#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৪৬
পেরিয়ে গেছে তিনদিন। গত দুইদিন যাবৎ ভীষণ অ*সুস্থ ছিলো আবরার। প্রচন্ড জ্ব*রে*র কারণে অবস্থা কা*হি*ল হয়ে গিয়েছিল বে*চা*রার। আবরারের মতো শ*ক্ত, সামর্থ্য একজন মানুষ কে জ্ব*র এভাবে কা*বু করে ফেলবে ভাবতেও পারে নি আরশি। পরে অবশ্য মিসেস বন্যার কাছে শুনেছে যে আবরার সহজে অ*সুস্থ হয় না। তবে অ*সুস্থ হলে একেবারে কা*হি*ল হয়ে যায়। আর বৃষ্টির পানি সে একেবারে সইতে পারে না, গায়ে লাগলে জ্ব*র আসবেই আসবে। আবরারের এই হঠাৎ জ্ব*রের কারণ যে বৃষ্টি এটা বুঝতে পেরে রা*গ, অ*ভি*মানের শেষ ছিলো না আরশির। লোক টা জানে বৃষ্টি তার জন্য কতোটা ক্ষ*তি*কর তবুও বৃষ্টিতে ভিজেছে। আবরার অবশ্য বেশিক্ষন আরশি কে রে*গে থাকতে দেয় নি। ঠিকই মানিয়ে নিয়েছে। আরশি ও অ*সুস্থ আবরারের উপর বেশিক্ষন রা*গ ধরে রাখতে পারে নি। মিসেস বন্যা এবং আরশির সেবা যত্নে এখন অনেকটাই সুস্থ আবরার। আজ অফিসেও যেতে চেয়েছিল কিন্তু যেতে দেয় নি আরশি। রা*গ দেখিয়ে ধরে বেঁ*ধে রেখে দিয়েছে। এই সবের চ*ক্ক*রে চিরকুটের কথা প্রায় ভু*লতে বসেছিল আরশি। তবে সকালে ব্যাগ থেকে প্রয়োজনীয় কিছু কাগজ বের করার সময় আবার সেটা সামনে পড়েছে তার। অনেক ভাবনা চি*ন্তা*র পর আরশি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে আগে ওই নাম্বারে কল করে কথা বলে দেখবে। তারপর বিষয় টা আবরার কে জানাবে। যদি কেউ তার সাথে মজা করে থাকে!
প্ল্যান অনুযায়ী রাতে আবরার ঘুমানোর পর ধীরে ধীরে সা*ব*ধা*ন*তার সাথে আবরারের হাত সরিয়ে বেলকনি তে চলে আসলো আরশি। সাথে ফোন আর সেই চিরকুট। দুরুদুরু বুকে সেই নাম্বারে ডায়াল করলো সে। কয়েকবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করলো কেউ। আরশি ‘হ্যালো’ বলতেই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে এক পুরুষ কণ্ঠ বলে উঠলো,
— অবশেষে তাহলে ফোন করলে!
অবাক হলো আরশি। অবাকতার সাথেই শুধালো,
— কে আপনি? আর কেনোই বা আমাকে ওই চিরকুট দিয়েছিলেন? সত্যিই কি আপনি আমার বাবার খু*নী*র সম্পর্কে কিছু জানেন?
লোক টা যেনো হালকা হাসলো। বললো,
— আমি তোমার বাবার খুব কাছের কেউ। বন্ধু ও বলতে পারো। পেশায় আমিও একজন রিপোর্টার ছিলাম কিন্তু এখন সেই পেশা ত্যাগ করেছি। আর আমি সত্যিই তোমার বাবার খু*নী সম্পর্কে জানি। তাই তো তোমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি।
আরশি স*ন্দি*হান কণ্ঠে শুধালো,
— তবে এতদিন কোথায় ছিলেন আপনি? এতো বছর পর কেনো আমার বাবার খু*নী*র সন্ধান দিতে চাচ্ছেন? যখন আমার বাবা খু*ন হলো তখন কেনো আসেন নি?
লোক টা নিজের কণ্ঠের গম্ভীরতা বজায় রেখে জবাব দিলো,
— কারণ তখন যদি আমি সামনে আসতাম তাহলে তোমার বাবার মতো আমিও খু*ন হতাম হয়তো। ওরা বাঁচতে দিতো না আমাকে। তাই তো এতো বছরেও সামনে আসি নি। তবে তোমার আর তোমার পরিবারের খোঁজ খবর ঠিকই আমার কাছে ছিলো। তোমার বাবা আমার খুব কাছের একজন মানুষ ছিলেন। খুব ভালোবাসতাম আমি তাকে। আমিও চাই তার খু*নী*র শা*স্তি হোক। কিন্তু আমি নিতান্তই সাধারণ একজন মানুষ। তাই আমার পক্ষে ওই শ*য়*তা*ন কে শা*স্তি দেয়া সম্ভব ছিলো না। উল্টো আমারই ক্ষ*তি হতো। আমার পরিবারের আমি ছাড়া কেউ নেই। আমার কিছু হয়ে গেলে তারা কিভাবে থাকতো? পরিবারের কথা চি*ন্তা করে আর সামনে আগানোর সা*হ*স পাই নি আমি। আর এতো বছর পর তোমাকে এই ব্যাপারে জানানোর ও কারণ আছে। কারণ টা হলো তুমি এই মুহূর্তে তোমার বাবার খু*নী*র খুব কাছাকাছি অবস্থান করছো। তুমি চাইলেই পারো নিজের বাবার খু*নী কে নিজ হাতে শা*স্তি দিতে।
লোকটার কথা যেনো কিছু টা বিশ্বাস হলো আরশির। সে উ*ত্তে*জি*ত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
— কে আমার বাবার খু*নী? বলুন আমাকে…
লোক টা বলে উঠলো,
— স*হ্য করতে পারবে তো?
