#প্রণয়
#পর্বঃ১৮
#তানিশা সুলতানা
সূর্য পূর্ব দিকে ঢলে পড়েছে। গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে একটু একটু রোদ এসে পড়ছে তানহার মুখে। অবাধ্য কিছু চুল ঝুঁটি থেকে খুলে মুখের সামনে চলে এসেছে। বিকেলের মৃদু বাতাসে চুল গুলো উড়ে উড়ে চোখে এসে পড়ছে। তানহা খুব যত্ন নিয়ে চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে নিচ্ছে।
সূচক গভীর মনোযোগ দিয়ে তানহাকে দেখছে। গুনে গুনে আট বছরের বড় এই মেয়েটার থেকে। কাকিমাকে হাসপাতালে নেওয়া হলো সেটা মনে আছে সূচকের। সূচকও গেছিলো বাবা আর কাকাইয়ের সাথে।
সেই পিচ্চি তানহাকে সর্বপ্রথম সূচকের কোলেই দেওয়া হয়েছিলো। বাবা সাহায্য করেছিলো কোলে নিতে।
সেদিন যত্ন করে কপালে চুমু খেয়েছিলো। সেই চুমুর প্রভাবটা এতোটাই শক্তিশালি যে এখনো চুমু খেতে ইচ্ছে হয়।
সেই পিচ্চি মেয়েটার প্রেমে কি করে পড়লো ও?
তানহার থেকে পাঁচ মাসের ছোট তোহা।
কি এমন জাদু করলো মেয়েটা?
“আমি তো আপনাকে ভালোবাসি। বিয়েও করতে চাই। কিন্তু কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করলে যদি ডিভোর্স করিয়ে দেয়? তখন তো আমি বিধবা হয়ে যাবো। আমার কি হবে? এতোগুলো বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবো আমি? ওদের খাওয়াবো কি?
তানহা মাথা নিচু করে চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে। সূচক ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে ফোঁস করে শ্বাস টানে।
” গাঁধা বিয়ে হয়ে গেলে কেউ কিছু করতে পারবে না। আর তুই না চাইলে কেউ ডিভোর্স করিয়ে দিতে পারবে না।
দাঁতে দাঁত চেপে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে সূচক। তানহার বোকা বোকা কথায় রাগ হচ্ছে।
“হুমম তাহলে বিয়ে করাই যায়।
বুকে হাত দিয়ে শ্বাস টানে সূচক। যাক বাবা হ্যাঁ বলেছে।
” কিন্তু আমার এতোগুলো শর্ত আছে।
আঙুল তুলে বলে তানহা। সূচক ভ্রু কুচকে তাকায়।
“বল
বাইরের সাথে ঘেসে দাঁড়িয়ে বলে সূচক।
” আমাকে ধমক দেওয়া যাবে না। আমার কথা শুনতে হবে। মেয়েদের সাথে নিকনিক করা যাবে না। ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিতে হবে আমায়।
ওয়ালপেপারে আমার পিক দিতে হবে। আমার সাথে ট্যাগ করে God A Married স্টাট্যাস দিতে হবে।
সূচকে কপাল কুচকে ফেলে।
“বললাম না বিয়েটা পাবলিক করতে চাইছি না এখনই।
চোখ পাকিয়ে বলে সূচক।
” হচ্ছে না। এই কথাটাই রোমান্টিক ভাবে বলতে হবে। আমি রসকষহীন মানুষকে বিয়ে করে জীবনটাকে বারোটা বাজাবো না।
বাঁকা হেসে বলে তানহা।
“খুব পেকেছিস না?
ধমক দিয়ে বলে সূচক।
” বিয়ে কেন্সেল করে দিবো কিন্তু।
তানহা উল্টে ধমক দিয়ে বলে। সূচক চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে দুটো শ্বাস টানে। একে কি করে সয্য করবে সারাজীবন?
