দৃষ্টির অলক্ষ্যে পর্ব-৩০+৩১

0
537

#দৃষ্টির_অলক্ষ্যে
#পর্বঃ৩০
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)

সন্ধ্যা নাগাদ ফাহিম সহ সবাই এসে তাহমিদদের বাসায় উপস্থিত হয়। তাহমিদের বাসায় যেন চাঁদের হাট বসেছে। তূবা ক্লান্ত স্বরে নাযীফাহ কে বলল,

‘তুমি কি জানো আমরা সবাই কেন একসাথে উপস্থিত হয়েছি?’

এপাশ ওপাশ মাথা নাড়ে নাযীফাহ। মানে সে জানে না।

‘আমরা সবাই কাল কুমিল্লা যাচ্ছি।’

নাযীফাহ’র চোখ দু’টো রসগোল্লার মতো বড় হয়ে যায় সাথে সাথে।

‘হুট করে কুমিল্লা?’

‘আগামী সোমবার আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির বিবাহ বার্ষিকী। তাদের অধম জামাই ছোটখাটো আয়োজন করবে তাই।’ তাহমিদের সহজ সরল স্বীকারোক্তি।

এবারে যেন নাযীফাহ’র চোখ দু’টো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। বিস্মিত গলায় বলল,

‘আপনার মাথা ঠিক আছে? গ্রামের মানুষ কি বলবে? তাছাড়া আমাদের তো ছুটিও নেওয়া হয়নি।’

‘আমাদের দুজনের ছুটি সেই কবেই নিয়ে নিয়েছি।’

হঠাৎ নাযীফাহ খেয়াল করলো মনোয়ারা বেগমের চোখেমুখে কেমন আঁধার ঘনীভূত হয়েছে। উনি রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতেই নাযীফাহও ধীর পায়ে উনার পিছু পিছু গেল।

রান্নাঘরের ছোট্ট জানালা দিকে ফিরে বাইরে বিবশ মুখে তাকিয়ে রইলেন মনোয়ারা বেগম। নাযীফাহ উনার কাঁধে হাত রাখতেই চমকে উঠেন তিনি। সুস্থির স্বরে বলল,

‘ওহ্ তুই?’

‘আপনার কি মন খারাপ মা?’

নিরুত্তর রইলেন মনোয়ারা বেগম। দৃষ্টি এখনো তার বাইরে গ্রথিত। কিয়ৎকাল নিরব থেকে উনি বেদনার্ত গলায় বললেন,

‘আজকে তোমার শ্বশুর বেঁ/চে থাকলে আমার সংসারটা পরিপূর্ণ হতো। সবাইকে একসাথে দেখে মানুষটাকে ভীষণ মনে পড়ছে। সেই কবে আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। ছেলে মেয়েদের বড় করে আর সংসার সামলিয়ে আমি ক্লান্ত। মাঝে মাঝে মানুষটাকে আমার বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে। উনি আমাদের সাথে থাকলে খুব কি মন্দ হতো?’

_______________________

সকাল আটটায় রওনা দিবে। তূবা, ফারিয়া আর রাশেদা খাতুন ঘুমোচ্ছে। যেহেতু সকালেই রওনা দিবে মনোয়ারা বেগম আর নাযীফাহ সবকিছু গোছগাছ করছে।

এক রুমে ফাহিম, তাহমিদ আর ফয়সাল।

‘আমরা যদি সবকিছু খোলাসা করি তাহলে কিন্তু তোমার ব্যপারটাও সামনে আসবে ফাহিম।’

তাহমিদের কথায় ফাহিম কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। তার নজর মেঝেতে স্থির।

‘যেহেতু বিপথে পা দিয়েছিলাম সেহেতু তো সামনে আসবেই। এসব কি আর চা/পা থাকে? তবে আপনি একটু বাবাকে সামলে নিয়েন। আগের কথা মনে পড়লেই নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা চলে আসে।’

ফয়সাল এসে ফাহিমের কাঁধে হাত রাখল। চোখে চোখ রেখে আশস্ত করলো, আমরা আছি তো। এতো চিন্তা করো না।

ঘড়ির কাঁটা বারোর ঘরে এসে পৌঁছেছে মিনিট দুয়েক হলো। সবকিছু গুছিয়ে এসে শ্বাশুড়ির পাশে শুয়ে পড়ে নাযীফাহ। চোখ দু’টো তে তার গভীর নিদ্রা ভর করতেই মোবাইল ভাইব্রেট করতে লাগে। চোখ বুঁজে মোবাইল রিসিভ করে কানে ধরতেই তাহমিদ বলল,

‘দু’কাপ কফি নিয়ে ছাদে আসো না।’

‘আমার ঘুম পাচ্ছে খুব।’

‘এসো না প্লিজ।’

‘কাল সকাল সকাল রওনা দিবো তো। ঘুমান এখন।’

‘কেন গাড়ি কি তুমি চালাবে?’

অগত্যা বাধ্য হয়ে নাযীফাহ দু’কাপ কফি বানিয়ে ছাদে গেল। সেখানে আগে থেকেই তাহমিদ দাঁড়িয়ে ছিল। কফির একটা কাপ বাড়িয়ে দিলো তাহমিদের দিকে।

শীতল বাতাস বইছে চারপাশে। শীত শীত অনুভব হচ্ছে নাযীফাহ’র। তাহমিদের একটা হাত প্রসারিত করে তার বুকে মাথা রাখল নাযীফাহ।

‘শীত লাগছে। একটু জড়িয়ে ধরেন।’

তাহমিদ মুচকি হেসে একহাতে বুকের সাথে মিশিয়ে রাখলো নাযীফাহকে।

‘আমার না একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করে।’

‘কি কথা?’

