#প্রণয়ের_আসক্তি
১৪.
#WriterঃMousumi_Akter
সন্ধ্যার গুমট অন্ধকারে বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে নিরব হাতে এক মগ কড়া ব্ল্যাক কফি।বেলকনিতে চাঁদের নরম সাদা আলো এসে পড়েছে।বেলকনির লাইট অফ করে চাঁদের নরম আলোর সৌন্দর্য উপভোগ করছে নিরব।বেলকনির নিচেই বহু পুরণো একটা ঝাউ গাছ রয়েছে।ঝাউ গাছ টা দোতলা ভেদ করে উপরে উঠে গিয়েছে অনেক খানি।গাছ টা আহনাফ মাহমুদ ই লাগিয়েছিলো।যদিও আগে এখানে টিন সেটের ঘর ছিলো।পরে আহনাফ মাহমুদ এক তলা করেছিলেন তার পর ই আলতাফ মাহমুদ দো’তলা করেছেন।এই বাড়িটা খুব একটা বিলাসবহুল বাড়ি সেটা নয়।আলতাফ মাহমুদ কার জন্য বা বাড়ি ঘর করবেন নিজের প্রিয়জন দের হারিয়ে ভীষণ নিঃস্ব তার জীবন।নিজের ছেলে বেঁচে থাকলে হয়তো কিছু করতেন।ঝাউ গাছ টার জন্য বেলকনির এক কোনায় কিছুটা ছায়া পড়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে।ঝাউ গাছের আগায় দেখলে মনে হবে জুনি লাইট জ্বলছে নিভছে।কিন্তু না এখানে সব সময় জোনাক পোকার বসবাস।জোনাক পোকা পুরা গাছের ঝাউ এর মাঝে বসবাস করে।দৃশ্য টা দেখতে অপুর্ব সুন্দর।
কফি খেতে খেতে আহনাফ মাহমুদ কে নিয়ে ভীষণ চিন্তা করছে নিরব। ভীষণ চিন্তা তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।একটার পর একটা প্রশ্ন নিরব কে ঘিরে ধরেছে।এতদিন মৃথিলাকে নিয়ে দুঃচিন্তা ছিলো গতকাল থেকে নতুন একটা চিন্তা তাকে ঘিরে ধরেছে।আহনাফ মাহমুদ এর কেস টা দীর্ঘদিন হয়েছে তাই তার কেস ফাইল টা এখন আর অতটা গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় না।কেস টা চাপা পড়ে আছে অনেক দিন।এটাকি এক্সিডেন্ট নাকি মার্ডার। গোয়েন্দা বিভাগ দীর্ঘদিন গবেষনা করেও কিছু বের করতে পারে নি।দিনের পর দিন কেস টা নিয়ে অনেক ঘাটাঘাটি করেও কিছু বের করতে পারে নি কেউ।তাছাড়া প্রায় দুই যুগ হয়ে গিয়েছে এত পুরণো কেস নতুন কেস এর চপে চাপা পড়ে আছে।সেই কেস এর ফাইলে হয়তো ধুলা জমে আছে।তবে গোয়েন্দা বিভাগ ভীষণ মিস করে আজ ও অফিসার আহনাফ মাহমুদ কে।সে যাওয়ার পর ডিপার্টমেন্টের মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছে।নিরব যখন চাকরিতে জয়েন করে তখন নিরব দের ব্যাচের সবাইকে অফিসার আহনাফ কে দেখানো হয় সবাইকে মটিভেশন দেওয়া হয় তারা যেনো অফিসার আহনাফের মতো দায়িত্বশীল হতে পারে।প্রতি বছর চাকরি তে যারা জয়েন করে তাদের সাথেই অফিসার অহনাফ কে পরিচয় করানো হয়।
