প্রীতিলতা আসবে বলে ৩ পর্ব-১৫ এবং শেষ পর্ব

0
1225

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
সিজন:৩
সমাপ্ত পার্ট

ধারালো রামদা টা রুপার মতো চকচক করছে ৷প্রীতি রামদা হাতে বসে আছে দ্বীপে সামনে ৷কোনো কথা বলছে না ৷অন্য দিকে দ্বীপ বাচাঁ জন্য আকুতি করে যাচ্ছে ৷

আমাকে ছেড়ে দে প্রীতি মা ৷আমি না তোর চাচা হই ৷আমার ভুল হয়ে গেছে মা ৷আমি আর কখনো খারাপ কাজ করবো না ৷এবারের মতো ছেড়ে দে ৷এভাবে নিজের বাবার মতো চাচাকে মারতে নেই মা ৷এতক্ষন চুপ থাকলেও এবার আর প্রীতি চুপ থাকলে না ৷দ্বীপ চৌধুরীর গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে বলল

তোর ঐ পাপ মুখে আমার ফেরেস্তার মতো বাবার নাম নিবি না ৷আর রইলো তোর চাচা ৷তুই তো আমার বাবার আপন ভাই না ৷তাহলে আমার চাচা হলি কিভাবে ৷এখন তোর আর আমার মধ্যে একটাই সম্পর্ক ৷তুই শিকার আর আমি শিকারী ৷মনে পরে এই সেই বাড়ী ৷যেই বাড়ীর প্রতিটা দেওয়ালে আমার মায়ের চিৎকারের আওয়াজ আছে ৷এটা সেই বাড়ী যেখানের প্রতিটা জায়গায় আমার বাবার ছোয়া আছে ৷তোরা একটা সুখী পরিবারকে নিজেদের স্বার্থে শেষ করেছিস ৷তোরা আমার মরা মাকে ছাড় দিস নি ৷আমার বাবাকেও জিন্দা কবর দিয়ে দিলি ৷আমার দুধের ভাইটাকে আছড়ে মেরে ফেললি ৷আমার চাচা দ্বীপ চৌধুরীকে খুন করলি ৷আর তার জায়গায় নিজে বসে পড়লি তুই মিহান চৌধুরী ৷আমার দাদিকে ফাসিঁ দিয়ে মারলি ৷ শত শত মেয়ের জীবন তুই নষ্ট করেছিস ৷হাজারো ছেলে মেয়ের জীবনে মাদক নামক বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছিস ৷বলতো তোকে কয়টা অপরাধের শাস্তি দেব ৷এই হাত দিয়ে আমার নিরপরাধ ছোট চাচাকে মেরেছিস না ৷তোর এই হাত থাকবে না ৷ধারালো রামদার আঘাতে দ্বীপ চৌধুরীর ডান হাত কেটে গেল ৷তারপর বাম হাত ধরে বলল

এই হাত দিয়ে আমার দাদিকে ফাসিঁতে ঝুলিয়েছিস ৷তোর এই হাতও থাকবে না ৷পর পর দুইটা হাত কেটে ফেললো প্রীতি ৷দ্বীপ চৌধুরী যন্ত্রনায় চিৎকার করছে ৷

কষ্ট হচ্ছে খুব ৷তোকে আরো কষ্ট দেব আমি ৷যেই কষ্ট আর কাউকে দেই নি ৷ঐ কষ্ট দেব তোকে ৷প্রীতির কোমরে গুজে রাখা ছোট ছুড়িটা বের করলো ৷মিহানকে কিছু বলার সুযোগ দিল না প্রীতি ৷দুই চোখে চাকু দিয়ে বারবার আঘাত করলো পাগলের মতো ৷আর বলল

নিরপরাধ মেয়েদের ভোগ করার শাস্তি এটা ৷যেই শাস্তি তোকে আইন দেয় নি ৷তা আমি দিলাম ৷এবার তোর গল্পটা আমি শেষ করবো ৷

আমাকে ছেড়ে দে প্রীতি ৷আমাকে মারিস না ৷ যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে মিহান কথা গুলো বলতে লাগলো ৷

