প্রণয়ের আসক্তি পর্ব-১১

0
674

#প্রণয়ের_আসক্তি
১১.(বোনাস পার্ট)
#WriterঃMousumi_Akter

“ভালোবাসা হচ্ছে একধরনের মায়া যেখানে পুরুষ এক নারীকে অন্য নারী থেকে আলাদা করে দেখে আর নারী এক পুরুষকে অন্য পুরুষ থেকে আলাদা করে দেখে- লুইস ম্যাকেন।”

কথাটা আমার নয় লুইস ম্যাকেন এর।এই কথাটার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে আমি তোমাকে দেখেছি। তোমাকে এই সমগ্র নারী জাতির থেকে আলাদা মনে হয়েছে আমার।অন্য নারীতে আসক্তি আসে না আমার।তোমাকে দেখলে যতটা আসক্তি আসে।প্রেম ভালবাসার যে আসক্তি কোনো নারীকে কাছে পাবার যে আসক্তি সেটা প্রথম বার তোমাকে দেখেই ফিল হয়েছে আমার মৃথিলা।আমার এই আসক্তি কে তোমার শরীরের প্রতি আসক্তি বা শরীরের দখলদার ভেবো না, আমি তোমার মনের দখলদার হতে চায়।তোমার সাথে প্রণয়ের আসক্তি।

“কিন্তু আপনি যে তখন ফোনে বললেন এটুকু বলেই চুপ মৃথিলা।কাজল কালো চোখে নিরবের দিকে তাকালো।”

“তখনের কথার ব্যাখ্যা অবশ্যই আমি তোমাকে দিবো।তার আগে বলো আমার সাথে হাঁটতে যাবে।তোমার সাথে চাঁদনি বিলাসে একান্ত কিছু সময় কাটাতে চাই।”

“মৃথিলা এমন নিষ্পাপ আবদারে না করতে পারলো না।”

শহরের গলি দিয়ে রোড লাইটের আলোতে পথের নিশানা দেখে হেঁটে চলেছে এক জোড়া কপোত কপোতি।দোকানে দোকান আলো জ্বলছে শহর টা দিনের মতোই ঝলমলে লাগছে।কালো শার্ট,কালো জিন্স, চোখে কালো চশমা,হাতে কালো ফিতার ঘড়ি একটা হ্যান্ডসাম লম্বা চওড়া স্মার্ট ছেলে হেঁটে যাচ্ছে তার প্রিয়তমার মুখের তাকিয়ে চেয়ে চেয়ে।মৃথিলা বেরোনোর সময় কালো শাড়ি পরে বেরিয়েছি।দুজনে পাশাপাশা হাঁটতে হাঁটতে একটা সময় নিরব মৃথিলার হাত ধরলো পরম আবেশে আর আদরে।হাত ধরে দুজনে হাঁটছে মুহুর্ত টা ছবির সুন্দর দৃশ্যর ন্যায় অতিসুন্দর। যেনো শিল্পির আঁকা কোনো ছবি।

রোডের সাইডে বয়েজ স্কুল তার পাশেই প্রাইমারি স্কুল।স্কুলের সামনেই একজন মহিলা চা,কফি বিক্রি করে সাথে গরম সিংগাড়া,পিয়াজি ভাজি করছে।

“নিরব মৃথিলাকে বললো চা খাবে।”

“মৃথিলা বললো আমি চা খাই না।”

“কখনো খাও নি।”

“আমার জিভ পুড়ে যায় খেতে গেলে।”

“মেয়েটি নেহাত ই বাচ্চা।না হলে চা খেতে গেলে কারো জিভ পুড়ে যায়।রং চা খেতে হবে না দুধ চা খাবে।সিওর ভাল লাগবে তোমার।”

“হুম চলুন।”

“দোকান টায় এখন তেমন ভিড় নেই।নিরব বললো খালা একটা দুধ চা দিন আর একটা রং চা চিনি ছাড়া দিন।”

“চিনি ছাড়া চা খাবেন।তিতো তো খেতে পারবেন।”

“আমি মিষ্টি খাই না।”

“কেনো?”

