তোমাকে নিয়েই গল্প পর্ব-৩৮

0
1106

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:৩৮
#জুনাইনাহ_তাসনিম

৪০.
সকালে বিয়ের কথা ওঠার পর থেকে দুই পরিবারের সবাই খুবই ব্যস্ত হয়ে গেছে।দুপুরেই সবাই শপিং এর জন্যে বের হয়েছিলাম,এখন রাত হয়ে গেছে।রাত ৯টাই বাসায় ফিরলাম আমি,মা,আপু আর মারিয়া(মারিয়া তো শোনা মাত্রই ওর ব্যাগ পত্র নিয়ে হাজির আমাদের বাসায়।ওর সেই ছোট্টবেলার বেস্ট ফ্রেন্ড মানে আমার বিয়ে বলে কথা।ও তো আসবেই,কিন্তু হটাত বিয়ে শুনে বেশ মন খারাপ করছিলো।তার নাকি অনেক প্লান ছিলো)।আপু কনে পক্ষ হবে আগেই বলে দিয়েছিলো।আকাশ ভাই বা ওই বাসার কেউ কোন আপত্তি করেনি।ওই বাসায় ও কেনাকাটা চলছে।
বাসায় ঢুকে,
–সূচী তুই বিয়ের শাড়ি কিনলি না কেন?(মারিয়া শপিং ব্যাগ গুলো সোফার ওপর রাখার সময় বলে)
–………
–কি রে কথা বলছিস না কেন??কিনলি না কেন বিয়ের শাড়ি?বিয়েতেও কি পুরাতন কুর্তি পাজামা পরবি?হাহাহহ(আপু বলে)
–না কুর্তি পরার প্লান তো নেই আপাতত।তবে বলা যাই না পরতেও পারি।আর শাড়ি?শাড়ি তো বাড়িতেই আছে শুধু শুধু আবার কিনতে যাবো কেন??
–বাড়িতে আছে মানে??(আপু বাম ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে বলে)
–হুম বাড়িতেই তো আছে।মা মায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া…
–কি হয়েছে?ষাড়ের মতো চিল্লাচ্ছিস কেন?(মা তার রুম থেকে আসতে আসতে বলে)
–মা মা বসো(আমি মার হাত টানতে টানতে এনে সোফায় এসে বসাই)
–ওরে বাবা এতো তাড়াহুড়া কিসের?কি হয়েছে?
–মা তোমার মনে আছে আমি ছোটবেলাই কি বলতাম?
–কি বলতিস ছোটবেলায়?
–এটাই যে আমি তোমার বিয়ের শাড়িটা পরে বিয়ে করবো।
–হ্যা বলতিস তো।তোর বয়স তখন ৪ কি ৫।আমি আমার আর তোর বাবার বিবাহ বার্ষিকী তে ওই শাড়িটা পরেছিলাম।আমাকে শাড়িটা পরা দেখেই তুই ছুটে এলি।তারপর কোন কথা ছাড়ায় শাড়িটা টেনে খুলে দিতে চাইলি।আমি তো শাড়ি ছাড়তে বলছি তুই তো শাড়ি ছাড়বিই না।খুব রেগে বললি,”মা,শাড়িটা থোলো থোল।এই শালিটা আমি আমাল বিয়েতে পলবো”।হাহাহহাহ তুই খ কে থ আর র কে ল বলতিস,হাহহাহহাহহহহ।কি নাছোড়বান্দা মেয়ে ছিলি সেদিন সত্যিই ওই শাড়িটা পাল্টিয়ে ছেড়েছিলি আমাকে।কিন্তু এতো দিন পর এই কথা কেন মা?
–কারন আমার বিয়ে মা।আর শাড়িটা যে আমার চাই।
–মানে টা কি সূচী?তুই বিয়েতে ওই শাড়িটা পরবি?(আপু পানি খাওয়া বাদ দিয়ে বলে)
–হ্যা মা।কেন পরা যাবে না?
–সূচী তুই এখনকার মেয়ে।এই সময়ে এসে তুই ওই ২৫ বছর আগের ৭০০ টাকার ক্যাটকেটে কমলা রং এর বেনারসিটা পরবি?লোকে কি ভাববে বল তো?(পানির গ্লাস টেবিলে রাখতে রাখতে)
–লোকে কি ভাবলো তাতে আমার বয়েই গেছে।আমি শাড়িটা পরবো মানে পরবো।ফাইনাল…