‘বিয়ের আগে আপনার কাছে কেউ কিছু পাঠায়নি?’

ছাদের রেলিঙে খুব সাবধানে কফির কাপটা রাখল তাহমিদ। পকেট থেকে মোবাইল বের করে কয়েকটা ছবি বের করে দেখালো। ছবি গুলো দেখে লজ্জায়, ঘৃ/ণায় চোখ বন্ধ করে নিলো নাযীফাহ।

তাহমিদ মোবাইল পুনরায় পকেটে রেখে বলল,

‘বিয়ের আগে থেকে শুরু করে রোজ আসে। বিভিন্ন ফেইক আইডি থেকে এসব পাঠানো হয়।’

‘আপনি এগুলো বিশ্বাস করেন?’

‘বিশ্বাস করলে কি আর তোমাকে এভাবে বুকে জড়িয়ে রাখতাম?’

_____________________

রান্নার আয়োজন চলছে। ফাহমিদা বেগম নাযীফাহ কে এক কোণায় টেনে নিয়ে আসলেন।

‘জামাই এসব কি শুরু করেছে নাযীফাহ? মানুষ কি বলবে?’

‘আমাকে এসব বলো না। আমি কিছু জানি না।’

‘জামাই নাকি ফাহিম কে নিয়ে সালাম ভাইদের বাড়ি গিয়েছিল সকালে?’

‘হুম। তোমাদের জামাই না গেলে আসতো নাকি?’

‘কেন উনাকে আমাদের বাড়ি আসতে বলিস? আমাদের বাড়ি থেকে যাওয়ার পরই উনি হালিমা ভাবির উপর চড়াও হন। উনার উপর কি ভর করে আল্লাহ জানে।’

‘শিহাব ভাই কিছু বলে না? উনার জায়গায় আমি হলে চাচিকে নিয়ে কবেই নিরুদ্দেশ হয়ে যেতাম।’

‘চাইলেই পারা যায় না রে মা। সংসারের মায়ায় কোনো নারী আটকে গেলে সেই বাঁধন ছেড়ে বেরিয়ে আসা যায় না।’

______________________

গুটি কয়েক মানুষ হলেও বিয়ের বাড়ির মতো আমেজেই পুরো দিন কে’টে ছে। কোনো উপলক্ষ ছাড়া সবাই একসাথে হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এই আনন্দের পরে কি ঘটতে চলেছে তা হয়তো সবারই অজানা। কেউ আন্দাজও করতে পারবে না এক কঠিন সত্য তাদের সামনে আসতে চলেছে। দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পরে সালাম সাহেব সহ সবাই চলে যেতে চেয়েছেন কিন্তু তাহমিদ যেতে দেয়নি। এরমাঝেও তাহমিদ একজনকে চোখে চোখে রেখেছে। তার চোখমুখের ভাবের উপর নজরদারি করছে। দুপুরে শিহাব আসেনি। তাহমিদ হালিমা কে বলে তাকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছে। শিহাবের উপস্থিতি খুব দরকার।

রাত আনুমানিক নয়টা। সবার খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ। গ্রাম বলে সাড়ে আটটার মাঝে সব কমপ্লিট হয়ে যায়। খোশগল্পে মেতে আছেন একেকজন।

এর মাঝেই তাহমিদ নাযীফাহ কে বলল চা করে দেওয়ার জন্য। ধমকে উঠেন মনোয়ারা বেগম।

‘মেয়েটা সারাদিন কাজ করেছে। তোকে চা দিতে পারবে না এখন। আর এখন রাত সবাই ঘুমোবে। চা খাওয়ার দরকার নেই।’

আচমকা নজর গেল শিহাবের দিকে। একেবারে স্থির হয়ে নিজের পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে আছে।

‘আড্ডা জমে উঠেছে। এক কাপ চা হলে কিন্তু মন্দ হয় না।’

খালেদ মোশাররফও নাযীফাহ কে বলল চা দেওয়ার জন্য। শিহাব উশখুশ করছে এখান থেকে উঠে যাওয়ার জন্য তার এসব ভালো লাগছে না। কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। না পাওয়ার যন্ত্রণায় দ/ম বন্ধ হয়ে আসছে তার। নিজের প্রতি ঘৃ/ণা টা তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে।

মিনিট বিশেক পরে চা নিয়ে হাজির হয় নাযীফাহ। সবার হাতে চায়ের কাপ দিয়ে শিহাবকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিতেই নাযীফাহ কে নিজের এতটা কাছে দেখে চমকে উঠে সে। শুকনো ঢুক গিলে চায়ের কাপ টা নিল।

দু’হাত দূরে হালিমা, বকুল আর ফাহমিদা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন। তাহমিদ উনাদের ডাকলেন। কিন্তু উনারা এখানে আসতে নারাজ। মেয়ের জামাইর সাথে বসে আড্ডা দেওয়া যায় নাকি? তাহমিদ অনুনয় করতেই উনারা এসেও বসলেন। আরাম করে চায়ে চুমুক দিচ্ছে সবাই। ঠিক সেই সময় যেন সেখানে এ/ট/ম বো মা ফেলে তাহমিদ।

‘ফাহিম কে কেন ড্রা/গ দেওয়া শুরু করেছিলেন শিহাব সাহেব?’

