#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(৩৭)
অনেক্ষণ যাবত আঁখির জন্য অপেক্ষা করে বিরক্ত হলো আদৃত,মেসেজ করলেও জবাব পাচ্ছে না,কল করলেও ধরছে না আঁখি,এবার মনে বেশ অভিমান জমিয়ে চলে আসলো আঁখির খোঁজে।আঁখি শায়েলা মির্জার কক্ষে আসলো।নিজেকে যথাসাধ্য স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে উনার সাথে কথা বলতে শুরু করল।
″মামুনি।″
″আরে আঁখি মা তুই?কক্ষে আয়,কিছু দরকার?কোনো অসুবিধে হচ্ছে তোর এখানে?″
″না মামুনি, তুমি যেখানে সেখানে অসুবিধে কবু হতে পারে আমার?আসলে মামুনি আমায় এখন চলে যেতে হবে।″
″কি বলিস রে এসব,চলে যাবি মানে!″
″আসলে হঠাৎ বাড়িতে একটা জরুরি কাজ পরেছে যেতেই হবে।″
″কি কাজ এমন?″
″আর্জেন্ট কাজ মামুনি,না গেলে না হবে।বলতে পারব না এখন।″
″কি এমন কাজ তোমার আঁখি যে এখনই চলে যেতে হবে।″
″দেখ না আদৃত কেমন যাই যাই করছে,তুই একটু বোঝা তো ওকে।″
″বুঝতে পারছেন না আপনারা,প্লিজ মন খারাপ করবেন না, আমি কিন্তু থাকতে পারব না,আমার যাওয়াটা জরুরি।″
কথাটা বলে আঁখি আর এক মুহুর্তও না দাঁড়িয়ে ছুটন্ত পায়ে বাহিরের দিকে হাঁটা ধরল।আদৃতও পিছু এলো,সাথে শায়েলা মির্জাও আসলেন,আঁখি বাড়ি থেকে গাড়ি আনিয়ে নিয়েছে এতক্ষণে,ছুটে গিয়েই গাড়িতে চড়ে বসল।
″আঁখি কথাটা শুনো আমার?″
আঁখি আদৃতের ডাক শুনেও না শোনার ভান করল,আদৃত গাড়ির পাশে যাবার আগেই গাড়ি ছেড়ে দিল ড্রাইবার,শায়েলা মির্জা আর আদৃত দু’জনই হতভম্ব হলেন আঁখির উক্ত ব্যবহারে।
_____________
আদিল বাইরে,এদিকে সে রিহানকে খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছে,মাও ঘুমিয়ে গেছেন এতসময়ে।আঁখির হঠাৎ বাড়িতে চলে আসায় আশ্চর্য হলো শুভ্রতা।ড্রয়িংরুমে বসে সে আদিলের অপেক্ষা করছিল।আঁখিকে দেখে অবাকত্ব নিয়ে জিজ্ঞেস করল তাকে।
″কি হয়েছে আঁখি এভাবে ফিরে আসলে যে?তাও এতো রাতে!তুমি না আজকে মির্জা হাউজে থাকতে গেছিলে?″
কাছের সেই মমতার আশ্রয়কে দেখে আঁখি আর তার আবেগ ধরে রাখতে পারল না,ছুটে গিয়েই তাকে ঝাপটে ধরে কাঁদতে শুরু করল।
″কী হয়েছে বোন আমার?এভাবে কাঁদছ কেন?হয়েছে কী বলো?″
″আমার কেউ নেই আপু,আমি কারো যোগ্য না,কারো যোগ্য না।″
″কী হয়েছে আঁখি বলবে তো?বলো না, মনটা আমার পেরেশানিতে ভরে উঠেছে,বলো কি হয়েছে?″
আঁখি শুভ্রতার সাথে নিজের সকল কথাই ভাগ করে থাকে,বর্তমানে শুভ্রতাই তার বিশস্ত সঙ্গ,তাকে মনের ভার ভাগ না করে যেন শান্তি পায় না আঁখি।তাছাড়া মনটাও যে আজ ভরে উঠেছে হালকা করার মাধ্যমটা বেশ জরুরি,তাই সবকিছুই আঁখি বলে গেল শুভ্রতাপ্রথম থেকেই।
সবটা শোনার পর শুভ্রতা কি প্রতিক্রিয়া করবে ভেবে পাচ্ছে না।কিছু সময় বাকরুদ্ধ থাকার পর এবার বলল।
″আদ্রিশ এতো কিছু করে গেল আর তুমি আমাদের বললেও না,চুপচাপ সহ্য করে গেলে!আর আজও তাই করবে বলো?আমাদের না হয় কিছু বলো নি ডা.আদৃতের বাবাকে তো বলতে পারতে।আমার মনে হয় ডিভোর্স নিয়ে উনার সমস্যা তেমন হতো না কিন্তু উনার সমস্যা হয়ত বাচ্চা নিয়েই বেশি।তবে তুমি সত্যতা বলে দিতে পারতে যে তুমি সন্তান জন্মদানে সক্ষম। বাকিটা ডা.আদৃতকে বললে উনি নিজের বাবাকে বুঝিয়ে নিতেন,এমনটা তো এখন নতুন না, যে ডিভোর্সি নারীদের বিয়ে অবিবাহিত দের সাথে হচ্ছে না।তোমার এভাবে চলে আসা ঠিক হয় নি,তোমার ডা.আদৃতের সাথে কথা বলা উচিত ছিল।″
