প্রিয়মুখ পর্ব-১২

0
447

#প্রিয়মুখ
#ফারিহা_জান্নাত
#পর্ব১২

দুপুরের সবার খাওয়া শেষ হলে ঝুমুর খেতে বসে সাথে মা আর ছোট চাচীও ছিলো।

…..ঝুমুর শুনেছিস আজ তো আমরা সবাই মিলে মেলা দেখতে যাবো।সাথে তুইও যাবি।

….না চাচী আমি যাবো না। তোমরা যাও
(মেলা যাবার কথা শুনে যদিও খুশি হলো কিন্তু মন কেন জানি চাচ্ছে না যেতে)

….তুই না গেলে আমিও যাচ্ছি না।

ঝুমুরের মায়েরও ইচ্ছে ছিলো না ঝুমুর আজ কোথাও বের হোক।

….সাজেদা ঝুমুরের মনে হয় শরীর খারাপ আজ বরং ঝুমুর ঘরেই থাকুক। তোরা গিয়ে ঘুরে আয়।

ঝুমুরের শরীর খারাপের কথা শুনে চাচী বলে…

….কি রে ঝুমুর তোর শরীর খারাপ আর তুই ঘরে বসে আছিস। তুই খেয়ে রেডি হয়ে নে ডাক্তার দেখাতে হবে। কোথাও যাবো না আজকে।

….চাচী তুমিও শুরু করেছো,আমার কিছুই হয়নি একটু রেস্ট করলে ঠিক হয়ে যাবো। তোমরা বরং মেলায় যাও।

….ঝুমুর তুই সত্যি বলছিস তুই ঠিক আছিস?

….টেনশন করিও না চাচী আমি একদম ঠিক আছি

ঝুমুর খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো আজ শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো।সবাই অনেক খুশি মেলায় যাবে। একে একে সবাই রেডি হতে লাগলো।হাসিব অনেক খুশি আজ আবারও ঝুমুরের কাছাকাছি থাকতে পারবে। হাসিব গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই আসলো কিন্তু ঝুমুর আসলো না। ঝুমুরকে না দেখতে পেয়ে হাসিবের মনে হাজারো ভাবনা নাড়া দিচ্ছে। মনে মনে ভেবে পাচ্ছে না ঝুমুর না আসার কারণ কি?কিভাবে ঝুমুরের খবর নেয়া যায়।হঠাৎ মনে হলো ঈশিকা পারবে ঝুমুরের খবর নিয়ে আসতে।কিন্তু গাড়ির মধ্যে সবাই বসে আছে পরে যদি কেউ সন্দেহ করে। ঈশিকাকে কিভাবে পাঠানো যায় চিন্তা করছে। অবশেষে হাসিব একটা উপায় খু্ঁজে পেলো….

…ঈশিকা আমার মানিব্যাগটা খাটের উপর রেখে আসছি যা তো একটু নিয়ে আয়।

ঈশিকা গাড়ি থেকে বের হয়ে ঘরে যাবে এমন সময় হাসিব ঈশিকাকে কাছে ডেকে বলে…

…ঈশিকা তুই ঝুমুর আসে নি কেন একটু দেখে আয়

…তাহলে তুমি আপুর খবর নেয়ার জন্য আমাকে পাঠাচ্ছো(ঈশিকা মুচকি হাসি দিয়ে বলে)

….হুমম কাউকে কিছু বলবি না সোজা ঝুমুরের ঘরে চলে যাবি।

ঈশিকা হ্যাঁ বলে চলে গেলো।হাসিব ঈশিকা আসার অপেক্ষায় বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।কিছুটা সময় পর ঈশিকা ফিরে এসে হাসিবকে বললো…

ভাইয়া আপুর শরীর খারাপ এজন্য আমাদের সাথে যেতে পারছে না।

কথাটা শুনার পর হাসিবের মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। একটুও ইচ্ছে করছে না কোথাও যেতে শুধু মন চাচ্ছে ঝুমুরের কাছে থাকতে।

হাসিবের মা হাসিবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে….

