চলেছে।

ভালোবাসার কথা বলে এমন ভাবে কেউ কাঁদে?
এতো ভালোবাসিস আগে কেন বলিস নি পা’গলি?

সোহা কাঁদতে কাঁদতে দায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,, আমি খুব খারাপ তাই না?

কে বলেছে এসব কথা? তুমি খারাপ হবে কেনো? তুমিতো আমার ভালো মিষ্টি একটা বউ।

আমি আপনাকে এই কয়দিন অনেক কষ্ট দিয়েছি।

বেশ করেছো।আমি অপরাধ করেছি তুমি শাস্তি দিয়েছো।দরকার পরলে আবার দিবা।আমি আমার মহারানীর দেওয়া শাস্তি মাথা পেতে নেবো।

সোহা দায়ানের গালে দুই হাত রেখে বলে,,আপনি এতো ভালো কেনো?

পা’গলি আমার বলেই দায়ান সোহার কপালে নিজের অধর ছোয়ায়।

সোহা চুপচাপ দায়ানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। কালকের অপারেশনের কথা মনে হতেই আবার ডুকরে কেঁদে উঠে।

আবার কেনো কাদছো?

আমার খুব ভ’য় করছে।

কিসের ভ’য়? এইযে আমার বুক পাঁজরে শক্ত করে ধরে রেখেছি আর কিসের ভ’য় তোমার?

কালকের অপারেশনে যদি কিছু হয়ে যায়। আপনার কাছে আমি যদি আর না ফিরতে পারি।

সোহার কথা শুনে দায়ান ধমকে উঠে এসব কেমন কথা? সামান্য একটা অপারেশন হবে।তুমি এসব কি আজেবাজে কথা ভাবছো?

জানিনা গো আমার মন টা কু ডাকছে। মনে হচ্ছে আপনাদের সাথে আর থাকতে পারবোনা। আমি আপনাদের ছেড়ে যেতে চাই না। আমি বাচতে চাই।আমি আপনার সাথে বাঁচতে চাই।প্লিজ কিছু করেন আমার কতো স্বপ্ন আছে আপনাকে নিয়ে সেগুলো এখনও পূরণ হয়নি।

তুমি এসব কি ভাবছো? বাঁচবে তো আমরা এক সাথে বাঁচবো। তোমার সব ইচ্ছে আকাংক্ষা সব পূরণ করবো।কিছু হবে না । তুমি মনে সাহস রাখো।আজেবাজে কথা একদম ভাববে না।

আল্লাহর উপর একটু ভরসা রাখো পাখি।কিছু হবে না ভ’য় পেও না।আমি তোমার সাথে সবসময় আছি।এসব ভাবনা বাদ দিয়ে এখন প্ল্যানিং করতো আমরা হানিমুনে কই যাবো।

কোন দেশে যেতে চাও? হুু বলো বলো!

হানিমুনের কথা শুনেই সোহা লজ্জা পেয়ে যায়। দায়ান কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,, জানিনা।

ওমা এটা আবার কেমন কথা? জানবানা কেনো? জানতে হবে তো সিলেক্ট করো।

এসব বাদ দেন তো পরের টা পরে দেখা যাবে।

এইই তুমি মুখ তুলে তাকাও তো আমার দিকে তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো বাই এনি চান্স?

বলে সোহার মুখ টা নিজেই তুলে।সোহা চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে।জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ে।

দায়ান নিজের মুখ টা এগিয়ে এনে সোহার ঠোঁটের কোণে চুমু খায়। সোহা দায়ানের পিঠের জ্যাকেট খামচে ধরে। দায়ান ও কিছু টা ঘোরে চলে যায় সোহার অধর নিজের অধরের সাথে মিলিয়ে দেয়।তারপর হঠাৎ সোহার অসুস্থতার কথা মাথায় আসতেই ছেড়ে দেয়।মেয়েটার শরীরে এখন কিছুতেই ধকল দেওয়া যাবে না।

তোমার শীতের পোশাক কই? শীত করছে না?

একটু একটু করছে তবে খুব ভালো লাগছে শান্তি লাগছে এখানে থাকতে। দায়ান নিজের জ্যাকেট খুলে সোহাকে দিতে নেয় পরে কি যেনো ভেবে জ্যাকেটের চেইন খুলে সোহাকে বুকে নিয়ে জ্যাকেট দিয়ে আগলে নেয়।

আজ তোমার জন্য ক্যানডেল লাইট ডিনারের ব্যবস্থা করেছি আসো বলে সোহা কে কোলে করে উঠে চেয়ার টেনে বসাবে সোহা বলে আমি এখানে বসবো না।এতোসময় যেমন ভাবে ছিলাম তেমন ভাবেই বসবো।

দায়ান আর কথা বাড়ায় না সোহাকে নিজের কোলে নিয়ে একটা চেয়ারে বসে পরে।

আজও এই ঘাস পাতা?

হুু সুস্থ হও দেন সব খেতে পারবা আর কয়েকটি দিন।

যদি না হই?