″না আপু,আমার জায়গায় হয়ত অন্য কোনো মেয়ে হলে এমনটাই করত যেমনটা তুমি বলছ,কিন্তু আমি কখনও এমনটা করার কথা ভাবতেও পারি না।আমি মেয়ে হয়ে জন্মেছি তাই বলে এ নয় আমি পায়ের ধুলো,বাবা আমায় মাথায় তুলে রাখত,আমি কেন কারো নিচে পরে থাকব,নির্দ্বিধায় আমি বলতে পারতাম আমি সন্তান জন্মদানে সক্ষম, ডা.আদৃতের সাথে কথা বলে আংকেলকে আমাদের পক্ষে আনতেও হয়ত সক্ষম হতাম।কিন্তু আমার সম্মানটা কোথায় পরে থাকত আপু ভাবতে পারছ?আমি কারো ভালোবাসা ভিক্ষেতে চাই না,সারাজীবন কারো করুণা বা আঁড়চোখের বাণী সহ্য করে যেতে আমি পারতাম না,আংকেল মেনে গেলেও এ নিয়ে আফসোস উনার মনে থাকত ঠিকই।মনে মনে হয়ত দিতেন বদদোয়া,আর নারীদের জীবন সম্পর্কে জানোই তো আপু,বাচ্চা গর্ভে ধারনকৃত সময় অনেক দূঘটনার ফলস্বরূপ জন্মদানের সক্ষমতা হারিয়ে যেতে পারে,তখন যদি আমার সাথেও এমন ঘটে তখন কে নিবে আমার জীবনের নিশ্চয়তা?কে নিশ্চিত করবে কথাটা যে আংকেল তখন ডা.আদৃতকে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য বলবেন না।হয়ত ডা.আদৃত তাতে মানবেন না কিন্তু আংকেল তো কষ্ট পাবেন মনে,বংশধর না পাওয়ার দোষী সারাজীবন মনে মনে আমাকেই করে যাবেন।যা আমি কখনোই মেনে নিব না আপু,জীবনে অনেক ভুল করেছি আর না,আত্মসম্মানহীন জীবন আমি মেনে নিতে পারব না।এমনটা করার থাকলে তো আদ্রিশের সাথে সংসার করতাম,ওকে ছেড়ে দিতাম না।কিন্তু না,আমার কাছে ভালোবাসার চেয়েও আমার আত্মসম্মান বড়।আত্মসম্মানের বিসর্জন দিয়ে আমি কোনো কিছুই জয় করতে চাই না।
অতঃপর চোখ মুছে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে নিজ কক্ষে চলে গেল আঁখি।
_______________
রাতভর আঁখিকে কল মেসেজ করল আদৃত কিন্তু না,কোনো কিছুরই জবাব পেল না সে।ঘুম উধাও হয়ে গেছে তার চোখ থেকে,ভিতরে শান্তি নামক জিনিসটাও কোথায় রয়ে গেল।সকালে রেডি হয়ে নাস্তা না করেই হাসপাতালের দিকে পথ ধরল আদৃত।
″বাবা কথা হয়েছে আঁখির সাথে?″
″না মা,কলই তো ধরছে না,না মেসেজ সিন করছে।″
″কি হলো আমার মেয়েটার!ওর বাড়ি যাব?″
″না মা,দেখি হাসপাতাল আসে কি না,না হলে বাড়ি যাব।″
আদৃত চলে আসলো হাসপাতাল,এসে দেখল আঁখি আজ সময়ের আগেই এসেছে,বসে টুকটাক কিছু কাজ করছে।আদৃত তার কাজের ফাঁকেই তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করল।
″আঁখি,খুব বিজি?একটু কথা বলবে?″
″আসলে ডা.আদৃত প্রচুর কাজ,ফ্রি হয়ে কথা বলব।″
আদৃত নিরাশ হলো আঁখির এমন আচরনে,এমনি যতই কাজ থাকুক না কেন আঁখি আদৃতের সাথে হেঁসে কথা বলে নেয় অল্প করে হলেও,কিন্তু আজ আদৃতের মনে হলো আঁখির তেমন কোনো কাজ নেই,তাও তার সাথে কথা বলতে চাইল না,এমনকি আজ তার মুখে সেই হাসিটাও নেই।
আদৃতের সময় পার হচ্ছে না,কোনো কাজে মন বসছে না,মন টা শুধু আঁখির জন্য আনচান করছে তার।কিন্তু আঁখির সাথে যখনই কথা বলতে যাচ্ছে আঁখি তখনই তাকে এটা ওটা বলে এড়িয়ে যাচ্ছে। বড্ড বিরক্ত লাগছে আদৃতের সবকিছু।আজ বেশ কয়েকবার বেহায়ার মতোই আদৃত আঁখির পাশে গেছে কথা বলবে বলে কিন্তু আঁখি কথা বলল না,বরাবরের মতো এড়িয়ে গেল।এবার আবারও আসল আঁখির কাছে,কিন্তু এসে দেখল আঁখির কেবিনে ডা.আনিশা বসে আছেন,আঁখি তার সাথে বেশ হেসে খেলেই কথা বলছে আর আদৃতকে দিল ভারী কাজের চাপের বাহানা,মুহুর্তেই গা জ্বলে উঠল আদৃতের,ছেলে হোক বা মেয়ে তার আঁখির জীবনে নিজের সময়ের ভাগটা সে কাউকে দিবে না।তাই এবার সোজা ভাবেই আনিশাকে বলল আদৃত।
