দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন পর্ব-৯+১০

0
185

#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_৯
#সারিকা_হোসাইন

*********
কিছুক্ষন আগের বলা লিও এর কঠিন কথা খানা ম্যাপলের ছোট হৃদয়ে কঠিন বিষাক্ত তীরের ফলা হয়ে বিধেছে।না চাইতেও দুই চোখ থেকে অনবরত ঝরঝর করে জল গড়াচ্ছে।মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে ভোঁ ভোঁ শব্দ তুলে যন্ত্রণাদায়ক পীড়া হচ্ছে।নিজের কানকেও যেনো বিশ্বাস হতে চাচ্ছে না।অথচ সামনে দাঁড়ানো বিশাল দেহী সুপুরুষ কি অবলীলায় ই না কথা খানা বলে ফেললো।

নিজের বাড়িয়ে দেয়া সরু ফকফকে ছোট হাত গুটিয়ে নিয়ে দুই হাত মুড়িয়ে পেছনে লুকিয়ে ফেললো ম্যাপল।কোনো ভাবেই এই সুদর্শন পুরুষের ধ্বংসের কারন সে হতে পারবে না।শুধু এই পুরুষ কেনো নিজ হাতে একটা পিঁপড়ে পর্যন্ত মা*র/তে পারবে না সে।

লিও এখনো নির্বাক হয়ে শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে রয়েছে।নিজের শ্রেয়সী কে সব কথা খুলে বলতে চায় সে।কিন্তু অল্প কিছুক্ষন বাদেই ভোরের আলো ফুটে যাবে।আজ ও বোধ হয় খালি মুখেই ফিরে যেতে হবে।প্রতিনিয়ত হৃদয়ে দহন নিপীড়ন চলছে।মুখ ফুটে এই দগ্ধ ভয়ানক যন্ত্রণার কথা কাউকে বলা যাচ্ছে না।বুকের ছাতির ভেতরের কালচে কড়া পড়া হৃদপিন্ড ধীরে ধীরে মিইয়ে যাচ্ছে।আজকাল শ্বাস নেবার ও প্রয়োজন পরে না।কিন্তু বুকটা যে খুব খালি!তার বেলায় কি হবে?

“বুকের খালি অংশের পূর্ণতা কি রূপে হবে তবে?

নিজের যন্ত্রনা লুকিয়ে সম্মোহিত কন্ঠে লিও আওড়ালো

“আমার বুকটা নয়শত বছর ধরে খালি জুন।তুমি তো সেদিনের মেয়ে ।আমাকে চিনো না অব্দি।কিন্তু তোমার প্রতীক্ষায় হাজারটা বছর অপেক্ষার পর অপেক্ষা করছি আমি।এটাই তোমার শেষ পুনর্জন্ম।তুমি হারিয়ে গেলে আমি সারাটা জীবন হৃদয়হীন হয়ে বেঁচে থাকবো।আমার মৃ/ত্যু হবে না কিন্তু আমি বেঁচে থাকবো মৃ/তে/র ন্যায়”

লিও এর কঠিন আগামাথা হীন কথা পুরোটা না বুঝলেও কিছুটা বুঝলো ম্যাপল ।পুনর্জন্ম বিষয়ে সে চার্চের ফাদারের সাথে তার বাবার কিছু কথোপকথন শুনেছিলো তাও বছর পাঁচেক আগে।বয়স খুবই কম থাকার দরুন সেসবে পাত্তা দেয়নি সে।কিন্তু প্রায়শই এমন কিছু স্থান আর মানুষ স্বপ্নে দেখতে পেতো সে যা দেখার পর তার চোখের সামনে হাজারো ঘটনা ভেসে উঠতো।কিন্তু এগুলো আদৌ তার জীবনের ঘটনা কি না সে জানেনা।কিন্তু স্বপ্ন গুলো আর ভেসে উঠা চিত্র গুলো খুব করে ভাবিয়েছে তাকে।

স্বপ্নে সে প্রতিনিয়ত এক যুবককে দেখেছে।কিন্তু যুবকের চেহারা স্পষ্ট নয়।যুবকটির কাছে প্রতিনিয়ত যাবার আকুল চেষ্টা করেও সে ব্যার্থ হয়েছে।কোনো এক অজানা শক্তি তাকে বাধা দিয়ে দূরে সরিয়ে রাখে।কিন্তু যুবকের বুকে একটা বাঁকা চাঁদের চিহ্ন আছে।সেই চিহ্নটা খুব স্পষ্ট মনে আছে ম্যাপলের।

নিজের চিন্তা ভাবনা বন্ধ করে লিওয়ের চোখে চোখ রেখে সিক্ত কন্ঠে ম্যাপল বলে উঠলো

“তুমি এখানেই দাঁড়াও আমি আসছি”

