#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৪০
আব্রাহাম হস্পিটাল থেকে বের হয়ে সোজা হোটেলে চলে যায়। সেখানে আব্রাহামের আন্ডারে যতগুলো গার্ড ছিলো সবগুলো কে এলার্ট করে দেওয়া হয়৷ পাতাল থেকে হলেও যারা আইরাতের এক্সিডেন্ট করিয়েছে তাদের খুঁজে ধরে নিয়ে আসতে বলে। আব্রাহাম নিজের রুমে চলে যায়। মাথা টা কেমন ধরেছে তার। বারবার আইরাতের চেহারা টা চোখের দেওয়ালে ভেসে বেড়াচ্ছে। রুমে এসে আব্রাহাম চারিদিকে চোখ বুলায় একবার। সবদিকে আইরাতের স্মৃতি জড়িয়ে আছে৷ হাত দিয়ে ঠেলে মাথার ওপর থেকে হুডি টা ফেলে দেয়৷ হুডি সম্পূর্ণ খুলে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আইরাতের রক্তে ভেজা শার্ট টা তার গায়ে। হাত দিয়ে একবার একটা ছুইয়ে দেয়। রক্তমাখা আইরাত কে নিজের বাহুতে নিয়ে চিল্লিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সাদা-কালো আকারে চোখের দর্পণে ভাসছে তার। কয়েক ঘন্টা আগেও আইরাত ভালো ছিলো, তার সাথেই ছিলো। তরতাজা একটা মেয়ে এখন মৃত্যুর মুখে। জীবন-মৃত্যুর মাঝে ঝুলছে সে। পুরো রুমে আইরাতের হাসির আওয়াজ যেনো বাজছে। আইরাত যে এখান থেকে ওখানে দৌড়াদৌড়ি করতো তা মনে পরছে। আব্রাহাম আর এতো প্রেসার সহ্য করতে না পেরে পাশে হাতের কাছে থাকা একটা ফ্লাওয়ার ভ্যাস তুলে আয়নাতে ছুড়ে মারে। মূহুর্তেই ঝরঝর করে আয়নার কাচ সম্পূর্ণ ভেঙে নিচে পরে যায়। আব্রাহাম তার দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বসে পরে৷ কিছুক্ষণ এভাবে বসে থেকে উঠে দাঁড়ায়। পায়ের রক্ত মাথায় উঠে পরেছে তার৷ রাগে যেনো শরীরের রক্ত টগবগ করছে। যাই হয়ে যাক আজ তো তায়াফ কে খুন করেই দম নিবে সে। চোখ তুলে ওপরে তাকায়। চোখে অশ্রুবিন্দু আর মুখে রাগের সংমিশ্রণ। কোন কথা ছাড়াই রিভলবার টা বের করে হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে পরে। আব্রাহামের গায়ে এখনো ওই রক্ত মাখা শার্ট টাই। এটা পরেই বাইরে বের হয়েছে৷ যেদিক দিয়ে যাচ্ছে সেদিকেই মানুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত নজরে। অনেকে তো আবার ভয়ের চোটে তার কাছ দিয়েও যেতে চাইছে না। গাড়িতে উঠে তায়াফের বাড়ির উদ্দেশ্যে যেতে লাগে। গাড়ি না যেনো ঝড় উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷ তায়াফের বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে নেমে পরে। তায়াফের বাড়ির সামনে কিছু গার্ড ছিলো। আব্রাহাম কে এমন লুক নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখেই তারা কয়েক কদম হেঁটে যায়। আর আব্রাহাম বিনাবাক্যে তাদের গুলি করে দেয়। এক লাথি দিয়ে বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পরে। তবে গিয়ে দেখে কেউ নেই। বাড়ি পুরো ফাকা৷ সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠে রুমে গিয়েও দেখে কেউ নেই। তায়াফ কে না পেয়ে তো আব্রাহামের মাথা আরো বেশি গরম হয়ে যায়। দ্রুত বাইরে বের হয়ে দেখে প্রায় সবাই গুলি খেয়ে নিচে পরে আছে তবে একটা গার্ড নিচে শুয়েই কাতরাচ্ছে। আব্রাহাম তার কাছে গিয়ে কলার খামছে ধরে দাঁতের চোয়াল শক্ত করে বলে….