″ডা.আনিশা,আমার ডা.আঁখির সাথে কিছু কথা ছিল,যদি আপনি একটু সুযোগ দিতেন।″
″হ্যাঁ, কেন নয়।″
অতঃপর ডা.আনিশা উঠে চলে গেলে আদৃত আঁখির পাশে আসলো।
″কি হয়েছে?তুমি আমাকে ইগনোর করছে কেন?″
″আমি আপনাকে কোথায় ইগনোর করছি,কাজ আছে প্রচুর তাই কথা বলতে পারছি না।″
″হুম,তবে এখন যে ডা.আনিশার সাথে গল্প করছিলে?এখন কোনো কাজের চাপ নেই তোমার?হাসপাতালে তো আমি ছাড়া কারো সাথে তেমন আড্ডা দিতে দেখি না কখনও,আর আজ আমাকেই অদেখা করছ?ফোন ধরছ না মেসেজ সিন করছ না।কি হয়েছে বলো?″
″কিছু হয় নি,আপনি ভুল ভাবছেন এমন কিছুই না,আমাকে একজন রোগী দেখতে হবে এখন যেতে দিন?″
কথাটা বলে আঁখি আদৃতকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে তাকে এক টানে বুকে সাথে এনে মিশিয়ে নিল আদৃত।
″কি অসভ্যতা করছেন আপনি!″
″অসভ্যতা না এটাকে অধিকারত্ব বলে।″
″কিসের অধিকার?আমি আপনাকে কোনো অধিকার দেই নি?″
″তুমি না দিলেও আমি নিয়ে নিব।″
″আপনাকে সেই সুযোগ আমি কখনও দিব না,আমি আপনাকে ভালোবাসি না ডা.আদৃত।আপনাকে বিয়ে করতে পারব না,আমার আপনার প্রতি আগের সেই অনুভুতি রয়ে যায় নি,চাইলেও আমি আর তা ফিরিয়ে আনতে পারব না,চেষ্টা করে দেখে নিয়েছে আমি,ব্যর্থ হয়েছি প্রতিবার,তাই আমি আপনাকে বিয়েও করতে পারব না।আপনি বরং আমার পিছন না পরে থাকলেই খুশি হবো।″
″বললাম না পরকালেও পিছু ছাড়ব না,তুমি শুধু আমার আঁখি,তোমাকে আমাকে ভালোবাসতেই হবে।″
″আমি বাধ্য নই।″
অতঃপর আদৃতকে অল্প ধাক্কাতে নিজের থেকে ছাড়িয়ে চলে গেল সেখান থেকে আঁখি,আদৃত তার পিছু আসতে নিলে হঠাৎ একজন নার্স আসলো সেখানে।
″স্যাঁর জলদি চলুন,একটা এমারজেন্সি এসেছে আপনাকে দেখতে হবে।″
″আমি ছাড়া আর ডাক্তার নেই?আমি এখন পারব না,অন্যজনকে দেখো।″
″স্যার খুব ক্রিটিক্যাল মেটার, ডা.আঁখি একটু আগে একটা সার্জারি করে বলেছেন আজকে আর কোনো কাজে থাকবেন না উনি,উনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে চলে যাবেন,ডা.মোনায়েম নেই আজকে,বাকিরাও কাজে আছেন একমাত্র আপনি ফ্রি,প্লিজ জলদি চলুন স্যার।″
আদৃত দায়িত্ব থেকে কখনও পিছপা হয় না,তাই চলে গেল নার্সের সাথে।
″আঁখি হাসপাতাল ছাড়ার সকল ব্যবস্থা করে নিয়েছে,উক্ত কাগজপত্র এবার আশরাফ রায়হান খানের কাছে নিয়ে গেল।সেখানে সে নিজের সাথে করে আহিলকেও ডেকে এনেছে জরুরি কাজ বলে,এবার কাগজপত্র বাবার হাতে তুলে দিয়ে বলল।
″আজ স্যার বলে আপনাদের সাথে ফরমালিটি করতে পারব না,এমনিতেই আর ডাকতে আসব না,এখানে জব নেওয়ার প্রথম আর প্রধান কারণ ছিল তোমাদের পাশে থাকা,তোমাদের প্রতিদিন চোখ ভরে দেখে নেওয়া,ভেবেছিলাম হয়ত তোমাদের মনে আবারও জায়গা করে নিতে পারব।কিন্তু ভুল ছিলাম আমি,ভুলে গেছিলাম আয়না একবার ভেঙে গেলে তা হাজার জোরা দাও তবুও ফাঁটা দাগ থাকে।সম্পর্ক আর বিশ্বাস তো তেমনই হয়।যেখানে আমার কোনো অধিকারই রয়ে যায় নি সেখানে জেদ নিয়ে দম্য দেখাতে চাইলাম,আসলেই পা*গ*ল আমি,কিন্তু আর পা*গ*লা*মি করব না,দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছি আমি ব্যর্থ,জীবনে এমন ভুল করেছি যে তার প্রায়শ্চিত্তে জীবন শেষ করে দিলেও কম হবে।আজ বুঝতে পেরেছি আমি সব হারিয়ে গেছি,আমি কাঙাল,আমার কেউ নেই।দিনশেষে আমি একা,আমি এতটাই বাজে আর মানুষরুপে মিছে অস্তিত্বের অধিকারী একজন যাকে কেউ চায় না আর,যে কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না।তাই ভাবলাম নাই বা পেলাম কারো ভালোবাসা,আত্মসম্মান আর জীবনের তিক্ততা নিয়ে যতদিন পারি বেঁচে থাকব,আর দূর থেকে চাইব তোমরা খুশি থাকো,কখনও জ্বালাতে আসব না আর।