আপু মা অনেকবার বুঝানোর পর আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে এক চুল পরিমানও নড়লাম না।বাধ্য হয়ে মা রাজি হলো।
–থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ সো মাচ মা।লাভ ইউ(আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বলছিলাম)
–আচ্ছা আচ্ছা বাবা হয়েছে।কিন্তু তুই যে ওই শাড়িটা পরতে চাচ্ছিস তা অভ্রর কাছে শুনেছিস একবারও?(মা বলে)
–ওনার কাছে কি শুনবো আবার?
–ওনার কাছে কি শুনবি মানে?সূচী ও তো বর ওর ডিসিশনের ও তো দরকার নাকি??
–আমি তো এভাবে ভেবে দেখিনি।
–তা ভাববে কেন?তুমি একটা গবেট মেয়ে আমার।
–মা!একদম আমাকে গবেট বলবে না।আর শুনিনি ঠিক আছে শুনে নেবো।উনি আশা করি না করবে না।আমি অনেক ক্লান্ত,রুমে যাচ্ছি।এক গ্লাস ঠান্ডা অরেঞ্জ জুস করে পাঠাও।

আমি ব্যাগ পত্র নিয়ে রুমে চলে এলাম।রুমে এসে শপিং ব্যাগগুলো বিছানার ওপর রেখে ওয়াশরুমে গেলাম ফ্রেশ হতে।ফ্রেশ হয়ে এসে মোবাইলটা ব্যাগ থেকে বের করে অভ্রকে কল দিলাম।কিছুক্ষন রিং হওয়ার পর,
–হ্যা পাখি বলো।ভালোই হয়েছে তুমি কল দিলে।আমিও তোমাকে কল দিতে যাচ্ছিলাম।
–আমাকে কল দিতে যাচ্ছিলেন,কেন?
–আরে পাঞ্জাবির কালার ডিসাইড করার জন্যে।কি কালার কিনবো কিছুই বুঝতে পারছি না।তোমাকে তো কয়েকটা পাঞ্জাবি পরে পিকচারসও হোয়াটসঅ্যাপ করছি।দেখেছো কি?
–পিক পাঠায়ছেন?দেখি নাই তো।আচ্ছা চেক করে জানাচ্ছি।
(আমি ফোনটা হোল্ড করেই হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকলাম।মোট চারটা ছবি পাঠায়ছে অভ্র।সাদা,অফ-হোয়াইট,সবুজ আর মেরুন মোট চারটা রং এর।আমি সবগুলো ভালো করে দেখলাম।সবগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে কিছুক্ষন পপর্যবেক্ষণ করার পর মেরুন রং এর পাঞ্জাবিটা মনে ধরলো আমার।আমি হোয়াটসঅ্যাপ থেকে বেরিয়ে আবার কথা বলা শুরু করলাম)
–হ্যালো
–হ্যা পাখি।দেখা শেষ?
–হুম
–আচ্ছা কোনটা নিবো তাহলে?
–আমার কাছে তো মেরুনটা বেশি ভালো লাগছে।
–মেরুন?ওকে ওইটাই নিচ্ছি তাহলে।আকাশ ভাই এইটা সিলেক্টেড।এইটাই প্যাক করাতে দে(অভ্র আমার সাথে কথা বলার মাঝেই আকাশ ভাইকে পাঞ্জাবিটা প্যাকিং করাতে পাঠাতে বলে)
–পাশে আকাশ ভাইয়া?
–হ্যা ভাইয়ের সাথেই আছি।আচ্ছা পাখি তুমি কি কালারের শাড়ি কিনলে?আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে নিজে একটা শাড়ি কিনে দেবো কিন্তু মা বললো তোমার পছন্দ মতোই শাড়ি কিনা হবে।এইজন্যেই তো টাকা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।ফুপিও তো তাই আমার জামাকাপড়ের টাকা পাঠিয়ে দিলো।আচ্ছা ৫০ হাজারে তোমার শাড়ি হয়েছে তো?নাকি আরো টাকা পাঠাবো?
–আ আসলে।আসলে আমি….(আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।ওনাকে যদি এখন বলি শাড়ি আমি কিনিনি।উনি কিভাবে রিয়াক্ট করবেন জানি না।যদি রাগ করেন,তাই বেশ ভয় করতে শুরু করলো)
