প্রিয়মুখ পর্ব-১০

0
444

#প্রিয়মুখ
#ফারিহা_জান্নাত
#পর্ব১০

ঝুমুর রুমে এসে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশে হাজার তারার আনাগোনা আর মাঝে একটা চাঁদ ঝলমল করছে।ঝুমুর চাঁদের দিকে তাকিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করছে।

ওদিকে হাসিব ফ্রেশ হয়ে ছাদে গিয়ে একই দৃশ্য দেখছে।আর ভাবছে, এখন যদি ঝুমুর আমার পাশে থাকতো তবে প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও দ্বিগুন বেড়ে যেতো।আজকে আমার ঝুমুর আমাকে জড়িয়ে ধরেছে আর আমি যেন ঝুমুরের স্পর্শ পেয়ে স্বর্গীয় সুখ খুঁজে পেয়েছিলাম।কিন্তু ঝুমুর আমাকে সত্যি কি দূরে সরিয়ে রাখতে চায়,সত্যি কি চায় আমি আমি ওর জীবনে না আসি।আমাকে সব কিছু জানতেই হবে।

ঝুমুর হঠাৎ আজকের কথা গুলো মনে পড়তেই কেমন জানি লজ্জা পেতে লাগলো।মিনমিন করে বলছে…

আজ আমার কি হলো হাসিবের সাথে আমি এসব কি করলাম? এখন হাসিবের সাথে দেখা হলে কি বলবো?আমি শিওর হাসিব আমাকে জিজ্ঞেস করবেই। ওকে এতদিন ধরে ইগনোর করে আজ ওর সাথে…..ছি!!!! ভাবতেও লজ্জা লাগছে।কিন্তু এটা তো সত্যি আমি ওর ভালোবাসা পেয়ে ওর ভালোবাসায় নিজেকে হারিয়ে ফেললাম। ওর ভালোবাসা উপেক্ষা করা যে কতটা কষ্টের সেটা শুধু আমি জানি।
হঠাৎ ঝুমুরের কাশি শুরু হলো।ঝুমুর দেখলো কাশির সাথে রক্ত যাচ্ছে এটা দেখে ঝুমুর প্রচন্ড রকমের ভয় পেয়ে যায়।কারণ এর আগে ঝুমুরের কখনো এমন হয় নি।ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে নিলো একটু পর দেখলো কাশি থেমে গেছে। কোনো কিছু আর না ভেবে ঝুমুর ঘুমিয়ে পড়লো।

ভোরের মিষ্টি রোদ জানালা দিয়ে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে ঝুমুরকে জানিয়ে দিলো সকাল হয়ে গেছে। ঝুমুর চোখ খুলেই কেমন জানি ক্লান্তবোধ করতে লাগলো।মনে মনে ভাবছে হয়তো কাল এতক্ষণ বাহিরে থাকাতে একটু খারাপ লাগছে। বিষয়টা স্বাভাবিক মনে করে ঝুমুর ফ্রেশ হয়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো। একটুপরই ঈশিকা রুমে এসে দরজায় নক করলো।ঝুমুর দরজা খুলে দেখে ঈশিকা হাসি হাসি মুখে হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

….আরে ঈশিকা ভিতরে আসো।কি ব্যাপার এত সকাল সকাল।

…গল্প করতে চলে এলাম আপু।

….খুব ভালো করেছো।

….আপু এটা তোমার জন্য (হাতের প্যাকেটটা ঈশিকা এগিয়ে দিয়ে বললো)

ঝুমুর বেশ অবাক হয়ে বললো…

….এটা কে পাঠিয়েছে আমার জন্য?

ঈশিকা কিছু না বলে খাটের উপর প্যাকেটটা রেখে রুম থেকে দৌড় দিয়ে বের হয়ে গেলো।

ঝুমুর হা করে তাকিয়ে আছে। প্যাকেটটা খুলে ঝুমুরের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।

…..এই চুড়িগুলো তো কাল আমি দেখেছিলাম হাসিব চলে আসাতে আর নিতে পারি নি।
পাশে আরেকটা ছোট প্যাকেট খুলে দেখে খুব সুন্দর এক জােড়া নুপুর। সাথে ছোট্ট একটা চিরকুট। ঝুমুর চিরকুটটা হাতে নিলো তাতে লেখা ছিলো…