আব্রাহাম;; তায়াফ কোথায়? বল তায়াফ কোথায়? জলদি বল ****** নয়তো যতটুকু জীবন বাকি আছে সেটুকুও নিয়ে নিবো বল।
গার্ড;; উ উন উনি, উনিহ এয়ারপোর্টে।
আব্রাহাম;; এয়ারপোর্টে কেনো? বল
গার্ড;; উনি হয়তো দ দ দে দেশে ফ ফিরে যাবেন ত তাই।
আব্রাহাম উঠে ওই গার্ডের মুখ বরাবর দেয় এক লাথি মেরে, দাঁত তো অবশ্যই ভেঙেছে। দ্রুত কদম ফেলে আবার এসে গাড়িতে উঠে বসে। যেখানে এয়ারপোর্টে যেতে লাগতো ঘন্টা খানিক সময় সেখানে দশ কি পনেরো মিনিটে এসেছে সে। এয়ারপোর্টের বাইরে গাড়ি থামিয়ে নেমে পরে। স্বজোরে গাড়ির দরজা লাগিয়ে ভেতরে আসতে ধরে। তবে ভেতরে প্রবেশ করার সময় সিকিউরিটি গার্ড রা থামিয়ে দেয়। আব্রাহাম কপাল কুচকে একবার সিকিউরিটি গার্ডের দিকে তাকায় আরেকবার তার হাতের দিকে। আব্রাহাম কিছু বলে না শুধুই দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু তখনই সিনিয়র একজন এসে তড়িঘড়ি করে ওই গার্ড কে সরিয়ে দেয়। তারপর ক্লিয়ারলি সব বলে। জীবন বাঁচাতে চাইলে যেনো আব্রাহাম কে ভেতরে আসতে দেয়। কিছু কড়া কড়া কথা বলে সিকিউরিটি কে সিনিয়র কর্মকর্তা এসে। তারপর সিকিউরিটির কিছু বলার আগেই আব্রাহাম রেগে ভেতরে এসে পরে। আব্রাহাম কে রক্তমাখা শার্ট পরে থাকতে দেখে এবং হাতে রিভলবার দেখে সাধারণতই ভরকে যায় সবাই। এভাবে আব্রাহাম কখনোই কারো সামনে আসে নি। আর এমন করে পাবলিকের সামনে আসাটাও যে ভালো দেখায় না। তবে এই মূহুর্তে মাথায় রক্ত চেপে বসে আছে তার। আমজনতার যেনো কোন সমস্যা না হয় তাই আব্রাহাম মেনেজার কে বলে দশ মিনিটের মধ্যে এয়ারপোর্ট ফাকা করে দিতে বলে। এয়ারপোর্ট থেকে সবাই কে চলে যেতে বলে এবং সব ফ্লাইটগুলো ক্যান্সেল করে দিতে বলে। এতে যার যত টাকা ক্ষতি হবে সব আব্রাহাম দিবে। আব্রাহামের কথা মতো বেশ কিছু সময়ের মাঝেই পুরো এয়ারপোর্টে ফাকা হয়ে গেলো। এবার আব্রাহাম শুধু হাতে গান নিয়ে হেঁটে চলেছে।
অন্যদিকে তায়াফ একদম ফুল বডি মুখ সব ঢেকে তারপর এসেছে। একে তো একটা মেয়েকে খুন করার চেষ্টা করেছে আর দ্বিতীয় হীরে নিয়ে ভাগছে। তাই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে তার। তবে একটা জিনিস তায়াফ কে অবাক করে তা হচ্ছে মূহুর্তেই এয়ারপোর্ট এমন খালি হয়ে কেনো গেলো! তার ফ্লাইট আছে, সময় প্রায় পেরিয়ে যাচ্ছে এর মাঝে এনাউন্সমেন্ট কিছুই করা হলো না। তায়াফ বসে ছিলো তবে এভাবে আর বসে থাকতে না পেরে তায়াফ উঠে পরে। হাতে নিজের ব্যাগ টা নিয়ে মাথা কিছুটা নুইয়ে যাচ্ছে। পুরো ফাকা এয়ারপোর্টে হেঁটে যেতে যেতেই হঠাৎ পাশ থেকে কাউকে চোখে পরে তায়াফের। সে পাশ কাটিয়ে চলেই যেতো কিন্তু সেটা যেনো তার চোখে বাধে। তায়াফ থেমে গিয়ে কপাল কুচকে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। পাশে তাকাতেই কপালের ভাজ দ্বিগুণ হয় তার। আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে। একটা কালো প্যান্ট আর ধবধবে সাদা শার্ট পরনে। যে শার্টে আইরাতের রক্ত লেগে আছে। তায়াফের নজর যায় আব্রাহামের হাতের দিকে। রিভলবারের ট্রিগার ঘুরিয়ে যাচ্ছে সে। তায়াফের যা বুঝার তা সে বুঝে গেলো। আব্রাহাম কে দেখে তার হাত থেকে ব্যাগ টা নিচে পরে যায়। তায়াফ ঘুরে দৌড়ে সেখান থেকে চলে আসতে নিবে তখনই আব্রাহাম সোজা তায়াফের বাম পা বরাবর দুটো গুলি চালিয়ে দেয়৷ দুটোই তার পায়ে লেগেছে। ধিরিম করে পরে যায় সে। একদম জনমানব হীন ফাকা জায়গায় বুলেটের আওয়াজ যেনো সুস্পষ্ট। তায়াফ নিচে পরে কাতরাতে লাগে৷ তখনই আব্রাহামের পেছন থেকে কতোগুলো গার্ড আসে তারা এসেই তায়াফের কলার খামছে ধরে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে লাগে। আর আব্রাহাম তায়াফের ব্যাগ টা নিয়ে নেয়। এখানেই হয়তো হীরে আছে। গার্ড রা তায়াফ কে নিজেদের সাথে গাড়িতে তুলে নেয়। তায়াফের পা থেকে রক্তে যেনো সব ভিজে যাচ্ছে আর আব্রাহাম গিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে বসে। কিছুসময় পর আব্রাহামের কাছে একটা ফোন কল আসে। আব্রাহামের গার্ড রা ওই লোকগুলো কে ধরে ফেলেছে যারা আইরাতের এক্সিডেন্ট করিয়েছিলো। তারা মোট চারজন ছিলো। আর আব্রাহাম যেভাবে নিজের সব গার্ড দের কে সবদিকে খোঁজে পাঠিয়ে দিয়েছে তাতে তাদের ধরা তেমন কোন একটা বড়ো ব্যাপার না। কয়েক ঘন্টার মাঝেই তারা হাতের নাগালে।
গার্ড;; স্যার ধরে ফেলেছি। ওরা চারজন মোট। এখন এদের আপনার কাছে নিয়ে আসবো কি!