প্রীতি বাকাঁ হেসে বলল তোর কথাটা রাখতে পারলাম না ৷হঠাৎ করেই প্রীতির চেহারার রং বদলে গেল ৷মিহানে বুকের উপর উঠে রামদা চালিয়ে দিল মিহানের গলায় ৷মিহান যন্ত্রানায় কাপঁতে লাগলো ৷গলার রগ গুলো থেকে প্রচন্ড বেগে আসা রক্তে প্রীতির মুখ লাল হয়ে গেছে ৷তাও প্রীতি থামলো না ৷ দেহ থেকে মাথাটা একেবারে আলাদা করে দিল ৷মিহানের কাপঁতে থাকা শরীরটাও থেমে গেল ৷

প্রীতি এখনো বসে আছে মিহানে বুকের উপর ৷রক্তে তার পুরো শরীর লাল হয়ে গেছে ৷সুন্দর মুখটা লাল হয়ে আছে রক্তে ৷পাশা পরে থাকা চাকুটা হাতে নিয়ে বিরবির করে বলল

মাথা তো কেটেঁ ফেললাম ৷যদি বেচেঁ যায় ৷না ওকে বাচঁতে দেওয়া যাবে না ৷ওকে আমি বাচঁতে দেব না ৷আমার করা শেষ ওয়াদা আমি পালন করবো ৷প্রীতি ছুড়িটা মিহানের বুকে চালিয়ে দিল ৷ছিন্ন ভিন্ন করে দিল বুকটা ৷প্রীতি একা একা হাসছে আর বুকে আঘাত করছে ৷

হঠাৎ করেই কেউ একজন প্রীতির হাত ধরে ফেললো ৷নিজের কাজে বাধাঁ পেয়ে প্রীতি পাশে তাকালো ৷প্রীতি তাকাতেই হাত ধরা লোকটা এক চিৎকার দিয়ে পাশে সরে গেল ৷তার হাত পা কাপঁছে ৷নিজের সিনিয়র অফিসারকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে চিন্তে অসুবিধা হয় নি ৷কিন্তু খুনীর জায়গায় এই মানুষটাকে একদম আশা করে নি শান্ত ৷ যেই মানুষটাকে সবাই আদর্শ মানতো ৷সেই মানুষটার এমন ভয়ংকর রূপ সবার রুহ্ কাপিঁয়ে দিচ্ছে ৷

প্রীতি হাসতে হাসতে শান্তকে বলল শত্রুর শেষ রাখতে নেই ৷শেষ করে দিলাম ওকেও ৷আর আজকেই আসতে হলো তোমাদের ৷আরো একটা খুন করা বাকি ছিল আমার ৷এটা তোমরা একদম ঠিক করো নি শান্ত ৷দেখ আমি একটা কুকুরকে মেরে ফেলেছি ৷অনেক কষ্ট দিয়েছে আমাকে জানো ৷এই বুকে থাকা কষ্ট কাউকে দেখানো যাবে না ৷আজ কষ্ট অনেক কমে গেছে ৷এই দেখ আমি হাসছি ৷আজ প্রীতিলতা হাসবে ৷মনের সুখে হাসবে আজ ৷

শান্ত চিৎকার করে বলল অফিসার এরেস্ট করুন এই ভয়ংকর সাইকো খুনীকে ৷হেড অফিসে খবর পাঠান ৷ সাংবাদিক সম্মেলন ডাকুন ৷

প্রীতিলতাকে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হলো ৷কিন্তু প্রীতিলতা মনের সুখে হাসতে লাগলো ৷সে চিৎকার করে বলল আমি একটা কুকুর কে হত্যা করেছি ৷আমি একটা হিংস্র জানোয়ার মেরেছি ৷

আবারো একটা নতুন সকাল এলো ৷তবে কোথাও যেন আজকের আকাশ অভিমান করেছে ৷আজকের আকাশে মেঘ জমেছে ৷হয়তো বৃষ্টি হয়ে নামবে এই দূষিত শহরে ৷