অকস্মাৎ এমন কথা শুনে হাত থেকে চায়ের কাপ পড়ে যায় শিহাবের। উপস্থিত সবাই যেন আকাশ থেকে পড়ল। শুধু ফয়সাল আর ফাহিম বাদে। তাহমিদ ভাবলেশহীন ভাবে চায়ে চুমুক দিয়ে চলেছে।

উত্তেজনায় বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় খালেদ মোশাররফ। তাহমিদ ফয়সালকে ইশারা দিতেই ফয়সাল গিয়ে উনাকে ধরে।

‘নিজেকে সামলান আঙ্কেল। সামান্য এইটুকু তে তো ভেঙে পড়লে চলবে না। আরো অনেক কঠিন সত্য সামনে আসবে।’ ফাহমিদা বেগম পড়ে যেতে নিলেই মাকে গিয়ে ধরে নাযীফাহ।

‘তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে? প্রমাণ করতে না পারলে তুমি জামাই বলে কিন্তু আমি ছেড়ে দিবো না।’

সালাম সাহেবের কথায় স্মিত হাসল তাহমিদ।

‘আপনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন না। সব প্রমান নিয়েই তো সব উন্মোচন করতে এসেছি।’

‘কেন আমার হাতে এসব তুলে দিয়েছিলে শিহাব ভাই। আমার অনেক জানতে ইচ্ছে করে।’

‘তুই নে’শা করতি?’

বোনের প্রশ্ন শুনে মাথা নুইয়ে ফেলে ফাহিম। খালেদ মোশাররফ যেন একেবারে স্থির হয়ে গেলেন। বাকরুদ্ধ তিনি। এক নির্মম কঠিন সত্য আসতেই উনার হৃদয়ে র/ক্ত/ক্ষ/র/ণ হচ্ছে।নাযীফাহ কে আঁকড়ে ধরে কেঁদে দিলেন ফাহমিদা বেগম।

‘ওরা যা বলছে তা সত্যি শিহাব? তুই কিন্তু আমার সাথে মিথ্যে বলিস না।’

শিহাব নিশ্চুপ রইল।

উনি এবারে শিহাবের মুখোমুখি দাঁড়াতেই শিহাব উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

‘এই দিনটির অপেক্ষায় আমি অনেক আগে থেকেই ছিলাম। কেউ আসুক সত্য উন্মোচন করুক। আমি ক্লান্ত মা খুব ক্লান্ত।আপনজন হারানোর ভয়ে তটস্থ। আমি কত রাত ঘুমোতে পারিনি। এই মিথ্যের বুঁজা আর বইতে পারছি না।’

হালিমাকে ছেড়ে শান্ত হয়ে বসে শিহাব। সবার দৃষ্টি এখন শিহাবের দিকে। সালাম সাহেবের যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না।

‘আমি বরাবরই মাকে খুব ভালোবাসি। মায়ের প্রতি আমার দূর্বলতা আমার সেই ছোটবেলা থেকেই। তখন আমার বয়স কত হবে? এই বড়জোড় ষোলো কি সতেরো বছর। সেইবার আমি প্রথম দেখেছিলাম বাবাকে মায়ের গায়ে হা/ত তুল/তে। কেন মে’রেছিল সবারই অজানা। এরপর প্রায় তিনি হা/ত তুলতেন। বাবা এর কারণ আজও কাউকে বলেননি। তবে উনার চোখে আমি মায়ের জন্য একরাশ ঘৃ/ণা দেখতাম। এর মাঝেই আমাদের আমাদের বাড়ি যাওয়া ছেড়ে দিলেন খালেদ চাচা। সবকিছুই যেন বদলে গেল। নাযীফাহও কম যেত। এরই সুযোগ নিল আমার শ্রদ্ধেয় ফুফু মানে বকুল।’

বকুলের নাম নিতেই যেন আরেক দফা চমকে গেল সবাই। সবাই এবার উনার দিকে দৃষ্টিপাত করে। উনি জড় বস্তুর ন্যায় দাঁড়িয়ে আছেন। গলা খাঁকারি দিয়ে আবারও বলা শুরু করে শিহাব

‘উনি আমাকে দিনের পর দিন উসকে গেলেন খালেদ চাচার বি রু দ্ধে। বাবার এমন হিং স্র আচরনের জন্য নাকি উনি দায়ী। কৈশোরে পা দেওয়া আমি ফুফুর প্রতিটা কথা বেদবাক্যের ন্যায় বিশ্বাস করে গেলাম। রা/গ কে পুঞ্জীভূত করতে লাগলাম নিজের অন্তরে। আমাদের সুখের সংসারে যেমন অশান্তির আ/গু/ন জ্বে/লে/ছে উনার সংসারেও অ/শান্তি আ/গু/ন জ্বালতে চেয়েছি। সেটা পারিনি তবে মানসিক অশান্তিতে ভুগিয়েছে। সেটাই ছিল আমার জন্য অনেক। দিন গড়ানোর সাথে সাথে বুঝে গিয়েছিলাম আমি নাযীফাহ কে ভালোবাসি।’

