প্রিয়মুখ পর্ব-১১

0
432

#প্রিয়মুখ
#ফারিহা_জান্নাত
#পর্ব১১

ঝুমুরের জ্ঞান ফিরানো দরকার কিন্তু কিভাবে করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।কিন্তু ঝুমুরকে এভাবে দেখতে হাসিবের খুব কষ্ট হচ্ছে, সব কিছু মনে হচ্ছে থেমে যাচ্ছে। হাসিবের কাছে নিজেকে নিজের কাছে বড্ড অসহায় লাগছে।প্রিয়মুখটার দিকে তাকাতেই এক অজানা ভয়ে বুকটা বার বার কেঁপে উঠছে। হঠাৎ মনে পড়লো ভেজা কাপড় দিয়ে চোখ মুখ মুছে দিলে হয়তো জ্ঞান ফিরে আসবে।হাতের কাছে ভেজা কাপড়টা টেনে নিয়ে ঝুমুরের চোখ মুখ বার বার মুছে দিতে লাগলো।কিছুক্ষণ এভাবে করার পর ঝুমুরের জ্ঞান ফিরে আসলো। খুব ক্লান্ত চোখে হাসিবের দিকে তাকিয়ে আছে।

….বোকা মেয়ে এভাবে কেউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলো।কতটা ভয় পেয়েছি।

….কেন ভয় পেয়েছেন যদি মরে যাই এজন্য? (কিছুটা অভিমানী গলায় বলে)

কথাটা শুনার পর হাসিব ঝুমুরকে শক্ত করে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে আর ধমকের সুরে বলে…

….ঝুমুর প্লিজ আর কখনো মরার কথা বলবে না।তুমি না থাকলে যে হাসিবও থাকবে না।তুমি আমাকে ভালোবাসো আর না বাসো আমি তোমাকে আমার নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি।আমার সমস্ত ভাবনার মাঝে তুমি ছিলে,আছো আর সারাজীবন থাকবে।আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছে শুধুই তুমি।

ঝুমুরের খুব ভালো লাগলো হাসিবের এভাবে শাসন করাটা।এক অন্য রকম ভালোলাগা লুকিয়ে আছে এই কথাগুলোর মাঝে।হাসিবের বুকের মাঝে ঝুমুর এক ভালোবাসার প্রশান্তির ছোঁয়া পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে সারাজীবন এভাবে ভালোবাসায় নিজেকে জড়িয়ে রাখতে। হাসিবকে এসব বুঝতে না দিয়ে ঝুমুর হাসিবকে ছেড়ে উঠতে চাচ্ছে কিন্তু এত জোরে হাসিব ঝুমুরকে জড়িয়ে ধরে আছে ছাড়তেই পারছে না।ঝুমুর মনে মনে বলছে…

এত জোরে কেউ জড়িয়ে ধরে আমার তো হাড়গোড় সব ভেঙ্গে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। উফফ কি যে করি।

….এই যে আমি উঠবো, আমাকে এবার তো ছাড়ুন কেউ দেখে যাওয়ার আগেই।

….আমি তো চাই সবাই দেখুক(হাসিব মুচকি হাসি দিয়ে বলে)

….উফফ!!!ছাড়ুন তো।

কথাটা বলে ঝুমুর আবারও উঠতে গেলে মনে হচ্ছে সব শক্তি হারিয়ে ফেলছে। হাসিব দাঁড়িয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে ইশারা করলো হাত ধরে উঠার জন্য। ঝুমুর হাসিবের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো।

….ঝুমুর সত্যি করে একটা কথা বলতো তুমি ঠিক আছো?

হাসিবের কথা শুনে ঝুমুর একটু চুপ করে থেকে বলে…

…আমাকে নিয়ে ভাববেন না আমি ঠিক আছি বলেই আস্তে আস্তে ছাদ থেকে নিচে নেমে আসলো।

ঝুমুরের আজ সত্যি খারাপ লাগছে। রুমে এসে খাটের উপর একপাশ হয়ে শুয়ে গেলো।আর হাসিবের বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবছে।হাসিব কি সত্যি আমাকে নিয়ে ভাবে যেমনটা আমি ভাবি।