তারপর তানহার সামনে দাঁড়িয়ে
“তুই কি রাজী?
তানহা গালে হাত দিয়ে খানিকক্ষণ ভাবে। তারপর কাঁধে ঝোলানো ছোট ব্যাগ থেকে ফোন বের করে। তারপর ভিডিও অন করে সূচকের দিকে ধরে।
” এসব কি?
সূচক হকচকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
“আপনাকে দিয়ে বিশ্বাস নাই। যখন তখন বলতে পারেন কোনো শর্ত ছিলো না। তাই রেকর্ড করে রাখবো। যাতে অস্বীকার করতে না পারেন।
সূচক কপালে হাত দিয়ে ফোঁস করে ওঠে।
” শুরু কর
” তো প্রথম শর্ত “কথায় কথায় ধমক দেওয়া চলবে না”
“আচ্ছা
” প্রতিদিন একবার করে আই লাভ ইউ বলতে হবে”
“আচ্ছা
” কবুল বলার পরেই ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিয়ে দেবেন”
“আচ্ছা
” আমাকে প্রতিদিন পড়াতে হবে”
“আচ্ছা
“প্রতিদিন আমার সাথে খাবার খেতে হবে”
“আচ্ছা
” মেয়েদের সাথে নিকনিক করা যাবে না”
“আচ্ছা
“মাঝেমধ্যে আমার সাথে ঘুমতে হবে”
সূচক বড়বড় চোখ করে তাকায়। তানহা মুখ বাঁ কায়।
“রাজী না থাকলে বলুন? কোনো বিয়ে টিয়ে হবে না।
শ্বা শিয়ে বলে তানহা।
” রাজী আমি।
” শেষ শর্ত হলো আর কিছু শর্ত এড করা হবে।
আপাতত মনে পড়ছে না।
“ওকে
তানহা ভিডিও সেভ করে ফোন রেখে বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়।
” এবার চলুন বিয়ে করতে।
তানহা সূচকের হাত ধরে বলে।
“কালকে বিয়ে করবো। আজকে চল তোকে ডাক্তার দেখিয়ে কিছু কেনাকাটা করে নেই।
” ও মা কাল কেন? আমার বিয়ে করার শখ এখনই উতলে উঠেছে। বিয়ে বিয়ে ফিলিং অলরেডি চলে আসছে।
“সূচক আহমেদ বিয়ে করবে। বউয়ের নাক ভরা সর্দি আর এই ফ্যাল ফেলে ড্রেসে?
কখনোই না। একদম লাল টুকটুকে বউ বানিয়েই বিয়ে করবো।
একটু ভাব নিয়ে বলে সূচক। তানহা রেগে গাল ফুলায়। না হয় ওর একটু না একটু না বেশিই সর্দি হয়েছে তাই বলে এভাবে খোটা দেবে?
” দেখুন আমার সর্দি না একদম খোটা দেবেন না।
গাল ফুলিয়ে বলে তানহা।
“কেনো তোর সর্দি কি অমূল্য সম্পদ না কি?
” হ্যাঁ তাই
শর্ত আরও একটা এড করা হলে। আমার সর্দি মুছিয়ে দিতে হবে।
সূচক নাক সিটকায়।
“না সিটকালে হবে না। রাজী না থাকলে বলুন। বিয়ে ভেঙে দিচ্ছি।
হুমকি দিয়ে বলে তানহা।
” বাদ দে
নাক মুছাতে পারলে কেটে দিবোনি। এটা সমস্যা না। সমস্যা হলো যা বলছি পারবি তো?
” কি বলছেন?
তানহা বলে।
“কালকে আমি চিটাগং যাবো। তুই ও যাওয়ার জন্য বায়না ধরবি। ধরবি মানে খুব শক্তপোক্ত হয়ে।
যাতে বাধ্য হয় সবাই যেতে দিতে।
বুঝলি?