চমৎকৃত হয় নাযীফাহ শিহাবের কথা শুনে। আজ যেন চমক পাওয়ার দিন।

‘আর সেই কথাটাই আমি প্রথম মাকে না বলে উনাকে গিয়ে বলি। যেন নাযীফাহ কে বলে। কারন উনার সাথে নাযীফাহর ছিলো খুব ভাব। উনি বলেছে কিনা জানি না তবে আমার মনে নতুন কিছুর বীজ বপন করে। খালেদ চাচাকে ক/ষ্ট দেওয়ার হা/তিয়ার হিসেবে নাযীফাহ কে টার্গেট করে। আমাকে বলে যেই করেই হোক নাযীফাহ’র চ/রি/ত্রে কালিমা লেপন করি। নারাজ ছিলাম কাজটা করতে। যাকে ভালোবাসি তার চ/রি/ত্রে কালিমা লেপন করা যায় বুঝি? আমার ভালোবাসা তো মিথ্যে নয়। আমি যখন সব এসব করতে নারাজ ঠিক তখনই উনার আসল চেহেরাটা আমি দেখতে পাই। উনি শান্ত চেহেরার আড়ালে ঠিক কতটা হিং/স্র আর তি/গ্ম সেদিন টের পেয়েছিলাম আমি। সেদিন বাবা মায়ের গায়ে পুনরায় হাত তু/লে। সেদিন বুঝি বাবা মায়ের অশান্তির কারন খালেদ চাচা না স্বয়ং উনি। তবে ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। মাকে হারানোর ভয় আমাকে জেঁকে ধরে। মায়ের মৃ/ত্যুর ভ/য় দেখানো শুরু করে। আমিও ভ/য় পাই। শক্তিশালী যুবক হওয়ার পরও ভ/য় পেয়েছি এই নারীকে। কারন উনার দ্বারা অসম্ভব কিছুই না। মাকে বাঁচানোর জন্য লাগিয়ে দিলাম নাযীফাহ’র গায়ে চরিত্রহীনার তকমা। প্রযুক্তির এই যুগে ভালো একজন ফটোগ্রাফার দিয়ে নাযীফাহ ছবি ইডিট করলাম। এরপরও উনার শান্তি হয়নি। উনি ফাহিমের পিছনে লাগলেন। ওর ভবিষ্যত অন্ধকার করার জন্য উন্মাদ হয়ে গেলেন। দেখা হলে বিশেষ করে নাযীফাহ’র বি/রু/দ্ধে উসকে দিতো। আর আমার মাধ্যমে তো,,,,’

এতটুকু নিজের বাবার পায়ের সামনে বসে পড়ে শিহাব।

‘শুধু এই মহিলার জন্য বাবা নাযীফাহ কে বিয়ে করার সুযোগ থাকা সত্বেও আমি বিয়ে করতে পারিনি। দৃষ্টির অলক্ষ্যে থেকে মেয়েটার জীবনটাকে একেবারে দূ/র্বি/ষ/হ করে তুলতো। জেনে-বুঝে কি করে তাকে ওই জাহান্নামে ফেলি বাবা? মাকে কতবার বলেছি চলো এখান থেকে। সে যায়নি তোমায় ছেড়ে। তোমাকে ছাড়া নাকি থাকতে পারবে না। আমিই মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করে গিয়েছি প্রতিনিয়ত। আমি কত রাত শান্তিতে ঘুমাই না। রাত গুলো আমার নির্ঘুম কাটে। এক অদৃশ্য মানসিক যন্ত্রণায়। আমি যতবার সব বলতে গিয়েছি। কি করে জানি না কোনো না কোনো কারনে তুমি মায়ের উপর চড়াও হয়েছো। এর জন্য আর সাহস করিনি। আমি পুরুষ তবে কাপুরষ। আমি পুরুষ তবে আমি ভীতু। আমি পুরুষ নামে কলঙ্ক।’

পুরো রুম জুড়ে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।থমথমে পরিবেশ। উপস্থিত সবাই স্তব্ধ । সবচেয়ে বেশি অবাক হয়তো নাযীফাহ। সবার নিঃশ্বাসের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। পর্দার আড়ালে যে এতকিছু ছিলো হয়তো কেউ ধারণা করতে পারিনি।

‘তারমানে তাহমিদ আর নাযীফাহ’র যখন প্রথম বিয়ে ঠিক হয়। ওসব তুমি আমাকে দিয়েছিলে?’

মনোয়ারা বেগমের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে মাথা দুলায় শিহাব। ওমনি সপাটে চড় বসিয়ে দিলেন হালিমা। রাগে থরথর করে কাঁপছেন তিনি। রা/গে ক্রো/ধে আগুন লাল হয়ে গিয়েছে উনার মুখ। শান্ত হালিমা কে এতোটা রাগতে কেউ দেখেনি।

‘আজ থেকে আমি নিঃসন্তান। এমন সন্তান কারো পেটে না জন্মাক। যে নিজের স্বার্থে আরেকজনের জীবনকে নরক বানিয়ে দেয়।’

গালে হাত রেখে অসহায় চাহনি নিক্ষেপ করলো শিহাব।

খালেদ মোশাররফ থমথমে মুখে সেখানেই বসে আছেন। সালাম সাহেব উঠে বোনের অভিমুখে গিয়ে দাঁড়ালেন। শান্ত আর নিস্তেজ স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,

‘তারমানে হালিমা সম্পর্কে বলা কথাগুলোও মিথ্যে?’

মাথা উঁচিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকায় বকুল। চোখ দুটো যেন অ/গ্নি/কু/ন্ডের লা/ভা। দৃষ্টি দিয়ে যে কাউকে ভস্ম করে দিবে। দাঁতে দাঁত পিষে রুক্ষ স্বরে বলল,

‘হ্যা সব মিথ্যে বলেছি।’

দু’কদম পিছিয়ে গেলেন সালাম সাহেব। হালিমা সালাম সাহেবের সামনে এসে দাঁড়ালেন। ক্ষীণ গলায় জিজ্ঞেস করলো,

‘আমার নামে কি বলেছে তোমার বোন?’

স্ত্রীর দিকে দৃষ্টিপাত করেন সালাম সাহেব। অতঃপর চোখ বুলিয়ে সবাইকে দেখলেন।

‘আরে বলো বলো। আজ অনেক কিছুই জানতে পেরেছি তাই যেকোনো কথা শুনতেই আমি প্রস্তুত। এতোদিন পড়ে পড়ে তোমার মার খেয়েছি বলে এতো দূর্বল ভেবে না। আর উপস্থিত সবাইকে লজ্জা পাওয়ার তো কারণ দেখছি না। শেষ বয়সে বউয়ের গায়ে হাত তুলতে পারো আর কয়েকটা কথা বলতেই লজ্জা?’

