প্রণয়ের আসক্তি পর্ব-২৬

0
588

#প্রণয়ের_আসক্তি
২৬.
#WriterঃMousumi_Akter

“রহিম চাচা জানতে চাননা আপনি কিভাবে ধরা পড়লেন আর আপনার এই ছদ্মবেশধারী দাঁড়ি গোফ আমি কোথায় পেলাম ।কপালের চামড়ায় কয়েক টা ভাজ পড়ে আছে নিরবের।”

“চোখ তুলে তাকিয়ে রহিম চাচা বললো,”আমার উপর নজর রেখেছিলে তুমি।”

নিরব হাতের ধারালো ছুরিটা আকাশ পানে উর্দ্ধভাবে ধারালো ভাবে ধরে রেখেছে আর উপর দিকে তাকালো ধারালো ছুরিটা ভাল ভাবে দেখে নিয়ে চোখ নামিয়ে রহিম চাচার দিকে তাকিয়ে বললো, প্রথমে কোনো নজর আমি রাখি নি বলেই গভীর এক শ্বাস টানলো।তারপর আবার বললো,আপনাকে সাদাসিদা একজন ভাল মানুষ ভেবেছিলাম আমি কিন্তু আপনি কুজো থেকে হঠাত সোজা হলেন এটা দেখেই সন্দেহ হয়েছিলো আমার।তবুও এই সন্দেহ ছিলো ক্ষীন খুব একটা সিরিয়াস ছিলাম না এই বিষয়ে।সন্দেহ তো আমার সেদিন হয়েছিলো যেদিনা আমার ফোনের নেট কানেকশন পাচ্ছিলো না।তারপর আপনার বাসায় দিকে যেতেই কেউ আমার মাথায় বাড়ি দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে।সেদিন থেকে সন্দেহ শুরু হয় আপনার আশে পাশেই কিছু একটা আছে। আপনার প্রতি চরম নজর শুরু হয়।বাট কখনো ভাবতে পারিনি আপনি মঈন সিদ্দিকী হতে পারেন।এই সহজসরল চেহারের আড়ালে ভয়ঙ্কর কেউ ছিলো সেটা কল্পনাতেও ছিলো না।রহিম চাচা মানেই একজন সহজ সরল মানুষ সে যে কুখ্যাত মঈ সিদ্দিকী হতে পারে এটা ভাবতেও পারিনি আমি।সত্যি কথা বলতে মৃথিলা আমার জীবনের লাকি পারসন।মৃথিলা না থাকলে আমার ক্যারিয়ারের এতটা সাকসেস কখনো আসতো না।

নিরব রহিম চাচার চুলের মুঠি ধরে বললো,ডাবল সন্দেহ তো তখন হলো যখন মুনতাহা আপনাকে নিজের বাবা বলে দাবি করলো।একটা মেয়ের কখনো নিজের বাবাকে চিনতে ভুল হয় না চাচা।মৃথিলা মুনতাহা কে নিয়ে আপনার সাথে পরিচয় করাতে নিয়ে গেছিলো।তখন ও আপনার রুমে গিয়েছিলো আর এই ছদ্মবেশী পোশাক আর দাঁড়ি গোফ দেখে ও বেশ খুশি হয়েছিলো।ও ব্যাগে করে নিয়ে এসছিলো আমাকে একটু ভয় আর চমকে দেওয়ার জন্য।ওই ইনোসেন্ট মেয়েটা তো জানেই না ও আমার কত বড় উপকার করেছে।মৃথিলা এই দাঁড়ি গোফ আর পোশাক পরে আমাকে ভয় দেখালে আমি অবাক হয়ে গেছিলাম হুবহু মঈন সিদ্দিকীর গেট আপ মৃথিলা কোথায় পেলো।আমি মৃথিলাকে তখন কিছুই বলিনি। কিন্তু পরে কৌশলে জেনেছি এই গুলো ও কোথায় পেয়েছে।আমাকে যখন বললো এগুলো ও আমাকে চমকে দিতে মজা করবে বলে আপনার ঘর থেকে এনেছে আমার মাথায় যেনো বজ্রপাত হলো।ও নিজের অজান্তে আমাকে কত বড় একটা কাজে হেল্প করেছে বুঝতে পারছেন চাচা মঈন।