থ*ম মে*রে রইলো আরশি। মাথা ঝি*ম*ঝি*ম করছে তার। অজানা ভ*য়ে বুক কাঁ*প*ছে। তবে কি আবার কোনো ক*ঠি*ন সত্যের মুখোমুখি হতে চলেছে সে? এমন কোনো সত্য যা তার জীবনের সুখ শান্তি কে*ড়ে নিয়ে যাবে? অ*প্রিয় কিছু শোনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো আরশি। কাঁ*পা কাঁ*পা স্বরে বললো,
— পারবো। আপনি বলুন আমার বাবার খু*নী কে?
আরশির প্রশ্নের জবাবে লোক টা এমন কিছু কথা বললো যা শুনে মাথা ঘু*রে উঠলো আরশির। রে*গে গেলো সে। রা*গে*র ব*শে মৃদু চি*ৎ*কা*র করে বললো,
— আপনি মি*থ্যা বলছেন। আমি বিশ্বাস করি না আপনার কথা। নিশ্চয়ই আপনার অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। তাই এসব উ*ল্টা*পা*ল্টা বুঝাচ্ছেন আমাকে।
লোক টা দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করলো। ফোনের এপাশ থেকে তা স্পষ্ট টের পেলো আরশি। লোক টা কিছু সময় থেমে থেকে বললো,
— তোমাকে মি*থ্যা বলে আমার কি লাভ মামুনি! তোমার বাবার খু*নী শা*স্তি পাক এটা আমি সবসময়ই চেয়েছি। কিন্তু ওই যে বললাম আমি একজন সাধারণ মানুষ। তুমিও ঠিক তেমনি একজন সাধারণ মেয়ে ছিলে। তাই তোমাকে আগে জানাই নি। নাহলে কিছু করতে গিয়ে তুমি ও বি*প*দে পড়তে। কিন্তু এখন তুমি তোমার বাবার খু*নী*র খুব কাছাকাছি আছো। চাইলেই তুমি তাকে বুদ্ধি করে শা*স্তি দিতে পারো। তাই সব টা তোমাকে জানানো।
চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করলো আরশি। কিছু একটা ভেবে বললো,
— আপনি যা বলছেন তা যে সত্য সেটার প্রমান কি?
লোক টা গম্ভীর স্বরে বললো,
— প্রমান আছে আমার কাছে। এমনকি প্রমান টা তোমার বাবাই জোগাড় করেছিলেন এক সময়।
আরশি জিজ্ঞাসা করলো,
— তাহলে সেই প্রমান প্রকাশ করলেন না কেনো? তাহলে তো অ*প*রা*ধী শা*স্তি পেতো।
লোক টা এবার কিছু টা শব্দ করেই হাসলো। বললো,
— বর্তমান দুনিয়ায় অর্থই শ*ক্তি জানো তো! আমি সেসব প্রকাশ করলেও তার বিশেষ কোনো ক্ষ*তি হতো না। টাকা খাইয়ে সব ধা*মা*চা*পা দিয়ে ফেলতো। বি*প*দে পড়তে হতো কার? আমার। তোমার বাবা বো*কা ছিলো যে এসব বিষয় না ভেবেই তার সকল সত্যি সামনে আনার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো। তাই তো তাকে হ*ত্যা করে নিজের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলো ওই শ*য়*তা*ন টা।
আরশি শীতল কণ্ঠে বললো,
— আমি সব প্রমান দেখতে চাই। যদি আপনার কথা সত্য হয় তবে আমি তাকে খু*ন করতেও পিছপা হবো না। আমার প্রানপ্রিয় বাবা কে হ*ত্যা*র জন্য নিজের হাতে ক*ঠি*ন শা*স্তি দিবো তাকে।
লোক টা বললো,
— প্রমান দেখতে হলে তোমাকে সামনাসামনি দেখা করতে হবে। আমি সব ডকুমেন্ট তোমাকে দেখাবো। তাহলে হয়তো বুঝতে পারবে আমি মি*থ্যা বলছি না। যা বলছি সত্যি বলছি।
আরশি বললো,
— আমি দেখা করবো আর সেটা কালকেই। যদি আপনার কথা মি*থ্যা হয় তবে আপনিও ছাড় পাবেন না।
লোক টা গম্ভীর স্বরে বললো,
— সে তুমি সব প্রমান দেখলেই বুঝতে পারবে আমি মি*থ্যা বলছি না। তাই তো তোমাকে সামনাসামনি দেখা করতে বললাম। নিজের চোখে দেখলে অবশ্যই তুমি বুঝতে পারবে কোনটা সত্য আর কোনটা মি*থ্যা। তবে তোমাকে সা*ব*ধা*ন*তার সাথে দেখা করতে আসতে হবে। কেউ যেনো কোনোভাবেই টের না পায়। নাহলে তোমার কারণে আমি এবং আমার পরিবার বি*প*দে পড়বো। তো বলো পারবে গা*র্ডদের চোখ ফাঁ*কি দিয়ে আসতে?
