প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
সিজন :৩
পার্ট :১২
আর কত ঠকলে একটা মানুষ পাথর হতে পারে বাবা ৷ প্রিয়জনদের মুখোশের আড়ালে থাকা চেহারা গুলো এত ভয়ংকর কেন ৷কেন মানুষ ভালোবাসার ঘরে ছুড়ি চালায় বাবা ৷তবে কি কাউকে ভালোবাসতে নেই ৷তবে কি দয়া করতে নেই কারো উপর ৷আমি আর পারছি না ৷ঐ মানুষটাকে আমি কিভাবে মারবো বাবা ৷ভালোবাসার মানুষদের মারতে যে বড্ড কষ্ট হয় ৷জানো বাবা আমি দিহানকে খুন করতে এনে ছিলাম ৷চেয়ে ছিলাম ওকে ঐ নকল দ্বীপ চৌধুরীর চোখের সামনে খুন করবো ৷ কিন্তু আমি পারি নি ৷আমার চোখের সামনে বারবার কাকুর চেহারাটা ভেসে উঠে ছিল ৷আমি ঐ পাড়ে যেয়ে কি জবাব দিতাম তাকে ৷নিজের মা বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে তার ছেলেকে মেরেছি ৷আমি পারি নি বাবা ৷রাতের আধারে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো প্রীতি ৷বাবা মায়ের ছবি বুকে জরিয়ে ফ্লোরে বসে কাদঁতে লাগলো ৷
দুইদিন পাড় হয়ে গেছে ৷পুলিশ তুরাগ নদীর পাড়ে একটা ভাঙ্গা বাড়ীতে এসেছে ৷আজ সকালে একটা ছেলে নদীর পাড়ে শামুক কুড়াতে আসে ৷ক্লান্ত শরীরে যখন সে ভাঙ্গা ঘরটাতে প্রবেশ করে ৷ তখনই ভেতরে চেয়ারের সাথে বাধা একটা লাশ দেখতে পায় ৷ ছেলেটা চিৎকার করে মানুষ ডাকে ৷এলাকার লোকেরা পুলিশে খবর দেয় ৷লাশটা কার তা কেউ জানে না ৷লাশের গায়ে কোনো প্রকার আঘাত করা হয় নি ৷তবে মৃত লোকটাকে কোনো দড়ি দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মারা হয়েছে ৷লোকটার চোখ যেন কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়েছে ৷জিহবা এখনো বের হয়ে আছে ৷ তবে খুনটা ভোর রাতেই করা হয়েছে ৷লাশের পকেট থেকে পুলিশ একটা চিরকুট পেল ৷চিরকুটে লেখা
আমার প্রতিশোধের আর মাত্র তিনজন বাকী ৷ তিনটে খুন করে আমি শান্ত হবো ৷যদি তিনজন কে বাচাঁতে চান ৷তাহলে আমায় খুজুন ৷যতটা খুজলে তিনটে খুন আটকানো যায় ৷
এবারের খুনটাও যে সেই একই ব্যক্তি করেছে তা বুঝতে পুলিশের বাকী রইলো না ৷পুলিশ মৃতের পকেট থেকে পাওয়া ফোন থেকে কিছু নাম্বারে কল করলো ৷এবং লাশের ব্যপারে জানতে চাইলে তারা বলে এটা আশরাফ খানের ম্যানেজার এমদাদের নাম্বার ৷অপর দিকে সাংবাদিক চলে এসেছে ৷এবং নিউজ করা শুরু করেছে ৷
অপর দিকে প্রীতি নিজের কেবিনে হাটছে ৷তার মাথায় কাজ করছে না ৷ টিভিতে আশরাফ খানের ম্যানেজারের খুনের সংবাদ শুনে তার মাথায় কাজ করছে না ৷প্রীতি নিজের মধ্যে বিরবির করতে করতে বলল
আমি তো খুন টা করি নি ৷তাহলে এই খুনটা কে করলো ৷তবে কি অন্য কেউ আমার সাথে গেইম খেলছে ৷অন্য কেউ আমাকে ধরতে এসব করছে ৷ কিন্তু কে করছে এমন ৷ আমাকে তো কেউ চেনে না ৷আমাকে সতর্ক হতে হবে ৷তবে যেই হোক সে এই খেলায় আমার বিরুদ্ধে ষরযন্ত্র করছে ৷কিন্তু আমি তা হতে দেব না ৷ কিছুতেই না ৷