একমাত্র গোয়েন্দা বিভাগ জানে এই সত্য তাছাড়া আর কেউ জানেনা।অফিসার আহনাফ এর মৃত্যু একটা ভীষণ রহস্য হিসাবে থেকে গিয়েছে।শহরে একটা দল ছিলো যারা নারী,ও শিশু পাচারের সাথে যুক্ত ছিলো।যাদের কেউ কোনদিন খুজে পাই নি।একমাত্র অফিসার আহনাফ ছিলেন সেই বিচক্ষণ অফিসার যে তাদের বিরুদ্ধে সকল প্রমাণ ভিডিও সহ কালেক্ট করেছিলেন।যেদিন রাতে তার হাতে প্রমাণ আসে সেদিন রাতেই ট্রেন এক্সিডেন্ট হয়।তবে আহনাফ প্রমাণ পেয়ে তার উপরের অফিসার দের বলেছিলো তার জীবন ঝুঁকিতে আছে তবে সে যদি মারা ও যায় তাহলে মারা যাবার আগে হলেও প্রমান সে পৃথিবীর সামনে আনবে।প্রমাণ না দেখিয়ে সে মরবে না।জীবনের বিনিময়ে হলেও এই প্রমান সে ক্রিমিনাল দের হাতে তুলে দিবে না।প্রমান যদি পৃথিবীর সামনে না আসে আর সে নিঁখোজ হয়ে যায় তাহলে সে কোন না কোন একদিন ফিরে আসবেই।তার ধারণকৃত প্রামান সে দেখাবেই।তার পেছনে শত্রু লেগেছে তাই সে ব্যাক্তিগত গাড়ি ছেড়ে ট্রেনে যাতায়াত করছিলো।তবুও বাঁচতে পারে নি সে।তার লাশ তার আত্মীয়ের পরিচয় দিয়ে কেউ বা কারা তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়। পুলিশ ডিপার্টমেন্ট পরর জানতে পারে তার মা বাবা লাশ নেয় নি।তাহলে কোথায় গেলো আহনাফ মাহমুদ আর তার ওয়াইফ এর লাশ।পুকিশ ডিপার্টমেন্ট এর ধারণ হুট করেই কোনদিন তার আগমণ হবে যদি সে বেঁচে থাকে।
আজ নিরবের মনেও অনেক গুলো প্রশ্ন।কোথায় হারিয়ে গেলো অফিসার আহনাফ মাহমুদ।আহনাফ মাহমুদের হাতে থাকা প্রমান গুলো পাওয়া গেলে হয়তো মৃথিলার পেছনে পড়ে পাচারকারীদের খুজে পাওয়া যেতো।এমনতো হতেই পারে সেই ক্রিমিনাল টিম আজ ও সেই অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।ভাবতে ভাবতে মাথায় পেইন হচ্ছে নিরবের।
‘এমন সময় নিরবের ঘাড়ে মৃতিলার হাতের স্পর্শ লাগে,শিউরে ওঠে নিরব।হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে মৃথিলা তার কাধে হাত রেখেছে।নিরব মৃথিলার হাতের উপর হাত রেখে বলে,গল্প শেষ হলো মুনতাহা ভাবির সাথে।’
‘মৃথিলা বললো গল্প তো শেষ কিন্তু আপনার কি হয়েছে গতকাল থেকে।গতকাল থেকে সারাক্ষণ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছেন।আমার সাথে ঠিক ভাবে কথা বলছেন না।আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন।’
‘নিরব মাথা একটা জোরে ঝাকুনি দিয়ে বললো,একদম ই না।তোমাকে কি বিরক্ত লাগতে পারে।এক জনম তোমার দিকে তাকিয়েও কাটিয়ে দিতে পারবো বুঝলে। সাত না পাঁচ না একটায় বউ আমার তার উপর কিসের রাগ আমার।’
‘তাহলে কি ভাবছেন কাল থেকে।’
‘ভেবে নাও সব ভাবনাতে তুমি মিশে আছো নিঃসন্দেহে।’