আরশি দৃঢ়তার সাথে বললো,
— পারবো।
লোক টা বললো,
— আমি তোমাকে ঠিকানা পাঠিয়ে দিচ্ছি। আগামীকাল ঠিক দুপুর দুইটায় আমার সাথে দেখা করবে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবে কেউ যেনো টের না পায়।
বলেই কল কে*টে দিলো লোক টা। দুই মিনিটের মাথায় মেসেজের মাধ্যমে একটা ঠিকানা আসলো আরশির নাম্বারে। ঠিকানা টা দেখে নিয়ে চুপচাপ আবরারের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো আরশি। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আবরারের পানে।
——
গা*র্ডদের চোখ ফাঁ*কি দিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে এসেছে আরশি। বর্তমানে সে একটা সিএনজি তে আছে। প্রায় চল্লিশ মিনিট পর গন্তব্যে পৌঁছালো আরশি। তবে এক্সাক্ট পয়েন্টে সিএনজি ঢুকতে পারবে না তাই আগেই নামতে হলো আরশি কে। ভাড়া মিটিয়ে সামনে এগোলো সে। কেমন যেনো নীরব এলাকা। তার উপর প্রচুর রোদ। রোদের তা*পে ঘামে ভিজে যাচ্ছে আরশি, মাথা ঝি*ম*ঝি*ম করছে। অবশেষে চি*পা গলি পেরিয়ে একটা রাস্তায় আসলো সে। মেসেজে পাঠানো ঠিকানা অনুযায়ী এটাই সেই জায়গা যেখানে আসতে বলা হয়েছে তাকে। আগের রাস্তার তুলনায় এই রাস্তায় মানুষ আরও কম। বেশ দূরে দুই একজন কে দেখা যাচ্ছে। কেমন যেনো গা ছ*ম*ছ*মে পরিবেশ। দুপুরের সময় হওয়ার কারণে হয়তো রাস্তায় মানুষ একেবারে কম। আশেপাশে তাকিয়ে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে খোঁজার চেষ্টা করলো আরশি। কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলো না। বি*র*ক্তি*তে কপাল কুঁ*চ*কে আসলো তার। ফোন বের করে সেই নাম্বারে কল করলো। কিন্তু হুট করেই পিছন থেকে কেউ একজন আরশির মুখে রুমাল চে*পে ধরলো। মুহূর্তেই জ্ঞান হা*রা*লো সে।
——
চোখ খোলার পর নিজেকে একটা অদ্ভুত বাড়িতে আবিষ্কার করলো আরশি। বাড়ি টা দেখে মনে হচ্ছে এটা কোনো প*রি*ত্যা*ক্ত বাড়ি। আরশি নিজের দিকে খেয়াল করতেই দেখলো চেয়ারের সাথে তার হাত পা বাঁ*ধা। আরশি শব্দ করে বললো,
— কেউ আছেন? কোথায় আনা হয়েছে আমাকে? আর আমাকে এভাবে বেঁ*ধে রাখা হয়েছে কেনো?
আরশি থামতেই কেউ একজন হো হো করে হেসে উঠলো। কি বি*শ্রী সেই হাসির শব্দ! আরশি বুঝতে পারলো কেউ একজন তার পিছেই আছে যে এভাবে হাসছে। কিন্তু বাঁ*ধা থাকার কারণে পিছনে দেখতে পারলো না আরশি। সে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,
— কে আপনি? আমাকে এখানে এনে এভাবে বেঁধে রেখেছেন কেনো? আর আপনার ভয়েস এতো চেনা চেনা লাগছে কেনো? তবে কি আপনার সাথেই ফোনে কথা হয়েছিল আমার?
লোক টা হাসি থামিয়ে পেছন থেকেই বললো,
— কি বো*কা তুমি মেয়ে! আমি ভেবেছিলাম এমপির বউ বুঝি একটু হলেও চা*লা*ক হবে। কিন্তু তুমি দেখি একেবারেই বো*কা বের হলে। এতো সহজে যে আমার জালে ধরা পড়বে বুঝতে পারি নি। যাক আমি তবে তোমার ব্রেন ওয়াশ করতে সক্ষম হয়েছি। আর জানতে চাও না আমি কে? আমিই তোমার বাবার খু*নী।
শেষের কথা টা ফিসফিস করে বললো লোক টা। অনেক বড় একটা শ*ক খেলো আরশি লোকটার কথায়। নিজেকে সামলে অবাক কণ্ঠে বললো,
— কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন বা…
আরশির মুখের কথা কে*ড়ে নিলো লোক টা। ব্য*ঙ্গ করে বললো,
— হ্যা, আমি বলেছিলাম তোমার শ্বশুর উরফে আব্বাস আহমেদ তোমার বাবার খু*নী। আর আজ তোমাকে সেটার প্রমান ও দেয়ার কথা ছিলো। তাই তো? আমি বললাম আর তুমি বিশ্বাস করে নিলে? হাহাহা। তো এবার আমি বলছি আমি আগের দিন যা যা বলেছিলাম সব মি*থ্যা ছিলো। ওগুলো বলে আমি জাস্ট তোমার ব্রেন ওয়াশ করতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সফল হবো না। কিন্তু না আমি সফল হয়েছি। দেখো তুমি এখন আমার কাছে ব*ন্দি। হাহাহা… যাই হোক নিজের বাবার খু*নী কে দেখতে চাইবে না? উপস এখন তো তোমাকে আর তোমার প্রানপ্রিয় স্বামী কেও দুনিয়া থেকে বি*দা*য় করবো। তা ম*রা*র আগে নাহয় আমাকে দেখার সুযোগ করে দেই? কি বলো?
