প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
সিজন :৩
পার্ট:৬
সারা দেশের জনগনের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে ৷সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও একের পর এক খবর আসছে ৷আজ ভোর সকালে সাবেক এমপি সাঈদের হাত ,পা আর জ্বিহবা কাটা রক্তাক্ত আধমরা দেহ পাওয়া গেছে ৷তার দেহ একটা ব্রিজের পাশে পাওয়া গেছে ৷ পুলিশ সিসি ক্যামেরা ফুটেজ চেক করেও কিছু পায় নি ৷ক্রিমিনাল যে বড্ড চালাক তা পুলিশ অলরেডি বুঝে গেছে ৷ সে একের পর এক অন্যায় করে যাচ্ছে ৷কিন্তু পুলিশ তাকে ধরার কোনো উপায় খুজে পাচ্ছে না ৷সাঈদ হাসপাতালে ভর্তি তার অবস্থা খুবই খারাপ ৷তার কাছ থেকে যে কোনো তথ্য পুলিশ জানবে তার উপায় নেই ৷কারন ক্রিমিনাল তার হাত আর জ্বিহবা কেটে দিয়েছে ৷শুধু তাই নয় পুলিশ সাঈদের পাশে একটা ছোট খাম পেয়েছে ৷যেখানে কিছু ছবি আর মেমোরি কার্ডও পেয়েছে ৷ মেমোরি কার্ডের ভেতর কর্নেল ওসমান ,ডাক্তার শাকিল ,ব্যরিস্টার সোহেল হত্যাকান্ডের ভিডিও ফুটে উঠেছে ৷ছবি গুলোতে তাদের হত্যা করার মুহূর্ত ফুটে উঠেছে ৷হত্যার নিষ্ঠুরতা যে কারো শরীর হিম শীতল করে দিতে পারে ৷বড্ড কষ্ট দিয়ে তাদের মারা হয়েছে ৷কিন্তু তাদের মারা কেন হলো এটা কেউ জানে না ৷ পরবর্তী শিকারকে এই খুনীর তাও কেউ জানে না ৷শুধু সবাই জানে আরো তিনটা খুন করবে এই খুনী ৷
নিজের ঘরে বসে আছে প্রীতিলতা ৷আজ শান্তর জবাকে বিয়ে করার কথা ছিল ৷ কিন্তু আজ বিয়ে হবে না ৷মিডিয়ার চাপে পুরো পুলিশ ফোর্স এখন এক সাথে খুনীকে খুজছে ৷
প্রীতির ফোনে একটা কল আসতেই প্রীতি রিসিভ করে ৷তারপর বলল
কি অফিসার কোনো উপায় পেলেন খুনীকে ধরার ৷
জ্বি না ম্যাম ৷তবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে ৷
যা করার তাড়াতাড়ি করুন ৷আমাদের পরবর্তী খুনটা আটকাতে হবে ৷আর সেটা যেভাবে হোক ৷
ইয়েস ম্যাম ৷
এখন রাখুন ৷আমিও কাজ করছি ৷
প্রীতি ফোনটা রেখে দিল ৷ হাতে থাকা জলন্ত সিগারেটে টান দিতে দিতে প্রীতি হাসতে লাগলো ৷এক পৈশাচিক হাসি সে হাসতে লাগলো ৷তারপর একা একা বলল
খুনীকে জানাচ্ছে তাকেই কিভাবে ধরবে ৷ইস ওরা তো আর জানে না ৷আমাকে ধরার সব রাস্তা আমি বন্ধ করে দিয়েছি ৷সবাই দৌড়াবে আমার মরিচীকার পেছনে আর আমি আমার শিকারদের পেছনে ৷বছরের পর বছর ধরে প্লান করেছি ৷এভাবে ধরা পরার জন্য নাকি ৷তারপর ঘর কাপিঁয়ে আবারো হাসতে লাগলো সে ৷