আব্রাহাম;; না
গার্ড;; এদের কি করবো স্যার?
আব্রাহাম;; ওদের প্রত্যেকটার মাথা শরীর থেকে আলাদা হওয়া চাই।
গার্ড;; স্যার…
আব্রাহাম;; একটারও মাথা যেনো আর তাদের ঘাড়ের ওপর না থাকে। সবগুলোর মাথা ধর থেকে আলাদা করে দাও। তারপর তাদের লাশ আবার তাদের সেই গাড়িতে ভরেই তাতে পেট্রোল ঢেলে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে খাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দাও। যেনো তাদের কাক-পক্ষীও খুঁজে না পায়।
গার্ড;; জ্বি স্যার।
আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। আব্রাহামের গাড়ি আগে আগে যাচ্ছে আর তার পেছনের গাড়িতে তার গার্ড রা তায়াফ কে ধরে নিয়ে আসছে। দেখতে দেখতেই তারা পৌঁছে যায় একটা আধো ভাঙা বাড়ির দিকে। বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়েই গার্ড রা তায়াফ কে ঘাড় ধরে টেনে টেনে ভেতরের দিকে নিয়ে যায়। তারপর আব্রাহাম তার গাড়ি থেকে নেমে পরে। ভেতরে চলে যায়। তায়াফ কে একটা চেয়ারের সাথে বেধে বসিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে তার পায়ে যে গুলি লেগেছে তার ব্যাথায় আসর হয়ে যাচ্ছে সে। আব্রাহাম এসে তায়াফের সামনে বসে। তায়াফ ব্যাথায় ছটফটিয়েই যাচ্ছে। আব্রাহাম তার একহাত হাটুর ওপর রেখে গান দিয়ে নিজের দিকে দেখিয়ে দিতে দিতে বলে…
আব্রাহাম;; দেখ আমার দিকে তাকা। দেখ এই যে এই রক্তগুলো যে দেখছিস না এইসব, এইসব আমার আইরাতের। একটা হাসিখুশি মেয়ে কে এখন তুই মৃত্যুর মুখে বসিয়ে রেখেছিস। তোর ওপরে তো জেদ আমার আগে থেকেই ছিলো হীরে নিয়ে। কিন্তু তা এখন তুই ডাবল করে দিয়েছিস একমাত্র আইরাত কে নিয়ে। আরে আইরাত তো এটাও জানে না যে তোর সাথে আমার কোন শত্রুতা আছে। কিন্তু তুই টার্গেট করলি ওকে। তুই জানিস আইরাত আমার কে হয়? আমার বিয়ে করা বউ হয় ও। আমি জাস্ট ভাবতে পারি না তুই আমার আইরাতের দিকে নজর দিয়েছিস।
আব্রাহাম আরেকটা গুলি তায়াফের হাটু বরাবর করে দেয়। এতে কাপড় ভেদ করে গুলি হাটুতে লেগে ছিটকে ওঠে। হাটুর খুলিই উড়ে গেছে। আব্রাহাম রেগে গর্জন করে ওঠে চেয়ার তুলে এক আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে। সব গার্ড রা এতে হালকা চমকে ওঠে। দুহাত বেধে মাথা নিচু করে রেখেছে তারা। আব্রাহাম নিজের হাত থেকে রিভলভার দূরে ছুড়ে মারে। তারপর হাতের আঙুলে স্টীলের কাটা কাটা ধারালো ব্রোজ প্যাচিয়ে নিতে নিতে তায়াফের দিকে এগিয়ে গিয়ে তার বুকে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ঘুষি মেরে দেয়। তায়াফের গায়ের শার্ট ছিড়ে তার শরীর কেটে যায়। আব্রাহাম তায়াফের মুখ টা চেপে ধরে ওপরে দিকে করে ধরে…
আব্রাহাম;; এই চোখ দুটো, এই চোখ দুটো দিয়েই তুই আমার আইরাতের দিক তাকিয়েছিলি তাই না। এই চোখ গুলো দিয়েই।
আব্রাহাম সাইকো হয়ে গেছে। রাগে পাগলের মতো এদিকে ওদিকে তাকাতাকি করছে। কি থেকে কি করবে তায়াফ কে সে দিশা খুঁজে পাচ্ছে না। অবশেষে হাতের কাছে একটা মোটা রড পায়। সেটা খানিক ওপরে তুলে আবার নিজের হাতে নিয়ে নেয়। বাম হাত দিয়ে তায়াফের মুখ চেপে ধরে ওপরে তুলে ডান হাত দিয়ে রড টা ধরে একবারেই তায়াফের বাম পাশের চোখের একদম ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। জ্যান্ত অবস্থায়৷ তায়াফ নিজের অন্তর-আত্না ছেড়ে দিয়ে চিল্লিয়ে ওঠে। রক্ত তার গা বেয়ে বেয়ে পরছে। পরক্ষণেই আবার বাম পাশের চোখ থেকে রড তুলে