কথাগুলো বলতে বলতে লোক টা আরশির সামনে এসে দাঁড়ালো। লোকটার মুখ দেখা মাত্র স্তব্ধ হয়ে গেলো আরশি। সে বিশ্বাস করতে পারছে না নিজের চোখ কে। কয়েকবার পলক ঝা*প*টা*লো আরশি। না সে ভু*ল দেখছে না। যা দেখছে ঠিক দেখছে। নিজের অবাক ভাব কা*টি*য়ে আরশি বলে উঠলো,
— আপনি? তার মানে আপনিই আছেন এই সব কিছুর পেছনে?
লোক টা হাসতে হাসতেই জবাব দিলো,
— হ্যা, কেনো বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি?
আরশি অ*স্থি*র কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
— আপনার উদ্দেশ্য কি? কেনো এসব করছেন?
লোক টা নিজের পকেট থেকে একটা গা*ন বের করলো। আরশির দিকে তা*ক করে বললো,
— আপাতত উদ্দেশ্য একটাই। তোমাকে আর তোমার স্বামী কে দুনিয়া থেকে বি*দা*য় করা। বুঝতে পেরেছিলাম বাবা মায়ের পর আবরারের সবচেয়ে বড় দু*র্ব*লতা তুমি। তাই তো তোমায় টা*র্গে*ট করলাম। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম এক সময় তোমার বাবা ও আমার পথে এসেছিল। বিনিময়ে তাকে নিজের প্রাণ দিতে হয়েছিল। এখন তোমাকে আর তোমার স্বামীকেও দিতে হবে। এতক্ষনে হয়তো তোমার স্বামী তোমার নি*খোঁ*জ হওয়ার খবর পেয়ে গেছে। আর অ*স্থি*র হয়ে তোমাকে খুঁজছে। এখন আমি ওকে ফোন করে এখানে আসতে বলবো তাও একা। আর তারপর…. তারপর দুইজনকেই পৃথিবী থেকে বি*দা*য় করে দিবো। হাহাহা।
লোকটার হাসির মাঝেই কেউ একজন তার হাত থেকে গা*ন টা কে*ড়ে নিলো। পিছন থেকে বলে উঠলো,
— তোমাকে আর ক*ষ্ট করে ফোন করে আসতে বলতে হবে না। আমি নিজেই চলে এসেছি দেখো। বুঝোই তো একটামাত্র বউ আমার। তাকে তো আর এমনি এমনি ছেড়ে রাখতে পারি না। আমার কতো বড় দু*র্ব*লতা সে এটা তো তোমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। ঠিক না?
চলবে,
#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৪৭
আবরারের কণ্ঠ শুনে অন্তরাল কেঁ*পে উঠলো লোকটার। ধীরে ধীরে পিছে ফিরে চাইলো সে। আবরারের হাসিমাখা মুখ তার অন্তরে তীব্র ভ*য়ে*র সৃষ্টি করলো। লোকটার ভ*য়া*র্ত দৃষ্টি দেখে শরীর দুলিয়ে হাসলো আবরার। বললো,
— কি ভ*য় হচ্ছে বুঝি? তা আমার পরিবারের সাথে গেম খেলার আগে, আমার দু*র্ব*লতায় হাত দেয়ার আগে ভ*য় করে নি?
লোক টা রে*গে আরশির দিকে তাকালো। ওর কাছে যেতে চাইলে পেছন থেকে হাত মু*চ*ড়ে ধরলো আবরার। লোক টা বুঝতে পারলো তার সময় হয়তো ফুরিয়ে এসেছে। তার এতদিনের স্বপ্ন আর সত্যি হবার নয়।
—–
আবরারদের বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছে সবাই। আহি, রিফা এবং মিহি বেগম ও উপস্থিত সেখানে। রিফা এবং মিহি বেগম কে আবরারের গা*র্ডেরা হুট করেই এই বাড়িতে নিয়ে এসেছে এবং জানিয়েছে আবরার ই তাদের নিয়ে যেতে বলেছে। আহিকেও মেসেজ করে বাড়িতে আসতে বলেছে আবরার। কেউ ই বুঝতে পারছে না ঠিক কি কারণে আবরার সবাই কে এক জায়গায় করেছে। অনেকদিন পর সাক্ষাৎ হওয়ায় টুকটাক কথা বলছে সবাই। কিন্তু হুট করে কারোর পড়ে যাওয়ার শব্দে কথা থেমে গেলো সবার। শব্দের উৎসের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো সবাই। রে*গে গেলেন মিসেস বন্যা। দ্রুত লোকটাকে ফ্লোর থেকে তু*লে রা*গী কণ্ঠে আবরার কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
— এটা কি ধরণের ব্যবহার আবরার? এই শিক্ষা দিয়েছি আমি তোমায়? ও তোমার গুরুজন হয়। আর তুমি ওকে এভাবে ধা*ক্কা দিলে? আমি কি তোমায় শিখাই নি গুরুজনদের সম্মান দিতে? তোমার সা*হ*স কি করে হলো ওর সাথে এমন ব্যবহার করার?
ভাবলেশহীন দেখালো আবরার কে। সে পকেটে হাত গুজে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— একজন খু*নী, যে আমার পরিবারের ক্ষ*তি করতে চায় তাকে না আমি গুরুজন মানি আর না তাকে আমি সম্মান দিতে পারবো। সে এরচেয়েও বা*জে ব্যবহারের যোগ্য।
আবরারের কথায় কেঁ*পে উঠলেন মিসেস বন্যা। এসব কি বলছে আবরার! উনি নিজের ছেলে কে খুব ভালো করে চেনেন। অকারণে এসব বলার মতো বা এমন ব্যবহার করার মতো ছেলে নয় আবরার। মিসেস বন্যা একবার আবরার এবং একবার আবরারের পেছনে দাঁড়ানো আরশি কে দেখে নিলেন। দুইজনের মুখেই গম্ভীরতার ছাপ স্পষ্ট। উনি কাঁ*পা কাঁ*পা স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন,
— এসব তুমি কি বলছো আবরার? মাথা ঠিক আছে তোমার? কাকে কি বলছো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
আবরার শীতল কণ্ঠে বললো,
— আমি যা বলছি সুস্থ মস্তিস্কে, সজ্ঞানে বলছি। আর তুমিও ঠিক ই শুনছো। কি মামা জান তুমি চুপ করে আছো কেনো? কিছু বলো। কতো সুন্দর ষ*ড়*য*ন্ত্র করেছিলে সব বলো….
শেষের কথাগুলো ইরফান চৌধুরী কে উদ্দেশ্য করে বললো আবরার। আবরারের কথায় ভী*ত চোখে তাকালেন ইরফান চৌধুরী। মিসেস বন্যা ইরফান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,
— আবরার এসব কি বলছে ইরফান? কিসের ষ*ড়*যন্ত্র, কে খু*নী? আর তুই না বিদেশ গিয়েছিলি? দেশে কবে আসলি? আমাকে জানালি না কেনো?
ইরফান চৌধুরী ঢোক গি*ল*লেন। শেষবারের মতো নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে আ*ট*কে আ*ট*কে বললেন,
— আমি নিজেও বুঝতে পারছি না আপা আবরার এসব কি বলছে। এই… এই সব কিছু ওই মেয়ের জন্য হয়েছে। ওই আবরার কে কি সব উ*ল্টা*পা*ল্টা বুঝিয়েছে। আমি কিছু করি নি বিশ্বাস করো।
আরশি কে ইশারা করে এসব বলতেই ভ*য়*ঙ্ক*র রে*গে গেলো আবরার। ইরফান চৌধুরীর দিকে তে*ড়ে যেতে চাইলে হাত টে*নে ধরলো আরশি। চোখের ইশারায় শান্ত হতে বললো। চোখ বন্ধ করে শ্বাস টা*ন*লো আবরার। নিজের রা*গ কোনোমতে দমন করলো সে। পকেট থেকে নিজের ফোন টা বের করে একটা রেকর্ডিং প্লে করলো। যা শুনে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলো সবাই। রেকর্ডিং এ ইরফান চৌধুরীর আরশি কে বলা প্রতি টা কথা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। বাঁচার শেষ উপায়টাও হা*রি*য়ে চো*রে*র মতো এদিক ওদিক তাকাতে লাগলেন ইরফান চৌধুরী। আব্বাস আহমেদ অবাক কণ্ঠে বললেন,
— এসব কি ইরফান? তুমি আরশি কে বলেছো আমি ওর বাবা কে খু*ন করেছি? তুমি এটাও স্বীকার করেছো তুমিই আরশির বাবার খু*নী। তুমি খু*ন করেছো? আবার আবরার আরশিকেও মা*রা*র প্ল্যান করেছিলে? এসব কি হচ্ছে?