ম্যাপলের মনোভাব বুঝতে পারলো না লিও।গভীর ভাবে নজর বুলালে মনের গহীনের কথা পর্যন্ত জেনে যাবে এক্ষুনি।কিন্তু ব্যাথিত হৃদয় সেসবে জোর পাচ্ছে না যেনো।

কীয়তখন বাদে বড় একটা কাপড়ের টুকরো নিয়ে ফিরে এলো ম্যাপল।এরপর নিজের দুই হাতের বাহু পর্যন্ত সেই কাপড় জড়িয়ে লিও এর জামা টেনে ধরলো।ম্যাপলের আকস্মিক কান্ডে দূরে সরে যেতে চাইলো লিও।কিন্তু তার আগেই ম্যাপল লিও এর শার্টের কলার চেপে ধরলো।ভয়ার্ত কন্ঠে লিও বলে উঠলো

“একটু এদিক সেদিক হলেই আমার ধ্বংস অনিবার্য”

লিও এর কথা যেনো ম্যাপল কিচ্ছুটি শুনলো না।কলের পুতুলের ন্যায় লিওয়ের শার্টের বোতাম খুলে উদোম প্রশস্ত বুক বের করে অবাকের চোখে তাকিয়ে রইলো।

কাপড় প্যচানো হাতে সেই চিহ্নে হাত বুলিয়ে ধীর কন্ঠে বলে উঠলো

“এই চিহ্ন আমার খুব করে চেনা”

ম্যাপলের কথা শুনে কষ্টে জর্জরিত হয়ে খানিক হাসলো লিও।ক্যারোলিন এর যে কয়বার পুনর্জন্ম হয়েছে তার মধ্যে দুইবার সে লিও কে চিনতে পেরেছিলো বাকি কেউ লিওকে চিনতে পারেনি।নিজের ভালোবাসার আকুতি নিয়ে বার বার লিও ফিরে গিয়েছে তাদের কাছে।কিন্তু বিনিময়ে পিচাশ উপাধি বৈ আর কিচ্ছুটি পায়নি।তবুও চাতকের ন্যায় অপেক্ষা করছে লিও।বিভিন্ন ভাবে মনে করানোর চেষ্টা করেছে নিজেদের কাটানো স্মৃতি।কিন্তু বরাবরের ন্যায় ব্যার্থ হয়েছে।কিন্তু ক্যারোলিন এর দেয়া শেষ কথা আজো ভুলতে পারেনি লিও।

“আমি আবার ফিরে আসবো তোমার কাছে।আমার অপূর্ণ ভালোবাসার পূর্ণতা ঘটাতে।যদি তোমাকে নাও চিনি তবে তুমি আমায় চিনে নিও।কথা দাও কখনো ভুলে যাবে না আমায়!”

লিও ক্যারোলিন এর রক্তাক্ত দেহ বুকে জড়িয়ে কঠোর প্রতিজ্ঞা করেছে।
“প্রাণ থাকতে কখনো ভুলবো না তোমায়।মৃত্যুর এপার ওপার দুই পাড়েই তুমি আমার”

মৃত্যুর পূর্বে ক্যারোলিন তার খোঁপায় থাকা কাঁটা দিয়ে এই বাঁকা চাঁদের চিহ্নটি লিও এর বুকে এঁকেছিল।যাতে স্মৃতিভ্রষ্ট হলেও এই চিন্হ দেখে সে লিওকে ঠিক চিনতে পারে।কিন্তু হায় ক্যারোলিন!

লিও এর চোখে চোখ রেখে ম্যাপল শুধায়
“এই চিহ্ন কবেকার?

“নয়শত বছর আগের”

“কোনো মানুষ নয়’শত বছর কিভাবে বাঁচতে পারে?

“আমি মানুষ নই”

“তবে?
“রক্ত পিচাশ”

এবারো নিশ্চুপ নির্ভয় ম্যাপল।লিও যেনো প্রতি পদে পদে এই সপ্তদশী কন্যার মনের জোর দেখে অবাক হচ্ছে।

“আমাকে দেখে ভয় লাগছে না তোমার শেহজাদী?

“উহু”

“যদি এখনই সমস্ত রক্ত শুষে নেই?

“নেবার হলে ওই বিশাল লোমশ প্রাণীর হাত থেকে আমাকে বাঁচাতে না তুমি”

“আমাকে যেতে হবে,দিনের আলো ফুটলো বলে”

“আবার কবে দেখা হবে আমাদের?