খুব ইচ্ছে ছিলো আমার নিজ হাতে তোমাকে নুপুর জোড়া পরিয়ে দেয়ার। কিন্তু এই সুযোগ তুমি আমাকে কখনো দিবে কিনা জানি না।প্লিজ ঝুমুর আমার দেয়া উপহার তোমার যদি না পরতে ইচ্ছে করে তবে ফেলে দিও না, যত্ন করে রেখে দিও।

ঝুমুর লেখাটা পড়ে মুচকি হেসে দিয়ে বলে…

তোমার উপহার আমার কাছে সারাজীবন যত্নে থাকবে হয়তো তোমাকে পাবো না কিন্তু তোমার উপহার কখনো হারিয়ে যেতে দিবো না।

সকালের নাস্তা খাওয়ার জন্য সবাই নিচে গেলেও ঝুমুর আগের মতোই নিজের রুমেই ছিলো। সবার খাওয়া শেষ হলে ঝুমুর, ছোট চাচী আর ঝুমুরের মা খেতে বসে।

ঝুমুর খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে কিন্তু কিছুই খাচ্ছে না।ঝুমুর খাচ্ছে না দেখে মায়ের নজর পড়তেই জিজ্ঞেস করলো…

…ঝুমুর তোর কি শরীর খারাপ লাগছে?

ঝুমুরের শরীর সত্যি খারাপ লাগছে,সকাল থেকে মাথা ব্যথা করছে কিন্তু মাকে সেটা বলা যাবে না

….না মা আমি ঠিক আছি, এমনিতেই ইচ্ছে করছে না খেতে।

…খাওয়া শেষ করে ভেজা কাপড় গুলো ছাদে শুকাতে দিয়ে আয়।

….ঠিক আছে মা

ঝুমুর নাস্তা শেষ করে ভেজা কাপড়গুলো নিয়ে ছাদে গিয়ে শুকাতে দিতে লাগলো।ছাদের এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো হাসিব। ঝুমুর সেটা খেয়াল করে নি।নিজ মনে কাপড় শুকানোর কাজে ব্যস্ত ছিলো।
হাসিব ঝুমুরের পিছনে এসে ঝুমুর বলে ডাকতেই চমকে ওঠে ঝুমুর পিছনে তাকায়।

….ঝুমুর তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

….কিন্তু আপনার সাথে আমার কথা নেই (গম্ভীর গলায় বললো)
কথাটা শেষ করেই ঝুমুর চলে যেতে চাইলে হাসিব ঝুমুরের হাত ধরে ফেলে

…. ঝুমুর অনেক পালিয়েছো,অনেক দূরে সরিয়ে রেখেছো,অনেক কষ্ট দিচ্ছো আর না প্লিজ।আমার কথাগুলো তোমাকে শুনতেই হবে।

ঝুমুর কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।হাসিব কি বলবে? না শুনা পর্যন্ত আমাকে তো যেতেও দিবে না।

….ঠিক আছে আপনি যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে।

….ঝুমুর তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?

ঝুমুর প্রশ্নটা শুনে বুকের ভিতরটা কেমন জানি করে উঠলো।চুপ করে হাসিবের দিকে তাকিয়ে আছে।

….চুপ করে আছো কেন ঝুমুর আজ তোমাকে বলতেই হবে প্লিজ বলো।

কি বলবো হাসিবকে মিথ্যে বললে আমার ভালোবাসাকে ছোট করা হবে, সত্যি বললে ঝুমকার সাথে বিয়ে ভেঙ্গে যাবে ঘরে অশান্তি শুরু হবে। মনে মনে ভেবে যাচ্ছে কি বলবো এখন?কি বলা উচিত আমার?

….চুপ করে থেকো না কিছু বলো ঝুমুর? শুধু একবার বলো আমাকে তুমি ভালোবাসো পুরো পৃথিবীর সাথেও লড়তে পারবো।আর যদি বলো ভালোবাসো না পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো কিন্তু তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে জীবন সঙ্গী করে বাঁচতে পারবো না।যাকে নিয়ে ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখেছি তাকে আমি হারাতে পারবো না।

ঝুমুর কি বলবে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চোখ ঝাপসা হয়ে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে লাগলো সাথে সাথে হাসিব ঝুমুরকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।

….ঝুমুর কি হলো তোমার?

প্রিয়মুখটার দিকে তাকিয়ে হাসিব দেখলো কেমন জানি মলিন চেহারা হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে হাজারো কষ্ট বুকের মধ্যে জমিয়ে রেখেছে। হাসিব ঝুমুরের মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছে…

চলবে….