আমি হাসপাতাল ছাড়ার সিদ্ধান্ত হুট করে নেওয়ায় আপনাদের আগে জানাতে পারি নি,তাই দুঃখীত,কিন্তু এই হাসপাতালে আমি আর থাকতে পারব না।
পারলে আমার ক্ষমা করে দিও বাবা,ভাইয়া,আমি যে ভুল করেছি তার ক্ষমা হয়ত আমি কখনও পাবো না,তবুও খুব করে চাইব ,সব শেষে বলব অনেক ভালোবাসি তোমাদের, দূরে চলে গেলেও এমন একদিন যায় নি যেদিন ভাবি নি তোমাদের নিয়ে,চলি।মাম্মাম,মাইশা আর দাদু দিদুকে বলো আমি উনাদের কথা জিজ্ঞেস করেছি।কখনও সামনে পরব না।হাসপাতাল ছাড়ার বিষয়ে আমার উপর থেকে সব ফরমালিটি শেষে করে দিলে আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হবো।চলি তাহলে।
অতঃপর কথাগুলো বলে আঁখি বেড়িয়ে এলো।এতক্ষণ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে অনুভুতিহীনের মতো কথাগুলো বলে গেলেও এবার আর নিজেকে আটকে রাখতে পারল না আঁখি,গাড়িতে উঠেই এবার মুখ চেঁপে কান্না করতে শুরু করে দিলো।হাসপাতালের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল।
″আমাকে ক্ষমা করে দিবেন ডা.আদৃত,কিন্তু আমার কাছে ভালোবাসার উপর আমার আত্মসম্মানের স্থান,নিজের জীবন গুছিয়ে নিন দোয়া করব।চলে যাব আপনাদের সবার থেকে অনেক দূরে,অল্প কাজ বাকি,তবে আর আসব না আপনাদের কাউকে কষ্ট দিতে,আসব না কারো জীবনে অভিশাপরূপে,জন্মস্থান থেকে পাওয়া তিরস্কার, তাচ্ছিল্য আমি কখনও ভুলব না,আর কখনও পা রাখব না এই দেশের মাটিতে,নির্দিষ্ট কিছু কাজের সমাপ্তি এ দেশে ও তার মানুষের মায়ায় ত্যাগ করতে বাধ্য করবে আমায়।″
রাতে আদ্রিশ অন্য একটা রুমে ঘুমিয়ে যায়,সকালে রিদিকা ঘুম থেকে উঠার আগেই কোথাও যেন বেড়িয়ে গেল,সারাদিন অনেক ফোন মেসেজ করেও তাকে পায় না রিদিকা।আদ্রিশকে হারানোর ভয়ে রূপ ধরে রাখতে আজকের পুরোটা দিন বিভিন্ন ডাক্তারের শরণাপন্ন হয় রিদিকা, কিন্তু কোনো ফলাফল পায় না,সবারই একই কথা উনারা কিছুই করতে পারবেন না,ভাইরাস খুব তাড়াতাড়ি তার শরীরে ছড়িয়ে গেছে,কোনো পথ্য বা ওষুধ কিছুই পায় নি সে কারো কাছ থেকে,নিরাশ হয়ে ফিরতে হলো তাকে।ফেসবুক,গুগল কোথাও কোনো উত্তর পেল না,ভাইরাসের আতঙ্ক থেকে নিজেকে বাঁচানোর পেল না কোনো রাস্তা।এদিকে সময়ের সাথে রিদিকার শরীরের বেহাল দশা ধরতে শুরু হয়েছে,চামড়া অনেকটা সংকুচিত হয়ে গেছে পুরো শরীরের,চেহারার দিকটায় বেশি,আজকে ডান হাতের তিনটে নখ উঠে গেছে,চোখের পাপড়িগুলোও ইতিমধ্যে পরে গেছে।নিজেকে দেখতে নিজের কাছেই কেমন জানি ভয়াবহ লাগছে।
চলবে…
#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(৩৮)
আঁখি আসলো বাড়িতে,সারা রাস্তায় কান্না করেছে,চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে অল্প সময়ে,আজ নিজেকে নিঃস্ব লাগছে বড্ড,পৃথিবী অন্ধকার লাগছে,তাও নিজেকে সামলে নেওয়ার ব্যর্থ এক চেষ্টা করে বিছানায় এসে গা এলিয়ে দিলো,চিৎ হয়ে পরে আছে উভয় চোখের কোণ হয়ে বেয়ে পরছে জল।