–কি হয়েছে পাখি?এনি প্রবলেম?
–আসলে আমি…(আমার কথা শেষ করার মাঝেই আপু এলো জুস নিয়ে।আমি ফোনে কথা বলছি দেখে আপু আমার বিছানার পাশের ছোট্ট সাইড টেবিলটাই রাখলো।রুম থেকে বের হওয়ার সময় ইশারায় জিজ্ঞেস করলো,”কে?”।আমিও ইশারাতেই বললাম,”অভ্র”।আপু কথা বলতে বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো)
–হ্যালো,সূচী..
–জী।সরি আপু এসেছিলো।
–না না ইট’স ওকে।তুমি কি যেন বলতে চাচ্ছিলে?
–হ্যা এক মিনিট(আমি এক মিনিট বলেই টেবিলের ওপর থেকে জুসের গ্লাসটা তুলে এক ঢোকে জুসটা শেষ করে গলা ভিজিয়ে নিলাম।তারপর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফোন কানে দিলাম)দেখুন আমি এখন আপনাকে যা যা বলবো আপনি আগে চুপচাপ শুনে নেবেন তারপর রাগ,অভিমান যা দেখানোর দেখিয়েন কিন্তু প্লিজ আমার কথা শেষ হওয়ার আগে কোন প্রশ্ন করবেন না।বলেন রাজি?
–কি এমন কথা যে আমি রাগ,অভিমান করবো?
–আহ!বললাম না কোন প্রশ্ন করবেন না।
–আচ্ছা বাবা সরি।বলো কি বলতে চাও.
–আমি আসলে কোন শাড়ি কিনিনি।আমার ছোটবেলা থেকেই খুব ইচ্ছা ছিলো আমি যখন বিয়ে করবো মায়ের বিয়ের শাড়িটা পরবো।হ্যা মানছি শাড়িটা অনেক পুরোনো।মাত্র ৭০০টাকা দাম,ক্যাটকেটে কমলা রং তাও মানছি।কিন্তু ওটা আমার ইচ্ছা ছিলো।এখনকার যুগের সাথে শাড়িটা যায়না।আমাকে হয়তো বউ সাজে ওই শাড়িটাই খুব বেশি গরজিয়াসও লাগবে না।পুরোনো শাড়িতে আপনার পাশে মানাবেও না।কিন্তু আমি শাড়িটা পরতে চাই।
-…….(অভ্র কোন কথা বললো না)
–আপনি রাগ করেছেন তাই না?আমি জানতাম আপনি রাগ করবেন।আমারই ভুল,আমিই বেশি বেশি ভেবেছিলাম।ঠিকই আপনার খারাপ লাগলো।অবশ্য লাগবে নাই বা কেন?কেই বা মেনে নেবে তার বউ ২৫ বছর পুরোনো একটা শাড়ি পরে বিয়েতে বসুক।এই মর্ডান যুগের সাথে তো সত্যিই শাড়িটা যাই না।আমি শাড়িটা পরবো না অভ্র ভাই আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি কোন কাজ কর
–সূচী,সূচী।রিলাক্স।হাহহাহাহহ…(অভ্র হাসতে শুরু করলো আমি তো কিছুই বুঝতেছি না)
–আপনি হাসছেন কেন?
–হাসছি তোমার কথা শুনে।পাগলি মেয়ে নিজে নিজেই বকে যাচ্ছো।বড্ড বেশি বোঝো তুমি।
–মানে?
–মানে আমার কোন আপত্তি নেই গাধী।তোমার সাজ পোশাক আমার কাছে কোন ম্যাটারই করে না।তোমার যা ইচ্ছা তুমি তাই পরো।আমার তো দরকার তোমাকে,সো তুমি কি পরলে বা না পরলে তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।
–সত্যি?
–৩ সত্যি।
–থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ সো মাচ অভ্র ভাই।আপনি ভাবতেও পারবেন না আমি কতোটা খুশি হয়েছি।
–খুশি হয়েছো ভালো কথা।কিন্তু এখনো ভাই বলে ডাকাটা কি খুব দরকার?
–হ্যা দরকার?
–কিন্তু কেন?
–আমার ইচ্ছা তাই।
–বাট পাখি
–আমি এখন রূপচর্চা করবো।বিয়েতে আমাকে যেন বেস্ট লাগে তাই এখন আর নো টক।টাটা..