নিয়ে ডান পাশের চোখেও এক নিমিষেই ঢুকিয়ে দেয়। এবার রড যেনো চোখের ভেতর টা একদম ভেদ করে মাথার পেছন দিয়েই বের হয়ে গেছে। রক্তের ধারা। একজন গার্ড তো এগুলো আর দেখতে না পেয়ে মুখ কুচকে দিয়ে রুম থেকে বেরই হয়ে গেছে। আর আব্রাহাম কে দেখে মানুষ সোজা কথা এখন ভয়ে মরে যাবে। কাপছে সে রাগে। মুখের পুরো ভাবই পালটে গেছে তার। তায়াফের হাত পা সব বাধা তাই তার কাছে এখন করার মতো কিছুই নেই। শুধু চিৎকার করা ছাড়া৷ আব্রাহাম এবার গার্ড কে বলে দুই ড্রাম পেট্রোল নিয়ে আসতে বলে। পেট্রোল এনে তার সবগুলো তায়াফের ওপরে ঢেলে দেয়। রক্ত আর পেট্রোলে এক বিচ্ছিরি অবস্থা। রুমের যতগুলো ইলেকট্রিক ওয়ার ছিলো সেগুলোর কানেকশন খুলে নিয়ে আসতে বলে। সবকিছু আনার পর নিজের কোমড়ে দুহাত দিয়ে দাঁড়ায়। তায়াফের দিকে এক নজর তাকায়। দেখে তায়াফের চোখ দুটো আর নেই। মুখ রক্তাক্ত। পেট্রোল ভেজা অবস্থায় চেয়ারে বসে শুধু ব্যাথায় গোঙাচ্ছে। তায়াফের বলা আগের কথা গুলো এখন আব্রাহামের মাথায় ঘুরছে। সাহস কতো বড়ো আইরাতের দিকে নজর দেয় সে। আব্রাহাম লাথি দিয়ে এক বড়ো কাচের টেবিল ভেঙে ফেলে। তারপর বিশাল দেখে এক কাচের টুকরো নিয়ে তায়াফের দিকে এগিয়ে গিয়ে চুল ধরে ওপরে তুলে বিনাবাক্যে তার গলার শ্বাসনালি তে ছুরির মতো বিধিয়ে দেয়। এক বারেই পুরো কাচের টুকরো ঢুকিয়ে দিয়েছে গলায়। তায়াফ কে তিলে তিলে মেরে ফেলছে সে। ঘেমে গেছে আব্রাহাম। ফুসতে ফুসতে অবশেষে গিয়ে একটা গার্ডের হাত থেকে ইলেকক্ট্রিক ওয়ার গুলো নিয়ে নেয়। তায়াফের কাছে এগিয়ে গিয়ে দেখে তার মাঝে এখনো জীবন বাকি আছে। অবস্থা তার জঘন্য। তায়াফ একটা চেয়ারে হাত-পা বাধারত অবস্থায় দুচোখ নেই, এমনকি ডান চোখে রড বিধে আছে যা পেছনে মাথা ভেদ করে গেছে। গলায় কাচের টুকরো বিধে আছে, গায়ে হাজারো আচড়, তার ওপর পেট্রোল দিয়ে শরীর ভেজা। আব্রাহাম এবার খুব কষ্টে কিছুটা শান্ত হয়, ইলেকক্ট্রিক ওয়ার গুলো আস্তে করে নিয়ে গিয়ে তায়াফের ওপরে রেখে দেয়। তারপর তায়াফের কলার খামছে ধরে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে বলে ওঠে….
আব্রাহাম;; আমার জান, আমার জীবন, আমার দুনিয়া, আমার অস্তিত্ব, আমার প্রাণভোমরা, আমার ভালোবাসা, সব আইরাত। ও পুরোপুরি আমার শুধুই আমার।
তায়াফ শুধু গোঙাচ্ছে মরণ যন্ত্রণায়।
আব্রাহাম;; “কসম লাগে খোদার কেউ যদি ওর দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছে তাহলে তাকে এমন মৃত্যু আমি দিবো যে ‘মৃত্যু’ নিজেই ওকে দেখে ভয় পেয়ে যাবে”। যা আজ তোকে আমি দিলাম।
এই বলেই আব্রাহাম ধাক্কা দিয়ে দেয় তায়াফ কে। তার থেকে বেশ দূরে সরে এসে ইলেকট্রিক ওয়ারের যে সুইচ ছিলো তা অন করে দেয়। অন করে দেওয়ার সাথে সাথেই যেনো তায়াফ চিৎকার দিয়ে ওঠে। একে তো প্রট্রোল দেওয়া তার ওপরে ভেজা অবস্থায় ইলেকট্রিক শক। গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করছে তায়াফ চেয়ারে বসে থেকেই। গা যেনো পুড়ে গিয়েছে তার। আর তার এই নির্মম মৃত্যু দেখে এক পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে আব্রাহাম। মৃত্যুর কোলে গড়িয়ে পরে তায়াফ নামক জানোয়ার। আব্রাহাম একটা সাদা কাপড়ে নিজের রক্ত মাখা হাতটা মুছতে মুছতে বের হয়ে পরে সেই বাড়ি থেকে। সব ঠিক করে নিতে বলে গার্ডদের কে।
আব্রাহাম;; এই বাড়ি দেখে এমন মনে হওয়া চাই যেনো এখানে কেউ কিছু করেই নি, কিছুই হয় নি। ক্লিয়ার!