“তুমি চাইলে প্রতি রাত”

“আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরতে চাই সুপুরুষ…কোনো ভাবেই মনের ইচ্ছের লাগাম টানতে পারছি না আমি

কথাটি বলেই নিজের জামা খামচে ধরে লজ্জায় মাথা অবনত করলো ম্যাপল।
মেয়েটির মোহ গ্রস্থ অবয়বের দিকে তাকিয়ে লিও ফিচেল হাসলো।এরপর গম্ভীর গলায় বলে উঠলো

“তুমি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনছো”

আর দাঁড়ালো না লিও।হাওয়ায় মিশে যাবার আগে ম্যাপলের উদ্দেশ্য বলে উঠলো

“ফের দেখা হবে,বিদায়”

**********
“সামান্য একটা রাজকুমারী কে হ*ত্যা করতে গিয়ে নিজেই গায়েব হয়ে গেলো জ্যাস্পার?এতো নেকড়ে সাম্রাজ্যের জন্য বিশাল লজ্জা জনক ঘটনা”

অধিক ক্রোধে গর্জে উঠা কন্ঠে কথা গুলো বলে সমানে পায়চারি করতে লাগলো নেকড়ে রাজ স্যাম কেলভিন।পাশে থাকা ধূর্ত নেকড়ে ম্যাক্স চোখে আগুন মেখে বলে উঠলো

“মেয়েটিকে নিশ্চিত কেউ রক্ষা করে যাচ্ছে কিং।এর আগে আমিও চেষ্টা করেছি তার কলিজা খুবলে নিতে।কিন্তু প্রাসাদের কাছেই ঘেঁষতে পারিনি।

“আগামী ব্লাড মুনের আগেই মেয়েটির র*ক্তা*ক্ত কলিজা আমার চাই ম্যাক্স।”

“আপনি হুকুম করলে আমি এখনই যেতে পারি পুরো প্রাসাদ জুড়ে হলি খেলতে”

স্যাম নিজের সিংহাসনে পায়ের উপর পা তুলে কিছুক্ষন চুপচাপ বসে রইলো।এরপর নিজের ক্রোধ গিলে খেয়ে বলে উঠলো

“মেয়েটাকে ধরে এনে ভ্যাম্পায়ার রাজপুত্র লিও কে একটা উচিত শিক্ষা দিলে কেমন হয়?

স্যামের কথায় যেনো বেশ মজা পেলো ম্যাক্স।নিজের ধারালো বিশ্ৰী দাঁত বের করে খেকখেক করে হেসে বলে উঠলো

“আমি তো লিও এর মু*ন্ডু টা আগে চি/বি/য়ে খাবো।আজকের শিকার নয় সে আমাদের।হাজার বছরের হিসেব নিকেশ এখনো বাকি আছে”

ম্যাক্সের উত্তেজনা দেখে ধিক্কার জনক হাসলো স্যাম।এরপর চক্ষু গরম করে দাঁত খেচিয়ে বলে উঠলো

“বড় বড় কথার বেলায় খুব পাকা তুমি ম্যাক্স।এই এক হাজার বছরে লিও এর আশেপাশেই তো ঘেঁষতে পারোনি তুমি।আবার মু/ণ্ডু চিবিয়ে খাবে!নির্বোধ কোথাকার।

স্যাম এর থেকে অপমানিত হয়ে ম্যাক্সের মুখের হাসি মুহূর্তেই উবে গেলো।সেই সাথে রাজকুমারী ম্যাপল আর লিও এর উপর জমলো অস্বাভাবিক ক্রোধ।

স্যাম পুনরায় নিজের থুঁতনিতে ট্যাপ করতে করতে বলে উঠলো

“ইথার এর কোনো খবর রেখেছো?সে কি কফিন খুলতে পারবে?নাকি সেখানেও ঝামেলা বাধাবে?

ম্যাক্স নিজের মনের হিংস্রতা চেপে রেখে মুখে ক্রুর হাসি ফুটিয়ে টেনে টেনে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে উঠলো

“অবশ্যই পারবে রাজা মশাই।যেই ঘরে কফিন রাখা আছে সেখানে যে কোনো ভ্যাম্পায়ার এর পক্ষে প্রবেশ করা সম্ভব নয়।আর একবার কফিন খুলে শেহজাদী ক্যারোলিন এর বরফে আচ্ছাদিত হাতিয়ার সমেত হৃদপিন্ড হাতে নিতে পারলে কার ক্ষমতা আছে ইথার কে আটকায়?

ম্যাক্সের কথায় ভরসা করতে পারলো না স্যাম।স্যামের কাছে এদেরকে নেকড়ে কম গাধা বেশি লাগে।কমিউনিটিতে বরাবর নিজেরাই একশত বার করে ঝামেলা লাগায় এরা।এজন্যই শত্রু পক্ষের কাছে বার বার হারতে হয়।

********
কত সময় ধরে কাঠের ভারী দরজা খানা খোলার চেষ্টা করলো হ্যাভেন তা পুরোটাই তার অজানা।ধীরে ধীরে শক্তি প্রয়োগের কারনে শরীর নিস্তেজ হতে লাগলো।সেই সাথে প্রচড ক্ষুধায় পেট মুচড়ে উঠলো।সময় কতো এখন সেটাও ঠাহর করা মুশকিল ।
নেতিয়ে পরা জো এর দিকে তাকিয়ে শুকনো ব্যথিত হাসলো হ্যাভেন।এরপর নিভু নিভু কন্ঠে বলে উঠলো