এতক্ষনে মুখ খুললো আরশি। বললো,
— আমি বুঝিয়ে বলছি বাবা। উনি আমাকে আর এমপি সাহেব কে মা*রা*র জন্য প্ল্যান করেছিলেন। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক ভার্সিটি তে একজনের মাধ্যমে আমাকে একটা কাগজে ফোন নাম্বার দেন আর এটাও লিখে দেন উনি জানেন আমার বাবার খু*নী কে। হ্যা, ঠিক শুনছেন সবাই। আমার বাবা খু*ন হয়েছে। আমি এ*ক্সি*ডেন্ট এর দিনই বুঝতে পেরেছিলাম ওটা পরিকল্পিত ছিলো। কিন্তু কে করিয়েছে তা জানতাম না। তাই যখন ওই কাগজের টুকরো পাই তখন নিজেকে দমাতে পারিনি। আমার বাবার খু*নী কে তা জানার জন্য মনটা অ*স্থি*র হয়ে পড়েছিল। ওই নাম্বারে যখন কল করি তখন উনি আমাকে বলেন আপনি আমার বাবার খু*নী। প্রথমে বিশ্বাস না করলেও পরে একটু একটু বিশ্বাস হয়েছিল। এর জন্য আপনার কাছে ক্ষ*মা চাচ্ছি বাবা। কিন্তু যখন উনি বললেন একা দেখা করতে, এমপি সাহেব কে না বলতে তখন রাজী হলেও মন সায় দিলো না। উনি আমাকে এও বলেছিলেন আমি যদি এমপি সাহেব কে সব বলি তাও উনি নিজের বাবার বি*রু*দ্ধে যাবেন না। উল্টো আমার ক্ষ*তি করতে পারেন। এই বিষয় টা মানতে পারি নি আমি। এতগুলো বছর একা পথ চলেছি। একটু হলেও মানুষ চিনি। এমপি সাহেবের উপর আমার বিশ্বাস ছিলো, আমার বিশ্বাস ছিলো উনি কখনো ভু*ল কে সাপোর্ট করবেন না। তাই কল কা*টা*র পর এমপি সাহেব কে ঘুম থেকে তু*লে সব টা জানাই। এমপি সাহেব আমাকে বলেন লোক টা আমাকে যেভাবে যেভাবে সব করতে বলেছে ঠিক সেভাবেই করতে। আমিও ঠিক সেভাবেই সব টা করেছি। ভার্সিটি থেকে গা*র্ডদের চোখ ফাঁ*কি দিয়ে উনার বলা ঠিকানায় গিয়েছি। সেখান থেকে আমাকে অ*জ্ঞা*ন করে কি*ড*ন্যাপ করে উনার লোকেরা। তারপর তো রেকর্ডিং এ শুনেছেন ই সবাই উনার প্ল্যান কি ছিলো।
আরশির কথাগুলো শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে আছে সবাই। ইরফান চৌধুরী এমন কিছু করতে পারেন বিশ্বাস হচ্ছে না কারোর। আরশি থামতেই আবরার ইরফান চৌধুরী কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,
— তোমাকে দেখে অবাক হই নি কেনো জানো? তোমার উপর আমার আগে থেকেই স*ন্দে*হ ছিলো। যেদিন আমার গাড়ি কে ট্রাক ধা*ক্কা দিয়েছিল সেদিনই স*ন্দে*হ হয়েছিল। কারণ আমার গা*র্ড ছাড়া বাইরে যাওয়ার খবর শুধু তুমি জানতে। বের হওয়ার আগে তোমাকে বলেছিলাম। কিন্তু স*ন্দে*হ হলেও তোমার ভালো ব্যবহার দেখে বিশ্বাস হতো না তুমি এমন। আর আমি বহু আগেই জানতে পেরেছিলাম আরশির বাবার খু*নী আর আমার শ*ত্রু একই লোক। কিন্তু সেটা তুমি এটা মানতে পারছিলাম না আর না কোনো প্রমান পাচ্ছিলাম। যখন আরশির কাছে শুনলাম কেউ ওকে ফোনে এসব বলেছে তখন ই বুঝতে পারলাম সময় এসেছে আসল অ*প*রা*ধী কে ধরার। অ*প*রা*ধী এবার নিজের তৈরি করা জা*লে নিজেই আ*ট*কা*বে। তাই আরশি কে বলি ওকে যেভাবে যেভাবে যা যা করতে বলা হয়েছে সেভাবেই করতে। আমি জানতাম তোমার লোকেরা আরশির উপর নজর রাখবে। ও একা যাচ্ছে কিনা সেটা ফলো করবে। ও যদি একা না যেতো তবে তোমার লোকরা ওকে কি*ড*ন্যা*প করতো না। আর আমিও তোমার কাছে পৌঁছাতে পারতাম না। বলতে পারো আমি ইচ্ছা করেই আরশি কে কি*ড*ন্যা*প করতে দিয়েছি। তোমার লোকেরা দেখেছে আরশি গা*র্ডদের চোখ ফাঁ*কি দিয়েছে কিন্তু এটা খেয়াল করেনি যে আমি এবং আমার লোকেরা আরশির আশেপাশেই ছিলাম।
এতক্ষন থম মেরে দাঁড়িয়ে ছিলেন মিসেস বন্যা। এবার নিজের ভাইয়ের একেবারে কাছে এগিয়ে আসলেন তিনি। শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন,
— এসব কেন করলি ইরফান?