হাসিব তাড়াতাড়ি কর আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

মায়ের কথা শুনে হাসিব কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসে আর গাড়ি চালানো স্টার্ট দিলো।সবাই কত কথা বলছে আর মাঝে মাঝে ঝুমকা হাসিবকে মেলার সম্পর্কে ওটা সেটা বলছে হাসিব কিছু না বলে শুধু হ্যাঁ হ্যাঁ করে যাচ্ছে।

হাসিবের বিরুক্ত লাগছে ঝুমকার কথা শুনতে। কিন্তু কিছু তো সরাসরি বলতে পারছে না।মনে মনে বলছে মেয়েটার সমস্যা কি এত কথা বলে কেন?একটু চুপ থাকতে পারছে না। মেলা দেখতে যাচ্ছে এত কথা বলার কি আছে বুঝলাম না।

অবশেষে মেলায় এসে পড়লো সবাই আর এসেই মেলা দেখা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

কিন্তু হাসিব চুপচাপ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।মনে মনে ভেবেই যাচ্ছে আমার ঝুমুর এখন কেমন আছে, কি করছে?কেন যে ঝুমুরকে ছেড়ে চলে আসলাম।এখন তো কিছু করারও নেই ঝুমকার বকবক শুনা ছাড়া।

ঝুমকা একটুপরই এসে হাসিবকে বললো…

…হাসিব ভাইয়া চলুন আপনাকে মেলা পুরোটাই ঘুরে দেখাবো।এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে তো কিছুই দেখতে পাবেন না।

…ঝুমকা তুমি গিয়ে ইচ্ছেমত দেখো আমি বরং এখানে অপেক্ষা করছি তোমাদের জন্য।(ঝুমকার নাম নিতে না নিতেই হাজির হয়ে গেলো বিরুক্ত হয়ে কথাগুলো বললো কিন্তু আওয়াজ বের হলো না)

….কি বলেন এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন,আরে মেলায় আসবেন আর ফুচকা খাবেন না এটা হয় নাকি চলুন তো। বলেই হাসিবের হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো।

হাসিবের ভীষণ বিরুক্ত লাগছে মনে মনে বলে যাচ্ছে…

খুব তো মেলায় আসার শখ হলো হাসিব এবার যা ঝুমকার সাথে ফুচকা খেয়ে আয় জীবনে তো ফুচকা খাওয়া হয়নি।কি এক বিপদে পড়লাম এখানে এসে।

…কি হলো হাসিব ভাইয়া চলুন

…হ্যাঁ চলো, ভুলের মাশুল তো দিতেই হবে।(মিনমিন করে বললো)

…কিছু বললেন(ঝুমকা কথাটা বুঝতে পারে নি)

…কিছু না চলো মেলা দেখবো(একটা ফেইক হাসি দিয়ে)

ওদিকে ঝুমুরের শরীরটা কিছুটা ভালো লাগাতে ছাদে গিয়ে সময় কাটাতে লাগলো।আকাশের দিকে ভাবছে….আমি যদি আকাশ হতাম কতই না ভালো হতো,কেউ আমাকে নিয়ে কবিতা লিখতো আবার কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আমার সৌন্দর্যের প্রশংসা করতো,আর কেউ তার মনের সমস্ত কথা আমাকে জানাতো যেমনটা আমি বলি।হঠাৎ কাশি শুরু হলো ঝুমুর দেখলো কাশির সাথে আবারও রক্ত যাচ্ছে যা দেখে অনেক ভয় পেয়ে যায় ঝুমুর।

তাড়াতাড়ি নিজের রুমে চলে আসে। বিড়বিড় করে বলছে….

ঝুমকার বিয়ের তো আর বেশি দেরি নেই, বিয়েটা হয়ে যাক তারপর ডাক্তার দেখাবো। এখন যদি বলি তাহলে বড় চাচী আর চাচারা ভাববে ঝুমকার বিয়ে আটকানোর জন্য আমি এসব নাটক করছি।আল্লাহ আমাকে সুস্থ রাখো ঝুমকার বিয়ে পর্যন্ত।তারপর তোমার যা ইচ্ছে হয় তাই করিও প্লিজ আল্লাহ আমাকে এই টুকু সাহায্য করো। কথাগুলো বলেই অঝোরে কান্না করতে লাগলো।

রাত হয়ে এলো। সবাই মেলা থেকে অনেক কিছু কেনাকাটা করে বাড়িতে আসলো। সবাই আজ অনেক খুশি।বেশ মজাই হলো।

বাড়িতে এসেই হাসিব শুধু ঝুমুরকে খুঁজতে লাগলো। ছাদে গিয়ে দেখে ঝুমুর নেই।বিড়বিড় করে বলেই বলছে….

আমার ঝুমুর এখন কেমন আছে আমাকে জানতেই হবে। যেভাবেই হোক ঝুমুরের সাথে আমাকে দেখা করতেই হবে।ওকে না দেখে শান্তি পাচ্ছি না।
ঝুমুর নিশ্চয়ই ওর রুমেই আছে কিন্তু রুমে যাবো কি করে। সবার সামনে দিয়ে তো আর যেতে পারবো না।

একটা উপায় আমাকে বের করতেই হবে।

চলবে….