তানহা খুশিতে লাফিয়ে উঠে গলা জড়িয়ে ধরে সূচকের।
” ওয়াও বিয়ে সাথে হানিমুন
গ্রেট
একটা গান মনে পড়ে গেলো
“বিয়ের আগেই হানিমুনে যাচ্ছি কক্সবাজার,,,,, সেইখানে সাগরে আমরা পানিতে দিমু সাঁতার
তানহা হেলেদুলে গান শেষ করে পেছনে তাকিয়ে দেখে সূচক নেই। বাইকে বসে হেলমেট পড়ছে। তানহা ভেংচি কেটে পেছনে বসে পড়ে।
” রসকস ছাড়া মানুষ।
বিরবির করে বলে।
“পিচ্চি মানুষ রসকষের কি বুঝিস তুই?
ধমক দিয়ে বলে সূচক।
” বিয়েটা ভাঙতে ইচ্ছে করছে কেনো জানি
হাই তুলে বলে তোহা।
“সরি
কাচুমাচু হয়ে বলে সূচক। তানহা দাঁত কেলায়।
🥀🥀🥀
“তোহা কিছু বলতে চাইছি আমি।
ইরিন শুকনো কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলে।
” হুম বলুন
শক্ত গলায় বলে তোহা। ইমন চোখের ইশারায় ইরিনকে বলতে বলছে। ইরিন এনি মিনি করছে। বলতে পারছেনা।
“তোহা তুমি এখানে?
হঠাৎ কারো গলা পেয়ে চমকে ওঠে তোহা। পেছন ঘুরে আবিরকে দেখে এক গাল হেসে দাঁড়িয়ে আছে।
” এই তো ঘুরতে এসেছিলাম।
একটু হেসে বলে তোহা। ইমন ভ্রু বাঁকিয়ে আবিরকে দেখতে থাকে।
“একটু আসবে আমার সাথে?
কথা ছিলো।
মিনতির সুরে বলে আবির। তোহা জানে ইরিন কি বলবে। আপাতত সেটা শোনার ইচ্ছে ওর নেই।
” আপু আসছি হ্যাঁ
পরে শুনবো আপনার কথা।
বলেই ইরিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আবিরের সাথে চলে যায়। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে তোহার যাওয়া দেখে ইমন।
“কি বলবেন আবির ভাইয়া?
খানিকটা দুরে গিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলে তোহা। এই ছেলেটাকে ওর পছন্দ না। আল্লাহর সৃষ্টি সব মানুষই সুন্দর। কিন্তু কেনো জানি ভালো লাগে না তোহার।
” বিজয় স্যার ডাকতে বলেছিলো।
মাথা নিচু করে বলে আবির। চমকে ওঠে তোহা। স্যার কেনো ডাকতে বলবে? নিশ্চয় মিথ্যে বলছে ছেলেটা।
“মিথ্যে কেনো বলছেন?
চোখ মুখ কুঁচকে বলে তোহা।
আবির চোখ তুলে তাকায় এক পলক তোহার দিকে। তারপর আবার মাথা নিচু করে ফেলে।
” আমি মিথ্যে বলতে পারি না তোহা। যদি পারতাম তাহলে তোমাকে ভালোবাসার বেপারটা পাবলিশ হতো না।
শান্ত গলায় বলে আবির। তোহা ফোঁস করে শ্বাস টানে।
“কোথায় স্যার?
ওই তো ওই দিকেই আছে।
তোহা আবিরের দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে যায়। আবিরের চোখ দুটো টলমল করে ওঠে।
পৃথিবীতে সব থেকে কষ্টের মুহুর্ত হলো প্রিয় মানুষটির পাশে তার প্রিয় মানুষটাকে দেখা”
তোহা এগিয়ে গিয়ে দেখে সত্যি সত্যিই বিজয় দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছে ভীষণ রেগে আছে। রাগের কারণটা ধরতে পরে না তোহা।
এক গাল হেসে বিজয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
“স্যার ডেকেছিলেন?