ইরফান চৌধুরী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন। কোনো জবাব দিলেন না। নিজের ভেতরে বেড়ে ওঠা ক্রো*ধ আর দমিয়ে রাখতে পারলেন না মিসেস বন্যা। রা*গে এ*লো*পা*তা*রি চ*র থা*প্প*ড় মা*র*তে লাগলেন ইরফান চৌধুরী কে। চি*ৎ*কা*র করে বলতে লাগলেন,
— কেন এমন করলি? বল কেন করলি?
মিসেস বন্যা হা*পি*য়ে যাচ্ছেন দেখে উনাকে টে*নে সরিয়ে আনলেন আব্বাস আহমেদ। বুকে জড়িয়ে শান্ত করতে লাগলেন। কিন্তু শান্ত হলেন না মিসেস বন্যা। কাঁ*প*তে কাঁ*প&তে চি*ৎ*কার করে বললেন,
— কেন এমন করেছিস ইরফান? বল সব টা। নাহলে তোকে আজ নিজ হাতে খু*ন করবো আমি। বিশ্বাস কর সত্যিই তোকে খু*ন করবো আমি। তোর সাহস কি করে হলো আমার ছেলের দিকে হাত বাড়ানোর?
আব্বাস আহমেদ শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন,
— বলো ইরফান কেনো আমাদের বিশ্বাস নিয়ে খেললে? কি এমন কারণ রয়েছে যার জন্য এতো বা*জে কাজ করলে? এমনকি খু*ন করতেও তোমার হাত কাঁ*প*লো না। বলো কেনো করেছো এমন?
বোনের হাতে এ*লো*পা*তারি মা*র খেয়ে ফ্লোরে পড়ে আছেন ইরফান চৌধুরী। উনি ওভাবে বসে থেকেই বললেন,
— দুলাভাইয়ের এই বিশাল সম্পত্তি নিজের নামে করার জন্য এই সব করেছি আমি। বিয়ের দেড় কি দুই বছর পর থেকেই মনার সাথে আমার ঝা*মে*লা চলছিল। প্রতি বেলায় ও আমাকে দুলাভাইয়ের সাথে তুলনা করতো। আমি যা বেতন পেতাম সেটা দিয়ে ওর হতো না। এই নিয়ে আমাদের সম্পর্ক দিন কে দিন খা*রা*প হচ্ছিলো। মনা কে আমি অনেক ভালোবাসতাম। আর সেই ভালোবাসার মানুষ যখন অন্য একজনের সাথে আমার তুলনা দিয়ে আমাকে তু*চ্ছ করতো সেটা স*হ্য হতো না। তবুও কয়েক বছর মুখ বুজে ছিলাম। শেষে আর না পেরে সিদ্ধান্ত নেই দুলাভাইয়ের কোম্পানি থেকে টাকা সরাবো। দুলাভাই আমাকে অনেক বিশ্বাস করতেন। কোনো হিসাব নিতেন না। এই সুযোগের ব্যবহার করে টাকা সরাতে থাকি। আমার মাঝেও টাকা, সম্পত্তি এসবের প্রতি ধীরে ধীরে তীব্র লো*ভ চলে আসে। দিন দিন দুলাভাইয়ের সম্পত্তি বাড়ছিলো আর সাথে আমার লো*ভ। লো*ভ বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে যায় যে আমি দুলাভাইয়ের সব সম্পত্তি নিজের নামে করার পরিকল্পনায় নামি। কিন্তু দুলাভাই বুদ্ধিমান মানুষ। উনার কাছ থেকে এসব নিজের নামে করা মোটেও সহজ ছিলো না। তাই অফিস থেকে অল্প অল্প করে টাকা সরিয়ে নিজের টাকা বাড়াতে থাকি আর সুযোগের অপেক্ষায় থাকি দুলাভাই কে রাস্তা থেকে সরানোর। উনি মা*রা গেলে সেই সুযোগে সব নিজের নামে করে নিতাম। কিন্তু সেই সুযোগ পাচ্ছিলাম না। কারণ দুলাভাই সবসময় ক*ড়া সি*কি*উ*রি*টির মধ্যে থাকতেন। বড় বিজনেসম্যান হওয়ায় উনার শ*ত্রু*র অভাব ছিলো না। আরশির বড় চাচাও দুলাভাইয়ের অফিসে কাজ করতেন। একদিন উনার কাছে ধরা পড়ে যাই। উনি কিভাবে যেনো বুঝে যান আমি হিসাবে গড়বড় করছি, টাকা সরাচ্ছি। উনি দুলাভাই কে সব বলে দিবেন বলে থ্রে*ট দেন। ধরা পড়ার ভ*য়ে আমি উনাকে অফার করি আমার সাথে হাত মিলাতে। এতে উনারও লাভ হবে আর আমারও। উনিও বড় লো*ভী ছিলেন। তাই অফার করতে না করতে রাজী হয়ে যান। আমরা দুইজন মিলে প্রচুর অর্থ সরাতে থাকি। কিন্তু আমাদের পথে বাঁ*ধা হয়ে দাঁড়ায় আরশির বাবা। একদিন নিজের ভাইয়ের সাথে দেখা করতে এসে আমাদের এইসব ব্যাপারে কথা বলতে শুনে নেয় সে। আমি তাকেও টাকার লো*ভ দেখাই। কিন্তু সে মানে নি। আমাদের বি*রু*দ্ধে