আমি অভ্রর কোন কথা না শুনেই ফোন কেটে দিয়ে হাসতে শুরু করলাম।অবশ্য আমার বেশ ভালো লাগছে যে অভ্র কোন বাধাই দিলো না আমাকে শাড়িটা নিয়ে।

৪১.
–হ্যালো গাইজ।মিট আওয়ার লেইজি ব্রাইড মিস তাসনুভা আমিন সূচী।ওরফে মিসেস ইশরাক এহসান।

মারিয়া ফোন ক্যামেরা অন করে ভিডিও করছিলো আমাকে।আমি মুখের ওপর থেকে কাথা সরিয়ে কোনরকম এক চোখ খুলে একবার দেখলাম তারপর আবার কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।আমাকে আবার শুয়ে পড়তে দেখে মারিয়া আমার গায়ে এক চড় মেরে দিলো।
–এই সূচী ওঠ না।তোর বিয়ে আর তুই পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস।সেই ওরকম হলো “যার বিয়ে তার হুশ নেই,পাড়া পড়সির ঘুম নেই”।ওঠ না বাবু দেখ আমি সব ভিডিও করছি।আন্টি আমাকে বলেছে তোকে যেন উঠাই এবার।বাসায় তো সব ডেকোরেশন শুরু হয়ে গেছে।আর তুই এখনো ঘুমিয়েই যাচ্ছিস।কোন বউ এতো বেলা করে ঘুমায় বল তো?
–……..(আমি কোন কথাই বললাম না)
–তুই না কূম্ভকর্নের পাতানো বোন।এতো ঘুম যে কোথা থেকে আসে তোর বুঝি না।ওঠ না দোস্ত..

মারিয়ার কোন কথাই কাজ হলো না।আমি উঠলাম না।না পেরে ও চলে যেতে যাচ্ছিলো তখনি আমার মোবাইল বেজে উঠলো।আমি তাড়াতাড়ি কাথা সরিয়ে মোবাইল নিতে যাবো তার আগেই মারিয়া এসে মোবাইলটা নিয়ে নিলো,,
–ওহ হোওও বর ফোন দিয়েছে(মারিয়া চোখ মেরে দুষ্টু হাসি দিচ্ছিলো)
–মারিয়া মোবাইল টা দে আমাকে(আমি উঠে বসলাম।এখনো রিং হচ্ছে)
–দেবো না কি করবি?
–ভালো হবে না কিন্তু মারিয়া।
–কেন কেন?তুই ঘুমা না ঘুমা।এতোক্ষন তো খুব রিকুয়েস্ট করলাম উঠলিই না যেই বর কল দিলো সেই এক লাফে উঠে পড়লি।আমি ফোন দেবো না তোকে।আমিই কথা বলবো।