চলবে
#প্রণয়
#পর্বঃ১৯
#তানিশা সুলতানা
“স্যার কিছু বলবেন?
বিজয় চোখে থাকা চিকন ফ্রেমের চশমাটা খুলে সরু চোখে তাকায় তোহার দিকে। সেই চাহনি দেখে তোহা চোখ নামিয়ে নেয়।
” বাড়ি যাও তোহা।
ব্যাস হয়ে গেলো। এই ছোট্ট একটা কথা বলার জন্য এখানে ডেকেছে? এটা তো আবিরের কাছেও বলে দিতে পারতো।
“আর কিছু না?
চোখ ছোটছোট করে বলে তোহা। বিজয় কপালে কুঁচকে ফেলে।
” নাহহহ আর কিছু না।
ইরিন তোমাকে কি বলার জন্য ডেকে ছিলো জানো নিশ্চয়?
আমি চাইছিলাম না সেই কথা তুমি শোনো। তাই ডেকেছি।
এখন সোজা বাড়ি যাও। সন্ধা লেগে যাবে।
বলেই চশমা পড়তে পড়তে বড় বড় পা ফেলে চলে যায় উনি। তোহা খানিকক্ষণ হতদম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর ভেংচি কেটে বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকে।
🥀🥀
ডাক্তার দেখাতে দেখাতে সন্ধা লেগে যায়। ঠান্ডা থেকে দুরে থাকতে বলেছে ডাক্তার। সকাল সকাল গোছল করতে হবে, ফ্যান চালানো যাবে না সারা রাত, ঠান্ডা জিনিস খাওয়া যাবে না একদম।
এক গাদা ঔষধ দিয়ে দিয়েছে৷ ডাক্তারের ক্লিনিক থেকে বের হয়ে এক প্যাকেট চিপস কিনে দেয় সূচক তানহাকে। তানহার আইসক্রিম খাওয়ার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু বলার সাহস পায় নি। বললে ধমক খেতো হতো নিশ্চিত।
আরও কিছু চিপস বিস্কিট স্পিড কিনে নেয়।
বাজারে ডাক্তারের চেম্বার। আর বাজারের শেষেই ইরাদের বাসা।
একটা রিকশা ভাড়া করে বাইকে চড়ে বসে সূচক। সূচক বসতেই তানহা উঠে বসে।
ফলের দোকানের সামনে বাইক থামিয়ে কিছু ফলমূলও কিনে নেয়। দ্বিতীয় বার যাচ্ছে ফুপি বাড়ি। খালি হাতে যাওয়া যায়?
প্রথম বার গেছিলো খুব ছোট বেলায় দাদা ভাইয়ের সাথে।
ফুপির বাড়ির সামনে বাইক থামায় সূচক। তানহা নেমেই এক দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে যায়।
সূচক বাইক সাইড করে রেখে রিকশা ওয়ালাকে একশত টাকা বের করে দেয় কিছু খেয়ে নেওয়ার জন্য।
তারপর সে জিনিসগুলো হাতে নিয়ে ভেতরে ঢুকে।
বাড়ির মেইন দরজা খোলাই ছিলো। যৌথ পরিবার তাহেরার শশুড় বাড়িতে।
শশুড় শাশুড়ী এখনো জীবিত। তিন ছেলে দুই মেয়ে। বড় মেয়ে জামাই নিয়ে এখানেই থাকে। তার আবার তিন ছেলে।
ইরা ইরার ভাই ইফাদ বোন ইভা মমতা বেগম উঠোনে বসে ছিলো। গল্প শোনাচ্ছিলো ওদের আগেকার দিনের। তানহা এক দৌড়ে গিয়ে ইরার পাশ ঘেসে বসে পড়ে। জাপ্টে ধরে ইরাকে। সবাই হকচকিয়ে যায়। ঝড়ের গতিতে এসেছে।
“আরে তানহা বানু যে
ইফাদ এক গাল হেসে বলে। তানহা ভেংচি কাটে। এই বানু নাম তার পছন্দ না।
ইভা লাজুক হেসে দরজার দিকে উঁকি দিচ্ছে।
“নাহহ আমি তানহা না। পেতনি
তোর ঘাড় মটকাবো।
তানহা রেগে বলে। ইফাদ বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়। যেনো ওকে রাগিয়ে মহৎ কাজ করে ফেলেছে।
“ডাক্তার দেখাইছিস?