প্রমান জোগাড় করতে উঠে পড়ে লাগে। তাই আমিও তাকে রাস্তা থেকে সরানোর প্ল্যান করি। আরশির চাচা কে এই বিষয়ে জানালে সেও অমত করে না। তার কাছেও টাকাই বড় ছিলো। প্ল্যান মোতাবেক এ*ক্সি*ডেন্ট করাই। সে মা*রা যায়। এই ঘটনার এক বছর পরেই আরশির চাচা ধরা পড়ে দুলাভাইয়ের কাছে। তাকে কোম্পানি থেকে বের করে দেয়া হয়। আরশির চাচা কে অনেক অনুরোধ করায় সে আমার নাম নেয় নি। কিন্তু তখন আর টাকাও সরানো যাচ্ছিলো না। কারণ দুলাভাই নিজে সব চেক করতেন। তাই আমি ধীরে ধীরে ওখান থেকে সরে আসি। নিজের বিজনেস শুরু করি। তবুও আমার নজর দুলাভাইয়ের সম্পত্তির উপরে ছিলো। কারণ তার তুলনায় আমার কিছুই নেই। অন্যদিকে আরশির চাচা আমার পিছু ছাড়ছিলো না। সে আমাকে ব্ল্যা*ক*মেল করে নিয়মিত টাকা নিতো। ধীরে ধীরে তার টাকা চাওয়ার পরিমান এতোটাই বাড়তে থাকে যে আমি সামলাতে পারছিলাম না। মাথায় রা*গ চা*পে। তাই তাকেও লোক দিয়ে খু*ন করাই। এবার আমি নিজের প্ল্যানে কিছুটা চেঞ্জ আনি। দুলাভাই মা*রা গেলে সব সম্পত্তি আবরার পাবে। তাই আবরার কে টা*র্গে*ট করি। ও কে শেষ করলে দুলাভাই এমনিতেই ভে*ঙে পড়তো। এই সুযোগে আমি সব নিজের নামে করে নিতাম। কিন্তু আমি পারলাম না, পারলাম না এতো বছরের পরিকল্পনা স্বার্থক করতে। শেষমেষ আমাকে ধরা পড়তে হলো।
কথা শেষ করে মাথা নিচু করে বসে রইলেন ইরফান চৌধুরী। ড্রয়িং রুমে থাকা প্রতিটা মানুষ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো ইরফান চৌধুরীর দিকে। টাকার লো*ভ তাকে কোথায় নামিয়েছে! লো*ভের বশে নিজের পরিবারের সাথে এতো বা*জে খেলায় নেমেছিলেন তিনি। মিহি বেগম একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন নিজের স্বামীর খু*নী*র দিকে। এই লোকের জন্য উনি নিজের স্বামী কে হা*রি*য়েছেন, একমাত্র মেয়ে কে এতগুলো বছর ধরে স্বামীর মৃ*ত্যু*র জন্য দা*য়ী করে ক*ষ্ট দিয়েছেন।
মিসেস বন্যা আব্বাস আহমেদের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ভাইয়ের সামনে বসে পড়লেন। চোখ দিয়ে ঝ*র*ঝ*র করে পানি পড়ছে তার। কা*ন্না*ভেজা কণ্ঠে ভাই কে বললেন,
— তুই কিভাবে এমন টা করতে পারলি রে ইরফান? তুই হওয়ার পর থেকে তোকে ভাই কম নিজের সন্তান বেশি মনে করেছি। সন্তান কে মায়েরা যেভাবে আগলে রাখে সেভাবে আগলে রাখার চেষ্টা করেছি। তোকে ভালো জায়গায় পড়ানোর জন্য নিজে পড়াশোনা ছেড়েছি। বাবা মা ছিলো না। ছোট ভাই টা একা কিভাবে থাকবে এটা ভেবে বিয়ের সময়ও শর্ত দিয়েছি বিয়ের পর আমার ভাই আমার সাথে থাকবে। আর সেই তুই কিনা… তুই কিনা টাকার লো*ভে পড়ে, নিজের বউয়ের চাহিদা পূরণের জন্য নিজের বোনের স্বামী, সন্তান কে মা*রা*র জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলি! আরে তোর দুলাভাই তোর কিসে কমতি রেখেছিলো রে! নিজের বাড়িতে থাকতে দিয়েছে, এতো আদর যত্ন করেছে, ভালো জায়গায় পড়াশোনা করিয়েছে, নিজের কোম্পানি তে এতো ভালো পসিশন এ চাকরি অব্দি দিয়েছে। কিসের কমতি রেখেছিলাম আমরা তোর? তোর দুলাভাইয়ের এতো এতো উপকারের এই প্রতিদান দিলি?
মিসেস বন্যা থেমে চোখের পানি মু*ছ*লেন। আবরারের দিকে তাকিয়ে ক*ঠো*র কণ্ঠে বললেন,
— পুলিশ ডাকো আবরার। একটা খু*নী, ক্রি*মি*নাল কে আমি আর এক মুহূর্ত ও নিজের চোখের সামনে দেখতে চাই না। ওর ক*ঠি*ন থেকে ক*ঠি*ন শা*স্তি হোক, আমি এটাই চাই।
চলবে,