ছয় দিন পার হয়ে গেছে ৷আজ সাঈদের জ্ঞান ফিরেছে ৷সে এখন না পারছে কথা বলতে আর না পারছে নিজের হাত পা নাড়াতে ৷কারন হাটুর নিচ থেকে তার পা কাটা হয়েছে ৷কনুই থেকে হাত নেই ৷
আজ সাঈদকে দেখতে সিআইডি অফিসার প্রীতিলতা আসছে তার ফোর্স নিয়ে ৷সাঈদ যদি কিছু বুঝাতে পারে খুনীর ব্যাপারে ৷এই আশায় তারা যাচ্ছে ৷
প্রীতি আইসিইউ এর সামনে এসে তার লোকদের বলল
আপনারা এখানেই থাকুন ৷আমি একা গিয়ে তাকে দেখে আসছি ৷এমনিতেই সাবেক এমপি সাহেব অসুস্থ ৷
প্রীতির লোকেরা সহমত পোষন করলো ৷প্রীতি দরজা ঠেলে ভেতরে ডুকলো ৷ভেতরে দুইজন নার্স ছিল ৷প্রীতি ইশারায় তাদের বাইরে যেতে বললো ৷নার্স দুটো চলেও গেল ৷প্রীতি একটা টুলে বসলো ৷অন্যদিকে প্রীতিকে দেখে সাঈদ কাপঁছে ৷প্রীতি বাকাঁ হেসে বলল
ভয় লাগছে খুব ৷আহ এত ভয় পেলে চলে নাকি ৷তুমি জানো এই অবধি আমি চুয়ান্নটা খুন করেছি ৷তাও নিজের হাতে ৷কিন্তু তোমায় কেন যেন খুন করতে ইচ্ছে করলো না ৷তোমায় একেবারে মারার থেকে বারবার মরতে দেখতে ,আমার অনেক ভালো লাগবে ৷আজ থেকে তোমার অধ্যায় এখানেই আমি শেষ করলাম ৷আর হ্যা আমার পরবর্তী শিকার খুব তাড়াতাড়ি আমার কাছে ধরা দিতে যাচ্ছে ৷বাই ডিয়ার ৷
প্রীতি উঠে দাড়ালো ৷তারপর দরজা খুলে বাইরে এলো ৷তারপর মুখে কিছুটা কষ্ট ফুটিয়ে বলল
ওনাকে দেখে বড্ড খারাপ লাগছে ৷উনি কোনো কিছু বলার অবস্থায় নেই ৷তার থেকে বরং চলুন আমরা আমাদের কাজ করি ৷প্রীতি তার ফোর্স নিয়ে চলে গেল ৷
দ্বীপ চৌধুরী কারো সাথে ফোনে কথা বলছে ৷সে বলল
তুমি বুঝতে পারছো না কেন ৷ও আমাদের কাউকে ছাড়বে না ৷আমরা কেউ বাচঁবো না ৷এক এক করে সবাই শেষ হয়ে যাচ্ছে ৷এর পর কার সিরিয়াল আমরা কেউ জানি না ৷সাত জনের মধ্যে চার জনকে ও শেষ করেছে ৷ আমরা আর তিনজন আছি ৷ওপাশ থেকে দ্বীপকে কিছু একটা বলা হলো ৷দ্বীপ ওপাশের কথা শুনে বলল
তোমার প্লান কাজ করবে তো ৷যদি কাজ করে তাহলে এইবার ওকে নিজের হাতে দ্বিতীয়বার মারবো ৷
অন্যদিকে আবেশ তার ছেলে মেয়ের কাছে বসে আছে ৷বাচ্চা দুটোর কাছে এই অবধি অনেক কথা জিজ্ঞাসা করেছে আবেশ ৷কিন্তু বাচ্চা দুটো তেমন কিছু বলতে পারে নি ৷পুলিশ বেশ কয়েকবার এসে ছিল তাদের কাছে ৷পুলিশ সন্দেহ করছে যে আবেশের ছেলে মেয়েকে কিডন্যাপ করেছিল ৷সেই দিহানকে কিডন্যাপ করেছে ৷বাচ্চা দুটো তেমন কিছুই বলতে পারে নি ৷পুলিশের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ৷কারন তারা যেই দিক থেকেই কেস সমাধান করতে যাচ্ছে ৷ঠিক ঐ জায়গা থেকেই আবার গুলিয়ে যাচ্ছে ৷ক্রিমিনাল বড্ড চালাক ৷সে ইচ্ছে করে পুলিশকে গাধার মতো খাটিয়ে চলেছে ৷