সালাম সাহেব চোখ বন্ধ করে বললেন,

‘বকুল বলেছে’ এতটুকু বলে শুকনো ঢুক গিলেন সালাম সাহেব। লজ্জায় চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বলেন,

‘খালেদের সাথে নাকি তোমার অবৈধ সম্পর্ক আছে।’

#চলবে

#দৃষ্টির_অলক্ষ্যে
#পর্ব_৩১
#রূপন্তি_রাহমান

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যেতে নিলেই সোফার হাতল ধরে নিজেকে সামলান হালিমা।

‘কি বললে আবার বলো?’ অনুত্তেজিত, অক্লিষ্ট, নির্লিপ্ত স্বরে বললেন হালিমা।

‘তোমাকে আর খালেদ কে নাকি অন্তরঙ্গ অবস্থায় অবস্থায় কয়েকবার দেখেছে সে। আমার অবর্তমানে নাকি খালেদ ঘনঘন আমাদের বাড়ি আসতো।’

সালাম সাহেবের কথাগুলো শ্রবণগ্রন্থি স্পর্শ করতেই নাযীফাহ’র থেকে ছিটকে দু’কদম দূরে সরে গেলেন ফাহমিদা বেগম। খালেদ মোশাররফ জড়বস্তুর ন্যায় বসে আছেন।

নিজের স্বামীর মুখে নিজের নামে এমন কথা শুনে লজ্জায়, অ/প/মা/নে, ঘৃ/নায় দু-চোখ বুঁজে ফেলেন তিনি। উপস্থিত প্রত্যেকের মাথায় যেন আরেক দফা বাজ পড়লো। কেঁচো খুরতে যেন এক এক করে কে/উ/টে বেরিয়ে আসছে।

‘কোনো কিছু বাছ বিচার ছাড়াই তুমি বিশ্বাস করে গেলে? আমার কথা বাদ দাও তোমার ভাই, বন্ধু খালেদ ভাইকে তোমার চরিত্র/হী/ন মনে হয়?’

সালাম সাহেব নত মস্তকে বলেন,

‘আমি কয়েক বার অগোচরে দেখেছি আমরা কেউ বাড়ি না থাকা অবস্থায় খালেদ কে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে। এরপরই তুমি গোসল করে বের হতে।’

‘এর থেকে প্রমাণ হয় উনার সাথে আমার অ/বৈধ সম্পর্ক আছে? আপনার বন্ধু এসব কি বলছে খালেদ ভাই? এসব শুনার আগে আমার ম/র/ন কেন হলো না? এতোদিন ভেবেছি পুরুষ মানুষ বাইরে বাইরে থাকো মেজাজ খিটখিটে থাকে হয়তো তাই রা/গ দেখাও। গা/য়ে হা/ত তুলো। মন কে বুঝ দিয়েছি আমার সাথে না করলে আর কার সাথে করবে। আমি পর/কীয়া করি জানার পরও কেন সংসার করলে?’

‘আমার ছেলের কথা চিন্তা করে। আমার ছেলেকে যেন কেউ বলতে না পারে তার মা চরিত্র/হী/না।’

গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানি দু’হাতে মুছে নিলেন হালিমা। পরপর কয়েকটা ঢুগ গিলে নির্লিপ্ত, অনুভূতিহীন, নীরস গলায় বলেন,

‘আজকের পর আমি আর তোমার সংসার করবো না। ছেলের উপরও আমার কোনো অধিকার নেই। এখন তো আর কেউ বলবে না তার মা চরিত্র/হী/না। তোমার কাছেও আমার কোনো দাবি নেই। তুমি কিভাবে আমাকে তালাক দিবে দাও। এই বয়সে আমার ভাইয়ের কাছে গেলে সে নিশ্চয়ই আমাকে তাড়িয়ে দিবে না। তবে তোমার সাথে সংসার করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। এতোগুলো বছর সংসার করার পর যে স্বামী নিজের স্ত্রীকে বিশ্বাস করে না আর যাইহোক তার সাথে সংসার করা যায় না।’

বলেই শক্তিহীন দেহটা নিয়ে মেঝেতে বসে পড়েন। মাথা ঠেকান সোফার একটা কোণায়। শিহাব মা বলে কাছে আসতে নিলেই হাত দিয়ে থামিয়ে দেন তিনি। সালাম সাহেব অনুতপ্ত হয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছেন। স্ত্রীর চোখে চোখ রাখার সাহস উনার নেই।

একেবারে সুনশান হয়ে গেল কক্ষ। যেন এক নিরিবিলি কবরস্থান। কে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। আর কি বা বলা উচিৎ? চক্ষু আড়ালে একজন এতোগুলো মানুষের জীবন নিয়ে খেলে গেল। কেউ ধরতেই পারল না। তাহমিদ উঠে দাঁড়ায়। নিজের শ্বশুরের পায়ের কাছে গিয়ে বসল। খালেদ মোশাররফ তাহমিদের পানে অনুভূতিহীন চাহনি নিক্ষেপ করল।