“আমার প্রেমিকার দীর্ঘ অপেক্ষার বুঝি আর অবসান হলো না জো।মেয়েটা বাবা মা হীন অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে।তাকে আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম ফিরে গিয়ে স্বসম্মানে ঘরে তুলবো।কিন্তু এখানে এসে যে বড্ড ভুল করে ফেললাম জো”

হ্যাভেনের চোখে মুখে কঠিন কষ্ট আর হতাশার ছাপ।জো ক্লান্ত চোখে সবটাই দেখে সিক্ত কন্ঠে বলে উঠলো

“বাড়িতে আমার অন্ধ মা।সে তো আমাকে ছাড়া এক কদম হাটতে ই পারেনা।”

হঠাৎই ঘোড়ার খুঁড়ের শব্দে কান সজাগ হলো হ্যাভেন আর জো এর।দরজায় কান পেতে বোঝার চেষ্টা করলো শব্দের উৎস কোথায়।দরজায় কান পাততেই মনে হলো শব্দটা ধীরে ধীরে এইদিকেই এগিয়ে আসছে।হঠাৎই দরজার কাছে এসে শব্দ থেমে গেলো।এরপর মানুষের পায়ের শব্দ শুনতে পেলো তারা।
মনে হচ্ছে মানুষ গুলো এই দরজাটা খুলতে উদ্দত হচ্ছে।
পাশে থাকা বিশাল পাথরের পাশে ঝটপট জো কে নিয়ে লুকিয়ে পড়লো হ্যাভেন।
ঘরঘর আওয়াজে ধীরে ধীরে দরজা খুলতে লাগলো।দরজা কিঞ্চিৎ ফাক হতেই শীতল বাতাস প্রবেশ করলো উত্তপ্ত বদ্ধ গুহায়।পাথরের ফাক দিয়ে হ্যাভেন খেয়াল করলো একজন কালো পোশাক পরিহিত মাঝারি উচ্চতার একটি লোক হাতে ছোট একটি
বাক্স মতোন কি যেনো নিয়ে সামনের সিঁড়ি বেয়ে হেটে চলেছে।কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের ক্ষীন আলোয় সেই বাক্স খানা চকচকে দ্যুতি ছড়াচ্ছে।লোকটির চলনের ধরন দেখে মনে হচ্ছে সে কানেও শুনতে পায়না চোখেও দেখতে পায়না।মানুষরূপী বশীভূত পুতুল।লোকটি হনহন করে হ্যাভেনের দৃষ্টির আড়াল হতেই জো কে চেপে ধরে পাথরের পেছন থেকে বেরিয়ে এলো।চারিদিকে সতর্ক নজর বুলিয়ে সেই খোলে রাখা দরজা দিয়ে বাইরে বেরুতেই ঘন গহীন অরণ্য চোখে পড়লো।সেই সাথে ধবধবে সাদা আর কুচকুচে কালো রঙের ঘোড়া চালিত ফিটন।
কোনো কিছু না ভেবে সেই ফিটনে উঠে বসলো হ্যাভেন আর জো।এদিকে রাতের অন্ধকার পেরিয়ে ভোর হতে চলেছে বোধ হয়।গাছের অল্প ফাক দিয়ে চাঁদের রূপ পরিবর্তন এ এতটুকুই বুঝলো হ্যাভেন।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো

“প্রাসাদ পর্যন্ত পৌঁছাতে লোকটির অনেক সময় লেগে যাবে।সে পর্যন্ত ভোরের আলো ফুটে গিয়ে সূর্য উঠে যাবে।এই লোকটি যদি আমাদের ধরে ফেলে তবে বাড়ি ফেরার আশা একদম শূন্যের ঘরে”

হঠাৎই হ্যাভেনকে চমকে দিয়ে হনহন পায়ে কচুয়ানের আসনে বসে পড়লো লোকটি।এরপর গম্ভীর মোটা গলায় ঘোড়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

“অদূরে শহরের সরাই খানায় চল”

#চলবে

#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_১০
#সারিকা_হোসাইন

*********.
ফ্লাকি পর্বতের কাছ ঘেষে হেনরির রাজপ্রাসাদের আশেপাশে সূর্যের আলো বিলাতেও যেনো অদম্য ভয়।সকাল পেরিয়ে যাবার সাথে সাথেই ফাঁকফোকর গলিয়ে আসা ক্ষীন আলো খানা ধীরে ধীরে গায়েব হতে থাকে।সকাল আর দুপুরের মধ্যভাগে সামান্য তির্যক আলো প্রাসাদের চারপাশে আলো ছড়ালেও দুপুর গড়ানোর সাথে সাথেই সেই আলো দ্রুত বিদায় নেয়।এই টুকুন আলোতে ভ্যাম্পায়ার রা ভয় তো দূর গায়েই যেনো মাখেনা।এই রাজ প্রাসাদ দিনের বেলাতেও তাদের কাছে রাতের মতোই সরল।