গার্ড সব মাথা নাড়ায়। আব্রাহাম কে কেউ এখন দেখে বলবে না যে সে কিছু করেছে। এমন একটা ভাব। খুব শান্ত মস্তিষ্কের একজন। আব্রাহাম গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে পরে। একটু শান্ত হয়ে বসে। পরণে সেই কখন থেকে আইরাতের রক্তে ভেজা শার্ট টাই। এক হাত স্টেয়ারিং এর ওপরে রেখে আরেক হাত দিয়ে নিজের চোখ চেপে ধরে। এবার যেনো একটু নিজের মাঝে শান্তি পাচ্ছে। আইরাতের কাছে যেতে হবে তার। আইরাতের কথা মনে পরছে খুব করে। আব্রাহাম চট জলদি সেভেন স্টার হোটেলে নিজের রুমে চলে যায়। সেখানে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে এসে পরে আবার হস্পিটালে। হস্পিটালে যাওয়ার সাথে সাথেই ডক্টর তার দিকে এগিয়ে আসে,, ম্লান হাসে। আব্রাহাম আইরাতের কেবিনের দরজার কাছে চলে যায়। গিয়ে দেখে আইরাত অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে হস্পিটালের বেডে। মুখে তার অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। মাথায় ব্যান্ডেজ। আব্রাহাম এগিয়ে গিয়ে আইরাতের দিকে ঝুকে পরে। বেশ সময় আইরাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে থাকে। খুব মায়া লাগছে আব্রাহামের। কেমন এক অতি চঞ্চলমুখর মেয়ে আজ এভাবে শান্ত, এটা যেনো মানা যায় না। বেশ সময় এক নজরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে টুপ করে এক ফোটা অশ্রুবিন্দু আব্রাহামের চোখ থেকে আইরাতের মুখে পরে যায়। চোখে বন্ধ করে ফেলে সে। আইরাতের কপালে আস্তে করে চুমু এঁকে দেয়। তারপর আইরাতের একটা হাত নিজের দুহাতের ভাজে নিয়ে তার পাশেই বসে থাকে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে আর কয়েক সেকেন্ড পর পরই তার হাতে চুমু খাচ্ছে।
।
।
।
।
চলবে~~
#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৪১
আব্রাহাম আইরাতের একহাত নিজের দুহাতের মাঝে নিয়ে বসে ছিলো। এভাবে থাকতে থাকতেই কখন যে চোখ লেগে এসেছে তার সে জানে না। পাশেই শুধু মাথা টা রেখে শুয়ে ছিলো তখনই আইরাতের হাতের আঙুল নড়ে ওঠে। কয়েক বার নড়াচড়া করলে আব্রাহামের ঘুম ভেঙে যায়। কপাল কুচকে আস্তে করে চোখ মেলে তাকায়। দেখে আইরাতের হাত আসলেই নড়ছে আর সে খুব দ্রুত গতিতে শ্বাস নিচ্ছে। মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো অবস্থা তেই দ্রুতভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। যেনো এই তার দম আটকে যাচ্ছে। আব্রাহাম ব্যাস্ত হয়ে ওঠে পরে। আইরাতের বাহুতে হালকা করে ধরে কয়েক বার ডাকতে লাগে কিন্তু তার কোন সাড়া নেই। ঘাবড়ে গিয়ে দ্রুত ডক্টর কে ডাক দেয় আব্রাহাম। জোর চিল্লানোর আওয়াজ শুনে ডক্টরও ছুটে আসে। এসেই দেখে আইরাতের অবস্থা বেগতিক। চেকাপ করে। কিছুসময় পর কেবিন থেকে বের হয়ে আসে।
আব্রাহাম;; Doctor, is everything ok!?
ডক্টর;; মোটামুটি। ম্যাম এখনো সেড়ে ওঠে নি। সময় দরকার। খুব বড়ো একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে উনার। মাথায় আঘাত পেয়েছে, ক্ষত রয়েছে। তবে চিন্তা করবেন না আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ডক্টর মুচকি হেসে চলে যায়। আর আব্রাহাম আবার গিয়ে আইরাতের কেবিনে বসে থাকে। যদিও এখন পেসেন্টের কেবিনে যাওয়া বারণ তবে আব্রাহামকে কে মানা করবে আর সাহসই বা কার আছে তাই সে এখন গিয়ে আইরাতের পাশে বসে আছে।
।
।