কারাগারের ভেতর বসে আছে প্রীতি ৷একের পর এক খবর হচ্ছে তাকে নিয়ে ৷ সোসাল মিডিয়াতে তাকে নিয়ে একের পর এক খবর ৷উত্তাল পুরো নেট পাড়া ৷প্রীতির পালিত বাবার কাছে সাংবাদিক গেছে ৷তারা লজ্জায় সাংবাদিকের কাছে আসে নি ৷ভার্সিটিতে প্রীতির আসল পরিচয় ফাসঁ হয়ে গেছে ৷আসলে সে যে পুলিশের লোক ৷আর নারী পাচারকারী গ্যাং টা শেষ করতে এসে ছিল ৷তা এখন পুরো ভার্সিটি জেনে গেছে ৷সবার একটাই দাবী ৷তারা প্রীতিলতা নামক এই ভয়ংকর খুনীর ফাসিঁ চায় ৷

অপর দিকে প্রীতি নিজের জায়গায় বসে আছে ৷তার মুখে কোনো কথা নেই ৷এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উপরে ৷কারাগারের দরজা খুলে এসিপি আসলো ৷তারপর বলল

তোমাকে এত দিন নিজের মেয়ের মতো ভাবতাম ৷আর সেই তুমি কিনা খুন করলে ৷সবাই তোমার ফাসিঁ চায় ৷রেডি থাকো ৷তোমাকে আজকেই কোর্টে চালান করা হবে ৷একটু পরেই তোমার জিজ্ঞাসাবাদ ৷এসিপি চলে গেল দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ৷প্রীতি নিজের মতোই বসে রইলো ৷

একটু পর প্রীতিকে নিয়ে যাওয়া হলো জিজ্ঞাসাবাদ করতে ৷ওর সামনে বড় বড় দুইজন অফিসার বসে আছে ৷তার মধ্যে একজন বলল

ওদের মারলে কেন ৷

প্রীতি কোনো কথা বলল না ৷শুধু চুপ করেই রইলো ৷অফিসার একের পর এক প্রশ্ন করে গেল ৷কিন্তু প্রীতি উত্তর দিল না ৷হঠাৎ অফিসারদের অবাক করে দিয়ে প্রীতি বলল

আপনাদের কাছে সিগারেট আছে ৷প্রীতির এমন কথায় অফিসার রেগে বললেন ৷

আমার সাথে মজা হচ্ছে ৷খুন করে ,কিডন্যাপ করে আবার রসিকতা হচ্ছে ৷

প্রীতি মাথা নিচু করে বলল আমার সিগারেট চাই ৷তাড়াতাড়ি সিগারেট নিয়ে আয় ৷

সিগারেক নিয়ে আসা হলো প্রীতির জন্য ৷প্রীতি মনের সুখে টান দিচ্ছে ৷অথচ রাতে খুন করা রক্ত এখনো হাতে লেগে আছে ৷ঐ দিকে তার খেয়াল নেই ৷এসিপি ,শান্ত এবং অফিসার বেশ রেগেই আছে প্রীতির উপর ৷প্রীতি সিগারেটে টান দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বলল

কি রে অফিসার ৷আমায় এরেস্ট করেছিস মাত্র ছয় সাতটা খুনের জন্য ‌কিন্তু তোরা কি জানিস আমি প্রীতিলতা এই পর্যন্ত আটান্ন টা খুন করেছি ৷

প্রীতির এমন কথায় উপস্থিত সকলে ভড়কে গেল ৷প্রীতি আবারো উচ্চ স্বরে হাসতে হাসতে বলল

তোরা আর একদিন পর কেন আমায় এরেস্ট করলি না ৷ইস তোদের জন্য আরো একটা খুন করতে পারলাম না আমি ৷তোরা আমায় কোর্টে চালান করে দে ৷আর শোন ফাসিঁর ভয় প্রীতিলতা পায় না ৷শেষের কথাটা হাসির সাথে নয় ৷বেশ শক্ত গলায় বলল প্রীতি ৷তারপর হাতের সিগারেট টা ফেলে দিল ৷

(সবাই একটু গঠন মূলক কমেন্ট করবেন কষ্ট করে ৷ কিছুদিন পর সিজন ফোর আসবে )

সমাপ্ত