নিজের সিংহাসনে বিরস মুখে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন ভ্যাম্পায়ার রাজা উইলিয়াম হেনরি।ছেলের জীবন ম/র/নের চিন্তায় আজকাল কিচ্ছু ভালো লাগছে না তার।এদিকে দূত মারফত পিতলের বাক্সে নতুন খবর এসেছে।সেই খবর পড়ে বার বার নিজের ক্রোধের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন হেনরি।

হেনরির প্রানপ্রিয় সহধর্মিনী এমিলি পাশেই বসে স্বামীর সকল কার্যক্রম দেখলেন।কিছু বলতে চেয়েও থেমে গেলেন।আজকাল এই হেনরি কে তার দুই চক্ষে সহ্য হয়না।থেকে থেকেই মনে হয় হেনরী বাবা হিসেবে ব্যর্থ।যেই লোক নিজের ছেলেকে রক্ষা করতে পারে না সে আবার কিসের রাজা?
তবুও হেনরির অধিক চিন্তিত হবার কারন এমিলির মস্তিষ্কে ধরা দিলো না।

হাতে থাকা পত্র টা কিছুক্ষন নেড়েচেড়ে নিজের বিশ্বস্ত সেনাপতি কে ডেকে উঠলেন হেনরি

“জেনারেল ড্রাকো”

সামনেই দাঁড়ানো ছিলো ত্রিশ বছর বয়সী তাগড়া যুবক ভ্যাম্পায়ার সেনাপতি ড্রাকো।মহারাজের আদেশ পেতেই বুকে হাত রেখে মাথা নিচু করে আদেশ এর অপেক্ষায় রইলো সে।
ড্রাকোর পানে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হেনরি বলে উঠলেন

‘”স্ভিনিকা পর্বত দখলের ব্যাবস্থা করো।নেকড়ে রাজ স্যাম কেলভিন আমার ছেলেকে নিয়ে বেশ বড় রকমের তামাশা করতে চাইছে।বাপ হিসেবে ছেলেকে রক্ষা করার দায়িত্ব অবশ্যই আমার রয়েছে”

ড্রাকো কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো

“প্রাসাদে নেকড়ে ঢুকেছিলো মহারাজ।”

বসা থেকে লাফিয়ে উঠলেন এমিলি আর হেনরি।মুখ দিয়ে যেনো কোনো কথা বেরুতে চাইছে না তাদের।ক্রোধে মুহূর্তেই চোখ আগুনের ফুলকির ন্যায় জ্বলে উঠলো।বেরিয়ে এলো সুচালো তীক্ষ্ণ দাঁত।

“কোথায় সেই নেকড়ে?
গর্জে উঠলেন হেনরি।

ড্রাকো মাথা অবনত রেখেই বলে উঠলো

“শেহজাদীর কফিন কক্ষে প্রবেশ করেছিলো।যুবরাজ লিও লুকাস কে দিয়ে তাদের ব্যাবস্থা করেছেন।কিন্তু মনে হচ্ছে প্রাসাদে দুজন মানুষ নয় বরং চারজন ঢুকেছিলো।তাদের ব্যবহৃত চারটি ঘোড়ার মৃ*ত দেহ জঙ্গলে পাওয়া গিয়েছে।”

“তাহলে বাকি দুজন কোথায়?
চিন্তিত স্বরে চিৎকার করে উঠলেন এমিলি।

দ্রাকো মাথা নিচু করে বলে উঠলো

“সারা প্রাসাদে চিরুনি তল্লাশি চালিয়েও তাদের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি মহারানী।হতে পারে প্রাসাদে ঢোকার আগেই হয়তো তারা বিদায় নিয়েছে নিজেদের ঘোড়া রেখে”

“তারা কি কফিন খুলতে সক্ষম হয়েছিলো?

“না মহারাজ”

আর কথা বাড়ালেন না হেনরি।র/ক্ত পূর্ণিমার আগে সব সময় এতোটা উদ্বিগ্ন হতে আর ভালো লাগে না তার।এখন মনে হচ্ছে মানুষ হলেই ভালো ছিলো।দুনিয়ার সকল তামাশা থেকে অন্তত মুক্তি মিলতো।

সিংহাসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে লিও এর রক্ষী আলফ্রেড কে ডাকলেন হেনরি।হেনরির আদেশ পেতেই দৌড়ে সামনে এসে দাড়ালো আলফ্রেড।

“হুকুম করুন মহারাজ”

“লিও এর ঘুম ভাঙানোর ব্যাবস্থা করো”

আলফ্রেড ইতস্তত করে ধীর কন্ঠে বলে উঠলো

“যুবরাজ আজকে দেরিতে ডাকতে বলেছে,উনি বিশেষ ভাবে ক্লান্ত”

“এতো শক্তি কোথায় অপচয় করছে তোমার যুবরাজ আলফ্রেড?শুনেছি আজকাল মানুষের র/ক্ত খাওয়াও ছেড়ে দিয়েছে।সাধারণ এক মানবীতে এতোই মজেছে সে?