একদিন পার হয়ে যায়। আইরাতের এখনো জ্ঞান ফিরে নি। হাতে ইঞ্জেকশন পুশ করে অজ্ঞান হয়ে আছে। জ্ঞান আসতে সময় লাগবে। আব্রাহাম বলতে গেলে প্রায় সময়ই হস্পিটালে থাকে। হোটেলে থাকেই না অতি প্রয়োজন ছাড়া। আর রইলো কোহিনূর হীরের কথা তো সেই ভেজাল বলতে গেলে মিটেই গেছে। আব্রাহামের কাছে যে নকল হীরে ছিলো তা সে ভেঙে ফেলেছে। আসল হীরে তায়াফের সেই ব্যাগেই ছিলো। আব্রাহাম মিস্টার. ডজান আলবাট্রার সাথে দেখা করেছে। যদিও তিনি কিছুটা অসুস্থ এখন। আব্রাহাম তার সাথে একদম খুলে সব কথা ক্লিয়ার করে বলেছে। যা শুনে তিনি অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। অবশেষে আসল হীরে আবার নিজের জায়গায় রেখে দেওয়া হয়। তবে এইবার প্যালেস পালটে দেওয়া হয়েছে। দু হাজারের কাছাকাছি সিসিটিভি ক্যামেরা। আর গার্ডদের সংখ্যা অগনিত। হীরে কে যারা নজরে রাখে তারা বাদে যে কোন একজন সেই কক্ষে প্রবেশ করলেও মরন ছাড়া উপায় নেই। বিষাক্ত ল্যাজার লাইটে পুড়ে ছাই হতে বাধ্য। আর গুলিতে ঝাঝড়া। কাজটা এতোটাই লুকিয়ে চুরিয়ে আর সাবধানে করা হয়েছে যে হাতে গোনা কিছু মানুষ বাদে তা কেউ জানতেই পারে নি। এখন আসল হীরে আগের ন্যায় তার সঠিক জায়গা তেই রয়েছে। সবার মতে হীরে কখনো চুরিই হয় নি, আর নির্দিষ্ট জায়গায় থেকে নড়েই নি। যেমন ছিলো তেমনই আছে। শুধু মাঝখানে একটা গুজব ছড়িয়েছিলো ব্যাস। আর গুজবে কান না দেওয়াই শ্রেয়। এইসব ঝামেলা শেষ করে আব্রাহাম যেনো এক স্বস্থির নিঃশ্বাস ছাড়ে। এখন শুধু আর শুধুই নিজের পারসোনাল লাইফে মনোযোগ দেওয়া। আব্রাহাম রাতের বেলা হস্পিটালে থাকে। এমনকি ডক্টর কে বলে আইরাতের বেডের পাশে আরেকটা বেড নিয়ে অর্থাৎ ডাবল বেড জোড়া লাগিয়ে আইরাতের পাশেই তাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকে। আব্রাহামের এইসব কান্ড দেখে ডক্টর সহ বাকিরা মুচকি হাসে। কেউ কি করে এতোটা বউ পাগল হতে পারে আব্রাহাম কে না দেখলে তা বুঝাই যেতো না। আইরাতের যে এখন কোন হুস নেই তাতে আব্রাহাম থেমে নেই। সে কেবিনে একা একাই আইরাতের পাশে বসে কথা বলে। এটা ওটা কতো কথা। কিন্তু যখন তার কথার কোন উত্তর আইরাত দেয় না তখনই যেনো বুকের মাঝে এক তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করে সে। চোখের কোণে একা একাই পানি চিকচিক করতে লাগে। তখন কান্না থামানোর জন্য আইরাতের হাত টা নিজের হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে চুমু এঁকে দেয়। বাংলাদেশে কাউকেই আইরাতের এই ব্যাপারে বলা হয় নি। সেখান থেকে রোজ ফোন কল”স আসে। সবাই আইরাতের সাথে কথা বলতে চায়। কিন্তু আব্রাহাম এটা ওটা বলে কোন রকমে এড়িয়ে যায়। কি বলবে সে! যে আইরাত বাজেভাবে এক্সিডেন্ট করে এখন হস্পিটালে শায়িত। সেখানে সবার মাঝে কান্নাকাটির রোল পরে যাবে যা আব্রাহাম চায় না। তাই সে কাউকেই বলে নি। কাজে বাইরে এসেছে বলে কাটিয়ে দেয় অনেক সময় তো ফোনই ধরে না। তারপর গার্ড এসে বলে যে বাড়ি থেকে অনেকবার ফোন এসেছে। এভাবেই দিন যাচ্ছে। দুইদিন হয়ে এলো। আব্রাহামের কষ্ট একটাই যে তার আইরাত আজ দুদিন যাবত তার সাথে একটা টু শব্দও করেনি। একবার আইরাত আব্রাহামের সাথে রেগে গিয়ে মনে অভিমানের পাহাড় জড়ো করে বলেছিলো যে “” আব্রাহাম আপনি রাগ করলে তো রাগারাগি/চিল্লাপাল্লা করেন তাই না! কিন্তু আমি এমন কিছুই করবো না। সবই ঠিক থাকবে শুধু আমি আপনার সাথে কথা বলা ছেড়ে দিবো। কোন কথা বলবো না আপনার সাথে কেননা কথা বলা বন্ধ করে দেওয়ার চেয়ে বড়ো আর কোন শাস্তি-ই হয় না “”।
আজ কেনো জানি আইরাতের বলা কথা টা আব্রাহামের খুব করে মনে পরছে। বারবার মনে হচ্ছে যে আইরাত তার সাথে রেগে আছে যদিও এমন কিছুই না। তার খারাপই লাগে এখানে যে আইরাত তার সাথে দুদিন হলো কোন কথা বলে না। যেই মেয়ে কিনা বকবক করতে করতে কানের পোকা খেয়ে ফেলতো। আব্রাহাম আর আইরাত কে মিসেস. বকবক বলে ডাকতে পারে না। আইরাত কে আব্রাহাম একদিন জিজ্ঞেস করেছিলো যে “ফিউচারে আমাদের বেবি হলে তাদের নাম কি রাখবে!?” আইরাত প্রতিউত্তরে বলেছিলো “” আমাদের বেবি হলে একটার নাম রাখবো ‘আলু’ আরেক টার নাম রাখবো ‘বোখরা’ এই হলো আপনার আর আমার আলু-বোখরা””। এটা ভাবতেই আব্রাহাম কান্নারত অবস্থাতেই ফিক করে হেসে দেয়। আব্রাহাম শুধু সারাদিন-রাত আল্লাহ আল্লাহ করে যে আইরাত যেনো জলদি ঠিক হয়ে যায়। নামাজের প্রত্যেকটা মোনাজাতে আব্রাহাম খুব করে আইরাত কে চায়। খুব করে। আর সত্যি আব্রাহামের প্রার্থনায়, তার মোনাজাতে অনেকটাই শক্তি-আস্থা ছিলো তাই হয়তো আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে নিয়েছেন।