“পেটে মেদ জমে যাবে।পরে বউ আনস্মার্ট বর আর পছন্দ করবে না।”

“আপনি তেলযুক্ত খাবার খান না,মিষ্টি খান না,সকালে উঠে এত ব্যায়াম করেন।নিজের শরীরের এত যত্ন নেন এইজন্য আপনি এত স্মার্ট এইবার বুঝেছি।”

মৃথিলা নিজের পেটে হাত দিলো।নিজের পেটের মেদ কতটুকু খেয়াল করছে।

“নিরব আড় চোখে তাকিয়ে হেসে বললো এত টুকু পেটে মেদ আসবে কিভাবে।মেদ হওয়ার বয়স লাগে বুঝলে খুকি।”

“মৃথিলা লজ্জা পেয়ে হাত সরিয়ে নিলো।”

দুজনে বসে চা খাচ্ছে।মৃথিলার দিকে তাকিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আজ জিভ পুড়লো নিরবের।নিরব উফ বলে উঠলো।মৃথিলা নিরবের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো পুড়ে গিয়েছে। মৃথিলা ফু দিয়ে দিচ্ছে। নিরবের কপালে পড়ে থাকা সিল্কি চুল গুলো উড়ছে।নিরব ভীষণ তৃপ্তি পাচ্ছে। অপ্রকাশিত ভালবাসা নির্জন রাতে ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে দুজনের।

গরম সিংগাড়া আর পিয়াজি নিয়ে দুজনে খেয়ে বিল দিয়ে বেরিয়ে গেলো।আবার হাঁটছে দুজনে।আবার ও সাইতন ফুলের ঘ্রাণ ভেষে আসছে মৃথিলার নাকে।রাস্তার পাশের সাদা সাদা সাইতন ফুলের থোকা ঝুলে পড়েছে।গাছ টা বেশ লম্বা হওয়ায় মৃথিলা নাগাল পাচ্ছে না।বার বার লাফিয়ে লাফিয়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে।দূরন্ত এক বাচ্চার ন্যায় মৃথিলাকে ফুল ছেড়ার জন্য লাফাতে দেখে নিরব হাসছে।শব্দহীন সুন্দর হাসি,কিছু দেখে মুগ্ধ হলে মানুষ যেভাবে হাসে সেই হাসি।মুখশ্রীতে এক রাশ হাসি নিরবের।নিরব এগিয়ে এসে মৃথিলাকে উঁচু করে তুলে ধরলো।মৃথিলা এবার অনায়াসে সব ফুল নাগাল পেলো।একটা বড় ফুলের থোকা ছিড়লো মৃথিলা।নিরব এক লাফে একটা ফুল ছিড়ে মৃথিলার কানে গুজে দিলো।

আবার ও হাঁটছে দুজনে।এতক্ষণ পর মৃথিলা বললো কিছু বলতে চেয়েছিলেন বললেন না যে।

নিরব পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফোনের অটো রেকর্ড থেকে কল রেকর্ড বের করে প্লে করে দিলো মৃথিলার সামনে।মৃথিলা প্রথম থেকে শুনে বেশ খানিক টা অবাক।নিরব কে ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না।

“নিরব মৃথিলার হাত ধরে বললো,আমাকে তোমার কেমন মানুষ মনে হয়। মনে যা আছে তাই বলবে।মন রাখতে নয়।যা আছে মনে তাই বলবে।”

“সত্যি বলতে আমার জীবনে প্রথম কোনো ভাল মানুষের সাথে পরিচয়।যে নিঃস্বার্থে আমার জন্য এত কিছু করছে।আপনি না থাকলে জানায় হতো না পৃথিবীতে ভাল মানুষ এখনো আছে।”

“আমাকে কতটুকু বিশ্বাস করো তুমি মৃথিলা।”

“পুরাটায় বিশ্বাস হবে।”

“আমি যদি কিছু বলি বিশ্বাস হবে তোমার।”

“হ্যাঁ হবে।”

“জানি এখনি হবে না।যেদিন চোখ বুজে আমাকে বিশ্বাস করবে সেদিন বলবো।”

“যদি বলি বিশ্বাস করি।”

“সত্যি করো।”

“হ্যাঁ।”

“তুমি আরো সময় নাও মৃথিলা।এক্ষুণি আমাকে বিশ্বাস না করলেও হবে।আমার পুরা জীবন তোমার বিশ্বাসের অপেক্ষায় থাকবো আমি।”

“আই ট্রাস্ট ইউ। প্রমিজ বলছি আপনার সব কিছুই আমি বিলিভ করি।”

“-তাহলে শোনো মেধাকে লাস্ট কথা টা বলে আমি দ্রুত ফোন কেটেছি।আমার কলিগ এর ফোন এসছিলো।টাইম টা দেখো তুমি।ফোনে তো কল টাইম আছেই।আমি এখুনি চাইলে পারি মেধাকে সবটা বলতে বাট আমার কিছু ইনফরমেশন জানার আছে।সেগুলো জানা হলেই মেধাকে আমি সব টা বলে দিবো।আমাকে সাত দিন সময় দাও তুমি।আমাকে ভরসা করো তুমি আমি যেটা বলবো সেটা শোনার জন্য প্রস্তুত থেকো মানসিক ভাবে তোমাকে স্ট্রং হতে হবে।”

“কেনো কিছু হয়েছে? ”

“আচ্ছা তোমার মায়ের এমন অদ্ভুত ব্যাবহার এর কারণ কি?সত্যি করে বলোতো তোমার মায়ের চোখে কি কখনো তোমার জন্য ভালবাসা দেখেছো?”