–মঈন সিদ্দকী আশ্চর্য হয়ে নিরবের দিকে তাকিয়ে রইলো।

–নিরব আবার ও প্রশ্ন করলো,,’মুনতাহা কি আপনার মেয়ে না মঈন সিদ্দিকী।’

–‘না আমার কোনো পরিবার নেই।আমার মতো কিলারের মনে মায়া মমতা ভালবাসা কিছুই থাকে না তাহলে পরিবার থাকবে কিভাবে।’

–‘নিরব রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,জানোয়ার রাও নিজের সন্তান কে দুধ পান করায়,বিপদ থেকে আগলে রাখার চেষ্টা করে।আর আপনি নিজের সন্তান কে অস্বীকার করছেন।মানুষরূপি জানোয়ার আপনি। অত টুকু সন্তান রেখে তাদের অস্তিত্ব মুছে দিয়ে পাপের রাজ্য গড়েছেন।’

–‘আমার কোনো সন্তান নেই একবার বলেছি।আমি চিনি না ওই মেয়েকে।’

–নিরব চেয়ারে এটা লাথি মেরে দিলো স্বজোরে।চেয়ার টা খানিক টা দূরে সরে গেলো।নিরব রেগে গিয়ে বললো,আমার কিন্তু ধৈর্যর বাধ ভেঙে যাচ্ছে চাচা।গায়ে হাত তুলতে বাধ্য করবেন না।আমার হাত কিন্তু অনেক শক্ত।রেগে গেলে আমার হুশ থাকে না।শুধু মাত্র মৃথিলাকে বাচিঁয়েছেন বলেই এখনো সম্মান দেখাচ্ছি।বাট সত্যটা আসলে কি চাচা এটা কি নতুন ট্রাপ ছিলো আপনার।কি ভেবেছিলেন মৃথিলাকে মৃত্যুর দিকে বার বার ঠেলে দিয়ে আবার নিজেই বাঁচানোর নাটক করে মহৎ হতে চেয়েছিলেন।মৃথিলার সাথে এত নাটক করার কারণ কি চাচা?আমার যেনো এক প্রশ্ন দুইবার করা লাগে না।এমনিতেও বাঁচার কোনো পথ আপনার সামনে খোলা নেই চাচা।

–ক্রমশ নিজের চেহারার রুপ বদল হতে থাকে মঈন সিদ্দিকীর,চোখ দুটো লাল রক্তজবার ন্যায় হিংস্র হতে থাকে মঈন সিদ্দিকীর।ধীরে ধীরে নিজের আসল রুপ ধারণ করতে শুরু করে।চেহারায় হিংস্রতা স্পষ্ট। হায়েনার মতো রুপ ধারণ করেছে সে।

–নিরব মঈন সিদ্দিকীর দিকে ঝুঁকে গিয়ে বলে এই রাগ,এই তাপ,আই আগুন চোখ কাকে দেখাচ্ছেন চাচা?চেয়ে দেখুন আমার দিকে,আমার চোখের দিকে তাকান।এই চোখের আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবেন।আপনার এই আগুন চোখে আর তেজ নেই চাচা আমাকে পোড়াতে পারবেন না।তাই ভালোই ভালোই বলুন কেনো বার বার মৃথিলার ক্ষতি করেছেন আপনি?মুখ যদি এমনি না খোলে খোলানোর ব্যাবস্হা করবো।