আলফ্রেড মাথা উঁচু করে কিছুই বললোনা।ঠাঁয় পূর্বের ন্যায় মাথা ঝুঁকেই দাঁড়িয়ে রইলো।হেনরির ক্রোধ আঁচ করতে পেরে এমিলি বলে উঠলো

“তাকে ডেকে তোলার ব্যবস্থা করো আলফ্রেড।একদিন ওই শেহজাদী কে না দেখলে সে ম/রে যাবেনা।তার সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ রয়েছে।হাজার বছরের জমানো শক্তি একদিন না ঘুমুলেই কি শেষ হয়ে যাবে?

আলফ্রেড বুঝতে পারলো জটিল কিছু হয়েছে।তাই আর এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে এমিলির কথাকে সায় জানিয়ে বলে উঠলো

“আমি এখনই তাকে জাগানোর ব্যবস্থা করছি মহারানী”

*********
সারাটা সকাল খুবই ছটফট করে কাটলো ম্যাপলের।এই কক্ষ থেকে তার বের হওয়া বড়োই প্রয়োজন।প্রাসাদের চারপাশে কি হচ্ছে সেটা একবার নিজ চোখে দেখা চাই।সময় এখন দুপুর পেরিয়ে।নিজের বিশাল ঘের যুক্ত প্ৰম্প গাউন দুই হাতে উঁচু করে ধরে দরজার খিড়কি খুলে বাইরে বেরুনোর জন্য কদম রাখলো ম্যাপল।সাথে সাথেই দুজন দ্বার রক্ষী নিজেদের হাতের তলোয়ার দিয়ে দ্বার আগলে বলে উঠলো

“এই কক্ষের বাইরে বের হওয়া আপনার জন্য কঠিন নিষেধ রাজকুমারী”

দ্বার রক্ষীর কথা শুনে মগজে যেনো আগুন জ্বলে উঠলো ম্যাপলের।মুখে ক্রোধ ফুটিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো

“কে দিয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা?

“আমি দিয়েছি”

মোহনীয় গম্ভীর আকর্ষণীয় পুরুষালি কন্ঠে চমকে উঠলো ম্যাপল।চমকানো দুরুদুরু বক্ষে সামনে দাঁড়ানো বিশালদেহী সুদর্শন যুবকের দিকে তাকিয়ে বিস্ফারিত নেত্রে ম্যাপল বলে উঠলো

“রাজকুমার ফেলিক্স!

“হ্যা আমি।খুশি হওনি আমাকে দেখে?

মনে মনে অনেক কথা গুছিয়ে ফেললেও কন্ঠনালী দিয়ে কিচ্ছুটি প্রকাশ করতে পারলো না ম্যাপল।নিজের জীবনের উপর আরেক জনের হস্তক্ষেপ মোটেও পছন্দ নয় তার ।সেখানে আরেক রাজ্যের রাজ কুমার হয়ে এখানে এসে ম্যাপলের বিষয়ে নাক গলানো বেশ অপছন্দের মনে হলো ম্যাপলের কাছে।

“আমি বাবার সাথে কিছু কথা সাড়তে চাই।আমার দ্বার ছেড়ে দিতে বলুন রাজকুমার ফেলিক্স”

“তুমি এই ঘরের বাইরে একটা কদমও রাখবে না রাজকুমারী।দরকার পড়লে তোমার বাবাকেই এখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে”

নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখে চোখে আগুন ঢেলে ম্যাপল ফুঁসে উঠলো

“আপনি সীমা লঙ্ঘন করছেন ফেলিক্স”

“নিজের হবু স্ত্রীর ব্যক্তিগত ব্যপারে কথা বলা যদি সীমালঙ্ঘন হয় তবে আমি তাই করছি।

ফেলিক্সের মুখ থেকে হবু স্ত্রী কথাটি কর্ণপাত হতেই অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেলো ম্যাপল।

“এসব কি বলছেন রাজকুমার?কিসের হবু স্ত্রী আমি আপনার?