‘আপনার মনে আছে বিয়ের আগে ফয়সাল ভাই কে আপনাদের এখানে পাঠানোর আগে কয়েকটা কথা বলেছিলাম। বিশ্বাস রাখুন আমি চো/র ধরবো। আমার বিশ্বাস ছিল আমি বিয়ে ভেঙে না দিলে যে এসব করছে মরিয়া হয়ে উঠবে। তাই ফয়সাল ভাইকে পাঠিয়ে ছিলাম এখানে। যেন কেউ বুঝতে না পারে আমাদের আসল উদ্দেশ্য। আর বকুল ফুফু এই ভুলটাই করেন। হলুদের দিন ফয়সাল ভাই প্রথমে ভেবেছেন সালাম চাচা এর পিছনে আছে। এরপরই ধারণা বদলে যায় উনার। বকুল ফুফু শিহাব সাহেব কে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। একলা ঘরে তোর মাকে মে’রে ফেলে রাখলে কেউ টের পাবে না। হেনতেন আরো অনেক কিছুই বলেছে। এসব ফয়সাল ভাই অগোচরে রেকর্ড করে আমাকে পাঠিয়েছেন। তখনও জানতাম না ফাহিম ড্রা/গ এডি/ক্টে/ড। এই ব্যপারটা পরে জানতে পারি। আমি অবাক কখন হয়েছিলাম জানেন? ফিরানিতে এসে। নাযীফাহ এই বাড়িতে আসার পর নিজের মাকে জড়িয়ে না ধরে উনাকে জড়িয়ে ধরায়। হিসেব মিলাতে পারছিলাম না। যে নাযীফাহ উনাকে সম্মান করে সে কি করে এসব করতে পারে? তারপর নাযীফাহ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জিজ্ঞেস করায় উনার সাথে ওর কেমন সম্পর্ক সব বলে। সম্পর্কের গভীরতা মাপার পর বুঝতে পেরেছিলাম দৃষ্টির অলক্ষ্যে আমাদের আপনজনেরাই আমাদের বেশি ক্ষ/তি করে থাকে। তার একদিন পরে রাত আনুমানিক একটা কি দেড়টা। নাযীফাহ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আমি মোবাইল নেট কানেক্টে করতে পারছিলাম না বলে পুকুর পাড়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হই। ফাহিমের রুম ক্রস করার সময় ওর রুম গো/ঙ্গা/নোর আওয়াজ পাই। আমার কেমন জানি খটকা লাগে। দরজায় হাত রাখতেই খুলে যায়। হয়তো প্রবল উ/ত্তে/জ/নায় দরজা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছে সে। আবছা আলোয় ফাহিমের অবস্থা দেখে আমার মাথা ঘুরতে শুরু করে। অদ্ভুত আচরণ করতে শুরু করে সে। আমাকে দেখেই আমার পা জড়িয়ে ধরে। কম্পিত কণ্ঠে বলে, ‘আমি আর স/হ্য করতে পারছি না শিহাব ভাই । সুই/সা/ইড করলেই আমি শান্তি পাবো।’ তারপর রুমের আলো জ্বালাতেই ও চমকে উঠে। হয়তো বুঝতে পারেনি এটা যে আমি। আমি বুঝে উঠতেই পারছিলাম না কি করবো। কি করলে ওকে স্বাভাবিক করবো। ওর হাত দু’টো শক্ত করে ধরে ওখানেই বসে ছিলাম। ঘন্টা খানিকের মাথায় ও একেবারে নেতিয়ে পড়ে। ওকে শুইয়ে দিয়ে আমি সেই রাত ঘুমোতে পারিনি। সকালে ফাহিম কে চেপে ধরলে সে সব খুলে বলে। এটাও বলে সে এসব থেকে পরিত্রাণ চায়। সে সব ছাড়তে চায় কিন্তু পারছে না। সামনে ওর পরীক্ষা কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। এরপর,,,,,, ‘

এতটুকু বলে থেমে যায় সে। নতজানু হয়ে বসে থাকে। সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

‘এরপর কি হয়েছে?’

নাযীফাহ’র প্রশ্ন শুনে তাকায় সে।

‘এরপর আমি নিজেই ড্রা/গ ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা দেই। হুট করে এসব ছাড়াতে গেলে মা/রা/ত্মক শারীরিক ক্ষ/তি হতো ওর। বিনিময়ে বলেছিলাম সে যেন পরীক্ষা ভালো করে দেয়। আর আমি এসব কাউকে বলবো না। আমার এখানে প্লাস পয়েন্ট ছিল। ফাহিম আমার কথামতো চলেছে। পরীক্ষার পরে আপনাদের বলেছিলাম আমার একটা বিশেষ কাজে ওকে একটা জায়গায় কয়েকমাসের জন্য যেতে হবে। আপনারা আমাকে বিশ্বাস করেছেন এতেই আমি কৃতজ্ঞ। কোনো যোগাযোগ রাখতে পারবেন না এটাও মেনে নিয়েছিলেন। আসলে ও দেড় মাস রি/হ্যা/বে ছিল। হয়তো নে/শা করার সময়টা দীর্ঘ ছিলনা। সেজন্য এর বেড়াজাল থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসতে পেরেছে। ওনি এরপরও আমাদের সংসার ভাঙার জন্য বিভিন্ন আ/পত্তি/কর ছবি আমাকে পাঠিয়ে গিয়েছেন। মানুষের মনে ঠিক কতটা হিং/স্র মনোভাব থাকলে সে একটা সংসার ন/ষ্ট করার চিন্তা করতে পারে। একটা বাচ্চা ছেলের ভবিষ্যত নষ্ট করার চিন্তা করতে পারে। আর যে মেয়েটা তাকে মায়ের আসনে বসিয়েছে তার জীবনটাও ন/র/ক বানাতে পিছপা হয়না। আমার জানা নেই। নিজের ভাইয়ের সংসারটা পর্যন্ত ছাড় দেয়নি।

ফাহমিদা বেগম মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছেন। উনার সন্তানদের এতোকিছু হয়ে গেল কিন্তু মা হয়ে টেরও পেলেন না? তখনও মাথা নুইয়ে বসে আছেন খালেদ মোশাররফ। তাহমিদের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই তিনি নির্জীব, প্রাণহীন কন্ঠে বকুলকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুঁড়লেন।

‘প্রত্যা/খ্যা/ন করেছিলাম বলেই বুঝি আমার পরিবারের সাথে এমনটা করে গেলি তুই?’