–“মঈন সিদ্দিকী হিংস্র রূপে বললো,সাহস থাকলে আমাকে ছেড়ে দাও অফিসার এই শক্ত বাঁধণ থেকে।রুপ বদল করেছি জাত পাল্টায় নি আমি।এক ছোবলে তোমাকে শেষ করার ক্ষমতা রাখি আমি।”

–নিরব ছুরি দিয়ে সমস্ত বাধন কেটে দিলো মঈন সিদ্দিকীর।চেয়ারে ঝুঁকে গিয়ে বললো,খুলেছি বাঁধণ এবার কিছু করার ক্ষমতা থাকলে করুণ চাচা।

মুক্ত হয়েও চেয়ারে বসে আছে চাচা।কোনো –রকম রিয়াকশন করছে না।

–নিরব বললো,রিফাত কালি নিয়ে আয় চাচার ফিঙ্গার নিতে হবে।

–রিফাত কালি নিয়ে এগিয়ে আসতেই
মঈন সিদ্দিকী নিরবের হাত থেকে ছুরি কেড়ে নিয়ে নিজের দুই হাতের সমস্ত আঙুলের মাথা কেটে ফেললো।খুব ই ভয়ানক ছিলো সে দৃশ্য। একটা মানুষ কতটা ডেঞ্জারাস হলে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে।তাজা রক্ত গড়িয়ে পড়েছে ফ্লোরে মঈন সিদ্দিকীর ভেতরে ব্যাথা অনুভব এর কোনো হেলদোল প্রকাশ পাচ্ছে না।সে বিশ্রী ভাবে হেসে দিয়ে বললো,কোনো প্রমান আমি নিতে দিবো না।আমার ফিংগার নিবি তোরা।আমার আঙুল ই কেটে দিলাম। নিরব ততক্ষণে বুঝতে পারলো এই মানুষ টা কতটা ভয়ঙ্কর ছিলো আর প্রয়োজনে আরো কত খানি ভয়ঙ্কর হতে পারে।

–নিরব আবার ও চেয়ারে লাথি মেরে বললো,ওহ শিট!মারাত্মক ভুল হয়ে গেলো আমার।হ্যান্ডকাফ লাগা রিফাত।এ এখন মেন্টাল হয়ে আছে, নিজেকে শেষ করে দিতে পারে।এমন ভাবে বেঁধে দে যেনো নিজেই নিজেকে শেষ করতে না পারে।নিরব চিন্তিত ভাবে কপালে হাত চালাচ্ছে।রিফাত নিজের গায়ের শার্ট খুলে মঈন সিদ্দীকীর হাত বেঁধে দিলো।সুপ্তি কে কল দেওয়া হলো ওষুধ আনার জন্য।

মঈন সিদ্দিকীর সমস্ত ডিটেইলস জানার পরে নিরব রিফাত আর সুপ্তিকে সব টা খুলে বলে।তখন থেকেই রিফাত মঈন সিদ্দিকী কে ধরার প্লান করে।আজ রাতেই মঈন সিদ্দিকী কক্সবাজারের একটা নারী পাচার টিমে এখানকার একটি মেয়ে পাচার করে দিচ্ছিলো সাথে নিজেও পালাচ্ছিলো এখান থেকে।রিফাত সেখান থেকেই উনাকে ধরে এনে চেয়ারের সাথে বেঁধে ফেলে।

এরই মাঝে মৃথিলা ফোন করেই যাচ্ছে, নিরব ফোন সাইলেন্ট করে রাখলো।

–নিরব আবার প্রশ্ন করে আপনার জবানবন্দী দিন চাচা।মৃথিলার বাবা কোথায়?মৃথিলার সাথে এত নাটক কেনো করলেন?আপনাদের আসল আস্তানা কোথায়?

