প্রীতিলতা আসবে বলে ৩ পর্ব-১৪

0
1082

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
সিজন :৩
পার্ট :১৪

জবা ফিরে গেছে নিজের বাড়ীতে ৷বেচারী বেশ ভয়ে ভয়ে গেছে ৷আজ কপালে শনি আছে তার ৷শান্ত হাজার রাগ করলেও জবাকে চুপ থাকতে বলেছে প্রীতি ৷কেননা জবা ভুল করেছে ৷শান্ত হয়তো একটু বকা দিবে ৷কিন্তু গায়ে হাত তুলবে না ৷ এটা নিশ্চিত প্রীতি ৷

জবা ধীর পায়ে ফ্লাটে ঢুকলো ৷দরজা খোলা ছিল ৷বাসার পরিবেশ একদম চুপচাপ ৷জবা ঘরের ভেতর প্রবেশ করতেই শান্তকে দেখতে পেল ৷ শান্ত মাথা নিচু করে বসে আছে ৷ জবাকে দেখে একটা কথাও বলল না সে ৷চুপচাপ ঘর থেকে বের হয়ে গেল ৷ জবা কেন যেন চেয়েও আটকাতে পারলো না ৷খুব ইচ্ছে করলো মানুষটাকে জরিয়ে ধরতে ৷কিন্তু কোথাও একটা তীব্র বাধা অনুভব করলো সে ৷

চারিদিকে গোধুলী বেলার ছোয়া ৷সময়টা বেশ সুন্দর ৷প্রীতিলতা বসে আছে একটা কদম গাছের নিচে ৷ নির্ঝরকে আসতে বলেছে প্রীতি ৷ ফোন করতেই মানুষটা রিসিভ করে ৷এক সাথে এত এত প্রশ্ন করে নির্ঝর ৷প্রীতি সেই সব প্রশ্নের জবাব দেয় না ৷ নির্ঝরকে দেখা করতে বলে ৷আর নির্ঝরও রাজী হয়ে যায় ৷

পাশে থাকা কদম গাছটাতে অনেক ফুল ফুটেছে ৷কদমের মাতাল করা ঘ্রানে প্রীতির চোখ বুঝে আসে ৷নিজের পাশে হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঐ দিকে ফিরলো প্রীতি ৷এই তো পাশেই দাড়িয়ে আছে নির্ঝর ৷প্রীতি নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসেঁ ৷নির্ঝরের চোখে একরাশ অভিমান ৷নির্ঝর মাথা নিচু করে নিজের আবেগ আটকে রাখার চেষ্টা করছে ৷সে চায় না প্রীতিলতা নামক এই অদ্ভুত সুন্দর মেয়েটার প্রেমে জড়াতে ৷কেননা প্রেমে জাড়ালেই তো মরন ৷প্রীতি নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল

আজ এত চুপ যে ৷কিছু বলবেন না ৷

নির্ঝর মাথা নিচু করেই না বোঝালো ৷

প্রীতি নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল

আমরা আর কখনো এতটা কাছাকাছি আসবো না সূর্যসেন ৷আজকের পর আমাদের আর দেখা হবে না এই ভাবে ৷তাই আপনার জীবনে আসা এই দ্বিতীয় প্রীতিলতাকে দেখে নিন ৷

নির্ঝর প্রীতির দিকে তবুও তাকালো না ৷প্রীতি নির্ঝরের হাতে একটা কাগজে মোড়ানো প্যাকেট দিল ৷তারপর বলল

যদি কখনো আমাকে দেখার জন্য আপনার চোখে পানি আসে ৷যদি কখনো প্রীতিলতা নামক মানুষটাকে অনেক বেশি অভিশাপ দিতে ইচ্ছে করে ৷যদি কখনো একরাশ অভিমানে আমার জন্য দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেড়িয়ে আসে ৷ঐ দিন এই কাগজটা খুলবেন ৷মনে করবেন এটা আপনাকে দেওয়া আমার শেষ উপহার ৷ এটার মধ্যে আমার অনুভূতি আছে ৷আমার আকাশ সমান ভালোবাসা আছে ৷ তাই আমার জন্য যেই দিন আপনার চোখ থেকে অভিমানী বৃষ্টি ঝড়ে পড়বে ৷ ঐ দিন এটা খুলবেন খুলবেন ৷