মমতা বেগম তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
” না দেখিয়ে উপায় আছে। তোমার জল্লাদ নাতি আমাকে না পুকুরে ডুবিয়ে দিতো ডাক্তার না দেখালে।
মুখ বাঁকিয়ে বলে তানহা।
“ভাই আসলে বলে দেবো তুই জল্লাদ বলেছিস।
ইভা বলে।
” তুই তো পারিস ই খালি কূটনামি করতে। যা এখান থেকে শরবত নিয়ে আয় আমাদের জন্য।
আর হ্যাঁ চিনি বেশি দিবি। একদম কিপ্টামি করবি না।
তানহা চোখ পাকিয়ে বলে।
এই মেয়েটা তানহার থেকে এক বছরের বড়। আর ইরা ওদের থেকে তিন বছরের বড়।
সূচক দুই হাত ভর্তি জিনিসপত্র নিয়ে ভেতরে ঢোকে। সূচককে দেখে ইভা আর ইফাদ এগিয়ে যায়। কুশল বিনিময় করে সূচকের হাত থেকে জিনিস গুলো নেয় দুই ভাই বোন ভাগাভাগি করে।
তানহা সূচকের দিকে তাকায় না।
সূচক দাদি আর ইরার সাথে টুকটাক কথা বলে।
তাহেরা রাতের রান্না করছিলো জা দের সাথে মিলে।
সূচক তানহা এসেছে শুনে আঁচল দিয়ে ঘেমে যাওয়া মুখটা মুছতে মুছতে এক গাল হেসো এগিয়ে আসে।
“আব্বা তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
ওই ইরা চেয়ার দে আমার আব্বারে।
সূচকের গালে হাত দিয়ে বলে। চকচক করছে তার চোখ দুটো। চোখে মুখে খুশি উপচে পড়ছে।
” আমি ওদের সাথে বসবোনি। চেয়ার টানতে হবে না।
সূচক ফুপির মুখের ঘাম তার আচল দিয়ে মুছে দিতে দিতে মিষ্টি হেসে বলে।
তানহা মুখ বাঁ কায়
“আমিও এসেছি
সেদিকে কারো খেয়ালই নেই।
তাহেরা মুচকি হাসে।
“আমার আম্মাজানও এসেছে দেখছি।
সূচক ওদের পাশে বসে পড়ে। তানহা এক গাল হাসে।
” আমার গালে হাত বুলিয়ে দাও
তানহা উঠে ফুপির সামনে যায়। তাহেরা মুচকি হেসে চুমু খায় তানহার কপালে।
” ফুপি যাবো আবার এখনই।
সূচক বলে।
“না না আজকে একদম যাওয়া হবে না।
আজকে থাকবি তোরা।
তাহেরা বেগম তারাহুরো করে বলে। ইভা ততখানে শরবত নিয়ে হাজির। এই মেয়েটাও দারুণ পছন্দ করে সূচককে। ইফাদ এসে সূচকের পাশে বসে। আর তানহা ইফাদের পাশে বসে।
কড়া চিনির সাথে লেবু মেশানো শরবত দারুণ লাগে তানহার। ইভা যাওয়ার সময়ই বলে দিয়েছিলো কড়া মিষ্টি দিতে।
তানহা চট করে ইভার হাত থেকে গ্লাস নিয়ে এক চুমুক দেয়। সূচকের মিষ্টি পছন্দ না। কিন্তু এখন না করতেও পারছে না। ফুপি মন খারাপ করে ফেলবে।
তাই একটু হেসে গ্লাসটা হাতে নেয়।
” ভাইয়া আপনি সরষে ইলিশ পছন্দ করেন?