মারিয়া কল রিসিভ করে।
–হ্যালো পাখি
–আমি ওসব পাখি টাখি না।আমি আপনার পাখির বান্ধবি।
–ওহ মারিয়া।কেমন আছো তুমি?
–আমি ভালো আছি।কি দরকারে কল দিয়েছেন সেটা বলেন।
–উম সূচীকে ফোনটা একটু দাও না।ওর সাথে কথা ছিলো একটু।
–সূচী নেই,ঘুমাচ্ছে।
–এখনো ঘুমাচ্ছে?১১টা বেজে গেছে।
–হ্যা ও এখনো…

আমি মারিয়ার কথা শেষ করতে দিলাম না তার আগেই মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে জোর করে ওকে রুম থেকে বের করে দিলাম।
–হ্যালো
–হ্যা হ্যালো।মারিয়া যে বললো তুমি ঘুমাচ্ছিলে।
–না মিথ্যা কথা বলেছে।
–কিন্তু ও মিথ্যা কেন বলবে?
–আমি বলছি তাই।কিছু বলবেন?
–হ্যা।আচ্ছা আজকে তুমি হলুদের সময় কি আমাদের বাড়ি থেকে যেই শাড়িটা গেছে ওটা পরবে?
–হ্যা।কেন?
–না এমনিই।আচ্ছা শোন না,তুমি কিন্তু বেশি সাজবে না।বড়জোর চোখে একটু কাজল আর ঠোটে হাল্কা লিপস্টিক দিতে পারো।এর বেশি কিচ্ছু না।
–ঠিক আছে।
–আর হ্যা কাচা ফুলের গহনা পরবা প্লিজ।
–কিন্তু আমি তো ম্যাচিং করে আর্টিফিশিয়াল ব্রাইডাল গহনা সেট কিনে ফেলেছি।
–না না না।আমি ওতো কিছু জানি না।কাচা ফুলের গহনা পরবা তাই জানি।
–ঠিক আছে বাবা পরবো।
–পাখি আমার ফ্রেন্ডরা আসছে বাসায়।পরে কল দিচ্ছি বাই।তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নাও।
–আমি তো..
–জানি।ঘুমিয়েই ছিলে।হহাহাহহাহহহ।আচ্ছা রাখলাম।

উনি কল কেটে দিলেন।মারিয়ার ওপর আমার খুব রাগ হলো।ওর কি দরকার ছিলো ওনাকে আমার ঘুমের কথাটা বলার।উনি কি ভাবলো আল্লাহই জানে।

*দুপুর গড়িয়ে বিকেল,বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো।বাসা ভর্তি মানুষ এখন।আমিও রেডি।অভ্রর কথা মতোই সেজেছি আজকে।রেডি হওয়ার পর কিছু ছবি তুলে ওনাকে পাঠালাম।আমি ছবি পাঠানোর সাথে সাথে উনিও ওনার ছবি পাঠালেন।ওনার হলুদ অলরেডি হয়ে গেছে।বেশ কয়েকটা ছবি পাঠিয়েছেন।ছবিগুলো সব দেখে শেষ করার আগেই আপুরা এসে আমাকে নিচে নিয়ে গেলো।প্রথমে মা-বাবা হলুদ লাগালো তারপর এক এক করে সবাই হলুদ ছোয়ালো আমাকে।হলুদ পর্ব শেষে আপু আর মারিয়া আমার শাড়ি চেঞ্জ করিয়ে একটা লাল শারারা পরালেন।তারপর কিছু অর্নামেন্টস পরিয়ে মেহেদি দেয়া শুরু করলেন।সব গুলো অনুষ্ঠানই সীমিত পরিসরে হচ্ছে।তাও কিছু ছবির জন্যেই আবার ড্রেস চেঞ্জ করানো হলো আমাকে।মেহেদি দেয়া শেষে আমি বসেই ছিলাম।বাকিরা যে যার মতো ব্যস্ত।আমার খুব পানি পিপাসা লেগেছে।কিন্তু দুই হাত ভর্তি মেহেদি থাকাই গ্লাস ধরতে পারছি না।কাউকে যে ডাকবো সে উপায়ও নেই।আমি এদিক ওদিক কাউকে খুজতে লাগলাম তখনি কে যে আমার মুখের সামনে পানির গ্লাস ধরলো।আমি তাকাতেই দেখি সৌরভ পানির গ্লাস নিয়ে আমার দাড়িয়ে।আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।ও বললো,
–খেয়ে নে।
(আমি পানি খেলাম)
–থ্যাঙ্কস।
–……….