রাত ঘড়িতে এগারোটা বাজে ৷খোলা আকাশে একমনে তাকিয়ে আছে প্রীতি ৷শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে তার ৷নির্ঝরের সাথে রোজ তার কথা হয় ৷নির্ঝর ইচ্ছে করেই তাকে কল করে ৷কিন্তু আজ দুই দিন ধরে নির্ঝর তার সাথে রাগ করেছে ৷প্রীতি ভার্সিটিতে কেন যায় নি ৷তাই সে রাগ করেছে ৷প্রীতি পকেট থেকে ফোন বের করে নির্ঝরকে কল করলো ৷আবারো কেন যেন একটা পিছুটান তৈরি হচ্ছে এই ছেলেটার উপর তার ৷আজ কিছু দিন যাবৎ প্রীতির খুব বাচঁতে ইচ্ছে করে নির্ঝরের সাথে ৷তার ইচ্ছে করে নির্ঝর রাগ করুক তার সাথে ৷অভিমান করুক তার সাথে ৷তাকে দেখতে না পেয়ে দেবদাস হোক ৷তবুও নির্ঝর তার জীবনে ফিরে আসুক ৷সেই পুরনো তুমি হয়ে ফিরে আসুক ৷প্রীতির চিন্তার মাঝেই নির্ঝর ফোন ধরলো ৷তারপর রাগী গলায় বলল
আমাকে যেন কেউ কল না দেয় ৷আমি কারো সাথে কথা বলবো না ৷
প্রীতি হাসলো ৷লোকটা ভাঙ্গবে তাও মচকাবে না ৷ফোন রিসিভও করবে আবার রাগও দেখাবে ৷নির্ঝর ফোনটা কেটে দিতেই প্রীতি আবারো কল করলো ৷নির্ঝর এবার ফোন ধরে বলল
বারবার কেন কল করছো ৷
কাল ভার্সিটিতে আসছি ৷সারপ্রাইজ আছে আমার পক্ষ থেকে ৷ যেটা কখনো আশা করেন নি ৷কাল সেটাই পাবেন যেটার জন্য আপনার অপেক্ষা ৷কাল সকাল নয়টায় ভার্সিটিতে থাকবেন ৷বাই ৷
আজ প্রীতির কাছে কেন যেন আনন্দ লাগছে ৷সে আর নিজেকে লুকিয়ে রাখবে না ৷নির্ঝরের কাছে সে সব শিকার করবে ৷সে নিজেকে শুধরেও নেবে ৷নির্ঝরকে নিয়ে একটা স্বাভাবিক জীবন পার করবে সে ৷
সকাল থেকেই নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে গেল প্রীতি ৷তার সুন্দর চেহারাটা কালো মেকাপের আড়ালে ঢাকলেও নির্ঝরের পছন্দ মতো সাদা শাড়ী আর খোপায় ফুল দিতে ভুল করলো না ৷প্রীতি বেড়িয়ে পড়লো তার গন্তব্যে ৷
প্রীতি একটা অটোতে করে ভার্সিটিতে পৌছে গেল ৷তার হাতে একগুচ্ছ কদম ফুল ৷অনেক কষ্ট করে ব্যবস্থা করেছে ফুল গুলো ৷নির্ঝরকে নিজের মনের কথা বলবে ৷তাও আবার তার পছন্দের ফুল ছাড়া তা কি করে হয় ৷
গেটের ভেতর পা রাখতেই প্রীতির শরীর কাপঁতে লাগলো ৷নির্ঝর তার পরিচয় জানার পর কেমন করবে ৷ নির্ঝর কি তাকে জরিয়ে ধরে কাদঁবে ৷নাকি অনেক রাগ করবে ৷নানা চিন্তায় ওর শরীর কাপঁছে ৷