নির্ঝর তবুও চুপ ৷প্রীতির কেন যেন মনে হচ্ছে ছেলেটা নিজের চোখের পানি লুকাতে মাথা নিচু করে আছে ৷

আমাকে এবার যেতে হবে ৷আপনার পরবর্তী জীবনের জন্য শুভ কামনা ৷আর এই উপহার দেওয়ার জন্যই এখানে আসা ৷ আমার বন্ধু হয়ে জীবনে আসার জন্য ধন্যবাদ ৷

প্রীতিলতা ঘুড়ে যেতে নিলেই নিজের হাতে টান অনুভব করলো ৷কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে নির্ঝর নামক ছেলেটা প্রীতিকে পেছন থেকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো ৷ছেলেটা কাপঁছে ৷তারমানে কি অহংকারী নির্ঝর শাহরিয়া কাদঁছে এই কুৎসিত কালো প্রীতিলতার জন্য ৷

দয়া করে কোথাও যাবেন না প্রীতিলতা ৷আমি প্রীতিলতা নামক আপনিটাকে হারাতে চাই না ৷আমার অনেক কষ্ট হয় প্রীতিলতা ৷নির্ঝর প্রীতিকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বলল

চলুন প্রীতি বিয়ে করে ফেলি ৷আমরা খুব ভালো থাকবো ৷আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না ৷আমি এই কয়েক দিন নিজের মাঝে ছিলাম না ৷একদম থাকতে পারবো না আপনাকে ছাড়া ৷ আপনি জানেন কোথায় কোথায় খুজেছি আপনাকে আমি ৷আর আজ ফোন করে যখন বললেন আপনি দেখা করতে চান ৷জানেন আমি পাগলের মতো ছুটে এসেছি ৷দেখুন আমি ঠিক মতো জামা পরে আসিনি ৷

আপনি ভুল করছেন নির্ঝর ৷আমাদের রাস্তা আলাদা ৷আপনি কখনো আমার সাথে সুখী হবে না ৷আপনি সাবরিনার সাথে খুব ভালো থাকবেন ৷আপনার জীবনে আসা এই প্রীতিলতাকে ভুলে যান ৷আর হ্যা আপনি নিজের অজান্তেই একদিন আমায় ভুলে যাবেন ৷আমায় খুব ঘৃনা করবেন ৷আমি আপনার ভালোবাসা চাই না ৷কারন আমি সেটার যোগ্য নই ৷তাই চাই আপনি আমাকে ঘৃনা করুন ৷আমি আসি ৷আমাদের জীবনে এটাই শেষ দেখা ৷আর কখনো আমরা এতটা কাছাকাছি আসবো না ৷আমাদের পথ চলা এতটুকুই সূর্য সেন ৷প্রীতি নির্ঝরকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিল ৷তারপর হাটা শুরু করলো ৷আর নির্ঝর কদম গাছটার তলায় হাটু গেড়ে বসে কাদঁতে লাগলো ৷মাটিতে বারবার আঘাত করে বলতে লাগলো ৷

আমাকে কেন এত কষ্ট দিচ্ছেন ৷আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না প্রীতিলতা ৷আমি বাচঁতে চাই আপনার সাথে ৷আমি সত্যি বাচঁতে চাই ৷আপনাকে ছাড়া থাকা যে আমার দ্বারা সম্ভব না প্রীতিলতা ৷কেন বুঝলেন না আমাকে ৷কেন প্রীতিলতা ৷