সৌরভ কোন কথা না বলেই পিছু ঘুরে চলে যেতে লাগলো।আমি বলে উঠলাম,
–বেশ আনন্দ হচ্ছে তোর,না?আমি চলে যাচ্ছি বাড়িটা একদম তোর একার।সকাল বিকাল ঝগড়াও হবে না কারো সাথে।যা ইচ্ছা তাই করতে পারবি,বাধা দেয়ার কেউ থাকবে না।তোর নামে মা কেউ নালিশও করবে না।মজাই মজা।
–…..(সৌরভ চুপ করেই রইলো)
–শান্তিতে থাকতে পারবি কিন্তু এবার থেকে।

সৌরভ আমার দিকে ফিরে তাকালো।ওর চোখে পানি টলমল করছে।মুখটাও কিরকম শুকনো লাগছে।আমি সৌরভকে আগে কখনো এইভাবে দেখিনি।মা-বাবার কাছে বকা খেলেও ওকে কোনদিন এতোটা আপসেট হতে দেখিনি।আমার বেশ অবাক লাগলো।আমি উঠে দাড়ালাম।তারপর সৌরভকে জিজ্ঞেস করলাম,
–কি হয়েছে তোর?
ও কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,
–আপু তোকে একবার জড়িয়ে ধরতে দিবি?বেশি না অল্পকিছুক্ষন।

সৌরভের মুখে আপু ডাক শুনে আমি হা হয়ে গেলাম।লাস্ট কবে আমাকে ও আপু বলে ডেকেছিলো আমার মনে নেই।আর জড়িয়ে ধরার কথা তো বাদই দিলাম।আমি কিছুক্ষন চুপ করে থাকলাম।তারপর দুই হাত বাডিয়ে দিলাম।ও এক মুহুর্ত দেরি না করে ছুটে এসে আমাকে জাড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।আমার হাতে মেহেদি থাকাই আমিও ওকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতে পারলাম না।কয়েক সেকেন্ড পর সৌরভ হাওমাও করে কেঁদে উঠলো।
–সৌরভ কি হয়েছে বাবু?
–আপু তুই চলে যাবি ভেবে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে রে।আমি বিয়ে ঠিক হওয়ার সময় কোন কষ্ট পাইনি উল্টা হ্যাপি হয়ছিলাম যে তুই চলে যাবি।কিন্তু এখন আমার খুব কষ্ট হচ্ছে,বুকটা ফেটে যাচ্ছে রে আপু।
(সৌরভ আর কোন কথা বলতে পারলো না।আরো বেশি কেঁদে দিলো।আমারও কান্না চলে এলো।আমি কোনরকম নিজেকে সামলে ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ওর মুখটা কোনরকম ধরলাম এক হাতের সাইড দিয়ে)
–এই পাগল কাঁদছিস কেন?আমি কি বরাবরের মতো দূরে চলে যাচ্ছি নাকি?যখন ইচ্ছা হবে দেখে আসবি।আর তোকে এসব কান্না টান্না মানায় না।তোর কলেজের মেয়েরা যদি এভাবে দেখে তোর প্রেস্টিজ থাকবে?একটু কাঁদবি না আর।