‘কাল যে নাকফুল টা এনেছিলেন সেটা কি আরেক টা বিয়ে করবেন বলে এনেছেন।’
‘নিরব কপালে হাত চালাতে চালাতে বললো উফফ শিট।কি ভীষণ ব্যাস্ততায় এটা মাথা থেকে যে বেরিয়ে গিয়েছে।তবে আজ রাতে ঠিক ই মনে পড়তো।’
‘কি মনে পড়তো আরেকটা বিয়ে করবে তাই।’
‘উহু আমি এক নারীতে সন্তুষ্ট।এসব কি বলো তুমি মিথু।আমি আবার বিয়ে করবো সেই সাহস আমার নেই।তোমাকে উপেক্ষা করার মতো এমন সাহস নিয়ে আমি জন্মায় নি বুঝলে।’
‘নাহ ভাবলাম ওই ল্যাপটপ কে পরাবেন কিনা।খুব চিন্তায় ছিলাম আমি।’
‘নিরব বললো জাস্ট ওয়েট মিথু।বলেই রুমে গিয়ে গহনার বক্স নিয়ে এলো।মৃথিলার নাকের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নাকফুলের বক্স থেকে একটা সাদা পাথরের নাকফুল বের করে পরিয়ে দিলো।নাকের ছিদ্র বেশ ছোট হওয়াতে মৃথিলা একটু ব্যাথা পাচ্ছিলো।নিরব নাকে ফু দিয়ে দিয়ে খুব সাবধানে নাকফুল পরিয়ে দিলো।মৃথিলার চোখে মুখে চমৎকার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।নিরব মুগ্ধ হয়ে মৃথিলার মুখের উজ্জ্বলতা দেখছে।নিরব আরেক টা বক্স বের করে দুইটা গোল্ডের বালা মৃথিলার হাতে পরিয়ে দিলো।’
‘মৃথিলা দেখে অবাক হয়ে গেলো।নিরব কে বললো এত ভারী চুড়ি এনেছেন কেনো আমার জন্য আপনি?এটা স্বর্ণের তাইনা।এত দামী জিনিস কেনো এনেছেন আপনি।শুধু শুধু এত টাকা কেনো খরচ করলেন।’
‘নিরব একটু মিষ্টি হেসে বললো,এগুলো গোল্ড প্লেট মানে নকল সোনা।এগুলো স্বর্ণ না বুঝলে।তাই দাম ও বেশী না।নিরব একটা চেন লকেট সহ আর একটা সিম্পল কানের দুল ও পরিয়ে দিলো মৃথিলাকে।নিরব খেয়াল করলো মৃথিলাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। তাছাড়া মৃথিলার চোখে মুখে ভীষণ আনন্দ।গহনা পরতে সব মেয়ের ই ভাল লাগে মৃথিলাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।গহনা ছাড়া একটা নারী অসম্পূর্ণ। ‘
‘নিরব একটু অবাক হয়ে বললো মৃথিলা এগুলো পেয়ে কি তুমি খুশি।’
‘মৃথিলা ভীষণ মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো হ্যাঁ আমি ভীষণ খুশি। ‘
‘এই গহনা গুলো কিন্তু গোল্ড এর না। জেনেও তুমি খুশি।’
‘মৃথিলার চোখে মুখের কোনো ভাবান্তর দেখা গেলো না।সে আগের মতোই খুশি।
নিরব আবার ও বললো মৃথিলা কিছু বলছি তোমায় উত্তর দিলে নাহ যে।’