প্রীতিলতা পেছনে ঘুড়ে তাকালো না ৷সে জানে পেছনে একবার ঘুড়লে ,আর ফেরত যেতে পারবে না ৷প্রীতি চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল নির্ঝরে দৃষ্টির অগোচরে ৷

আজ নির্ঝরকে সে ডেকে ছিল ৷তবে তাকে নিজের মনের কথা বলতে নয় ৷ নির্ঝরের জন্য একবুক ভালোবাসা সমান একটা উপহার দিতে ৷ উপহারটা একদিন নির্ঝর তাকে দিয়ে ছিল ৷আর আজ নির্ঝরকে সে ফেরত দিল ৷জীবন থেকে যখন সব হারিয়ে গেছে ৷তখন ঐ টা রেখে আর কি লাভ ৷এই জীবনে নির্ঝরে জীবনে তো আর থাকা হলো না ৷কিন্তু তার সামান্য একটা অংশ না হয় থাক নির্ঝর নামক ঐ অহংকারী মানুষটার কাছে ৷

রাত ঘড়িতে এগারোটা ৷আবেশ পুলিশ স্টেশনে ৷আজ রাত সাড়ে নয়টায় তার চাচা দ্বীপ চৌধুরীকে প্রকাশ্যে কিডন্যাপ করা হয়েছে ৷দ্বীপ চৌধুরীকে ‌হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছিল আবেশ ৷কিন্তু মাঝ রাস্তায় আসতেই দ্বীপ চৌধুরীর শ্বাস কষ্ট শুরু হয় ৷চাচার অবস্থা খারাপ দেখে আবেশ দ্বীপের কাছে যায় ৷চাচা দ্বীপ কোনো মতে আবেশের কাছে পানি চায় ৷ আবেশ বোতলে হাত দিয়ে দেখে পানি নেই ৷ আবেশ গাড়ী থেকে বের হয়ে যায় ৷একটু দূরেই দোকান ৷আবেশ দোকানের কাছে যায় পানি কিনতে ৷কিন্তু এসে দেখে গাড়ী নেই ৷হাজার খুজেও গাড়ী পায় নি আবেশ ৷অবশেষে উপায় না পেয়ে চলে আসে পুলিশের কাছে ৷পুলিশ সব শুনে অবাক হয়ে যায় ৷প্রকাশ্যে এমন কিডন্যাপ করা মুখের কথা নয় ৷হঠাৎ করেই পুলিশের টেলিফোন বেজে ওঠে ৷আর ওপাশ থেকে যা শোনে তাতে তাদের গলা শুকিয়ে আসে ৷ইন্সপেক্টর উঠে দাড়ায় ৷তারপর বলে

আমাদের এক্ষুনি যেতে হবে আবেশ চৌধুরী ৷আপনার চাচার জীবন সংকটে আছে ৷ আমরা এখনই ফোর্স নিয়ে বের হবো ৷আমাদের ফোর্স রেডি আছে ৷

আমি যে কোনো কিছুর মূল্যে আমার চাচাকে জীবিত চাই ইন্সপেক্টর ৷চাচা ছাড়া আমার আর কেউ নেই ৷আপনি তাকে বাচাঁন ৷

আমরা চেষ্টা করবো ৷

অপর দিকে দ্বীপ চৌধুরী একটা অন্ধকার ঘরের ফ্লোরে পরে আছে ৷পাশেই প্রীতিলতা বিরাট বড় রামদা ধার দিচ্ছে ৷দ্বীপ চৌধুরী এই প্রীতিলতাকে চেনে ৷এর কাছেই বাচাঁর জন্য সাহায্য চেয়ে ছিল ৷কিন্তু অফিসারের পোশাক পড়া এই যে আসল খুনী তা বুঝতে পারে নি ৷জীবনের এই সময় আজ অনেক ভয় করছে দ্বীপের ৷ এই একই ভয় একদিন সে দেখে ছিল আয়ান আর চারুর চোখে ৷

চলবে