আদৃত সার্জারি করে এসেই জানতে পারল আঁখি হাসপাতাল ছেড়েছে।মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরল তার, এবার নিশ্চিত হলো আঁখির সাথে কিছু একটা তো হয়েছে যার ফলস্বরূপ ও এমনটা করছে,না আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারল না আদৃত,আঁখিকে হারিয়ে যাবার ভয় এবার বেড়ে গেল তার,আঁখি ব্যতীত এখন যেন এক মুহুর্তও নিশ্বাস নেওয়া মুশকিশ আদৃতের,আর দাঁড়াল না,সোজা আঁখির বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো।কিন্তু গাড়িতে উঠার আগ মুহুর্তে হঠাৎ ফোন আসল তার।আরিয়ান মির্জা সাহেব কল করেছেন।ফন উঠাল সে।
″হ্যাঁ বাবা বলো?″
″কোথায় তুই আদৃত?কাজ শেষ?বাড়ি কবে ফিরছিস?জরুরি কথা ছিল।″
″হ্যাঁ বাবা কাজ শেষ, তবে এখন বাড়ি ফিরব না অন্য কোথাও যেতে হবে। এসে কথা বলছি।″
″তা কোথায় যাচ্ছিস?″
″আঁখির বাড়িতে,ও হঠাৎ করে কেমন জানি বিহেভ করছে,এমনকি হাসপাতালও ছেড়ে দিয়েছে,আমি ওর বাড়িতে যাচ্ছি। ″
″আদৃত তোর সাথে আমার ইম্পর্ট্যান্ট কথা তুই আগে বাড়ি আয়।″
″পরে আসলেও তো হবে বাবা।″
″বাবা থেকে এখন অন্য মেয়ে বড়?″
″এ কেমন কথা বলছ বাবা,আমার জন্য আল্লাহ তায়ালা পরেই তোমাদের অবস্থান, এ কথা তুমি কি করে ভাবতে পারো!″
″তবে জলদি চলে আয়।″
″কিন্তু বাবা…″
″আমি কোনো কিন্তু শুনতে চাই না আদৃত,তুই আসছিছ কি না বল?″
″ওকে আসছি।″
″হুম।″
আদৃত বাবার কথায় বাধ্য হয়ে আগে উনার কাছে গেল।
বর্তমানে নিজ কক্ষের বিছানায় বসে আছেন আরিয়ান মির্জা, পাশে বসিয়েছেন আদৃতকে,এবার নরম স্বরে বললেন তাকে।
″আদৃত,তোর বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে, আমার মতে তোর বিয়ে করে নেওয়া উচিত।″
″আমি বিয়ে করব বাবা,এ বিষয়ে আমি তোমার সাথে কথা বলব ভাবছি,দেখো বাবা আমি তোমার আর মায়ের সাথে বরাবরই ফ্রি হয়ে কথা বলি,আজকেও বলতে চাই।আমি আঁখিকে পছন্দ করি কথাটা তোমরা ছয় বছর আগ থেকেই জানো,আর আমি বিয়ে করলে ওকেই করব।″
″আদৃত,তুই প্রাপ্তবয়স্ক,তাছাড়া প্রতিষ্ঠিত,তোর উপর বিয়ে নিয়ে নিজের জোর আমি খাটাতে চাই না।কিন্তু আমিও কাউকে পছন্দ করেছি তোর জন্য,রিংকি মেয়েটা মন্দ না,তোকে পছন্দও করে,একসাথে কাজও করেছিস এতো বছর,দেখ আঁখি তোর অতীত ছিল আর এমনটা তো জরুরি নয় যে তাকেই আবার জীবনে জড়াতে হবে।″
″কী বলছ বাবা!আর রিংকিকে তো আমি আমেরিকা পাঠিয়ে দিয়েছি,ও কোথা থেকে আসলো আবার?″
″ও আমেরিকা যায় নি,ও সেদিন ব্যাগপত্র গুছিয়ে বেড়িয়েছিল কিন্তু আমি ওকে আটকাই,ও সবকিছু বলেছিল আমাকে তুই আঁখির জন্য ওর সাথে বা*জে ব্যবহার করেছিস,আর তোর মাও ওকে পছন্দ করেন না,তাই ওকে আমি আলাদা একটা ঘর ভাড়া রেখেছি,সঠিক সময় দেখে তোর সাথে কথা বলব বলে।″
″এখানে কথা বলার কী আছে বাবা,আমি ওকে পছন্দ করি না,তাছাড়া আমি এতবছর বিয়ে করি নি শুধু আঁখির পথ চেয়ে,বিয়ে করলে আমি আঁখিকেই করব নয়ত না।″
″দেখ আদৃত,তুই টিনএইজার না,ম্যাচিওর একজন ডাক্তার,তোর কাছ থেকে এমন কিছু কীভাবে আশা করা যায়?তুই তো জানিস সমাজে আমি আমার সম্মান কি করে গড়ে তুলেছি আর তুই কি চাস তা মুহুর্তেই নষ্ট হয়ে যাক।
অবিবাহিত হয়ে একজন ডিভোর্সিকে বিয়ে করা কতটা অসম্মানের হবে ভাবতে পারছিস?তাও মেনে নেওয়া যেত,কিন্তু আঁখি মাও হতে পারবে না,এতকিছু কোনো ছেলের বাবা কেমনে মেনে নেয়।?″
″বাবা,এসব কথা তুমি বলছ!সর্বকালের আদর্শ শিক্ষকের মুখে এমন কথা শুনব কখনও ভাবি নি।তুমি কখন থেকে নারী পুরুষ ভেদাভেদ করতে শুরু করলে বাবা?সমাজের আট দশটা লোকের মতো নারীদের দেখতে লাগলে!কেন বাবা এমন অনেক পুরুষই তো আছে যারা ডিভোর্সি হয়েও কুমারী মেয়েকে বিয়ে করছে,তাছাড়া বাবা হতে অক্ষম হলেও টাকার জোরে বিয়ে করে নিচ্ছে, কই তাদের নিয়ে তো সমাজ কিছু বলে না,তবে এমন কিছু নারীদের ক্ষেত্রে হলে সবাই আঙুল উঠায়,তুমি কবে থেকে এমন লোকদের সমর্থন করতে শুরু করলে!আঁখি তো তোমার কাছে মেয়ের সমতুল্য ছিল আর এখন ও মুহুর্তেই পর হয়ে গেল।এটাই হয়ত নিজ আর পরদের মধ্যে তফাত থাকে।