সবচেয়ে বড় বা/জটা বোধ হয় এখনই পড়লো। কিসের প্রত্যাখান কেউ কিছু বলতে পারলো না।

হাতের কাছে ফুলদানিটা মেঝেতে ছু/ড়ে মা/রে বকুল।

‘হ্যা, হ্যা সব আমি করেছি। আর তোমার প্রত্যাখ্যানের জন্য করেছি। সেদিন তুমি রাজি হলে ফাহমিদার জায়গায় আমি থাকতাম। এই ভরা সংসার আমার হতো। ছেলে মেয়েগুলোও আমার হতো।তাই তোমার জীবন থেকে পারিবারিক শান্তিটাই কেড়ে নিতে চেয়েছি। আর সফলও হয়েছি।’

ফাহমিদা বেগম বকুলে গালে সপাটে চ/ড় বসিয়ে দিলেন। বকুল যেন আরো হিং/স্র হয়ে উঠলো। নিজের চু/ল টে/নে ধরে। নাযীফাহ দ্রুত গিয়ে তার মাকে আটকায়।

‘বাবার খুব আদরের ছিলাম। আদরে আদরে বাঁদর তৈরি হলাম। কখনো নিজের মনের কথা মনে চেপে রাখতে পারতাম না। ভালোবাসা, সংসার এসব যখন বুঝতে শিখি তখন আমি মনে মনে তোমাকে চাইতাম।কল্পনায় তোমায় নিয়ে সংসার করতাম। নিজের মনের কথা বলাতে তুমি হেসে উড়িয়ে দিলে। ভাবলে আমি তোমার সাথে মজা করছি। আমাকে নাকি তুমি নিজের বোনের মতো মনে করো। বছর পার হওয়ার পর আবারও বললাম। এরপর বললে তোমার পক্ষে এসব সম্ভব। নিজের বোনের সাথে এসব করে নাকি কেউ। একদিন হুট করেই ফাহমিদাকে বিয়ে করে নিয়ে এলে। রা/গ হতে শুরু করল আমার।তোমাদের দুজনকে একসাথে দেখতে হৃদয় পু/ড়/তো আমার। মনে হতো ম/রে যাই। এর মাঝে বাবা মা/রা গেল। মা তোড়জোড় করে আমার বিয়ের। বিয়েও হল। কিন্তু সংসার আর করতে পারলাম না। কিভাবে করবো আমার সবটা জুড়ে যে তুমি। মনে একজন রেখে আরেকজনের সাথে সংসার করা যায়? আমিও পারিনি। সংসার ছেড়ে চলে আসি। আমার শোকে মাও মা-রা গেল। তোমার মেয়ে হয় শিহাব হয়। আমি তোমাকে বুঝাই আমি আগের সবকিছু ভুলে গেছি। তোমাদের বাড়ি আসা যাওয়া শুরু করি। নাযীফাহ কে নিজের মেয়ে মতো বড় করতে শুরু করি। এতোকিছু করে আমি শুধু তোমাকে বুঝাতে চেয়েছি একটা মেয়ের সংসারের স্বপ্ন ভেঙে গেলে ঠিক কেমন লাগে। একটা সুন্দর পরিবারের স্বপ্ন আমিও দেখেছিলাম।’

সবাই স্তব্ধ, বাকরূদ্ধ। সামান্য ভালোবাসার প্রত্যাখ্যান করেছে বলে সেই রেস এতটুকু পর্যন্ত এসেছে? সহজ সরল বকুল এতোটা হিংস্র তা হয়তো সবার কল্পনার বাইরে।

‘আমার সংসারটা শেষ করার মানে কি? নাকি সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করা, তোর সকল মতামত প্রাধান্য দেওয়া আর ভাই হিসেবে বোনকে ভালোবাসার প্রতিদান দিলি?’

সালাম সাহেবের প্রশ্ন শুনে তাকান উনি।

‘তোর বউ জানতো সব। আমি যে ওই মানুষটাকে কতটা চাই। কতবার বলেছি উনাকে যেন আমার করার ব্যবস্থা করে দেয়। ভালো মানুষের বাচ্চা বলে কিনা মেয়ে হয়ে কোনো মেয়ের সংসার ন/ষ্ট করতে পারবে না। তাই ওর সংসারেই আগে আ/গু/ন জ্বে/লে/ছি।’

রা/গে ফোঁস ফোঁস করছেন বকুল। অনুতপ্ততার ছিটেফোঁটাও তার মাঝে নেই। বরং সে যেন বেশি তৃপ্তি পাচ্ছে এসব করে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ান খালেদ মোশাররফ।

‘তোর কলিজা নিশ্চয়ই ঠান্ডা হয়েছে এসব করে? তোর কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আর সালাম তোর কাছেও কৃতজ্ঞ। আমাকে একজন,,,,,,,। আর ভাবি আমাকে মাফ করে দিয়েন। আমার জন্য আপনাকে এতোদিন ন/র/ক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। আমি পর/কীয়া করি। তোর আর মনোমালিন্যের ব্যপারটা আড়ালে ছিল সেটাই ভালো ছিল। আজ সবকিছু খোলাসা হওয়ার পর নিজেকে ন/র/কের কী/ট মনে হচ্ছে।’ সামনের দিকে পা বাড়াতেই তাহমিদ ফাহিমকে ইশারা করে বাবার পা ধরে মাফ চাওয়ার জন্য। ইশারা বুঝে ফাহিম বাবার পায়ে এসে লুটিয়ে পড়ে।