ম্যাপলের অবাক চেহারা দেখে ফেলিক্স প্রশস্ত ঠোঁটে হাসলো।এরপর ম্যাপলের দিকে সামান্য ঝুকে এসে এলোমেলো হয়ে যাওয়া কালচে বাদামি চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বলে উঠলো

“তোমার বাবা আমাদের বিবাহ ঠিক করেছে।তোমার বয়সের কোঠা সতেরো পেরিয়ে আঠারো ছুলেই দলিল সমেত আমার হবে তুমি”

কথাটা বলে প্রশস্ত বুকে বলিস্ঠ দুই হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে বাঁকা হাসলো ফেলিক্স।ফেলিক্সের কথায় ম্যাপলের বাদামি মনি গুলো চিকচিক করে উঠলো।বুক ঠেলে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইলো।হৃদ অলিন্দে সূক্ষ্ণ ব্যাথার উপস্থিতি অনুভব করলো।ফেলিক্সের সামনে থেকে দুই কদম পিছিয়ে গিয়ে মাথা নেড়ে অস্ফুট স্বরে আওড়ালো

“এ কিছুতেই হতে পারে না”

রাজকুমারীর অস্ফুট কথা খানা বেশ করে বুঝে নিলো ফেলিক্স।নিমিষেই মুখের হাসি বিলীন করে ক্রোধিত নজরে তাকিয়ে বলে উঠলো

“তুমি মানো আর না মানো আমাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে তুমি বাধ্য”

আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না ফেলিক্স।লম্বা লম্বা পা ফেলে নিজের গাম্ভীর্য বজায় রেখে নিমিষেই ম্যাপলের দৃষ্টির সীমানার বাইরে চলে গেলো।

রাগে দুঃখে মাটিতে হাটু মুড়ে বসে ম্যাপল চিৎকার করে উঠলো

“স্যান্ডি!

*******
বন পেরিয়ে পাহাড় পেরিয়ে ছুটে চলেছে অদ্ভুত ঘোড়া চালিত ফিটন খানা।পর্দা ঘেরা ফিটনের দুই সিটের নীচে গুটিশুটি মেরে উপুড় হয়ে আছে হ্যাভেন আর জো।ভয়ের চোটে নাসারন্ধ্র গলিয়ে নিঃশ্বাস ও যেনো বেরুতে চাইছে না।ধীরে ধীরে অন্ধকার পেরিয়ে সামান্য আলোর দেখা পেলো তারা।কোথা থেকে কোথায় যাত্রা করছে তারা কিচ্ছুটি জানেনা আর জানতে চায় ও না।শুধু একটু লোকালয়ে পৌঁছুতে পারলেই হলো। ধীরে ধীরে সমতল রাস্তায় ছুটতে লাগলো ফিটন টি।তবে যাত্রার সময় অনুমান করে হ্যাভেন মনে মনে ভাবলো

“ফ্লাকি পর্বত থেকে তারা বেশ দূরে কোথাও যাত্রা করতে চলেছে”..

আরো কতো সময় গড়ালো তার হিসেব রাখলো না হ্যাভেন।তারা শুধু ফিটন এর থামার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।হঠাৎই কর্ণকুহরে মানুষের হাঁক ডাকের শব্দ বাড়ি খেলো।এবার যেনো বেঁচে ফেরার সামান্য আশা পেলো দুজনে।ঘোড়া দুটোর পায়ের গতি শ্লথ হলো বুঝি।এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে থেমে গেলো ফিটন।
কচুয়ানের সিট থেকে নেমেই লোকটি ঘোড়া দুটোর উদ্দেশ্যে ভারিক্কি গলায় বলে উঠলো

“এখানেই থাক তোরা।আমি একটু নারী সঙ্গ উপভোগ করে আসি।

লোকটির কথার ধরনে হ্যাভেন ঠিক বুঝতে পারলো লোকটি কিসের কথা বলছে।ঘোড়া গুলোর তেমন কোনো শব্দ পাওয়া গেলো না।জো হ্যাভেন কে ফিসফিস করে বলে উঠলো

“চলো নামা যাক”

সিটের নিচ থেকে মাথা বের করে দুজনেই সিটে উঠে বসলো এরপর চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে লোক চক্ষুর আড়ালে ফিটন থেকে নেমে দাঁড়ালো।ফিটন থেকে নেমেই দুজনের চক্ষু বিস্ফারিত।
জায়গাটা পাপের রাজত্ব বললে কম হবে।চারপাশ জুড়ে শরাব, জোয়া আর উগ্র অর্ধ বিবস্ত্র নারীতে পরিপূর্ণ।
মেয়ে গুলো অবলীলায় চুরুট টানছে আর ভকভক করে ধোয়া উড়িয়ে দিচ্ছে খদ্দেরের গায়ে।জায়গাটা বেশ অদ্ভুত ঠেকলো হ্যাভেনের কাছে।মানুষ গুলোর আচরণ ও কেমন যেনো অদ্ভুত।প্রত্যেকটা মানুষ কেমন দাঁত মুখ খেচিয়ে ভয়ংকর আচরণ করছে।কিন্তু আশেপাশের কোনো জিনিসে তাদের খেয়াল নেই।বশীভূতের ন্যায় এক বিষয়েই দৃষ্টি স্থির তাদের।
নিজেদের গায়ে জড়ানো লম্বা পোশাক টেনে টুনে হাত ঢেকে ফেললো দুজনে।এরপর ছোট মাফলার দিয়ে মুখ ঢেকে নিজেদের পালানোর পথ খুঁজতে লাগলো।
পুরো এলাকাটি হ্যাভেনদের কাছে নিষিদ্ধ জায়গা বলেই মনে হলো।থেকে থেকেই নারী পুরুষ দুজনের ই শীৎকার মিশ্রিত আনন্দ চিৎকার কানের পোকা নাড়িয়ে দিচ্ছে।

“আমরা ভুল জায়গায় এসে পড়েছি জো।মনে হচ্ছে এখানে কোনো সাধারণ মানুষের চলাচল নেই”

ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে জো শুধালো
“তাহলে এখানে কারা আসে হ্যাভেন?