আঁখির কোনো দিক নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই বাবা,আর যেখানে কথা বাচ্চা নিয়ে তাহলে আমরা দু’জনই ডাক্তার ওসব দিক আমরা দেখে নিব।আর আমার শেষ কথা আমি যদি বিয়ে করি তবে আঁখিকেই করব।″
″আদৃত তুই কিন্তু অনুভুতির নিচে দমে গিয়ে এসব বলছিস,মা বাবা সন্তানের খারাপ কখনও চায় না,অবাধ্য সন্তানের পরিণতি কি হয় আঁখিকে দেখে বুঝতেই পারছিস।তাছাড়া তুই আঁখিকে বিয়ে করতে চাইলেও আঁখি কি তাই চায়।আমার মনে হয় না আঁখি কারো জীবনের সাথে নিজেকে জড়াতে চাইবে আর।″
″এতো শিওর কীভাবে বাবা তুমি?এর মানে তুমিই আঁখিকে কিছু বলেছ,তাই ও এমন করছে।″
″হ্যাঁ বলেছি,বলেছি আমার ছেলের জীবন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছি।ভুল কি বলেছি?″
″এটা তুমি কী করলে বাবা।অবশেষে তুমিও আঁখিকে কষ্ট দিলে,না জানি কতো ব্যথা নিয়ে ঘুরছে মনে।″
″কথাটা বলতে বলতেই আদৃত ছোটে বাইরের দিকে চলে গেল।″
″আদৃত কোথায় যাচ্ছিস?কথা শুন আমার।″
শায়েলা মির্জা কক্ষে আসতে নিলে আদৃত আর আরিয়ান মির্জাকে কথা বলতে দেখে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে যান,এতসময় উনি সবকিছু শুনছিলেন,এবার বেশ রেগে গিয়ে কর্কশ গলায় বলে উঠলেন।
″খুশি হয়ে গেছো তুমি আমার ছেলে আর মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে?কি পেলে তুমি এসব করে?তুমি কি মনে করো তুমি বলবে আর আদৃত বিয়ে করে নিবে,তাও তোমার ওই শাঁ*ক*চু*ন্নি রিংকিকে?আমার ছেলে ছয় বছর দেশে আসে নি আঁখির শোকে,এবার যখন অবশেষে সুখের কিছু ক্ষণ জীবনে আসছিল তখন তুমি তা কারতে পারলে!আজ তোমার সম্মান আমার ছেলের থেকে বড় হলো!″
″শায়েলা তুমি একটু বেশিই ভাবছ,প্রেম ভালোবাসা এসব শুধু আবেগ,আর আবেগ দিয়ে জীবন চলে না।″
″খুব সহজে বলে দিলে না আরিয়ান,একদিন আমার প্রেমে পাগল হয়ে বিষ অব্দি পান করেছিলে মনে আছে?তোমার বাবাও আমাদের বিয়ের কথায় এভাবে মানছিলেন না কারণ আমার পরিবার গরীব ছিল,কিন্তু তোমার জেদের কাছে হার মেনে গেলেন উনি, আর আজ তুমি বলছ এসব শুধু আবেগ।এর মানে কি আমাকে বিয়ে করে এখন তুমি পস্তাচ্ছো?″
″তুমি ভুল ভাবছ, আমি শুধু আমার ছেলের জীবন শুধরাতে চাইছি।″
″হ্যাঁ নিজের বেলা সব ঠিক,আর পরের বেলাই ভুল।তবে তুমি যাই করো আরিয়ান আমার ঘরের বউ তো শুধু আঁখিই হবে,আর যদি তুমি এখানে বাঁধা দাও আর এতে আমার ছেলের কিছু হয় তবে আমি তোমাকে ছাড়ব না,গলায় দড়ি দিয়ে ম*র*ব এই বলে দিলাম।″
____________
আঁখির বাড়িতে ঢুকতে পারল না আদৃত,আঁখি গার্ডদের বলে দিয়েছে আদৃত আসলে যাতে ভেতরে আসতে না দেয়।
″সরি স্যার,ম্যাম আমাদের বলে দিয়েছেন আপনাকে যাতে উনার পাশে কোনোভাবেই যেতে না দেই।″
″তোমাদের ম্যামকে বলে দাও আমি কথা না বলে যাব না।″
″স্যার এই মাত্র কল করলাম,ম্যাম উনার কথায় অটল।″
″আমিও দেখব কিভাবে অটল থাকে।″
এবার আদৃত রাস্তা থেকে জোরে জোরে আঁখিকে ডাকতে শুরু করল।
″ওই মন চোর বাইরে বেরোয়,আজ দেখব কিভাবে কথা না বলো,তোমাকে কথা বলতেই হবে,এই পাগল প্রেমিক তোমার সাথে কথা না বলে কোথায় যাবে না,ওই আঁখি শুনতে পাচ্ছো তুমি?আমার বাবার কথায় আমাকে পর করে দিতে পারবে তুমি?তুমি কি ভেবেছ আমি তোমার পিছু ছেড়ে দিব?″