‘মৃথিলা নিরবের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,এগুলো পরে নিজেকে বিবাহিত মনে হচ্ছে এ কারণে আমি ভীষণ হ্যাপি।এগুলোর দাম আমি বিচার করি নি।এগুলো কতটা মূল্যবান সেটা আমি ফিল করেছি।এগুলো যে এনে দিয়েছে সে আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবান সেটা আমি জানি।তাই তার ভালবেসে এনে দেওয়া জিনিস গুলো ততটায় দামি।তবে আমি উল্টা রাগ করতাম যদি গহনা গুলো অনেক দাম দিয়ে কিনতেন।এমনি তেই আমাকে নিয়ে দেশে দেশে ঘুরে আপনার অনেক টাকা খরচ হচ্ছে।’
মৃথিলা যে নিরব কে নিয়ে এতটা ভাববে নিরব ভাবতেই পারে নি।সব মেয়ে টাকার পাগল থাকে না কিছু মেয়ে ভালবাসার পাগল ও থাকে মৃথিলা ই তার প্রমান।নিরব গোল্ড ই এনেছে কিন্ত মৃথিলার কাছে প্রকাশ করছে না।মৃথিলা অতিরিক্ত কথা বলবে এই ব্যাপার টা নিয়ে তাই মিথ্যা বলে চুপ করিয়ে রেখেছে।বিয়ের পর নিরব মৃথিলাকে কিছুই দিতে পারেনি দেখে নিরব মোটামুটি কিছু গহনা কিনেছে।
সেদিন রাতে দুজনে সুয়ে আছে।মৃথিলা বায়না ধরলো তার বাবার সাথে কথা বলবে।নিরব আজ ফোন দিলো কথা বলার জন্য।রিং বেজে যাচ্ছে কেউ রিসিভ করে নাহ।দু’বার রিং হওয়ার পর মৃথিলার মা ফোন রিসিভ করেছে।
–মায়ের কন্ঠ পেয়েই মৃথিলা বললো আমি মিথু বলছি মা।কেমন আছো তুমি?
–ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠলো পরের বাসায় বাসায় অতিথির মতো সুযোগ পেয়ে ভালোই দিন কাটাচ্ছিস তাইনা মিথু।তোর কি আত্মসম্মান এ বাধছে না এইভাবে অন্যর বাড়িতে বসে বসে খেতে।মায়ের এমন কটুকথা শুনে মৃথিলার বাবা ফোন টা কেড়ে নিয়ে বললো আমার মেয়েটার হাড়ে যদি এবার বাতাস লাগে।ছিঃছি কোথায় মেয়ে বাড়িতে নেই শোকে পাগল হয়ে যাবে সেখানে তুমি মেয়েটার সাথে বাজে ব্যবহার করছো।তুমি যে মিথুর মা ভাবতেই ঘৃণা লাগে আমার ছিঃছিঃছিঃ।
–মৃথিলার বাবা ফোনে বললো মা মৃথিলা কেমন আছো মা?কষ্ট নিও না।তোমার বাবা আছে মা।যতদিন প্রাণ আছে তোমার বাবা তোমাকে ভালবাসবে মা।
–মৃথিলা বললো বাবা মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছা করে কেনো আমি মায়ের ভালবাসা থেকে বঞ্চিত।উনি কি সত্যি আমার মা।
–মৃথিলার বাবা বললো, তুই বাড়িতে নেই তাই তোর মা আরো রেগে আছে।অভিমান করিস না মা।সাবধানে থাকিস মা।
–সাইড থেকে বাড়ির কাজের লোক রহিম চাচা এসে ফোন টা নিয়ে বললো কে মৃথিলা নাকি।আমার কাছে একটু ফোন টা দিবেন কথা বলতে।
–রহিম চাচা ফোন কানে নিয়ে বললো কেমন আছো মা মৃথিলা।
–মৃথিলা বললো আপনি কেমন আছেন চাচা।আমায় কি ভুলে গিয়েছেন চাচা।
–রহিম চাচা বললো,তোমার জন্য খুব খারাপ লাগছে মা।নিজের খেয়াল রেখো মা।
ফোনটা রেখে ঘুমিয়ে যায় সেদিন রাতে।নিরব ও গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে যায়।
হঠাত মৃথিলার ঘুম ভাঙতেই দেখে নিরবের ফোন বাজছে,,
চলবে,,