হঠাৎ করেই প্রীতির কেবিনে নক পড়তে সে স্বাভাবিক হয়ে গেল ৷এসিপি এসেছে প্রীতির সাথে দেখা করতে ৷এসিপি কে সালাম দিল প্রীতি ৷তারপর বলল
স্যার আপনি হঠাৎ আমার কেবিনে ৷
একটু কথা ছিল জরুরী ৷
জ্বী স্যার বলুন ৷
প্রীতি আমরা কিছু দিন আগে কর্নেল ওসমানের খুনের কিছু ছবি পেয়ে ছিলাম মনে আছে ৷
জ্বী স্যার ৷খুনী নিজেই ব্যরিস্টার সোহেলের লাশের সাথে রেখে গিয়েছিল ৷
হুমমম ৷আমরা একটা নাম্বার পেয়েছি ৷যেই নাম্বারটা থেকে শেষ বারের মতো ব্যরিস্টার সোহেলকে কল করা হয় ৷তার কয়েক মুহূর্ত পরেই ফোনটা অফ হয়ে যায় ৷আর সঠিক লোকেশন খুজে পাওয়া যায় নি ৷ঠিক সেই একই নাম্বার থেকে আবেশ চৌধুরীকেও কল করা হয়েছে ৷আর আবেশ চৌধুরীর ভাষ্যমতে খুনী নিজেকে তার মৃত বোন প্রীতিলতা বলে দাবী করেছে ৷ এই খুন ,কিডন্যাপ সব একজনের কাজ ৷আমাদের অনুমান যদি ঠিক হয় ৷তাহলে খুনী আশে পাশের কেউ ৷ কিন্তু সে খুন গুলো করছে খুব সাবধানে ৷সে কোনো প্রমান রাখছে না ৷যদি আমরা খুনীর সামান্যতম সন্ধান পাই তাহলে পুরো ফোর্স লাগিয়ে দেব ৷আজও একটা খুন হয়েছে ৷খুনী আরো খুন করবে ৷কিন্তু তার আগেই আমরা তাকে ধরবো ৷এই কেসটা আমাদের যে করেই হোক সমাধান করতেই হবে ৷
ইয়েস স্যার ৷
এসিপি চলে গেল ৷প্রীতি নিজের চেয়ারে বসে পড়লো ৷তারপর বলল
যে এমদাদ্ কে খুন করেছে ৷সে চায় যেন পুলিশ আমাকে দ্বিগুন পাগল হয়ে খোজেঁ ৷কিন্তু কে সে ৷প্রীতির চিন্তার মাঝেই ওর ফোনে একটা কল এলো ৷নাম্বারটা প্রীতি চেনে না ৷প্রীতি নাম্বারটা রিসিভ করলো না ৷একে তো এত চিন্তা ৷ তার মধ্যে আবার ফোন ৷ আবারো প্রীতির ফোন বেজে উঠলো ৷প্রীতি এবার রাগ হয়ে ফোনটা রিসিভ করলো ৷তারপর বলল
কে বলছেন ৷একটু পরে ফোন করুন ৷
আরে এত তাড়া কিসের ৷আগে একটু কথা বলি মিস প্রীতিলতা ৷ওহ সরি তুমি তো আবার ঐ আয়ান চৌধুরীর মেয়ে ৷তাহলে তোমার নামটা নিশ্চয়ই প্রীতিলতা চৌধুরী ৷ওপাশ থেকে কথা গুলো কেউ একজন বলতে লাগলো ৷
কে বলছেন আপনি ৷
বলবো ৷সব বলবো ৷জানো তোমার বাবাকে নিজের হাতে মারি নি ৷কিন্তু তার মরা লাশটা দেখতে আমার কিন্তু সেই মজা লেগেছে ৷তবে আর যাই বলো আয়ান চৌধুরীর কিন্তু কৈ মাছের প্রান ৷মাথায় এত আঘাত করার পরেও ঐ বাস্টার্ড টা মরে নি ৷
এই একদম আমার বাবাকে গালি দিবি না তুই ৷একবার তোর নাম বল ৷তোকে জ্যান্ত পুতে ফেলবো আমি ৷
আহ হা এত হাইপার কেন হচ্ছো ৷এখনো তো বাকি আছে ৷তোমার বাবা কিন্তু ঐ দিন মরে নি ৷ তাকে পরবর্তীতে একদম জীবিত পুতে দিয়েছি ৷জানো তখন তাকে দেখে আমার বড্ড আফসোস হয়ে ছিল ৷ আমার পছন্দের জিনিস কেড়ে নেওয়ার শাস্তি তাকে আমি দিয়েছি ৷ কি অসহায় লাগছিল তখন ঐ আয়ানকে ৷রক্তাক্ত চোখের অসহায়ত্বের পানি ৷জিন্দা কবর দিয়ে দিয়েছি ওকে ৷শুনেছিস তুই প্রীতিলতা ৷তোর বাপকে জিন্দা কবর দিয়েছি ৷আর শোন এবার তোকে শেষ করবো ৷তোকেও তোর বাবার মতো জিন্দা কবর দেব আমি ৷আর শোন আশরাফের ম্যানেজারকে আমি মেরেছি ৷ওকে না মারলে পুলিশকে আরো সতর্ক কিভাবে করতাম ৷ তোর সময় শেষ হয়ে এসেছে প্রীতিলতা ৷তুই আমার শকুনী চোখে ধরা পরে গিয়েছিস ৷আর এতক্ষনে আমি কে সেটাও হয়তো বুঝে গিয়েছিস ৷আর শোন নারী পাচারকারীর যেই প্রধান ৷সে আর কেউ না আমি ৷যাকে সমাজের সবাই একটা ভালো মানুষ মনে করে ৷আর একটা কথা শোন ৷তোকে তাহলে বলেই দেই আজ সব ৷ তোর মাকে জীবিত থাকতে তো পাই নি ৷কিন্তু মরার পর ঠিক পেয়েছি ৷কি আর বলবো সারা জীবন মনে থাকবে ৷ তোর মায়ের শরীরটা দূর থেকে দেখলে মাথায় কাজ করতো না একদম ৷কিন্তু পথের কাটাঁ ছিল আয়ান ৷কি হয়েছে বলতো ৷ঐ দিন আসতে একটু লেট করে ফেলে ছিলাম ৷ আচ্ছা মরলেও বুঝি মেয়েদের শরীর গরম থাকে ৷
ওপাশের লোকটা হাসতে হাসতে আবার বলল
আমার মুখোশের আড়ালে থাকা জানোয়ারটা কে কেউ চেনে না ৷আমি যে খুন করতে পারি তা কেউ বিশ্বাস করবে না ৷এমদাদকে মারলাম আমি ৷আর নাম পড়লো তোর ৷আজ একটা কথা শোন শয়তান কখনো মানুষের সামনে এসে শয়তানী করে না ৷শয়তান আড়ালে থেকে সর্বনাশ করে ৷আজ থেকে তোর সর্বনাশ শুরু প্রীতিলতা ৷তোরা কেউ বাচঁতে পারবি না ৷
প্রীতি চিৎকার করে উঠলো ৷তারপর বলল আর একটা কথা বলবি না তুই ৷তোকে আমি কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো ৷তুই আমার বাবাকে জীবিত কবর দিয়েছিস ৷আমার মাকে মরার পরেও ছাড়িস নি ৷তোকে আমি এমন মৃত্যু দেব যে ৷মৃত্যুও ভয় পাবে ৷
একদম চিৎকার করবি না বুঝেছিস ৷তোর বাবার মতো তোকেও শেষ করে দেব ৷আর শোন তোর দিন ঘনিয়ে এসেছে ৷খুব তাড়াতাড়ি দেখা হচ্ছে আমাদের ৷তত দিন নিজের খেয়াল রাখিস ৷ঐপাশ থেকে ফোন রেখে দিল ৷প্রীতি এখন যেন একটা পাথর হয়ে গেছে ৷তাহলে কি ঐ দিন বাড়ীর পেছনে হুডি পরা লোকটা এই ছিল ৷যাকে প্রীতি দেখতে পায় নি ৷প্রীতি নিজের কপাল চাপড়ে ধরলো ৷তার মাথা কাজ করছে না ৷তার মানে বাবা ঐ দিন বেচেঁ ছিল ৷আর মাকে ওরা মরার পরেও ছাড়ে নি ৷এতটা নিচে কিভাবে নামলো ওরা ৷ প্রীতি নিজের চোখের পানি মুছে বেড়িয়ে গেল ৷কারন হাতে আর সময় নেই ৷ যে কোনো সময় পুলিশের কাছে তার আসল পরিচয় চলে আসবে ৷যা করার আজকে মধ্যেই করতে হবে ৷প্রীতি নিজের বাইক বাড়ীর দিকে ঘুড়ালো ৷ যত প্রমান আছে সব সরিয়ে ফেলতে হবে আজকের মধ্যে ৷ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে ৷
রাত ঘড়িতে এগারোটা আশরাফ খান একটা ক্লাবে বসে আছেন ৷এই পর্যন্ত পাচঁটা বিয়ে করেছেন ৷কিন্তু বউ তার টিকে নি ৷মেয়ে বলতেই আশরাফ খান শেষ ৷আশরাফ খানের রাতের সঙ্গী ক্লাবে থাকা সুন্দরী রমনীরা ৷যখন অনেক টেনশনে থাকেন ৷তখন তিনি ক্লাবে আসেন ৷ আজ তার কাছের বন্ধু তাকে ক্লাবে আসতে নিষেধ করেছে ৷তবুও সে এসেছে ৷সে আর যাই হোক মেয়ে ছাড়া থাকতে পারবে না ৷হঠাৎ চোখ গেল একটু দূরে দাড়িয়ে থাকা মেয়ের দিকে ৷মেয়েটার চোখে সানগ্লাস ৷পড়নে ওয়স্টার্ন পোশাক ৷মেয়েটা বেশ আকর্ষনীয় ৷হাতে মদের বোতল নিয়ে আশরাফ খান ঐ দিকে চলে গেলেন ৷ মেয়েটাকে তার চাই আজ রাতের জন্য ৷
চলবে