‘পা ধরেছিস কেন? মাফ তো আমার চাওয়া উচিৎ। সবকিছুর মূল তো আমি। আমি প্রত্যাখ্যান করেছি বলেই তোরা ভাই বোন মানসিক আর শারীরিক য/ন্ত্র/ণা ভোগ করেছিস। তাহমিদ এদের কে বলো আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে। এরা আমার পরিবারের মানুষের আরো বড় ক্ষতি করবে না তার গ্যারান্টি কি? ফাহমিদা রুমে এসো আমার প্রেশারের ঔষধ দিয়ে যাও আমি ঘুমাবো।’ চলে গেলেন খালেদ মোশাররফ। চলে গিয়ে আবারও ফিরে এলেন খালেদ মোশাররফ।

‘ফাহমিদা কথা কানে যায় না? বলেছি না রুমে আসতে। আর বেয়ানেরা, আমি অধম ক্ষমা প্রার্থী আজকের এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির জন্য।’

ফাহমিদা বেগম আর খালেদ মোশাররফ চলে যেতেই নাযীফাহ মেঝেতে থাকা ফুলদানির ভাঙা টুকরো গুলো সরিয়ে বসে পড়ে।

‘তুমি না বলতে আমি তোমার মেয়ের মতো। সংসার টিকে গেলে আমার মতো তোমারও হয়তো মেয়ে থাকতো একটা। কি করে পারলে এমন করতে? নিজের পেটের মেয়ে হলে এমন করতে পারতে? বিগত পাঁচটা বছর আমি ন/র/ক যন্ত্রণা ভোগ করেছি। প্রতিটা দিন প্রতিটা রাত আমি গলা/কা/টা মুরগির মতো ছট/ফট করেছি। আমার বুকটা জানে কত কাতরেছি আল্লাহর কাছে মোনাজাতে কত কেঁদেছি। শুধু আমার অপরাধ কি এটা জানার জন্য। আমার সেই একটা মুহূর্তের মানসিক য/ন্ত্র/ণাও যদি তোমার জীবনে অভি/শা?প হয়ে আসে না সহ্য করতে পারবে না তুমি। আমার চোখের একফোঁটা পানি যদি আল্লাহ কবুল করে নেন তুমি তলিয়ে যাবে। পাঁচটা বছরে তুমি আমাকে তিলে তিলে মে’রে ফেলেছো। নারী মায়ের জাত।কিন্তু সব নারী মা হওয়ার যোগ্যতা থাকে না। মমত্ববোধ সকল নারীর মাঝে থাকে না। কেউ যদি প্রশ্ন করতো আমার প্রিয় মানুষ কে? আমি চোখ বন্ধ করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলতাম, আমার বকুল ফুফু। সে আমার আরেকটা মা। মায়ের পরে সে আমাকে আগলে রাখে। তবে আমি জানতাম না আমার সকল মানসিক য/ন্ত্র/ণার কারন একমাত্র সে। কিছু কিছু মানুষের শূন্যস্থান কখনো পূরণ হয়না। আমার জীবনে আমি তোমার শূন্যস্থান কখনো পূরণ হতে দিবো না। জীবনে কিছু বিষাদময় স্মৃতি থাকা উচিৎ। আপনজনের খেতাব নিয়ে থাকা পরম শত্রু থাকা উচিৎ। যেন পরবর্তী জীবনে বিষাদের স্মৃতিচারণ করে সুখ কে চরম ভাবে উপভোগ করা যায়। কখনো যেন বলতে পারি আপনজনের দেওয়া বিষাদ উতরে আমি সুখের মুখ দেখেছি। এই সুখ আমার কাছে মহা মূল্যবান। বাবার মতো আমিও কৃতজ্ঞ। তবে আজকের পর বরাবর মতো আমার অপছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকবে তুমি। ভালোবাসার সমপরিমাণ ঘৃ/ণা আজ থেকে আমি তোমায় করি। শিহাব ভাই আপনি আসলেও কাপুরষ। যদি পুরুষ হতেন আজকের পরিস্থিতি কখনো আসতোই না। আপনি পারতেন এসব আরো আগে বন্ধ করতে। কেউ একজন আপনাকে নাচিয়ে গেল আর আপনি নেচে গেলেন। আপনি অবুঝ? আর বললেই মে’রে ফেলা যায়? এতো সহজ?’

একেবারে নীরব হয়ে রইল সে। আর একটাও বাক্যব্যয় করতে তার ইচ্ছে করছে না। গা হাত পা ছেড়ে দিয়ে সেখানেই বসে রইল।

নিজের ভারি পেট নিয়ে আস্তেধীরে উঠে দাঁড়ায় তূবা। কয়েক পা এগিয়ে যায় নাযীফাহ’র কাছে। সামান্য নুয়ে নাযীফাহ’র কাঁধে হাত রাখে। বিষাদময়, মলিন, বিবশ চাহনি নিক্ষেপ করে সে।

‘যাকে আপন ভেবেছি তার থেকে আমিও আঘাত পেয়েছি। আমার জীবনটাও দূ/র্বি/ষ/হ হয়ে উঠেছিল। যা কিছু ঘটেছে তোমার সাথে মনে কর দুঃস্বপ্ন।’

আচমকাই নাযীফাহ ঢ/লে পড়লো মেঝেতে।

#চলবে