আমি কখনো হয়তো তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না কিন্তু সারাজীবন ভালোবাসতে তো পারবো। হয়তো কখনো তোমাকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছি তা বাস্তবে সাজাতে পারবো না,কিন্তু তোমার কাছ থেকে যেটুকু ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়েছি তা নিয়ে দিব্যি বেঁচে থাকতে পারবো সারাজীবন।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ঝুমুরের দুচোখের পাতা কখন যে এক হয়ে গেলো বুঝতেই পারলো না।
সকাল পেরিয়ে প্রায়ই দুপুর হয়ে এলো।ঝুমুর এখনো ঘুমিয়ে আছে।

ঝুমুরকে অনেক্ক্ষণ দেখতে না পেয়ে ঝুমুরের মা খুঁজতে লাগলো। কোথাও না পেয়ে রুমে এসে দেখে ঝুমুর ঘুমাচ্ছে।

ঝুমুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো…

….সারাক্ষণ কাজ নিয়ে পড়ে থাকি মেয়েটার দিকে একটু খেয়াল রাখতেও পারি না। শরীর খারাপ করেছে কিনা কি জানি। ঝুমুর বলে ডাকতে লাগলো একটু পর ঘুম ভাঙ্গলো।চোখ খুলে দেখে মা পাশে বসে আছে।

…কি রে ঝুমুর তোর কি হয়েছে? কখনো তো এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাস না। তোর মনে হচ্ছে শরীর খারাপ। আজ বিকেলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।

ঝুমুর তড়িঘড়ি করে শুয়া থেকে উঠে বসে পড়লো

….মা আমি একদম ঠিক আছি।কেন শুধু শুধু ডাক্তার দেখাতে যাবো।

….শরীর ঠিক থাকলে এভাবে ঘুমিয়ে আছিস কেন?

….মা একটু শরীর খারাপ হলে ডাক্তার দেখাতে হয় না।কিছুক্ষণ পর দেখবে আমি ঠিক হয়ে গেছি।(হাসিমুখে মাকে শান্তনা দিলো)

….ঠিক আছে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নেয় দুপুরের খাবারের সময় হয়েছে।

হুমমম বলে মাথা নাড়িয়ে খাট থেকে নেমে পড়লো।

ওদিকে ঝুমকা ওর মাকে বলছে…

….মা আমি মেলায় যাবো হাসিবকে নিয়ে।

ঝুমকার মা খুশি হয়ে বলে…

….ভালো কথা।কিন্তু হাসিব কি জানে?

….না মা এখনো বলিনি। (হাসিব যা বোরিং একটা ছেলে যাবে কিনা আল্লাহ জানে)মনে মনে বলে।

….যা গিয়ে কথা বলে দেখ কখন বের হতে পারবে।

ঝুমকা মায়ের কথা শুনে হাসিবের রুমে যায়।গিয়ে দেখে হাসিব বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।
ঝুমকা হাসিবের পিছনে গিয়ে….

হাসিব ভাইয়া বলে ডাকতেই হাসিব চমকে ওঠে।

….ঝুমকা তুমি?কিছু বলবে?

…হুমমম ভাইয়া আমাদের এখানে মেলা হচ্ছে। যাবেন আপনি?

হাসিব খুব আগ্রহ নিয়ে বললো…

….সবাই গেলে তো অবশ্যই আমিও যাবো।তা বের হবে কখন সবাই?

কথাটা শুনে ঝুমকা রাগে গজগজ করছে। এই হাসিবের বাচ্চা কি একা একা কোথাও যেতে ভয় পায়।সব সময় দলবল নিয়ে বের হয়।ধ্যাত আমার তো মুডই খারাপ হয়ে গেলো। কথাগুলো মনে মনে বললো।

…ঝুমকা চুপ করে আছো কেন? কখন বের হবে?

…বিকেলে।আচ্ছা আমি সবাইকে গিয়ে বলে আসি

বলেই হাসিবের রুম থেকে বের হয়ে ঘ্যানঘ্যান করতে করতে মায়ের কাছে গেলো।ঝুমকার মা ঝুমকাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো…

….কি রে হাসিব যাবে?

….যাবে মা কিন্তু বলছে সবাইকে নিয়ে যাবে।দেখেছো কি বোরিং একটা ছেলে।

….ঝুমকা বিয়ের পর তো একাই থাকবি, একাই ঘুরবি এখন একটু সহ্য কর।হাসিব যেটা চাচ্ছে সেটাই কর।
এখন যা দুপুরের খাবারের জন্য রেডি হয়ে নেয়।

…ঠিক আছে মা বলেই চলে গেলো।

চলবে……