আজকে মা সরষে ইলিশ করেছে।
ইভা কোনো কথা খুঁজে পায় না বলার জন্য। তাই এই কথাটাই বলে।
“হুমম
সূচক ছোট করে বলে। ব্যাস হয়ে গেলো। ইভার খুশি আর দেখে কে?
খুশিতে একদম গদগদ হয়ে যায়।
“ইফাদ দা টিস্যু আছে।
তানহা ইফাদের কানে ফিসফিস করে বলে। ভ্রু কুচকে তাকায় ইফাদ।
” কেনো কি করবি?
“নাক চুলকাচ্ছে। যখন তখন হেচ্চি চলে আসবে। আর হেচ্চি আসলেই কেল্লা ফতে
অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে তানহা। ইফাদ মুখ চেপে হাসে। সূচকের থেকে এক বছরের ছোট ইফাদ।
” দাঁড়া দেখছি।
🥀🥀
সূচক খাবে না। কিন্তু তানহার খেতে ইচ্ছে করছে। সরষে ইলিশ ইলিশ ভাজি, আর ইলিশ ভর্তা সাথে সাদা গরম গরম ভাত। জিভে জলে চলে এসেছে তানহার।
তাহেরা বেগম নিজের রুমে নিয়ে এসেছে ওদের। চানাচুর বিস্কুট ফল সব দিয়েছে ওদের সামনে। সূচক খাটের এক কোনায় বসে ফোন দেখছে। ইভা সূচকের পাশ ঘেসে দাঁড়িয়ে আছে। ওখান থেকে নরবে না প্রণ করেছে।
তানহা খাটের আরেক কোনায় বসে আরামসে সাবার করছে সব।
মমতা বেগম কাপড় পাল্টে ব্যাগ গুছিয়ে ফেলেছে। এখন ওদের সাথে খেয়েই বেরিয়ে যাবে। ইরাও রেডি হয়ে গেছে। ইভাও ব্যাগ গুছিয়েছে। এখন ওদের সাথে যাবে।
ফ্লোরে মাদুর বিছিয়েছে তাহারা। সেখানে মমতা বেগম বসে পড়েছে।
সূচককে ডাকতেই সে ডিরেক্ট না করে দিয়েছে।
জোড়াজুড়ি করলেও যে সূচক খাবে না এটা জানা সবার। তাহেরা বেগমের মন খারাপ হয়ে যায়।
তানহা পড়েছে ঝামেলায়। সূচককে রেখে খাওয়াটা কি ঠিক হবে?