আদৃত এসেছে আঁখি বারান্দা দিয়ে দেখেছে,আদৃতের চেঁচানো বাণী স্পষ্ট আঁখির কানে আসছে,আঁখি শুভ্রতার কোলে মুখ গুঁজে কেঁদে চলেছে,পাশে জাহানারা রাহমান বসে আছেন,আঁখি উনাকেও সবকিছু জানিয়েছে।এবার উনি আঁখির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।
″মা রে,যা হয়েছে ভুলে গিয়ে নতুন জীবন শুরু কর,তোর সাথে তো ওই প্রেমিক হৃদয়ও ছলনার স্বীকার হয়েছে,তোর জন্য জীবনে এগুতে পারে নি,যখন এতবছর এগুয় নি তবে আগামীতে এগুবে তার কি নিশ্চয়তা আছে?ওর কি অধিকার নেই জীবনে সুখী হওয়ার,কিছু মানুষের জন্য নিজের সাথে ওর জীবনটাও নষ্ট করবি?এতে তো তোর বা আদৃতের কোনো দোষ নেই।″
″আমি পারব না মা,আমি পারব না,আমি পারব না আমার আত্মসম্মান হারাতে।তুমি প্লিজ দোয়া করো আল্লাহ যাতে আমি আর উনাকে সঠিক পথ দেখান।″
বেশ খানিক্ষন হয়ে গেছে,আঁখি কান্না করে এখন বেশ শান্ত হয়েই মায়ের কোলে শুয়ে আছে, বাহির থেকে কম হচ্ছে না আদৃতের চেঁচামেচি, ডেকেই যাচ্ছে আঁখিকে।এদিকে ঝড় আসছে প্রবল বেগে।
″আঁখি আসবে না তো বাইরে?ঠিক আছে,আমিও এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব যতক্ষণ না তুমি নেমে আসছ।এখন যাই হয়ে যাক।″
আদৃত এবার নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল সেখানে আঁখির কক্ষের পানে তাকিয়ে, মুহুর্তেই নামল ঝড়,যাকে বলে প্রবল প্রলয়ঙ্কারী,গতকাল বৃষ্টিতে ভিজায় আদৃতের হালকা জ্বর এসেছিল তা জানে আঁখি,এখন আবারও একটা ঝড় উপর দিয়ে গেলে কি হতে পারে আন্দাজ করে নিতে পারছে,আদৃতকে নিয়ে মনে শুরু হয়েছে আশঙ্কা,আদৃতের কষ্ট কখনও মেনে নিতে পারে না আঁখি, ঝড় বেড়েই চলেছে,আঁখি এবার ছোটে গেল বারান্দায়।গিয়ে দেখল আদৃত রাস্তায় দাঁড়িয়ে তার কক্ষের পানেই তাকিয়ে আছে,আঁখিকে দেখতে পেয়ে মুখে প্রাপ্তির এক হাসি ফুটিয়ে নিল মুহুর্তেই,আঁখি বুঝতে পারল অতিরিক্ত ঝড়ের বেগ তার শরীরকে দূর্বল করে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।কক্ষ থেকে এবার শুভ্রতা বলল।
″আঁখি আমার মনে হয় তোমার যাওয়া উচিত, উনি সারারাত এভাবে বৃষ্টিতে ভিজলে উনার শরীর খারাপ করবে অনেক,বিপদজনক কিছুও হতে পারে।″
আঁখি আর কিছু না ভেবে ছোটে বেড়িয়ে গেল।
একদম আদৃতের সামনে গিয়ে থামল।
″আমি জানতাম তুমি আসবে আঁখি।″
″কী শুরু করেছেন আপনি এসব?আপনি ছোটো বাচ্চা না যে এমন জেদ ধরে বসে থাকবেন,বৃষ্টিতে এভাবে ভিজলে কি হবে জানেন না!″
″তোমাকে না পেলে বাঁচা যে এমনিতেই দূরুহ হবে আঁখি।তোমার প্রেমে তো আমার এ মন বাচ্চা থেকেও অবুঝ ।তুমি যে আমার নিশ্বাসে মিশে গেছ আঁখি,একবার হাতটা ধরো দিশা পাব।″
″আমি আপনাকে ভালোবাসি না,কতবার বলব।″
″তোমাকে বাসতে হবে না,আমার একার ভালোবাসা আমাদের দু’জনের জন্যই যথেষ্ট,তুমি প্লিজ একবার হ্যাঁ বলো বাবাকে আমি মানিয়ে নিব।″
″আংকেল মেনে গেলেও আমি বিয়ে করব না আপনাকে।আপনি চলে যান প্লিজ, আমি আপনাকে ভালোবাসি না।″
এবার আদৃত টান দিয়ে আঁখিকে আবার নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে চেপে ধরল তাকে।আঁখির বাম হাত নিতের হাতে তুলে বিশ্বাস ও অধিকার সহিত বলল।
″যদি ভালোই বাসো না তবে এখনও আংটিটা খুলো নি কেন?আমার ভালোবাসার প্রতিক এখনও কেন তোমার শরীরে বিদ্যমান?বলতে পারবে?