আশেপাশে নজর বুলিয়ে চোখে ভীত নজর এনে হ্যাভেন ফিসফিস করে বলে উঠলো

“তুমি কখনো রক্তপিপাসু দের নাম শুনেছো জো?

হ্যাভেনের প্রশ্নে জো এর পায়ের তলায় মাটি সরে গিয়ে মেরুদন্ড বেয়ে হীম স্রোত নেমে গেলো।দুই পা অসাড় হয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে চাইলো।কিন্তু হ্যাভেন শক্ত হাতে জো কে সামলে বলে উঠলো

“এখানে ওই সমস্ত মানুষের ই যাতায়াত যারা সাধারণ মানুষ নয়”

“তাহলে এখান থেকে বেঁচে ফেরার উপায়?

মুহূর্তেই এক অর্ধ উলঙ্গ মেয়ে এসে বিশ্ৰী হেসে হ্যাভেন এর উপর ঢলে পড়তে চাইলো।সুদর্শন চৌকস হ্যাভেন কৌশলে তাকে ঝটকা দিয়ে সরিয়ে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো

“সামান্য পতিতা হয়ে রক্তপিচাষের সেবকের গায়ে ঢলে পড়ার সাহস কোথায় পেয়েছিস?

মেয়েটি বোধ হয় সামান্য ভীত হলো।চুপচাপ সরে দাঁড়িয়ে মিনমিন গলায় বলে উঠলো

“আসলে আমি এই জায়গায় নতুন।তাই হয়তো ভুল করে ফেলেছি”

মেয়েটির থেকে কোনো মতে সরে বেশ জোরে পা চালিয়ে সরাই খানা পেরিয়ে মফস্বলের শেষ কিনারায় এসে দাঁড়ালো দুজনে।এরপর ভীত কন্ঠে হ্যাভেন বলে উঠলো

“পেছনে যাই হয়ে যাক জো ফিরেও দেখবে না।অদুরের যেই বনটা দেখছো ওটা পেরুলেই আমরা এই মৃ/ত্যু/পু/রী থেকে রেহাই পাবো।এখানে যারা আসে সবাই রক্তপিচাষের সেবক।এরা বশীভূত।এখনই পালানোর উপযুক্ত সময় জো।

**********
বেলা কতো গড়িয়েছে ম্যাপল কিছুই জানে না।সারাটা দিন ধরে সে শুধু রাজকুমার ফেলিক্স এর কথা গুলো ভেবে চলেছে।যেখানে মনের অর্ধেকটা বিলিয়ে দেয়া হয় গিয়েছে ওপর একজন কে সেখানে ফেলিক্স কে স্বামী হিসেবে গ্রহন করা মোটেও সম্ভব না।মনে একজনের জন্য ভালোবাসা রেখে ওপর জনকে স্বামী হিসেবে মেনে নেবার মতো যন্ত্রনা পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই।

“আর হাজার বছর ধরে যেই পুরুষ ভালোবাসার অঙ্গার বুকে নিয়ে বেঁচে আছে তার কি হবে?আমি কিছুতেই তাকে খালি হাতে ফেরাতে পারবো না।না চাইতেও সে আমার সাথে জড়িত।”

দরজায় মৃদু আঘাত করে স্যান্ডি খাবারের থাল সাজিয়ে কক্ষে প্রবেশ করলো।রাজকুমারীর বিধ্বস্ত অবস্থার কারন সম্পর্কে সে অবগত।কিন্তু সামান্য একজন দাসী হয়ে এই বিষয়ে কথা বলার অধিকার ও তার নেই।নিঃশব্দে কক্ষের ছোট টেবিলের উপর খাবারের থাল রেখে আহত কণ্ঠে স্যান্ডি বলে উঠলো

“খেয়ে নিন রাজকুমারী।আপনি এভাবে মন ভার করে থাকলে আমার খুব কষ্ট হয়”

নিজের অশ্রুসজল চোখে স্যান্ডির দিকে তাকিয়ে সিক্ত আহত কন্ঠে ম্যাপল বলে উঠলো

‘রাত গড়ানোর আগেই আমার জন্য ভারী দস্তানার ব্যবস্থা করো স্যান্ডি।বুকে যেই গভীর ক্ষ/তে/র সৃষ্টি হয়েছে তার চিকিৎসা প্রয়োজন,

#চলবে