।
।
আজ চারদিনের মাথায় ঠেকলো আইরাত হস্পিটালে। সকালে একবার এসে আব্রাহাম আইরাত কে দেখে গিয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্লাইন্ট এসেছিলো তাদের সাথে মিটিং না করলেই নয় তাই তাকে যেতেই হয়েছে। পুরো হস্পিটাল তো গার্ড দিয়ে ঘেরাও করাই প্লাস আইরাতের কেবিনের বাইরে কমপক্ষে ৮-১০ জন বিশাল দেহি গার্ড কে পাহারায় রেখে দিয়ে এসেছে সে। আব্রাহাম মিটিং রুমে বসে ছিলো। অন্যান্য দিন তো আব্রাহাম নিজেই প্রেজেন্টেশন করে কিন্তু আজ কিছুতেই মন নেই তার। সব কেমন ফ্যাকাশে লাগছে। এর জন্য সে কপালে হাত দিয়ে চুপ করে বসে ছিলো। আরেকজন যে আব্রাহামের সাথেই কাজ করে সেই প্রেজেন্টেশন করছিলো। তবে একটা সময় এসে আব্রাহাম কে ডাক দেয়। এই পার্ট টুকু আব্রাহাম কেই সামলাতে হবে। কারণ তার প্রেজেন্ট করার ধরনই আলাদা তার মতো করে কেউ পারে না। যাই হোক আব্রাহাম উঠে নিজের শার্টের হাতা গুটিয়ে নেয়। তারপর মনিটরিং করে একটা গ্রাফ রাখে যা বিজন্যাস জনিত। তারপর ধীরে ধীরে সব বুঝিয়ে দিতে লাগে। আজ কেনো জানি অন্যান্য দিনের থেকে আব্রাহামের কন্ঠস্বর বেশ গম্ভীর। আব্রাহাম প্রেজেন্ট করছিলো আধা ঘন্টা যেতে না যেতেই তার ফোন বেজে ওঠে। সে হাত দিয়ে নিজের চোখ চেপে ধরে। মেজাজ টাই বিগড়ে গেলো। কাজের সময় ফোন এলে কি যে মেজাজ খারাপ হয়। একজন গার্ড দ্রুত ফোন কাটার ট্রাই করে। ফোন কেটে যায় তবে তারপর পরই আরো লাগাতার দুবার ফোন বেজে ওঠে। গার্ড কে ইশারা করতেই সে ফোন তার কাছে নিয়ে আসে। ফোন ধরে হ্যালো বলতেই ওপর পাশ থেকে যা শুনে তাতে আব্রাহামের সবকিছু যেনো কয়েক মূহুর্তের জন্য থমকে যায়। বুকের ধুকপুকানি ক্রমশ বেড়ে গেছে। মুখ দিয়ে কিছুই বের হচ্ছে না। সবাই আব্রাহামের এমন রিয়েকশন দেখে চুপ করে আছে। সবাই ভেবেছে যে আবার হয়তো কোন একটা গন্ডগোল পেকেছে। আব্রাহাম সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে ফোনটা দ্রুত গার্ডের হাতেই ধরিয়ে দিয়ে চেয়ারের ওপর থেকে নিজের জেকেট টা নিয়ে কোন রকমে বের হয়ে পরে কনফারেন্স রুম থেকে। বড়ো কাচের গ্লাস ঠেলে বাইরে এসে জেকেট পরতে পরতেই দ্দে দৌড়। সবাই আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।আব্রাহাম কে এভাবে বাইরে আসতে দেখে গার্ড দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে দেয়। ড্রাইভিং সীটে বসে সাই করে চলে যায় আইরাতের হস্পিটালের উদ্দেশ্যে। সে এক প্রকার ছুটছে। যত দ্রুত সম্ভব হস্পিটালে পৌঁছে যায়। এভাবে তড়িঘড়ি করে তাকে যেতে দেখে সবাই জলদি করে সাইড দিচ্ছে আর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অবশেষে পাগলের মতো দৌড়ে আইরাতের কেবিনের সামনে থামে। হাপাতে হাপাতে আস্তে করে কেবিনের দরজা মেলে দাঁড়ায়। বেকুল দৃষ্টিতে সামনে তাকায়। আর তাকাতেই পৃথিবীর সব শান্তি যেনো সব একসাথে ভর করে বসে তার মনে। আইরাত বেডের ওপর স্বজ্ঞানে বসে আছে। গায়ে হস্পিটালের ড্রেস, মাথায় ব্যান্ডেজ করা তবে হাত থেকে সুই খুলে দেওয়া হয়েছে। আশেপাশে বেশ কিছু নার্স আর ডক্টর দাঁড়িয়ে আছে। তারা হাসিমুখে আইরাতের সাথে কথা বলছে কিন্তু আইরাত মুখে কোন হাবভাব ছাড়া বসে আছে। শুধু তাদের কথা শুনে যাচ্ছে। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে সবাই দরজার দিকে তাকায়। আইরাত আস্তে আস্তে করে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তার অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট। কিছুটা হাপাচ্ছে। আব্রাহাম কে দেখে সব নার্স রা কেবিন ছেড়ে চলে যায় আর ডক্টর আব্রাহামের কাছে এসে মিষ্টি হেসে বলে…
ডক্টর;; নিন স্যার আপনার প্রাণভোমরা আপনার কাছে ফিরে এসেছে।