কারণ তুমি আমার ভালোবাসো আঁখি,আমার দেওয়া ভালোবাসার অংশগুলো তুমি কখনই নিজে থেকে আলাদা করতে চাও না।″
″সব ভুল, সব মিথ্যে,আমি আপনাকে ভালোবাসি না,এই আংটি না খোলা নিয়েই যদি এতো কিছু হয় তবে এই নিন আপনার আংটি আর চলে যান প্লিজ।″
আদৃতকে হালকা ধাক্কা দিয়ে নিজ থেকে ছাড়িয়ে হাতের আংটিটা খুলে আদৃতের হাতে দিয়ে কথাগুলো চেঁচিয়ে বলল আঁখি।
″তুমি আংটিটা খুলে দিলে আঁখি,একটুও হাত কাপল না তোমার?″
″আপনাকে ভালোবাসি না,তাই হাত মোটেও কাঁপে নি।″
″এমনটা বলো না আঁখি,তুমি বিহনে পাগল হয়ে যাব আমি,আমার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় এখন তুমি ছাড়া,দয়া করে পর করে দিও না,ভালোবেসে ফেলেছি তোমায় বড্ড,অন্যের সাজা তুমি আমাকে দিয় না।″
″প্লিজ ডা.আদৃত আমার আর এসব ভালো লাগছে না,চলে যান প্লিজ,আমি আপনার যথেষ্ট সম্মান করি আমি চাই না আমার কোনো কথায় বা আচরণে আপনি কষ্ট পান।প্লিজ চলে যান।″
″চলে গেলে খুশি হবে!″
″হবো।″
″কখনও সামনে না আসলে ভালো থাকবে!″
″হ্যাঁ থাকব,থাকব থাকব,চলে যান প্লিজ,বিরক্ত করে তুলেছেন আপনি বড্ড।″
বুকে পাথর রেখে মিছে কথাগুলো বলে আবারও বাড়ির ভিতর ছোটে চলে আসল আঁখি,আদৃতের পৃথিবীতে যেন মুহুর্তেই অন্ধকার নামল,বুকে বিরাজমান হলো শুন্যতা,মস্তিষ্ক যেন কাজ করা বন্ধ করে দিল।
_____________
রিদিকা আজ মেকআপ এর মাধ্যমে নিজের কুৎসিত দিক ঢাকার চেষ্টা করল,আদ্রিশের দেওয়া একটা শাড়ী পরে বেশ সাজগোছ করে নিয়েছে,আদ্রিশকে আজ কাছে টানবে সে,তার ডাকে দিতে হবেই আজ আদ্রিশকে সাড়া,অবশ্য এতো মেক আপ করেছে যাতে তার আসল চেহারা ঢেকে গেছে অনেকাংশেই, বেশ খারাপ দেখাচ্ছে না তাকে,এবার আদ্রিশ এলো কক্ষে,আসতেই রিদিকা তাকে জড়িয়ে ধরল ছুটে এসে।
″তুমি এসেছ?দেখ না তোমার জন্য সেজেছি আমি আজ,বলো না কেমন লাগছে,কতো দিন হয় পাশে আসো না, ছুঁয়েও দেখো না আমায়।″
আদ্রিশ প্রবল এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল রিদিকাকে ফ্লোরে।
″বললাম না আমার সামনে না আসতে,চুপচাপ আমার কক্ষের বাইরে চলে যা তোর ওই অলুক্ষুণে চেহারা নিয়ে।তোর জন্যই আজ সব হারিয়েছি,আর কথা রইল তোর রুপের,মেকআপ দিয়ে যেভাবেই ঢাক নিজেকে কুৎসিত রূপ ঢাকতে পারবি না।তোর দিকে তাকাতেও কেমন জানি ভয় হয় এখন।নিজেই হয়ত নিজেকে দেখার ক্ষমতা কুলিয়ে উঠতে পারিস না এখন আর আসিস আমার কাছে আসার বাহানা খোঁজতে,তোর মতো মেয়ের পাশ ঘেঁষতেও রুচিতে বাধবে আমার।″
চলবে…..