কেনো ঠিক হবে না? একদম ঠিক হবে। ইহহহ ঢং দেখিয়ে খাবে না।
তানহা মুখ বাঁকিয়ে দাদিমার পাশে বসে পড়ে।
খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পড়ে ওরা। ইভা ইরা আর মমতা বেগমকে সূচক রিকশায় তুলে দেয়। আর তানহাকে নিয়ে বাইকে যায়।
রাত দশটায় বাসায় এসে পৌছায় ওরা। তানহা ভীষণ ক্লান্ত। এমনিতেই খাওয়া বেশি হয়েছিলো। খাওয়ার পরে একটুও রেস্ট নিতে পারে নি।
ঢুলে ঢুলে কোনো রকমে রুমে চলে যায়। তোহা বই পড়ছিলো খাটের ওপর বসে।
তানহা ঠাস করে তোহার পায়ের ওপর শুয়ে পড়ে।
“তানহার বাচ্চা ঠিক করে ঘুমা
তোহা তানহাকে ধাক্কা দিতে দিতে বলে। কিন্তু তানহার হুশ নেই।
সকাল সকাল তাজের ডাকাডাকিতেও ঘুম ছোটে না তানহার। শেষ মেষ তাজ তানহার মুখে পানির ছিটা দেয়। ধরফরিয়ে উঠে বসে তানহা।
তাজ হাসতে হাসতে শেষ।
” শয়তানের বাচ্চা
দাঁত কটমট করে বলে তানহা।
“দাভাই তোরে ধাপড়ানোর জন্য ডাকছে।
তাজ দৌড়ে দরজার কাছে গিয়ে বলে। তানহা হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে ওয়াশরুমে ঢুকে।
ফ্রেশ হওয়ার আগেই মাথায় আসে বাবা কাকাকে রাজী করাতে হবে।
ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে মুখে দিয়েই এক দৌড়ে বেরিয়ে আসে রুম থেকে।
সবাই মিলে ব্রেকফাস্ট খাচ্ছে। ইভা সূচকের পাশে বসেছে। কেমন লাজুক ভাবে খাচ্ছে।
” বড়বাবা আমি তোমার ছেলের সাথে যাচ্ছি মানে যাচ্ছি
যাবো মানে যাবো, কেউ আটকাতে পারবে না মানে পারবে না,
গাল ভর্তি ফ্যানা নিয়ে বলে তানহা।
তমাল আর তাহের তানহার দিকে তাকিয়ে থাকে। তোহা বিরক্ততে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। দিলো খাওয়ার দফারফা করে।
“পাগলের বাচ্চা দিলি তো খাওয়ার মুড নষ্ট করে।
তাজ তানহার দিকে রুটি ছুঁড়ে দিয়ে বলে।
তানহা শুধু কটমট চোখে তাকায়। কথা বলার অবস্থা নেই। কথা বললেই মুখ থেকে বেরিয়ে যাবে।
” তুই যাবি এখান থেকে? না কি থাপ্পড় খাবি।
সূচকের ধমকে তানহা এক দৌড়ে রুমে চলে যায়।
মনে মনে ভীষণ রেগে আছে। এভাবে কেউ ধমকায়? একবার বিয়েটা হয়ে যাক। সব ধমকের সুধা আসল সহ হিসেব নেবে।
দ্রুত তানহা কুলি করে চোখে মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে আসে। জামাকাপড় কুঁচকানো। চুল গুলো এলোমেলো। চোখে মুখে পানি লেগে আছে। সালোয়ারের এক পা নিচু করা আরেক পা ভাজ হয়ে গেছে।
এমন অবস্থায়ই তানহা আবার যায়। ততখনে সবার খাওয়া হয়ে গেছে।
ইভা মা বড়মার সাথে থালাবাসন মাজতে গেছে। ইরা তোহা আর তাজ টিভি দেখছে। বড়বাবা আর বাবা এখনো খাবার টেবিলেই বসে আছে। কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে।
সূচক পুরো একটা সোফা জুড়ে শুয়ে শুয়ে ফোন দেখছে।
যেতে দেবে বলো?
তানহা ডিরেক্ট বড় বাবার পায়ের কাছে গিয়ে বসে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে।
“এখানে কেনো বসেছো? উঠো
খাবার খাও
তমাল তানহার মাথায় হাত দিয়ে বলে।
” যতখন না বলবে যেতে দিচ্ছো ততখন আমি এখনেই বসে থাকাবো।
“আচ্ছা আচ্ছা দেবো
বলতে দেরি তানহার উঠে লাফাতে দেরি নেই।
নাগীন ডান্স শুরু করে দিয়েছে।
” আরে মা আস্তে পড়ে যাবি তো
তাহের মেয়ের হাত ধরে থামায়। তারপর নিজের পাশে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
“বড় মা তাড়াতাড়ি খাবার দাও আমায়।
তানহা চিল্লায়ে বলে।
চলবে