এই বলেই ডক্টর সেই স্থান ত্যাগ করে। আর আব্রাহাম আবার সামনে তাকায়। শুকনো কিছু ঢোক গিলে ধীর পায়ে আইরাতের দিকে এগোতে লাগে। আইরাতও ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের কাছে তার সামনে বসে পরে। আইরাত আব্রাহামের সারা মুখটা একবার দেখে নেয়। যেমন ছিলো তেমনই আছে সবই ঠিক আছে তবে আগে যে আব্রাহামের মুখে একটা বেলাগাম হাসি লেগে থাকতো তা কিঞ্চিৎ পরিমাণ কমে এসেছে। আইরাত ছোট করে একটু হেসে বলে…
আইরাত;; আ”ম ব্যাক জামাইজান।
আইরাতের এটা বলতে দেরি কিন্তু আব্রাহামের তাকে নিজের সবটুকু দিয়ে জড়িয়ে ধরতে দেরি না। আব্রাহাম একদম তাকে নিজের বুকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয়। সে আর চোখ খুলে না। চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে আর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে হাজারো অশ্রুবিন্দু। থেকে থেকে কেপে উঠছে আব্রাহাম। আইরাতের কাধের অংশের জামা টুকু এক নিমিষেই ভিজে যায় আব্রাহামের চোখের পানিতে। বুঝলো সে অনেক পরিমাণে কাদছে। আইরাত নিজেও হাত আস্তে করে তার পিঠের ওপর রেখে দেয়। আব্রাহাম যেনো নিজের জীবন টাই হাতে পেয়ে গেছে আইরাত কে পেয়ে।
আইরাত;; আপনি কি ভেবেছিলেন আমি এতো জলদি আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো। এখনো আপনাকে জ্বালানো বাকি, আপনার জীবন পুরো তেজপাতা বানানো বাকি। আমাদের “আলু-বোখরা” হওয়া বাকি। আপনার সাথে আমার বৃদ্ধ হওয়া বাকি। তাই আমি আল্লাহ কে বললাম যে ‘আল্লাহ লাস্ট একটা সুযোগ দাও না, এবারের যাত্রায় বাঁচিয়ে দাও’ তাই তিনি আমার কথা শুনে নিলেন আর আমায় আবার আপনার কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
আব্রাহাম;; আমি আর কিচ্ছু জানি না শুধু একটা কথাই বলবো যে আমি মরে যাবো রে আইরাত।তোকে ছাড়া মরণ হবে আমার। বেবিগার্ল তুমি, জানো না আমি কত্তো করে চেয়েছি তোমাকে। আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। বাড়িতে কাউকেই এইসবের ব্যাপারে কিচ্ছু বলি নি, কাউকেই না। কি করে যে সব সামাল দিয়েছি আমি। এদিকে তোমার চিন্তায় কিচ্ছু করতে পারতাম না অন্যদিকে বাকি সবাই। আমি সত্যি আধো মরা হয়ে গিয়েছিলাম। কত্তো ভয় পেয়েছিলাম আমি।
আইরাত;; ওরে তাই নাকি। আমার মাফিয়া জামাইও যে ভয় পায় তা তো জানা ছিলো না।
আব্রাহাম;; শুধুমাত্র তোমাকে নিয়েই।
আইরাত;; আব্রাহাম কান্না করবেন না প্লিজ। আপনাকে এটা মানায় না। একটুও না। আমি আছি তো এই দেখুন আমি একদম ঠিক আছি। আপনার কাছে আর আপনার-ই আছি।
আব্রাহাম;; না ঠিক নেই। চোখের নিচে দেখো কেমন কালো দাগ পরেছে, ঠোঁট গুলো শুকিয়ে গেছে, দূর্বল অনেক তুমি। শুকিয়ে গেছো তুমি যা আমার একদমই পছন্দ না। গলার স্বর কেমন মিলিয়ে গেছে।
আইরাত;; সমস্যা নেই আপনি আছেন তো এখন ঠিক হয়ে যাবো আমি।
আব্রাহাম;; বাড়ি চলো আমি আজই তোমাকে নিয়ে যাবো আমার সাথে করে।
আইরাত;; আব্রাহাম, আব্রাহাম শুনুন। পাগলামো করবেন না আমি আছি তো।
আব্রাহাম আবার আইরাত কে জড়িয়ে ধরে। যেনো ছাড়তেই চাচ্ছে না। ডক্টর এসে দরজাতে নক করে। আব্রাহাম এবার তার সাথে কথা বলে।
আব্রাহাম;; ডক্টর আমি আইরাত কে বাড়ি নিয়ে যাবো।
ডক্টর;; আসলে স্যার আমার মতে ম্যাম কে আরো দু-একদিন হস্পিটালেই থাকতে দেওয়া উচিত। কারণ আজ চারদিন পর ম্যামের জ্ঞান ফিরেছে। এখনই আবার এইসব যানবাহনে উঠা ঠিক হবে বলে মনে হয় না। যদিও রাস্তা স্বল্প। কিন্তু আমার মতে এখন উচিত না। শারীরিক ব্যাপারের সাথে সাথে একটা মানসিক ভারসাম্য বলেও কথা আছে। আর আপনি কেনো চিন্তা করছেন! ম্যামের এখানে কোন প্রকার কোন কমতিই আমরা হতে দিবো না। তাই বলছি যে স্যার এখানে ম্যাম ২-১ টা দিন আরো থাক।
আব্রাহাম;; ওকে ফাইন।
ডক্টর চলে যায়। আব্রাহাম এবার আইরাতের কপালে, গালে, নাকে, চোখে, মুখে, ঠোঁটে, থোতায়, ঘাড়ে, অর্থাৎ এমন কোন জায়গা নেই যে বাকি রাখে নি। সব জায়গায় পাগলের মতো করে চুমু দিয়ে দেয়। তারপর আবার আইরাত কে নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে ধরে। আব্রাহামের কি যে শান্তি লাগছে আইরাত কে ফিরে পেয়ে। এখন থেকে শুরু হবে আইরাতের ওপর আব্রাহামের লাভ কেয়ার।
।
।
।
।
চলবে~~