কিছুটা দূরে যেতেই প্রীতি ছেলে মেয়েদের সিটি বাজানোর আওয়াজ শুনতে পেল ৷প্রীতি কৌতুহল নিয়ে ঐদিকে গেল ৷আর যেয়ে যা দেখলো তাতে তার বুক কেপেঁ উঠলো ৷প্রীতি তাকিয়ে দেখলো নির্ঝরের সামনে একটা মেয়ে বসে আছে ৷সে সবার সামনে নির্ঝরকে প্রপোজ করছে ৷আর নির্ঝর তার প্রপোজ গ্রহন করছে ৷সবাই সিটি বাজাচ্ছে আর তালি দিয়ে যাচ্ছে ৷আর প্রীতি একটা মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছে ৷
হঠাৎ করেই প্রীতিকে দেখে মিলা দৌড়ে এসে বলল
প্রীতি জানো সাবরিনা সেই কবে থেকে ভাইয়াকে ভালোবাসে ৷ভাইয়া ওকে মেনেই নেয় নি অবশেষে আজ মেয়েটাকে মেনে নিল ৷ কাল সারা রাত ভাইয়াকে বুঝিয়েছি আমি ৷ যেন সাবরিনাকে মেনে নেয় ৷ প্রীতির কানে কোনো কথা যাচ্ছে না ৷প্রীতি ধীর পায়ে নির্ঝরের দিকে এগিয়ে গেল ৷ নির্ঝরকে প্রপোজ করা সাবরিনার দিকে প্রীতি তার হাতে থাকা কদমগুচ্ছ এগিয়ে দিয়ে বলল
উনি কদম বেশি পছন্দ করে ৷যাকে ভালোবাসো তা প্রিয় জিনিসের কদর করতে শেখ ৷গোলাপ দিয়েই ভালোবাসার প্রকাশ করতে হবে এমন কারন নেই ৷তোমার উনি কদম ভালোবাসে ৷তাই তোমার ভালোবাসা তার ভালোবাসার মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখো ৷ প্রীতি আর কথা বাড়ালো না ৷সে পেছনে ফিরে হাটা শুরু করলো আবারো ৷এখানে আর সে থাকতে পারবে না ৷তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে ৷পেছন থেকে নির্ঝর ডাক দিতে লাগলো বারবার ৷ কিন্তু প্রীতি আর দাড়ালো না ৷ সে চলেই গেল ৷
রাত ঘড়িতে বারোটা ৷প্রীতি নিজের বারান্দায় পরে আছে ৷তার চোখ থেকে পানি পড়ছে ৷শরীরে থাকা শাড়ীটার বেহাল দশা ৷হাতে থাকা সিগারেটে টান দিতে দিতে প্রীতি চিৎকার করে বলল
তোমরা সবাই স্বার্থপর ৷তোমরা কেউ আমাকে ভালোবাস নি ৷মানুষ নাকি বদলায় ৷তাই সবাই বদলে গেল ৷আমি তো বদলাতে পারলাম না ৷ আমি তো হাজার চেয়েও বদলাতে পারলাম না ৷বেচেঁ থাকার একটা পিছুটান চেয়ে ছিলাম ৷কিন্তু তাও আমার সঙ্গী হলো না ৷ আমার অপরাধটা কোথায় ৷আমার কি একটু ভালোবাসার অধিকার নেই ৷আমার কি বেচেঁ থাকার অধিকার নেই ৷তোমরা সবাই স্বার্থপর ৷ জীবনের পেছনে ছুটতে ছুটতে আজ আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি ৷আর পারছি না আমি ৷কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো প্রীতি বারান্দার ফ্লোরে ৷
.চলবে