মৃথিলা তার মাকে কখনো বুঝে উঠতে পারে নি।ভালবাসা কখনো দেখেই নি।তাই চুপ হয়ে আছে মুখে কোনো কথা নেই।

“নিরব বললো ইটস ওকে বাদ দাও ওসব।
এইবার বলোতো আমাকে নিয়ে ঠিক কি কি ভাবছো?.”

“কই কিছু নাতো.”

“এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে।চাঁদনী রাত পাশে হ্যান্ডসাম ছেলে। নিশ্চয়ই আদর করতে মন চাইছে তোমার।তোমার চোখ দেখে আমি বুঝতে পারছি।”

“কি বুঝতে পারছেন?”

“বুঝতে পারছি তুমি চাইছো আমি জোর করে হলেও তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি,চুমু দেই গালে,ঠোঁটে। আরো অনেক কিছুই ভাবছো তুমি।”

“আপনার আজ খবর আছে ওয়েট বলেই মৃথিলা নিরবের পিছনে ছুটছে নিরব ছোট্ট করে দৌড় দিচ্ছে।”

কিছুক্ষণ ছোটার পর মৃথিলা হাঁপিয়ে যায়।

“নিরব বলে মিথু আমার পিছু নিয়েছো কেনো আমাকে হাগ করতে।”

“মৃথিলা বললো কখনো আপনার মতো ফাজিল কে হাগ করবো না আমি।”

“করবে এক্ষুণি করবে।”

“মোটেও করবো না আমি।”

“মিথু পেছনে বাগান তাকিয়ে দেখো কি ভয়ানক একটা লম্বা মহিলা।”

“বাগান শুনেই মৃথিলা ছুটে গিয়ে নিরবকে জড়িয়ে ধরে।কাঁপতে কাঁপতে বলে এই বাগানে কেনো এসেছেন এত রাতে।আমার ভূতে ভয় করে প্লিজ চলুন।”

“নাহ যাবো না।”

“প্লিজ চলুন না এখান থেকে। ”

“যেতে পারি বাসায় গিয়ে বিশাল লম্বা চুমু দিতে হবে রাজি।”

“যা বলবেন তাই করবো আপনি চলুন প্লিজ।”

দুজনে বাসায় ফেরার জন্য রওনা হলো।শাড়ির সামনে পাড়া লেগে সমস্ত কুঁচি খুলে গেলো শাড়ির।মৃথিলা দম করেই থেমে গেলো।নিরব পেছনে তাকিয়ে দেখে ধবধবে সাদা পেট বের করে নিজের শাড়ির কুচি ঠিক করছে মৃথিলা।আসার সময় মুনতাহা তাকে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু এখন সে কোন ভাবেই শাড়ি ঠিক করতে পারছে না।এই নির্জন রাস্তায় কেউ নেই কার থেকে সাহায্য নিবে সে।নিরব খিল খিল করে হেসে দিলো।কি করবে সে নিজেও তো শাড়ি পরাতে জানে না।এইদিকে হাতেও ব্যাথা।মধ্যরাস্তায় তার বউ শাড়ি খুলে দাঁড়িয়ে আছে।কি সাংঘাতিক ব্যাপার।এই দিকে মৃথিলা ডাকছে এই যে শুনুন না আমাকে একটু হেল্প করুন।নিরব মৃথিলার কাছে এগিয়ে এসে তাকিয়ে আছে পেটের দিকে।মৃথিলা বললো এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন।আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে।পারলে হেল্প করুণ না হলে এই শাড়ি খুলে ব্লাউজ আর পেটিকোট করে বাসায় চলে যাবো মানুষের ভেতর দিয়ে।কথাটা শুনেই নিরব বললো আহা মানুষের কি সৌভাগ্য এভাবে আমার বউকে দেখবে।এই শহরে কারো চোখ ই থাকবে না তোমাকে দেখলে বুঝলে।

চলেব,,