–আমার কাছ থেকে কিছুই জানতে পারবে না তুমি?সে আশা করেও লাভ নেই।আমাকে মেরে ফেলো আমি প্রস্তুত।

–মরার খুব শখ তাইনা চাচা আপনার?তো আপনি কি ভেবেছেন বেঁচে থাকবেন এত কিছুর পরেও।আপনার সাথে এখানে কি কথা হচ্ছে আমাদের অফিস তার সম্পূর্ণ ভিডিও দেখতে পাচ্ছে।বলুন কেনো মৃথিলার সাথে এমন করলেন?

–মৃথিলার উপর আমার রাগ ছিলো তাই এমন করেছি।মৃথিলার বাবা আহনাফ আহমেদ এর জন্য আমার পুরো জীবন ছদ্মবেশে কাটাতে হয়েছে।সেই একটা প্রতিশোধ নিতেই আহনাফ কে মেরে ওর মেয়েকে আশরাফ ভাই এর কাছে অভিনয় করিয়ে আশ্রিতা রেখেছিলাম।সব টায় ছিলো আমার অভিনয় আশরাফ ভাই কোনদিন বুঝতেই পারেই নি যে মৃথিলা আমার পরিচিত।আমি দুজন মানুষ কে ভাড়া করে আশরাফ ভাই এর কাছে মৃথিলাকে দিয়েছিলাম।আর আমি কাজের লোক হয়ে রহিম নামে বয়স্ক সেজে থাকার নাটক করেছি। তাই ইচ্ছা করেই কুজো হয়ে থাকতাম আমি।আহনাফ এর মেয়েকে পাচারকারীদের হাতে তুলে দিয়ে আবার বাঁচিয়ে এক ভীষণ আনন্দ পাই আমি।এই আনন্দ এর জন্যই বেঁচে আছি আমি।মৃথিলাকে আতঙ্কের জীবন দিয়ে মানসিক তৃপ্তি পেয়েছি আমি।আহনাফ আমার সমস্ত প্রমান পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এর হাতে তুলে দিয়েছিলো।পুলিশ আমাকে হন্য হয়ে খুজছিলো।আমাকে ছদ্মবেশ ধরা ছাড়া উপায় ছিলো না।সেদিন ই আমি প্রতিজ্ঞা করি আহনাফ কে খুন করে ওর মেয়েকে অত্যাচার করে সারাজীবন প্রতিশোধ নিবো আমি।আমি এখন তৃপ্তি পেয়েছি।অনেক করেছি অত্যাচার মৃথিলাকে।আমার মন ভরে গিয়েছে।মৃথিলার জীবনের সব কিছুই এলোমেলো করেছি আমি।আফসোস আহনাফ কে দেখাতে পারলাম না কি ভাবে ওর মেয়ের জীবন টা নষ্ট করেছি আমি।এখন আমার মরেও শান্তি।খুব বিশ্রিভাবে হাসছে মঈন।নিজের ভেতরে জমে থাকা কথা গুলো বলে ভীষণ শান্তি পাচ্ছে সে।নিজের ভেতরে কোনো অনুতাপ নেই তার।যেনো যা করেছে সঠিক করেছে সে।

–নিরব রাগে একটা চড় মারলো মঈন সিদ্দিকীর কানে।সাথে সাথে কান বেয়ে গড়িয়ে গেলো রক্ত।

—নিরব রিফাত কে বললো,উনাকে কাল ই চালানের ব্যবস্থা কর রিফাত।

— সিদ্দিকী বলে উঠলো,অনেক বড় ভুল করেছো নিরব।গায়ে সেরোয়ানি নতুন বউ কে কোথায় রেখে এসছো।

–নিরবের বুক কেঁপে উঠলো মৃথিলা তো সত্যি একা আছে।ওর আবার কোনো ক্ষতি হবে নাতো।ফোন হাতে নিয়ে দেখে অনেক গুলো কল মৃথিলার।একটা ভিডিও সেন্ট করেছে মৃথিলা।ভিডিও টা দেখে মাটিতে বসে পড়লো নিরব।

চলবে,,