(সত্যি বলতে গেলে আমারো খুব কানা পাচ্ছে ভাইকে এভাবে দেখে কিন্তু আমি প্রকাশ করলাম না।উল্টা ওর মন ভালো করার চেষ্টা করলাম।কিচ্ছুক্ষন পর ওউ হেসে দিলো।আমি ওর কপালে একটা চুমু দিলাম)
–এই তো গুড বয়।
(আপু আর মারিয়া যে সাইডে দাড়িয়ে আমাদের দেখছিলো তা খেয়াল করলাম।আপু দেখি কাঁদছে,আমাদের কাছে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো।তিন ভাইবোন একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম।সেই সুন্দর মুহুর্তটা মারিয়া ক্যামেরাবন্দি করে রাখে।অবশ্য সৌরভের ফোনেও তিনজন বেশ কিছু ছবি তুলি)

*রাত অনেক হয়েছে ১২টার বেশিই বাজে।আজ আমার বিয়ে কিন্তু বিশ্বাসই হচ্ছে না।মারিয়া ঘুমিয়ে গেছে অলরেডি কিন্তু আমার ঘুম আসছে না।ভাবতেই অবাক লাগছে যে রাত পোহালে আমার বিয়ে।ভালোবাসারা মানুষটিকে সারাজীবনের জন্যে নিজের করে পাবো।কিন্তু খারাপ ও লাগছে।বাসার সবাইকে ছেড়ে যেতে হবে।এতোদিনের এই ঘরটাকে ছেড়ে যেতে হবে।বাবা-মা,সৌরভ সবাইকে।আমি কোনদিন…..”

এখানেই শেষ ছিলো ডায়েরিটার।অনু পরের কয়েক পেইজ উল্টালো কিন্তু ফাকা।এরই মাঝে অনুর বাবা এসে ডাক দিলো।অনু তাড়াতাড়ি ডায়েরিটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেললো।
–অনু মা,আমরা পৌছে গেছি।তাড়াতাড়ি নেমে আয়।
–আসছি বাবা।

অনু তার হাতব্যাগ নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে গেলো।স্টেশনের বাইরে ওদের গাড়ি দাড়িয়ে ছিলো।অনু,অনুর বাবা-মা গাড়িতে উঠে বসলো।ড্রাইভার সব ব্যাগপত্র গাড়িতে উঠিয়ে দিলো।স্টেশনের কাছেই ওদের বাসা তাই ১৫ মিনিটের মধ্যেই পৌছে গেলো ওরা।বাসায় ঢুকতেই অনুর দাদু বলে ওঠে,
–ডাক্তার সাহেবা তুমি এসে গেছো?
–দাদু তুমিও না।আমি কি এখনো ডাক্তার হয়েছি নাকি?
–হওনি তো কি হয়েছে?হবা তো ভবিষ্যৎ এ।
–এখনো দেরি আছে দাদু।সবে থার্ড ইয়ারে উঠলাম(অনু দাদুকে জড়িয়ে ধরে বলে)
–আচ্ছা তা তোমার নানা-নানি,মামারা সবাই কেমন আছে?
–সব্বাই ভালো আছে।নানাভাই-নানিআপু তো বারবার বলছিলো তোমাকে কেন নিয়ে যায়নি।
–তুমি তো জানো দাদুভাই আমার এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতে ভালো লাগে না।
–তা লাগবে কেন?এই বাড়িতে তো তোমার বউ এর স্মৃতি আছে।বউ পাগলা কোথাকার…

অনু আর অনুর দাদু গল্প করতে লাগলো….

চলবে……