সোহা বলেই ধমক দিয়ে উঠে দায়ান।

ঠিক আছে আর বলবো না । নিন তারাতাড়ি খাইয়ে দিন তো খিদে লেগেছে।

সোহার খাওয়া শেষ হলে টেবিলের উপর থেকে ঔষধ নিয়ে খাইয়ে দেয়। আগেই এনে রেখেছিলো দায়ান।

আমি আপনাকে খাইয়ে দেই?

এটা আবার জিজ্ঞেস করা লাগে? দাও!

সোহা খুশি মনে দায়ান কে খাইয়ে দেয়। দায়ান ও তৃপ্তি সহকারে খেতে থাকে সোহার হাতে।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে সোহা কে কোলে করেই নিজের রুমে নিয়ে আসে দায়ান।বিছানায় সুন্দর করে শুইয়ে দিয়ে কম্বল টেনে দেয় শরীরে।অনেক রাত হয়ে গেছে চুপটি করে ঘুমাও তে।কাল আবার সকাল সকাল উঠতে হবে।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

সোহার তো আজ কোনোভাবেই ঘুমে ধরবে না। তার মনে যে হাজারো ভ’য় চিন্তা। এসব ভাবতে ভাবতেই দায়ান ফ্রেশ হয়ে চলে আসে। এখনো ঘুমোও নি কেন?বলে নিজের সোহার পাশে শুয়ে পরে।

সোহা কোনো জড়তা ছাড়াই বলে উঠে,, একটু ভালোবাসুন না আমায়। এই সুখ টুকু আপনাকে দিয়ে যেতে চাই।পরে আর আমার কোনো আফসোস থাকবে না।

দায়ান সোহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। তোমাকে কিন্তু আমি এবার মাইর লাগাবো। আগে সুস্থ হও সব হবে।

কিন্তু,,,,,,,,,

কোনো কিন্তু না।ঘুমাও।

আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন না।
দায়ান হাতের বাঁধন আরেকটু শক্ত করে ।

আরেকটু শক্ত করে ।

ব্যাথা পাবে তো।

আপনার বুকের ভিতর আমায় লুকিয়ে রাখুন।

এমন পাগলামি করে না পা’গলি ঘুমাও।এই যে আমার বুকের মাঝে আগলে রেখেছি তোমায়।

সোহা দায়ানের বুকে মাথা রেখে একটা সময় ঘুমিয়ে যায়। দায়ানের চোখে ঘুম নেই।তারও যে অজানা ভয়ে বুক টা বারবার কেপে উঠছে।

————————–
পরের দিন পরিবারের সকলেই সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দেয়। তারপর সোহাকে নিয়ে হাসপাতালে বেরিয়ে পরে। সোহা সেই যে দায়ানের হাত ধরেছে আর ছাড়েনি।
দায়ান ও ছাড়ানোর চেষ্টা করেনি।

অপারেশনের সব কিছু রেডি। সোহাকে নিয়ে যাওয়া হবে দায়ান ও থাকবে সাথে।এমন সময় ডাক্তার খান কে সোহা বলে উঠে,, আংকেল আমার একটা কথা আছে।

জ্বি মামুনি বলো।

আমি চাই না উনি আমার সাথে অপারেশন থিয়েটারে থাকুক।

সোহা কি বলছো তুমি পা’গল হয়ে গেছো? আমি তোমার সাথেই থাকবো।

তাহলে আমি অপারেশন করাবো না।

ঠিক আছে মামুনি তুমি যা চাইছো তাই হবে।

কিন্তু আংকেল?

সোহা যখন চাইছে না। তখন থাক।এখন ওকে এসব নিয়ে জোর করলে শরীরে প্রভাব পরবে।তোমার নিশ্চয়ই অজানা নয়। আমরা আমাদের সর্বোচচ দিয়ে চেষ্টা করবো। তুমি চিন্তা করো না।

তারপর সোহাকে নিয়ে ভিতরে চলে যায় দায়ান করুন চোখে সোহার দিকে তাকিয়ে রয়। একোণ শাস্তি দিচ্ছে মেয়েটা তাকে?

সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে উঠে,, আপনি কষ্ট পেলেও আমার যে কিছু করার নেই।অপারেশন থিয়েটারে আমার কিছু হয়ে গেলে আমি চাই না সেটা আপনি নিজের চোখে দেখুন বা সাক্ষী থাকুন।আমাকে মাফ করবেন দায়ান।বলতে বলতেই দুই চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।

হঠাৎ করেই দায়ান দৌড়ে এসে বলে,,স্যার দুই মিনিট দিন প্লিজ। ডাক্তার সম্মতি দিয়ে দায়ানকে সময় টা দিয়ে সরে যায়।

দায়ান সোহার কপালে চুমু খেয়ে বলে,,তোমার ডাক্তার তার ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে বুঝেছো? একদম ভ’য় পাবে না।

,সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি কিন্তু তোমার অপেক্ষা করবো।

আপনি পুরো নিব্বাদের মতো করছেন ডাক্তার।

আমার পাখি কে ভালোবাসলে যদি নিব্বাদের মতো হয় তাহলে তাই।তারপর দায়ান বেরিয়ে যায়। আড়ালে চোখের পানি মুছতে মুছতে।

সোহা ও দায়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদে। মনে মনে একটাই প্রার্থনা করে সে যেনো তার এই ডাক্তার টার কাছে ফিরে আসতে পারে।

#চলবে,,,,